banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

সোনার হরিণ (তিন)

সোনার হরিণ (তিন)


ফাতিমা মারিয়াম


এবার রীতার জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল।

শায়লা রীতার  এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। একই পাড়ায় বাসা। ছোটবেলা থেকেই দুজনার গলায় গলায় ভাব। দুজনে সব সময়ই পরস্পরের বাসায় যাতায়াত করত। শায়লার পরিবারের সবাই রীতা ও তার মেয়ের প্রতি খুব সহানুভূতিশীল ছিল। সবসময়ই তারা রীতা ও তার ছেলের খোঁজখবর নিত।

শায়লারা দুই বোন ও পাঁচ ভাই। বাবা মা সহ বেশ বড় পরিবার।   শায়লার খালাতো ভাই  শফিক ছোটবেলা থেকেই শায়লাদের পরিবারেই বড় হয়েছে। তার মা বাবা নেই। মাতৃ-পিতৃহীন শফিক খালার পরিবারে বেশ আদর যত্নেই অন্য ভাই বোনদের মত দিন যাপন করছে।    এইচএসসি পাশ করে আর পড়াশুনা করেনি। আপাতত বেকার জীবন যাপন করছে।

শফিক সবসময়ই রীতার কাছে আনিসের কথা জানতে চাইত। তার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করত। রীতার জীবনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা নিয়ে শফিক খুব আফসোস করত। সহানুভূতিও দেখাত। রীতাও শফিককে বড়ভাই মনে করেই সব কিছুই বলত। একে তো বান্ধবীর ভাই তার উপর প্রতিবেশী!!!

এভাবে কুশল বিনিময় করার ফাঁকে ধীরে ধীরে তারা কখন যে একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে তা তারা নিজেরাও জানেনা। যখন বুঝতে পারল তখন তাদের আর কিছুই করার থাকল না। রীতার বয়স কম। আনিসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সে হতাশ হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক বছর কেটে গেল…… আনিস তার সাথে কোনরূপ যোগাযোগও করছেনা। ফলে যা হওয়ার তাই হল!

এরপর বেশ কয়েকমাস কেটে গেছে।

শফিকের বা রীতার বাসার কেউ বিষয়টি প্রথমে টের পায়নি। ধীরেধীরে ওদের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে পরিবারে ও পরে এলাকায় গুঞ্জন, কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। এবার ওরা দুজনেই সবার কাছে ওদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিষ্কার করে দিল।

তারা সবাইকে জানাল যে, যখন তাদের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তখন তারা উভয়েই সিদ্ধান্ত নেয় যে- বিয়ে করবে। যেহেতু পরিবার বা সমাজ তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবে না তাই তারা গোপনে বিয়ে করেছে। অবশ্য তার আগে রীতা সব নিয়ম মেনেই আইনের মাধ্যমে আনিসকে তালাক দিয়েছে।

রীতার পরিবার এই বিয়ে মেনে নিলেও শফিকের পরিবার কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিলো না। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রীতাকে অপমান অপদস্থ করলো, ভীষণভাবে নাজেহাল করলো। তারা সুযোগ পেলেই রীতার বাবার বাসায় এসে রীতাকে কটু কথা শোনাতে লাগলো। রীতা তার অবস্থানগত কারণে সব কিছুই চুপচাপ হজম করে যায়। শফিকও তাকে ধৈর্য ধরতে বলে।

শফিকের পরিবার রীতাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য শফিককে চাপ দিতে থাকলো। এমনকি তাকে পরিবার  থেকে বের করে দেয়ার  করার হুমকিও দিল। কিন্তু সকল চাপের মুখে শফিক অনড় থাকলো। এক পর্যায়ে তারা হাল ছেড়ে দিলো। কিন্তু মনেমনে নতুন করে পরিকল্পনা করতে থাকে। এভাবে টানাহ্যাঁচড়ায় প্রায় দুই বছর কেটে গেল।

পরিস্থিতি এখন আগের চাইতে কিছুটা স্বাভাবিক। যদিও শফিকদের বাসার কেউ রীতাকে মেনে নেয়নি, তবুও এখন আর ঐরকম দুর্ব্যবহার কেউ করেনা। কারণ রীতা মা হতে চলেছে। সারাদিন হাসপাতালে থাকে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে ছেলেকে নিয়ে সময় কাটায়। দিন মোটামুটি কাটছে।

শফিক এখনও বেকার। ওর হাতখরচ রীতাই দেয়। পরিবার থেকে শফিক কোন সহযোগিতাই পায়না। বরঞ্চ পায় গঞ্জনা আর তিরস্কার। ওর বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে বাসার সবাই  নতুন এক ফন্দি করলো।

তারা শফিককে জানাল- ‘তুমি যদি আমাদের কথা মেনে নাও। তাহলে তোমাকে আমরা ব্যবসা করার টাকা দিব। এখন যেহেতু রীতার বাচ্চা হবে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা এখন আর আমরা বলছিনা…..ওর জায়গায় ও থাকুক। ওকে আমরা এই পরিবারে কখনই স্থান দেব না। তোমাকে আমরা আবার বিয়ে করাবো…… মেয়ে আমাদের দেখাই আছে। শুধু তোমার মতের অপেক্ষা করছি। তুমি ভেবেচিন্তে আমাদের জানাও।‘

শফিক বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। একদিকে রীতা মা হবে। অন্যদিকে সে বেকার। সামনে খরচ অনেক বাড়বে। অতি দ্রুত তার কিছু একটা কাজ করা উচিত। চাকুরী করার চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়েছে। সে দিশাহারা হয়ে গেল। এমন একটা বিষয় যে সে কারো সাথে বুদ্ধি পরামর্শও করতে পারছেনা। বেকারত্বের যন্ত্রণা আর কত সহ্য করা যায়!!! অবশেষে সে পরিবারের সিদ্ধান্তের কাছেই নতি স্বীকার করলো।

রীতাকে মিথ্যা কিছু একটা বলে সে খালুর  সাথে  গ্রামের বাড়ি  চলে গেল। সেখানে গিয়ে সে পরিবারের পছন্দ করা পাত্রী মালাকে বিয়ে করলো। বিয়ের পর সেখানে কয়েকদিন থেকে শফিক ঢাকা চলে আসলো। যেহেতু শফিক ও রীতার বাসা একই পাড়ায়, তাই মালাকে এত তাড়াতাড়ি ঢাকা আনল না।

চলবে…