banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

সোনার হরিণ (পাঁচ)

সোনার হরিণ (পাঁচ)


ফাতিমা মারিয়াম


আলাদা সংসার পেয়ে মালা মহা খুশি। সে নিজের মত করে সংসার গুছিয়ে নিচ্ছে।

চার/ পাঁচ বছর চলে গেল। এরই  মধ্যে সে আরেকটি সন্তানের মা হল। এবারের সন্তান মেয়ে। এই সন্তান হওয়ার সময়ও রীতা মালাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। কিন্তু মালা যেন একটু কৃতঘ্ন ধরনের মেয়ে।  সে শফিকের কানে রীতা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা তুলে দেয়।  একবার দুইবারের পর শফিক রীতার কাছে এটা ওটা কৈফিয়ত চায়। রীতা তার মতামত ব্যক্ত করে। আপাতত ঝামেলা মিটে যায়! কিন্তু আবার শুরু হয়…………।

কয়েকবারের পর রীতা যখন বুঝতে পারলো এসবের পিছনে মালার হাত আছে, তখন সেও এসব নিয়ে তুমুল ঝামেলা করতে থাকল। শ্বশুরবাড়িতে নালিশ করেও কোন ফলাফল নেই।

এদিকে শফিক দুই বউকেই হুমকি ধমকি দেয়। শাসনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কেউই কথা শুনতে বা মানতে নারাজ। শফিক এক পর্যায়ে রীতাকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার জন্য জোর নির্দেশ দিলো।

কিন্তু এই ব্যাপারে রীতা কোনভাবেই রাজি হল না। তার সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই-ই তাকে এব্যাপারে শক্ত থাকার পরামর্শ দিল। এদিকে শফিক চূড়ান্ত নোটিশ দিলো চাকুরী না ছাড়লে সে রীতাকে তালাক দেবে।

তখন শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরামর্শ দিলো আপাতত কিছুদিন হাসপাতাল থেকে ছুটি নিতে। রীতা হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে স্বামীর কাছে মিথ্যা বলল যে সে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রীতা শফিককে সব খুলে বলল। শফিকও বেশি উচ্চবাচ্য করলো না। কারণ তার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। এদিকে খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আগে রীতাকে সামান্য খরচ দিলেই চলত, এখন তাকে সম্পূর্ণ সংসার খরচ দিতে হয়।

আবার মালার জন্য বাসা ভাড়া করায় ওখানেও বেশ ভালো পরিমাণ টাকা খরচ হয়ে যায়। আগে সবার সাথে থাকায় ওখানেও খরচ অনেক কম হত। বাসা ভাড়া লাগত না। এখন দুই সংসার চালাতে গিয়ে সে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। তার উপর ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ফলে রীতা আবারও হাসপাতালে যাওয়া শুরু করলো।

এদিকে শফিকের ব্যবসা দিনদিন খারাপ হতে হতে এক পর্যায়ে সে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পারিবারিক সিদ্ধান্তে সে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রবাসে যাওয়ার জন্য যা খরচ হচ্ছে তা কয়েক দিক  থেকে ম্যানেজ করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গিয়েছিলো তার কিছু অংশ এখনও আছে, খালু  কিছু দিয়েছে, রীতা ঋণ করে কিছু দিয়েছে, শফিক নিজেও ঋণ করে কিছু টাকার ব্যবস্থা করেছে।

শফিক চলে গেল।

পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। ঋণ শোধ হয়ে গেছে।  দুই বউকেই আলাদাভাবে খরচের টাকা পাঠায়। খালাকেও  কিছুকিছু দেয়। দিন মাস কেটে যায়……।

দুই বছর পর শফিক দেশে আসলো। ৩/৪ মাস থেকে আবার চলে গেল। আবারও দুইবছর পর দেশে আসলো। এভাবে সে প্রবাস জীবন কাটাতে লাগলো।

এদিকে রীতা আর মালার ঝামেলা কিন্তু বন্ধ হয়নি! শফিকের অনুপস্থিতি এবং উপস্থিতি উভয় অবস্থাতেই দুজনের মনোমালিন্য লেগেই আছে। সামান্য বিষয়েই দুজনের ঝগড়া হয়! আবার মিটমাট করে। দুজনে দুজনের বাসায় যায়। কিছুদিন পরে আবারও ঝামেলা…………………।

একদিন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মালা রীতাকে হুমকি দিলো- তুমি দেখে নিও আমি একদিন তোমাকে শফিকের ঘর থেকে বের করে দেবই।  ওর এই হুমকি যে একদিন তারই দিকে ফিরে আসবে তখন তা কেউই বুঝতে পারেনি!!!

শফিকের ভয়েই হোক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক একটি বিষয়ে সবসময় দুজনের মিল ছিল তা হল উভয়েই একে  অন্যজনের সন্তানকে  বেশ আদর যত্ন করত। অবশ্য এ ব্যাপারে রীতাই অগ্রগামী ছিল।

শফিক এবার চিন্তা করে দেখল  প্রবাসে তার জীবন অনেক  বছর কেটে গেছে। বয়সও বেড়ে যাচ্ছে।   তাই এখন    ছেলেদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই  তার জন্য ভালো।  তার দুই ছেলেই  ইতিমধ্যে এইচএসসি পাশ করেছে। সে তার দুই ছেলেকেই ওখানে নিয়ে গেল। তাদেরকে সেখানে রেখে বছর খানেক পর শফিক একেবারেই দেশে চলে আসলো।

 চলবে..