banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

গার্ডিয়ান উইমেন আওয়ার

গার্ডিয়ান উইমেন আওয়ার


কি পড়বেন


আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬.০০টা থেকে ৭.০০টা গার্ডিয়ানের নারী পাঠকদের সম্মানে ‘উইমেন্স আওয়ার’ ঘোষণা করেছে।

এই ১ ঘন্টায় ৫০% ডিসকাউন্টে নারী পাঠকদের অর্ডার গ্রহণ করবে। আর হ্যাঁ, প্রত্যেক অর্ডারকারী গার্ডিয়ান ও খাস ফুডের সৌজন্যে বিশেষ উপহার পাচ্ছেন ইনশাআল্লাহ। গার্ডিয়ানের সকল বই এই অফারের আওতায় থাকবে।

শুধুমাত্র সন্ধ্যা ৬.০০টা থেকে ৭.০০টা এই ঘন্টা সময়ে একটা অনলাইন অর্ডার ফরম, কয়েকটি মুঠোফোন নম্বর এবং গার্ডিয়ানের ফেসবুক পেইজের ইনবক্সে অর্ডার গ্রহণ করা হবে। ঠিক ৬.০০টায় অনলাইন অর্ডার ফরম উন্মুক্ত করা হবে। অর্ডারে বইয়ের নাম, সংখ্যা, গ্রাহকের ঠিকানা বলতে হবে। আমরা পরবর্তীতে কল দিয়ে পেমেন্ট কনফার্ম করব। নির্দিষ্ট ঠিকানায় কুরিয়ারে এবং হোম ডেলিভারিতে বই পৌঁছে দেওয়া হবে। ঢাকার পাঠকবৃন্দ বইমেলা অথবা গার্ডিয়ান সেলস সেন্টারে এসেও বই নিতে পারবেন।

হোম ডেলিভারির জন্য অতিরিক্ত ৫০ টাকা এবং কুরিয়ারের জন্য ৪০ টাকা দিতে হবে।

বই লিস্টঃ

অর্ডার করার জন্য মুঠোফোনঃ
01710-197558,
01998-584958,
01863-961753,
01737-144915,
01726-859484,
01830-733323,
01867-346377,
01924-374962,
01724-538590,

গার্ডিয়ানের ফেসবুক পেইজঃ
গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স

আগামীর পৃথিবী বইয়ের হোক, জ্ঞানের হোক।

 

৯২ বছর বয়সেও সাইকেল চালিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন বৃদ্ধা

৯২ বছর বয়সেও সাইকেল চালিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন বৃদ্ধা


নারী সংবাদ


বাংলাদেশের নারীরা পিছিয়ে নেই। শ্রম, মেধা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তারা। এরই মধ্যে দুঃসাহসী ও চ্যালেঞ্জি কর্মকাণ্ডে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে তারা। এই ধারাবাহিকতা এখন শুধু শহরে নয় উপজেলা ও প্রত্যন্ত গ্রামেও যুক্ত আছেন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও মানব সেবায়। নানা রকম যুদ্ধ পাড়ি দিয়ে একমাত্র নিজের সাহসিকতায় অনেক নারীর সফলতার গল্প আমরা শুনেছি। তবে আজ জানাবো অন্যরকম এক গল্প।

গ্রামের সবাই যাকে চিনেন নানী নামে। তিনি হলেন জহিরন বেওয়া। বয়স ৯২ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু মনের উদ্যমতা, সাহসিকতা, কর্মের দক্ষতা-সখ্যতা কমেনি তার। স্থায়ীয় এমপিও কারো কাছে অপরিচিত হলেও গ্রামের সবার কাছে নানী জহিরন বেওয়া এক পরিচিত নাম।

৯২ বছর(তার দাবি) বয়সী জহিরন বেওয়া লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ী ইউপির সীমান্তবর্তী গ্রাম তালুক দুলালীর মৃত সায়েদ আলীর স্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধের চার বছর আগে স্বামীর মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়া এ সংগ্রামী নারী তিন ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে সংসার সংগ্রাম শুরু করেন। আট বছর আগে বড় ছেলে দানেশ আলী ৬৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করায় ভেঙ্গে পড়েন জহিরন বেওয়া। ছোট ছেলে তোরাব আলীর (৫৯) সংসারে এই সংগ্রামী নারী এখনো সচল, সজাগ আর কর্ম উদ্যামী হয়ে বেঁচে আছেন।

দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু সংসারে অভাব-অনাটন ছিল প্রতিক্ষণের চিন্তা। সমাজের কথা উপেক্ষা করে ১৯৬৮ সালে জহিরন পরিবার পরিবল্পনার অধিন স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষযে ছয়মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, চুক্তিভিত্তিক মাসিক মজুরিতে কালিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মে যোগ দেন। নিজ গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে বাইসাইকেল চালিয়ে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতেন। ২শ’ থেকে ৩শ’ অবশেষে ৫শ’ টাকা মাসিক মজুরিতে ১০ বছর চাকরি করে অবসরে যান জহিরন। কিন্তু বাড়িতে বসে থাকতে পারেননি।

জহিরন বেওয়া ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমি শুধু সাধারণ রোগ যেমন জ্বর, মাথাব্যথা, বমি শারীরিক দুর্বলতাসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। চিকিৎসার জন্য আমাকে কোনো অর্থ দিতে হয় না, তবে আমি বাজারমূল্যে তাদের কাছে ওষুধ বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টাকা আয় হয়।

তিনি আরো বলেন, আদিতমারী উপজেলার ৩০টি গ্রামে প্রায় দুই হাজারের বেশি পরিবারের সঙ্গে রয়েছে আমার যোগাযোগ। আমি প্রতিদিন বাইসাইকেল চালিয়ে কমপক্ষে সাতটি গ্রামের ৭০টি বাড়িতে যাই এবং তাদের খোঁজখবর নিই। এমনটি দাবি করে জহিরন বেওয়া জানান, গত ৫০ বছরে তিনি কোনো রোগে আক্রান্ত হননি।

আদিতমারীর গ্রামবাসীরা জানান, গত ৪৫ থেকে ৫০ বছর ধরে জহিরন বেওয়াকে দেখছি তিনি সাইকেল চালিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে দরিদ্র রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ কোনো অসুখ-বিসুখ হলে আমরা তার কাছেই চিকিৎসা নিই। আর তিনি কখনোই আমাদের কাছে টাকা নেননি। মাঝে মধ্যে ওষুধও বিনামূল্যে দেন।

তারা জানান, উনি এখন গ্রামের সবার জাতীয় নানী। সবাই তাকে নানী বলেই ডাকে, হয়তো ছেলে দেখলে তাকে নানী বলে ডাক দেয়, ছেলের বাবাও দেখলে নানী বলে ডাকে। অনেকে আবার আদর করে উনাকে নানী বুড়ি বলে ডাকেন। আমাদের এই অঞ্চলে সবাই নানী বুড়ি বললে জহিরন বেওয়াকে এক নামে চিনে, এমনকি আমাদের এমপিরে কেউ চিনুক না চিনুক কিন্তু এই নানী বুড়িকে আশেপাশের সব লোক এক নামে চিনে।

তারা আরো জানান, নানীকে ভালোবেসে অনেকে পরামর্শ দেয়- নানী তোমার বয়স হইছে, এখন সাইকেল চালানো বাদ দাও, বাড়ি বাড়ি যাওয়া বাদ দাও, রাস্তা ঘাটে কখন কি ঘটে যায় কে জানে। তবে শুনেছি, নানী এসব বাদ দিতে পারেন না, উনার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। সকাল হলেই উনি ক’টা ভাত মুখে তুলে সাইকেল নিয়ে বের হয়ে যান। তারপর, আশেপাশের গ্রামের সবার খোঁজ খবর নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেন। নানী যদি কখনো নিজে অসুস্থ থাকেন, উনার খোঁজ খবর নিতে উনার নিজের বাড়িতে লোকজনের ঢল নামে।

ভেলাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, জহিরন বেওয়া নিজেকে সবসময় হাসি-খুশি রাখেন আর গ্রামবাসীকেও আনন্দ দিয়ে হাসি-খুশি রাখেন। তাই জহিরন বেওয়া গ্রামের সবার কাছে জনপ্রিয়, হয়ে উঠেছেন সবার নানী, লালমনিরহাট তথা বাংলার নানী। আমরা তাকে বাংলা নানী বলে সম্বোধন করি আর এতে তিনি বেশ খুশি থাকেন।

জহিরন বেওয়ার নাতি আব্দুর রাজ্জাক ডেইলি বাংলাদেশকে জানান, তিনি বার বার চেষ্টা করে যাচ্ছেন দাদিকে সাইকেল চালিয়ে বাইরে যেতে না দিতে কিন্তু পারছেন না। দাদি কষ্ট করে তার ছেলে-মেয়েদের মানুষ করেছেন তেমনি আমাদের মানুষ করার ক্ষেত্রেও তার অবদান রয়েছে।

আমরা হয়তো বইয়ে পড়েছি বেগম রোকেয়া, মাদার তেরেসা, ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের কথা- কিন্তু এমন অন্তরালে লুকিয়ে থাকা নানীদের অবদান তাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। কেউ তার কাজের ব্যপ্তি নিয়ে দীপ্তি ছড়িয়েছেন, কেউবা নানীর মত ছোট্ট পরিসরের আলোকিত সেবক।

সুত্রঃ( রাসিব মোস্তফা ও জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না) ডেইলি বাংলাদেশ।

 

সোনার হরিণ (পাঁচ)

সোনার হরিণ (পাঁচ)


ফাতিমা মারিয়াম


আলাদা সংসার পেয়ে মালা মহা খুশি। সে নিজের মত করে সংসার গুছিয়ে নিচ্ছে।

চার/ পাঁচ বছর চলে গেল। এরই  মধ্যে সে আরেকটি সন্তানের মা হল। এবারের সন্তান মেয়ে। এই সন্তান হওয়ার সময়ও রীতা মালাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। কিন্তু মালা যেন একটু কৃতঘ্ন ধরনের মেয়ে।  সে শফিকের কানে রীতা সম্পর্কে বিভিন্ন কথা তুলে দেয়।  একবার দুইবারের পর শফিক রীতার কাছে এটা ওটা কৈফিয়ত চায়। রীতা তার মতামত ব্যক্ত করে। আপাতত ঝামেলা মিটে যায়! কিন্তু আবার শুরু হয়…………।

কয়েকবারের পর রীতা যখন বুঝতে পারলো এসবের পিছনে মালার হাত আছে, তখন সেও এসব নিয়ে তুমুল ঝামেলা করতে থাকল। শ্বশুরবাড়িতে নালিশ করেও কোন ফলাফল নেই।

এদিকে শফিক দুই বউকেই হুমকি ধমকি দেয়। শাসনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কিন্তু কেউই কথা শুনতে বা মানতে নারাজ। শফিক এক পর্যায়ে রীতাকে চাকুরী ছেড়ে দেয়ার জন্য জোর নির্দেশ দিলো।

কিন্তু এই ব্যাপারে রীতা কোনভাবেই রাজি হল না। তার সহকর্মী, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী সবাই-ই তাকে এব্যাপারে শক্ত থাকার পরামর্শ দিল। এদিকে শফিক চূড়ান্ত নোটিশ দিলো চাকুরী না ছাড়লে সে রীতাকে তালাক দেবে।

তখন শুভাকাঙ্ক্ষীরা পরামর্শ দিলো আপাতত কিছুদিন হাসপাতাল থেকে ছুটি নিতে। রীতা হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে স্বামীর কাছে মিথ্যা বলল যে সে চাকুরী ছেড়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রীতা শফিককে সব খুলে বলল। শফিকও বেশি উচ্চবাচ্য করলো না। কারণ তার ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। এদিকে খরচও অনেক বেড়ে গেছে। আগে রীতাকে সামান্য খরচ দিলেই চলত, এখন তাকে সম্পূর্ণ সংসার খরচ দিতে হয়।

আবার মালার জন্য বাসা ভাড়া করায় ওখানেও বেশ ভালো পরিমাণ টাকা খরচ হয়ে যায়। আগে সবার সাথে থাকায় ওখানেও খরচ অনেক কম হত। বাসা ভাড়া লাগত না। এখন দুই সংসার চালাতে গিয়ে সে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। তার উপর ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ফলে রীতা আবারও হাসপাতালে যাওয়া শুরু করলো।

এদিকে শফিকের ব্যবসা দিনদিন খারাপ হতে হতে এক পর্যায়ে সে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হল। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পারিবারিক সিদ্ধান্তে সে বিদেশ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। প্রবাসে যাওয়ার জন্য যা খরচ হচ্ছে তা কয়েক দিক  থেকে ম্যানেজ করা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া গিয়েছিলো তার কিছু অংশ এখনও আছে, খালু  কিছু দিয়েছে, রীতা ঋণ করে কিছু দিয়েছে, শফিক নিজেও ঋণ করে কিছু টাকার ব্যবস্থা করেছে।

শফিক চলে গেল।

পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্বাভাবিক। ঋণ শোধ হয়ে গেছে।  দুই বউকেই আলাদাভাবে খরচের টাকা পাঠায়। খালাকেও  কিছুকিছু দেয়। দিন মাস কেটে যায়……।

দুই বছর পর শফিক দেশে আসলো। ৩/৪ মাস থেকে আবার চলে গেল। আবারও দুইবছর পর দেশে আসলো। এভাবে সে প্রবাস জীবন কাটাতে লাগলো।

এদিকে রীতা আর মালার ঝামেলা কিন্তু বন্ধ হয়নি! শফিকের অনুপস্থিতি এবং উপস্থিতি উভয় অবস্থাতেই দুজনের মনোমালিন্য লেগেই আছে। সামান্য বিষয়েই দুজনের ঝগড়া হয়! আবার মিটমাট করে। দুজনে দুজনের বাসায় যায়। কিছুদিন পরে আবারও ঝামেলা…………………।

একদিন কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মালা রীতাকে হুমকি দিলো- তুমি দেখে নিও আমি একদিন তোমাকে শফিকের ঘর থেকে বের করে দেবই।  ওর এই হুমকি যে একদিন তারই দিকে ফিরে আসবে তখন তা কেউই বুঝতে পারেনি!!!

শফিকের ভয়েই হোক বা অন্য যে কোন কারণেই হোক একটি বিষয়ে সবসময় দুজনের মিল ছিল তা হল উভয়েই একে  অন্যজনের সন্তানকে  বেশ আদর যত্ন করত। অবশ্য এ ব্যাপারে রীতাই অগ্রগামী ছিল।

শফিক এবার চিন্তা করে দেখল  প্রবাসে তার জীবন অনেক  বছর কেটে গেছে। বয়সও বেড়ে যাচ্ছে।   তাই এখন    ছেলেদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করাই  তার জন্য ভালো।  তার দুই ছেলেই  ইতিমধ্যে এইচএসসি পাশ করেছে। সে তার দুই ছেলেকেই ওখানে নিয়ে গেল। তাদেরকে সেখানে রেখে বছর খানেক পর শফিক একেবারেই দেশে চলে আসলো।

 চলবে..

 

বোরকা পরেই সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হচ্ছেন সাবিহা ও লতিফা

বোরকা পরেই সাংবাদিক হিসেবে বিখ্যাত হচ্ছেন সাবিহা ও লতিফা


ইন্টারন্যাশনাল উইমেন্স


ছোটো বেলা থেকে ইচ্ছে ছিল সাংবাদিক হবেন। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বাসিন্দা সাবিহা শেখ সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। সব বাধা অতিক্রম করে সফল সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে যখন পাকিস্তানের ডেরা ইসমাইল খানের গোমাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু ক্লাস করতে গিয়ে আচমকাই কতগুলো প্রশ্ন তার সামনে উদয় হয়ে ছিল।

অধ্যাপকরা বলে ছিলেন, ‘বোরকা পরা মেয়েরা ভালো সাংবাদিক হতে পারে না, তুমি রোরকা পরে কিভাবে সাংবাদিকতা করবে? পশ্চিমারা রোরকাকে ঠিকভাবে মেনে নিতে পারে না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে তোমাকে মানুষের কথা শুনতে হবে।’

এমন প্রশ্নের মুখে সাবিহা কোনো দিন পড়েননি। অবাক হলেও সেই সময় সাহসিকতার সঙ্গে উত্তর দিয়ে ছিলেন তিনি। বলেছিলেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, শুধু একজন ভালো সাংবাদিকই হবো না, বোরকা পরা মেয়েদের রোল মডেল হবো। বোরকা পরা মেয়ে পেশাদার সাংবাদিক হওয়ার জন্য প্ল্যাটফর্ম তৈরি করব।

যেমন কথা তেমন কাজ। আজ সত্যি সাবিহা বোরকা পরা মেয়েদের দিশারি হয়ে উঠেছেন। তিনি বন্ধু সামিরা লতিফাকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন বোরকা জার্নালিস্ট সংগঠন। ২০১৮ সালে তারা এই সংগঠন তৈরি করেন।

পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশটি আফগানিস্তান সীমান্ত ঘেঁষা। সেখানে বেশিরভাগ মুসলিম নারীদের মধ্যে বোরকা নিকাব পরার চল রয়েছে।
এখানে মেয়ে শিক্ষা নিয়ে কাজ করে চলেছেন সাবিহা ও লতিফা। তারা সেখান মেয়েদের কথা তুলে ধরছেন। জানা গেছে, ওই এলাকায় মেয়েদের তেমন কোনো স্কুল কলেজ নেই। পরিবার থেকে দূরে গিয়ে পড়াশোনা চালানো অনেক সময় মেয়ের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে তাকে আশা-আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরাই সাবিহা ও লতিফার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। এই কাজে করতে গিয়ে এখন যথেষ্ট পরিচিত হয়ে উঠেছেন সাবিহা।

সাবিহা জানিয়েছেন, আমরা বোরকা পরিধান করে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমাদের মতো মেয়েদের জন্য সাংবাদিকতায় জায়গা তৈরি করতে চাই। যেখানে মুসলিম মহিলারা কোনো সমস্যা ছাড়া কাজ করতে পারবেন।বোরকা বা নিকাব কোনো দিন কোনো পেশায় আসার জন্য বাধা হতে পারে না।

গোমাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান ওয়াসিম আকবর শেখ বিশ্বাস করেন, সরকারের সহযোগিতা না পেলে তারা এই জাতীয় কাজ করে বেশি দূর এগোন যায় না। তাই সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে।

লতিফা বলেন, আমাদের বোরকা জার্নালিস্ট নামের যে প্রকল্পটি মুসলিম মেয়ের জন্য চালু করেছি, তা প্রসারিত করতে আরো বেশি মহিলারা এগিয়ে আসার প্রয়োজন। পাশাপাশি সংগঠন চালাতে অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। সরকার সাহায্য করলে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব।

সাবিহা বলেন, এ কাজে নামি আমার মা আমাকে সমর্থন করেন। কিন্তু আমাকে এখন মানুষ সম্মান করেন। আমি চাই জার্নালিজমেও ইসলামের আদর্শ মেনে চলুক মুসলিম নারীরা। মুল : পূবের কলম সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

“দই বড়া” বানায় সহজে

“দই বড়া” বানায় সহজে


ঘরকন্যা


উপকরণ লাগবে
# মাষকলাইয়ের ডাল ১/২ কাপ,
# আদাবাটা ১/২ চা-চামচ,
# লবণ ১/২ চা-চামচ,
# বিট লবন ১/২ চা-চামচ,
# তেতুলের কাঁথ আধা কাপ,
# চিনি বা গুঁড় ১,১/২ টেবিল-চামচ,
# দই ২,৩ কাপ (ফেটানো),
# চাট মসলা ১/২ চা-চামচ।
#শুকনা লালমরিচ ৪,৫টি (টেলে নিন),
#জিরা ৩ চা-চামচ (টেলে নিন)।
আরো লাগবে, পুদিনা পাতা, কাঁচামরিচের কুচি, পেঁয়াজ কুচি, ভাজা নিমকি ভেঙে নিন।

