banner

শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

Daily Archives: April 12, 2025

 

স্মৃতির জোনাকি…৪

স্মৃতির জোনাকি…৪


আফরোজা হাসান


মামণি একই রকম শাড়ি দুইটা কেন? বড় বড় আঁখিদুটি আরেকটু বড় করে বেশ অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো নাবিহা।

প্রশ্ন শুনে বুক সেলফ গুছানো ছেড়ে হাসি মুখে মেয়ের দিকে তাকালো নূহা। সেই হাসি সম্পূর্ণ চেহারাতে বিস্মৃত করে বলল, প্রথম যেদিন আমার মাঝে তোমার অস্তিত্ব টের পেয়েছিলাম আমার কি মনে হয়েছিল জানো?

কি মনে হয়েছিল মামণি? আহ্লাদিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো নাবিহা।

এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে সুখানন্দ ও মমতা মিশ্রত কন্ঠে নূহা বলল, মনে হয়েছিল পুরো পৃথিবীটা ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছে। আকাশের বুকে বসেছে লক্ষ, কোটি নক্ষত্রের মেলা। ইচ্ছে করছিল সমস্ত ফুল আর নক্ষত্র তুলে নিয়ে একটা ফুলেল দোলনা বানাতে তোমার জন্য। যে দোলনার ভাঁজে ভাঁজে ঝিকমিক করবে বর্ণিল নক্ষত্রের আলো। আনন্দে আমি দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম। রিমঝিম বরষা রুপে আনন্দরা অবিরাম ঝরছিল মনের মাঝে। কত শত প্ল্যান যে করে ফেলেছিলাম সেদিন তোমাকে ঘিরে। তারমধ্যে একটি প্ল্যান ছিল তুমি যেদিন প্রথম শাড়ি পড়বে সেদিন মা আর মেয়ে দুজন একই রকমের শাড়ি পড়বো, চুড়ি পড়বো। এরপর হাত ধরাধরি করে বাগানে ঘুরে বেড়াবো।

আনন্দ, খুশি, মুগ্ধতা ও ভালোবাসার মিশ্র পরশে নাবিহা দুহাত বাড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মাকে। এরপর শাড়ি দুটো নিয়ে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরে রেখে আনন্দসিক্ত কন্ঠে বলল, সেদিন তুমি আমাদের দুজনের জন্য একই রকম শাড়ি কিনেছিলে?

নূহা হেসে বলল, হুম। স্পেশাল কিছু মূহুর্ত আছে যা একবারই আসে আমাদের জীবনে। কিন্তু সেই মূহুর্তগুলোর প্রাপ্তি জীবনকে জড়িয়ে থাকে প্রতিক্ষণে। তোমার অস্তিত্বের উপলব্ধি তেমনই একটি মূহুর্ত।

নাবিহা বলল, ইশশ, কতই না ভালো হতো আমি যদি তোমার ভেতর একা থাকতাম। তাহলে তোমার সমস্ত অনুভূতি শুধু আমার একার হতো। ভাইয়া আর জিশানকে ভাগ দিতে হতো না।

নূহা হেসে ফেললে নাবিহাও হাসতে হাসতে বলল, অনেক বেশি সুন্দর শাড়ি দুটা মামণি। কিন্তু এত বছর তুমি আমাকে দেখাওনি কেন?

নূহা হেসে বলল, আমি তো আজকেও তোমাকে দেখাতে চাইনি। আমার ইচ্ছে ছিল স্পেশাল কোন দিনে তোমাকে এই উপহারটা দেবো। সিন্দুকে বন্দী থেকে ভাঁজে ভাঁজে শাড়ি যাতে নষ্ট হয়ে না যায় তাই মাঝেমধ্যে রোদে মেলে দেই। গতকালও দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আজকে আবার লুকিয়ে রাখবো সিন্দুকে। কিন্তু তার আগেই তুমি দেখে ফেলেছো।

নাবিহা হেসে বলল, ঠিকআছে আমি আমার মস্তিষ্কের মেমোরী কার্ড থেকে শাড়ি দেখার এই দৃশ্যটি ডিলিট করে দিলাম। তুমি শাড়ি দুটা সিন্দুকে ঢুকিয়ে রাখো মামণি। স্পেশাল সেই দিনটি যখন আসবে তখন তুমি আর আমি এই শাড়ি পড়বো, চুড়ি পড়বো এরপর হাত ধরাধরি করে বাগানে হাঁটবো।

