banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

বিকালে নাস্তায় নুডলস পাকোড়া

 


ঘরকন্যা


উপকরণ :
১. ১ কাপ বেসন,
২. ২ টেবিল চামচ চালের গুঁড়া,
৩. ১ কাপ সেদ্ধ নুডলস,
৪. ১ কাপ পরিমাণে সবজি (আলু, গাজর, ক্যাপসিকাম, মাশরুম বা আপনার পছন্দের যে কোনো সবজি),
৫. ৩/৪ টি কাঁচা মরিচ কুচি,
৬. ২ টি পেঁয়াজ কুচি,
৭. ১ ইঞ্চি আদা কুচি,
৮. ২ টেবিল চামচ টমেটো সস,
৯. ২ টেবিল চামচ ধনিয়া পাতা কুচি,
১০. লবণ স্বাদমতো,
১১. পানি পরিমাণমতো,
১২. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
> প্রথমে পানি দিয়ে বেসন ও চালের গুঁড়ো ভালো করে মিশিয়ে ঘন থকথকে ব্যাটারের মতো তৈরি করে নিন। ভালো করে মিশিয়ে নেবেন যেনো বেসনে দলা না থাকে।

> এরপর একে এঁকে বাকি সব উপকরণ (তেল ছাড়া) বেসনের মিশ্রনে দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ফেলুন। প্রয়োজনে আরও খানিকটা পানি দিয়ে বড়া ভাজার মতো মিশ্রন তৈরি করে ফেলুন।

> এরপর চুলায় কড়াইয়ে ডুবো তেলে ভাজার জন্য তেল গরম করে নিন। অল্প একটু মিশ্রন হাতে নিজে বড়ার মতো গোল চ্যাপ্টা আকার দেয়ার চেষ্টা করুন এবং তেলে দিয়ে লালচে করে মুচমুচে করে ভেজে তুলে নিন।

> একটি কিচেন টিস্যুতে রেখে তেল শুষে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন ইফতারে।

রেসিপি : প্রিয়.কম

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -২

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -২


নারীর জন্য আইন


তারা বলেন, আল্লাহর নির্ধারিত হিস্সার পরে বাকী অর্ধেক বা এক তৃতীয়াংশ মেয়েরা পেতে পারে না। সুতরাং বাকী সম্পদ লাভ করবেন এমন উত্তরাধিকারীগণ যাদের জন্য নির্ধারিত কোন হিস্সা নেই বরং তারা অবশিষ্ট সম্পদ লাভ করবেন। এ ধরণের উত্তরাধিকারীদেরকে মাওলা (আছাবা) বলা হয়। তারা বলেন, কন্যা সন্তান মাওলা হতে পারে না। তাই কন্যাদেরকে নির্ধারিত হিস্সা প্রদান করার পরে যা কিছু অবশিষ্ট থাকবে, তা লাভ করবে মৃতের অপরাপর আছাবাগণ (মাওলা)। আর ভাই-বোন হলেন সে আছাবা, যারা বাকী সম্পদ লাভ করবেন। কারণ হাদীছ শরীফে এসেছে: عـَنْ اِبـْنِ عَـبَّـاسٍ رَضِـيَ الـلـَّه عـَنـْهـُمـَا قـَالَ قـَالَ رَسـُولُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ اِقـْسِـمُـوْا الـْمَـالَ بَـيـْنَ اَهْـلِ الـْفَـرَائِـضِ عَـلـَى كِـتـَابِ الـلـَّهِ فـَمَـا تـَرَكـَتِ الـْفـَرَائِـضُ فـَلاَوْلـَى رَجُـلٍ ذَكـَرٍ হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন: ‘তোমরা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে সম্পদ বন্টন কর আল্লাহর কিতাব মোতাবেক। যে সম্পদ অবশিষ্ট থেকে যাবে, তা পাবে ঘনিষ্ঠতর পুরুষ লোক।’ (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ)

১। তাছাড়া অন্য হাদীছে এসেছে: عـَنْ جـَابـِرٍ قـَالَ جَاءَتْ اِمْـرَأَةُ سَـعْـدِ بْـنِ الـرَّبـِيـْـعِ بـِاِبـْنـَتـَيـْهـَا مـِنْ سَـعْـدٍ إلـَى رَسُـوْلِ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّـمَ فـَقـَالـَتْ يـَا رَسُـوْلَ الـلـَّهِ هـَـاتـَانِ اِبْـنـَتـاَ سَـعـْدِ بْـنِ الـرَّبـِيـْعِ قـُتـِلَ أَبـُوْهـُمَا مَـعَـك يَـوْمَ اُحـُدٍ شَـهـِيـْدًا وَاَنَّ عَـمَّـهُـمَا أَخَـذَا مَالـَهُـمَا ‏ فَـلَـمْ يَـدَعْ لـَهُـمَا مـَالاً وَلاَ تـُنـْكـَحـَانِ إلاَّ وَلـَهـُمَا مـَالٌ قـَالَ يـَقـْضِيْ الـلـَّهُ فـِيْ ذَلِـكَ فـَنـَزَلـَتْ آيـَة ُ الـْمِـيْـرَاثِ فـَبَـعَـثَ رَسُـوْلُ الـلـَّهِ صَـلـَّى الـلـَّهُ عَـلـَيـْهِ وَسَـلـَّمَ اِلـَى عَـمِّـهـِمَا فـَقـَالَ اِعْـطِ اِبـْنـَتـَىْ سَـعْـدٍ الـثــُّلـُثـَيْـنِ وَاِعْـطِ أُمـَّهُـمَا الـثــُّمُـنَ وَمـَا بَـقـِيَ فـَهـُوَ لـَكَ হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূল সা. এর কাছে সা’দ বিন রাবী’য় রা. এর স্ত্রী তার দু’জন মেয়েকে নিয়ে এসে আরজ করলেন: ‘হে আল্লাহর রাসূল, সা’দ বিন রাবী’য় রা. আপনার সাথে উহুদ যুদ্ধে গিয়েছিলেন। সে যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। এই তার দু’মেয়ে। তাদের সম্পদ তাদের চাচা নিয়ে গেছে; তাদের জন্য কিছুই বাকী রাখেনি। সম্পদ না থাকার কারণে তাদের বিয়েও দেয়া যাবে না।’ রাসূল সা. বললেন: ‘আল্লাহ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন।’ এর পরেই উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সা. তাদের চাচার কাছে খবর পাঠিয়ে বললেন: ‘সা’দের দু’মেয়েকে দু’তৃতীয়াংশ দিয়ে দাও এবং তাদের মাতাকে এক অষ্টমাংশ প্রদান কর। আর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তুমি পাবে।’ (সুনানু আবু দাউদ, তিরমিযী, সুনানু ইবনি মাজাহ, মুসতাদ্রাক প্রভৃতি)

২। এ হাদীছে মেয়েদেরকে নির্ধারিত হিস্সা দেয়ার পরে অবশিষ্ট অংশ রাসূলুল্লাহ সা. ভাইকে দিয়েছেন যা প্রমাণ করে যে, কন্যা সন্তানের সাথে ভ্রাতাগণও অবশিষ্ট হিস্সা পান।খ.       কন্যাদের সাথে বোনেরাও হিস্সা পায় বলে ছাহাবায়ে কেরামের একাংশ ও অধিকাংশ ফুকাহাদের যে মতামত রয়েছে, তার স্বপক্ষে কি যুক্তি ও দলীল রয়েছে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে একটি দলীল হল নিুোক্ত হাদীছ। বর্ণিত হয়েছে: عـَنْ اَبـُوْقـَيـْسٍ قـَالَ سَـمـِعـْتُ هـُذَيـْلَ بـْنَ شـُرَحـْبـِيـْلَ يـَقـُوْلُ سـُئـِلَ اَبـُوْ مـُوْسـَى عـَنْ اِبـْنـَةٍ وَاِبـْنـَةِ اِبـْنٍ وَاُخـْتٍ فـَقـَالَ لـِلاِبـْنـَةِ الـنـِّصْـفُ وَلـِلأُخـْتِ الـنـِّصْـفُ وَائـْتِ اِبـْنَ مـَسـْعـُوْدٍ فـَسـَيـُتـَابـِعـُنـِى فـَسـُئـِلَ اِبـْنُ مـَسـْعـُوْدٍ وَاُخـْبـِرَ بـِقـَوْلِ اَبـِىْ مـُوْسـَى فـَقـَالَ لـَقـَدْ ضَـلـَلـْتُ اِذَنْ وَمـَا اَنـَا مـِنَ الـْمـُهـْتـَدِيـْنَ أَقـْضِـيْ فـِيـْهـاَ بـِمـَا قـَضـَى الـنـَّبـِيُّ صَـلـَّى الـلـَّهُ عـَلـَيـْهِ وَسـَلـَّمَ لـِلاِبـْنـَةِ الـنـِّصْـفُ وَلاِبـْنـَةِ اْلاِبـْنِ الـسـُّدُسُ تـَكـْمـِلـَةَ الـثـُّلـُثـَيـْنِ وَمـَا بـَقـِيَ فـَلـِلأُخـْتِ فـَأَتـَيـْنـاَ اَبـاَمُـوْسـَيْ فـَاَخـْبـَرْنـاَهُ بـِقـَوْلِ اِبـْنِ مـَسـْعـُوْدٍ فـَقـَالَ لاَ تـَسـْأَلـُوْنـِيْ مـَا دَامَ هـَذَا الـْحـَبـْرُ فـِيـْكـُمْ ‘হযরত আবু কায়েস রাহ. বলেন: আমি হুযাইল বিন শুরাহবীল রাহ. কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, হযরত আবু মূসা আশআরী রা. কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, যদি একজন মেয়ে, একজন ছেলের তরফের নাতিন ও একজন বোন থাকে, তাহলে কে কত হিস্সা করে পাবে? তখন তিনি বললেন: ‘মেয়ে অর্ধাংশ পাবে আর বাকীটুকু পাবে বোন। তুমি আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ এর কাছে গিয়ে দেখতে পার, তিনিও আমার অনুসরণ করবেন।’ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. কে জিজ্ঞাসা করলে এবং আবু মুসা রা. এর মতামতের কথা জানালে তিনি বললেন: ‘আমি সঠিক পথের দিশা না পেলে পথভ্রষ্ট হয়ে যেতাম। আমি এমন রায় দেব যে রকম রায় দিয়েছিলেন রাসূলুল্লাহ সা.। মেয়ে অর্ধাংশ পাবে, নাতিন পাবে এক ষষ্টাংশ যাতে করে দু’জনের হিস্সা মোট দু’তৃতীয়াংশ হয়। আর বাকীটুকু পাবে বোন।’ আমরা হযরত আবু মূসা আশআরী রা. এর কাছে ফেরত গিয়ে তার কাছে ইবনু মাসউদ রা. এর রায়ের কথা জানালে তিনি বললেন, ‘এ পন্ডিত যতদিন আছে, ততদিন আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা কর না।’ (ছহীহ বুখারী, তিরমিযী, মুসতাদ্রাক)

৩। তাদের আরেকটি দলীল ফারাইজের গ্রন্থাবলীর সুত্রে জানা যায়। সে দলীলটি হল, রাসূলুল্লাহ সা. এর কথিত হাদীছ। যেমন বর্ণিত হয়েছে: اِجـْعـَلـُوْا اْلاَخـَوَاتِ مـَعَ الـْبـَنـَاتِ عـَصَـبـَةً ‘তোমরা মেয়েদের সাথে বোনদেরকে আছাবা বানাও।’ (সিরাজী, আল বাহরুর রায়ীক)

৪। উপরোক্ত বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে ফুকাহা ও ফারাইজবিদগণ আছাবা (মাওলা) উত্তরাধিকারীগণকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন।

১. ‘আছাবা বিনাফসিহী’,

২. ‘আছাবা বিগায়রিহী’ এবং

৩. ‘আছাবা মা’আ গায়রিহী’।

চলবে..

 

বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ

বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ


ডা. নুসরাত জাহান


বন্ধ্যাত্ব ও এর যত কারণ – সংগৃহীত

দুই বছর বা এর বেশি সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়াই গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে তাকে ডাক্তারি ভাষায় বন্ধ্যাত্ব হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮৪ জন প্রথম বছরে এবং ৯২ জন দ্বিতীয় বছরের মধ্যে গর্ভধারণ করতে সমর্থ হন। তাই বলা যায় প্রতি ১০০ জন দম্পতির মধ্যে ৮ জন বন্ধ্যাত্বের শিকার হন।

কখন কনসিভ না হওয়ার কারণ নির্ণয় করা দরকার?
এক বছর বা এর চেয়ে বেশি সময় কোনো ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পধ্বতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যার্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে কনসিভ না হওয়ার কারণ নির্ণয় করতে দেরি করা যাবে না। যেমন,

# বয়স ৩৬ বা এর বেশি হলে
# রোগীর আগে এমন কোনো হিস্ট্রি থাকলে যেগুলো তার বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে যেমন পেলভিক ইনফেকশন এর হিস্ট্রি অথবা
# এমন কোনো অপারেশন যা তার ফার্টিলিটি কমিয়ে দিতে পারে।

বন্ধ্যাত্বের যত কারণ

বন্ধ্যাত্বের কারণ অনেক। আবার স্বামী-স্ত্রী যেকোনো একজন বা উভয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা থাকতে পারে। গর্ভধারণের জন্য দরকার একটি সুস্থ ওভাম (ডিম), সবল বীর্য, নরমাল ইউটেরাস বা জরায়ু এবং নরমাল পেলভিক এ্যানাটমি। এর যেকোনো জায়গায় সমস্যা হলে গর্ভধারণে ব্যর্থতা দেখা দিতে পারে।

প্রাথমিকভাবে বন্ধাত্ব্যের কারণগুলো তিনভাগে ভাগ করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে এনুভলেশন (ডিম্বাশয় থেকেও ভামবাডিম নিসরণ না হওয়া ), জরায়ু বা ডিম্ব নালীর সমস্যা ও পুরুষ সঙ্গীর সমস্যা।
ওভুলেসন বা ডিম্বস্ফুটন না হওয়ার কিছু কারণ :

• পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
• হরমনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ : কিছু কিছু হরমোন যেমন প্রলেক্টিন, থাইরয়েড হরমোন অথবা পিটুইটারি FSH, LH হরমোনের অস্বাভাবিক মাত্রায় নিঃসরণ ও ভুলেশন ব্যাহত করে।

• শরীরের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি বা কম থাকা।
• প্রিমেচিউর ওভারিয়ান ফেইলিউর
• অতিরিক্ত মানসিক চাপ।
• অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যান্সার কিংবা কিডনি রোগেও অভুলেশন ব্যাহত হতে পারে।
• কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি সাময়িক বা পরোপুরিভাবে ওভারিকে অকার্যকর করে দিতে পারে।
• ধূমপান, অথবা অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান।

