banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

বইমেলা সমাচার

বইমেলা সমাচার


জান্নাতুন নুর দিশা


ঘটনা ১:

গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলার প্রকাশনের ৩৩৭-৩৩৮ নং স্টলে গিয়ে বসে আছি। দুপুরে মেলা খানিকটা ঝিমায়, বিকেলে জমে। সেই দুপুরেই একটা মেয়ে স্টলে এসে বই নাড়াচাড়া করছেন, বিক্রয়কর্মীকে জিজ্ঞেস করলেন আপনাদের নতুন বইগুলো দেখান। বিক্রয়কর্মী কয়েকটা বই এগিয়ে দিলেন। মেয়েটি বইয়ের ফ্ল্যাপ খুলে পড়লেন। অনিকেত এর ফ্ল্যাপ পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কী যেন ভাবলেন! তারপর বিক্রয়কর্মীকে বললেন, “আপনারা কত ভালো বই করেছেন। এই এসব বইয়ের অত প্রচার হয় না কেন। বইটা পছন্দ হয়েছে, নিতে চাই।”
মেয়েটা অনিকেত কিনে নেয়ার পর বিক্রয়কর্মী বললেন, “লেখক উপস্থিত আছেন কিন্তু স্টলে।”
ক্রেতা সচকিত হয়ে জানতে চাইলেন, “কই তিনি? আমি পরিচিত হতে চাই।”

পরে আমার সাথে এসে কথা বললেন তিনি। মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম, চোখে সমীহ, উৎসাহ আর ভালোবাসার ভাষা। জানালেন আমাকে চেনেন না। ফেসবুকে অত এক্টিভ না তিনি। মেলায় ঘুরে ঘুরে বইয়ের ফ্ল্যাপ, ভূমিকা পড়ে যাচাই করে বই কেনার অভ্যাস এবং অনিকেতের ফ্ল্যাপ, ভূমিকা পড়েই তিনি আগ্রহবোধ করছেন। বই পড়ার পর এই ভালোলাগার রেশ থেকে গেলে তিনি আগামীমেলায় এসে আমার বই খুঁজে বের করবেন। একটা অটোগ্রাফ দিতে বললেন। আমি লিখে দিলাম, “আপনার কথা আমার মনে থাকবে। ভালোবাসা।”

এখনো এমন দেখেশুনে যাচাই করে বই কেনা পাঠক আছেন এবং আমার বই এমন পাঠকদের স্পর্শ করে ভাবতেই এত ভালো লাগছিল!

ঘটনা ২:

গতকাল মেলার শেষ দিকে। আমি বেশ ক্লান্ত। ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেরিয়ে যাবো এমন সময় দুজন কিশোর এলো। মাদ্রাসার ছাত্র হবে সম্ভবত, বয়স চৌদ্দ/পনেরো হবে, পরনে জুব্বা, চেহারায় ভীষণ সারল্য। হাতে একগাদা বইয়ের প্যাকেট। দুজনেত হাতে দুটো অনিকেত এবং একটা অভিমান জংশন। সম্ভবত দুজন ভাই৷ বইগুলো অটোগ্রাফের জন্য আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি কিছুক্ষণ ওদের মুগ্ধ হয়ে দেখলাম৷ ওদের চোখে লেখকের জন্য সরল ভালোবাসা। অটোগ্রাফ দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম আমায় কিভাবে চেনে। বললো ফেসবুকে আমার লেখা পড়ে ওদের খুব ভালো লাগে। বই পড়া ওদের শখ। আমি মেলায় আসব জেনে দেখা করতে এসেছে। কেন যেন আমার লেখকসত্তার প্রতি এই দুই কিশোরের ভালোবাসা মাখা চাহনি আমার হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে।

ঘটনা ৩:

শুক্রবারে বিকেলে সরলরেখা প্রকাশনার ৬১৮ নং স্টল থেকে কল দিয়ে বললো একটা মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যেন স্টলের সামনে একটু যাই কষ্ট করে। গেলাম। মিষ্টি চেহারার এক তরুণী হাতে অভিমান জংশন নিয়ে দাঁড়িয়ে। বললো আমার ফলোয়ার ফেসবুকে। আমার কবিতা পড়লেই তার কান্না পায়। মনে হয় যেন তার না বলতে পারা কান্নাগুলো, কথাগুলোই নাকি আমি বলে দেই কবিতায়। আমি মেয়েটার চোখের দিকে দিকে তাকালাম। কী ভীষণ মমতার চোখে আমায় দেখছেন! যেন আমি তার দর্পন প্রতিবিম্ব! আমি কবিতায় এভাবেই পাঠকের হৃদয়ের প্রতিবিম্ব হতে চেয়েছি সবসময়।

মেলায় আমার সাথে দেখা করতে আসা সকলের চোখের দিকে আমি তাকিয়েছি বারবার। মানুষের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখার মতো তীব্র আনন্দ আর কিছুতে নেই। আরো অনেক অনেক ভালো লাগার ভালোবাসার অনুভূতি চোখে আর বুকে ধারণ করে ফিরে এসেছি। আরো লিখের যাবার জন্য এসব ভালোবাসা আমার রসদ। ধন্যবাদ সবাইকে।