নাবিহার কথাগুলো আনন্দ-বেদনার মিশ্র ঢেউ তুলে দিলো নূহার মনে। আনন্দ, কারণ এতটা বছর ধরে কল্পনায় দেখা সেই আকাঙ্ক্ষিত দিনটি হয়তো খুব শিঘ্রীই বাস্তব হতে চলছে। বেদনা, কারণ তার ছোট্ট পরীটা বড় হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। মনেহয় এই তো সেদিন নূহার অন্ধকার জীবনকে আলোকিত করতে হাজির হয়েছিল তিনটি নক্ষত্র। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় আঠারো বছর। আর মাত্র চার মাস পরই আঠারোর ঘর ছুঁয়ে দেবে জিহাদ, জিশান, নাবিহা। নাবিহাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিয়ে নূহা হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ।

নাবিহা হেসে বলল, এখন তাহলে বলে দাও ঈদে আমি কাকে কি গিফট দেবো। তুমি তো জানো আমার বাজেট অল্প। অল্প বাজেটেই আমি বাড়ির সবার জন্য কিছু না কিছু উপহার কিনতে চাই। এবং একই সাথে চাই যাকে যেই উপহার দেবো সেটা যেন তার কাজে লাগে। পাপা, আদীব্বা, বাবার জন্য উপহার আমি সিলেক্ট করে ফেলেছি। তিনজনের জন্যই পাঞ্জাবী অর্ডার করেছি। আমার দেয়া পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে পাপা, আদীব্বা, বাবা ঈদের নামাজে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ভাইয়া, জিশান আর জারিফের জন্যও একই রকম পাঞ্জাবী অর্ডার করার। কিন্তু তাহলে বাড়ির সবার জন্য উপহার নিতে পারবো না।

নূহা হেসে বলল, তুমি চাইলে আমার কাছ থেকে লোন নিতে পারো। পরে শোধ করে দিও।

নাবিহা বলল, আমিও প্রথমে এমনটাই করবো ভাবছিলাম। কিন্তু পরে পাপার কথা মনে পড়লো। পাপা একদিন বলেছিলেন, অর্থ ধার করা যায় কিন্তু আনন্দ না। নিজ সামর্থ্যর ভেতর থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে পারার যে সুখ সেটা কখনোই অন্য কারো কাছ থেকে ধার করে পাওয়া সম্ভব না।

নূহা হেসে বলল, তোমার পাপা একদম ঠিক বলেছেন। আমার থেকে লোন নিয়ে তুমি হয়তো সবাইকে পছন্দনীয় উপহার দিতে পারবে। কিন্তু সেই প্রশান্তি কখনোই অনুভব করবে না, যেমনটা তোমার অল্প বাজেটের মধ্যেই সবার জন্য উপহার কিনলে অনুভূত হবে।

নাবিহা হেসে বলল, এজন্যই তো লোন চাইনা। পরামর্শ চাই অল্প টাকায় সবার জন্য অধিক খুশি কেনার।

নূহা হেসে বলল, পাঞ্জাবীর সাথে তোমার পাপাকে একটা গাছও উপহার দিও।

পাপার বেডরুমের জন্য আমি অলরেডি স্নেক প্ল্যান্ট কিনে ফেলেছি।

নূহা হেসে বলল, এত গাছ থাকতে স্নেক প্ল্যান্ট।

নাবিহা হেসে বলল, নাম শুনে তুমি ভীত হয়ো না মামণি। গুণের শেষ নেই স্নেক প্ল্যান্টের। আমি স্টাডি করে জেনেছি স্নেক প্ল্যান্ট রুমে থাকলে রুমে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি হয়না। বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও শুষে নেয়। এছাড়াও স্নেক প্ন্যান্ট নাইট্রোডেন ডাই অক্সাইড ও ফার্ম্যালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসসমূহকেও শোষণ করে ঘরকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তো পার্ফেক্ট সিলেকশন। আচ্ছা আমাকে চিন্তাভাবনা করার জন্য কিছুটা সময় দাও। বিকেলে তোমাকে জানাবো কাকে কি উপহার দেয়া যায়।