জরায়ু বা ডিম্বনালীর সমস্যা :
• জারায়ুর টিউমার যেমন এডিনোমায়োসিস,ফাইব্রয়েড বা পলিপ।
• পেলভিক ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (পি আই ডি) অথবা যেকোনো ইনফেকশনের কারনে ডিম্বনালী বন্ধ হয়ে ওভাম ও শুক্রাণু নিষিক্তকরনের পথ বন্ধ করে দিতে পারে।
• এন্ডোমেত্রিওসিস বন্ধ্যাত্বের একটি পরিচিত কারণ। এ রোগের লক্ষণ মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, পেটে ব্যথা ইত্যাদি।

• ইনফেকশন বা এন্ডোমেত্রিওসিস জরায়ু এবং এর আশপাশের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক এনাটমি নষ্ট করে বন্ধাত্ব্যের কারণ ঘটায়।

মেল (পুরুষ) ফ্যাক্টর
৩০% ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর সমস্যার কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।

• শুক্রাণু বা বীর্য যথেস্ট গতিশীল না হলে বা অস্বাভাবিক গঠনগত কারণে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
• কোনো কারণে শুক্রাণু তৈরী ব্যাহত হলে, যেমন জিনগত ত্রুটি, ভেরিকোসেলি, টেস্টিসের টিউমার বা ইনফেকশন অথবা কোণো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জনিত কারনে নরমাল শুক্রাণু তৈরী বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে।

পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রেই গর্ভধারণের হার বয়স বাড়ার সাথে কমে যায়। ৩৫ বছরের পর থেকে মেয়েদের ওভুলেশনের হার কমতে থাকে, একইসাথে শুক্রাণুর কার্যকারিতাও বয়সের সাথে সাথে কমে। তাই এই চিকিৎসায় বিলম্ব হলে সাফল্যের হারও কমে যায়।

ডা. নুসরাত জাহান
এসোসিয়েট কনসালটেন্ট (অবস-গাইনি)
ইমপেরিয়াল হসপিটাল, চট্টগ্রাম

 

সন্তানকে যা কখনো বলবেন না পর্ব -২(শেষ)

সন্তানকে যা কখনো বলবেন না পর্ব -২


কানিজ ফাতিমা


আপনি এত কষ্ট করার পর কি সন্তানের ক্ষতি চান? যদি না চান , তাহলে আর একটু ধৈর্য্য বাড়ান৷ আপনার যত কষ্টই হোক কখনই আপনার সন্তানকে এটা বলবেন না যে-তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না …
তোমার মত ছেলে/মেয়ে আমার দরকার নাই ..
কখনই তার সঙ্গে ওর সমবয়সী কারো তুলনা করবেন না ৷ যদি কাউকে মডেল হিসাবে সামনে রাখতে চান তাহলে মহত মানুষদের ছোট বেলার গল্প বলতে পারেন বা তার থেকে বড় কারো কথা বলতে পারেন ৷ বড়দের অনুকরণ করতে বাচ্চারা পসন্দ করে কিন্তু সমবয়সী কাউকে না ৷অন্যের কাছে তার নামে কখনও অভিযোগ করবেন না , অন্তত তখন করবেননা যখন সে তা শুনতে পায় ৷ এতে বাচ্চারা মনে করে মা (বা বাবা ) তার সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে না ..তার বদনাম করে …৷ এতে তার মন খারাপ হয় এবং তার self esteem কমে যায় ৷ তবে এর মানে এই না যে আপনি বাচ্চার সমস্যা নিয়ে অন্যের সঙ্গে আলোচনা করবেন না ৷ বাচ্চাদের সমস্যা গোপন না রেখে অভিজ্ঞ কারো সাথে এ নিয়ে আলোচনা করলে সুফল পাওয়া যায় ৷ তবে এক্ষত্রে যা মনে রাখতে হবে তাহলো এটা বাচ্চার সামনে কখনই করা যাবে না ৷ এমনকি তাকে পাশের ঘরে রেখেও না – অনেক সময় মনে হয় তারা শুনছে না বা খেলা নিয়ে ব্যস্ত আছে …কিন্তু আসলে তারা শোনে৷ তার সম্পর্কে negative কোনো কথার একটি শব্দ ও যদি তার কানে যায় তাহলে সে আপনার প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে , মনে করবে ” মা মনে হয় সব সময়েই আমার নামে এসব কথা বলে…” ৷ তাছাড়া বাচ্চারা তার সম্পর্কে বাবা- মার মন্তব্য শুনতে খুবই আগ্রহী ৷ আপনি তার সম্পর্কে কিছু বলতে শুরু করলেই সে কান খাড়া করে তা শুনে , কিন্তু ভান করে যে সে আপনার কথায় একেবারেই মনোযোগ দিচ্ছে না ৷ কাজেই তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলুন ” তাহমিদ অনেক চেষ্টা করে …সে আগের চেয়ে উন্নতি করছে …আর একটু চেষ্টা করলে সে অনেক ভালো করবে …” ৷ নিজের সম্পর্কে এ রকম মন্তব্য শুনলে বাচ্চারা তাদের চেষ্টা বাড়িয়ে দিবে এবং আপনার সঙ্গে তার সম্পর্ক সদৃঢ় হবে ৷মনে রাখবেন আপনার সঙ্গে আপনার বাচ্চার সম্পর্ক অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে তার সঠিক Development এর জন্য বেশী জরুরী ৷

শেষ কথা -এ কথা গুলো বলা যত সহজ করা তত সহজ না ৷ আসলেই এটা কঠিন একটি কাজ …একটু চিন্তা করুন – আপনি কি চাচ্ছেন ? সন্তান মানুষ করতে…এটা স্বাভাবিক একটি চাওয়া কিন্তু ছোট চাওয়া না ৷ পৃথিবীর সবথেকে কঠিন কাজটি আপনি করছেন- Human Resource Development ৷ পৃথিবীর সবথেকে উন্নত জীব কে গড়ছেন আপনি ৷ এটা অন্য যে কোনো কাজের চেয়ে Challenging৷ কাজেই অন্য যেকোনো কাজের চেয়ে বেশী ধৈর্য ও বুধিমত্তা প্রয়োজন ৷ এবং সেটা আপনাকেই করতে হবে -কারণ আপনার সন্তানের ভালো চান আপনি ৷

 

অটিস্টিক শিশুদের প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন

অটিস্টিক শিশুদের প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্ন


স্বাস্থ্যকথা


রাহেলা আর রিদোয়ান বিয়ে করেন ভালোবেসে। পরিবার প্রথমে মত না দিলেও পরে দুই পরিবারই মেনে নেয় তােেদর এই বিয়ে। প্রথম তিন বছর তারা কোন বাচ্চাই নেয়নি। ইচ্ছে ছিল নিজেদের একটু গুছিয়ে তারপর সন্তান নিবে। বিয়ের সাড়ে পাঁচ বছরের মাথায় তাদের পরিবারে আসে ফুটফুটে ছেলে সন্তান। শুরুতে ভালোই কাটছিল রাহেলা আর রিদোয়ানের দিন। তাদের সব স্বপ্নই তৈরী হচ্ছিল সন্তান আদিলকে নিয়ে।
কিন্তু জন্মের ছয়-সাত মাস পরেই বুঝতে পারে তাদের সন্তান অন্য আর দশটি সাধারণ শিশুর মত নয়। তাদের আদিল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু। সে অটিস্টিক। ডাক্তারের এমন কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তাদের দু’জনের মাথায়। এ কথা জানার পর কয়েকদিন ভালো করে কোন কিছু চিন্তাও করতে পারেননি তারা। পরে আবার তারা ডাক্তারের পরামর্শ নেন- কীভাবে আদিলকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জগতে ফিরিয়ে আনা যায়।
প্রতিটি শিশুই নিষ্পাপ। আর অটিস্টিক শিশুরা তো এমন শিশু যে তারা একেবারেই নিষ্পাপ। তারা নিজের চাহিদা, অনুভূতি, আবেগ সুন্দরভাবে কিংবা মন খুলে প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য পিতা-মাতাকে সব সময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হয়।
সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফর্মেশন এর পরিসংখ্যান মতে, ঢাকাতে ৩ শতাংশ শিশু অটিস্টিক। তবে বাংলাদেশে এ হার ০.১৫ শতাংশ।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মনির হোসেন বলেন, অটিজম শব্দটা সম্পর্কে আগে আমাদের খুব একটা ধারণা ছিল না। তবে এখন জনসচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ এ রোগ সম্পর্কে জানছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুরা নিজেদের চাহিদা নিজেরা প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য বাবা-মা বা আশপাশের আত্মীয়-স্বজন যদি সচেতন থাকে তবে এ ধরেনর অনেক বাচ্চাই সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থাকে। এমনকি অনেক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বাচ্চা বড় হয়ে চাকরি করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রায় সকল অটিস্টিক শিশুরই কোন না কোন বিষয়ের প্রতি বিশষ আগ্রহ থাকে। আর সে সব শিশুরা ঐ সব বিষয়ে খুব পারদর্শী হয়।
ডা. মনির বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে অটিজম বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরীতে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন হাসপাতালে অটিজম বিভাগ খোলা হয়েছে যাতে করে এ ধরনের শিশুদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দেয়া যায়। ২০০৮ সাল থেকে এটি বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
একই হাসপাতালের আরেক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, কারো পরিবারে অটিস্টিক বাচ্চা জন্ম নিলে আগে বাচ্চার মাকেই দোষারোপ করা হত। যেন বাচ্চার মা’ই এ ধরনের বাচ্চা জন্মদানের জন্য দায়ী। কিন্তু আসলে এতে মায়েদের কোন দোষ বিজ্ঞানসম্মতভাবে এখনো পাওয়া যায়নি। যদিও এখন এ ধরনের মনোভাব অনেকাংশে কমেছে। মূলত সরকারের নানাবিধ পদক্ষেপের কারনেই এটি সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন নিতে হয়। সব সময় এদের চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন। অনেক সময় যথাযথ জ্ঞান ও ধারণার অভাবের কারণে এ ধরনের শিশুদের ঘরের বাইরে খুব একটা নেয়া হয় না। তবে তাদের অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে মেশার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষিত বাবা মা ও সচেতন নাগরিকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, এ ধরনের শিশুদের লেখাপড়ার সুযোগ তৈরী করে দিতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বড় বিভাগীয় শহর যেমন চট্টগ্রাম এবং রাজশাহীতে এ ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আলাদা স্কুল আছে। তবে কম অটিস্টিক শিশুদের যদি অন্য সাধারন শিশুদের সাথে তাদের স্কুলে পড়ালেখা করানো যায় তবে অটিস্টিক শিশুরা অনেকটা সুস্থ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য স্কুলের শিক্ষক এবং অন্য অভিভাবকরা যদি সচেতন হন এবং এগিয়ে আসেন তবে অটিস্টিক শিশুরাও সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

সুত্রঃ (বাসস)

 

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব-১

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার পর্ব -১


নারীর জন্য আইন


অধিকাংশ সাহাবাগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং কুরআনের সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, “মৃত ব্যাক্তির যদি স্বামী বা স্ত্রী না থাকে, তার যদি এক বা দুই জন কন্যা সন্তান থাকে তাহলে তারা প্রথমত দুই তৃতীয়াংশ সম্পত্তি পাবে এবং রদের ভিত্তিতে বাকী সম্পত্তিটুকু পাবে। যদি মৃত ব্যাক্তি কালালা (নিঃসন্তান) হয় তাহলে মৃত ব্যাক্তির সম্পদের অংশ থেকে তার ভাই অথবা বোন পাবে। এখানে কালালার ব্যাপারে বলা হচ্ছে। হযরত কাতাদাহ্ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “কালালা এমন ব্যাক্তি যার অধঃস্থন ও উর্দ্ধতন কেউ নেই। অর্থাৎ, যারা পিতা বা দাদা অথবা ছেলে কিংবা মেয়ে কেউ নেই (ইব্নে জাবির)। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমর (রা.) এর জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, আমি যা বলেছি সঠিক বলেছি (আমি বললাম) আপনি কি বলেছেন? তখন তিনি বললেন, কালালা হলো এমন লোক যার কোন সন্তান নেই। হানাফী মাজ্হাবের অনুসারী কিছু আলেমগণ কুরআনের আয়াতের বিপরীতে কিছু দূর্বল হাদীসের ভিত্তিতে মৃত ব্যাক্তির কন্যাদের কে তার সম্পদের অর্ধেক প্রদান করে বাকী অর্ধেক মৃত ব্যাক্তির ভাই অথবা বোনকে প্রদান করে। সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াত নাজিল হয়, রাসূল (সা.) এর যুগের শেষ দিকে অর্থাৎ বিদায় হজ্জ্বের সময়। যাকে গ্রীষ্মকালীন আয়াত নাম দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ আয়াত নাজিল হবার পরে মেয়ে সন্তান থাকা অবস্থায় রাসূল (সা.) ভাই বোনকে অংশ দিয়েছেন বলে কোন প্রমাণ নেই। সুতরাং কুরআন ও হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধও নেই। কিন্তু বড়ই দূর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমাদের দেশ সহ দেশে দেশে মেয়ে সন্তান হলে তার সাথে ভাই – বোনকে ও সম্পত্তিতে অংশীদার করা হয়। যা সুরা নিসার ১৭৬ নং আয়াতের সরাসরি লংঘন বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া উহা নারীর প্রতি সুস্পষ্ট বৈষম্য। কুরআন উহা অনুমোদন করে না। বরং এ সর্বশেষ আয়াতের মাধ্যমে পূর্বেকার বিধানগুলোকে মানসূখ করা হয়েছে। মানসূখ বিধানকে বাতিল করে এ ১৭৬ নং আয়াতের বিধানের মাধ্যমে ফারায়েজের সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

এতিম কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে সক্ষম ভ্রাতাদের উত্তরাধিকার: একটি ভিন্নতর দৃষ্টিভঙ্গি মাওলানা সৈয়দ জিল্লুর রহমান মানুষ মরণশীল।