প্রণালি
প্রথম ধাপে,
মাষকলাইয়ের ডাল আগের রাতে ভিজিয়ে রাখুন। অথবা পাঁচছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে।এখন আধা কাপের চেয়েও কম পরিমাণ পানি দিয়ে মিহি করে বেটে কিংবা ব্লেন্ড করে নিন। যেন থকথকে খামির হয়।

দ্বিতীয় ধাপে,
একটি বাটিতে পানি নিয়ে, ছোট একটি ডালের বড়ি ফেলে দেখে নিন, খামির ঠিক হয়েছে কিনা। ভেসে উঠলে মনে করবেন, খামির একদম ঠিক হয়েছে।

তৃতীয় ধাপে,
এবার ডালের সঙ্গে আদাবাটা ও অল্প লবণ দিয়ে মিশিয়ে রাখুন ১০ মিনিট।

চতুর্থ ধাপে,
চুলায় তেল গরম করতে দিন। এই ফাঁকে বড় বাটিতে তিনকাপ খাওয়ার পানিতে অল্প লবণ ও তেতুলের কাঁথ গুলে রাখুন।

পন্ঞম ধাপে
তেল গরম হলে মাঝারি রাখুন চুলার আঁচ। এখন ডালের খামির থেকে ছোট এক চামচ নিয়ে বড়ার মতো করে তেলে দিন। বাদামি করে ভেজে তুলে সঙ্গে সঙ্গে তৈরি করে রাখা তেঁতুলের পানিতে ছেড়ে দিন। এতে বড়া নরম নরম হবে।

ষষ্ঠ ধাপে
এভাবে সবগুলো বড়া তৈরি করে নিন। বড়াগুলো পানি থেকে উঠিয়ে চেপে পানি বের করে পরিবেশন পাত্রে সাজিয়ে রাখুন।

সপ্তম ধাপে
অন্য একটি বাটিতে দই নিয়ে সেটাতে টালা মসলা থেকে এক চামচ করে মরিচগুঁড়া, জিরাগুঁড়া, তেঁতুলের কাঁথ, বিট লবণ, চিনি, অল্প চাটমসলা দিয়ে দই ফেটে নিন।

পরিবেশন

ডালের বড়ার উপর ফেটানো দই ঢেলে দিন। তারপর অল্প টালা গুঁড়ামসলা আর চাটমসলা ছড়িয়ে দিন। পুদিনাপাতার কুচি, কাঁচামরিচের কুচি, পেঁয়াজকুচি এবং নিমকির উপর দিয়ে ভেঙে দই বড়া পরিবেশন করুন।

সুত্রঃ বাংলাদেশি রেসিপি।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা – ৬

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৬


আফরোজা হাসান


রান্নার সব আয়োজন ঠিক আছে কিনা শেষ বারের মত দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললেন সাবিহা। মনের মাধুরী মিশিয়ে আজ সবকিছু রান্না করেছেন তিনি। যা রান্না করেছেন তার বেশির ভাগ জিনিসই হয়তো খাবে না কিন্তু পছন্দের প্রতিটা মেন্যু মেয়ে জামাইদের সামনে রাখতে চান তিনি। হোক না ঘরের ছেলে তাতে কি? মেয়ের জামাই মানেই ভীষণ স্পেশাল কিছু! হঠাৎ বুকের ভেতরটা কেমন যেন শূন্যতায় ছেয়ে গেলো! সাথে ছলছল করে উঠলো সাবিহার চোখ! মনেহয় এই তো সেদিন মেয়েরা এলো তাদের জীবনে অথচ দেখতে দেখতে আঠারোটা বছর পেড়িয়ে গেছে। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে তারও প্রায় তিন মাস হয়ে গিয়েছে। এইচ.এস.সি’র ফাইনাল এগজামের শেষ হবার পর শ্বশুরবাড়ি যাবার সময়ও এসে যাবে।

দুই মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে হজ্ব করতে যেতে নারাজ ছিলেন ফাইয়াজ সাহেব। বিয়ে যেহেতু ঠিক করাই ছিলো তাই বেশ তড়িঘড়ি করেই আকদ অনুষ্ঠানটি সেরে ফেলেছিলেন সবাই মিলে। এরফলে সংসার শুরুর আগে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেয়ার পথটাও সহজ হয়ে গিয়েছে ছেলেমেয়েদের জন্য। মেয়ে দুটা এখনো ছোট্ট বাচ্চাদের মতোই পুরো বাড়ি মাথায় তুলে রাখে হাসি-মজা আর দুষ্টুমি দিয়ে। কেমন করে থাকবেন মেয়ে দুটিকে ছাড়া তিনি? না চাইতেও ঝরঝর অশ্রু নেমে এলো সাবিহার চোখ বেয়ে। রান্নাঘরের দরজায় নক হলে চোখ মুছে ঘুরে তাকিয়ে ফাইয়াজ সাহেবকে দেখে সাবিহা বললেন, তোমাকে চা দেয়নি শাবাব?

হ্যা দিয়েছে। আমি তোমার খবর নিতে এলাম। সেই সকালে ঢুকেছো রান্নাঘরে। শরীর খারাপ করবে তো শেষে।

মাহাম, শাবাব ওরা কোথায়?

শাবাব আরিফীর সাথে বাগানে বসে গল্প করছে দেখে এসেছি। মাহামের মাথাব্যথা কমেনি এখনো শুয়ে আছে। তোমার মন খারাপ মনেহচ্ছে কেন? চুপ দেখে স্ত্রীর কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন, কি হয়েছে সাবিহা? মেয়েদের কথা ভেবে মন খারাপ?

কাঁধ থেকে স্বামীর হাত সরিয়ে দিতে সাবিহা বললেন, আমরা এখানে আসছি এই খবর দিতে কেন গিয়েছো তুমি তোমার আদরের মেয়ে জামাইদেরকে? শান্তিতে একটু সময় কাটাবো মেয়েদের সাথে তা না দুইজনই এসে হাজির।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, আমাদের তো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত এজন্য। এমন জামাই’ই তো চেয়েছিলাম আমরা আমাদের দুই রাজকন্যার জন্য তাই না? যারা ওদেরকে আমাদের মত করে ভালোবাসবে, ওদের খেয়াল রাখবে। দেখো শত ব্যস্ততার মধ্যেও আয়ান আর আরিফী সপ্তাহ খানেক সময় বের করে নিউজিল্যান্ড থেকে এখানে চলে এসেছে।

হয়েছে তোমাকে আর জামাইদের সাফাই গাইতে হবে না। আয়ান ফোন করেছিল? কখন এসে পৌঁছাবে কিছু জানিয়েছে?

হ্যা, ফোন করেছিল কিছুক্ষণ আগে আয়ান। বলেছে রাতের আগে আসতে পারবে না।

সাথে সাথে মুখটা আঁধারে ঢেকে গেলো সাবিহার। খাসীর গোশতের কোর্মা, আনারস ইলিশ, তেলাপিয়া মাছ ভাজা, চিংড়ির মালাইকারি, ইলিশ মাছের ডিম দিয়ে আলু ভাঁজি, পোনা মাছের চচ্চড়ি এত কিছু তাহলে কার জন্য রান্না করলেন তিনি? আরিফী সবকিছুই অনেক মজা করে খায়, তাই যত চিন্তা আয়ানকে নিয়েই ছিল। দৈ পছন্দ করে সেজন্য সেটাও বসিয়েছেন তিনি আয়ানের জন্য।

স্ত্রীর চেহারার দিকে তাকিয়ে ঝড়ের আভাস পেয়ে আর কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি সরে পড়লেন ফাইয়াজ সাহেব। এত মজার মজার খাবার তৈরি হয়েছে সেসব ফেলে ঝাড়ি খাওয়ার কোন মানেই হয় না। তারচেয়ে নাতিকে নিয়ে বাগানে কিছুক্ষণ পায়চারী করে ক্ষুধাটা আরেকটু বাড়িয়ে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে সেই উদ্দেশ্য রওনা করলেন তিনি।

শাবাবকে রান্নাঘরের দিকে যেতে দেখে ফাইয়াজ সাহেব একবার ভাবলেন ডেকে সাবধান করে দেবেন। পর মুহুর্তেই মনে পড়লো যে কোন একজনের সাথে কিছুক্ষণ হৈচৈ করলেই সাবিহার রাগ পড়ে যাবে। দুষ্টুমি করে মেয়ে মার হাতে বকা খাবে এরমধ্যে বাবার ইন্টারফেয়ার না করাই সমীচিন। ভেতর থেকে কে যেন বলল, জেনে শুনে মেয়েকে বিপদের মুখে পাঠাচ্ছো শুধুমাত্র নিজে নিরাপদ থাকার জন্য? ধিক্কার তোমাকে! সবসময় ভেতরের আওয়াজকে পাত্তা দেয়া ঠিক না! জাহিদ সাহেবও দিলেন না! নাতিকে নিয়ে বাগানে রওনা করলেন।

রান্নাঘরে ঢুকেই উমমম…ইয়াম্মি…সারা বাড়ি তো মৌ মৌ করছে ঘ্রাণে! বলতে বলতে খাবারের প্লেট টেনে নিলো শাবাব। সাবিহা বললেন, কি করছিস তুই?

সবকিছু ঠিকআছে কিনা একটু একটু করে চেখে দেখি মামণি।

সামনে থেকে যা তো শাবাব। তোকে দেখলে আমার ভালো মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায় আর এখন মেজাজ এমনিতেই খুব খারাপ।

মামণি চল আজ একটা এক্সপেরিমেন্ট হয়ে যাক!

কিসের এক্সপেরিমেন্ট?

আমার কারণে তোমার ভালো মেজাজ খারাপ হয় এটা তো প্রাচীন কথা। দেখা যাক খারাপ মেজাজ ভালো হয় কিনা!
সবসময় এত ফান করিস নাতো শাবাব। যথেষ্ট বড় হয়েছিস তুই, বিয়ে হয়েছে এখন আর এসব মানায় না, বুঝেছিস!
কেন মানায় না মামণি? প্রশ্ন শুনে সাবিহা তাকিয়ে দেখলো মাহাম এসে দাঁড়িয়েছে দরজায়। মা আর বোনের কাছে এসে দাঁড়িয়ে মাহাম বলল, বিয়ে হয়ে যাওয়া মানে কি জীবনের সব আনন্দ-উচ্ছ্বাস- হাসি-দুষ্টুমির অবসান মামণি?

ধীর গলায় সাবিহা বললেন, এই কথা আমি কখন বললাম?

চলবে…

 

মনের কথা

মনের কথা


ইসরাত জাহান রুবাইয়া


সাড়ে ৪ বছরের দীপ্তর শখ হয়েছে সুপারম্যান হবে। সুপারম্যান তার হিরো। কী সুন্দর করে সে উড়ে চলতে পারে, কার্টুনে দেখেছে দীপ্ত। সেও ওরকম করে উড়বে। ড্রয়ার থেকে মায়ের একটা বড় ওড়না বের করলো। ওড়নাটা দুইভাঁজ করে একপ্রান্ত পিঠের উপর দিয়ে গলার কাছে এনে বাঁধলো। পা টিপে টিপে মায়ের রুমে এসে দেখলো মা ঘুমাচ্ছে। এইতো সুযোগ একা একা ছাদে যাওয়ার। ছাদে গিয়েই সুপারম্যানের মত উড়াল দেবে সে।
শম্পার চোখদুটো তখন লেগে এসেছে কেবল। এমন সময় দরজা খোলার অাওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে। বাসায়তো মা ছেলে ছাড়া এমুহূর্তে কেউ নেই। দরজাটা খুললো কে তবে! দীপ্ত বাইরে যাচ্ছেনাতো একা একা! দৌড়ে এসে দেখে দীপ্ত সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছে। সেও ছেলের পিছু নিল। শম্পা পৌঁছতে পৌঁছতে দীপ্ত ছাদের রেলিং এ উঠে দাঁড়িয়েছে। দুইহাত দুইপাশে ছড়িয়ে যেইনা একপা বাঁড়িয়েছে ওমনি দৌড়ে এসে ছেলেকে শক্ত করে ধরে ফেললো শম্পা। দীপ্তর সে কী কান্না! অনেক অনুরোধ করলো অন্তত একটা বার ওকে উড়তে দিতে। শম্পা কোনোভাবেই রাজী না। পাঁজাকোলা করে তাকে তুলে নিয়ে ঘরে ছুটলো সে। হাত পা ছুঁড়ে কান্না করতে করতে দীপ্ত বললো তুমি অামার পছন্দের কিচ্ছু করতে দাওনা! সুপারম্যান হতে দাওনা! তুমি অনেক অনেক পঁচা মা, তুমি ভালোনা!
.
.
দীপ্তকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেয়নি বলে শম্পা কি অাসলেই পঁচা মা হয়ে গেছে? একবাক্যে সবাই বলবে, কখনোই না! দীপ্ত জানেনা ১১তলা থেকে লাফ দিলে কী ঘটবে! কিন্তু শম্পা জানে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে তার কলিজার টুকরা বাচ্চাটা। দীপ্ত মনে করে সে লাফ দিলে সুপারম্যানের মত উড়ে যাবে। কিন্তু শম্পা জানে বাস্তবে কী ঘটবে। বাচ্চা যতই অনুনয় বিনয় করুক, যতই জেদ করুক, যতই তাকে পঁচা মা বলুক; সে দীপ্তকে এই শখ পূর্ণ করতে দেবেনা। কেন ই বা জেনে শুনে সন্তানকে অাগুনে ঝাঁপ দিতে দেবে সে?
.
অাসুন, এবার অন্য কিছু ভাবি।
অনেক সময় অামরা অাল্লাহর কাছে অনেক কিছু চাই। কোনটা তিনি দেন, কোনটা দেননা। হ্যাঁ কখনো এমন কিছু তিনি দেননা যেটা অামরা অনেক বেশি পছন্দ করি। তখন হতাশ হয়ে অামাদের অনেকই অাল্লাহর উপর অভিমান করে বসেন। এত চাইলাম, দিলেননা অাল্লাহ! কেন, কী হত দিলে? তাঁর ভান্ডারে তো কিছুর অভাব নেই! তাঁর পক্ষেতো অসম্ভব বলে কিছু নেই! তবুও কেন দিলেননা! কেন???
শত অভিযোগ অার অাক্ষেপে অভিমানে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নেই।
.
দৃষ্টি সীমাবদ্ধ অামাদের। ভবিষ্যত অামাদের অজানা। অামরা জানিনা জীবনপথে অামাদের সামনে কী অাছে। তিনি জানেন। সঅঅব জানেন। জেনেশুনে তিনি অামাদের সেসব অাব্দারগুলো পূর্ণ করেননা, যেগুলো পূর্ণ হলে অামরাই ক্ষতিগ্রস্ত হব। দীপ্তর মত অামাদের অভিমান হয়। অাক্ষেপ করি, অভিযোগ করি।
মা জন্ম দিয়েছেন বলে এত ভালোবাসেন, এত মমতাময়ী, সন্তানের কল্যাণলামী। অার যিনি সৃষ্টি করেছেন এত যত্নে তিনি কতটা কল্যাণকামী হতে পারেন? তিনি কতটা ভালোবাসেন বান্দাহকে? বান্দাহর ভালো-মন্দ, কল্যান-অকল্যান তাঁর মত ভালো অার কে বোঝে! কী করে তিনি সেই অাব্দারগুলো পূর্ণ করবেন যেগুলো বান্দাহর জন্য অকল্যানকর! যেগুলো পূর্ণ করলে বান্দা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে! তাই তিনি সেই অাবদারগুলো পূর্ণ করেননা, কিন্তু খালি হাতেও ফিরিয়ে দেননা। কখনো সেসব বদলে দেন উত্তম কল্যানকর অন্যকিছুর দ্বারা। কখনো সেইসবের বদলে জমা করে রাখেন কিছু অভাবনীয় পুরষ্কার! এক অবশ্যম্ভাবী দিনে বান্দাহ তা প্রত্যক্ষ করে অাপ্লুত হবে। সিজদায় পড়ে যাবে। নতমস্তকে অান্তরিক স্বীকারোক্তি দেবে, অামার রব! নিঃসন্দেহে অাপনি মহীয়ান!
.
“তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে তা অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। [সুরা বাকারা: ২১৬]

 

শীতের বিকেলে নাস্তায় ‘চিকেন পাফ’

শীতের বিকেলে নাস্তায় ‘চিকেন পাফ’


ঘরকন্যা


উপকরণ
১. ৩০০ মুরগির মাংসের কিমা ৩০০ গ্রাম,
২. ২৫০ গ্রাম ময়দা ২৫০ গ্রাম,
৩. ১ চা চামচ চিনি ১ চা চামচ,
৪. ১ চা চামচ বেকিং পাউডার ১ চা চামচ,
৫. ২ টেবিল চামচ পিয়াজ কুঁচি ২ টেবিল চামচ,
৬. ১ টেবিল চামচ কাচা মরিচ কুঁচি ১ টেবিল চামচ,
৭. ১ টেবিল চামচ আদা রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ,
৮. ১ টেবিল চামচ ধনে পাতা কুঁচি ১ টেবিল চামচ,
৯. লবণ স্বাদমতো,
১০. তেল প্রয়োজন মতো।

প্রণালি
১. প্রথমে একটি বোলে ময়দা, বেকিং পাউডার, লবণ এবং আধাকাপ তেল নিয়ে ভাল করে মেখে নিন । এরপর এতে পানি দিয়ে আবার মেখে ডো করে আলাদা করে রেখে দিন ১ ঘণ্টা।

২. এবার একটি প্যানে পরিমাণ মতো তেল দিয়ে আদা ও রসুন বাটা দিয়ে দিন। এরপর পেঁয়াজ, মরিচ কুঁচি দিয়ে খানিকক্ষণ নেড়ে কিমা দিয়ে দিন। লক্ষ্য রাখবেন যেন কিমাতে ঝোল না থাকে। রান্না হলে ধনিয়া পাতা ছিটিয়ে দিয়ে ঢেকে নামিয়ে রাখুন।

৩. এরপর ময়দার ডো থেকে লুচির মত করে ছোট ছোট রুটি বানিয়ে নিন। এরপর একটি লুচির অর্ধেকের উপরে কিমার পুর দিয়ে বাকি অংশ দিয়ে ঢেকে গোল অংশ ভাল করে মুড়ে দিন যেন ভাজার সময় খুলে না যায়। অনেকটা পুলি পিঠার মতো করে বানিয়ে নিন।

৪. এরপর প্যানে ডুবো তেলে ভাজার মতো তেল ঢেলে গরম করুন। হালকা আচে বাদামি রঙ করে ভেজে নিন ‘চিকেন পাফ’।

পরিবেশন
গরম গরম ‘চিকেন পাফ’ রান্না হয়ে গেলে সস আর আলুর ভাজার সাথে পরিবেশন করুন।

রেসিপি : বাংলাদেশি রেসিপি

 

সোনার হরিণ (চার)

সোনার হরিণ (চার)


