banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার

গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজ লিখতে চাই গর্ভকালীন কিছু কমন সমস্যা এবং তার প্রতিকার নিয়ে। এটা আসলে সবার জানা প্রয়োজন।
‘প্রেগনেন্সি’ বিষয়টা আমার কাছে মিরাকিউলাস লাগে। একটা দেহে দুটো প্রাণ। একসাথে নির্ভর করছে দুটো সত্ত্বার ভালো থাকা-মন্দ থাকা, সুস্থতা-অসুস্থতা–মায়ের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে সন্তানের বাঁচা-মরা। প্রেগনেন্সিতে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে হরমোনের বেশ তারতম্য ঘটে, শারীরিক গঠনের কিছু পরিবর্তন হয়–তাই মায়ের কিছু কিছু শারীরিক সমস্যা নতুন করে দেখা দেয় বা বেড়ে যায়। দেখা যায় যে, ডেলিভারি হয়ে যাবার পরপর সে সমস্যাগুলোও চলে যায়। এগুলোর বেশিরভাগই ফিজিওলজিক্যাল বা স্বাভাবিক। প্রেগনেন্সি ইস্যুটা যেহেতু সবার কাছে খুব সেন্সিটিভ তাই অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এসব সমস্যায়। আসলে খুব বেশি আতঙ্কগ্রস্ত হবার কিছু নেই। জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন নিয়ে এলে, কিছু পরামর্শ মেনে চললে যার অধিকাংশই প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা যায়। একেবারেই কমন কিছু সমস্যার সমাধান নিয়ে লেখার চেষ্টা করছি। আমার মনে হয় বিষয়গুলো সবারই জানা থাকা প্রয়োজন।

১. বমিবমি ভাব এবং বমি
দেখা যায় যে প্রতি ১০০ জন গর্ভবতীর প্রায় ৭৫ জনেরই এ সমস্যাটা দেখা দেয়। সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরপরই এ সমস্যা হয়।
-সকালে ঘুম থেকে উঠেই, বলা হয়ে থাকে বিছানাতেই শুকনো খাবার যেমন : টোস্ট, বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খেতে।
-প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেতে বলা হয়।
-অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হয়।
-একবারে বেশি খাবার না খেয়ে অল্প অল্প করে বারবার খান।

২. কোমর ব্যথা 
প্রতি ১০০ জনের প্রায় ৫০ জনেরই এ সমস্যা দেখা দেয়।
-অনেক বেশি ওজন বাড়িয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
-পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে, মোট দশ ঘণ্টা।
-পা কিছুটা উঁচুতে রেখে যেমন : পায়ের নিচে একটা বা দুটো বালিশ রেখে বিশ্রাম নিন।
-শক্ত বিছানায় শোয়া ভালো।
-উঁচু হিলযুক্ত জুতো পরা যাবে না।
– কুঁজো হয়ে বসা বা কোনো জিনিস নিচ থেকে তোলা পরিহার করা শ্রেয়।
– দাঁড়ানোর সময় সোজা হয়ে দাঁড়াবেন।
– ভারী এবং পরিশ্রমের কাজ করবেন না।
– কোমরে ম্যাসাজ করতে পারেন।
– গরম বা ঠাণ্ডা কিছু দিয়ে সেঁক দিতে পারেন।

৩. কোষ্ঠকাঠিন্য
-প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।
– আঁশজাতীয় খাবার যেমন : শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল বেশি করে খেতে হবে।
-ইসপগুলের ভূষি খাওয়া যেতে পারে।
– চাপ এলে টয়লেটে যেতে বিলম্ব করা যাবে না।
– কিছুটা হাঁটাচলার অভ্যেস করা ভালো, দিনে ২০-৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৩ দিন হাঁটা যেতে পারে।

৪. পায়ে খিল ধরা
-পায়ে ম্যাসাজ করতে হবে।
– গরম সেঁক দিলে উপকার পাওয়া যায়।
-চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন বি-ওয়ান সেবন করা যেতে পারে।