একদিন সবাইকে মরতে হবে। সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতেই হবে। মৃত্যু পরবর্তী কর্মকান্ডের মধ্যে সম্পদ বন্টণ এবং উত্তরাধিকারই প্রধান কাজ। উত্তরাধিকারী আত্মীয়গণের মধ্যে কিছু আত্মীয়ের উত্তরাধিকার শর্তহীন ও প্রশ্নাতীত। যেমন ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রী। আবার কিছু সংখ্যক আত্মীয় এমন আছেন, যাদের উত্তরাধিকার শর্তহীন নয় এবং যাদের উত্তরাধিকার নিয়ে চিন্তাশীল মনিষীদের মধ্যে ভিন্নমত ও বিতর্ক রয়েছে। কন্যা সন্তানের উপস্থিতিতে ভাইবোনদেরকে উত্তরাধিকারী গণ্য করে হিস্সা প্রদান করা এমন একটি বিতর্কিত বিষয়।মৃতের সন্তানদের মধ্যে যদি এক বা একাধিক কন্যা সন্তান থাকে এবং তাদের সাথে মৃতের ভাইবোনও বর্তমান থাকেন, তাহলে এ এতিম কন্যাদের পাশাপাশি শক্ত-সামর্থ ভ্রাতা-ভঙ্গিগণ উত্তরাধিকারী গণ্য হবেন কি না, তা নিয়ে মনিষীদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিতর্ক রয়েছে। হযরত উমার রা, ইবনু মাসঊদ রা. ও আবু মুসা আশআরী রা. সহ একদল ছাহাবায়ে কেরাম ও বিরাট সংখ্যক ফুকাহাগণ কন্যাদেরকে নির্দিষ্ট হারে হিস্সা দেয়ার পরে অবশিষ্ট অংশ ভাইবোনদেরকে প্রদান করার পক্ষে মত প্রকাশ করে থাকেন। তাদের মতের সমর্থনে নিুোক্ত প্রমাণাদি তারা পেশ করেন:ক.       তাদের বিবেচনায়, মেয়েরা হল এমন উত্তরাধিকারী যাদের জন্য নির্ধারিত হিস্সা রয়েছে। যাকে ইলমুল ফারাইজে বলা হয় ‘যবীল ফুরূজ’। কারণ, তারা বলেন, মেয়ে একজন হলে সে অর্ধেক সম্পদ পায়, একাধিক হলে পায় দু’তৃতীয়াংশ। যেমন আল্লাহ তা’লা বলেন: فـَاِنْ كـُنَّ نـِسَـاءً فـَوْقَ اثـْنـَتـَيـْنِ فـَلـَهـُنَّ ثـُلـُثـَا مَـا تـَرَكَ وَاِنْ كـَانـَتْ وَاحِـدَةً فـَلـَهَـا الـنـِّصْـفُ وَلأَبـَوَيـْهِ لـِكـُلِّ وَاحِـدٍ مِـنـْهـُمـَا الـسُّـدُسُ مِـمـَّا تـَرَكَ اِنْ كـَانَ لـَهُ وَلـَدٌ ‘‘সুতরাং তারা যদি দু’য়ের অধিক কন্যা সন্তান হয়, তাহলে তারা পাবে দু’তৃতীয়াংশ যা কিছু সে রেখে যাবে তা থেকে। আর যদি সে একজন নারী হয়, তাহলে সে পাবে অর্ধেক। এবং পিতামাতার প্রত্যেকে মৃত ব্যক্তি যা কিছু ছেড়ে যাবে তাতে এক ষষ্টাংশ করে পাবেন, যদি মৃতের কোন সন্তান থাকে।” (সূরা নিসা-১১)।

চলবে…

সংগ্রহঃ কানিজ ফাতিমা আপুর ফেসবুক ওয়াল থেকে…

 

রুই মাছের চপ


রেসিপি


উপকরণ :
১. যেকোনো মাছ (রুই) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
> মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

রেসিপি : বাংলা মেইল

 

সন্তানকে কখনওই যা বলবেন না পর্ব–১

সন্তানকে কখনওই যা বলবেন না পর্ব -১


কানিজ ফাতিমা


সব বাবা-মা ই চান তার সন্তানটি সেরা হোক, সব কিছুতে ভালো হোক, চৌকস হোক৷ এজন্য তারা অনেক চেষ্টা করেন, ত্যাগ করেন, সময় দেন, সামর্থ অনুযায়ী অর্থ ব্যয় করেন৷ এরপর ও যখন কাঙ্খিত ফল পান না তখন কষ্ট পান , মুষড়ে পড়েন৷ তারা তাদের কষ্টের এ অনুভুতি প্রকাশ করেন বিভিন্ন ভাবে –

কেউ রাগ করেন
কেউ চেচামেচি করেন
কেউ অভিযোগ করেন
কেউ Nagging করেন ….
যে কারণে তারা রাগ, চেচামেচি, অভিযোগ বা Nagging করেন তার যৌক্তিকতা আছে৷ বাবা-মা সন্তানের ভালো চান বলেই এগুলো করেন , কিন্তু তারা যে এই রাগ চেচামেচি করছেন, তার ফল কি হচ্ছে ? – অবশ্যই খারাপ৷ অর্থাত- কারণ যুক্তিযুক্ত হলেই আপনার কাজ ভালো ফল আনবে তা নয় ৷ কারণ যুক্তযুক্ত হতে হবে এবং Action positive হতে হবে – তবেই result positive হবে ৷

ভালো কারণ + Positive Action = Positive Result

ভালো কারণ + Negative Action = Negative Result

একটি কেস স্টাডি বলছি –

তাহমিদের বয়স ৭ বছর ৷ সে চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে ৷ ফলে চেয়ারে অনেকক্ষণ বসে থেকে নিবিষ্ট মনে পড়তে বা লিখতে পছন্দ করে না ৷ লিখতে বসলে প্রথম দিকে হাতের লেখা ভালই হয় – কিন্তু কিছুদুর গিয়ে আকাবাঁকা হতে শুরু করে ৷ তার মা অনেক চেষ্টা করেছে , অনেক অনেক চেষ্টা -নানা রকম চেষ্টা ৷ এতে কিছুটা কাজ হয় , কিন্তু ততটা না ৷

অথচ পাশের বাসার তাদভীনের হাতের লেখা কত সুন্দর ৷ শান্ত হয়ে বসে সে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে ফেলছে , তার মাকে তেমন কষ্ট করতে হয় না ৷ ফলে তাহমিদের মা রেগে গিয়ে বলেন-

” তোকে নিয়ে কত চেষ্টা করলাম , কোনো কাজই হয় না “

” তোকে দিয়ে কিছু হবে না “

” এটাই পারিস না , জীবনে কি করবি?”

” এরকম করলে আর কিন্তু ভালবাসবনা “

” দেখ গিয়ে তাদভীন কত ভালো “

” তুই তো কিছুই শিখতে চাস না “

তাহমিদের মা ফোনে তার বোনকে দুঃখ করে বলেন –

” ওকে নিয়ে এত চেষ্টা করি , কিছুতেই কিছু হয় না ..”

তাহমিদের মা এর এ কথা গুলো বলার কারণ কি? – তিনি মনে করছেন এভাবে বললে তাহমিদ শুধরে যাবে৷ কিন্তু আসলে ফল কি হচ্ছে ?

তাহমিদ আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে – আসলেই কি তার মধ্যে কোনো যোগ্যতায় নাই?
সে চেষ্টা করার Motivation হারিয়ে ফেলছে
সে মনে করছে তার মার কাছে সে মূল্যহীন ৷ এ বয়সে তার মা-বাবা আর স্কুলের বন্ধুরাই তার কাছে গোটা বিশ্ব ৷ তার মনে হচ্ছে তার উপর আকাশ ভেঙ্গে পরছে , তার বিশ্বের বড় অংশটাই অন্ধকার হয়ে গেছে ….
সে নিজের অজান্তেই rude ভাবে কথা বলতে শিখছে … ফলে সেও অন্যদেরকে এভাবেই আঘাত করে কথা বলবে …
এ কেস স্টাডি থেকে আমরা কি জানলাম-

আমরা দেখলাম এই কথা গুলো বলার পেছনে আপনার উদ্দেশ্য ছিল তাহমিদের উন্নতি করা , ভালো করা৷ কিন্তু ফল হচ্চ্ছে উল্টো -তার ক্ষতি হচ্ছে ৷

চলবে…

 

শীলা বিয়ের পর থেকে শ্বশুড় বাড়ীতে থাকে


সাহিত্য


শীলা বিয়ের পর থেকে  শ্বশুড়  বাড়ীতে থাকে ৷  শীলার শ্বাশুড়ী জাহানারা বেগম ৷ শীলা বা  জাহানারা বেগম কেউই খারাপ মানুষ না ৷ কিন্তু তাদের সম্পর্ক খুব একটা মধুর না ৷ জাহানারা বেগম গোছানো স্বভাবের ৷ সবকিছু, বিশেষ করে রান্না ঘরের  জিনিস পত্র তার গোছানো থাকা চাই ৷ রান্না ঘরের  প্রত্যেকটি জিনিস যত্ন করে জায়গামত রাখা, সবকিছু ঝকঝকে তকতকে করে রাখার ব্যাপারে তিনি খুবই সচেতন৷ কেউ এগুলো তার মত গুছিয়ে ব্যবহার করতে না পারলে তিনি খুবই বিরক্ত বোধ করেন এবং অভিযোগ করেন৷ অন্যদিকে শীলা স্বভাবে ঠিক উল্টো৷ সে দ্রুত কাজ করে, একেবারেই গোছালো না এবং তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জিনিসপত্রের খুব একটা যত্ন নিতে পারে না৷ ফলে রান্নাঘর ব্যবহার করে সে প্রায়ই এটাকে এলোমেলো করে রাখে৷ তার এ স্বভাব নিয়ে জাহানারা বেগম প্রায়ই অভিযোগ তোলেন ৷ শীলা চেষ্টা করে কিছুটা গুছিয়ে কাজ করতে৷ কিন্তু সে খুব একটা সফল হয়না ৷তাছাড়া শীলা চাকুরী করে বলে তার পক্ষে রান্না ঘরে খুব বেশী সময় দেয়া সম্ভব না ৷ফলে বউ-শ্বাশুড়ী সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে৷ জাহানারা বেগমের অভিযোগ, “বউ একেবারেই কাজের না ৷ খুবই অগোছালো, এলোমেলো ৷পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না ৷” শীলার অভিযোগ, ” শাশুড়ী সকাল-বিকাল তার পিছনে লেগেই থাকে, সবকিছু নিয়ে খ্যাচ  খ্যাচ  করে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেই থাকে৷” এর সঙ্গে পর্যায়ক্রমে যুক্ত হয় শীলার মা ও ননদ৷ শীলার মা দুঃখ করে বলে, ” শ্বাশুড়ী টা আমার মেয়েটাকে শুধু জ্বালায়”৷ ননদ বলে, “শীলা আমার মায়ের বদনাম করে বেড়ায়৷”  এ  ঘটনায় আমরা যা দেখতে পাই তাহলো,  শীলা ও জাহানারা বেগম দু’জনের কারো চাওয়াই  (expectation) অযৌক্তিক না এবং দু’জনের অভিযোগই সত্যি৷  শ্বাশুড়ী চাচ্ছেন বউ তার মত গুছিয়ে কাজ করুক৷ অন্যদিকে, বউ চাচ্ছে শ্বাশুড়ী তার বিরুদ্ধে সকাল বিকাল অভিযোগ করা বন্ধ করুক ৷ এক্ষেত্রে দু’জনই ঠিক ৷ তাহলে সমস্যা কোথায় ? সমাধানই বা কি? সমস্যাটা হলো দু’জনের দু’জনকে বোঝায়৷ জাহানারা বেগম ও শীলা দু’জন ভিন্ন প্রকৃতির মানুষ৷ তাদের Personality type ভিন্ন ৷ তারা একজন আরেকজনের মত হতে পারবে না ৷ জাহানারা বেগম যদি মনে করেন শীলাকে তার মত হতে হবে তবে তিনি ভুল করছেন৷ মানুষ তার Personality type পুরোপুরি বদলাতে পারে না ৷ তাই জাহানারা বেগমকে শীলার অগোছালো স্বভাবকে মেনে নিতে হবে এবং এ নিয়ে অভিযোগ করা বন্ধ করতে হবে ৷ অভিযোগ বন্ধ করে শীলাকে ধীরে ধীরে কাজের পদ্ধতি দেখিয়ে দিলে long term এ শীলার এ যোগ্যতা কিছুটা বাড়বে (skill development)৷ কিন্তু অভিযোগ (বা nag) সম্পর্কের অবনতি ছাড়া আর কিছুই ঘটাবে না ৷ একই সাথে শীলাকেও স্বীকার করতে হবে তার শ্বাশুড়ীর একটি ভালো গুন বা (Skill) আছে৷ যতটা সম্ভব এ গুনটির অনুকরণ করা তার নিজের জন্যই ভালো ৷ সবথেকে  গুরুত্বপূর্ণ হলো তাদের দু’জনকেই বুঝতে হবে অন্যজন ‘খারাপ মানুষ’ না, সে তার থেকে ‘ভিন্ন প্রকৃতির’ মানুষ৷ আল্লাহ তা’আলাই মানুষকে ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির করে সৃষ্টি করেছেন৷ এর পরও যদি দু’জন দু’জনের এই ভিন্নতা মেনে নিতে না পারে তবে আলাদা থাকাই তাদের জন্য ভালো৷ একসাথে থেকে পরস্পর সম্পর্কে বিরক্ত হওয়ার থেকে ভিন্ন থেকে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখা কল্যানকর ৷

 

মুরগির হালিম


মুরগির হালিম


উপকরণ :
১. মুরগি ১ কেজি,
২. গম আধা কাপ,
৩. মুগ ডাল সিকি কাপ,
৪. মসুর ডাল সিকি কাপ,
৫. ছোলার ডাল সিকি কাপ,
৬. মাষকলাইয়ের ডাল সিকি কাপ,
৭. অড়হড় ডাল সিকি কাপ,
৮. পোলাওয়ের চাল আধা কাপ,
৯. লবণ স্বাদমতো,
১০. এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা কয়েকটা, পেঁয়াজ কুচি সিকি কাপ, আদা বাটা ২ ১১. টেবিল চামচ,
১২. রসুন কুচি ১ টেবিল চামচ,
১৩. হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৪. মরিচ গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৫. জিরা গুঁড়া ১ চা-চামচ,
১৬. ধনিয়া গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১৭. গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা-চামচ,
১৮. জায়ফল-জয়ত্রী গুঁড়া আধা চা-চামচ।

প্রণালি :
> গম, মাষকলাই ডাল ও মুগ ডাল টেলে নিন। চাল, ডাল ও গম সেদ্ধ করে বেটে নিন। তেলে পেঁয়াজ বাদামি করে ভেজে সব মসলা ও মুরগি দিয়ে কষান। সামান্য পানি দিয়ে ঢেকে দিন। সেদ্ধ হলে বাটা ডালের মিশ্রণ ও পরিমাণমতো পানি দিয়ে নাড়ুন। হয়ে গেলে নামিয়ে বাটিতে ঢেলে, আদা কুচি, ধনিয়া পাতা, মরিচ, বেরেস্তা ও লেবুর রস দিয়ে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : জেবুন্নেসা বেগম, বাংলাদেশি রেসিপি।

 