ফাতিমা মারিয়াম


মালা অতি দরিদ্র ঘরের মেয়ে। অসম্ভব রূপবতী। ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। তার দরিদ্র পিতা সব জেনেশুনেই মেয়েকে এখানে বিয়ে দিলেন। ঢাকায় জামাইয়ের পরিবারের নিজস্ব বাড়ি আছে। শফিক যদিও খালার পরিবারেই মানুষ তবুও পরিবারের সবাই তাকে এই পরিবারের একজন হিসেবেই গণ্য করে। তাই বেকার হওয়া সত্ত্বেও মালার বাবা বিনা বাক্যব্যয়ে মেয়েকে শফিকের কাছে বিয়ে দেন। পরিবারের অবস্থা ভালো। এখানে মেয়ে খেয়ে পরে সুখে থাকতে পারবে।

আগের বউকে এরা কখনোই মেনে নেবে না। তাই মালাই হবে পরিবারে শফিকের স্বীকৃত বউ। আর তাছাড়াও আগের বউ যেহেতু নিজেই চাকুরী করে শফিক পরবর্তীতে যা-ই রোজগার করুক না কেন ওদিকে বেশি কিছু দিতে হবেনা। এসব কিছু ভেবেই তিনি এই ঘরে মালাকে বিয়ে দিলেন। মালাও পরিবারের সিদ্ধান্ত চুপচাপ মেনে নিলো। আর মেনে না নিয়েই বা করবে কী? সীমাহীন দারিদ্র্য তাদের সবাইকে এই পথে আসতে বাধ্য করেছে।

বিয়ের প্রায় এক/দেড় মাস পরে মালা শ্বশুরবাড়িতে আসলো। এদিকে শর্ত অনুযায়ী পরিবারের পক্ষ থেকে শফিককে ব্যবসা করার জন্য টাকা দেয়া হল। ঐ টাকা দিয়ে সে ছোট একটি রেস্টুরেন্ট দিলো। ব্যবসা মোটামুটি চলছে।

শফিকের দ্বিতীয় বিয়ের ঘটনাটা রীতা প্রথমে টের পায়নি। মালা ঢাকা আসার আগেই তার কানে কিছু কিছু কথা এসেছিল। কিন্তু সে বিশ্বাস করেনি। শফিকের কাছে জানতে চাইলে সে সবকিছু অস্বীকার করলো। রীতাও তাই বিশ্বাস করে।

কিন্তু মালা ঢাকায় আসার পর এক কান দুই কান হতে হতে রীতার কানে আবার কথাটা আসে। এবার অনেক প্রত্যক্ষদর্শীও সাক্ষী দিলো। প্রতিবেশীদের অনেকেই মালাকে দেখে এসে রীতার কাছে বলে দেয়। রীতা নিজেও কিছু প্রমাণ সংগ্রহ করে।

অবশেষে সে নিশ্চিত হয়ে শফিককে জিজ্ঞাসা করলো। এবার সে সব কিছু স্বীকার করলো। রীতা একেবারেই ভেঙ্গে পড়ে। খুব কান্নাকাটি করতে থাকে। মা, ভাবী এবং প্রতিবেশীরা তাকে এসময় বুঝায়, ধৈর্য ধারণ করতে বলে। তার শারীরিক অবস্থা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে সে চুপ করে যায়।

কিছুদিন পরে রীতা শফিককে সাথে নিয়ে ঐ বাসায় গিয়েছে মালার সাথে দেখা করতে। মালার সাথে কথাবার্তা বলেছে। সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেছে। কারণ তার ধারণা ছিল সে যদি মালাকে সহজভাবে গ্রহণ করে নেয়, তবে শফিকসহ অন্যদের মন জয় করা তার জন্য সহজ হবে। তার বোকামি ও ভুলের কারণে আজ ছেলেটি পিতৃ-পরিচয়-হীন! তাই পরবর্তী সন্তান যেন এ সমস্যায় না পড়ে এজন্য সে আজ মনে অনেক কষ্ট চেপে রেখে এই ধরণের সামাজিকতা করে যাচ্ছে!

শফিক প্রায়ই আসে। তার খোঁজ খবর নেয়। এটা ওটা কিনে দেয়।

দিন যায়……।

কিছুদিন পরে রীতার একটি ছেলে হল। ছেলে হওয়ায় শফিক বেশ খুশী। রীতাও খুশী… রীতার শ্বশুর শাশুড়ি সহ সবাই নিয়মিত রীতা ও তার পুত্রকে দেখতে আসে। এমনকি স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সবার মন রক্ষা করতে মালাও কয়েকবার এসেছে।

দেখতে দেখতে ছেলের বয়স কয়েকমাস হয়ে গেছে। এবার রীতা আলাদা বাসা নিলো। সংসার এখন বড় হয়েছে। বাবার বাসায় আর কত থাকা যায়! যদিও বাসার কেউ তাকে কখনই এ ব্যাপারে কিছুই বলেনি, তবুও সে নিজ সিদ্ধান্তেই বাসা নিলো।

বাবার বাসার কাছাকাছি বাসা ভাড়া করেছে। যেহেতু সে সারাদিন বাইরে থাকে তাই সংসার ও ছেলের দেখাশোনা করার জন্য দুঃসম্পর্কের এক ফুফু শাশুড়িকে রীতা নিয়ে এলো। রান্নাবান্না, ছেলেদের দেখাশোনা, সংসারের আর সব কাজ ফুফু করে।

সংসারে খরচ এখন অনেক বেড়েছে। শফিক সহযোগিতা করে, রীতার বেতনও এখন আগের চাইতে বেশি। সংসার বেশ ভালোই চলছে।

প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনরা বিপদে আপদে তাকে ডাকে। রাতবিরেতে কারো কোন সমস্যা হলে সবার আগে রীতাকে খবর দেয়। সে ছুটে যায়! গর্ভবতী মায়েদেরকে গর্ভকালীন পুরো সময় সে দেখাশোনা করে। কখন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, কোন ডাক্তার ভালো, কোথায় কি সুবিধা আছে এসব ব্যাপারে সে পরামর্শ দেয়। এর বিনিময়ে সবাই তাকে পারিশ্রমিক দেয়।
দিন যাচ্ছে……।
শ্বশুর বাড়ীর যে কোন কারও অসুখবিসুখেই সে ছুটে যায়। ফলে দিনদিন ওখানেও তার কদর বাড়ছে। রীতার ছেলের বয়স যখন এক/দেড় বছর তখন সে জানতে পারল মালার বাচ্চা হবে। পুরো সময়টা সে মালাকে দেখেশুনে রাখল। যখনই সময় পায় ঐ বাসায় গিয়ে মালাকে দেখে আসে। বাচ্চা হওয়ার সময় মালাকে সে তার হাসপাতালে নিয়ে গেল। মালার একটি ছেলে হল।

মালার ছেলের বয়স যখন কয়েকমাস তখন অশান্তি শুরু করলো মালা।

সে দেখছে রীতা তার সংসার বেশ গুছিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সে এখনও খালা শাশুড়ির পরিবারের অধীনে। উনাদের সাথে মাঝে মধ্যে একটু আধটু মন কষাকষি হয়। দুই চারটি কটু কথাও হয়। কেউ কাউকে ছাড় দেয়না। মাঝে মাঝে খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঘরের সবার সাথে এমন কি স্বামীর সাথেও তুলকালাম কাণ্ড করে।

দিনদিন ঝগড়া ঝাটি বেড়েই চলেছে। এখন তার একটাই দাবী-তাকে আলাদা বাসা ভাড়া করে আলাদা সংসারে রাখতে হবে। পরিস্থিতি যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিলো তখন শফিক বাধ্য হল মালাকে আলাদা সংসার করে দিতে।

চলবে..

 

মা হওয়ার ছয় মাস পর নিয়মিত ব্যায়াম করে ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব

মা হওয়ার ছয় মাস পর নিয়মিত ব্যায়াম করে ফিটনেস ধরে রাখা সম্ভব


স্বাস্থ্যকথা


চার মাস আগেই প্রথম মা হয়েছেন মন্টি দে। একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করেন মন্টি। আর মাত্র এক মাস পরেই মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে যোগ দিতে হবে চাকরিতে। কিন্তু এই কদিনেই বেশ মুটিয়ে গেছে মন্টি। আয়নাতে নিজের চেহারা যেন নিজেই চিনতে পারছেনা। মূলত মা হওয়ার পর থেকে বেশ শারীরিক পরিবর্তন হয়েছে তার। বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন মন্টি। কারন চাকরীতে তাকে বেশ দৌঁড়াতে হয়। আর শরীর ফিট না থাকলে কি করে হয়। অনেক ভেবেও কী করা যায় বুঝতে পারছেন না মন্টি। শেষ পর্যন্ত শরণাপন্ন হলেন তারই স্কুল বান্ধবী ডা. শর্মিলার। সব শুনে ডাক্তার পরামর্শ দিলেন আবার ব্যায়াম শুরু করার।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. নুরানী নিরু বলেন, মা হওয়ার পর আমরা ধরেই নিই যে আমাদের শারীরিক ফিটনেস শেষ। আমরা আর আগের মত সুন্দর হতে পারব না। পাব না চেহারার সেই সৌন্দর্য্য। কিন্তু আগের সেই শারীরিক সৌন্দর্য্য ফিরে পাওয়া খুব কষ্টের কিছু না। এজন্য দরকার দৃঢ় মনোবল আর আত্মবিশ্বাস।
তিনি বলেন, মানসিকভাবে সুস্থ থাকলে যেকোন মা’ই শারীরিকভাব্ওে সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। মা হওয়ার পরবর্তী শারীরিক নাজুক অবস্থা থেকে পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে। মূলত বড় হওয়া জরায়ু ও দুর্বল হয়ে পড়া পেলভিক মাংসপেশিগুলো আগের অবস্থানে ফিরে আসে ছয় সপ্তাহের মধ্যেই। শুরু থেকেই পেলভিক ফ্লোর এক্সারসাইজ করলে প্রস্রাব ধরে রাখার সমস্যা বা তলপেটের পেশির দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা যায়। তবে পুরোদমে ব্যায়াম শুরু করা উচিত ছয় মাস পর থেকে। আর বুকের দুধ খাওয়ানোর কারণে প্রথম ছয় মাস খুব বেশি ডায়েট না করাই ভালো।
প্রায় একই ধরনের কথা বলেন পিটিআরসি রিহ্যাব অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি সেন্টারের পরামর্শক শায়লা। তাঁর সেন্টারে আজকাল অনেক মা হারিয়ে ফেলা ফিটনেস ও ফিগার ফিরে পেতে নানান সেশনে আসছেন। এ ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টেছে। তবে মা হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হাঁটাচলা শুরু করলেও ছয় মাস পর্যন্ত কোনো ভারী ব্যায়াম না করাই উচিত, বিশেষ করে যদি সিজারিয়ান হয়ে থাকে। ছয় মাস পর থেকে বিশেষজ্ঞের অধীন নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে আগের ওজন ও ফিগার পাওয়া সম্ভব। কেবল ওজন কমানোটাই মুখ্য নয়, মা হওয়ার পর পেট ও পেলভিসের পেশিগুলো শিথিল বা লুজ হয়ে পড়ে, এর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম লাগে। ফিট থাকার জন্য মা হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ৪০ মিনিট করে হাঁটা ভালো।
ফিট থাকতে খাবারের ভূমিকা আছে। ফিটনেস বা স্ট্রেংথ কেবল শরীরের ব্যাপার নয়, এটা মনেরও। অনেক মেয়েই মা হওয়ার পর মানসিক শক্তি ও আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। অনেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে কাজে ফিরে যান বটে, কিন্তু সেই এনার্জি যেন হারিয়ে ফেলেন।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সিফাত ই সাঈদ বলেন, বেশির ভাগ নতুন মায়েরই পোস্টপারটাম ডিপ্রেশন হয়। মনে হয় যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এ বিষয়ে তাঁর পরামর্শ হলো, শরীর ও মন পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসতে ৬ থেকে ৯ মাস লাগবে, রাতারাতি আগের মতো হওয়া যাবে না। এটা আগেই মেনে নিতে হবে। ধৈর্য ধরতে হবে। নিজের জন্য সামান্য হলেও আলাদা একটু সময় বের করতে হবে। যে সময় আপনি নিজের যতœ নেবেন, ব্যায়াম করবেন বা হাঁটবেন, চাইলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেবেন, একটা ভালো ছবি দেখবেন বা গান শুনবেন। পরিবারের অন্যরা নবজাতকের দায়িত্ব দিনে দু–একবার না নিলে এটা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে স্বামী সবচেয়ে ভালো ভূমিকা রাখতে পারেন। সুত্রঃ (বাসস)।

 

সোনার হরিণ (তিন)

সোনার হরিণ (তিন)


ফাতিমা মারিয়াম


এবার রীতার জীবনের আরেকটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল।

শায়লা রীতার  এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। একই পাড়ায় বাসা। ছোটবেলা থেকেই দুজনার গলায় গলায় ভাব। দুজনে সব সময়ই পরস্পরের বাসায় যাতায়াত করত। শায়লার পরিবারের সবাই রীতা ও তার মেয়ের প্রতি খুব সহানুভূতিশীল ছিল। সবসময়ই তারা রীতা ও তার ছেলের খোঁজখবর নিত।

শায়লারা দুই বোন ও পাঁচ ভাই। বাবা মা সহ বেশ বড় পরিবার।   শায়লার খালাতো ভাই  শফিক ছোটবেলা থেকেই শায়লাদের পরিবারেই বড় হয়েছে। তার মা বাবা নেই। মাতৃ-পিতৃহীন শফিক খালার পরিবারে বেশ আদর যত্নেই অন্য ভাই বোনদের মত দিন যাপন করছে।    এইচএসসি পাশ করে আর পড়াশুনা করেনি। আপাতত বেকার জীবন যাপন করছে।

শফিক সবসময়ই রীতার কাছে আনিসের কথা জানতে চাইত। তার ছেলের কথা জিজ্ঞেস করত। রীতার জীবনে ঘটে যাওয়া এসব ঘটনা নিয়ে শফিক খুব আফসোস করত। সহানুভূতিও দেখাত। রীতাও শফিককে বড়ভাই মনে করেই সব কিছুই বলত। একে তো বান্ধবীর ভাই তার উপর প্রতিবেশী!!!

এভাবে কুশল বিনিময় করার ফাঁকে ধীরে ধীরে তারা কখন যে একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছে তা তারা নিজেরাও জানেনা। যখন বুঝতে পারল তখন তাদের আর কিছুই করার থাকল না। রীতার বয়স কম। আনিসের জন্য অপেক্ষা করতে করতে সে হতাশ হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েক বছর কেটে গেল…… আনিস তার সাথে কোনরূপ যোগাযোগও করছেনা। ফলে যা হওয়ার তাই হল!

এরপর বেশ কয়েকমাস কেটে গেছে।

শফিকের বা রীতার বাসার কেউ বিষয়টি প্রথমে টের পায়নি। ধীরেধীরে ওদের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে প্রথমে পরিবারে ও পরে এলাকায় গুঞ্জন, কানাঘুষা শুরু হয়ে গেল। এবার ওরা দুজনেই সবার কাছে ওদের সম্পর্কের বিষয়টি পরিষ্কার করে দিল।

তারা সবাইকে জানাল যে, যখন তাদের মাঝে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তখন তারা উভয়েই সিদ্ধান্ত নেয় যে- বিয়ে করবে। যেহেতু পরিবার বা সমাজ তাদের এই সম্পর্ক মেনে নেবে না তাই তারা গোপনে বিয়ে করেছে। অবশ্য তার আগে রীতা সব নিয়ম মেনেই আইনের মাধ্যমে আনিসকে তালাক দিয়েছে।

রীতার পরিবার এই বিয়ে মেনে নিলেও শফিকের পরিবার কিছুতেই এই বিয়ে মেনে নিলো না। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রীতাকে অপমান অপদস্থ করলো, ভীষণভাবে নাজেহাল করলো। তারা সুযোগ পেলেই রীতার বাবার বাসায় এসে রীতাকে কটু কথা শোনাতে লাগলো। রীতা তার অবস্থানগত কারণে সব কিছুই চুপচাপ হজম করে যায়। শফিকও তাকে ধৈর্য ধরতে বলে।

শফিকের পরিবার রীতাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য শফিককে চাপ দিতে থাকলো। এমনকি তাকে পরিবার  থেকে বের করে দেয়ার  করার হুমকিও দিল। কিন্তু সকল চাপের মুখে শফিক অনড় থাকলো। এক পর্যায়ে তারা হাল ছেড়ে দিলো। কিন্তু মনেমনে নতুন করে পরিকল্পনা করতে থাকে। এভাবে টানাহ্যাঁচড়ায় প্রায় দুই বছর কেটে গেল।

পরিস্থিতি এখন আগের চাইতে কিছুটা স্বাভাবিক। যদিও শফিকদের বাসার কেউ রীতাকে মেনে নেয়নি, তবুও এখন আর ঐরকম দুর্ব্যবহার কেউ করেনা। কারণ রীতা মা হতে চলেছে। সারাদিন হাসপাতালে থাকে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এসে ছেলেকে নিয়ে সময় কাটায়। দিন মোটামুটি কাটছে।

শফিক এখনও বেকার। ওর হাতখরচ রীতাই দেয়। পরিবার থেকে শফিক কোন সহযোগিতাই পায়না। বরঞ্চ পায় গঞ্জনা আর তিরস্কার। ওর বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে বাসার সবাই  নতুন এক ফন্দি করলো।

তারা শফিককে জানাল- ‘তুমি যদি আমাদের কথা মেনে নাও। তাহলে তোমাকে আমরা ব্যবসা করার টাকা দিব। এখন যেহেতু রীতার বাচ্চা হবে তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা এখন আর আমরা বলছিনা…..ওর জায়গায় ও থাকুক। ওকে আমরা এই পরিবারে কখনই স্থান দেব না। তোমাকে আমরা আবার বিয়ে করাবো…… মেয়ে আমাদের দেখাই আছে। শুধু তোমার মতের অপেক্ষা করছি। তুমি ভেবেচিন্তে আমাদের জানাও।‘

শফিক বেশ চিন্তায় পড়ে গেল। একদিকে রীতা মা হবে। অন্যদিকে সে বেকার। সামনে খরচ অনেক বাড়বে। অতি দ্রুত তার কিছু একটা কাজ করা উচিত। চাকুরী করার চেষ্টা করেও সে ব্যর্থ হয়েছে। সে দিশাহারা হয়ে গেল। এমন একটা বিষয় যে সে কারো সাথে বুদ্ধি পরামর্শও করতে পারছেনা। বেকারত্বের যন্ত্রণা আর কত সহ্য করা যায়!!! অবশেষে সে পরিবারের সিদ্ধান্তের কাছেই নতি স্বীকার করলো।

রীতাকে মিথ্যা কিছু একটা বলে সে খালুর  সাথে  গ্রামের বাড়ি  চলে গেল। সেখানে গিয়ে সে পরিবারের পছন্দ করা পাত্রী মালাকে বিয়ে করলো। বিয়ের পর সেখানে কয়েকদিন থেকে শফিক ঢাকা চলে আসলো। যেহেতু শফিক ও রীতার বাসা একই পাড়ায়, তাই মালাকে এত তাড়াতাড়ি ঢাকা আনল না।

চলবে…

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৫

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৫


আফরোজা হাসান


বাইরে বেড়োতেই ঠাণ্ডা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগলো গায়ে। কাঁপন ধরে গেলো কিন্তু ভীষণ ভালো লাগলো শাবাবের। ঠাণ্ডা পছন্দ করে সে ভীষণ। কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমানো তার অনেকগুলো শখের মধ্যে একটা। এবং বেশ উপরের দিকেই এটার অবস্থান। মাত্র আলো ফুটতে শুরু করেছে। চারিদিকে হালকা কুয়াশার চাদর। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মনেমনে বলল শাবাব, চমৎকার সাজিয়েছে ভাইয়া-ভাবী তাদের ছোট্ট সংসার। ছবির মত সুন্দর বাংলোটা। একপাশে নানান ধরণের ফুল, পাতাবাহারের গাছ, আরেক পাশে দেশি শাক-সব্জীর বাগান। তবে সবচেয়ে সুন্দর হচ্ছে বারান্দায় দাঁড়িয়েই সমুদ্রের অনেকটা দেখা যায়। নাহ! মাহামকে নিয়ে বাইরে আসা উচিত ছিলো। প্রকৃতির একটু কাব্যিক বর্ণনা শোনা যেত।

সুপ্রভাত! শব্দটি কানে আসতেই মনে কাঁপন ধরে গেলো শাবাবের। এই কণ্ঠের অধিকারীর তো এখন এখানে থাকার কথা না। ভুল শুনছে নাতো? ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালো সে। হাসিমুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে আরিফী। মুহুর্তে নিজেকে সামলে নিলো শাবাব। আবেগের উর্মিমেলাকে যতটুকু সম্ভব হজম করে গম্ভীর কণ্ঠে সালাম দিলো।

হাসতে হাসতে সালামের জবাব দিলো আরিফী। অবাক হয়েছো খুব আমাকে দেখে? জানতে চাইলো।

অবাক হবার মত কিছু ঘটলে মানুষ অবাক হবে সেটাই কি স্বাভাবিক না?

