banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে গণধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ, আটক ২

স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে গণধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ, আটক ২


নারী সংবাদ


ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে তাকে গণধর্ষণের সহযোগিতা করেছেন বলে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্ত্রী। শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের চরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

রোববার রাতে ওই গৃহবধূ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় স্বামীসহ দুই অভিযুক্তকে আটকের পর আজ সোমবার দুপুরে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলে স্বামী রতন মিয়ার সাথে ঈশ্বরগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসের পেছনে বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ খুঁজতে যান ওই গৃহবধূ। কোনো বাসায় কাজ না পেয়ে স্বামীর সাথে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে জাটিয়া ইউনিয়নের শিমুলতলী গিয়ে বাড়ি না ফিরে শিবপুর গ্রামের দরগায় গৃহবধূকে নিয়ে গান শুনতে যান রতন। গান শুনে রাত ১১টার দিকে হেঁটে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা রওয়ানা হন। দ্রত বাড়িতে যাওয়া যাবে- এ কথা বলে রাস্তা দিয়ে না গিয়ে ক্ষেতের মাঝখান দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর পর জাটিয়া ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়ার একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে যান রতন। সেখানে গিয়ে স্ত্রীকে মারধর করে অপেক্ষমাণ লম্পটদের হাতে তুলে দেন তিনি। সেখানে রাতভর পালাক্রমে ধর্ষিত হন ওই গৃহবধূ।

রোববার ভোরে সেখান থেকে পালিয়ে এসে গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূ থানায় হাজির হন। পরে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান শুরু করে। আটক করা হয় প্রধান অভিযুক্ত স্বামী রতনসহ সরিষা ইউনিয়নের লংগাইল গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে নজরুল ইসলামকেও।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জয়নাল আবেদীন বলেন, স্ত্রীকে ধর্ষকদের হাতে তুলে দেন স্বামী। গণধর্ষণের ঘটনার এমন খবর পেয়ে তার স্বামীসহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

মনের খোরাক

মনের খোরাক


কানিজ ফাতিমা


প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু’চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ – ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা – এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই মিশে থাকে আমার মনের খোরাক।
স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর – জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু’চোখের তাপসী ধ্যান। দু’টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! – উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্মবিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা, কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি আত্মবিশ্বাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু’টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু’ কানে মিশেছে – আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু’টোকে কান থেকে নামায়নি। অদ্ভুত ভাবে হাটছে মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত – পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে “সৌন্দর্য” বা “স্মার্ট নেস” এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন “ফ্যাশন”?
ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই “ফ্যাশন” কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু “স্মার্ট” তো হতে হবে।
আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে-টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা- ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ “সুখাদ্য” হিসাবে চোখ বুজে গেলে?
সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।