অদ্ভুত একটা শান্তি

অদ্ভুত একটা শান্তি


আফরোজা হাসান


কথা প্রসঙ্গে এক বোনকে আনন্দ আর প্রশান্তির মধ্যের বিস্তর ফারাকের এর ব্যাপারে বলার পর বোনটি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে বলার অনুরোধ করেছিল। একটা উদাহরণ দিয়ে বোনটিকে মোটামুটি বোঝালেও নিজে ঠিক তৃপ্তি পাচ্ছিলাম না। ঠিক মনের মতো করে বোঝাতে পারিনি আসলে। এরপর থেকেই খচখচ করছিল বিষয়টা। খচেখচে মন নিয়েই পুত্রকে স্কুল থেকে আনতে গেলাম। যদি কোনদিন খানিকটা আগে চলে যাই স্কুলের সামনের পার্কে বসে অপেক্ষা করি। কিছুটা দূরে বসে ছুটির পর স্কুলের গেট দিয়ে ছুটোছুটো করে বেরিয়ে আসা বাচ্চাদের দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। কেউ বাবার কোলে চড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, কেউ মায়ের হাত ধরে। কেউ কেউ আবার দাদা বা দাদীর সাথে লাফাতে লাফাতে পথ চলে।

এককথায় বর্ণিল আনন্দের ছড়াছড়ি লেগে যায় স্কুল ছুটির সময় চারপাশের পরিবেশে। ভীষণ উপভোগ করি আনন্দ রঙের এই বিচ্ছুরণ। তবে এই আনন্দময় ক্ষণেও উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকি সেই দিকে যেদিক থেকে পুত্র বের হবে। একটা ব্যাপার সবসময়ই নোটিশ করেছি অন্যান্য বাচ্চাদের দেখে আমার মনে যে আনন্দানুভূতি খেলা করতে থাকে গেটে আমার পুত্রকে ছায়া দেখা মাত্রই সেটা বদলে যায়। অদ্ভুত একরকমের শান্তি আর স্বস্থি বোধ ঘিরে ধরে মনকে। ছুটে এসে যখন সালাম দিতে দিতে কাছে এসে দাঁড়ায়, ওকে জড়িয়ে দরার পর শরীর মনের সমস্ত ক্লান্তি কোথাও যেন উবে যায়। অদ্ভুত রকমের একটা শান্তি ভাব জাপটে ধরে মনকে। আজও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো পুত্রকে আনতে যাবার সময়। এবং একই সাথে আরেকটা উপলব্ধি জাগলো। আনন্দ ও প্রশান্তির সংজ্ঞাটা নতুন করে উন্মোচিত হলো আমার সম্মুখে।

আনন্দ উপভোগের আর প্রশান্তি শুধুই অনুভবের। আনন্দ মনকে উদ্বেলিত করে, উৎফুল্ল করে। কিন্তু ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, তৃষিত প্রাণ শীতল পানির ধারায় আস্বাদিত হবার উপলব্ধির নাম প্রশান্তি। প্রশান্তিকর মূহুর্তে জীবনের সবটুকুন পূর্ণতার ছোঁয়া নিহিত…..

— আফরোজা হাসান

বইমেলা সমাচার

বইমেলা সমাচার


জান্নাতুন নুর দিশা


ঘটনা ১:

গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলার প্রকাশনের ৩৩৭-৩৩৮ নং স্টলে গিয়ে বসে আছি। দুপুরে মেলা খানিকটা ঝিমায়, বিকেলে জমে। সেই দুপুরেই একটা মেয়ে স্টলে এসে বই নাড়াচাড়া করছেন, বিক্রয়কর্মীকে জিজ্ঞেস করলেন আপনাদের নতুন বইগুলো দেখান। বিক্রয়কর্মী কয়েকটা বই এগিয়ে দিলেন। মেয়েটি বইয়ের ফ্ল্যাপ খুলে পড়লেন। অনিকেত এর ফ্ল্যাপ পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে কী যেন ভাবলেন! তারপর বিক্রয়কর্মীকে বললেন, “আপনারা কত ভালো বই করেছেন। এই এসব বইয়ের অত প্রচার হয় না কেন। বইটা পছন্দ হয়েছে, নিতে চাই।”
মেয়েটা অনিকেত কিনে নেয়ার পর বিক্রয়কর্মী বললেন, “লেখক উপস্থিত আছেন কিন্তু স্টলে।”
ক্রেতা সচকিত হয়ে জানতে চাইলেন, “কই তিনি? আমি পরিচিত হতে চাই।”

পরে আমার সাথে এসে কথা বললেন তিনি। মেয়েটির চোখের দিকে তাকালাম, চোখে সমীহ, উৎসাহ আর ভালোবাসার ভাষা। জানালেন আমাকে চেনেন না। ফেসবুকে অত এক্টিভ না তিনি। মেলায় ঘুরে ঘুরে বইয়ের ফ্ল্যাপ, ভূমিকা পড়ে যাচাই করে বই কেনার অভ্যাস এবং অনিকেতের ফ্ল্যাপ, ভূমিকা পড়েই তিনি আগ্রহবোধ করছেন। বই পড়ার পর এই ভালোলাগার রেশ থেকে গেলে তিনি আগামীমেলায় এসে আমার বই খুঁজে বের করবেন। একটা অটোগ্রাফ দিতে বললেন। আমি লিখে দিলাম, “আপনার কথা আমার মনে থাকবে। ভালোবাসা।”

এখনো এমন দেখেশুনে যাচাই করে বই কেনা পাঠক আছেন এবং আমার বই এমন পাঠকদের স্পর্শ করে ভাবতেই এত ভালো লাগছিল!

ঘটনা ২:

গতকাল মেলার শেষ দিকে। আমি বেশ ক্লান্ত। ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছি। বেরিয়ে যাবো এমন সময় দুজন কিশোর এলো। মাদ্রাসার ছাত্র হবে সম্ভবত, বয়স চৌদ্দ/পনেরো হবে, পরনে জুব্বা, চেহারায় ভীষণ সারল্য। হাতে একগাদা বইয়ের প্যাকেট। দুজনেত হাতে দুটো অনিকেত এবং একটা অভিমান জংশন। সম্ভবত দুজন ভাই৷ বইগুলো অটোগ্রাফের জন্য আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি কিছুক্ষণ ওদের মুগ্ধ হয়ে দেখলাম৷ ওদের চোখে লেখকের জন্য সরল ভালোবাসা। অটোগ্রাফ দিলাম, জিজ্ঞেস করলাম আমায় কিভাবে চেনে। বললো ফেসবুকে আমার লেখা পড়ে ওদের খুব ভালো লাগে। বই পড়া ওদের শখ। আমি মেলায় আসব জেনে দেখা করতে এসেছে। কেন যেন আমার লেখকসত্তার প্রতি এই দুই কিশোরের ভালোবাসা মাখা চাহনি আমার হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে।

ঘটনা ৩:

শুক্রবারে বিকেলে সরলরেখা প্রকাশনার ৬১৮ নং স্টল থেকে কল দিয়ে বললো একটা মেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। যেন স্টলের সামনে একটু যাই কষ্ট করে। গেলাম। মিষ্টি চেহারার এক তরুণী হাতে অভিমান জংশন নিয়ে দাঁড়িয়ে। বললো আমার ফলোয়ার ফেসবুকে। আমার কবিতা পড়লেই তার কান্না পায়। মনে হয় যেন তার না বলতে পারা কান্নাগুলো, কথাগুলোই নাকি আমি বলে দেই কবিতায়। আমি মেয়েটার চোখের দিকে দিকে তাকালাম। কী ভীষণ মমতার চোখে আমায় দেখছেন! যেন আমি তার দর্পন প্রতিবিম্ব! আমি কবিতায় এভাবেই পাঠকের হৃদয়ের প্রতিবিম্ব হতে চেয়েছি সবসময়।

মেলায় আমার সাথে দেখা করতে আসা সকলের চোখের দিকে আমি তাকিয়েছি বারবার। মানুষের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখার মতো তীব্র আনন্দ আর কিছুতে নেই। আরো অনেক অনেক ভালো লাগার ভালোবাসার অনুভূতি চোখে আর বুকে ধারণ করে ফিরে এসেছি। আরো লিখের যাবার জন্য এসব ভালোবাসা আমার রসদ। ধন্যবাদ সবাইকে।

 

রাজধানীতে মা ও দুই শিশুর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


রাজধানীর দক্ষিণখানে নিজ বাসা থেকে শুক্রবার এক মা ও তার দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দক্ষিণখান থানা পুলিশ বিকালে প্রেমবাগান এলাকা থেকে লাশ তিনটি উদ্ধার করে।

দক্ষিণখান থানার এসআই মনসুর আলী জানান, ওই এলাকার কেসি স্কুলের পাশের একটি বাড়ি থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। পুলিশ এখনও তাদের নাম প্রকাশ করেনি।
সূত্র : ইউএনবি।

 

বর্তমানে সহজে ঋণ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা

বর্তমানে সহজে ঋণ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা


নারী সংবাদ


বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে পুরুষদের পাশাপাশি সমানতালে এগিয়ে চলছে নারীরা। সব ক্ষেত্রেই এখন নারীরা পুরুষের সমান অধিকার ভোগ করছে। এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যেও পুরুষের সমানতালে এগিয়ে চলছে নারী।
ব্যবসা ক্ষেত্রে মূলধন বা ঋণের ক্ষেত্রে এখন অনেক বেশি সুযোগ পাচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। মাত্র এক দশক আগেও নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তবে, কালের পরিক্রমায় এবং সময়ের প্রয়োজনে সেই বাধা অনেকটাই দূর হয়েছে।
দেশের ব্যাংকিং খাত বর্তমানে নারীদের অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এখন ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য রয়েছে আলাদা সেবা ডেস্ক। কেবল সেবা ডেস্কই নয়। ব্যাংক ঋণ পেতেও বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন নারী উদ্যক্তারা। অন্য যেকোন ঋণের চেয়ে নারী উদ্যোক্তাদের নথিপত্র কম লাগছে। তাদের জন্য রয়েছে ৯ শতাংশ হারে সুদে পুনঃঅর্থায়ন ঋণ পাওয়ার সুযোগ।
তবে, এর বাইরে ঋণ পেতে অনেক নারী উদ্যোক্তাকে এখনো সুদের হার বেশি গুণতে হচ্ছে, এমনকি কখনো কখনো ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ গুণতে হচ্ছে বলে উদ্যোক্তা ও ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে।
সরকার ঘোষিত জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৭ তে বলা হয়েছে, এসএমই খাতে ঋণের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে বিতরণ করতে হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে, পুনঃঅর্থায়ন ঋণের কমপক্ষে ১০ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দিতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৭৯ হাজার ১৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ৩ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ঋণের ৪ শতাংশ গেছে নারীদের কাছে। আলোচ্য সময়ে সব মিলিয়ে ৪ লাখ ২ হাজার উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন। এর মধ্যে নারী উদ্যোক্তা ছিলেন ২৯ হাজার ৫৮৭ জন।
নারী উদ্যোক্তাদের কেউ কেউ অবশ্য বলেছেন, ঋণের জন্য ব্যাংকগুলো সাদরে আমন্ত্রণ জানালেও ঋণ সেভাবে দিচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শর্ত চাইছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠিত জামিনদার, স্থায়ী ব্যবসাসহ নানা নথিপত্রও চাইছে ব্যাংক। তবে, বেসরকারি একটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ব্যাংকগুলো এখন ঋণ দেয়ার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের খুঁজছে। সমস্যা হলো এসএমই খাতে যেসব উদ্যোক্তা আছেন তার ২ শতাংশ নারী। ফলে, সবাই ঋণ পেলেও এসএমই খাতে ঋণের নারীদের অংশগ্রহণ খুব বেশি বাড়ছে না।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে , বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের আওতায় নারী উদ্যোক্তারা ঋণ নিলে তাতে সুদের হার ধরা হচ্ছে ৯ শতাংশ। এর বাইরে যারা পুরনো গ্রাহক, তারা ১০ থেকে ১৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন। তবে, নতুন ও অনিরাপদ গ্রাহকদের জন্য সুদ হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত।
ব্যাংকগুলো এসএমই ঋণের পণ্যভেদে নানা ঋণসেবা নিয়ে এসেছে। আবার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ ঋণ পণ্যসেবাও রয়েছে। বাংলাদেশের সব ব্যাংকই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ ঋণ পণ্য রয়েছে। এসব ঋণে সুদ হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। যেসব গ্রাহক পুরনো বা ভাল তারা কিছুটা কম সুদে ঋণ পাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারী উদ্যোক্তাদের ঋণদানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্র্যাক, ইস্টার্ন ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংক এশিয়া, সিটি, আইএফআইসি, যমুনা, ডাচ বাংলা, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, প্রাইম এবং পূবালীসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে বিশেষ পণ্য রয়েছে। বিদেশী ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এইচএসবিসি এবং সিটি ব্যাংক এ খাতে ঋণ দিতে বিশেষ জোর দিয়েছে। আবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে নারী উদ্যোক্তারা ঋণ পাচ্ছেন। যে কারণে, নারী উদ্যোক্তারা এখন কেবল এসএমই খাতে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ছে বড় ও ভারী শিল্পেও।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া হেনা আক্তার বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগের কারণে নারী উদ্যক্তাদের ব্যাংক ঋণ পাওয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে। এখন দরকার পণ্য বাজারজাত ও ব্যবসা উন্নয়নের বিষয়ে নারী উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া।’
নারী উদ্যোক্তাদের আবেদন বেশিরভাগ সময়ই পূর্ণাঙ্গ থাকে না উল্লেখ করে বিশিষ্ট ব্যাংকার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক সবসময় যোগ্য ব্যক্তিদের ঋণ দিতে চেষ্টা করে। কারণ, ব্যাংক যে টাকা দেবে, তাতো জনগণের টাকা। ব্যাংক চায় এই অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগুক এবং তা যথাসময়ে আবার তা ফেরত আসুক। ব্যাংক এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে চায়।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার এখন অনেক বেশি উদ্যোগী, যেটা ভবিষ্যতে অনেক বেশি কাজে দেবে। সুত্রঃ বাসস

 

মোরগ পোলাও রান্না করি


ঘরকন্যা


যা লাগবেঃ

আতব চাল – ৩ গ্লাস
মোরগের মাংস – দেড় কেজি
মুশারীর ডাল -১ কাপ
পেয়াঁজ কুচি – ১- ১/২ কাপ
পেয়াঁজ বাটা – ২ টেবিল চামচ
আদা বাটা – ২ চা চামচ
রসুন বাটা – ১ টেবিল চামচ
গরম মসলা গুঁড়া/বাটা – ১ চা চামচ
তেজপাতা – ২ টা
টক দই – ২ টেবিল চামচ
আলু বোখারা – ২ টা
[দারুচিনিএলাচলবঙ্গজায়ফলজয়ত্রী] একত্রে বাটা – ১ চা চামচ
লবণ – পরিমাণমতো
ঘি – ২ টেবিল চামচ
সয়াবিন তেল – আধা কাপ
চিনি – ১ চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়া – আধা চা চামচ
কাঁচামরিচ – ২/৩ টা
পেয়াঁজ বেরেস্তা – ১ কাপ
জিরা বাটা – ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়া – চা চামচের ৩ ভাগের ১ ভাগ
মরিচ – আধা চা চামচ
ধনে গুঁড়া – ১ চা চামচ
পানি – ৫ কাপ

