banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

মানুষের সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসেবা

মানুষের সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যসেবা


ডাঃ সাকলায়েন রাসেল


ইন্টার্নিশিপের সময় ২ বছর করায় তীব্র প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন…চিকিৎসক ও হবু চিকিৎসকরা! সম্ভাব্য আন্দোলনের দাবানল মেডিকেলে মেডিকেলে।

২ বছর ইন্টার্নিশিপের বিষয়ে আমি একটি প্রশ্ন রেখেছিলাম…এতে প্রায় ১২ শ চিকিৎসক, হবু চিকিৎসক মন্তব্য করেছেন!

মাত্র ২ জন…দুই বছরের পক্ষে মত দিলেও বাকী সবাই এর বিপক্ষে মত দিয়েছেন!

উল্লেখ্য, বর্তমানে MBBS পাশ করতে মোট ৬ বছর সময় লাগে। এরমধ্যে ৫ বছর একাডেমিক সময়, ১ বছর ইন্টার্নিশিপ।
২০১৯ সালের প্রস্তাবিত খসড়া অনুযায়ী ৫ বছর একাডেমিক, ২ বছর ইন্টার্নিশিপ।
ইন্টার্নিশিপের ২ বছরের মধ্যে আবার ১ বছর গ্রামে থাকতে হবে।

শুরুতেই জানিয়ে রাখি উক্ত নিয়ম শুরু থেকেই কার্যকর আছে গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেলে। যারা প্রবক্তা বহুল আলোচিত
ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী।
এখানে তাই ইন্টার্ন সময় দেড় বছর।
১ বছর নিজ মেডিকেলে, ৬ মাস বাইরে।
এটা নিয়ে সেখানকার ডাক্তাররাও শুরু থেকেই প্রতিবাদী। কিন্তু প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করার সাহস কেউ করেন না।

যারা ২ বছর করার পক্ষে তাদের মত হলঃ
১. এতে নবীন চিকিৎসকরা অধিক দক্ষ হবেন।
২. গ্রামের মানুষ সুচিকিৎসা পাবেন।
৩. উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এটা করা হচ্ছে।

কিন্তু যারা বিপক্ষে তারা এটা মানতে নারাজ।
তাদের যুক্তি হলঃ
১. এতে করে শিক্ষাজীবন অহেতুক বৃদ্ধি পাবে। সাধারণ মানুষ চিকিৎসক হতে নিরুৎসাহিত হবেন।
২. ইন্টার্ন ডাক্তাররা গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা দিতে পারবেন না। তারা সুপারভাইজড ট্রেইনিং করতে পারবেন মাত্র।
৩. গ্রামে পর্যাপ্ত কনসালটেন্ট নেই। সেক্ষেত্রে ইন্টার্ন ডাক্তারদের ট্রেইনিং কে দিবে, তারা রোগীর চিকিৎসাই বা কিভাবে করবে?
৪. উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে চাইলে MBBS এর সময় কমানো উচিত।
ইন্ডিয়ায় এমবিবিএস সাড়ে ৫ বছর, দুনিয়ার কোথাও এবিবিএস পাশ করতে ৭ বছর লাগেনা।
৫. অনেকে ডাক্তার বেকার আছে। গ্রামের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাই এসব ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হোক।
৬. গ্রামে পর্যাপ্ত জনবল, অবকাঠামো না থাকায়, নিরাপত্তা সমস্যা মনে করছেন অনেকে, বিশেষ করে নারী নবীন চিকিৎসকরা।
৭. বাংলাদেশের মেডিকেল গুলোতে অনেক বিদেশী স্টুডেন্ট পড়ালেখা করছেন। তাদের মাধ্যমে মোটা অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। ৭ বছর হলে তারা নিরুৎসাহিত হবেন। তারা কখনোই গ্রামে যেতে চাইবেন না।
৮. ইন্টার্ন নিয়োগ দিয়ে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর কথা বলা তাই স্রেফ ধোঁকাবাজি মনে করছেন কেউ।
৯. মেডিকেলে একবারে পাশ করার হার খুব বেশি না। তাই ফেল করলে তাদের শিক্ষাজীবন আরো বিলম্বিত হবে।
১০. এমবিবিএস পাশ করতেই যদি ৭ থেকে ১০ বছর লেগে যায় তবে পোস্ট গ্রাজুয়েট শুরু করবে কখন।

