banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

অটিজম শিশুর খাদ্য নিয়ে

অটিজম শিশুর খাদ্য নিয়ে


নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী


সব বিশেষ শিশু দের মধ্যে অটিজম সমস্যা সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। অটিজম এর বৈশিষ্ট্য গুলো কারো প্রকট থাকে কারো প্রচ্ছন্ন থাকে! আবার একি রকম বৈশিষ্ট্য গুলো সবার মধ্যে থাকে না সবাই একক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয় তবে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যে আবার মিলও থাকে।
মনে রাখবেন পৃথিবীতে যদি এক লক্ষ মানুষ থাকে তবে এই লক্ষ মানুষের চাহিদা, ধরন, সমস্যাও এক লক্ষ রকমের হবে । একেক মানুষ একেক সত্তা! এই অটিস্টিক শিশুর বেলা তেও এর ব্যতিক্রম নয়। সবার খাবারের ধরণ ও চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হবে । খাবার এর পছন্দের তালিকাও ভিন্ন হবে ।
যখন প্রথম অটিজম আক্রান্ত শিশুর খাবার নিয়ে আলোচনা আসলো গবেষণা হলো তখন দেখা গেলো যে , যে সকল খাবারে অক্সালিক এসিড , গ্লুটেন , ক্যাসিন আছে ঐ ধরনের খাবার খেলে এসব শিশুর অস্থিরতা জনিত সমস্যা বাড়ছে। এছাড়াও ফাস্টফুড জাঙ্ক ফুড এগুলা প্রতিদিন খেলে তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশে এটা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি কিন্তু এটা নিয়ে গবেষণা এখনো চলমান!
গুগলের কল্যাণে আমরা যেমন অনেক ভালো কিছু শিখি আবার অনেক ভুল ধারণা নিয়ে থাকি। গ্লুটেন , ক্যাসিন, অক্সালিক এসিড খাবারে থাকলে খারাপ তাই সব বন্ধ বলে দেয়া হয়! কিন্তু সব অটিস্টক শিশুর এই সব উপাদান থাকা খাবারে সমস্যা নাও হতে পারে! কারো দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা কারো শুধু বাদামে কারো আবার রুটি তে, কোন শিশুর আবার দুধ ও ডিমে!

আমার দীর্ঘ চার বছরের অভিজ্ঞতা বলছি আমি এমনো অটিস্টিক শিশু পেয়েছি যার শুধু ভাত এ সমস্যা অর্থাৎ রাইস ও রাইস দিয়ে তৈরি খাবারে! অন্য কোন খাবারে সমস্যা নাই!!! শিশু টির ভাতে ফুড সেনসিটিভিটি ছিলো ৫+ অর্থাৎ সর্বোচ্চ!!! আর বাদামে ছিলো ৪+!!! এখন আপনি কিভাবে নির্ধারন করবে আপনি আপনার শিশু কে গুগল থেকে জেনে সঠিক খাবার দিচ্ছেন???
এই শিশু টির বাবা মা সিঙ্গাপুর থেকে এই টেস্ট গুলো করে এনেছেন । ওনার সামর্থ্য ছিলো কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই সামর্থ আমাদের সবার নাই!
তাহলে উপায় কি???
হা অবশ্যই উপায় আছে!

১.আপনি আপনার অটিস্টিক শিশু টির খাবারের ব্যাপারে আরেকটু সচেতন হতে পারেন! ফাস্টফুড এড়িয়ে নরমাল খাবার দিয়ে দেখুন তার সমস্যা গুলো কমে কিনা!
২!. আপনার শিশু কে সপ্তাহে ২ দিন দুধ খেতে দিন আর ঐ ২ দিন তাকে পর্যবেক্ষণ করুন কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি সব ঠিক আছে!
৩. একটা ডায়েরি মেইনটেইন করুন যেদিন খুব বেশি অস্থির হয়ে যায় ঐ দিন নতুন কোন খাবারে সে খেয়েছে কিনা বা বেশি কোন খাবার খেলো কিনা দেখুন আর লিখে রাখুন! এভাবে প্রতি মাসে তাকে ফলো আপ এ রাখুন।

৪. একটা গোটা ডিম তাকে ১ দিন পর পর দিয়ে দেখুন তার আচরণ ঠিক আছে কিনা থাকলে প্রতিদিন খেতে দিন।

৫. চকলেট ,চিপস, ডীপ ফ্রাই খাবার এড়িয়ে চলুন। সয়াসস দেয়া খাবার , টেস্টিং সল্ট দেয়া খাবার, ইস্ট আছে এমন খাবার এসব শিশুর অস্থিরতা বাড়ানোর অন্যতম কারণ!

৬. শিশুর শরীরে সীসা , ক্রোমিয়াম, ল্যাকটেট এসিড, ম্যাগনেসিয়াম এর মাত্রা কতটুকু এগুলো একবার টেস্ট করাতে পারেন। এগুলোর সাথেও শিশুর অস্থিরতা ও আচরণের সম্পর্ক আছে। আইসিডিডিআরবি ( Icddrb) তে অথবা ঢাকা সিএমএইচে এও এই টেস্ট করাতে পারেন!!
৭. আটা দিয়ে তৈরি খাবার অল্প দিয়ে চালের তৈরি খাবার দিতে পারেন ‌। যেমন চালের রুটি, পিঠা , চালের পায়েস । আবার আরেক দিন রুটি দিয়ে দেখুন দুই দিনের পার্থক্য!!
৮. একজন বিশেষজ্ঞ ডায়াটেশিয়ান এর কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। শিশুটির জন্য তার উপযোগী খাদ্য তালিকা করে
দিবে ।
৯ . আশে পাশের মানুষের কথায় না জেনে কোন খাবার দেয়া বন্ধ করবেন না! আপনার শিশুর খাবার সম্পর্কিত সমস্যা গুলো একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান কে জানান। আপনি নিশ্চয়ই হার্টের সমস্যা হলে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবেন না!!

মনে রাখবেন আপনার শিশু টি হয়তো বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা তাকে অন্য সবার থেকে ভিন্নতা দিয়েছে! কিন্তু সেও আপনার আর আমার মতো একজন মানুষ ‌। তাই তাকেও অন্য শিশুর মতো করেই দেখুন যেভাবে আপনি আপনার অন্য সন্তান কে দেখেন !!!