কিভাবে রান্না করবেনঃ

মোরগের চামড়া ছাড়িয়ে হাঁড় সহ কয়েক টুকরা করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। পানি ঝরে গেলে এতে পেয়াঁজ বাটাআদা বাটারসুন বাটাচিনিদারুচিনি-এলাচ-লবঙ্গ-জায়ফল-জয়ত্রী একত্রে বাটাগোলমরিচ গুঁড়ালবণজিরা বাটাহলুদ গুঁড়ামরিচ গুঁড়াধনে গুঁড়াআলু বোখারাটক দই দিয়ে ভাল করে মেখে ৩০ মিনিট ফ্রিজে রাখতে হবে।

আতব চাল এবং মশুরডাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখতে হবে। চাল আর মশুরডাল একত্রে মিশিয়ে ফেলুন।
ঘি তেল একসঙ্গে চুলায় দিয়ে একটু গরম হলে তাতে পেয়াঁজ কুচি দিয়ে নাড়ুনবাদামী হয়ে পেয়াঁজ ভেরেস্তা হবে। পেয়াঁজের ভেরেস্তা টুকু আলাদা তুলে রাখুন। ঐ তেলে গরম মসলা ও তেজপাতার ফোড়ন দিয়ে মাখানো মাংস দিয়ে কষাতে হবে।

মাংস সিদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে গেলে মাংসের টুকরা তুলে রাখতে হবে। ঐ হাড়িতেই পোলাওর চাল আর মশুরডাল দিয়ে ভালো করে কষাতে হবেতারপর তাতে ৪ কাপ পানিলবণ দিয়ে ঢেকে দিন। চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। চাল ফুটে উঠলে মাঝে মাঝে নেড়ে দিয়ে মাঝারী আঁচে ঢেকে রাখুন। পোলাওর পানি শুকিয়ে এলে কিছুটা পোলাও উঠিয়ে রান্না করা মোরগের মাংসের টুকরাগুলো পাতিলের বাকী পোলাওর মধ্যে দিয়ে তার সাথে কাঁচামরিচ সহ বাকী পোলাও দিয়ে মৃদু আঁচে কিছুক্ষণ দমে রাখুন। ১০ মিনিট পর হালকাভাবে নেড়ে দিয়ে আবার দমে রাখুন। আরো ৫ মিনিট পর নামিয়ে ফেলুন। 

পরিবেশনঃ

পরিবেশনের সময় ভেরেস্তা পোলাওর উপরে ছড়িয়ে সালাদ এবং আচার সহ পরিবেশন করুন ।

 

বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর”

বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর”


আফরোজা হাসান


কল্পনা করুন এমন একটা পৃথিবীর, যেখানে কোন হানাহানি নাই, হিংসা বিদ্বেষ নাই, নাই কোন পারিবারিক অশান্তি। না আছে কোন মানবিক দৈন্যতা, না আছে অন্যের ক্ষতি করে নিজেকে সফলতার চূড়ায় নেয়ার নেশা। এমন পৃথিবী যেখানে কোন যুদ্ধ নাই, উদবাস্তু নাই, যেখানে সবার মাথার ওপর ছাদ আর পেট ভরে খাওয়ার মত অন্ন রয়েছে। যেখানে ক্ষমতার লড়াই নেই বরং সবার কাঁধে হাত রেখে এক সাথে এগিয়ে যাওয়াই জীবনের লক্ষ্য।

আচ্ছা এমন যদি হত, সবাই আল্লাহ্‌র ইবাদত করছে, শরীয়তের বিধান মেনে চলছে। নিজের চাইতে অন্যের কল্যাণের কথা বেশি চিন্তা করছে। যেই পৃথিবীতে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা সবাই স্বাধীন, সবাই সবার অধিকার পাচ্ছে। যেখানে কেউ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে না, যেখানে সবাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথে চলছে। আহ! অসম্ভব সুন্দর কল্পনা, যা কিনা বাস্তব হওয়াও অসম্ভব।

কিন্তু কিছু মানুষ তবুও স্বপ্ন দেখে, কিছু মানুষ স্বপ্নের জাল বোনে, কিছু মানুষ স্বপ্ন পূরণে আপ্রাণ চেষ্টা করে। সেই মানুষেরা স্বপ্ন দেখে সুন্দর পৃথিবীর। সেই মানুষেরা সব প্রতিকূলতা আর বাধাকে শরীয়তের আলোকে সমাধান করে এগিয়ে চলে সম্মুখ পানে। কিছু মানুষ স্বপ্নালু মানুষের চোখে স্বপ্নগুলোকে আরো গভীর করে দিয়ে তাদের সাথে করে নিয়ে সুন্দর পৃথিবী গড়ার জন্য অভিযাত্রা করে। কিছু মানুষ সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে, মহান রবের সন্তুষ্টির জন্য কাজ করে যায়। একটি সুন্দর পৃথিবী…. এক ঝাঁক চোখের স্বপ্ন… একদল অভিযাত্রী যাত্রা করে সুন্দর পৃথিবী গড়তে নিজেকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তুলতে।
………..

আমাদের সবার প্রিয় লেখিকা আফরোজা হাসানের দ্বিতীয় বই “স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর” বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। বইঘর পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে বইটি, আলহামদুলিল্লাহ। জীবনে আসা বিভিন্ন সমস্যা এবং শরীয়তের আলোকে এর সমাধান, বাস্তব জীবনের নানান চড়াই উতরাই পেরিয়ে কিভাবে সুন্দর পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে কিছু মানুষ এগিয়ে চলে তাই বলা হয়েছে এই গল্পে।
…….

বইটি যেখানে পাওয়া যাবে… স্টল নং : ৪০৬ বইমেলা প্রাঙ্গন
ও দেশের সকল বইয়ের দোকানে…
এ ছাড়া আপনি যদি ঘরে বসে সবচেয়ে কম সময়ে কম মূল্যে পেতে চান তবে ফোন ‎করুন…‎
Rokomari.com

Mob : 16297, 01519521971
KitabGhor.com

Mob : 01721999112‎
www.boighorbd.com

 

সুহাসিনী ভোর

সুহাসিনী ভোর


আফরোজা হাসান


ভালো লাগে ভীষণ নৈঃশব্দ্যতার ক্ষণ
যেমন খুশি তোলা যায় শব্দের গুঞ্জন

এড়িয়ে যেতে চাই না অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রহর
দিয়া জ্বেলে তারে করতে সুহাসিনী ভোর

কন্টকাকীর্ণ পথে চলতে অবিচল
মনে আছে বিশ্বাস, দৃঢ় মনোবল

মাটির আলিঙ্গনে হাসে বর্ণিল ঘাসফুল
বেদনা নদীর ওপাড়ে হাতছানি দেয় কূল…

 

‘মৃগীরোগ’

‘মৃগীরোগ’


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজ ইন্টারন্যাশনাল এপিলেপ্সি ডে। এপিলেপ্সি আমাদের দেশে মৃগীরোগ নামে পরিচিত।

সারা পৃথিবী জুড়েই সবেচেয়ে বেশি যে স্নায়ুরোগটি দেখা যায় তা হচ্ছে এপিলেপ্সি বা মৃগীরোগ। পৃথিবীতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন এপিলেপ্সির রোগী আছে, যার মধ্যে ৪০ মিলিয়ন রোগীই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে।

এপিলেপ্সি কী?

খুব সহজ ভাষায় বোঝাতে গেলে, বারবার খিঁচুনি হবার প্রবণতা যেখানে কোনো ধরনের প্ররোচনা থাকে না–তাকেই এপিলেপ্সি বলে।

এটি সাধারণত ২০ বছরের আগে কিংবা ৬০ বছর বয়সের পর শুরু হয়।

কী কী কারণকে দায়ী করা হয় এ রোগের পেছনে?

১. অনেকক্ষেত্রেই কোনো কারণ জানা যায় না।

২. শিশু মায়ের গর্ভে থাকার সময় কিছু জীবাণু দিয়ে যদি আক্রান্ত হয়ে থাকে, যেমন : TORCH, HIV।

৩. জন্মগতভাবে মস্তিষ্কের গঠনে যদি ত্রুটি থাকে।

৪. হাইপোক্সিক ইশকেমিক এনকেফালোপ্যাথি (সাধারণত নবজাতক জন্মের পর দেরি করে কাঁদলে এ সমস্যা হয়ে থাকে)।

৫. মস্তিষ্ক বা মস্তিষ্কের আবরণে কোনো ইনফেকশান, যেমন : মেনিনজাইটিস।

৬. মস্তিষ্কে কোনো আঘাত।

৭. মস্তিষ্কে কোনো টিউমার।

৮. কিছু ক্রোমোজোমাল ডিজঅর্ডার ইত্যাদি।

কী কী বিষয় মৃগীরোগের এ খিঁচুনিকে ত্বরান্বিত করতে পারে?

১. কম ঘুম হওয়া

২. যারা মৃগীরোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন তারা যদি ওষুধ না খান

৩. মদ্যপান (বিশেষ করে মদ্যপান ছাড়ার সময়)

৪. শারীরিক এবং মানসিক অবসাদ

৫. ঝিকিমিকি আলোর সংস্পর্শে যেমন : টেলিভিশন এবং কম্পিউটার স্ক্রিন

৬. উচ্চ শব্দ, মিউজিক, পড়া, গরম পানিতে গোসল ইত্যাদিও অনেকের ক্ষেত্রে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।

কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়?

১. ইলেক্ট্রোএনকেফালোগ্রাম : এটি অনেকটা ইসিজি পরীক্ষার মতো, তবে এটি মস্তিষ্কের। কখনও কখনও এটা দিয়ে এপিলেপ্সি রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে যদি এ পরীক্ষা নরমাল আসে তার মানে এই না যে তার এপিলেপ্সি থাকার সম্ভাবনা নেই।

২. কিছু কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এম.আর.আই করতে হতে পারে।

কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?

মৃগী রোগের নির্দিষ্ট ও উপযুক্ত ওষুধ দেওয়া হয়, যা এন্টিএপিলেপ্টিক ড্রাগ নামে পরিচিত।

কতোদিন ওষুধ খেয়ে যেতে হবে?

যদি রোগী খিঁচুনি-বিহীন কমপক্ষে দুই বছর পার করে, মৃগীরোগের ওষুধ ধীরে ধীরে পরবর্তী ৬-১২ সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করা যায়।

জীবনযাত্রায় কী কী পরিবর্তন আনতে হয়?

১. উজ্জ্বল এবং ঝলকানো আলো পরিহার করতে হবে। যেমন : টিভি, ভিডিও গেইমস।

২. আগুন থেকে দূরে থাকতে হবে।

৩. পানিতে ঝাঁপ দেওয়া বা সাঁতার কাটা থেকে বিরত থাকা উচিত।

৪. গাছে চড়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

এ রোগের ভবিষ্যত কেমন?

১. ৭০% রোগীর ক্ষেত্রেই খিঁচুনি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

২. ৫-১০% রোগীর ক্ষেত্রে খিঁচুনি বারবার হতে পারে এবং অনিয়ন্ত্রিত থাকতে পারে। ৩. ৩০% রোগীর ক্ষেত্রে রোগের শুরু থেকেই “চিকিৎসা করা/নিয়ন্ত্রণ করা” বেশ কঠিন বলে বিবেচিত হয়

 

বিবেক


ফাতিমা মারিয়াম


দশম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে লিমা রফিকের কাছ থেকে দশ ভরি স্বর্ণালঙ্কার উপহার পেয়েছে। বেশ খুশি লিমা। আত্মীয় স্বজন যেখানে যা আছে সবাইকে ফোন করে তার এই আনন্দের কথা জানাচ্ছে। ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা বান্ধবীদের বাসায় গিয়ে দেখিয়ে এসেছে।

এবার বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান করেনি। তাই এত কষ্ট করে মানুষের কাছে গিয়ে আনন্দ প্রকাশ করা লাগছে। এত আনন্দের মাঝেও মনে মনে রফিকের প্রতি এই ব্যাপারে কিছুটা রাগ রয়ে গেছে। হাঁদারামটা যদি এবার একটা অনুষ্ঠান করতে রাজি হত তবে আর জনে জনে গিয়ে আনন্দের খবরটা প্রচার করা লাগত না। এখন আর কী করা? এই মধুর কষ্টটুকু ভোগ করতেই হচ্ছে।

বউ খুশী; তাই রফিকও ভীষণ আনন্দিত! কিছু নগদ টাকা পকেট থেকে চলে গিয়েছে বটে! তবে এটা পুষিয়ে নিতে তার বেশি সময় লাগবে না। একজন অসৎ কর্মকর্তার কাছে এই কয়টা টাকা কিছুই না।

সকাল দশটার দিকে অফিসের কাজে ব্যস্ত রফিক। গ্রাম থেকে ছোটবোন শরিফা ফোন করে বলল যে তার স্বামী এক্সিডেন্ট করেছে। চিকিৎসা খরচের জন্য কিছু টাকা প্রয়োজন। রফিক সাফ বলে দিয়েছে,’এখন আমার হাতে টাকা নেই, কিছু দিতে পারব না।’

আবার অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রফিক।

 