৫. পায়ে পানি আসা/ পা ফোলা 
-বিশ্রাম নিন এবং পা দুটো একটা বা দুটো বালিশের ওপর রাখুন।
– একটানা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না।
-আরামদায়ক জুতো পরুন।
– বেশি করে পানি পান করুন।

৬. বুক জ্বালাপোড়া, এসিডিটি 
-একসাথে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলা পরিহার করতে হবে।
– খাবার পরপরই বিছানায় শুতে চলে যাওয়া যাবে না।
– বিছানায় যাবার অনেকক্ষণ আগেই খাবার খেয়ে ফেলুন।
– উঁচু বালিশে শুলে আরাম পাওয়া যায়।
– এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।

৭. পায়ে আঁকাবাঁকা শিরা, পাইলস 
-পায়ে আঁকাবাঁকা শিরার জন্যে ক্রেপ ব্যান্ডেজ ব্যবহার এবং বিশ্রামের সময় পা উঁচু করে রাখতে বলা হয়।
-পাইলসের জন্যে নিয়মিত টয়লেট সারা জরুরি; কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। টয়লেট সারার সময় বেশি চাপ দেওয়া যাবে না। বাম কাত হয়ে শোয়া ভালো। গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।

৮. সাদা স্রাব যাওয়া 
-ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এর প্রধান চিকিৎসা।
-নরম সূতি আন্ডারগার্মেন্টস ব্যবহার করা ভালো।
তবে সবকথার শেষকথা হচ্ছে প্রতিজন গর্ভবতী নারীরই নিয়মিতভাবে চিকিৎসকের কাছে ভিজিটে যেতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে এবং তার প্রেস্ক্রাইব করা ওষুধপত্র নিয়মিত খেতে হবে।

 

স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ

স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ


সুমাইয়া তাসনিম


আমার কাছে শেষ বলে আসলে কিছু নেই। যতদিন মানুষ বেঁচে থাকে ততদিন তার জীবনের কোনো গল্পের কোনো অধ্যায়ই একেবারে শেষ হয়না। তবু দিন শেষে কিছু কিছু চেনাপথ শত অভ্যস্ততা মুছে রোজকার রুটিন থেকে বাদ পড়ে যায়। কেবল স্মৃতিটুকু নিস্তরঙ্গ পুকুরে অবসন্ন দুপুরে টুপ করে ঝরে পড়া পাতার মত হাল্কা ঢেউ তোলে মাঝেমাঝে। এক বছর বেশি সময় লাগার পরও শেষ ক্লাস পাঁচ বছরের সময়টাকে যেন একটা মালায় গেঁথে ফেললো। যেন একটা পুতির মালা গাঁথা অবশেষে শেষ হলো। আর একটি দিনও বাকি নেই ক্লাসের। আর একটি পুতিও হাতে নেই গাঁথবার।

কাল শেষ ক্লাস শেষে অনেকক্ষণ বসে বসে মেয়েদের র‍্যাগডে প্রিপারেশন দেখলাম। তারপর ফুটপাতের হলুদ টাইলসগুলো ধরে হাঁটতে হাঁটতে পলাশি পেরিয়ে রাহির ডিপার্টমেন্টে গেলাম। ওর কাজ শেষে একসাথে বাসায় ফিরলাম। ক্লাস শেষে একসাথে ফেরা আর কবে হবে কে জানে!

আমরা যখন ইডেনে ভর্তি হই তখন ইডেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ন্যাশনালে প্রায় সবাই ভর্তি হয় একটা চাপা কষ্ট নিয়ে। আরেকটু ভালো প্রিপারেশন নিলে আরেকটু ভালো কোথাও থাকতাম এই উপলব্ধি আসে সহসাই। আমি তেমনটা ভেবেছিলাম কিনা মনে নেই। তবে পছন্দের বিষয়ে পড়তে পারায় আর কোনো কষ্ট ছিলো না।