আরিফী হেসে বলল, তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার উপর?

আমি বুঝি না রাগ করার মত কাজ করার পর মানুষ আবার প্রশ্ন কেন করে রেগে আছে কিনা? এর সাইকোলজিক্যাল ব্যাখ্যাটা কি?

চিন্তিত কণ্ঠে আরিফী বলল, সত্যিই আমার জানা নেই। এই ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে জানলে আমি সত্যিই সাইকোলজি নিয়ে পড়তাম।

ভেরি ফানি।

হেসে ফেললো আরিফী। আরো কিছুটা কাছে সরে এলো শাবাবের। অজুহাতের স্বরে বলল, আমার সত্যি ইচ্ছে ছিলো ঈদে দেশে যাবার। কিন্তু কাজের এত প্রেশার ছিল সময় বের করতে পারিনি। তাছাড়া আমি দেশে গেলে ভাইয়ার যাওয়া হতো না। মাহাম অসুস্থ্য ছিল তাই আমার কাছে ভাইয়ার যাওয়াটাকেই বেশি জরুরি মনে হয়েছিলো। এখনো রাগ করে থাকবে?

না রাগের পর্ব শেষ। এখন শাস্তির পর্ব শুরু।

শাস্তি? আবার শাস্তি কেন?

তোমার মাথার ঢিলা স্ক্রু টাইট করার জন্য।

আচ্ছা দাও শাস্তি। তোমার সব শাস্তি মাথা পেতে নেবো।
মাথা পেতে না নিয়ে উপায় আছে নাকি তোমার? বাড়ি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেবো না একদম।

এই সময় তো শাবাবকে ডাকতে ডাকতে বাইরে বেরিয়ে এলো মাহাম। আরিফী আর শাবাবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল, সরি। আমি আসলে শাবাবকে রুমে না দেখে খুঁজতে এসেছিলাম। বাবা বলছেন আজ আমরা সবাই বীচে নাস্তা করবো। শুনেই তো স্বভাব সুলভ লাফিয়ে উঠলো শাবাব।

আধ ঘণ্টা পরেই তো পুরো পরিবার নাস্তার জিনিসপত্র নিয়ে বীচে রওনা করলো। পরিবারের সবাই মিলে হাসি-আনন্দ-গল্পের মধ্যে দিয়ে স্বাগত জানালো নতুন আরেকটি দিনকে।
ভাতিজা মিহিরকে বীচে ছুটাছুটি করতে শুরু করলে তার বডিগার্ডের দায়িত্ব দেয়া হলো আরিফীকে। শাবাবের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো সে। ভাবী আর মায়ের সাথে গল্পগুজবে মশগুল শাবাব। ফিরেও তাকালো না আরিফীর দিকে। ফাইয়াজ সাহেব ছেলের সাথে ব্যবসা বিষয়ক আলোচনাতে ব্যস্ত। সবার উপর একবার চোখ ঘুরিয়ে মাহামের উপর আটকে গেলো আরিফীর দৃষ্টি। কফির মগ আর বই নিয়ে একপাশে নিজের জগতে মগ্ন মাহাম। এগিয়ে গিয়ে বসলো মাহামের পাশে।

কি এখনো পটাতে পারোনি তোমার বৌকে? হাসিমুখে জানতে চাইলো মাহাম। আমি তোমার অপেক্ষাই করছিলাম ভাইয়া। এই নাও লটকন।

লটকন দিয়ে কি করবো?

মাহাম হেসে বলল, তোমার বৌ আমার কাছে তোমাকে জব্দ করার জন্য আইডিয়া চেয়েছিলো। আমি বলেছি এমন কোন খাবার এনে দিতে বলো যেটা ইউরোপে পাওয়া অসম্ভব। যেমন ধরো লটকন। তবে আমি যে সাথে করে ভাবীর জন্য লটকন নিয়ে এসেছি এটা তোমার বৌ জানা নেই।

হাসতে হাসতে মাহামের হাত থেকে লটকন নিয়ে আরিফী বলল, তুই আসলেই আমাদের সবার জীবনে নূর হয়ে এসেছিস বুঝেছিস?

হুম, বুঝলাম। ঐ যে তোমার হুর আসছে। লটকন খাইয়ে বশ করো হুরকে। আমি যাই।

শাবাব কাছে আসতেই চোখ মুখ করুণ করে ফেললো আরিফী। ব্যথিত কণ্ঠে বলল, এভাবে আর কতক্ষণ চলবে শাবাব? সবকিছুকে টেনে ইলাস্টিকের মতো লম্বা করতে চাওয়া কিন্তু অনুচিত।

খবরদার আমাকে লেকচার শোনানোর চেষ্টা করবে না।

আচ্ছা কি করতে হবে আমাকে সেটা বলে দাও তুমি।

আমার লটকন খেতে ইচ্ছে করছে এনে দাও।

এই না হলে মনের মিল। জানো আমিও এমনটাই চাচ্ছিলাম।
মানে?

মানে প্রেমিক-প্রেমিকারা বাদাম ছুলে খেতে খেতে গল্প করে, আমার ইচ্ছে করছিলো আমরা দুজন লটকন ছুলে খেতে খেতে গল্প করবো। ইম্যাজিন করো তুমি আমি সমুদ্রের তীর ঘেঁষে হাঁটছি আর একে অন্যেকে লটকন ছুলে খাওয়াচ্ছি।
শাবাবকে বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিফী বলল, আচ্ছা বাদ দাও ইম্যাজিন করতে হবে না। এত নাও লটকন চলো প্র্যাক্টিকাল করি।

একবার লটকন আরেকবার আরিফীর দিকে তাকিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে শাবাব বলল, মাহাম ইউ বিশ্বাসঘাতিনী! মির জাফরের খালাম্মা! খুন করবো তোকে আমি।

শাবাবকে তেড়ে আসতে দেখে বাবা বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে ছুট লাগালো মাহাম।

চলবে…

 

সোনার হরিণ (দুই)

সোনার হরিণ (দুই)


ফাতিমা মারিয়াম


কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ের বিষয়টি বাসায় জানাজানি হয়ে গেল। মা, ভাবী এবং অন্যরা আনিসের কাছে তার পরবর্তী পদক্ষেপ কি তা জানতে চাইলো। সে বলল, ‘ আর কিছুদিন পরে আমি আমার পরিবারে এই বিষয়টি জানাব। ততদিন আমাকে সময় দিন।’ সবাই আনিসের কথাই মেনে নিলো।

আনিস এখন প্রায়ই রীতাদের বাসায় আসে। পরিবারের অন্যরাও যেহেতু বিয়েটা মেনে নিয়েছে তাই ওদের আর কোন সমস্যাই রইলো না। নিশ্চিন্তভাবে দুজনে ঘুরে ফিরে বেড়াতে লাগলো।

কয়েক মাস হল বিয়ে হয়েছে। কিন্তু আনিস তার পরিবারকে এখনও কিছু জানায়নি। রীতাও চাইছে বিষয়টি পারিবারিক ভাবে সমাধান হোক। এদিকে সে এখন নিজের ভিতরে আরেকজনের অস্তিত্ব টের পাচ্ছে। এই অবস্থায় রীতাদের পরিবার থেকেও আনিসকে বলা হচ্ছে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে। আনিস ওদের কাছে আরও সময় চায়। এভাবে সে বারবার একই কথা বলে সময় পার করতে থাকে। কিন্তু তার পরিবারকে জানানোর কোন উদ্যোগই নেয় না। ফলে রীতার পরিবারের সবাই ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

এই পর্যায়ে রীতার বড়ভাই এবং কয়েকজন আত্মীয় মিলে সিদ্ধান্ত নেয় এবার আনিস এই বাসায় আসলে তারা ওকে কড়াকড়ি ভাবে বলবে যেন সামাজিকভাবে রীতাকে পরিবারের বউ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ব্যবস্থা করে। আনিস আসলো এবং যথারীতি সময় চাইলো। এক পর্যায়ে বড়ভাই এবং আরও দু একজনের সাথে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হল। রীতা এসে সবাইকে থামিয়ে দিয়ে আনিসকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেল।

সেই রাতে পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিলো আনিসকে ভোরবেলা কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তারা আনিসকে হাত পা বেঁধে পিটানোর পরিকল্পনা করেছিল। তখন রীতা ঘুমে থাকবে সে বাধা দিতে পারবেনা। শাস্তি দেয়ার পর আনিসও ভয় পেয়ে রীতার ব্যাপারে ইতিবাচক কিছু চিন্তা করবে। তারা এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রীতা এবং তার অনাগত সন্তানের ভালোর জন্যই।

রীতা কিভাবে যেন  এই পরিকল্পনার কথা জেনে যায়। সে ভোর হওয়ার অনেক আগেই স্বামীকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দিলো এবং যত দ্রুত সম্ভব এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বলল। আনিসকে বিদায় দিয়ে সে আবার শুয়ে রইলো যাতে কেউ টের না পায় যে আনিস চলে গেছে এবং আনিস যাতে আরও দূরে যাওয়ার কিছুটা সুযোগ পায়!!!

পরিকল্পনা মাফিক সবাই ভোরবেলা রীতার রুমের সামনে আসলো। দরজায় শব্দ শুনে রীতা উঠে দরজা খুলে দিলো। বড়ভাই ওর কাছে জানতে চাইলেন, ‘আনিস কোথায়?’ সে মিথ্যা জবাব দিল, ‘ আমি জানিনা। আমি ঘুম ভাঙার পর থেকেই ওকে দেখতে পাচ্ছিনা।‘

সবাই চারপাশে বহু খোঁজাখুঁজি করলো। রীতা কাউকে সত্যি কথাটা তখনও জানায়নি। সে চুপচাপ রইলো। মনেমনে তার দৃঢ় বিশ্বাস আনিস তার কাছে আবার ফিরে আসবে। সন্তান জন্মাবার আগেই তাকে সসম্মানে ঘরে তুলে নেবে!

কিন্তু ওটাই ছিল আনিসের রীতাদের বাসায় সর্বশেষ আসা।

দিন যায়……মাস যায়……রীতা অপেক্ষা করে…… আনিস আসবে।

কিন্তু সে আর আসেনা। তার ভাই ও অন্য আত্মীয়রা চেষ্টা করেছে আনিসকে খুঁজে বের করতে। কিন্তু সেই যুগে তো আর এত উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলনা। ফলে আনিস খুব সহজেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল।

যথাসময়ে রীতা এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিলো। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রীতা তার সব দুঃখ অপমান ভুলে থাকার চেষ্টা করে। তার মনে আশা…… আনিস একদিন এসে তাদের মা ছেলেকে ওর বাড়ি নিয়ে যাবে।

দিনদিন ছেলে  বড় হচ্ছে। তার খরচ বাড়ছে। বাচ্চার জন্য এটা ওটা কিনতে হয়। নিজেরও কিছু ব্যক্তিগত খরচ আছে। বাবা আর বড়ভাইয়ের কাছে কত আর হাত পাতা যায়!!! সে ভালোভাবেই বুঝতে পারছে তার ও তার ছেলের এইসব খরচের ব্যবস্থা তাকেই করতে হবে। আনিস আজ পর্যন্ত কোনরূপ যোগাযোগ করেনি। নিরুপায় হয়ে ছেলের জন্মের কয়েকমাস পরে রীতা চাকুরীর সন্ধান করতে লাগলো।

কিন্তু তার এই শিক্ষাগত যোগ্যতায় কোন কাজ পাওয়া তার জন্য কঠিন হয়ে গেল। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে পরিচিত একজনের মাধ্যমে একটি হাসপাতালে আয়া  হিসেবে সে তার কর্মজীবন শুরু করলো। সেই যুগে একটি মেয়ের জন্য আয়ার চাকুরী করা যে কত কঠিন ছিল তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন।

চাকুরীর শুরুতে পরিবার থেকে তাকে বাধা দেয়া হয়। তার অভিভাবকরা তাকে জানায় যে তার ও তার ছেলের সব ভরণপোষণ পরিবার থেকেই করা হবে। সে যেন এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে। ঐ চাকুরীতে সে যেন আর না যায়! কিন্তু সে এ ব্যাপারে অনড় থাকল। কোন বাধাই সে মানল না। তাই ঘরের মানুষরা এই ব্যাপারে হাল ছেড়ে দেয়।

কিন্তু সমস্যা শুরু হয় অন্য জায়গায়। প্রতিবেশীরা তার এই চাকুরী করাটা কোনভাবেই মানতে পারছিলনা। ফলে তাকে অনেকেই অনেকভাবে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পাড়ার কয়েকজন সিনিয়র ভাই তার হাসপাতালে যাওয়া আসার সময়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাকে উত্যক্ত করত। নানা রকম কটু ও অশ্লীল কথা বলতো। সে কোন কিছুর পরোয়া না করে হাসপাতালে যেতে থাকে। একসময়ে তারাও হাল ছেড়ে দেয়।

পরিবার ও সমাজের সকল বাধাকে উপেক্ষা করে রীতা দৃঢ় মনোবল নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে থাকলো। ওর ছেলের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে বড় ভাবীর উপর দিয়ে দিলো। এছাড়া তার পক্ষে কোনভাবেই চাকুরীটা করা সম্ভব হতনা। বড় ভাবিও নিজ সন্তানের মত করেই ছেলেটিকে লালনপালন করতে থাকে।

রীতার দিন কেটে যাচ্ছে। সে প্রতিদিন ভোরবেলা হাসপাতালে যায়……আর সন্ধ্যাবেলা বাসায় ফেরে। বাবার বাসায় থাকে। ফলে থাকা খাওয়ার জন্য তার কোন খরচ নেই। যা বেতন পায় তা দিয়ে মা ও ছেলের অন্যান্য খরচ চলে যায়। ছোট ভাইবোন ও পরিবারের অন্য বাচ্চাদের শখের জিনিসগুলো কিনে দেয়। বাহ্যিক ভাবে দিন ভালোই কেটে যাচ্ছে………।

ছেলে  দিনদিন বড় হচ্ছে। রীতা আবারও আনিসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সে এবারও ব্যর্থ হয়। মানুষটা যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের শত প্রশ্নের সামনে সে বোবা হয়ে থাকে। মাঝে মাঝে অনেকের কটু কথাও হজম করতে হয়। চোখের পানি আর দীর্ঘশ্বাস সম্বল করে দেখতে দেখতে ৫/৬ বছর কেটে গেল।

চলবে…

 

কিন্তু, এত কিছুর সময় কোথায়?

কিন্তু, এত কিছুর সময় কোথায়?


কানিজ ফাতিমা


Parenting নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যে প্রশ্নটি সবথেকে বেশী শুনি তা হলো- “বুঝলাম তো এসব করা খুবই জরুরী….কিন্তু এত কিছু করার সময় কোথায়?”
বাবা- মা হওয়া একটি প্রাকৃতিক নিয়ম ৷ প্রাকৃতিক নিয়মে প্রতিটি প্রানীই সন্তান লাভ করে৷ তাই বাবা – মা হওয়ার মধ্যে আলাদা কোনো কৃতিত্ব নেই৷ বাবা-মা হওয়ার মধ্যে তৃপ্তি বা মানসিক সুখ আছে; কিন্তু কোনো কৃতিত্ব নেই৷ কৃতিত্ব আছে “ভালো বাবা-মা” হওয়ার মধ্যে৷ আর ভালো বাবা-মা হতে হলে তিনটি জিনস অবশ্যই লাগবে-
১. parenting এর জ্ঞান
২. যথেষ্ট সময় ও
৩. ধৈর্য

এই তিনটি প্রয়োজনের দ্বিতীয় প্রয়োজনটা নিয়েই প্রশ্ন সবথেকে বেশী- এত কিছুর সময় কোথায়?