এসব দিক বিবেচনায় ইন্টার্নিশিপ সময় ২ বছর করার বিরোধিতা করছেন শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয় আন্দোলনসহ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পক্ষেও তারা।
কারণ, এখন যারা মেডিকেলে পড়ছেন তাদের প্রজ্ঞাপনে ১ বছর ইন্টার্নির কথা বলা ছিল।
হঠাৎ করে ২ বছরের আইন করলে তা আগামী ৬ বছর পর করতে হবে। কারণ নতুন ব্যাচ মেডিকেলে ভর্তি হলে তারা আগে থেকেই জানবে ইন্টার্নশিপ ২ বছর।

খসড়া নীতিমালা চুড়ান্ত করার আগে তাই এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত বলে করছেন সচেতন মহল।

 

স্মৃতির জোনাকি…৫

স্মৃতির জোনাকি…৫


আফরোজা হাসান


চা নিয়ে ব্যালকনিতে বসার পর তাসমিয়া বলল, আমার ফ্রেন্ড ঈশাকে তো তুমি চেনোই। ওর সমস্যা নিয়ে তোমার সাথে আলোচনা করতে চাচ্ছি ভাবী। ঈশা আর ওর হাজবেন্ডের চমৎকার রিলেশন ছিল। অনেকটা আমাদের বাড়ির ক্যাপলদের মতো সম্পর্ক ছিল ওদের হাজবেন্ড ওয়াইফের মাঝে বিয়ের পর থেকে গত দশ বছর। সারাক্ষণ দুষ্টুমি, খুনসুটি করতো দুজন। ওদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স সাত, ছোটটার চার। দুজনই যথাসাধ্য শরীয়তের বিধিবিধান মেনে চলার চেষ্টা করতো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। মাঝে বছর খানেক যোগাযোগ ছিল না ওর সাথে তেমন। সপ্তাহ খানেক আগে ঈশার হাজবেন্ড সাফী ভাই যোগাযোগ করেছেন আমার সাথে। তখন জানতে পারলাম ঈশা ডিভোর্স ফাইল করেছে। কারণ কি জানতে চাইলে সাফী ভাই জানালেন, বিয়ের আগে অন্য এক মেয়ের সাথে উনার রিলেশন ছিল। পারিবারিক কারণে বিয়ে হতে পারেনি। পরে ঈশার সাথে বিয়ে হয়েছিল। ঈশা খুবই ভালো মেয়ে। এত ভালো একটি মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়ে সাফী ভাই অতীত একদম ভুলে সুখের সংসার গড়ে তুলেছিল দুজন মিলে। গত রোজার ঈদের সময় ফেসবুকে আগে যে রিলেশন ছিল সেই মেয়েটার সাথে সাফী ভাইয়ের আবার কন্টাক্ট হয়। প্রথম দিকে দুজন শুধুমাত্র ফ্রেন্ডের মতো কথাবার্তা বলেছে। কিন্তু এভাবে কথা বলতে বলতে দুজন কাছাকাছি চলে আসে পুনরায়। অতীতের স্মরণ করতো দুজন, দুজনের বিয়ে হলে কত ভালো হতো সেসব কল্পনা জল্পনা করতো, বিচ্ছেদের জন্য একে অন্যকে দায়ী করে অভিমান করতো, এভাবে চলতে চলতে আবার পুরনো প্রেম জেগে উঠেছিল দুজনের মনে। একদিন ঈশা সাফী ভাইয়ের ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে দেখে দুজনের প্রেমালাপ, মন জুড়ে এখনো তুমি, তোমারে পারিনি ভুলতে টাইপের হাহুতাশ। ঈশা জানার পর সাফী ভাই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু ঈশার কথা হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে ভালোবাসা, সম্মান কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এমন প্রাণহীন সম্পর্ক না আমাদের জন্য কল্ল্যাণকর হবে, না আমাদের সন্তানদের জন্য। তাই ডিভোর্সই উত্তম। সাফী ভাই অনেক ক্ষমা চেয়েছে, প্রেমিকাকে সব কিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছে, সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করেছে কিন্তু ঈশা কিছুতেই রাজী হয়নি ক্ষমা করে দিয়ে পুরনায় সংসার করতে। দুই মেয়েকে নিয়ে ঈশা চলে গিয়েছে ওর বাবার বাড়িতে। সাফী ভাই জানেন ঈশা যে তোমাকে ভীষণ পছন্দ করে। তাই আমাকে অনুরোধ করেছেন আমি যেন তোমাকে বলি ঈশাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে। তুমি কি ঈশার সাথে কথা বলবে ভাবী? ওর ফোন নাম্বার দেবো?