কথাবার্তা তো শেষ এখন তাহলে আপনি প্রস্থান করেন আম্মাজান। কারণ আমার ভাবীজানের সাথে অতি জরুরি বিষয়ে শলাপরামর্শ করতে হবে আমাকে এখন। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো তাসমিয়া।

নাবিহা চোখ বড় বড় করে বলল, তারমানে তুমি এতক্ষণ আমার আর মামণির কথা আড়িপেতে শুনেছো? আড়িপেতে কথা শোনা খুবই দুষ্টু কাজ ফুয়ি।

তাসমিয়া হেসে বলল, তোমার আর তোমার মার আবেগঘন আলাপনে যে আমি বিঘ্ন ঘটাইনি সেই উত্তম কাজের তুলনায় এই দুষ্টু কাজ খুবই গৌন্য আম্মাজান। পরিমাপ করলে দেখতে পাবে উত্তম কাজের দ্বারা মন্দ কাজকে ঢেকে দেবার পরও খানিকটা উত্তম রয়ে গিয়েছে। সেটুকু পরে কখনো কাজে লাগাবো ইনশাআল্লাহ।

হেসে ফেললো নূহা আর নাবিহা। এরপর মা আর ফুপিকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে নাবিহা চলে গেলো। নূহা হেসে বলল, দুই কাপ চা বানিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বোস। বুকসেলফ গুছিয়ে আমি আসছি ইনশাআল্লাহ।

জো হুকুম ভাবীজান বলে তাসমিয়া চা বানাতে ছুটলো।

চলবে..

পর্ব-৩

 

ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি জুতাপেটা

ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি জুতাপেটা


নারী সংবাদ


গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি হিসেবে দুই যুবককে জুতাপেটা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের মান্দ্রা গ্রামে ধর্ষণ চেষ্টার সালিশ বৈঠকে হামিদ শেখ (১৯) ও হালিম শিকদার (১৮) নামে দুই যুবককে জুতাপেটা করা হয়।

হামিদ শেখ মান্দ্রা গ্রামের হাবিব শেখের ছেলে। অপরদিকে হালিম শিদকার একই গ্রামের আনিস শিকদারের ছেলে। এলাকাবাসি সূত্রে জানাগেছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় মান্দ্রা ইউনাইটেট ইনস্টিটিউশনের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার সময় হামিদ শেখ ও হালিম শিকদার নামের দুই যুবক ওই স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকারের আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে হামিদ ও হালিম পালিয়ে যায়।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে মঙ্গলবার মান্দ্রা গ্রামের জনৈক আজাহার শেখের বাড়িতে এক সালিশ বৈঠক হয়। সালিশ বৈঠকে হাবিব ডাক্তার, হামিম শেখ, সালাম দাড়িয়া, ইলিয়াছ শেখ, মামুন শেখ, হাসান মিয়া নামে এলাকার সালিশবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সালিশবর্গদের নির্দেশে মামুন শেখ ও হাসান মিয়া হামিদ এবং হালিমকে জুতাপেটা করে।

সালিশকারক হাবিব ডাক্তার বলেন, এলাকার শান্তির জন্য হামিদ ও হালিমকে জুতাপেটা করা হয়েছে। তবে ওই দুই যুবকের অভিভাবকরাই তাদের জুতাপেটা করেছে।

ওই স্কুল ছাত্রীর পিতা বলেন, এলাকার মুরব্বিদের অনুরোধে সালিশ বৈঠকের মাধ্যেমে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। সালিশ বৈঠকে ওই দুই যুববকে জুতাপেটা করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদা কাগজে একটি মিমাংসাপত্র লেখা হয়েছে। মিমাংসাপত্রটি সালিশকারক হামিম শেখের কাছে রয়েছে।

কোটালীপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো: জাকারিয়া বলেন, এ ধরণের ঘটনায় সালিশ বৈঠকের মাধ্যেমে মিমাংসা করার আইনগত কোন বিধান নেই। ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

সুত্র: নয়া দিগন্ত।