অদ্ভুত একটা শান্তি
আফরোজা হাসান
কথা প্রসঙ্গে এক বোনকে আনন্দ আর প্রশান্তির মধ্যের বিস্তর ফারাকের এর ব্যাপারে বলার পর বোনটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলার অনুরোধ করেছিল। একটা উদাহরণ দিয়ে বোনটিকে মোটামুটি বোঝালেও নিজে ঠিক তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। ঠিক মনের মতো করে বোঝাতে পারিনি আসলে। এরপর থেকেই খচখচ করছিল বিষয়টা। খচেখচে মন নিয়েই পুত্রকে স্কুল থেকে আনতে গেলাম। যদি কোনদিন খানিকটা আগে চলে যাই স্কুলের সামনের পার্কে বসে অপেক্ষা করি। কিছুটা দূরে বসে ছুটির পর স্কুলের গেট দিয়ে ছুটোছুটো করে বেরিয়ে আসা বাচ্চাদের দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। কেউ বাবার কোলে চড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, কেউ মায়ের হাত ধরে। কেউ কেউ আবার দাদা বা দাদীর সাথে লাফাতে লাফাতে পথ চলে।
এককথায় বর্ণিল আনন্দের ছড়াছড়ি লেগে যায় স্কুল ছুটির সময় চারপাশের পরিবেশে। ভীষণ উপভোগ করি আনন্দ রঙের এই বিচ্ছুরণ। তবে এই আনন্দময় ক্ষণেও উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকি সেই দিকে যেদিক থেকে পুত্র বের হবে। একটা ব্যাপার সবসময়ই নোটিশ করেছি অন্যান্য বাচ্চাদের দেখে আমার মনে যে আনন্দানুভূতি খেলা করতে থাকে গেটে আমার পুত্রকে ছায়া দেখা মাত্রই সেটা বদলে যায়। অদ্ভুত একরকমের শান্তি আর স্বস্থি বোধ ঘিরে ধরে মনকে। ছুটে এসে যখন সালাম দিতে দিতে কাছে এসে দাঁড়ায়, ওকে জড়িয়ে দরার পর শরীর মনের সমস্ত ক্লান্তি কোথাও যেন উবে যায়। অদ্ভুত রকমের একটা শান্তি ভাব জাপটে ধরে মনকে। আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো পুত্রকে আনতে যাবার সময়। এবং একই সাথে আরেকটা উপলব্ধি জাগলো। আনন্দ ও প্রশান্তির সংজ্ঞাটা নতুন করে উন্মোচিত হলো আমার সম্মুখে।
আনন্দ উপভোগের আর প্রশান্তি শুধুই অনুভবের। আনন্দ মনকে উদ্বেলিত করে, উৎফুল্ল করে। কিন্তু ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, তৃষিত প্রাণ শীতল পানির ধারায় আস্বাদিত হবার উপলব্ধির নাম প্রশান্তি। প্রশান্তিকর মূহুর্তে জীবনের সবটুকুন পূর্ণতার ছোঁয়া নিহিত…..
— আফরোজা হাসান