banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৩

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৩


আফরোজা হাসান


খুব আনন্দ নিয়ে সাবিহা যে কাজগুলো করেন তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দুই কন্যার জন্য শপিং। আজও দুই কন্যার জন্য একগাদা শপিং করে বাসায় ফিরলেন তিনি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলেন কন্যাদের কাছে। ঘরে ঢুকে দেখেন বড় কন্যা শাবাব দুই হাত মুঠো করে নিজেই নিজের শরীরে মারছে। পাশে বসতে বসতে সাবিহা বললেন, মাইর খেতে ইচ্ছে করলে আমাকে বল। তোদেরকে মারার জন্য আমার হাত সবসময় নিশপিশ করে।

শাবাব হেসে বলল, নিশপিশ করলে মারবে। মার মাইর তো হেলদি ফুড।

হাসলেন সাবিহাও, কি করছিস? জানতে চাইলেন মেয়ের কাছে।

এটা যোগ ব্যায়ামের একটা প্র্যাকটিস মামণি। এর নাম কি ফো ব্যায়াম। দু’হাত হালকা করে মুঠো করে সারা শরীরে চাপড়াতে হয় দু’তিন মিনিট। একদম মাথা থেকে আরম্ভ করে সারা শরীরে করতে হবে এটা। এরফলে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে দেহে শক্তি উৎপন্ন হতে সাহায্য করবে। জবাব দিল শাবাব।

মাথার দুষ্টুমি বুদ্ধি কমানোর কোন যোগ ব্যায়াম নাই? থাকলে সেটার প্র্যাকটিস কর তোরা দু’জন।

দু’জন বলছো কেন মামণি? আমি কি কখনো দুষ্টুমি করি? অভিযোগের স্বরে বললো মাহাম।

শাবাব বলল, দুষ্টুমি একটা আর্ট। চাইলেই সবাই এটা করতে পারে না বুঝলি গাধী। তুই বই পড়ছিলি তাই পড়। পড়তে পড়তে মহিলা বিদ্যাসাগর হয়ে যা। প্যাকেটে কি মামণি? শিপিং করেছো আমাদের জন্য? ইয়া হু…বলে চিৎকার দিয়ে যোগ ব্যায়ামের প্র্যাকটিস ছেড়ে প্যাকেট খোলাতে মন দিলো শাবাব।

মাহামের দিকে তাকালেন সাবিহা। বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে। ফিরেও তাকাচ্ছে না শপিংয়ের দিকে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। এত শখ করে শপিং করে কিন্তু মাহাম কখনোই কোন একটা জিনিস আনন্দ নিয়ে দেখে না। অথচ ছোট্ট একটা ক্লীপ দেখেও মহা আনন্দিত হয় শাবাব। একেবারে উত্তরমেরু আর দক্ষিণমেরু তার দুই মেয়ে। মাঝে মাঝে মনেহয় শাবাবের কিছু চঞ্চলতা যদি ঢুকে যেতো মাহামের মধ্যে, বদলে মাহামের প্রশান্ত চিত্তের একটু ছোঁয়া যদি লাগতো শাবাবের গায়ে। একটা ড্রেস নিয়ে মাহামের সামনে ধরে বললেন, দেখ তো মা কেমন হয়েছে এটা?

একবার চোখ বুলিয়ে মাহাম বলল, হুম…সুন্দর। শাবাবকে অনেক মানাবে।

এটা আমি তোর জন্য এনেছি।

ও আচ্ছা! জাযাকিল্লাহ মামণি।

দেখ শাবাব চলেও গেছে ড্রেস চেঞ্জ করতে। তুইও এটা একটু পড়ে আয় না মা! দেখি তোকে কেমন লাগে। আবদারের স্বরে বললেন সাবিহা।

উহু…এখন পারবো না মামণি। ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া আল্লাহ তোমার কন্যাদের ব্যাপক রূপবতী করে সৃষ্টি করেছেন। খারাপ লাগার তো কোন কারণ দেখছি না।

মাঝে মাঝে যখন সিরিয়াস মুখ করে দুষ্টুমি মাখা কথা বলে মাহাম ভীষণ ভালো লাগে সাবিহার। কিন্তু সবকিছুর প্রতি মেয়েটার আকর্ষণ হীনতা খুব বিরক্ত করে। রাগ করে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। মাকে রাগ করে উঠে যেতে দেখে হার চেপে ধরলো মাহাম। টেনে ধরে আবারো পাশে বসিয়ে বলল, মামণি তোমার উচিত যোগ ব্যায়াম করা। তোমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ যোগ ব্যায়ামের প্র্যাকটিস হলো হওয়াইন বা হুপোনোপোনো।

কি অদ্ভুত নাম। এটা আবার কেমন ব্যায়াম?

মাহাম হেসে বলল, এই প্র্যাকটিসের মূল কথা হচ্ছে চারটি। এক. আমি তোমাকে ভালোবাসি, দুই. আমি দুঃখিত, তিন. তোমাকে ধন্যবাদ, চার. আমাকে ক্ষমা করো। এটা হচ্ছে মন পরিস্কার এবং মনকে শান্ত ও স্বচ্ছ রাখার ব্যায়াম।

সেটা কিভাবে?

ধরো তোমার সাথে কারো খারাপ সম্পর্ক আছে কিংবা কাউকে তুমি সহ্য করতে পারো না। দেখলেই ইচ্ছে করে গলা চাপা দিতে। তখন তোমাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে, তোমার মনের মধ্যে ব্যক্তিটির ছবি কল্পনা করে, তোমার উচ্চ সত্ত্বা থেকে ভালোবাসার ক্ষমতা নামিয়ে এনে ঐ চারটি কথা বারবার বলতে হবে।

বললে কি হবে? আর গলা চাপা দিতে ইচ্ছে করবে না?

হুম…ইচ্ছে করবে না। এই প্র্যাকটিসের ফলে সেই ব্যক্তির প্রতি যদি তোমার ভালোবাসা নাও জন্মে, অন্তত বারবার এমনটি করার ফলে তাকে তুমি ক্ষমা ঠিকই করে দেবে।
কোথায় শিখেছিস এসব ফালতু যোগ ব্যায়াম?

এটা মোটেই ফালতু না মামণি। আমার তো শাবাবের উপর রাগ হলেই এটা করি। নয়তো কবেই আমি গলা চেপে ওকে মেরে ফেলতাম।

হেসে মাহামকে জড়িয়ে ধরে আদর করে সাবিহা বললেন, তুই কি জানিস যে তুই একটা সোনার টুকরা মেয়ে?

মাহাম হেসে বলল, উহু…আমি এমন একটা মেয়ে যার জন্ম হয়েছে অসাধারণ দুজন মানুষের সংমিশ্রণে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করি সেই মানুষ দুজনকে ধারণ করতে আমার মধ্যে। সমুদ্রের টানে নদী যেমন ছুটে চলে ঠিক তেমনি ঐ মানুষ দুজনের পানে ছুটে চলতে চাই আমি। হয়েছে এমন ছলছল চোখে তাকাতে হবে না এখন। দাও তোমার ড্রেস পড়ে আসি।
হেসে মেয়ের হাতে ড্রেস তুলে দিলেন সাবিহা। মাকে আদর করে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে রওনা করলো মাহাম।

চলবে….