তাসমিয়ার প্রশ্ন শোনার পরও বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর নূহা বলল, কি কথা বলবো? আমার কাছেও দাম্পত্য জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশ্বাস। কারো প্রতি বিশ্বাস না থাকলে তাকে শ্রদ্ধা, সম্মান করাও যায় না। আর শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্ক টিকে থাকবে কিসের উপর ভিত্তি করে? ঈশার স্থানে আমি থাকলে আমি নিজেও হয়তো ঈশার মতোই সিদ্ধান্ত নিতাম। আমি নিজে যে কাজ করবো সেই কাজের বিপরীত কিছু করার জন্য আরেকজনকে কিভাবে উৎসাহিত করবো? তুমি বরং তোমার ভাইজানকে বলো এই বিষয়টা দেখতে। উনি আমার চেয়ে উত্তম পরামর্শ দিতে পারবেন সাফী ভাইকে উনার করণীয়র ব্যাপারে।

তাসমিয়া বলল, ভাইজানকে আমি বলেছি ভাবী। ভাইজান সাফী ভাইকে বিকেলে আসতেও বলেছেন কথা বলার জন্য। কিন্তু ঈশার সাথে কথা তোমাকেই বলতে হবে। ভাইজানও এই কথাই বলেছেন আমাকে।

কোন কথা?

ভাইজান বলেছেন, তোমাকে ভাবীকে বলো ঈশার সাথে কথা বলতে। দুষ্টু মিষ্টি মিশ্র হাসির অভিব্যক্তি ছড়িয়ে পড়লো তাসমিয়ার চেহারা জুড়ে। কিছু কিছু ব্যাপারে নূহা ভীষণ রকম অনুদার সেই তথ্য বেশ ভালো করেই জানা আছে তাসমিয়ার। জানে যে ব্যাপারগুলোতে নূহা কাউকে কনভিন্স করতে নারাজ তারমধ্যে একটি হচ্ছে বিশ্বাস ভঙ্গ। বিশেষ করে দাম্পত্য সম্পর্কে ধোঁকা দেয়া একেবারেই মেনে নিতে পারে না নূহা। সেজন্যই আগে জাওয়াদের কাছেই গিয়েছিল ঈশা, সাফীর সমস্যা নিয়ে তাসমিয়া। কারণ পুরো দুনিয়াতে জাওয়াদই একমাত্র ব্যক্তি যার বলা কোন কথা অপছন্দীয় হলেও বিরোধ করার আগে নূহা দ্বিতীয়বার ভেবে দেখে।

বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে থাকার পর নূহা বলল, সাফী ভাই যখন তোমার ভাইজানের সাথে কথা বলতে আসবেন আমাকে বলো। আমি আড়াল থেকে উনাদের কথোপকথন শুনবো। এরপর যদি আমার মনেহয় ঈশার সাথে কথা বলা উচিত তাহলে বলবো ইনশাআল্লাহ।

তাসমিয়া বলল, ঠিকআছে ভাবী। কোন ব্যাপার নিজে মেনে নিতে না পারলে, অন্যকে মানাতে যাওয়াটা আসলেই অনেক কঠিন।

নূহা হেসে বলল, উহু, মোটেই কঠিন না। বরং নিজে মান্য বা আমল না করে অন্যকে সেই ব্যাপারে উৎসাহিত করাটা বর্তমানে মানুষের স্বভাবধর্মে পরিণত হয়েছে। নিজে ভুলের পথে থেকে অন্যকে সঠিক পথের দিশা বাতলে দেয়ার মানুষের অভাব নেই। সেজন্যই হয়তো মাহফিলে স্ত্রীর হক আদায়ের উপরে বক্তব্য উপস্থাপন করা ব্যক্তি ঘরে ফিরে নিজের স্ত্রীকে অপমান, ভৎর্সনা, এমনকি গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেন না। কিন্তু আমি এমন কিছু করতে চাইনা। আমি নিজে যা করবো না, অন্যকেও তা করতে বলবো না। যে বিষয়টা আমার পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন, তেমন কিছু করার জন্য আমি কেন অন্য কাউকে বোঝাতে যাবো?