আসুন, আমরা প্রত্যেকে আমাদের নিজ নিজ জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলোর তালিকা করি-
যেমন ধরুন, আমাদের তালিকাটা হয়ত এমন হবে-
১. সন্তান মানুষ করা
২. সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ বজায় রাখা
৩. চাকরি বা ব্যবসায় সফলতা অর্জন
অনেকে হয়ত লিখবেন –
দৈনন্দিন জীবনে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা …ইত্যাদি
যাদের ছেলেমেয়ে আছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই সন্তান মানুষ করাকে ১ বা ২ নাম্বারে রাখবেন এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস৷ এবার প্রশ্ন হলো যে কাজটি আপনার জীবনের ১ বা ২ নাম্বার গুরুত্বপূর্ণ কাজ তার জন্য আপনার সময় হবে না? একটু চিন্তা করে দেখুনতো, আপনি কি আপনার সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি পাশে ফেলে রেখে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে বেশী সময় দিচ্ছেন? আরো নির্দিষ্ট করে বললে বলা যায়- গত তিন দিনে আপনি কি কি কাজ করেছেন যা না করলেও হত বা কম করলেও হত; যেমন-

১. মার্কেটে ৪০/৫০ টাকা বাচানোর জন্য দোকান দোকান ঘোরা
২. পোশাকটি ঠিক আপনার পসন্দ মত হওয়ার জন্য কাপড়ের দোকান, টেইলার্স , লেইসের দোকান……সহ আরো অনেক স্থানে প্রচুর সময় খরচ
৩. টেলিফোনে আত্বীয় বা বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে লম্বা সময় নিয়ে কথা বলা
৪. মহিলাদের ক্ষেত্রে ভাবীদের সঙ্গে কোন কাপড়ের কত দাম, কোথায় পাওয়া যায় ….জাতীয় বিষয় নিয়ে লম্বা গল্প
৫. পুরুষদের ক্ষেত্রে অপ্র্য়্যজনীয় রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে অহেতুক বিতর্ক
৬. অনুপস্থিত কারো নামে সমালোচনা করে সময় পার করা
৭. কাজের লোকের কাজ নিখুত করানোর জন্য তার পেছন পেছন লেগে থাকা
৮. টিভিতে অপ্রয়োজনীয় সিরিয়াল বা অনুষ্ঠান দেখা
৯. প্রয়োজনের অতিরিক্ত রান্না বান্না করা
১০. নিজে ও নিজের ঘর ফিট রাখতে অতিরিক্ত সময় খরচ
১১. সামাজিক কাজের নামে বাইরে অতিরিক্ত সময় দেয়া
১২. বেশী বেশী ফোন করা ও বেশী বেশী ফোন রিসিভ করা
১৩. বেশী বেশী দাওয়াত দেয়া ও বেশী বেশী দাওয়াত নেয়া
১৪. ইন্টারনেটে মাত্রাতিরিক্ত সময় দেয়া

খেয়াল করুন, অনেক কাজই আছে জরুরী কিন্তু তা সন্তান লালনপালনের থেকে বেশী জরুরী না৷ যেমন ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা ও গুছিয়ে রাখা একটি জরুরী কাজ, কিন্ত অনেকে এটা নিয়ে এতটাই করেন যে সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় থাকে না৷ অথচ এ মাত্রাতিরিক্ত কাজগুলো কমিয়ে খুব সহজেই আপনার সন্তানের সঙ্গে activity বা গল্প করার সময় বের করতে পারেন ৷

না বলতে শেখা –

আমরা অনেকেই জায়গামত ‘না’ বলতে পারিনা৷ লজ্জা পাই বা মনে করি অন্য পক্ষ কি ভাববে৷ এমনটা ভাবার দরকার নেই৷ চিন্তা করুন কোন কাজটি তুলনা মূলক বেশী গুরুত্বপূর্ণ; আর কম গুরুত্বপূর্ণ কাজটিকে না বলে দিন৷ যেমন ধরুন বাচ্চাকে কথা দিয়েছেন কাল তাকে নিয়ে বেড়াতে যাবেন, এমন সময় শ্বশুর বাড়ী থেকে ফোন এলো কাল সেখানে যেতে হবে এক্ষেত্রে অতীব গুরুত্ব পূর্ণ না হলে শুধু লজ্জার খাতিরে ‘হ্যা’ না বলে “না” করে দিন ৷
এটা শুধু বাইরের লোকের সাথেই না, অনেক সময় একেবারে পরিবারের মধ্যেও ঘটে৷ যেমন কাল বাচ্চার পরীক্ষা এমন সময় যদি স্বামী বন্ধুদের দাওয়াত দিতে চায় তবে কারণ বুঝিয়ে তাকে না করে দিন৷
পরিবারের লোকজন যদি প্রতিদিন ৪/৫ রকম রান্না দাবী করে আর এটা যদি আপনার বাচ্চাকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে অসুবিধা সৃষ্টি করে তবে রান্নার রকম কমিয়ে দিন৷

সঠিকভাবে না বলতে পারা একটি বড় গুন৷ ঝগড়া, বিতর্ক না করে বা রূর (Rude) না হয়ে শক্তভাবে “না” বলতে জানা একটি দক্ষতা৷ এটি অর্জন করলে সন্তানের জন্য সময় বের করা সহজ হয়৷ আমাদের চারপাশে অনেক ‘অভিমানী’ মানুষ রয়েছে যারা ‘না’ তে মাইন্ড করেন৷ সেক্ষত্রে ‘না’ মুখে না বলে কৌশলে বুঝিয়ে দেয়া যেতে পারে৷ যেমন কেউ দাওয়াত দিলে সরাসরি ‘না’ না বলে এমনটা বলা যায় “শুক্রবার হলে কেমন হয়?”

মোটকথা ,অপ্রয়োজনীয় কাজ বাদ দেয়া, মাত্রাতিরিক্ত কাজ কমিয়ে দেয়া ও প্রয়োজনে ‘না’ বলার মাধ্যমে আমরা আমাদের সন্তানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় বের করে নিতে পারি৷

 

নিজের তৈরি করে নিন নাইট ক্রিম

নিজের তৈরি করে নিন নাইট ক্রিম


ববিতা পারভীন


ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষার্থে ময়েশ্চারাইজার অদ্বিতীয়। বাজারে নানা ব্র্যান্ডের ও বাজেটের ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। শুষ্ক ত্বকে তো বটেই তৈলাক্ত ত্বকেও ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন। দিনে ও রাতে আলাদা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। কেননা রাতের জন্য তৈরি ক্রীম গুলোতে আলাদা কিছু উপদান থাকে, যা সারা রাতে ত্বককে পুষ্টি যোগায় এবং ক্রীম ভেদে কার্যক্রমও আলাদা হয়। আর সাধারণত ডে ক্রিম গুলোর চেয়ে নাইট ক্রীমের দামও পড়ে বেশি, তাই অনেকেই হয়ত আলাদা নাইট ক্রীম ব্যবহার করেন না বা অনেকের ত্বক স্পর্শকাতর হওয়াতে বাজারে প্রচলিত কেমিকেল নির্ভর প্রসাধনীকে ভয়ও পেয়ে থাকেন।

আসুন জেনে নিই ঘরেই নাইট ক্রিম তৈরির পদ্ধতি।

উপকরণঃ

-কাঠবাদাম ১০ টি

পেস্তা বাদাম ১০ টি

– গোলাপ জল

-১ টেবিল চামচ মধু(যাদের ত্বকে মধু স্যুট করেনা তারা মধু দিবেন

-১ টা ভিটামিন ই ক্যাপসুল

-ক্রিম রাখার বক্স

পদ্ধতিঃ

১। কাঠবাদাম গুলোকে সারা রাত দুধ বা গোলাপ জলে ভিজিয়ে রাখুন।

২। পরের দিন সকালে বাদামগুলোকে ছাল হতে আলাদা করে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড বা শিল পাটায় বেটে নিন, খুব মিহি পেস্ট হতে হবে।

৩!কাচা হলুদ ও বেটে নিতে বা ব্লেন্ড করতে হবে।হবে-মেয়ের

৪। এবার পরিষ্কার একটি বাটিতে বাকি সব উপকরণ যেমন মধু, ভিটামিন ই ক্যাপসুল, দিয়ে ভালো করে পেস্ট গুলো মিশিয়ে নিন।

৫। এবার সবগুলো উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে যে পাত্রে সংগ্রহ করতে চান সেটাতে রেখে দিন।

৭। পাত্রটিকে প্রথম ২৪ ঘণ্টা ডিপ ফ্রিজে এবং তারপর নরমাল ফ্রিজে রাখুন।এটি ফ্রিজে রেখে ৮/১০ দিন ব্যবহার করা যাবে।

৮। এবার প্রতিদিন রাতে ফেস ওয়াশ দিয়ে মুখ ভালো ভাবে পরিষ্কার করে ব্যবহার করুন নিজের তৈরি করা নাইট ক্রীম।

নিয়ম মেনে টানা ২ সপ্তাহ ব্যবহারেই ফলাফল দেখতে পাবেন জাদু।
সবার ত্বক এক নয় অনেকের স্যুট নাও করতে পারে।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৪

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৪


আফরোজা হাসান


ঘরের এক মাথা থেকে অন্য মাথা পায়চারি করতে করতে গজগজ করছিল শাবাব। বইয়ের সেলফ গোছানোর ফাঁকে ফাঁকে বোনের দিকে তাকাচ্ছিলো আর মিটিমিটি হাসছিল মাহাম। শাবাব তার হাসি দেখলে খবর আছে তাই হাসি চেপে মাহাম বলল, ভাইয়া কাজটা মোটেই ঠিক করেননি। তাহমিনার হলুদের অনুষ্ঠানে যেতে দেয়া উচিত ছিলো তোমাকে। এত কাছের বান্ধবী তোমার।

তুই তো কথাই বলিস না ভাইয়ার চামচি। তুই যদি যেতে রাজী হতি তাহলে ঠিকই ভাইয়া অনুমতি দিয়ে দিতেন। ঝাঁঝের সাথে বললো শাবাব।

আচ্ছা বাদ দাও এসব। যা হবার তা তো হয়েই গিয়েছে। তাছাড়া এসব অনুষ্ঠানে না যাওয়াই ভালো।

তাহমিনার অনুষ্ঠানটি একদম ঘরোয়া পরিবেশে হচ্ছে।

পরিবেশ কেমন সেটা কিন্তু ম্যাটার না শাবাব।

তাহলে ম্যাটারটা কি?

আচ্ছা ধরো পচা, শুকিয়ে যাওয়া ফুল পাতা দিয়ে যদি খুব সুন্দর করে একটা তোড়া বানিয়ে দেই তুমি কি খুশি মনে সেটা নেবে?

ফেনাচ্ছিস কেন? যা বলার সোজাসুজি বল।

মনেআছে বাবা একদিন আমাদেরকে বলেছিলেন, পচা খাবার খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে এনে দিলে যেমন আমরা অমৃত ভেবে সেটা খেয়ে ফেলবো না। ঠিক তেমনি শরীয়তে যার অনুমোদন নেই তার উপস্থাপন যেমনই হোক না কেন সেটা সর্বদা বর্জনীয়।

বোনের কথাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট না হলেও আর কথা বাড়াল না শাবাব। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, মানুষের শরীরে আঘাত করলে যেমন শাস্তি দেয়া হয়, মনে আঘাত দেবার ব্যাপারেও একই বিধান থাকা উচিত ছিল।

কেন?

একজনকে হাতে মারা আর মানসিকভাবে আহত করার মাঝে কিন্তু খুব বেশি পার্থক্য নেই। উভয় ক্ষেত্রেই মানুষকে কষ্ট দেয়া হয়। দেহের আঘাত দেখা যায় আর মনের আঘাত দেখা যায় না, এই তো শুধু পার্থক্য। প্রচণ্ড অভিমানী কণ্ঠে বললো শাবাব।

তুমি ভাইয়ার কথাতে অনেক কষ্ট পেয়েছো তাই না? ভাইয়া তো খারাপ কিছু বলেননি। হ্যা একটু কড়া করে বলেছেন। কিন্তু ভেবে দেখো কড়া করে না বললে কি তুমি মানতে? বরং ভাইয়াকে কনভিন্স করার চেষ্টা করতে।

হুমম…এটাও তো ঠিক। আমি তো ভাইয়াকে পটানোর ডায়লগও রেডি করে রেখেছিলাম। ভাইয়া মনেহয় টের পেয়ে গিয়েছিলো সেটা। দুষ্টু হাসি খেলে গেলো শাবাবের চেহারাতে।
হেসে ফেললো মাহাম। বোনের এই মেঘ এই রৌদ্দুর স্বভাবটা খুব ভালো লাগে মাহামের। তার নিজের মধ্যে এই জিনিসটা একদমই নেই। সে সাধারণত রাগ বা জেদ করে না কিন্তু একবার করলে সেসব মনের মধ্যে পুষে রাখতে রাখতে নিজেই একসময় বিরক্ত হয়ে যায়।

দরজা নক হলে শাবাব বলল, বাবা ভেতরে আসো। দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলেন ফাইয়াজ সাহেব। দুই মেয়ের মাঝে বসে দুজনকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, শুনলাম আমার মায়েদের নাকি মন খারাপ?

শাবাব হেসে বলল, কিঞ্চিৎ মনখারাপ ছিলো বাবা। কিন্তু এখন মন ভালো।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ আমি তো আরো তোদের মন ভালো করতে এলাম।

এই কথা আগে বলবে তো! সাথে সাথে মুখ গোমড়া করে শাবাব বলল, তুমি আসার আগেই মন ভালো হয়ে গেলো কেন? ফাজিল মন আরেকটু অপেক্ষা করলো না কেন? এই দুঃখে আবার মন খারাপ হয়েছে বাবা। নাও এখন মন ভালো করে দাও।

সশব্দে হেসে ফেললেন ফাইয়াজ সাহেব। বাবার সাথে শাবাব আর মাহামও যোগ দিলো হাসিতে। হাসাহাসির শব্দে হাজির হলেন মিসেস ফাইয়াজও। ভ্রু কুঁচকে বললেন, আপনাদের সম্মিলিত হাসির রহস্য কি?

ফাইয়াজ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, সাবিহা তুমিই মনেহয় পৃথিবীর একমাত্র নারী যে কিনা স্বামী-সন্তানদের হাসির মধ্যেও রহস্য সন্ধান করো।

কি আর করার বলো ঘর পোড়া গরু সিঁদুরের মেঘ দেখলেও ভয় পাবে এটাই হচ্ছে নিয়ম।

আরেক ঝাপটা হাসির বৃষ্টি ঝরে পড়লো রিমঝিম শব্দে। ভিজবে না ভিজবে না করেও তাতে ভিজতে হলো সাবিহাকে। হাসিমুখে এসে বসলেন স্বামী ও কন্যাদের কাছে। বাবা-মাকে মাঝখানে বসিয়ে দুপাশ থেকে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বসলো শাবাব আর মাহাম।

ফাইয়াজ সাহেব বললেন, ব্যবসার কাজে আমাকে দু’সপ্তাহের জন্য ইউরোপ যেতে হবে আগামী মাসে।

রোদ ঝলমলে তিনটা চেহারাকে মুহুর্তে মেঘে ঢেকে যেতে দেখলেন ফাইয়াজ সাহেব। হেসে বললেন, তোমাদের মেয়েদের নিয়ে এই হচ্ছে সমস্যা। পুরো কথা শোনার আগেই রিঅ্যাক্ট করো।

শাবাব হেসে বলল, ওহ তারমানে তুমি যাচ্ছো না? হুররে..
.
হ্যা বাবা তুমি যেও না। তোমাকে ছাড়া একটুও ভালো লাগে না আমাদের। আদুরে গলায় বললো মাহাম।

স্ত্রীর চোখেও এই শব্দগুলোকেই ঝিলিক দিয়ে উঠতে দেখলেন ফাইয়াজ সাহেব। হেসে বললেন, উহু তারমানে হচ্ছে তোমরা তিনজনও আমার সাথে যাচ্ছো। কারণ তোমাদেরকে ছাড়া আমারো কোথাও ভালো লাগে না।

ইয়াহু বলে চিৎকার করে লাফিয়ে উঠলো শাবাব। মাহামকে টেনে ধরে উঠিয়ে তার সাথে লাফাতে বাধ্য করলো। দুই কন্যার আনন্দ দেখে হেসে ফেললেন সাবিহাও। আর আনন্দ চিকচিক করে উঠলো ফাইয়াজ সাহেবের চোখে।

চলবে

 

সোনার হরিণ (এক)

সোনার হরিণ (এক)


ফাতিমা মারিয়াম


আজ থেকে প্রায়  চল্লিশ  বছর আগের কথা। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রীতা। এই কাহিনী তার জীবন থেকে নেয়া। রীতার কথা শুরু করার আগে তার পরিবার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেয়া যাক!

রীতার মায়ের সাথে তার বাবার ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ার পর ওরা দুই  বোন বাবার সাথেই থেকে যায়। কারণ ওদের ভরণপোষণ করার কোন সামর্থ্যই তার মায়ের ছিলনা। উনার বাবার বাড়ির অবস্থা তেমন একটা ভালো ছিল না।  যেখানে তিনি নিজেই আজ এর দুয়ারে কাল ওর দুয়ারে ঘুরে ফিরে থাকতে লাগলেন, সেখানে তিনি কিভাবে  দুইটি  মেয়েকে নিজের কাছে রাখবেন!
ছাড়াছাড়ি হবার কারণ হল রীতার মা কয়েক বছর ধরে মাঝে মধ্যে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। একজন পাগলের সাথে স্বাভাবিক সংসার জীবন যাপন সম্ভব নয়। ফলাফল………তালাক।
রীতার মা ছিলেন তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে মারা গেলে তিনি রীতার মাকে বিয়ে করলেন। দুই ঘরের চারটি বাচ্চার দেখাশোনা এবং সংসার পরিচালনার জন্য তিনি তৃতীয়বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন।    যিনি এই সংসারে আসলেন তিনি অত্যন্ত রূপবতী একজন মহিলা। দুই সন্তান রেখে তার আগের স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি বাবার বাড়ীতে থাকতেন। এক সময়ে রীতার বাবার সাথে বিয়ের প্রস্তাব আসায় তার অভিভাবক তাকে এইখানে বিয়ে দিয়ে দেয়। বাচ্চা দুটি নানার বাড়িতেই থেকে যায়। এই সংসারে এসে তিনি শক্ত হাতে হাল ধরেন। চারটি  ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে তার সংসার জীবন শুরু হল। মাঝে মধ্যে তার নিজের সন্তানরাও এসে মায়ের কাছে দুই চার দিন বেড়িয়ে যায়। এই স্বামীর সংসারে তিনি একে একে চার সন্তানের মা হলেন। দুইটি ছেলে ও দুইটি মেয়ে। অর্থাৎ রীতার বাবার  ঘরে তার সর্বমোট সন্তানের সংখ্যা হল আট। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে রীতার বড়মায়ের ঘরে এক বোন ও এক ভাই। বোনটির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সে স্বামীর সংসারে বেশ ভালই আছে। এবার তার বাবা ভাইটিকেও বিয়ে করিয়ে দিলেন। নতুন বউ প্রথম প্রথম বেশ ভয়েই ছিল। সৎ শাশুড়ির সংসার না জানি কত সমস্যা হয়! কিন্তু ধীরেধীরে সে দেখল তার শাশুড়ি বেশ ভালো একজন মানুষ। ননদ দেবররাও সবাই বেশ মিশুক। খুবই ভালো। ফলে খুব সহজেই বউটি সবাইকে আপন করে ফেলল। শাশুড়ি যেমন আটটি সন্তানকে নিয়ে নির্ভেজাল জীবন যাপন করছে, নতুন বৌও একইভাবে সবাইকে আপন করে নিলো। এত বড় সংসার নিয়ে শাশুড়ি-বউয়ের বেশ ভালই দিন কাটছিল। রীতার মায়ের ঘরে ওরা দুই বোন……রীতা ছোট।  আটজনের মধ্যে রীতা চতুর্থ। রীতা ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় তার ঠিক আগের বোনটিকে ওর বাবা বিয়ে দিয়ে দেয়। এরই মধ্যে রীতার ভাবীর একে একে দুইটি বাচ্চা হয়ে গেছে।
রীতা  পড়ালেখায় খুব একটা ভালো না। এটা নিয়ে ওর নিজের বা অন্য কারোও খুব একটা মাথাব্যথা নেই। সামাজিক আর দশটা নিয়মের মতই স্কুলে যায় আসে। ফলে ক্লাস এইটের বার্ষিক পরীক্ষার পর নিজ থেকেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। সংসার এখন আগের চাইতেও অনেক বড়। রীতা এখন মা ও ভাবীর পাশাপাশি ছোট ভাইবোনদের ও বড় ভাবীর বাচ্চাদেরকে দেখাশোনা এবং সংসারের কাজে মা ও ভাবীকে সাহায্য করে। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে।
এক নিকটাত্মীয়ের সাথে তার এক বন্ধু আনিস প্রায়ই রীতাদের বাসায় আসে। আনিসের পরিবার ঢাকাতেই থাকে। রীতাদের চাইতে অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক বেশি ভাল। রীতাদের অবস্থাও ভালো। তবে আনিসের পরিবারের মত নয়। রীতাদের পরিবারের সবার সাথে আনিসের সম্পর্ক বেশ ভাল। এত বড়লোকের ছেলে হয়েও মনে কোন অহংকার নেই। ওদের ভাইবোন সবার সাথেই বেশ ভালো সম্পর্ক। আনিস যখন আসে রীতা এবং অন্য ভাইবোনেরা তার সাথেই বেশিরভাগ সময় কাটায়।
আনিসের কথাবার্তা, আচার- আচরণ সব কিছু দেখে রীতা খুব মুগ্ধ হয়। রীতাকেও আনিসের কাছে বেশ ভালো লাগে। ধীরে ধীরে দুজনের এই ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নেয়। মা ও ভাবী যখন বিষয়টি টের পেল তখন পানি বহুদূর গড়িয়ে গেছে। শাসন তিরস্কার কোনকিছুই রীতাকে পিছু ফেরাতে পারেনা। একদিন সবার অগোচরে তারা লুকিয়ে বিয়ে করে ফেলল।