“শিকড়ের সন্ধানে – হামিদা মুবাশ্বিরা “

“শিকড়ের সন্ধানে – হামিদা মুবাশ্বিরা “


ফাইজা তাব্বাসুম


বুক রিভিউ –
সত্যিকার অর্থে এই বইয়ের নামের মাধ্যমেই এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। যে কোনো বৃক্ষের জন্য যেমন শিকড় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ তেমনি প্রতিটি মুসলিমের জন্যও তার আত্মপরিচয় , অস্তিত্বের ধারাবাহিক ক্রম জানাটা খুব জরুরি। শিকড়ের যত্ন না নিলে যেমন বৃক্ষের সবুজ পাতারা রঙ হারিয়ে ঝরে পড়ে, ডাল-পালা রুক্ষ,শীর্ণ হয়ে যায় , একসময় চরম মূল্যবান বৃক্ষও তার উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে তেমনি আমরা জন্মসূত্রে মুসলিমরাও যেন নিজেদের জীবনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য সম্পর্কে উদাসীন হয়ে এক ভুলের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমাদের চিন্তাভাবনার যে অসুখগুলো প্যারাসিটামলেই সেরে যাওয়ার কথা ছিল তা যেন সঠিক চিকিৎসার অভাবে ক্যান্সার পর্যন্ত পৌঁছে আমাদের অস্তিত্বকেই সংকটাপন্ন করে তুলছে।
অথচ, মহান আল্লাহ তো তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ নবীর উম্মতদের সঠিক পথে চলার জন্য গাইডলাইন হিসেবে কুরআনকে কিয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করে রেখেছেন। পূর্ববর্তী নবী-রাসূলদের জীবন, তাদের সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ঘটনা বর্ণনা করে তা থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে বলেছেন। তাহলে আমাদের এই দিকভ্রান্ত অবস্থা? কেন আমাদের রিচুয়ালসগুলো সব করাপ্টেড? ভাবনাগুলো সব শেইপড? বিশ্বাসের নামে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কারের সাথে কেন আমাদের নিত্য চলাফেরা?
এর অন্যতম কারণ বোধহয় এটা যে, আরবী ভাষায় নাজিলকৃত কুরআনের বক্তব্য আমাদের মতো বাংলা ভাষাভাষীদের মর্মমূলে গিয়ে পৌঁছতে পারেনি। ছোটোবেলায় মায়ের মুখে,বাবার মুখে,কখনো হুজুরদের মুখে, কখনো ইসলাম শিক্ষা বইয়ের পাতায় আমরা গল্পাকারে নবী ও রাসূলগনের যেসব ঘটনা শুনে এসেছি, সেগুলো আমাদের কাছে মিথোলজির মতো একটা কৃত্তিম ভাব সৃষ্টি করেই পালিয়েছে, হৃদয়ের গভীরে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারেনি।
হামিদা মুবাশ্বেরাও বোধহয় একই ধরনের উপলব্ধি থেকে নানামুখী ব্যস্ততার মাঝেও নিজস্ব আত্মপরিচয় অন্বেষণের তাগিদে মুসলিম হিসেবে তাঁর শিকড়ের সন্ধান করতে বেড়িয়েছিলেন। আত্মানুসন্ধানের এই পথে ঠিক যে জায়গাগুলোতে তিনি নিজে আটকে গিয়েছিলেন, সেই জায়গাগুলোতে যেন অন্য কেউ হোঁচট খেয়ে না পড়ে , বাঁধা পেয়ে পথ চলার উৎসাহটা হারিয়ে না ফেলে তাই তিনি তার অর্জিত অভিজ্ঞতাগুলোকে লিপিবদ্ধ করেছেন ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইতে।
জীবনের যেই বাঁকে এসে আমরা ভাবতে শুরু করি “what’s my destiny?” যেখানে দাঁড়িয়ে অন্যের দেয়া মিথ্যে প্রবোধগুলোকে অর্থহীন মনে হয়, সেই ভঙ্গুর সময়ে যেন ভুলের চোরাবালিতে ডুবে যেতে না হয়, নিজের না পাওয়াগুলো- ব্যর্থতাগুলো যেন আমাদের উপর রাজত্ব গড়ে নিতে না পারে সেজন্য মুসলিম হিসেবে নিজের শেকড়ের উপলব্ধি হতে পারে আমাদের অর্থবহভাবে বেঁচে থাকার প্রধান রসদ। আর ‘শিকড়ের সন্ধানে’ বইটি আমাদের সেই কাজকে সহজ করে দিবে ইনশাআল্লাহ। বইটি পড়তে পড়তে নিজেদের মনের মধ্যে যুদ্ধ-বিবাদে লিপ্ত অনেক প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনার ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সাজানো হয়েছে বলে এই বই মুসলমানদের উত্থান পতনের ক্রম বুঝতে সহায়ক হবে। আজকের বাস্তবতার নিরিখেও কুরআনে বর্ণিত কাহিনীগুলো কতটা প্রাসঙ্গিক তা পাঠকরা উপলব্ধি করতে পারবে। যে কোনো সময়ের, যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং সুখপাঠ্য একটি বই ‘শিকড়ের সন্ধানে।’

 

‘রাজুমার’


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


টেকনাফে এসে নিজের  স্বামীর সাথে দেখা হলেও ভাই-বোন ও মায়ের সন্ধান পাননি। নিজের সন্তানের খোঁজ মেলেনি। রাজুমার মতো এ রকম হাজারো মানুষের নিদারুণ কষ্টের বিভীষিকার কথা লিখলে সমাপ্তি টানা যাবে না। আল-জাজিরা ইংলিশ নিউজ নেটওয়ার্ক সাম্প্রতিক একজন বোনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, রোহিঙ্গা মুসলিম বোন রাজুমার জীবন থেকে নেওয়া। ২০ বছর বয়সি রাজুমা বেগম অল্প বয়সে অসংখ্য বাস্তবতার সম্মুখিন হয়েছেন। গত বছর ৩০শে আগস্ট তুলা টোলির গণহত্যা থেকে বেঁচে ফিরেছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতার সবচেয়ে নৃশংস ঘটনার স্বীকার এই বোন পালিয়ে বাঁচেন। গ্রামবাসীদের সাথে নদীর তীরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তাকেও যেখানে পুরুষরা মহিলা ও শিশুদের থেকে পৃথক করা হয়। অনেককে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, তাকে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজুমা তখন তার ছেলে মোহাম্মদ সাদ্দিককে নিজের হাতেই ধরে রেখেছিলেন। এরপর কিছু সৈন্য মহিলাদের দলে  দলে ভাগ করে নিয়ে গিয়েছিল জোর করে। রাজুমা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি বিদ্যালয়ে বক্তব্য রাখেন, তিনি তখন বলেছিলেন, “তারা আমাকে বাড়ির ভিতরে আরও চার মহিলার সাথে নিয়ে যায়।” “তারা আমার ছেলেকে আমার বাহু থেকে ছিটকে ফেলে দেয় [মাটিতে], আমি দেখেছি তার মধ্যে একজন বার্মিজ সৈন্য আমার শিশু পুত্রকে আগুনের দিকে ছুঁড়ে মারে, আমি শুনতে পেলাম যে সে জ্বলন্ত অবস্থায় চিৎকার করছে” “মা বাঁচাও” তিনি  আরও বলেছিলেন, আমার মাথায় সবসময় ঘুরতে থাকে সন্তানের কবর দেওয়ার আগপর্যন্ত একসূরে হাত দিয়ে ডাকা আর বিলাপের কান্না। “কেউ ‘মা’ বলে ডাক শুনলেই আমার বুকটা ফেটে যায়,” রাজুমা চিত্কার করে বলেন। “আমার একটি ছোট ভাই ছিল যার বয়স ১০ বছর। আমার তার কথা কথা ভাবলে খারাপ লাগে ,কারণ তারা তাকে ধরেছিল এবং আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি”” রাজুমাকে তিনটি মা, এক কিশোরী মেয়ে এবং এক মহিলার সাথে যার বয়স প্রায় ৫০ বছর তাদের একটি ঘরে রাখা হয়েছিল। প্রবীণ মহিলা বাদে সৈন্যরা তাদের সবাইকে ধর্ষণ করেছিল। রাজুমাকে তার দু-তিন  ঘণ্টা ধরে দু’জন লোক অত্যাচার করেন। এরপরে, তারা মহিলাদের কাঠের লাঠি দিয়ে মারধর করতে।  তারপরে তারা মারা গেছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের উপর তিনবার মশাল জ্বালান। সৈন্যরা তাদের বাড়ির ভিতরে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেন। জলন্ত আগুনের তাপে রাজুমাকে পুনরায়  জ্ঞান ফিরে আসে করে, সে বাঁশের দেয়াল ভেঙে পালাতে সক্ষম হয়েছিলেন বলে বেঁচে যান। তিনি একদিন পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলেন এবং ওপার থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁর গ্রামের আরও তিন মহিলা ও এক অনাথের মুখোমুখি হন। রোহিঙ্গা প্রদেশ থেকে পালিয়ে পরিত্যাক্ত পোশাক পরেছিলেন। তিনি যখন সীমান্ত পেরিয়েছিলেন, তখন বাংলাদেশ সরকার তাকে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পৌঁছাতে সহায়তা করেন। যেখানে একটি ক্লিনিকে তাঁর চিকিত্সা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশে মায়ানমারের সৈন্যরা গণধর্ষণ ও তার শিশু পুত্র হত্যার সাক্ষী।রাজুমা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে পুনরায় তার স্বামীকে খুঁজে পান।

 

খুলনায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


খুলনার রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে শুক্রবার সকালে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ইমদাদুল মল্লিক (২৪) উপজেলার শ্রীফলতলা ইউনিয়নের ইদ্রিস মল্লিকের ছেলে।

রূপসা থানার ওসি মোল্লা জাকির হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীর বাবা পালের হাট পুলিশ ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইমদাদুলের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগে বলা হয়, বুধবার রাতে বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার সময় স্থানীয় বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে ইমদাদুল পার্শ্ববর্তী স্থানে নিয়ে ধর্ষণ করে। পুলিশ ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য মেয়েটিকে স্থানীয় হাসপাতালে প্রেরণ করেছে।

সূত্র : ইউএনবি।

 

শর্মার রেসিপি


শর্মার রেসিপি


শর্মার রুটি 

উপকরণ 
১. ময়দা সাড়ে ৩ কাপ,
২. গুঁড়াদুধ ১/৪ কাপ,
৩. বেকিং পাউডার ১ টেবিল-চামচ,
৪. ইস্ট ১ টেবিল চামচ,
৫. তেল ১/৪ কাপ,
৬. মাখন ৩ টেবিল-চামচ,
৭. লবণ আধা টেবিল-চামচ,
৮. চিনি ১/৪ কাপ,
৯. হালকা গরম পানি দেড় কাপ।

প্রণালি 
> ময়দার সঙ্গে বাকি উপকরণ (পানি বাদে) সব মিশিয়ে ফেলুন। এখন একটু একটু করে পানি দিয়ে মথে নিন৷ খামিরটা নরম হবে না আবার অনেক শক্তও হবে না৷ সাধারণ রুটির খামিরের মতো হবে এবং ১৫ থেকে ২০ মিনিট খুব ভালো করে মথতে হবে৷

> চাইলে বিটার দিয়ে ১৫ মিনিট বিট করে নিতে পারেন৷ খামির যত বেশি মন্থন করা হবে তত বেশি নরম হবে এবং রুটি ফুলবে৷ এখন পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে দুই ঘণ্টা৷

> চাইলে আরও বেশিক্ষন রাখতে পারেন৷ অথবা ৩০ মিনিট রেখেও রুটি বানাতে পারেন৷ কিন্তু একটু বেশি সময় রাখলে খেতে সুস্বাদু হয় বেশি৷

> দুই ঘণ্টা পর নিজেদের পছন্দ মতো বড় শর্মার রুটি বা ছোট ছোট প্যান কেক আকারে রুটি বানিয়ে নিন। এরপর মাঝারি আঁচে তাওয়ায় রুটিগুলো সেঁকে নিন৷

> বানানো শর্মার রুটি ফ্রিজে না রেখেও চারদিন খাওয়া যায়। তবে অব্যশই ঢাকনাসহ বক্সে রাখতে হবে৷

বিফ বা চিকেন শর্মা

উপকরণ 

শর্মার পুরের জন্য 
১. গরু বা মুরগির হাড় ছাড়া মাংস ৭৫০ গ্রাম,
২. আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ,
৩. রসুনবাটা ১ টেবিল-চামচ,
৪. বিরিয়ানির মসলা ১ টেবিল চামচ,
৫. টক/মিষ্টি দই ৬ টেবিল-চামচ,
৬. তেঁতুলের কাথ ১ টেবিল-চামচ,
৭. ভাজা জিরাগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ,
৮. ভাজা ধনেগুঁড়া ১ টেবিল-চামচ,
৯. টমেটো সস ২ টেবিল-চামচ,
১০. লবণ স্বাদ মতো,
১১. তেল রান্নার জন্য৷

পুর তৈরির প্রণালি 
> মাংস পাতলা টুকরা করে নিন এবং তেল বাদ রেখে বাকি সব উপকরণ মাংসের সঙ্গে মেখে মেরিনেইট করে রাখুন এক ঘণ্টা৷ অথবা শর্মা বানানোর আগের দিন মেখে নরমাল ফ্রিজ রেখে দিন সারারাত। তাহলে আরও সুস্বাদু হবে৷

> কড়াইতে অল্প তেলে মেরিনেইট করা মাংস ভেজে নিন৷ পানি দিতে হবে না৷

শর্মা সস

গালির্ক সস
উপকরণ 
১. ১/৪ কাপ মেয়োনেইজ,
২. ১/৪ কাপ ক্রিম,
৩. গোলমরিচের গুঁড়া আধা টেবিল-চামচ,
৪. রসুনকুচি আধা টেবিল-চামচ।

প্রণালি 
> সব উপকরণ একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে সস বানিয়ে রেখে দিন ফ্রিজে৷

ধনিয়াপাতার সস 
উপকরণ 
১. ধনিয়াপাতা ২ কাপ কুচি করা,
২. চিনা বাদাম আধা কাপ,
৩. রসুন কোয়া ২টি,
৪. কাঁচামরিচ ৪,৫টি,
৫. লেবুর রস ৫,৬ টেবিল-চামচ,
৬. লবণ স্বাদ মতো।

প্রণালি 
> সব একসঙ্গে ব্লেন্ড করে সস তৈরি করুন৷ ব্লেন্ড করার সময় একদম পানি দিতে হবে না। পানির বদলে লাগলে আরও লেবুর রস দিন৷

* আরও লাগবে হানি মাসটার্ড সস ও টমেটো সস।

শর্মার সালাদ 
উপকরণ 
১. শসা কুচি আধা কাপ,
২. টমেটো ২টি, কুচি করা,
৩. ক্যাপসিকাম ১টি, কুচি করা,
৪. অলিভ ১টি (ইচ্ছা) কুচি করে কাটা,
৫. শসার আচার (বাজারে পওয়া যায়),
৬. লেটুস পাতা,
৭. পেঁয়াজকুচি।

প্রনালি 
> সবগুলো একসঙ্গে মাখিয়ে নিন

শর্মা তৈরির প্রণালি 
> শর্মার রুটি মাঝখানে প্রথমে গার্লিক সস, ধনেপাতার সস মেখে দিন। এবার রান্না করা মাংস রুটির আকার অনুযায়ী পরিমাণ মতো মাংস দিন এবং উপরে নিজের পছন্দ মতো সালাদ দিন।

> সব শেষে উপরে হানি মাস্টার্ড সস, গার্লিক সস ও টমেটো সস দিন।

> এবার শর্মার রুটি আস্তে আস্তে হাত দিয়ে চেপে চেপে রোল করে পরিবেশন করুন। চাইলে টুথপিক দিয়ে আটকে দিতে পারেন।

রেসিপি : আনিসা হোসেন
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 

একুশে পদক পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার


নারী সংবাদ


চিকিৎসায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছর (২০২০) একুশে পদক পাচ্ছেন অধ্যাপক ডা. সায়েবা আখতার। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদক পাচ্ছেন দেশের ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদকপ্রাপ্তদের এ তালিকা প্রকাশ করে।

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে একুশে পদক তুলে দেবেন।

এক নজরে অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার

অধ্যাপক ড. সায়েবা আক্তারের জন্ম চট্টগ্রামে। তবে পিতা টাঙ্গাইলের করটিয়া সাদত কলেজের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে ওই ক্যাম্পাসেই বেড়ে ওঠা।

তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পর সেখানেই কর্মজীবনের শুরু করেন।

স্বামী ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবিরও পেশায় একজন ডাক্তার। তিনি একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজির সাবেক পরিচালক।

তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে বড় মেয়েটিও ডাক্তার।

স্বাস্থ্যে তাঁর অবদান

অবসর গ্রহণের পর রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে ‘মামস ইনস্টিটিউট অব ফিস্টুলা অ্যান্ড ওমেনস হেলথ’ গড়ে তোলেন তিনি। এটি মূলত বিশ শয্যার দাতব্য হাসপাতাল।

নারী শিক্ষায়ও ভূমিকা রাখছেন ড. আক্তার, এজন্য স্বল্প আয়ের পরিবারের মেয়েদের কর্মমুখী শিক্ষা দেবার জন্য ঢাকা ও গাইবান্ধায় দুটি প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছেন তিনি।

একুশে পদক পেলেন যারা-

ভাষা আন্দোলনে মরণোত্তর মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা।

শিল্পকলায় (সংগীত) বেগম ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক।

শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান।

শিল্পকলায় (অভিনয়) এম এম মহসীন।

শিল্পকলায় (চারুকলা) অধ্যাপক শিল্পী ড. ফরিদা জামান।

মুক্তিযুদ্ধে (মরণোত্তর) মরহুম হাজি আক্তার সরদার, মরহুম আব্দুল জব্বার, মরহুম ডা. আ আ ম মেসবাহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার)।

সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর)।

গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ কারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ।

শিক্ষায় অধ্যাপক ড. বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া।

অর্থনীতিতে অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

ভাষা ও সাহিত্যে ড. নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক (মরণোত্তর) ও বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি।

প্রতিষ্ঠান

গবেষণায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।

 

ভণ্ডামি 

ভণ্ডামি


ফাতিমা মারিয়াম


এক
রশিদ যতই চেষ্টা করছে সংসারের অভাব কাটাতে পারছে না। দিনদিন সংসারের নানান চাহিদা বেড়েই চলেছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সে। কতটুকুই বা সামাল দিতে পারে? আয় যা হয় তাতে কোনমতে খেয়ে পরে চলে। বাচ্চাদের স্কুল কোচিং এসব খরচ তার জন্য বিলাসিতা।

রশিদ গ্রামে থাকে। স্থানীয় বাজারে তার একটি মুদি দোকান আছে। দোকান ছোট…পুঁজিও কম। ফলে আয় কম। তাছাড়াও বেচা বিক্রিও সামান্য হয়। কারণ বাজারে বেশ কয়েকটা দোকান আছে। তাদের পুঁজি রশিদের চাইতে বেশি হওয়ায় তাদের দোকানেই খরিদ্দার বেশি।

দোকানের আয় বাড়ানোর জন্য রশিদের বউ মিনু পরামর্শ দেয় সমিতি থেকে ঋণ তুলে দোকানে মাল উঠাতে। সমিতি থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে রশিদ দোকানে মাল ওঠায়। বেচা বাড়ে……আয়ও বাড়ে।

হঠাৎ বেশি টাকা হাতে আসায় সে বেহিসাবি হয়ে যায়। তার চরিত্রের কিছুটা দোষ আগেও ছিল। এখন আরো বেড়ে গেছে। মিনুর হাতেও বেশ টাকা দেয়। আর সেও খরচ করতে থাকে। সমিতির কিস্তি নিয়মিত পরিশোধ করেনা। সমিতি তাকে নোটিশ দেয়…আগের টাকাসহ বাকী টাকা শোধ করতে।

মিনু নিরুপায় হয়ে বাবার বাড়ির এলাকার এক এনজিও থেকে টাকা নিয়ে সমিতির টাকা শোধ করে। এনজিওর প্রথম কয়েক কিস্তি নিয়মিত শোধ করে।কিছুদিন পর থেকে এনজিওর টাকা শোধেও দুজনে টাল বাহানা শুরু করে। এক কিস্তি দেয় তো দুই কিস্তি দেয় না। তারা বার বার সতর্ক করতে থাকে।

দুই…

এদিকে দোকানের পুঁজিও অনেক কমে গেছে। আরো কিছু মানুষ রশিদর কাছে টাকা পায়। এদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা ধার করেছিল। মোটকথা এখন সে ঋণের দায়ে জর্জরিত। দিনরাত মিনুর খোঁটা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। মিনু এখন আর অভাব সহ্য করতে পারেনা। আর কতইবা সহ্য করবে? এটা রশিদ বোঝে। আর বোঝে বলেই সে মিনুকে কিছুই বলে না। খালি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

মিনু এবার তাকে পরামর্শ দেয় বিদেশ যাওয়ার। এলাকার কত মানুষই তো বিদেশ গিয়ে অনেক টাকা ইনকাম করেছে। এখন তাদের বেশ ভালো অবস্থা। অনেক চিন্তা ভাবনা করে আত্মীয়দের কাছে থেকে ঋণ করে, বউয়ের গয়না বিক্রি করে, গরু বিক্রি করে রশিদ প্রবাসের পথে পাড়ি জমায়।

মাথায় এত ঋণের চাপে রশিদর দিশাহারা অবস্থা। প্রবাসে গিয়েও ভালো কোন কাজ পায় নি। যা বেতন পায় তাতে নিজের এবং পরিবারের মোটামুটি চলে…… মিনু সংসার খরচের পরে খুব সামান্যই জমাতে পারে। অল্প অল্প করে ঋণ শোধ করছে।

প্রায় তিন বছর হয়ে গেছে এখনো রশিদ বাড়ি আসতে পারে নি। মিনুর কাছে ফোন করলেও শান্তি নাই। এটা সেটা কথা শোনায়। অমুক বিদেশ গেল তমুক বিদেশ গেল…তারা কত টাকা পাঠায় আর তুমি………

তিন…

রশিদ অনেকক্ষণ ধরে মিনুর নাম্বারে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু ওকে পাচ্ছে না। লাইন বিজি দেখায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর সে বউকে ফ্রি পেল।

-কী ব্যাপার? তুমি কার সাথে কথা কইতাছিলা? আমি অনেক সময় ধইরা তোমার লাইন বিজি দেখলাম।

-আমি? আমি তো এতক্ষণ ছোডমামার লগে কথা কইতাছিলাম!

রশিদ মিনুর সাথে কথা শেষ করে মিনুর ছোট মামাকে ফোন দিল।

-মামা মিনু কি আইজগা ফোনে আফনের লগে কতা কইসে?

-না তো বাবা আমার লগে তো মিনুর অনেকদিন দইরাই কতা অয় না।

রশিদ এবার মিনুর মাকে ফোন দিয়ে এই ঘটনা জানাল। আরো জানাল আজ অনেকদিন ধরেই সে ফোন করলে ফোন বিজি পায়। জানতে চাইলে মিনু সব সময় একেক জনের নাম বলে পার পায়। তার এতে বেশ সন্দেহ হচ্ছিল। তাই সে ছোট মামাকে ফোন করে নিশ্চিন্ত হয়েছে। মিনুর মাও বেশ অবাক হয়ে গেলেন। মেয়ে এতক্ষণ কার সাথে কথা বলে? রশিদ আরো বলে যে – মিনু প্রায়ই খুব সাজগোজ কইরা কই জানি যায়। গ্রামের দুই তিনজন আমারে এইটা জানাইছে। আপনি এর একটা বিহিত করেন।

মিনুর মা মিনুকে জিজ্ঞাসা করায় সে অস্বীকার করে বলল -সব মিছা কতা মা। পয়সা কামাইয়ের মুরোদ নাই আবার আমারে সন্দেহ করে! ও নিজে যেমন আমারেও তেমন মনে করে? তোমার মনে নাই পাঁচ বছর আগে তার চাচাতো বাইয়ের বউয়ের লগে কি কাহিনিডাই না করল! তার আরো অনেক গটনা আছে আমি অনেকগুলাই জানি। সবতো আর তোমগোরে কই না। খালি আমি দেইখ্যা হের লগে সংসার করি আর অন্য কোন মেয়ে হইলে বহুত আগেই চইল্যা যাইত। তুমি এইসব কতা বিশ্বাস করবা না মা। সে অহনো অনেক মাইয়ার লগে সম্পর্ক রাখছে। ফোনে কতা কয়।

রশিদ ভাবছে মিনুকে এই ঘটনা নিয়ে কোণঠাসা করে রাখবে।

তাসলিমার নাম্বারে ফোন দিয়ে রশিদ অপেক্ষায় আছে কখন তাসলিমা রিসিভ করবে!

রশিদ এবং মিনুর ছেলে মেয়ে দুইটা বড় হচ্ছে। তাদের এই অপরিণামদর্শী আচরণের জন্য সন্তানরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা কেউই ভাবছে না।

 

সুস্থ সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর যত্ন


ডা. মারুফ রায়হান খান


সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু! এই সারা ধরায় এরচেয়ে সৌন্দর্যময় আর আকর্ষণীয় বুঝি আর কিছু নেই। নবজাতকের প্রতি আমরা সবাই খুব বেশি যত্নবান হতে চাই, কিন্তু আমরা ঠিকঠাক জানি তো কী কী বিষয় এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য রাখা উচিত? কোনো বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাচ্ছে না তো? কয়েকটা কথা আমাদের একেবারে সবারই মনে রাখা উচিত। আর সদ্য/ হবু মা-বাবা হলে তো কথাই নেই!

সুস্থ নবজাতক বলতে আমরা কী বুঝি আসলে?

– মায়ের পেট থেকে যদি ৩৭-৪২ সপ্তাহের মধ্যে ভূমিষ্ঠ হয়, এর আগে বা পরে না।
-জন্মের সময় ওজন যদি ২.৫-৪ কেজি হয়।
– জন্মের পরপরই যদি স্বাভাবিক কান্নাকাটি করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাসের হার প্রতি মিনিটে ৩০-৬০ বার।
– কান্না করার সাথে সাথে বাচ্চার রঙ গোলাপী বর্ণ ধারণ করবে।
– বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকবে।
– কোনো জন্মগত ত্রুটি থাকবে না।

বাচ্চার খাওয়া-দাওয়া

জন্ম হবার আধাঘণ্টার মধ্যেই বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে। বাচ্চাকে প্রথম ৬ মাস শুধুমাত্রই বুকের দুধ খাওয়ান। এটা আল্লাহ প্রদত্ত এক আশ্চর্যরকমের বিশেয় নিয়ামাত। বাচ্চাকে এই নিয়ামাত থেকে বঞ্চিত করবেন না। আপনার বাচ্চাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ালে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া আর কান পাকা রোগ থেকে রক্ষা পাবে। বাচ্চা হবে অনেক অনেক বেশি বুদ্ধিমান।

বুকের দুধ কতোবার খাওয়াতে হবে 

বাচ্চাকে আসলে ডিমান্ড ফিডিং করাতে হয়। অর্থাৎ বাচ্চা কাঁদলেই খাওয়াতে হবে। রাতের বেলাতেও খাওয়াতে হবে। নিদেনপক্ষে বাচ্চাকে ৮ বার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

নবজাতকের প্রস্রাব -পায়খানা

মায়েদের এবং সেই সাথে বাচ্চার নানী-দাদীদের খুব কমন অভিযোগ বাচ্চা দুধ পায় না। যদি দেখা যায় যে বাচ্চা ২৪ ঘণ্টায় ৬ বার প্রস্রাব করে, তাহলে ধরে নিতে হবে সে পর্যাপ্ত খাচ্ছে। আর যেসব বাচ্চারা বুকের দুধ খাচ্ছে, তারা দিনে ১০-১৫ বার পায়খানা করতে পারে, এতে ভয়ের কিছু নেই।

বাচ্চার ডায়াপার 

একবার প্রস্রাব/পায়খানা করা মাত্রই ডায়াপার বদলে ফেলতে হবে। আমাদের দেশের মায়েরা দেখা যায় ওজন করতে থাকেন যে কখন ডায়াপারটা ভারী হয়। দেখা যাচ্ছে বাচ্চা দীর্ঘ সময় পায়খানা/প্রস্রাবের মধ্যেই আছে, যা খুব অস্বস্তিকর বাচ্চার জন্যে।

নবজাতকের গোসল 

গোসলটা ২-৩ দিন পর দিলে সবচেয়ে ভালো হয়। জন্মের সাথে সাথে গোসল করালে নিউমোনিয়া হবার সম্ভাবনা থাকে। ২-৩ দিন পর থেকে প্রতিদিনই গোসল করাতে হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে হালকা গরম পানিতে বাচ্চাকে গোসল করিয়ে ফেলতে হবে। প্রথমে মাথাটা ধুতে হয়, তারপর মাথা মুছে ফেলতে হয়। তারপর শরীরে পানি দিয়ে গোসল সম্পন্ন করতে হয়। পানিতে কোনো জীবাণুনাশক মেশানোর দরকার নেই।

ঋতুভেদে বিশেষ খেয়াল 

শীতকালে একটু বেশি কাপড়চোপড় দিয়ে বাচ্চাকে ঢেকে রাখতে হবে। মাথায় ক্যাপ, হাতে-পায়ে মোজা পরাতে হবে। বাচ্চা যেন ঠাণ্ডা না হয়, এটা খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি বাচ্চা যেন ঘেমে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে।

দুটো অনুরোধ 

দাদী-নানীদের উদ্দেশ্যে একটা কথা! বাচ্চা একটু কান্নাকাটি করলেই মা-কে ফিডার/কৌটার দুধ দেওয়ার জন্যে জোর করবেন না।

সিনিয়রদের প্রতি অনুরোধ! বাচ্চা বুকের দুধ খেলে বারবার পায়খানা করতেই পারে। এ কারণে বুকের দুধ বন্ধ করে আপনারা কৌটোর দুধ লিখবেন না কাইন্ডলি।

 

হাফসা

হাফসা


সুমেরা জামান


সময়টা গত বছরের ঠিক মাঝামাঝি। টি স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি জলিল ভাইয়ের জন্য। যিনি আমাকে স্কুল থেকে নিয়ে যাওয়া আসা করেন।
হঠাৎ হাফসার বাবার সাথে দেখা।
তাকে দেখে আমি কুশলাদি বিনিময়ের আগেই জানতে চাইলাম হাফসা স্কুলে আসছে না কেন ভাই?

একগাদা অভিযোগ ঝুরঝুর করে ঝরতে লাগলো তা কন্ঠনালী থেকে।

হাফসা সকালে উঠে কান্না শুরু করে
স্কুলে আসবেনা। পড়াতে বসতেই চায় না। ইত্যাদি ইত্যাদি
অনেক কথার মাঝে একটা ভাল কথা যেটা বলল,
“আমার মেয়ের স্মরণশক্তি ভাল। পড়লে মনে রাখে কিন্তু লিখতে চায় না।”

এমন সময় জলিল ভাই চলে এলো তার অটোরিকশা নিয়ে। শুধু একটু বলে বিদায় নিলাম কাল সকাল ১০ টাতে আপনি আর হাফসার আম্মু আমার সাথে দেখা করবেন স্কুলে। হাফসাকে সাথে আনার দরকার নেই।

যথারীতি সকাল ১০টা।
তারা উপস্থিত আমার অফিসরুমে।
আমি জানতে চাইলাম ,
রহিমা আপা হাফসা কেমন আছে?