হুম, তোমার কথাও ঠিক আছে ভাবী। আচ্ছা তুমি সাফী ভাইয়ের কথা শুনে দেখো। এরপর যদি তোমার মনেহয় ঈশার সাথে কথা বলা উচিত তাহলে বলো। এখন ঈশার কথা বাদ। এখন আমার দুঃখের কথা শোনো এবং সমাধান দাও।

নূহা হেসে বলল, শোনাও তোমার দুঃখগাঁথা।

তাসমিয়া বলল, তোমার ভাই আমার হাজবেন্ড কম, দোস্ত বেশি এই তথ্য তো জানোই। এমনিতে সে ভীষণ ভালো একটা ছেলে এই তথ্যও তুমি জানো। সেই তথ্য তুমি জানো না সেটা হচ্ছে রাগ হলেই তোমার ভাই আউলা ঝাউলা হয়ে যায়। আমি রাগ করার মতো কর্মকান্ড করি সেটা মানছি। কিন্তু রাগ করার মতো কিছু করলেই কি সবসময় রাগ করতে হবে? ভালোবাসার মতো কত কাজও তো করি। কই সবসময় তো ভালোবেসে ভাসিয়ে দেয়না আমাকে। তাহলে রাগ দেখাতে এমন ভুলে যায় না কেন? ব্যস্ততার কারণে রাগ দেখানোর সময়ের অভাবে বকেয়াই পরে থাকে না কেন? তুমিই বলো ভাবী আমি কি খুব বেশি ভুল কিছু বলেছি?

নূহা হাসতে হাসতে বলল, মোটেই না।

তাসমিয়া বলল, তবে রাগ দেখানো নিয়েও আমার তেমন কোন অভিযোগ নেই। রাগলে তোতলা টাইপ হয়ে যায় তোমার ভাই। তোতলামো কথাগুলো শুনতে এত্তো কিউট লাগে যে কি বলবো! আমি ওর কিউটনেস দেখাতেই ব্যস্ত থাকি বিধায় রাগ করে কি বলছে না বলছে গায়ে মাখি না কখনোই খুব একটা। বকা দিলেও আমিই নিজ থেকে যেয়ে কথা বলি।। কিন্তু উমার ঠিক আমার উল্টো। আমি যদি রাগ করে কিছু বলি ওর গালে পানি এসে যায় একদম। মানে ফুলে ঢোল আরকি! সমবয়সী বিয়ে করার জ্বালাও কম না বুঝলে ভাবী। এই যেমন, তিন বাচ্চাকে আমার কাছে রেখে লাফাতে লাফাতে ছোট ফুপির ছেলের বিয়ে খেতে চলে গেলো গত পরশু। কথা ছিল গতরাতে চলে আসবে। কিন্তু ভাই-বন্ধুদের সাথে আনন্দে মশগুল থেকে আসেনি। আজকে ফার্স্ট ফ্লাইটে ওর চলে আসা উচিত ছিল কিনা বলো? আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম নয়টায় মধ্যে উমার আমার সম্মুখে থাকবে ইনশাআল্লাহ। ওর পছন্দের নাস্তাও রেডি করলাম ফজরের পর না ঘুমিয়ে। নাস্তা রেডি করে ফুপির বাসায় ফোন করেছিলাম উনাদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য। তখন কথায় কথায় ছোট ফুপি জানালো উমার এখনো ঘুমোচ্ছে। মাথায় তখন বাজ পড়বে কিনা বলো? অবশ্যই পড়বে। আমারও পড়লো। মনেহলো একা জ্বলবো কেন? যার কারণে বাজ পড়েছে তারেও পুড়িয়ে ছারখাড় করে দেবো। যাইহোক, ফোন করে লেডি টারজান হয়ে কিছুক্ষণ চিৎকার করলাম। তোমার ভাইয়ের এতবড় দুঃসাহস সে নিজের ভুল স্বীকার না করে উল্টা আমাকে ঝাড়ির উপর ঝাড়ি। কবে আমার কারণে তার মেয়েদের জ্বর হয়েছে, কবে তার ছেলে একা একা রান্নাঘরে গিয়ে হাত পুড়িয়েছে, কবে আমি সুপার মার্কেটে গিয়ে নিজের মনে কেনাকাটা করতে করতে বাচ্চাদেরকে আরেক সারিতেই ফেলে এসেছিলাম, ইত্যাদি ইত্যাদি বিশাল লিষ্ট। বললাম, চিৎকার করে এসব কথা বলছো কেন? ফুপিরা শুনলে কি ভাববে? উমার বলল, ফুপিরা যাতে শোনে সেজন্যই জোরে জোরে বলছি। তোমার কর্মকান্ড মাইকিং করে বলার মতো। বাড়ির সবার জানা উচিত কেমন মেয়ে তারা আমার ঘাড়ে চাপিয়েছে। আর কিছু না বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। এরপর থেকে আমার মাথা কাজ করছে না। তুমি বুদ্ধি দাও কিভাবে ঘাড়ের বোঝা বাড়িয়ে ওর ঘাড় মটকে দেয়া যায়। আমি মটমট শব্দও শুনতে চাই ওর ঘাড় ভাঙ্গার। হাসি থামাও তো ভাবী পরামর্শ দাও।