চলবে…

 

বেশি সন্তান জন্ম দেয়া জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ

বেশি সন্তান জন্ম দেয়া জরায়ুমুখ
ক্যান্সারের অন্যতম কারণ


নারীর স্বাস্থ্যকথা


চার সন্তানের জননী রাফিজা খানমের বয়স এখন ছত্রিশ বছর । বাবা-মা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় বিয়ে হয় প্রবাসী আব্দুস সাত্তারের সাথে। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে রাফিজা। আর তাই পরের মেট্রিক পরীক্ষা দেয়া হয়নি রাফিজার। কিন্তু স্বামী আশ্বস্ত করে বাচ্চা হওয়ার পরে সে আবার পড়ালেখা করতে পারবে। এভাবেই এক সময় মাস্টার্স শেষ করে নীলফামারীর স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরীও পেয়ে যান রাফিজা। স্বামী প্রবাসে থাকলেও চার সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল রাফিজার। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে তার। প্রায়ই সময় তলপেটে যন্ত্রণা আর প্রশ্রাবের জ্বালা-পোড়া। শেষ পর্যন্ত এক গাইনী ডাক্তারের সাথে কথা বলে রাফিজা। অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা যায় রাফিজা জরায়ুমূখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) সূত্র মতে বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় স্তন ক্যানসারে। এর পরেই জরায়ুমুখ ক্যানসার । প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে বাংলাদেশে ৮হাজার ৬৮ জন জন আক্রান্ত হয়। আর মৃত্যু বরণ করে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়াও বিশ্বে প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ নারী। আর মৃত্যু হয় প্রায় ৩ লাখ।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, মূলত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) নামের এক ভাইরাস। আর এই এইচপিভি বিভিন্ন ধরনের আছে, যার মধ্যে এইচপিভি ১৬ ও ১৮ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বেশী মারাত্মক। তিনি বলেন, মূলত যেসব মেয়েদের বাল্যবিবাহ হয় এবং যেসব নারী অধিক সন্তান জন্ম দেন তারাই এই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও নারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিষয়টিও রয়েছে। যেসব অল্পবয়সী নারী মাসিকরে সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে না পারে তাদের বিভিন্ন ধরনের জীবানু আক্রমন করতে পারে। আর তাই মাসিকের সময় অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। ডা. রোকেয়া বলেন, অল্প বয়সী মেয়ে বিশেষ করে নয় থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য রয়েছে এইচপিভি টিকা। একটু দামী হলেও এই টিকা দিয়ে দেওয়াই উত্তম। এছাড়াও বেশী বয়সী নারীদের জন্য রয়েছে ক্যান্সার স্ক্রিনিং। ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সহজে এই রোগ নির্ণয় করা যায় এবং পরবর্তী চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।
আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানা আক্তার বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে এখনো গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বয়:সন্ধির সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এসময় তাদের স্কুল পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় কিছু কিছু অভিভাবক। অথচ তার কোন দরকারই হয়না। এখন বাজারে অল্প দামে দেশীয় তৈরী বিভিন্ন ধরনের প্যাড পাওয়া যায় এবং তারা এসব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো বেশী পরিমানে বাড়াতে হবে। যদিও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য সেবা ঘরের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু মানুষ এখনো এসব সেবা নিতে আগ্রহী নয়। তাদেরকে এসব সেবার আওতায় আনার জন্য আরো বেশী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডা. শাহানা বলেন, প্রাথমিকভাবে এই ক্যান্সার ধরা পড়লে খুব সহজেই এ থেকে নিরাময় সম্ভব। নিয়মিত ঔষুধ সেবন করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যদি দেরীতে ধরা পড়ে তবে তা অনেক সময় জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। অনেক সময় ডাক্তারদেরও আর কিছু করার থাকে না। আর তাই এ বিষয়ে পরিবারের সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশের নারীরা এসব মেয়েলী শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করতে লজ্জা পায়। একেবারে চরম পর্যায়ে না গেলে তারা তা কাউকে জানায় না । এমনকি অনেক বিবাহিত নারীরাও তাদের স্বামীর সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন না। এর ফলে অনেক নারীই এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। যা কখনোই কাম্য নয়। তিনি সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও যেসব সংস্থা এসব বিষয়ে কাজ করেন তাদেরকে এ বিষয়ে আরো বেশী জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান।

সুত্রঃ বাসস।

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৩

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-৩


আফরোজা হাসান


খুব আনন্দ নিয়ে সাবিহা যে কাজগুলো করেন তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে, দুই কন্যার জন্য শপিং। আজও দুই কন্যার জন্য একগাদা শপিং করে বাসায় ফিরলেন তিনি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলেন কন্যাদের কাছে। ঘরে ঢুকে দেখেন বড় কন্যা শাবাব দুই হাত মুঠো করে নিজেই নিজের শরীরে মারছে। পাশে বসতে বসতে সাবিহা বললেন, মাইর খেতে ইচ্ছে করলে আমাকে বল। তোদেরকে মারার জন্য আমার হাত সবসময় নিশপিশ করে।

শাবাব হেসে বলল, নিশপিশ করলে মারবে। মার মাইর তো হেলদি ফুড।

হাসলেন সাবিহাও, কি করছিস? জানতে চাইলেন মেয়ের কাছে।

এটা যোগ ব্যায়ামের একটা প্র্যাকটিস মামণি। এর নাম কি ফো ব্যায়াম। দু’হাত হালকা করে মুঠো করে সারা শরীরে চাপড়াতে হয় দু’তিন মিনিট। একদম মাথা থেকে আরম্ভ করে সারা শরীরে করতে হবে এটা। এরফলে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে দেহে শক্তি উৎপন্ন হতে সাহায্য করবে। জবাব দিল শাবাব।

মাথার দুষ্টুমি বুদ্ধি কমানোর কোন যোগ ব্যায়াম নাই? থাকলে সেটার প্র্যাকটিস কর তোরা দু’জন।

দু’জন বলছো কেন মামণি? আমি কি কখনো দুষ্টুমি করি? অভিযোগের স্বরে বললো মাহাম।

শাবাব বলল, দুষ্টুমি একটা আর্ট। চাইলেই সবাই এটা করতে পারে না বুঝলি গাধী। তুই বই পড়ছিলি তাই পড়। পড়তে পড়তে মহিলা বিদ্যাসাগর হয়ে যা। প্যাকেটে কি মামণি? শিপিং করেছো আমাদের জন্য? ইয়া হু…বলে চিৎকার দিয়ে যোগ ব্যায়ামের প্র্যাকটিস ছেড়ে প্যাকেট খোলাতে মন দিলো শাবাব।

মাহামের দিকে তাকালেন সাবিহা। বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে বসে আছে। ফিরেও তাকাচ্ছে না শপিংয়ের দিকে। মনটা খারাপ হয়ে গেলো তার। এত শখ করে শপিং করে কিন্তু মাহাম কখনোই কোন একটা জিনিস আনন্দ নিয়ে দেখে না। অথচ ছোট্ট একটা ক্লীপ দেখেও মহা আনন্দিত হয় শাবাব। একেবারে উত্তরমেরু আর দক্ষিণমেরু তার দুই মেয়ে। মাঝে মাঝে মনেহয় শাবাবের কিছু চঞ্চলতা যদি ঢুকে যেতো মাহামের মধ্যে, বদলে মাহামের প্রশান্ত চিত্তের একটু ছোঁয়া যদি লাগতো শাবাবের গায়ে। একটা ড্রেস নিয়ে মাহামের সামনে ধরে বললেন, দেখ তো মা কেমন হয়েছে এটা?

একবার চোখ বুলিয়ে মাহাম বলল, হুম…সুন্দর। শাবাবকে অনেক মানাবে।

এটা আমি তোর জন্য এনেছি।

ও আচ্ছা! জাযাকিল্লাহ মামণি।

দেখ শাবাব চলেও গেছে ড্রেস চেঞ্জ করতে। তুইও এটা একটু পড়ে আয় না মা! দেখি তোকে কেমন লাগে। আবদারের স্বরে বললেন সাবিহা।

উহু…এখন পারবো না মামণি। ইচ্ছে করছে না। তাছাড়া আল্লাহ তোমার কন্যাদের ব্যাপক রূপবতী করে সৃষ্টি করেছেন। খারাপ লাগার তো কোন কারণ দেখছি না।

মাঝে মাঝে যখন সিরিয়াস মুখ করে দুষ্টুমি মাখা কথা বলে মাহাম ভীষণ ভালো লাগে সাবিহার। কিন্তু সবকিছুর প্রতি মেয়েটার আকর্ষণ হীনতা খুব বিরক্ত করে। রাগ করে উঠে দাঁড়ালেন তিনি। মাকে রাগ করে উঠে যেতে দেখে হার চেপে ধরলো মাহাম। টেনে ধরে আবারো পাশে বসিয়ে বলল, মামণি তোমার উচিত যোগ ব্যায়াম করা। তোমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ যোগ ব্যায়ামের প্র্যাকটিস হলো হওয়াইন বা হুপোনোপোনো।

কি অদ্ভুত নাম। এটা আবার কেমন ব্যায়াম?

মাহাম হেসে বলল, এই প্র্যাকটিসের মূল কথা হচ্ছে চারটি। এক. আমি তোমাকে ভালোবাসি, দুই. আমি দুঃখিত, তিন. তোমাকে ধন্যবাদ, চার. আমাকে ক্ষমা করো। এটা হচ্ছে মন পরিস্কার এবং মনকে শান্ত ও স্বচ্ছ রাখার ব্যায়াম।

সেটা কিভাবে?

ধরো তোমার সাথে কারো খারাপ সম্পর্ক আছে কিংবা কাউকে তুমি সহ্য করতে পারো না। দেখলেই ইচ্ছে করে গলা চাপা দিতে। তখন তোমাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে, তোমার মনের মধ্যে ব্যক্তিটির ছবি কল্পনা করে, তোমার উচ্চ সত্ত্বা থেকে ভালোবাসার ক্ষমতা নামিয়ে এনে ঐ চারটি কথা বারবার বলতে হবে।

বললে কি হবে? আর গলা চাপা দিতে ইচ্ছে করবে না?

হুম…ইচ্ছে করবে না। এই প্র্যাকটিসের ফলে সেই ব্যক্তির প্রতি যদি তোমার ভালোবাসা নাও জন্মে, অন্তত বারবার এমনটি করার ফলে তাকে তুমি ক্ষমা ঠিকই করে দেবে।
কোথায় শিখেছিস এসব ফালতু যোগ ব্যায়াম?

এটা মোটেই ফালতু না মামণি। আমার তো শাবাবের উপর রাগ হলেই এটা করি। নয়তো কবেই আমি গলা চেপে ওকে মেরে ফেলতাম।

হেসে মাহামকে জড়িয়ে ধরে আদর করে সাবিহা বললেন, তুই কি জানিস যে তুই একটা সোনার টুকরা মেয়ে?

মাহাম হেসে বলল, উহু…আমি এমন একটা মেয়ে যার জন্ম হয়েছে অসাধারণ দুজন মানুষের সংমিশ্রণে। আমি প্রাণপণ চেষ্টা করি সেই মানুষ দুজনকে ধারণ করতে আমার মধ্যে। সমুদ্রের টানে নদী যেমন ছুটে চলে ঠিক তেমনি ঐ মানুষ দুজনের পানে ছুটে চলতে চাই আমি। হয়েছে এমন ছলছল চোখে তাকাতে হবে না এখন। দাও তোমার ড্রেস পড়ে আসি।
হেসে মেয়ের হাতে ড্রেস তুলে দিলেন সাবিহা। মাকে আদর করে দিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে রওনা করলো মাহাম।

চলবে….

 

“প্রিয় আহবাব”

“প্রিয় আহবাব”


কামরুন নাহার কণা


মায়ের সালাম আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা নিস বাবা! জানি ভালো আছিস,খুব ভালো! কেউ কি তার রবের কাছে ভালো না থেকে পারে বল? আমিও আছি আলহামদুলিল্লাহ! আমার রবের কোন সিদ্ধান্তের উপর অভিযোগ কিংবা অসন্তুষ্ট হওয়ার দুঃসাহস আমার নেই। আলহামদুলিল্লাহ আ’লা কুল্লি হা’ল!!!!

বাবা জানিস, তোর সাথে আমার অনেক কথা জমা আছে! কবে শুনবি বলতো? কতো কথা, কতো ভালোবাসা, কতো মমতা জমিয়ে রেখেছি বুকের খাঁচায়! কিন্তু তুই মা কে এমন করে ফাঁকি দিয়ে উড়াল দিলি! এতো অভিমান বাবা তোর! কিসের এতো অভিমান সোনা? আমার দিকে একবার তাকালিও না! আমি তোর খুব হতভাগী মা, তাইনা রে!!!

কিকরে ভুলবো সোনা বল! গত বছরের এই দিনগুলোতে তোর প্রতিটা হৃদস্পন্দন অনুভব করেছি! সে যে কি এক পরম সুখ সুবহানআল্লাহ!! দুচোখ দিয়ে যদি তোর নড়াচড়া দেখতে পেতাম না জানি কতোই সুখ পেতাম! জানিস, তুই যখন পেটের মধ্যে খুব বেশি নড়াচড়া করতি, আমি অবাক হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, আর মনে মনে ভাবতাম, দুনিয়াতে আসলে নিশ্চয়ই খুব চঞ্চল হবি! তোর জন্যে নিজের হাতে কাঁথা সেলাই করে রেখেছিলাম! অনেকেই নিষেধ করার পরও শুনিনি! অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও কাঁথাটা সেলাই করে শেষ করেছিলাম। মনেহয়ছিলো তুই যখন প্রথম আমার কোলে আসবি, তোকে এমন একটা উপহার দেয়া দরকার যেটা সারা জীবন স্মৃতি হয়ে থাকবে! অনেক বড় হয়ে গেলেও তুই জানতে পারবি, এটা তোর মায়ের দেয়া জীবনের প্রথম উপহার! তাই এ পাগলামি! অনেক ভালোবাসা আর মমতা লুকানো ছিলো তাতে বাবা! আজ তোর স্পর্শ মাখা, স্মৃতি মাখা একমাত্র বস্তু হিসেবে সেটিই আমার সম্বল হয়ে আছে! পৃথিবীর আর কোন জিনিসে তোর স্পর্শ নেই, সেই কাঁথাটা ছাড়া! যখন তোকে খুব মনেপড়ে, সেই কাঁথাটা বুকের সাথে জড়িয়ে রাখি। যখন ভিতর টা খুব ভারী হয়ে ওঠে, জায়নামাজে বসে সিজদায় অথবা মুনাজাতে তোর সেই কাঁথাটার মাঝে নিরব অশ্রু গুলো ফেলি, মনেহয় এতে হয়তো আমার রবের আমার প্রতি একটু বেশি করুণা হবে! কেন এমন মনেহয় জানিনা।

বাবা জানিস, তোর জন্মের কয়েক মাস আগেই তোর নাম রেখেছিলাম “আহবাব”। যার অর্থ “সবচেয়ে প্রিয়”! বিশ্বাস কর, সেদিন একবারের জন্যে ভুলেও মনে পড়েনি, সবচাইতে প্রিয় জিনিসই রবকে উপহার দিতে হয়! যাক, তবে আমি মোটেও অসন্তুষ্ট নই। আমি জানি আমার রব আমাকে ঠকাবেন না! সবচাইতে কঠিন এই পরীক্ষায় আমি যেন উত্তীর্ণ হতে পারি, তুই শুধু এই দোয়াটা করিস বাবা! হাশরের দিন, তোর আর আমার মাঝে, কোন ব্যবধান যেন না থাকে!

বাবা এ পরীক্ষা টা বড়ো কঠিন! জানিস, আমি ধৈর্য ধরেছি, সব কথা, ব্যথা, অনুভূতি গুলোকেও কবর দিয়ে দিয়েছি তোর সাথে! তবুও এক অসীম শূন্যতা আমাকে যেনো গ্রাস করে নিয়েছে! যেন সমস্ত পৃথিবীটা আমার বুকের মধ্যে দিয়ে দিলেও এশূন্যতা, এ শুষ্কতা, এ রুক্ষতা দূর হবেনা! কি যে পেলাম, আর কি যে হারালাম, সেটাই শুধু খুঁজে পাইনা!
এ শূন্যতা পৃথিবীর কাউকে বুঝাতে পারিনা! দেখাতে পারিনা! এমনকি আমার রবের কাছেও সবটা বলতে পারিনা, যদিও অনেক কিছুই বলতে চাই! তবে জানি, তিনি তো অন্তর্যামী! তিনি সব জানেন! তিনি সব বুঝেন! তিনি যদি আমাকে ধৈর্য্য না দিতেন, আমি কি পারতাম এতো সহজ ভাবে বেঁচে থাকতে? সবটা মেনে নিতে? এতো সহজ ভাবে তোকে বিদায় দিতে কি পারতাম সোনা?

কলিজা আমার! অনেক ভিক্ষা চেয়েছিলাম তোর প্রাণটা! প্রতিটা নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে! কিন্তু আমার রবের সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত! জন্মের পর পরই দশ দিন, দশ রাত তুই NICU তে থাকার পর আর পারছিলাম না! শারীরিক, মানসিক, আর্থিক সবদিক দিয়ে যখন শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছিলাম, সেদিন সব অসহায়ত্ব স্বীকার করে মেনে নিয়েছিলাম, আমার রবের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত! হৃদয়ের সবটুকু মিনতি দিয়ে NICU এর রুমে তোর লাইফ সাপোর্ডের পাশে বসে শেষ বারের মতো দুহাত তুলে প্রভুকে বলেছিলাম- “হে আমার রব! হে জীবন মৃত্যুর চূড়ান্ত ফয়সালাকারী! তোমার নাম রাহমানুর রাহীম! জীবন এবং মৃত্যু তোমার হাতে! আমার এ নাড়ীছেঁড়া ধন, কলিজার টুকরার প্রাণটা তোমার কাছে অনেক ভিক্ষা চেয়েছিলাম! কিন্তু আমি জানিনা, ওর ব্যাপারে তোমার কী ইচ্ছা! যদি তুমি ওর হায়াত লিখে থাকো, তাহলে সম্পূর্ণ সুস্থ করে আমার মানিক কে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও! আর যদি তুমি ওর হায়াত নাই লিখে থাকো……তবে নিয়ে যাও রব! আমার আর কোন আফসোস নেই! আমি বিশ্বাস করি, সাধ্যাতীত কোন বোঝা তুমি আমার ওপর চাপিয়ে দিবেনা!”
আহা! বাবারে….সেদিনই ছিলো তোর জীবনের শেষ দিন!