আমার শুরুটা ছিলো সরকারি কলোনির স্কুলে। তারপর মাদরাসার দোতলা ভবন আর ছোট্ট মাঠের গন্ডি, যেখানকার টিচাররা এখনো দেখলে খুশি হয়ে যান। তারপর জেলখানার মত ঢাকা সিটি কলেজ, অনেক দিন পর্যন্ত ঘুরানো প্যাচানো সিড়ি ডিঙ্গিয়ে নিজের ক্লাস কোনটা তাই খুঁজে পেতে কষ্ট হয়ে যেতো। তারপর আসলাম ইডেনে। সিটি কলেজের মাঠ ছাড়া এসি রুমের বদ্ধ পরিবেশ আমার মত মানুষের জন্য না সেটা বেশি টের পেয়েছিলাম ইডেনের মুক্ত হাওয়ায়। ক্যাম্পাসে পা দিতেই ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে আসবে প্রকৃতির আবহে। এত্ত রকমের গাছ, এত্তরকমের পাখির ডাক, এত্ত রঙের ফুল.. আহ…! বাইরের কোনো মানুষ ছাড়া নিজেদের একটা রাজ্য মনে হয়। এত্ত মেয়ে একসাথে আমি এর আগে দেখিনি। সবাই নিজের মত পড়ছে, খাচ্ছে, কাজ করছে, আনন্দ করছে, নিজের মত সময় কাটাচ্ছে। ভিন্ন একটা জগৎ যেন! কতদিন পুকুরপাড়ের বেঞ্চে শুয়ে শুয়ে জীবনের কত প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছি ভাবনায়। বিশাল মাঠের কোণের ছোট ক্লাবটায় তাইকোয়ান্ডো প্র‍্যাকটিস করতে করতে হারানো আত্মবিশ্বাস আবার খুঁজে পেয়েছি নিজের ভেতরে। ধবধবে সাদা ড্রেসটা গায়ে চাপালেই শরীরে একটা অদ্ভুত জোর পেতাম। সব শক্তি দিয়ে একেকটা কিক আর পাঞ্চ মেরে দুইঘন্টার প্র‍্যাকটিস শেষে ক্লান্ত হয়ে হাভাতের মত নাশতা করতাম হলের ক্যান্টিনে। পড়াশোনার মান নিয়ে আমার বরাবরই আপত্তি ছিল কিন্তু একসময় সেটা মেনে নিয়েছিলাম। বুঝে নিয়েছিলাম এখানে প্রেশার করার কেউ নাই। লক্ষ্য ঠিক করে নিজেকেই চেষ্টা করতে হবে৷ একদিকে ভালোই ছিলো, প্রচুর এক্সট্রা কারিকুলার এ্যাক্টিভিটিজ তেমন কোনো জটিলতা ছাড়াই করতে পেরেছিলাম।
ইডেনের বিশাল ক্যাম্পাস পুকুরঘাট আর পুকুরের মাছগুলোকে পর্যন্ত এই যাবার কালে আপন মনে হচ্ছে। কলেজ বাসের দিনগুলোতে গল্প করতে করতে কখন পথ ফুরিয়ে যেতো টের পাওয়া যেতোনা। সেই লাল কলেজ বাস “চন্দ্রমল্লিকা” তোরে মিস করবো। সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের করিডর, মিস করবো। ডিপার্টমেন্ট থেকে নামলেই ফুচকা, ভেলপুরি, আঁচার, চাটনি, ফলের জুস, কিমা পরোটা, খিচুড়ি, ফ্রাইড রাইস, শীতের ভাপা পিঠা আর নানাপদের ঝাল ঝাল ভর্তা দিয়ে চিতই পিঠা খেয়ে পেট ভরানোর দিনগুলো মিস করবো। ইডেনের প্রত্যেকটা ফুল গাছ, লাইব্রেরির টেবিল-চেয়ার, ক্লাসরুম আর পুরানো বেঞ্চগুলো, ছাদ আর ল্যাবরুম, সেমিনারের বইগুলো, মিস করবো খুব। টিচারদের আর হাসি, কান্নায় ভরপুর মেয়েগুলোকে মিস করবো।।

*এই ছবিগুলো ইডেনে বিভিন্ন সময়ে তোলা। ছবিগুলোর আসল কপি গুলো হারিয়ে ফেলেছি ত মনে হলো এই পোস্টের সাথে থাকুক।