নূহা হাসতে হাসতে বলল, পরামর্শ থাক তারচেয়ে দোয়া দেই। দোয়া করি, সারাজীবন তোমরা দুজন এমনই থাকো, খুনসুটি ভালোবাসা দিয়ে পরস্পরকে আঁকড়ে রাখো। কখনো সখনো হলে হোক মত পার্থক্য,কিন্তু উভয়ের মন থাক একাকার অটুট থাকুক ঐক্য।

তাসমিয়া হেসে বলল, তোমার দোয়ায় আমীন।

একটুক্ষণ চুপ থেকে হাসি মুখে নূহা বলল, সুইজারল্যান্ড গিয়ে তুষার ঝড়ে আটকা পড়েছিলাম একবার। আমাদের থাকার প্ল্যান ছিল না। সকালের ফ্লাইটে গিয়েছিলাম। কাজ শেষ করে বিকেলের ফ্লাইটেই ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু প্রচুর তুষারপাতের কারণে আটকা পরে গিয়েছিলাম। তাও আবার মাঝপথে গাড়ির ভেতর। সামনে যাবার পথ ছিল বন্ধ আর পেছনে আমাদের মতো শুভ্র বরফের শ্রাবণে আটকা পরা আরো কয়েকজন ব্যক্তি। করুন চোখে আমার সফরসঙ্গীর দিকে তাকিয়েছিলাম। উনি মিষ্টি করে হেসে আশ্বাস ভরা কন্ঠে বলেছিলেন, এদিকটাতে এমনটা হয় প্রায়ই। চিন্তার কিছু নেই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু ইনশাআল্লাহ। কিন্তু উনার কথা উল্টো প্রমাণিত হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁধার নেমে এলো এবং সেই সাথে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। গরম কাপড় যা ছিল তা মোটেই যথেষ্ট ছিল না। কোথাও থেকে গরম কাপড় কিনে নেবার মতো অবস্থাও ছিল না। আমার সফরসঙ্গী বড়ই রোম্যান্টিক ছিলেন। ঐ রকম ভয়ঙ্কর ঠান্ডার মধ্যেও মুখে হাসি টেনে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, স্বামীরা শত ভালো কথা বললেও তো স্ত্রীদের সেটা মনঃপুত হয় না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে বলে দিয়েছেন, “আমি তোমার পরিচ্ছদ এবং তুমি আমার পরিচ্ছদ”। সুতরাং, একে অন্যেকে ঢেকে রাখার, উষ্ণতা দেয়াটাই আমাদের ফার্স্ট ডিউটি। অন্যসময় হলে এই আহ্বান হয়তো বাতাসেই উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু ঐ মূহুর্তে দরকার ছিল পরিচ্ছদের, তারচেয়েও বেশি উষ্ণতার।

হাসি একান ওকান বিস্তারিত করে তাসমিয়া হেসে বলল, ভাইজান ছিলেন তোমার সাথে?

