banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৫

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৫


আফরোজা হাসান


বাইরে বেড়োতেই ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগলো গায়ে। কাঁপন ধরে গেলো কিন্তু ভীষণ ভালো লাগলো শাবাবের। ঠাণ্ডা পছন্দ করে সে ভীষণ। কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানো তার অনেকগুলো শখের মধ্যে একটা। এবং বেশ উপরের দিকেই এটার অবস্থান। মাত্র আলো ফুটতে শুরু করেছে। চারিদিকে হালকা কুয়াশার চাদর। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মনেমনে বলল শাবাব, চমৎকার সাজিয়েছে ভাইয়া-ভাবী তাদের ছোট্ট সংসার। ছবির মত সুন্দর বাংলোটা। একপাশে নানান ধরণের ফুল, পাতাবাহারের গাছ, আরেক পাশে দেশি শাক-সব্জীর বাগান। তবে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে বারান্দায় দাঁড়িয়েই সমুদ্রের অনেকটা দেখা যায়। নাহ! মাহামকে নিয়ে বাইরে আসা উচিত ছিলো। প্রকৃতির একটু কাব্যিক বর্ণনা শোনা যেত।

সুপ্রভাত! শব্দটি কানে আসতেই মনে কাঁপন ধরে গেলো শাবাবের। এই কণ্ঠের অধিকারীর তো এখন এখানে থাকার কথা না। ভুল শুনছে নাতো? ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো সে। হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে আরিফী। মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিলো শাবাব। আবেগের উর্মিমেলাকে যতটুকু সম্ভব হজম করে গম্ভীর কণ্ঠে সালাম দিলো।

হাসতে হাসতে সালামের জবাব দিলো আরিফী। অবাক হয়েছো খুব আমাকে দেখে? জানতে চাইলো।

অবাক হবার মত কিছু ঘটলে মানুষ অবাক হবে সেটাই কি স্বাভাবিক না?

আরিফী হেসে বলল, তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার উপর?

আমি বুঝি না রাগ করার মত কাজ করার পর মানুষ আবার প্রশ্ন কেন করে রেগে আছে কিনা? এর সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যাটা কি?

চিন্তিত কণ্ঠে আরিফী বলল, সত্যিই আমার জানা নেই। এই ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে জানলে আমি সত্যিই সাইকোলজি নিয়ে পড়তাম।

ভেরি ফানি।

হেসে ফেললো আরিফী। আরো কিছুটা কাছে সরে এলো শাবাবের। অজুহাতের স্বরে বলল, আমার সত্যি ইচ্ছে ছিলো ঈদে দেশে যাবার। কিন্তু কাজের এত প্রেশার ছিল সময় বের করতে পারিনি। তাছাড়া আমি দেশে গেলে ভাইয়ার যাওয়া হতো না। মাহাম অসুস্থ্য ছিল তাই আমার কাছে ভাইয়ার যাওয়াটাকেই বেশি জরুরি মনে হয়েছিলো। এখনো রাগ করে থাকবে?

না রাগের পর্ব শেষ। এখন শাস্তির পর্ব শুরু।

শাস্তি? আবার শাস্তি কেন?

তোমার মাথার ঢিলা স্ক্রু টাইট করার জন্য।

আচ্ছা দাও শাস্তি। তোমার সব শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
মাথা পেতে না নিয়ে উপায় আছে নাকি তোমার? বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেবো না একদম।

এই সময় তো শাবাবকে ডাকতে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে এলো মাহাম। আরিফী আর শাবাবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, সরি। আমি আসলে শাবাবকে রুমে না দেখে খুঁজতে এসেছিলাম। বাবা বলছেন আজ আমরা সবাই বীচে নাস্তা করবো। শুনেই তো স্বভাব সুলভ লাফিয়ে উঠলো শাবাব।

আধ ঘণ্টা পরেই তো পুরো পরিবার নাস্তার জিনিসপত্র নিয়ে বীচে রওনা করলো। পরিবারের সবাই মিলে হাসি-আনন্দ-গল্পের মধ্যে দিয়ে স্বাগত জানালো নতুন আরেকটি দিনকে।
ভাতিজা মিহিরকে বীচে ছুটাছুটি করতে শুরু করলে তার বডিগার্ডের দায়িত্ব দেয়া হলো আরিফীকে। শাবাবের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে। ভাবী আর মায়ের সাথে গল্পগুজবে মশগুল শাবাব। ফিরেও তাকালো না আরিফীর দিকে। ফাইয়াজ সাহেব ছেলের সাথে ব্যবসা বিষয়ক আলোচনাতে ব্যস্ত। সবার উপর একবার চোখ ঘুরিয়ে মাহামের উপর আটকে গেলো আরিফীর দৃষ্টি। কফির মগ আর বই নিয়ে একপাশে নিজের জগতে মগ্ন মাহাম। এগিয়ে গিয়ে বসলো মাহামের পাশে।

কি এখনো পটাতে পারোনি তোমার বৌকে? হাসিমুখে জানতে চাইলো মাহাম। আমি তোমার অপেক্ষাই করছিলাম ভাইয়া। এই নাও লটকন।

লটকন দিয়ে কি করবো?

মাহাম হেসে বলল, তোমার বৌ আমার কাছে তোমাকে জব্দ করার জন্য আইডিয়া চেয়েছিলো। আমি বলেছি এমন কোন খাবার এনে দিতে বলো যেটা ইউরোপে পাওয়া অসম্ভব। যেমন ধরো লটকন। তবে আমি যে সাথে করে ভাবীর জন্য লটকন নিয়ে এসেছি এটা তোমার বৌ জানা নেই।

হাসতে হাসতে মাহামের হাত থেকে লটকন নিয়ে আরিফী বলল, তুই আসলেই আমাদের সবার জীবনে নূর হয়ে এসেছিস বুঝেছিস?

হুম, বুঝলাম। ঐ যে তোমার হুর আসছে। লটকন খাইয়ে বশ করো হুরকে। আমি যাই।

শাবাব কাছে আসতেই চোখ মুখ করুণ করে ফেললো আরিফী। ব্যথিত কণ্ঠে বলল, এভাবে আর কতক্ষণ চলবে শাবাব? সবকিছুকে টেনে ইলাস্টিকের মতো লম্বা করতে চাওয়া কিন্তু অনুচিত।

খবরদার আমাকে লেকচার শোনানোর চেষ্টা করবে না।

আচ্ছা কি করতে হবে আমাকে সেটা বলে দাও তুমি।

আমার লটকন খেতে ইচ্ছে করছে এনে দাও।

এই না হলে মনের মিল। জানো আমিও এমনটাই চাচ্ছিলাম।
মানে?

মানে প্রেমিক-প্রেমিকারা বাদাম ছুলে খেতে খেতে গল্প করে, আমার ইচ্ছে করছিলো আমরা দুজন লটকন ছুলে খেতে খেতে গল্প করবো। ইম্যাজিন করো তুমি আমি সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাঁটছি আর একে অন্যেকে লটকন ছুলে খাওয়াচ্ছি।
শাবাবকে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিফী বলল, আচ্ছা বাদ দাও ইম্যাজিন করতে হবে না। এত নাও লটকন চলো প্র্যাক্টিকাল করি।

একবার লটকন আরেকবার আরিফীর দিকে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে শাবাব বলল, মাহাম ইউ বিশ্বাসঘাতিনী! মির জাফরের খালাম্মা! খুন করবো তোকে আমি।

শাবাবকে তেড়ে আসতে দেখে বাবা বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে ছুট লাগালো মাহাম।

চলবে…