আপা সবই ভাল খালি লেখাপড়া করতে চায়না। আমি সারাদিন ওর পেছনে লেগে থাকি। পড়া ছাড়া এ দুনিয়াতে কোনো দাম আছে বলেন? একবার আমি অল্প বয়সে বিয়ে করে লেখাপড়া শেষ করতে পারিনি। এখন বুঝি পড়ার কি মূল্য।
তাই খুব চেষ্টা করি। আমার মেয়ের কি পড়া হবে আপগো !

হতাশা আর আফসোস নিয়ে কথাগুলো এক দমে বলে শেষ করলেন হাফসার আম্মু।

এতো চিন্তিত হবার কিছু নেই।
সবকিছু করবে আপা।
হাফসার বয়স এখন মাত্র ৫ বছর।
বয়স অনুসারে বাচ্চাদের ব্রেনের বিকাশ হয়। ১ থেকে ৫ বছর বয়সের বাচ্চারা তার নিকট পরিবেশ থেকে সবচেয়ে বেশী শিখে। আর সেটা শিখে দেখা আর শোনার মাধ্যমে।
এরপর ওরা নিজের মত করে চিন্তা করে, বলে, এঁকে,লিখে প্রকাশ করে।
গল্প শোনান,ছড়া কিংবা ছড়াগান।

এতো তাড়াতাড়ি লেখালিখি নিয়ে মন খারাপ করবেন না। হাফসা আঁকতে খুব পছন্দ করে। আশা করি লিখতে করবে।
আপনারা যদি আমাকে একটু সহযোগীতা করেন তবে সব হবে আপা।

কি করতে হবে বলেন আপা ?
হাফসার বাবা উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমার আছে জানতে চায়লো। টাকা পয়সা যত যা লাগে আমরা খরচে রাজী আপা। শুধু মেয়েটাকে যদি পড়াতে পারতাম। আপনি প্রাইভেট পড়াবেন?

আমি হেসে বললাম এসব কিছুর দরকার নেই। আপনার মেয়ে আমার ছাত্রী। শুধু আমাকে একটা কথা দিতে হবে। বাকী সব দ্বায়িত্ব আমার।
আজ থেকে হাফসাকে আর বাসাতে পড়াতে বসাবেন না।

তারা দুজনই ভীষণ অবাক হয়ে দুজন দুজনের দিয়ে তাকিচ্ছে ।

এমন সময় দপ্তরী চা নিয়ে এলো।

আমি বললাম প্লিজ চা শেষ করেন।

 

বাংলাদেশে জরায়ু ক্যান্সার নিয়ে যে সংকোচ


নারী স্বাস্থ্যকথা


বাংলাদেশে নারীরা লজ্জায় তাদের সমস্যার কথা বলতে চান না। আন্তর্জাতিক ক্যান্সার গবেষণা এজেন্সি সাম্প্রতিক এক জরীপে বলছে, বাংলাদেশে বছরে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি নারী জরায়ু মুখের ক্যান্সারে মারা যাচ্ছে।

প্রতি বছর নতুন করে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে। অথচ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার খুব সহজে নির্ণয় করা যায়।

এমনকি হওয়ার আগেই ধরা যায়। তাছাড়া দেশের সকল সরকারি হাসপাতাল, এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও এটি নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

ঢাকার জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের হাসপাতালে সারা দেশ থেকে আসা রোগী ও তাদের আত্মীয়দের উপস্থিতিতে দিনভর সরব হয়ে থাকে।

সেখানে গাইনি অংকলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ আফরোজা খানম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সার নিয়ে হাসপাতালে যেসব নারীরা আসেন তাদের বেশিরভাগেরই বড্ড দেরি হয়ে গেছে।

বাংলাদেশেও কেন মেয়েদের মধ্যে ক্যান্সার বাড়ছে?

ক্যান্সারের ঝুঁকি: ‘অতিরিক্ত ওজন নারীদের জন্য বেশি মারাত্মক’

বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দিশেহারা রোগীরা তিনি বলেছেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সারের মুল সমস্যা হল এটি শেষ পর্যায়ে গেলেই শুধুমাত্র ব্যথা দেখা দেয়।
এর লক্ষণগুলোকে অনেকেই মাসিকের মেয়েলি সমস্যা বলে ভুল করে থাকেন।

যখন চিকিৎসকের আসে আসেন তখন প্রায়শই অনেক দেরি হয়ে যায়।
তিনি বলছেন, “ব্যাথা একদমই থাকে না। এর ব্যথা থাকে কখন যখন শেষ পর্যায়ে চলে যায়, যখন রোগটা অনেক দূর ছড়িয়ে যায়। হাড়ের মধ্যে চলে যায়। এই পর্যায়ে গিয়ে ব্যথা হয়। প্রাথমিক ভাবে কোন ব্যাথা থাকে না দেখেই কিন্তু আমাদের দেশের মহিলারা আসে না।”

“প্রিভেনশন তো বোঝেই না, যখন হয়, হওয়ার পরেও তারা অপেক্ষা করে। দেখা যায় দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাচ্ছে কিন্তু লজ্জায় সে কাউকে বলছে না। স্বামীর সাথে মেলামেশায় রক্ত যাচ্ছে সেটিও সে বলছে না। যখন আসে তখন অনেকে দেরি হয়ে যায়।”

অথচ এতদূর পর্যন্ত এটি গড়ানোরই কথা নয়। কারণ অন্য ধরনের ক্যান্সারের তুলনায় জরায়ু মুখের ক্যান্সার সবচাইতে সহজে নির্ণয় করা যায়। এমনকি হওয়ার আগেই খুব সহজ পরীক্ষায় ধরা যায় ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। জীবাণু প্রবেশের পর জরায়ু-মুখের ক্যান্সার হতে ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির হাসপাতালের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ জেবুন্নেসা বেগম জরায়ু মুখের ক্যান্সার স্ক্রিনিং সম্পর্কে প্রচারে সহায়তা করেন।
তিনি বলছিলেন, জরায়ু মুখের ক্যান্সার হওয়ার আগেই নির্ণয়ে অনেক সময় পাওয়া যায়।

অল্প বয়সে বিয়ে আর অনেক বাচ্চা হওয়া অন্যতম প্রধান কারণ।
তিনি সেটি সম্পর্কে বিস্তারিত যা বললেন তা হল, “যে দুই প্রকার প্যাপিলোমা ভাইরাস দিয়ে এই ক্যান্সার হয়, সহবাসের মাধ্যমেই সেটি স্প্রেড হয়। ভাইরাসটি ঢোকার সাথে সাথেই ক্যান্সার হয় না। অন্য ক্যান্সারে জীবাণুটি ঢোকার পরে আমরা সময় খুব একটা পাইনা।”

“কিন্তু জরায়ু-মুখের ক্যান্সারে ১৫ থেকে ২০ বছরও সময় লাগে জীবাণু প্রবেশের পর ক্যান্সারটি হতে। তার মানে হল এটি নির্ণয়ে এতটা সময় পাওয়া যায়। নিয়মিত স্ক্রিনিং করালে ইনিশিয়ালি আমরা জার্মটা কমাই দিতে পারি।”

ক্যান্সার শব্দটি শুনলে বেশিরভাগ মানুষের মাথায় সম্ভবত ভীতিকর কিছুর অনুভূতি হয়। কিন্তু এর সাথে যখনি জরায়ু মুখ শব্দটি যুক্ত হয় তখন অনেকেই এ নিয়ে কথা বলায় যেন সংকোচ বোধ করেন।
আর এর সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়টি যুক্ত থাকায় সেনিয়ে কথা বলায় রয়েছে আরও আড়ষ্টতা।
এমনকি চিকিৎসকেরাও তার বাইরে নন।

জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয় পদ্ধতি

অথচ জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ধাপটি অত্যন্ত সহজ। সময়ও লাগে মাত্র এক মিনিট বলছিলেন ডাঃ জেবুন্নেসা বেগম। তিনি বলছেন, “এর স্ক্রিনিংটা খুবই সহজ। কোন যন্ত্রপাতি লাগে না। আমরা সবাই ভিনেগার বা সিরকার সম্পর্কে শুনেছি। সেটি ডাইলুট করে তুলায় লাগিয়ে জরায়ুর মুখে লাগিয়ে এক মিনিট রেখে দিলে যায়গাটা যদি সাদা হয়ে যায় তখন মনে করতে হবে এটি ক্যান্সারের পূর্বাভাস।”

“তখন আমরা সেটি কোন পর্যায়ে আছে তা জানতে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে বাকি পরীক্ষা করতে পাঠাই। এমনও হয় খুব প্রাথমিক হলে সেখানেই রোগীর জরায়ুতে ইলেকট্রিক সেক দিয়ে দেয়া হয়। সেটাতেও কয়েক মিনিট লাগে,” যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশের সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেলা সদর হাসপাতাল, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, এমনকি নির্বাচিত কিছু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে জরায়ু মুখের ক্যান্সার নির্ণয়ের প্রাথমিক ধাপটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ বিবাহিত ও যৌন সংসর্গ আছে এমন নারীরা সিরকা দিয়ে পরীক্ষার সহজ এই ধাপটি করিয়ে নিলেই জেনে যাবেন তার এই ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা। অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাই বলছেন নারীদের নিজেদের সম্পর্কে কথা বলতে হবে।
বয়স তিরিশ হওয়ার পর থেকে প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছর পর পর একবার এই পরীক্ষাটি করিয়ে নিতে বলেন চিকিৎসকেরা।

যে কারণে বাড়ছে জরায়ু ক্যান্সারের প্রকোপ

এত সহজ ও বিনামূল্যে সেবা থাকা সত্ত্বেও জরায়ু মুখের ক্যান্সার বাংলাদেশে নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় প্রধান ক্যান্সার।

এতে বছরে মারা যাচ্ছে সাড়ে ছয় হাজারের বেশি। নতুন করে ১২ হাজারের মতো নারীর শরীরে এই ক্যান্সার সনাক্ত হচ্ছে।

ডাঃ আফরোজা খানম বলছেন, “এর সনাক্তকরণের বিনামূল্যের সেবাটি সম্পর্কে তথ্য নারীরা অনেকেই জানেন না। জানলেও সংসার ফেলে সময় ও আর্থিক সমস্যার কারণে আসতে পারেন না। আবার অনেকেই বলেন আমার ক্যান্সার হয়নাই আমি কেন যাবো। স্ক্রিনিং এর উপকারটি সম্পর্কে তাদের জানাটা খুব জরুরী।”

বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এম এ হাই বলছেন এর পেছনে প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা একটি সাংস্কৃতিক কারণ রয়েছে।

বাংলাদেশে মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে আর ঘন ঘন সন্তান জন্মদানকেই বলা হচ্ছে এর প্রধান কারণ।

তিনি বলছেন, “আমাদের কালচারাল বিষয় হল এখানে অল্প বয়সে বিয়ে হয় আর অনেক বাচ্চা হয়। এত অল্প বয়সে সবকিছু ঠিকমতো গঠনই হয়নি। তারমধ্যেই যৌন সঙ্গম আর খুব অল্প বয়সে বাচ্চা নেয়া। এতে জরায়ু মুখের উপর অনেক চাপ পড়ে। “

“যেহেতু তারা অপুষ্টিতে ভোগে তাই তাদের সেরে উঠতে সময় লাগে। তাতে দেখা যাচ্ছে জরায়ু মুখের রিপেয়ারটা ভালোমতো হয়না। এভাবে বারবার বাচ্চা হতে গিয়ে যদি বারবার ড্যামেজ হয় তাহলে ঐখানে একটা অ্যাবনরমাল সেল তৈরি হতে পারে।”

জরায়ু মুখের ক্যান্সারই একমাত্র ক্যান্সার যার টিকা রয়েছে।
তিনি বলছেন, “এর অর্থনৈতিক কারণও আছে। যেমন মেয়েরা যারা খাটাখাটি করে ফ্যামিলিতে হয়ত তাদের ঠিকমত দেখাশোনা করে না। তাদেরকে সময়মত ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়না।”

“সে নিজে অর্থের অভাবে যেতে পারে না। আর বাংলাদেশে নারীদের স্বভাবই হল সবাই খাওয়ার পরে কিছু থাকলে খায় না থাকলে খায়না।”

ডাঃ হাই বলছেন সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণের সাথে শিক্ষারও একটি বিষয় রয়েছে। তিনি বলছেন, তারই করা এক গবেষণায় তিনি দেখেছেন বাংলাদেশে যৌনাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে শিক্ষার মারাত্মক অভাব।

তিনি বলছেন, “আমি আমার এক স্টাডিতে দেখেছি যে বাংলাদেশে গ্রামে ৭৫ শতাংশ নারীর জরায়ু-মুখে ইনফেকশন আছে। এর কারণ হচ্ছে সেক্সুয়াল অর্গানের পরিচ্ছন্নতার অভাব।”

তিনি বলছেন, এই পরিচ্ছন্নতা তাকে নিজেকে যেমন বজায় রাখতে হবে তেমনি তার পুরুষ সঙ্গীকেও সমানভাবে রাখতে হবে।

তিনি বলছেন, নারীরা লজ্জায় কিছু মুখ ফুটে বলে না সেই সংস্কৃতিকে পরিবর্তন করতে হবে। বাড়ির পুরুষ সদস্যদের এ ব্যাপারে তাদের সাথে কথা বলতে পারতে হবে।

তবে ডাঃ আফরোজা খানম হতাশা প্রকাশ করে বলছেন, “দেশে মেয়েরা রূপচর্চার জন্য যে সময় ও অর্থ ব্যয় করে সেটি যদি তারা নিজেদের স্বাস্থ্যের জন্য করতো। চেহারা দেখা যায় তাই আমরা তার পেছনে সময় দিচ্ছি। কিন্তু আমার জরায়ু আমাকে মা হতে সাহায্য করে। এটির গুরুত্ব তাদের বোঝা উচিৎ।”

এর বাইরে যেসব নারীর বহু পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক, তারা রয়েছেন বেশি ঝুঁকিতে।

অথবা যেসব পুরুষের অনেক যৌন সঙ্গী রয়েছে তারাও নারী সঙ্গীদের বেশি ঝুঁকিতে ফেলছেন।

কিন্তু এই ক্যান্সার সম্পর্কে আরেকটি ভালো বিষয় হল এটিই একমাত্র ক্যান্সার যার টিকা রয়েছে। যা দেয়ার উপযুক্ত সময় হল মেয়েদের যৌন জীবন শুরুর আগে।