সেই যে তিনি আমাকে ধৈর্য দিলেন, আমি আজও আর মন ভরে কাঁদতে পারিনা! আমি যেন কান্না ভুলে গেছি। তোকে জীবনের প্রথম এবং শেষবারের মতো কোলে পেলাম! একবার ভাবতে পারিস সেই অনুভুতি টার কথা? আমার নাড়ীছেঁড়া ধনকে ১০দিন ১০ রাত পর প্রথম বারের মতো বুকে পেয়েছি, কোলে নিয়েছি! কিন্তু এটাই জীবনের শেষ নেওয়া! আর কোনদিন তুই আমার বুকে আসবিনা! আর কোনদিন তোকে কোলে নিতে পারবোনা! বুঝতে পারছিলাম না আমার তখন কাঁদা উচিত নাকি হাসা উচিত! সবাই খুব কান্না করছিলো! তোর দাদী, দাদা, নানুভাই, খালামনিরা সবাই খুব কাঁদছিলো! শুধু আমিই একটুও কাঁদতে পারিনি বাবা জানিস! অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে তোকে দেখছিলাম! একটা পলকের জন্যে চোখটা বন্ধ করে তোকে দেখার স্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে চাইনি! তোর পা দুটোকে মনেহচ্ছিলো আমার জান্নাত! তাই চুমো না দিয়ে থাকতে পারিনি!

পরের দিন…. সাদা কাফনে তোকে জড়িয়ে শেষবারের মতো আমার সামনে আনা হলো! বিশ্বাস কর সোনা! আমি তখনো কাঁদতে পারিনি! এতো সুন্দর লাগছিলো তোকে! কি বলে তোকে চির বিদায় দিবো বুঝতে পারছিলাম না! তোর কপালে আর পা দুটোতে চুমু দিয়ে বলেছিলাম…..বাবা, আমি ইচ্ছে করে তোমাকে কোন কষ্ট দিতে চাইনি! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও! তোমার রবের কাছে আমার আর তোমার বাবার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করো! জান্নাতে যেন আমাকে আর তোমার বাবাকে তোমার সাথে মিলিত হওয়ার অনুমতি তিনি দেন! আল্লাহ হাফেজ”।

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-২

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-২


আফরোজা হাসান


ছোটবেলা থেকেই নিজ হাতে মাটির তৈজসপত্র বানানোর শখ সাবিহার। বিয়ের পর তার স্বামী এই শখের কথা জানতে পেরে কোর্স টোর্স করিয়ে একদম মহিলা কুমোর বানিয়ে ফেলেছেন তাকে। সংসার শত কাজের ভিড়ে সামান্য যতটুকু সময় পান নিজ হাতে মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানান সাবিহা। গতকাল একটা ফুলদানী বানিয়েছিলেন। যত্ন করে তাতে রং করতে বসেছেন এখন। ফাইয়াজ সাহেব পাশে এসে বসলে একবার তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে নিজের কাজে মন দিলেন আবার সাবিহা।

কিছুক্ষণ স্ত্রীর কাজ দেখে ফাইয়াজ সাহেব হেসে বললেন, তোমার দুই কন্যা আজ চাকরীর খোঁজে আমার অফিস গিয়েছিলো।

উফফ, আর বলো নাতো তোমার মেয়েদের উদ্ভট কর্মকান্ড।
কি নিয়ে আবার লেগেছে আজ তোমাদের? হাসতে হাসতে জানতে চাইলেন ফাইয়াজ সাহেব।

মানুষের ঘরে দেখি কত সোনার টুকরা একেকটা মেয়ে। আর আল্লাহ আমাকে এই দুইটা কি দিয়েছেন বলো তো! কোন একটা কথা যদি কানে তুলতো এই দুই মেয়ে। যখন যা মন চায় তাই করে। অভিমানী কণ্ঠে বললেন সাবিহা।

স্ত্রীকে কাছে টেনে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলেন ফাইয়াজ সাহেব কিন্তু মেয়েদের চিৎকার শুনে ঘুরে তাকিয়ে দেখলেন বড় মেয়ে শাবাব ছুটতে ছুটতে এদিকেই আসছে আর তাকে পেছন থেকে ধাওয়া করছে ছোট মেয়ে মাহাম।
শাবাব আস্তে এখানে রং, ফুলদানী সব ছড়ানো পড়ে ব্যথা পাবি! কিন্তু মায়ের সতর্কবাণী কানে পৌছার আগেই হুড়মুড় করে সবকিছু নিয়ে পড়লো শাবাব। মেয়েকে ধরে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, ব্যথা পাসনি তো মা?

না বাবা আমি ঠিক আছি। কিন্তু মামণির ফুলদানী তো ভেঙে গেছে। মায়ের দিকে তাকিয়ে নাক মুখ কুঁচকে সরি বললো শাবাব।

সাবিহা বললেন, হয়েছে আর সরি বলতে হবে না। এটা মোটেই নতুন কিছু না। পরশু দিনও দুইটা টব ভেঙেছিস তুই। আর গত সপ্তাহে এত কষ্ট করে একটা ঝাড়বাতি বানালাম আমি সেটাও তুই নষ্ট করেছিস।

শাবাব বলল, ওহো মামণি! ফুলদানী ভাঙা ক্রাইমের কথা হচ্ছে সেটার কথা বলো শুধু। পুরনো ফাইল খুলো নাতো এখন।

দেখেছো? দেখেছো তোমার মেয়ের কথার স্টাইল? ফাজিলের চূড়ান্ত হয়েছে এই মেয়ে।

মেয়েকে কাছে টেনে ফাইয়াজ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, শাবাব খুব বেশি দুষ্টু কথা বলিস তুই মা। কেন ছুটছিলি এভাবে?

মাহাম বলল, দেখো না বাবা শাবাব আমার ডায়েরী নিয়ে এসেছে।

ফাইয়াজ সাহেব তাকালে শাবাব মাহামের হাতে ডায়েরী ফেরত দিয়ে বলল, নে ফেসকুন্নি তোর ডায়েরী। বোনকে ভেংচি কেটে মায়ের দিকে চোখ পড়তেই চিৎকার করে উঠলো মাহাম, মামণি তোমার পায়ে কি হয়েছে?

সাবিহা বললেন, কিচ্ছু হয়নি। রঙ লেগেছে। আর হলেই বা কি? তোদের কি কিছু এসে যায় নাকি তাতে?

মায়ের কাছে বসে হাত দিয়ে রঙ পরিস্কার করতে করতে মাহাম বলল, কি যে বলো না তুমি মামণি! তোমার পা আমাদের কাছে কত স্পেশাল সে কথা যদি জানতে কখনোই এমন কথা বলতে না।

আমার পা স্পেশাল? মামণির প্রশ্ন শুনে পুতুলের মতো মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো মাহাম। সাবিহা বললেন, সেটা কেন শুনি?

শাবাব বলল, কারণ তোমার পদতলে মোদের জান্নাত হে মাতা। মেয়ের জবাব শুনে স্বশব্দে হেসে ফেললেন ফাইয়াজ সাহেব।

মাহাম বলল, বাবা হাসি বন্ধ। এসে তোমার ডিউটি পালন করো।

ফাইয়াজ সাহেব বললেন, আমার আবার কিসের ডিউটি?

কামঅন বাবা এটাও আমাদেরকে বলে দিতে হবে? যে পায়ের নিচে তোমার কন্যাদের জান্নাত সেই পায়ের সেবাযত্ন করা তো তোমার ডিউটি নাকি? তুমি তোমার ডিউটি পালন করো আমরা দুজন যাই। চলো শাবাব।

মেয়েরা চলে যাবার পর ফাইয়াজ সাহেব স্ত্রীর কাছে বসতে গেলে সাবিহা বললেন, খবরদার বলছি! দূরে থাকো তুমিও তোমার মেয়েদের মত আমার কাছে থেকে। বলে তো উঠে ভেতরে রওনা করলেন। ফাইয়াজ সাহেবও হাসতে হাসতে স্ত্রীর পিছু নিলেন।

সিঁড়ির গোঁড়ায় এসে পাশে লাগানো আয়নার সামনে থমকে দাঁড়ালো শাবাব, হাত দিয়ে টেনে ধরলো বোনকেও। মাহাম বলল, আবারো? আচ্ছা রোজ রোজ একই কাজ করতে বিরক্ত লাগে না তোমার?

বাতাসে হাত নেড়ে বোনের কথাকে উড়িয়ে দিয়ে শাবাব আয়নার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলল, হে আয়না বলো তো এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মেয়ে কে? গলা সামান্য ভারী করে নিজেই জবাব দিলো, শাবাব শাবাব শাবাব।

হেসে ফেললো মাহাম। বোনকে টেনে ধরে উপড়ে উঠতে উঠতে বলল, পাগল তুমি বুঝলে। কি যে হবে তোমার আল্লাহ জানেন। শাবাবও হেসে গলা জড়িয়ে ধরলো বোনের।

চলবে

 

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নারী সমাজ

‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে নারী সমাজ


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


গ্রাম-শহর সমানভাবে উন্নত হলেই একটা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। কেবলমাত্র শহরের উন্নয়ন দিয়ে কখনই একটা দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধশালী করা সম্ভব নয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানকার গ্রামীণ অর্থনীতি বেশ শক্তিশালী। আর গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি ভূমিকা পালন করে থাকেন। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের ‘গ্রাম-শহর সমান উন্নতি’ নীতির কারণে এবং অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়ে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, অবদান রাখছেন দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে। যেমন তাদেরই একজন বান্দরবানের বিলাইছড়ির আয়শা খাতুন।
আয়শা খাতুন কয়েক বছর আগে ঢাকা শহরে এসেছিলেন এক বান্ধবী শাহেদার হাত ধরে। ইচ্ছে ছিল গ্রামের গরীব বাবা-মাকে সাহায্য করা। শুরুতে এক গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি নেন। বেতন ছিল সাত হাজার। শুরুতে কারখানায় হেলপারের কাজ করলেও পরে আস্তে আস্তে নিজেই শিখে যান সেলাইয়ের কাজ। এভাবে প্রায় দু’বছর কাজ করার পর বেতন দাঁড়ায় সাড়ে আট হাজার টাকায়। চার হাজার টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে বাকি সাড়ে চার হাজার টাকায় ঢাকায় থাকা-খাওয়া খুব কষ্ট হয়ে যেত আয়শার। সিদ্ধান্ত নেন বাড়ি ফিরে যাবেন।
বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার বিলাইছড়িতে তার গ্রাম। সেখানে ফিরে প্রথমে এক এনজিও’র সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নেন কাপড় কাটার। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন কিনে ঘরের মধ্যে নিজেই শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। প্রথমে খরিদ্দার পেতে কিছুটা কষ্ট হলেও আস্তে আস্তে সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আয়শাকে।
নিজের বিয়ের সব খরচ নিজেই বহন করেছে আয়শা। এক সময় বিয়ে করেন। বিয়ের আগে নিজের জমানো টাকা দিয়ে ছোট ভাইকে কিনে দিয়েছে দু’টি ব্যাটারী-চালিত রিকশা।
আয়শার মতো অনেক নারীই এখন শহর ছেড়ে চলে ফিরে যাচ্ছে নিজের গ্রামে। সেখানে গিয়ে তারা চেষ্টা করছেন কিছু না কিছু অর্থ উপার্জন করে সাবলম্বী হতে। ফলে গ্রামে বাড়ছে নারীদের শ্রমশক্তি। এরফলে চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিও।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যে বলা হয়েছে, এখন দেশের মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। ১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রমে নারীর অবস্থান ছিল শহরে ২০ দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রামে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এ হার শহরেই বেশি ছিল। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালে গ্রামে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশে। অন্যদিকে, শহরে কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ। গ্রামের শ্রমশক্তিতে যুক্ত নারীদের ৬০ শতাংশই আছেন কৃষি খাতে।
বিবিএসের ২০১৫-১৬ সালের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, মোট শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি ৪৯ দশমিক ৮ শতাংশ। খুলনায় ৪২ দশমিক ২ শতাংশ। রংপুরে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। চট্টগ্রামে ৩৪ শতাংশ, ঢাকায় ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ, বরিশালে ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ এবং সিলেটে সবচেয়ে কম ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
আয়শা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নারীদের উন্নয়নের জন্য অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ নারীই সে সব সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। যদি তারা একটু সচেতন হন, তবে অনেক সুযোগ-সুবিধাই রয়েছে যাতে করে নারীরা ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারে এবং সাবলম্বী হতে পারেন।
নারী অধিকার বিষয়ক আন্দোলন কর্মী মারিয়া সরকার বলেন, আগে নারীরা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য গ্রাম থেকে শহরে চলে আসত। এর মূল কারন ছিল গার্মেন্টস শিল্প। মূলত নারীরা শহরেই আসত এসব পোশাক কারখানায় চাকরি করে নিজের খরচ চালানোর জন্য। আর এসব কারখানায় কাজ করা নারীদের অধিকাংশের বাড়ি উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে। কারণ এসব এলাকায় দারিদ্র্যের হার অন্যান্য এলাকার চেয়ে কিছুটা বেশি ছিল।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব এলাকার চিত্র অনেকটা পাল্টে গেছে। কারণ এই সরকার নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। পাশাপাশি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করতে চায় এই সরকার। এজন্য নেয়া হয়েছে বেশ কিছু উদ্যোগ। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে একটি বাড়ী, একটি খামার প্রকল্পটি।
অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. সেকান্দার ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের একটি বাড়ী, একটি খামার প্রকল্পে আগ্রহী হয়ে এখন অধিকাংশ বাড়ীতেই গড়ে উঠেছে খামার। আর এসব খামারে হাঁস, মুরগী, ছাগল, ভেড়া এবং গরু পালনের পাশাপাশি অনেক শাক-স্বব্জির চাষ অথবা পুকুরে মাছ চাষ করছেন। আর এসব করছেন বাড়ীর মেয়েরাই বেশি। আর এরফলে নারীরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছেন আবার গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে।

সুত্রঃ বাসস।

 

বই রিভিউঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়

বইঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়


 রিভিউ লেখকঃ রায়হান উদ্দিন মিলন


আচ্ছা বলুন তো, এখন আমার মন কি বলছে? মনোবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে সাধারন মানুষের কাছ থেকে এই প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়েছে। আমি তখন মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে তাদের কিছু ধারণা দিতাম। যদি বন্ধুরা প্রশ্নটি করতো তাদের মজা করে উত্তর দিতাম।

আমি পাঠশালার একজন নিরব পাঠক। পাঠশালায় মাঝে মাঝে অনেকে মনোবিজ্ঞান বিষয়ক বই সম্পর্কে জানতে চায়। তাই আজ একটু জানানোর চেষ্টা করেই দেখি।

জীবন চলার পথে আমাদের অনেক কাজ বা পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। কিছু কাজ সহজ আর কিছু কাজ কঠিন। এই কঠিন কাজ মোকাবিলা করতে গিয়ে কেউ কেউ দিশেহারা হয়ে পড়ে, কি করবে বুঝতে পারে না আর তখন ই শুরু হয় মানসিক চাপ। এই মানসিক চাপ অনেকাংশে নির্ভর করে, আমাদের চাওয়া ও পাওয়ার অসামঞ্জস্যতা এবং তা সঠিক ভাবে মূল্যায়ন করতে না পারার কারনে। আর এই না পাওয়ার বেদনা মননে তৈরি করে মানসিক চাপ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক মনোবিজ্ঞানী আজহারুল ইসলাম স্যার তার “মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায় “ বইতে মূলত মানসিক চাপ, তার উৎপত্তি ,শারীরিক ও মানসিক প্রভাব এবং তার মোকাবিলার কৌশলগুলো সহজভাবে তুলে ধরেছেন। মানসিক স্বাস্থ্যের অনেকগুলো দিক রয়েছে তার মধ্যে মানসিক চাপ অন্যতম। যা একজন ব্যক্তির জীবনে অহরহ ঘটে থাকে। তা হতে পারে- পরীক্ষা নিয়ে চিন্তা,চাকুরির চিন্তা, অন্তরঙ্গ সম্পর্কের বিচ্ছেদ ইত্যাদি। মানসিক চাপের প্রভাবে অনেকে শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে যায় এবং তা আচরনে প্রভাব ফেলে।

চিন্তার ভ্রান্তি বা বিভ্রাট, অযোক্তিক বা অবাস্তব বিশ্বাস, দক্ষতার ঘাটতি,সক্ষমতার অভাব, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা, আকস্মিক দুর্ঘটনা,অতিরিক্ত কাজের বোঝা,চাকরির ধরন ইত্যাদি মানসিক চাপের উৎপত্তির কারন হিসেবে বিবেচিত । লেখক এই বইতে বলেছেন যে, মানসিক চাপের প্রভাব নির্ভর করছে পরিস্থিতির বা ঘটনার মূল্যায়নের উপর। গবেষণায় দেখা গেছে , যারা চাপের প্রভাব কে অনেক ক্ষতিকর হিসেবে ধরে নিয়েছে,তাদের আসলেই অনেক ক্ষতি হয়েছে। আর যারা চাপকে ক্ষতিকর না ভেবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার অংশ হিসেবে নিয়েছে, তাদের উপর চাপের প্রভাব কমই পড়েছে। তবে এই মানসিক চাপ যে সব সময় খারাপ তা কিন্তু না।কারন মানসিক চাপ না থাকলে আপনি পরীক্ষার আগে পড়ার আগ্রহ বোধ ই করতেন না। মনের বিজ্ঞান বলে, অতীত ও ভবিষ্যৎ থেকে আপনি যদি বর্তমানকে বেশি প্রাধান্য দেন ,তাহলে আপনি বেশি সুখি ও কর্মদীপ্ত ।

মানসিক চাপ মোকাবিলার জন্য শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিনটি ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানসম্মত কৌশলগুলো বিস্তারিত বলা আছে। শারীরিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা ও শারীরিক ব্যায়ামের কথ বলা হয়েছে, যা শরীরের পেশিগুলোকে শিথিল করে আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে। মানসিক ও সামাজিক ব্যবস্থাপনার কৌশলগুলো পড়ে মনে হতে পারে, আপনি নিজের সম্পর্কে পড়ছেন বা সমাজের মানুষের সাথে ভাবের আদান -প্রদান করছেন।

বর্তমান ইন্টারনেট যুগে মানুষের ইন্টারনেট কেন্দ্রিক আলাদা একটা জগৎ বিদ্যমান। এর প্রভাব ও ব্যবস্থাপনার নিয়ে আলাদা একটা অধ্যায় আছে এই বইটিতে। যা কারো মধ্যে বিদ্যমান রিয়েল সেলফ(আপনি যা)/বাস্তবের আপনি ও আইডিয়েল সেলফ(আপনি যা হতে চান)/ ইন্টারনেটের আপনি সম্পর্কে ধারনা দিবে। সবশেষে মানসিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য আমরা কাদের সাহায্য নিবো তার বর্ণনা দিয়ে বইটির ইতি টানা হয়েছে।

সর্বোপরি বইটি পড়ে আপনার মনের গলিপথে হেটে আসতে পারবেন । যা নিজেকে নিজের সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিবে হয়তো।

…………………………………………………………

বইঃ মনোসন্ধিঃ মানসিক চাপ মোকাবিলার সহজ উপায়

লেখকঃ আজহারুল ইসলাম

রিভিউ লেখকঃ রায়হান উদ্দিন মিলন

প্রকাশকঃ আদর্শ

পৃষ্ঠাঃ ৯৬

মূল্যঃ ২০০ টাকা

 

অটিজম শিশুর খাদ্য নিয়ে

অটিজম শিশুর খাদ্য নিয়ে


নিউট্রিশনিস্ট সুমাইয়া সিরাজী


সব বিশেষ শিশু দের মধ্যে অটিজম সমস্যা সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। অটিজম এর বৈশিষ্ট্য গুলো কারো প্রকট থাকে কারো প্রচ্ছন্ন থাকে! আবার একি রকম বৈশিষ্ট্য গুলো সবার মধ্যে থাকে না সবাই একক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন হয় তবে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যে আবার মিলও থাকে।
মনে রাখবেন পৃথিবীতে যদি এক লক্ষ মানুষ থাকে তবে এই লক্ষ মানুষের চাহিদা, ধরন, সমস্যাও এক লক্ষ রকমের হবে । একেক মানুষ একেক সত্তা! এই অটিস্টিক শিশুর বেলা তেও এর ব্যতিক্রম নয়। সবার খাবারের ধরণ ও চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হবে । খাবার এর পছন্দের তালিকাও ভিন্ন হবে ।
যখন প্রথম অটিজম আক্রান্ত শিশুর খাবার নিয়ে আলোচনা আসলো গবেষণা হলো তখন দেখা গেলো যে , যে সকল খাবারে অক্সালিক এসিড , গ্লুটেন , ক্যাসিন আছে ঐ ধরনের খাবার খেলে এসব শিশুর অস্থিরতা জনিত সমস্যা বাড়ছে। এছাড়াও ফাস্টফুড জাঙ্ক ফুড এগুলা প্রতিদিন খেলে তাদের মধ্যে আচরণগত সমস্যা বাড়ছে।
বাংলাদেশে এটা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বেশি দিন হয়নি কিন্তু এটা নিয়ে গবেষণা এখনো চলমান!
গুগলের কল্যাণে আমরা যেমন অনেক ভালো কিছু শিখি আবার অনেক ভুল ধারণা নিয়ে থাকি। গ্লুটেন , ক্যাসিন, অক্সালিক এসিড খাবারে থাকলে খারাপ তাই সব বন্ধ বলে দেয়া হয়! কিন্তু সব অটিস্টক শিশুর এই সব উপাদান থাকা খাবারে সমস্যা নাও হতে পারে! কারো দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে সমস্যা কারো শুধু বাদামে কারো আবার রুটি তে, কোন শিশুর আবার দুধ ও ডিমে!

