banner

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ

মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ


শামসুদ্দীন ইলিয়াস


গত ২৪.১১.২০১৯ তারিখে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়ার রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত মহামান্য হাইকোর্ট বেঞ্চ কর্তৃক বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইকলজিসট নিয়োগ সংক্রান্ত রুল জারী করেছেন। বাংলাদেশে মনোবিজ্ঞান শিক্ষা, মনোবিজ্ঞান গবেষণা এবং মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের বিষয়ে বাংলাদেশ মনোবিজ্ঞান সমিতির একজন সদস্য এবং মনোবিজ্ঞান বিষয়ের একজন শিক্ষক হিসাবে নিম্নরূপ বক্তব্য প্রদান করছিঃ
বাংলাদেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি কলেজে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে মনোবিজ্ঞান বিষয়টি দীর্ঘদিন যাবত পঠিত হচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে প্রতি বছর হাজার খানেক শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে মনোবিজ্ঞানিক সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। তবে, যুগোপযোগী সরকারি নীতিমালার অপর্যাপ্ততার কারণে মনোবিজ্ঞানে ডিগ্রিধারী এসব যুবক-যুবতীরা জাতিকে কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না। স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মনোবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা যেমন-শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান, সমাজ মনোবিজ্ঞান, শিল্প ও সাংগঠনিক মনোবিজ্ঞান, পরিবেশ মনোবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য মনোবিজ্ঞান, অপরাধ মনোবিজ্ঞান, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, ভোক্তা মনোবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয় অধ্যায়ন করে থাকে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আবার একটি, দুটি, বা তিনটি বিষয়ের ওপর বিস্তারিতভাবে অধ্যায়ন করে। মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে যে কোন শিক্ষার্থীই মনোবিজ্ঞানী হিসাবে যে কোন প্রতিষ্ঠানে সেবা প্রদানের সক্ষমতা অর্জন করে থাকে। তাই, শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ধরন, সক্ষমতা, মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষার পরিবেশ, পাঠদান পদ্ধতি, শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রমের মূল্যায়ন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক, অভিভাবকদের উপদেশনা ও নির্দেশনা প্রদানসহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষালয়ের সাথে সম্পর্কিত সকল বিষয়ে মনোবিজ্ঞান সম্মত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী যে কোন ব্যক্তিই যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে, শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী ব্যক্তিবর্গ এক্ষেত্রে অধিকতর যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়সমূহ (বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এবং অটিস্টিক) ব্যতীত সাধারণ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন এবং স্বাভাবিক আচরণ সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা অধ্যায়ন করে থাকে। স্বাভাবিক শিক্ষার্থীরা কোন মানসিক রোগী নয়। শিক্ষার্থীদের পাঠে অমনোযোগ, স্কুল ভীতি, পরীক্ষা ভীতি, মানসিক চাপ, উদ্বেগ, ব্যক্তিগত এবং পরিবারকেন্দ্রিক সমস্যাসমূহ দূরীকরণের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী যে কোন ব্যক্তিই প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সক্ষম। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞানের অনেকগুলি শাখার মধ্যে একটি শাখা মাত্র। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ব্যক্তিবর্গ মূলত মানসিক রোগগ্রস্থ ব্যক্তিদের রোগ নিরাময় বা চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে থাকে; তবে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরাও সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্য সেবা ও কাউন্সেলিং সেবা প্রদানে সক্ষম। অতএব, সারা দেশের লক্ষ লক্ষ সাধারণ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদেরকে মানসিক রোগী মনে করলে তা শুধু তাদেরকে অবমূল্যায়নই করা হবে না, এটা তাদেরকে অসম্মান ও হেয় করারও শামিল বিধায় এটা যেমন সমর্থনযোগ্য নয়; ঠিক তেমনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শুধুমাত্র ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্‌ট নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাবনাও বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেটা দেশীয় প্রয়োজন এবং শিক্ষার্থীদের মন-সামাজিক অবস্থার সাথেও মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়; তা যথাযথও হবে না। বরং সময়ের প্রত্যাশিত দাবী অনুযায়ী শিক্ষার্থী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং দেশের সার্বিক মঙ্গলের স্বার্থেই অনতিবিলম্বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক (সম্মান) এবং যে কোন শাখায় (প্রধানত শিক্ষা মনোবিজ্ঞান, কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান, স্কুল মনোবিজ্ঞান, বিকাশ মনোবিজ্ঞান ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন মনোবিজ্ঞানে) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারী সাইকোলজিস্টদেরকে নিয়োগ দেয়া জরুরী।