বাবা
তানিয়া ইসলাম ইতি
বাবা শব্দ টা আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সবচেয়ে স্বচ্ছ সবচেয়ে শক্তিশালী শব্দ।
আর বাবা নামের মানুষ, মানুষগুলো আরো বেশি শক্তিশালী আরো বেশি স্বচ্ছ, নির্ভীক, পৃথিবীর সবচেয়ে অনুপ্রেরণার জায়গা, আদর্শ আর কষ্ট লালিত এক পুরুষ। নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া এক সংগ্রামি যোদ্ধা ……….।
গত এক সপ্তাহ ধরে এই বাবা নামের শব্দটির সাথে হারিয়ে গেছি। নতুনভাবে আবিষ্কার করার চেষ্টা করছি এত কেন স্বচ্ছ এত কেন নির্ভেজাল বাবা নামের মানুষটা। খুজেও পেলাম অনেক কিছু……….।
১. সন্ধ্যার পরে হাঁটছি একজন বাবা আর সন্তান বাসায় ফিরছেন হয়তোবা সন্তানের পেন্সিল পরে গেছে । বাবা এমন ভাবে রাস্তায় পেন্সিল খুঁজছেন যেন পৃথিবীর সব চাইতে মূল্যবান সম্পদ হারিয়ে ফেলেছেন। শুধুমাত্র সন্তানের একটা কথায় বাবা আমি পেন্সিল হারিয়ে ফেলেছি। হয়তো বাস এক্সিডেন্ট হতে পারতো। কারণ রাস্তায় এত গাড়ি যাচ্ছে বাস প্রাইভেট কার সেগুলো উপেক্ষা করে বাবা নিজের জীবনের কথা চিন্তা না করে পেন্সিল খুঁজে দেয়ার চিন্তা করছে এটা শুধু এই মানুষটার পক্ষেই সম্ভব …….।
২. গত দুইদিন আগে বাংলা টিভি চ্যানেল দুরন্ত চ্যানেল সিসিমপুরে এক চাইনিজ বাবার গল্প বলছিল তার সন্তান। আমার বাবা বেহালা বাজাতে পারে। আমার বাবা ঘোড়ার ডাকার শব্দ, ঘোড়ার দৌড়ানোর শক্ত, হাঁটার শব্দ বেহালায় তুলতে পারে ।এমন ভাবে বাবাকে রিপ্রেজেন্ট করছিল একজন সন্তান ৭ বছরের সন্তান। মনে হলো পৃথিবীর সবচাইতে আদর্শবান বাবার গল্প সে সবার কাছে বলছে। তখন মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচাইতে ঘনিষ্ঠতম সম্পর্ক হচ্ছে বাবা আর সন্তানের সম্পর্ক……….।
৩. আজকে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে মোবাইলে ফ্লেক্সিলোড দিচ্ছিলাম। তখন ঐ দোকানের মালিকের সাথে কথা হচ্ছিল। আমি প্রায়ই মাঝেমাঝে উনার সাথে কথা বলি। কথা বলতে বলতে একটা সময় একটা পিচ্চি ছেলে এসে বলতেছে আঙ্কেল কিছু টাকা দেন ভাত খাবো। পকেট থেকে ২০০ টাকা বের করে দিল আমি বললাম ভাই আপনি টাকা দিয়েছেন ওই টাকা দিয়ে ভাত খাবে না। তখন উনি বলল আপা আমি ছোটবেলা থেকেই খাবারের জন্য কেউ কোন কিছু চাইলে আমি কখনো নিষেধ করি না। কারণ এটা আমার বাবার কথা, বাবা বলেছিল কখনো খাবারের উদ্দেশ্যে কেউ কিছু চাইলে তুমি খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। তখন আমি বললাম তাহলে তো আপনার বাবা অনেক ভালো মানুষ। উনি বললেন, হ্যাঁ আমার বাবা পৃথিবীর সবচাইতে ভালো মানুষ ছিলেন। উনি এখন নেই মারা গেছে। আমার বাবার একটা কথা বলি আপনাকে, আমরা চার ভাই বোন প্রত্যেকেই অনেক অনেক ভালো জায়গায় আছি । সবাই অনেক ভালো জায়গা থেকে পড়াশোনা করেছি। আমি যখন খুব ছোট স্কুলে পড়তাম কখনো আমার বাবাকে সকালে দেখতাম না। উনি টিচার ছিলেন উনি প্রতিদিন কখন যে বের হয়ে যেতেন আসতেন সন্ধ্যার একটু আগে আর আমাদের পড়তে বসাতেন। তখন খুব রাগ হতো বাবার প্রতি সারাদিন থাকে না বাসায় আমাদের কোনো খোঁজখবর নেন না অথচ পড়ার সময় কোথা থেকে যেন চলে আসতেন। স্কুলে একবার করে প্রতিমাসে যেতেন আমাদের পড়াশোনার কি অবস্থা জানার জন্য। আর কোন মতে কোন কিছু শুনলে মার একটাও মাটিতে পড়তো না। কতবার যে মনে মনে বাবাকে বকেছি সেটার হিসাব নেই। কিন্তু যখন বড় হচ্ছি বুঝতে শিখছি দুনিয়ার সবকিছু। তখন প্রথম জানতে পারলাম আমার বাবা সকাল পাঁচটায় বের হয়ে যায় বাসা থেকে জমিতে। উনি কৃষি কাজ করতো তার পরে স্কুলে যেতো স্কুলের ক্লাস নিয়ে বাসায় ফিরে খাবার খেয়ে আবার জমিতে চলে যেতো কাজের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যায় ঠিকই বাসায় এসে হাজির হতো আমার বাবা। আমার এখনো মনে আছে আমি যখন ক্লাস টেইনে পড়ি তখন আমার বড় ভাই বুয়েটে পড়ে। উনার স্কলারশিপ হয়েছিল তার তখন কিছু টাকা দরকার ছিল আমার বাবার তখন খাদ্যনালীতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। আমাদের জমানো টাকা দিয়ে বাবাকে চিকিৎসা করালে বাবা সুস্থ হয়ে যেতেন । কারণ ক্যান্সারের এক্কেবারে প্রাইমারি অবস্থায় ছিল বাবার । কিন্তু বাবা আমাদের কাউকে জানায়নি না জানাই আমার ভাইকে টাকা দিয়ে কানাডাতে পাঠান। আর তখন বাবার ক্যান্সার পুরা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ……।
পৃথিবীর প্রত্যেকটা বাবাই মনে হয় নিঃস্বার্থ বান একজন মানুষ। যারা সারা জীবন দিয়ে যায় পাওয়ার বিন্দু পরিমান চিন্তা করেন না।
বেঁচে থাকুক এই বাবারা পৃথিবীতে প্রত্যেক আদর্শবান সন্তানের মাঝে, বেঁচে থাকুক। পৃথিবীর প্রত্যেক সন্তানের ভালো কাজের মাঝে প্রত্যেকটা শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে আর বাবা সম্পর্কে যত যত বলবো শেষ হবে না। শুধু বলবো ভালো থাকুক সব বাবারা।