তাসমিয়া প্রশ্ন শুনেও না শোনার ভান করে হাসি মুখে নূহা বলল, সূরা বাকারাহ এর ১৮৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,” তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ”। জীবনে এরআগে অসংখ্যবার এই আয়াত ও তার ব্যাখ্যা পড়েছিলাম, শুনেছিলাম। কিন্তু সেদিন প্রথম আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েছিলাম উষ্ণতার আশায়। অন্যরকম একটা অনুভূতি ছিল ভালো লাগার। কিন্তু তারচেয়েও বেশি ছিল কারো পরিচ্ছদ হবার উপলব্ধি। পোশাক আসলে কি? যা আমাদেরকে ঢেকে রাখে। কিন্তু এই ঢেকে রাখার মাঝেও আছে বৈচিত্রতা। পরিবেশ-পরিস্থিতি, ঋতু-প্রকৃতি, আবহাওয়া ইত্যাদির প্রভাবে পোশাকের বদলে যাওয়া ধরণ। গরমের সময় পাতলা, নরম সুতি কাপড়ের পোশাক কতই না আরামদায়ক। শীতের সময় সেই পোশাকই হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক কষ্টের কারণ। আবার শীতপ্রধান দেশের ভারি ওভারকোর্ট মরুভূমিতে বড়ই বেমামান। তেমনি বরষার রেইনকোর্ট গায়ে বসন্তের বুকে চলাও হাস্যকর। মূলকথা, বদলে যায় পোশাকের ধরণ, যখন হয় পরিবেশ ও অবস্থার পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তন মোটেই অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। বরং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য অতীব জরুরি। মনে প্রশ্ন জাগাটা খুব স্বাভাবিক যে, তাহলে কি পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভেদে, মনের ঋতু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনে আমাদের মানসিক পরিচ্ছদের বদলটাও স্বাভাবিক নয়? স্বাভাবিকের সাথে সাথে অতীব জরুরিও আসলে।

হুম, এভাবে তো ভেবে দেখিনি কখনো। বললো তাসমিয়া।

নূহা বলল, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনটাকে ভীষণ অদ্ভুত, বিস্ময়কর মনেহয় সবসময়ই। দুজন মানুষ যাদের মধ্যে থাকে না কোন রক্তের সম্পর্ক, থাকে না আত্মীয়তার বন্ধন। না থাকে বন্ধুত্ব, না কোন গভীর পরিচিতি। তবুও কি বিস্ময়কর ভাবে জুড়ে যায় পরস্পরের সাথে। এমন একটা বন্ধন যেটা মোটেই অটুট না। বরং ভেঙে যেতেই পারে প্রতিকূলতায় এমন গ্যারান্টি প্রাপ্ত। অথচ সেই বন্ধনের উপর ভর করেই দুজন মানুষ শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস, ভরসা ও ত্যাগের ফোঁড়ে গড়ে তোলে সুখ-স্বপ্ন-ভালোবাসার নকশীকাঁথা। অচেনা দুজন মানুষ হয়ে যায় সবচেয়ে আপন কেউ, কাছের কেউ, চিরচনা কেউ, সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী, মর্মব্যথী, পরম নির্ভরতার ও প্রশান্তির আশ্রয়। আগলে রাখে একে অন্যেকে সকল নেতিবাচকতা থেকে। ঠিক যেন পোশাকের মতোই। তবে খুব কম সময়ই হয়তো খেয়াল থাকে পোশাকের বৈচিত্রতার কথা। পরিবেশের সাথে সামঞ্জন্সতার কথা। বর্তমান অবস্থায় পরিহিত পোশাকটা ঋতু ও আবহাওয়ার সাথে মানান সই কিনা সেই বিবেচনাটা খুব জরুরি। কারণ কনকনে ঠান্ডায় কারো তরে ফিনফিনে মসলিন হয়ে কি লাভ? কি লাভ প্রখর রৌদ্দুরে উলের সোয়েটার হয়ে? আবার কে বলেছে অঝর শ্রাবণে ছাতা হয়ে লাভ নেই? কে বলেছে ছাতা পরিচ্ছদ নয়? কে বলেছে মরুর বুকে ঝর্ণাধারাই হতে হবে? সাইট ব্যাগে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বটল হওয়া যাবে না? এই কথাই বা কে বলেছে?!

