banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

শুনি নব জীবনের প্রতিধ্বনি…১

শুনি নব জীবনের প্রতিধ্বনি…১


আফরোজা হাসান


ছোট ননদের রুমে কয়েকবার নক করার পরও ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো রুহিনা। রুমের ভেতর কোথাও না দেখে বারান্দায় উঁকি দিয়ে দেখলো রেলিঙয়ে পা তুলে দিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে স্বাতি। ননদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, নাস্তা নিয়ে এসেছি তোর জন্য। খেয়ে নে।

স্বাতি সোজা হয়ে বসে ভাবীকে বসার জায়গা করে দিয়ে বলল, একদম খেতে ইচ্ছে করছে না ভাবী। খাবার কথা মনে করলেই কেমন যেন বমি ভাব হচ্ছে।

গতকাল রাতেও কিছু খাসনি তুই। এমন করলে শেষে অসুস্থ হয়ে যাবি। সোনা বুবু না আমার খেয়ে নে। আচ্ছা চল আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। দেখ সব তোর পছন্দের খাবার বানিয়েছে মামণি।

মামণি কি করছে ভাবী?

তোকে নিয়ে টেনশন করা ছাড়া আর কি করবে এই সময়। তারউপর তুই খাওয়া দাওয়া না করে, অনিয়ম করে আরো বেশি টেনশন দিচ্ছিস সবাইকে।

আমি কি করবো খাবার ভেতরে ঢুকতেই চাইছে না।

তুই একটু শান্ত হবার চেষ্টা করতো স্বাতি।

বললেই কি শান্ত হওয়া যায় নাকি? তুমি কি শান্ত ছিলে তোমার বিয়ের এক সপ্তাহ আগে?

হেসে ফেললো রুহিনা। উহু.. আমিও ভয়াবহ রকমের অশান্ত ছিলাম। মনের মধ্যে তুফান, সুনামী, সাইক্লোন সব একসাথে বইতে শুরু করেছিল। এমন সব অদ্ভুত চিন্তা-ভাবনা মনে আসতো যা রূপকথার গল্পেরও স্থান পাবে কিনা সন্দেহ। তবে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করেনি তোর মত। আমার আবার উল্টো স্বভাব জানিসই তো। টেনশনের সময় বেশি বেশি ক্ষুধা লাগে। ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ ঘুরতাম আর চকলেট, আইসক্রিম, পেস্ট্রি এসব খেতাম। আম্মু সেটা দেখে সমানে চিৎকার করতো আর বলতো, দুদিন পর বিয়ে কই জীমে যাবি তা না তুই আরো মোটা হবার জিনিস খাচ্ছিস।

স্বাতি হাসতে হাসতে বলল, আমিও খেয়াল করেছি কোন কারণে যেদিন তুমি টেনশনে থাকো ঘুরে ঘুরে শুধু এটা সেটা খাও।

প্লেট থেকে পরোটা নিয়ে একটু করে ছিঁড়ে স্বাতির মুখে দিয়ে রুহিনা হেসে বলল, সবকিছুরই সাইট অ্যাফেক্ট আছে বুঝলি। আমার এই স্বভাবের সাইট অ্যাফেক্টের কারণেও বেশ কয়েকবার লজ্জিত হতে হয়েছে তোর ভাইয়া সামনে।

যেমন?

যেমন তোর ভাইয়া যখন কোন কারণে টেনশনে থাকে তোর মত খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। আর আমার তখন ক্ষুধা বেড়ে যায়। বারবার খেতে ডাকি তোর ভাইয়াকে। সে তখন বিরক্ত স্বরে বলে, তোমার সমস্যা কি এত খাই খাই করছো কেন? তবে সবচেয়ে বেশি লজ্জায় পড়েছিলাম আমাদের বিয়ের দিন। বাসর ঘরে।

সেটা কিভাবে?

আমাকে রুমে রেখে যখন তোরা সবাই বেড়িয়ে গিয়েছিলি প্রথমে তো কিছুক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো রুমের মধ্যে এক ফোটাও অক্সিজেন নেই। তোর ভাইয়া রুমে ঢোকার সময় অক্সিজেনের সাথে সাথে আমার জন্য রাজ্যের ক্ষুধাও নিয়ে এলো। এত ক্ষুধা মনেহয় জীবনে আর কোনদিন লাগেনি আমার। খাবার না পেলে এই মূহুর্তে মারা যাব এমন লাগছিল। আমার চোখ মুখ দেখে উনি প্রশ্ন করলেন, কোন সমস্যা হচ্ছে তোমার? ক্ষুধার কাছে নতি স্বীকার করে আমাকে তখন বলতেই হয়েছিল, আমার খুব ক্ষুধা লেগেছে।

স্বাতি খিলখিল করে হেসে উঠে বলল, ও আচ্ছা এজন্যই ভাইয়া আমাকে ডেকে খাবার চেয়েছিলেন? আমি তো ভেবেছিলাম সারাদিন ব্যস্ততায় ঠিকমতো খেতে পারেনি তাই মনেহয় ভাইয়ার ক্ষুধা লেগেছে। কিন্তু সব ছেলে তো আর আমার ভাইয়ার মত সুইট না। বলতে বলতেই আবারো বিয়ের কথা মনে পড়তেই হাসি মুছে গেলো স্বাতির চেহারা থেকে।

আরে একি হাসতে হাসতে আবার মুখ গোমড়া করলি কেন? সব ছেলে যেমন তোর ভাইয়ার মত না। সব মেয়েও তো আমার মত না। তুই কি আমার মতো? তাহলে আমার স্বামীর মত স্বামী হতেই বা যাবে কেন তোর? প্রবাদ শুনিসনি, “যথার সাথে তথা মেলে, রাজার সাথে রাণী মেলে”। তুই আমাদের সবার আদরের ছোট্ট রাজকন্যা। এজন্যই তো আল্লাহ তোর জন্য আরভ ভাইয়ার মতো রাজপুত্র পাঠিয়েছেন। আমি অবাক না হয়ে পারছি না স্বাতি। তুই আরভ ভাইয়াকে নিয়ে এত টেনশন করছিস? তুই তো ছোটবেলা থেকেই ভাইয়াকে দেখছিস। তারপরও এত দুশ্চিন্তা কেন? ইস্তিখারা করতে বলেছিলাম তোকে। করেছিলি?

স্বাতি লাজুক হেসে বলল, হুম! করেছি। সব ঠিক আছে কিন্তু তারপরও কেন জানি না খুব বেশি ভয় লাগছে। আমার জীবনসাথীকে ঘিরে তেমন কোন এক্সপেক্টটেশন নেই। এইসব বিষয় বুঝতে শেখার পর থেকেই মামণি মনের চাওয়ার লাগাম টেনে ধরতে শিখিয়েছেন আমাকে। বুঝিয়েছেন নিজ ভাবনার রঙে মনে কারো ছবি গড়ে তোলা ঠিক নয় বিয়ের আগে। বিয়ের আগে শুধু আল্লাহর কাছে একজন উত্তম জীবনসাথী চাইতে হবে। আল্লাহ যাকে জীবনসাথী করে পাঠাবেন। তাকে সামনে বসিয়েই আঁকতে হয় মনের মাঝে জীবনসাথীর ছবি।

তুই তো আমার চেয়েও ভালো বুঝিস। তাহলে আবার এত ভয় কিসের?

কেমন হবে আমাদের জীবনের প্রথম দিনের শুরুটা। উনি কি বলবেন, আমি কি বলবো এসব ভেবে খুব বেশি টেনশন কাজ করছে।

চলবে…