ধর্ষণের ক্ষেত্রে খেয়াল করে দায়ী করুন
জান্নাতুন নুর দিশা
ফেসবুকে একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। চারজন মেয়ে হিজাব পরে নেচেগেয়ে একটা গান করছেন, “আমরা হিজাবি লেডি, আমরা হিজাব করি” এরকম শিরোনামে। সাথে দুজন ছেলেও তালে তালে গাইছেন। গানের স্টাইল অনেকটাই পশ্চিমা।
এভাবে নেচে-গেয়ে কুশ্রী ভঙ্গিতে হিজাব পরায় দাওয়াত দেয়ার এরকম বাজে একটা ভিডিও হাজার হাজার শেয়ার হচ্ছে। হিজাব পোশাকটাকে প্রকারান্তরে হাসির খোরাক বানানোতে এদের সহযোগিতাই করছেন এটা ভাইরাল করে।
আরো একটা নিউজ কয়েকদিনে বেশ অনেকের টাইমলাইনে দেখলাম। আমেরিকায় এক বাঙালি নারী এক আমেরিকান নারীকে বিয়ে করেছেন। বিয়ে করেছেন গত জুন মাসে। সমকামী বিয়ে আমেরিকায় কোনো গুরত্বপূর্ণ বিষয় না৷ বাঙালি মেয়েটি আমেরিকাতেই বড় হয়েছেন। বাংলাদেশী মিডিয়া এসব নিউজ পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে নিউজ করে, মানুষজনও দলে দলে গালাগালি করে শেয়ার দিয়ে এসব অপ্রয়োজনীয় খবর ভাইরাল করে।
আরো একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এক মহিলা ময়মনসিংহের শশী লজের সামনের ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়িয়ে জোর দাবি জানাচ্ছেন ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার। মহিলা সেখানে বলছেন এই রকম বস্ত্রহীন নারী ভাস্কর্য দেশে এভাবে উন্মুক্ত থাকলে তো নারীরা ধর্ষণ হবেই! এই কথায় আবার দলে দলে লোক একমত পোষণ করে ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে ভাইরাল করেছেন।
নারী সংক্রান্ত এরকম কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয় ভাইরাল করে আপনারা কী পান তা তো জানি না। কিন্তু যে ভয়ংকর নিউজটি আমি একটু আগে নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করলাম সেটা হলো গাজীপুরে এক নারীকে তার বান্ধবীর সহায়তায় ঘুমের ঔষধ খাইয়ে চার বখাটে ছেলে ধর্ষণ করে হাসতে হাসতে তার পাশবিক বর্ণনা দিয়ে ভিডিও আপলোড দিয়েছে। সেখানে তারা এও জানিয়েছে হেসে হেসেই যে তারা জানে তাদের পরদিন জেলে থাকতে হতে পারে কিংবা এলাকাছাড়া হতে পারে। এতে তারা মোটেও উদ্বিগ্ন নয় বরং আনন্দিতই মনে হচ্ছিলো। ধর্ষকদের এত উৎফুল্ল এত আনন্দে এত নির্ভয়ে থাকার রহস্য কী? রহস্য হলো এই ধর্ষণে তো তাদের আপনারা দায়ী করবেন না, দায়ী করবেন হিজাব পরা না পরাকে, দায়ী করবেন আমেরিকার কোনো সমকামী বিয়েকে, দায়ী করবেন একটি বস্ত্রহীন মাটির ভাস্কর্যকে। যাদের আপনারা নিয়ম করে ভাইরাল করেন। কিন্তু ভাইরাল করেন না ধর্ষককে। ধর্ষকের নারকীয় চেহারা আপনারা খুব দ্রুত ভুলে যেতে ভালোবাসেন!