আমার দীর্ঘ চার বছরের অভিজ্ঞতা বলছি আমি এমনো অটিস্টিক শিশু পেয়েছি যার শুধু ভাত এ সমস্যা অর্থাৎ রাইস ও রাইস দিয়ে তৈরি খাবারে! অন্য কোন খাবারে সমস্যা নাই!!! শিশু টির ভাতে ফুড সেনসিটিভিটি ছিলো ৫+ অর্থাৎ সর্বোচ্চ!!! আর বাদামে ছিলো ৪+!!! এখন আপনি কিভাবে নির্ধারন করবে আপনি আপনার শিশু কে গুগল থেকে জেনে সঠিক খাবার দিচ্ছেন???
এই শিশু টির বাবা মা সিঙ্গাপুর থেকে এই টেস্ট গুলো করে এনেছেন । ওনার সামর্থ্য ছিলো কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই সামর্থ আমাদের সবার নাই!
তাহলে উপায় কি???
হা অবশ্যই উপায় আছে!

১.আপনি আপনার অটিস্টিক শিশু টির খাবারের ব্যাপারে আরেকটু সচেতন হতে পারেন! ফাস্টফুড এড়িয়ে নরমাল খাবার দিয়ে দেখুন তার সমস্যা গুলো কমে কিনা!
২!. আপনার শিশু কে সপ্তাহে ২ দিন দুধ খেতে দিন আর ঐ ২ দিন তাকে পর্যবেক্ষণ করুন কোন সমস্যা হচ্ছে নাকি সব ঠিক আছে!
৩. একটা ডায়েরি মেইনটেইন করুন যেদিন খুব বেশি অস্থির হয়ে যায় ঐ দিন নতুন কোন খাবারে সে খেয়েছে কিনা বা বেশি কোন খাবার খেলো কিনা দেখুন আর লিখে রাখুন! এভাবে প্রতি মাসে তাকে ফলো আপ এ রাখুন।

৪. একটা গোটা ডিম তাকে ১ দিন পর পর দিয়ে দেখুন তার আচরণ ঠিক আছে কিনা থাকলে প্রতিদিন খেতে দিন।

৫. চকলেট ,চিপস, ডীপ ফ্রাই খাবার এড়িয়ে চলুন। সয়াসস দেয়া খাবার , টেস্টিং সল্ট দেয়া খাবার, ইস্ট আছে এমন খাবার এসব শিশুর অস্থিরতা বাড়ানোর অন্যতম কারণ!

৬. শিশুর শরীরে সীসা , ক্রোমিয়াম, ল্যাকটেট এসিড, ম্যাগনেসিয়াম এর মাত্রা কতটুকু এগুলো একবার টেস্ট করাতে পারেন। এগুলোর সাথেও শিশুর অস্থিরতা ও আচরণের সম্পর্ক আছে। আইসিডিডিআরবি ( Icddrb) তে অথবা ঢাকা সিএমএইচে এও এই টেস্ট করাতে পারেন!!
৭. আটা দিয়ে তৈরি খাবার অল্প দিয়ে চালের তৈরি খাবার দিতে পারেন ‌। যেমন চালের রুটি, পিঠা , চালের পায়েস । আবার আরেক দিন রুটি দিয়ে দেখুন দুই দিনের পার্থক্য!!
৮. একজন বিশেষজ্ঞ ডায়াটেশিয়ান এর কাছে পরামর্শ নিতে পারেন। শিশুটির জন্য তার উপযোগী খাদ্য তালিকা করে
দিবে ।
৯ . আশে পাশের মানুষের কথায় না জেনে কোন খাবার দেয়া বন্ধ করবেন না! আপনার শিশুর খাবার সম্পর্কিত সমস্যা গুলো একজন অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ান কে জানান। আপনি নিশ্চয়ই হার্টের সমস্যা হলে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাবেন না!!

মনে রাখবেন আপনার শিশু টি হয়তো বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যা তাকে অন্য সবার থেকে ভিন্নতা দিয়েছে! কিন্তু সেও আপনার আর আমার মতো একজন মানুষ ‌। তাই তাকেও অন্য শিশুর মতো করেই দেখুন যেভাবে আপনি আপনার অন্য সন্তান কে দেখেন !!!

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেল প্রথম নারী ভিসি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পেল প্রথম নারী ভিসি


নারী সংবাদ


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী ভিসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব পালন করে আসা বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রোভিসি ড. শিরীন আখতার ভিসি পদে নিয়োগ পেয়েছেন।

রোববার রাষ্ট্রপতির এক আদেশে তাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সিনিয়র সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা গেছে।

এতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ এর ১২ (২) ধারা অনুযায়ী ড. শিরীন আখতারকে প্রোভিসি পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানপূর্বক ভিসি পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ১৫ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হলে এক আদেশে ড. শিরীন আখতার অস্থায়ীভাবে ভিসির দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

অধ্যাপক ড. শিরীন আখতার ১৯৭৩ সালে কক্সবাজার সরকারি গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম গার্লস কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮১ সালে স্নাতকোত্তর পাস করেন। ১৯৯১ সালে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৯৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৬ সালে শিরীন আখতার অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
সূত্র : ইউএনবি

 

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১

সমুদ্রের টানে নদীর ছুটে চলা-১


আফরোজা হাসান


অফিসের কাজ শেষ করে কেবিন থেকে বেড়িয়ে দুই কন্যাকে ওয়েটিংরুমে বসে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন ফাইয়াজ সাহেব। কন্যাদ্বয়ের দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলেন একসাথে দুইজনের আগমনের হেতু। স্বভাব স্বরূপ একজনের হাতে বই, অন্যজনের হাতে মোবাইল। একজনের মুখ প্রশান্ত আরেকজনের চেহারা জুড়ে খেলা করছে দুষ্টুমি। দেখে অবশ্য মনেহচ্ছে না আজ নতুন কোন ঝগড়া নিয়ে হাজির হয়েছে দুজন।

হাসি ফুটে উঠলো ফাইয়াজ সাহেবের মুখে। সপ্তাহে কম করে হলেও একদিন তাঁর দুই কন্যা অফিসে হানা দেয়। এবং বেশির ভাগ সময়ই দুজন ঝগড়া করতে করতে ঢোকে। পুরো অফিস জুড়ে সেদিন বইতে থাকে আনন্দধারা। স্টাফদের সবার ঠোঁটের কোণেও খেলা করে হাসি। ছোটবেলাতেও নিয়মিত অফিসে আসতো তাঁর দুই কন্যা। নিজ নিজ মহিমায় স্টাফদের সবার মনেও একটু করে জায়গা দখল করে নিয়েছিল দুই কন্যা সেই ছোটবেলাতেই।

এরপর থেকে রাজশাহীর আম, বগুড়ার দই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা আর কোনদিন কিনে খেতে হয় না ফাইয়াজ সাহেবকে। স্টাফদের যার দেশের বাড়ি যেখানে সে সেই স্থানের বিখ্যাত জিনিস নিয়ে হাজির হয় মামণিদের জন্য। অবশ্য ফাইয়াজ সাহেবের দুই কন্যাও কম যায় না এই ব্যাপারে। প্রায়ই বাসা থেকে স্টাফদের সবার জন্য খাবার নিয়ে আসে স্টাফদের সবার জন্য। পর্দার দিকে পরিপূর্ণ খেয়াল রেখে স্টাফদের সবার পরিবারের খোঁজ-খবর রাখা, পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করা ইত্যাদি কাজগুলো খুব আনন্দ নিয়ে করে দুই বোন।

ভীষণ ভালো লাগে তখন ফাইয়াজ সাহেবের। তিনি নিজেও সবসময় স্টাফদের খোঁজ-খবর রাখতে চেষ্টা করেন। মেয়েরা যখন থেকে অফিসে আসা শুরু করেছে একটা দায়িত্ব নেমে গিয়েছে কাঁধ থেকে এমনটা অনুভব করেন। অদ্ভুত এক প্রশান্তি খেলা করে মন জুড়ে। সন্তানরা বড় হয়ে যখন তাদের কাজের দ্বারা পিতার মনে এই ভরসা তৈরি করে ‘আমরা আছি পাশে’ তখন মনেহয় এমনতর প্রশান্তির আবহ সৃষ্টি হয় মনে।
সমস্যা শুধু একটাই দিনের মধ্যে একাধিক বার দুজন চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তোলে। দুজনের পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-মন্দলাগা একদম আলাদা বলেই হয়তো এমনটা হয়। তবে ফাইয়াজ সাহেব খুব উপভোগ করেন দুই কন্যার ঝগড়াঝাটি। একজনের কথা জ্ঞান মিশ্রিত, অন্যজনের শব্দরাও মনেহয় যেন খুনসুটি করছে। এই মেয়ে দুটাকে জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনেহয় ফাইয়াজ সাহেবের।
হাসিমুখে মেয়েদের কাছে এগিয়ে গেলেন। বাবাকে দেখে শাবাব এবং মাহাম উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে সালাম দিলো।
সালামের জবাব দিয়ে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, কিরে মা তোরা কখন এসেছিস?

এই নাও আমাদের সিভি! বলে বাবার হাতে সিভি ধরিয়ে দিলো শাবাব।

অবাক কণ্ঠে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, সিভি দিয়ে কি করবো?

আমরা দুজন ঠিক করেছি জব করবো তোমার অফিসে। সিরিয়াস কণ্ঠে বললো মাহাম।

হাসতে হাসতে দুহাতে দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে ফাইয়াজ সাহেব বললেন, কি আজ আবার ঝগড়া হয়েছে মামণির সাথে? আবার কি করেছিস তোরা দুজন?

শাবাব বলল, কিছুই করিনি আমরা বাবা। তোমার বৌ খালি খালি চিৎকার করে। আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছো বৌকে। স্বৈরাচারী মহিলা।

মাহামও মাথা ঝাঁকিয়ে বড় বোনের সাথে সহমত পোষণ করে বলল, তো কাল থেকে জয়েন করছি আমরা।

শাবাব বলল, প্রতিদিন বিকেলে তিনঘণ্টা কাজ করবো আমরা। বেশি না মাত্র ত্রিশ হাজার বেতনেই এই কাজ করে দেবো আমরা।

দুই মেয়ের সিরিয়াস ভাব দেখে ফাইয়াজ সাহেবও হাসি গোপন করে বললেন, আরে এটা কেমন কথা হলো? অফিসের তো কিছু রুল আছে চাকরি করতে হলে সেসব মানতে হবে। সবার আগে ইন্টারভিউ দিতে হবে।

অবাক কণ্ঠে শাবাব বলল, ছিঃ বাবা! তুমি আমাদের ইন্টারভিউ নেবে? বাবা হয়ে মেয়েদের ইন্টারভিউ?

মেয়েরা যদি বাবার অফিসে কাজ করার বদলে বেতন চাইতে পারে, বাবা মেয়েদের ইন্টারভিউ নিতে পারবে না কেন? তাছাড়া আমি প্রফেশন আর রিলেশন মিক্সআপ করার পক্ষপাতী নই। কেননা এতে সম্পর্ক তার নিজস্ব গতিপথে চলতে বাঁধাগ্রস্ত হয়।

ঠিকআছে দিলাম নাহয় ইন্টারভিউ। আপনার অফিসে ইতিহাস হয়ে থাকবে এই ইন্টারভিউ মনে রাখবেন। এই মাহাম চল। বোনের হাত ধরে হাঁটা ধরলো শাবাব।

ফাইয়াজ সাহেব হেসে বলল, চলেন পৌছে দেই আপনাদেরকে।

জ্বীনা। আমরা বসদের কাছ থেকে লিফট নেই না। বলার জন্য শুকরিয়া।

অফিস থেকে বেড়িয়ে যেতে থাকা দুই কন্যার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আনন্দাশ্রুতে চোখ ভরে গেলো ফাইয়াজ সাহেবের। সত্যিই জীবনের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছে তাঁর দুই কন্যা। ছোট্ট ছোট্ট হাতের ছোঁয়ায় জীবনের একটি অধ্যায় রচনার স্বপ্ন দুচোখ নিয়ে তিনিও রওনা হলেন মেয়েদের পেছনে।

চলবে

 

নারীর কাজের পরিধি বেড়েছে

নারীর কাজের পরিধি বেড়েছে


নারী সংবাদ


রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী থানার গোগ্রাম গ্রামের এক ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি সাঁওতাল পরিবারের সদস্য মিনুরা। তাঁর স্বামীর নাম শ্রী মানিক ও পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫ জন। কৃষিনির্ভর এ পরিবারটির আয়ের উৎস তিন বিঘা বর্গা জমি। এছাড়া বাড়ির পাশে তাদের নিজস্ব একটি ডোবা আছে। ডোবাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকত। দীর্ঘদিন থেকেই নিজের পরিবারের জন্য মিনুরার কিছু করার ইচ্ছা ছিল। মিনুরার আগ্রহ ও ইচ্ছায় একটি এনজিও এর সহযোগিতা ও পরামর্শে ডোবায় কার্পজাতীয় মাছের ২ কেজি ধানী পোনা ছেড়ে দেয়। মিনুরার প্রত্যক্ষ ব্যবস্থাপনায় দেড় মাস পোনা পালন করে আঙ্গুলী পোনা তৈরি করে। দেড় মাস পর এ পোনা বিক্রি করে সে ৫ হাজার টাকা লাভ করে। ২ কেজি ধানী পোনার বাজারমূল্য ছিল ৮শ’ টাকা। খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ২শ’ টাকা। এনজিওর সহযোগিতায় বিনামূল্যে ধানী পোনা ও মাছের খাবার না পেলেও তার লাভ হত ৪ হাজার টাকা।
শুধু মিনুরা নয়, এখন শহরের মতো গ্রামীণ নারীরাও নানা ধরণের উর্পাজনের প্রতি ঝুঁকেছে।
নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের সামাজিক ওপারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে ও অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের উপর তাদের নির্ভরশীলতা কমেছে। গ্রামের নারীরা বাড়ির নিকটবর্তী পুকুর , ধানক্ষেত ও বড় পুকুরে খাঁচায় অনায়াসেই মাছ চাষ করছে।
কয়েক বছর যাবত নারী শুধু গার্মেন্টস সেক্টর নয়, কৃষিখাত, সূচিশিল্প, মৎস্যচাষ ও চিংড়ি রপ্তানীর কাজেও তাদের সমপৃক্ততা বাড়িয়েছে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলে, শহরের চেয়ে গ্রামে নারী কর্মজীবির সংখ্যা বেশি। নিজ পরিবারেও ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর শ্রম পুরুষের তুলনায় বেশি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরে‌্যর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ সালের পরিসংখ্যানে জানা যায়, বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। রংপুরে এ হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ।
গ্রামে জনশক্তিতে যুক্ত নারীদের শতকরা ৬০ ভাগ ই শ্রম দিচ্ছে কৃষিতে। আর শহরে গার্মেন্টেসে। ব্যুরো আরো জানায়, সবশেষে ২০১৫ -২০১৭ সালে গ্রামে নারীর কাজের হার বেড়েছে। গ্রামে শতকরা ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমজীবি হিসেবে রয়েছে। শহরে কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ।
এদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) জানায়, পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল শতকরা ৬৪ ভাগ এখন তা কমে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রমে নারীর অবস্থান ছিল শহরে ২০দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রামে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত শহরে এ হার বেশি ছিল।
গাজীপুরের গাছা গ্রামের মেয়ে সামিনা। তার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সে। এখন বয়স ছাব্বিশ বছর। বিয়ের পর থেকেই সে দিনে সতেরো ঘন্টা কাজ করে। তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাতজন। এ সাতজনের খাওয়া দাওয়াসহ সেবা,সবকিছুর দায়িত্ব তার ওপরে। সামিনা আরো জানায় ভোর পাঁচটায় ফজরের আজানের পর থেকেই তার দিন শুরু হয়। শেষ হয় রাত দশটায়।রান্নাবান্না, পশু পালন, পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানো, দুই শিশু সন্তানকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসা ও বিকেলে আনা সব রকমের কাজ তার করতে হয়। সামিনা ঊঠানে শাক সবজিও লাগায়। তার লাগানো মরিচ দিয়েই সংসারের প্রয়োজন মেটে। এছাড়া বেগুন শাক তো রয়েছেই।
অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, গ্রামে কাজে নারীর অংশগ্রহন বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক। তা নারীর ক্ষমতায়নে প্রভাব ফেলবে।
সাভারের ষোলমাসী গ্রামের হাফিজা বেগমের তিনটি গরু। ৪০ বয়সী হাফিজা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরুগুলো কিনেছে। এদিকে মহিলা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচি যেমন সেলাই মেশিন ক্রয়, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মৎস্য চাষ, নার্সারী ইত্যাদি বিষয়ে ঋণ দেয়। মহিলা অধিদপ্তরের ৬৪টি জেলার ৪৭৩টি উপজেলায় ক্ষুদ্র কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন সংস্থা জানানয়, ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র ঋন গ্রহনকারী হচ্ছেন নারী। ঋণের ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনে, পশুর খামার ও হাঁস-মুরগি পলনে টাকা ব্যয় করেন। খামারে যুক্ত আছেন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ফসল উৎপাদনে ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ। খুলনায় রপ্তানীমুখী চিংড়ি খাতেও নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
রংপুরের গাইবান্ধার বাসিন্দা সুরাইয়া (৩০) জানান, একসময়ে খুব অভাবে ছিলেন, এখন সূচিকর্ম করে মাসে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করেন। বিশেষ করে ,তারা টুপি সেলাই করেন। তাদের তৈরি টুপি মধ্যপ্রাচ্যেও যায়।

সুত্রঃ বাসস।