এভাবে তো কখনোই চিন্তা করিনি ভাবী।

এখন বসে বসে ভাবো। আমি ততক্ষণে পতিসেবা করে আসি। নাস্তা নিয়ে আসি তোমার ছোট ভাইয়া। বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো নূহা।

আর তাসমিয়া গালে হাত দিয়ে ভাবনায় মশগুল হলো।

চলবে..

পর্ব-৪

 

স্মৃতির জোনাকি…৪

স্মৃতির জোনাকি…৪


আফরোজা হাসান


মামণি একই রকম শাড়ি দুইটা কেন? বড় বড় আঁখিদুটি আরেকটু বড় করে বেশ অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো নাবিহা।

প্রশ্ন শুনে বুক সেলফ গুছানো ছেড়ে হাসি মুখে মেয়ের দিকে তাকালো নূহা। সেই হাসি সম্পূর্ণ চেহারাতে বিস্মৃত করে বলল, প্রথম যেদিন আমার মাঝে তোমার অস্তিত্ব টের পেয়েছিলাম আমার কি মনে হয়েছিল জানো?

কি মনে হয়েছিল মামণি? আহ্লাদিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো নাবিহা।

এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে মেয়েকে কাছে টেনে নিয়ে সুখানন্দ ও মমতা মিশ্রত কন্ঠে নূহা বলল, মনে হয়েছিল পুরো পৃথিবীটা ফুলে ফুলে ছেয়ে গিয়েছে। আকাশের বুকে বসেছে লক্ষ, কোটি নক্ষত্রের মেলা। ইচ্ছে করছিল সমস্ত ফুল আর নক্ষত্র তুলে নিয়ে একটা ফুলেল দোলনা বানাতে তোমার জন্য। যে দোলনার ভাঁজে ভাঁজে ঝিকমিক করবে বর্ণিল নক্ষত্রের আলো। আনন্দে আমি দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম। রিমঝিম বরষা রুপে আনন্দরা অবিরাম ঝরছিল মনের মাঝে। কত শত প্ল্যান যে করে ফেলেছিলাম সেদিন তোমাকে ঘিরে। তারমধ্যে একটি প্ল্যান ছিল তুমি যেদিন প্রথম শাড়ি পড়বে সেদিন মা আর মেয়ে দুজন একই রকমের শাড়ি পড়বো, চুড়ি পড়বো। এরপর হাত ধরাধরি করে বাগানে ঘুরে বেড়াবো।

আনন্দ, খুশি, মুগ্ধতা ও ভালোবাসার মিশ্র পরশে নাবিহা দুহাত বাড়িয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো মাকে। এরপর শাড়ি দুটো নিয়ে কিছুক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরে রেখে আনন্দসিক্ত কন্ঠে বলল, সেদিন তুমি আমাদের দুজনের জন্য একই রকম শাড়ি কিনেছিলে?

নূহা হেসে বলল, হুম। স্পেশাল কিছু মূহুর্ত আছে যা একবারই আসে আমাদের জীবনে। কিন্তু সেই মূহুর্তগুলোর প্রাপ্তি জীবনকে জড়িয়ে থাকে প্রতিক্ষণে। তোমার অস্তিত্বের উপলব্ধি তেমনই একটি মূহুর্ত।

নাবিহা বলল, ইশশ, কতই না ভালো হতো আমি যদি তোমার ভেতর একা থাকতাম। তাহলে তোমার সমস্ত অনুভূতি শুধু আমার একার হতো। ভাইয়া আর জিশানকে ভাগ দিতে হতো না।

নূহা হেসে ফেললে নাবিহাও হাসতে হাসতে বলল, অনেক বেশি সুন্দর শাড়ি দুটা মামণি। কিন্তু এত বছর তুমি আমাকে দেখাওনি কেন?

নূহা হেসে বলল, আমি তো আজকেও তোমাকে দেখাতে চাইনি। আমার ইচ্ছে ছিল স্পেশাল কোন দিনে তোমাকে এই উপহারটা দেবো। সিন্দুকে বন্দী থেকে ভাঁজে ভাঁজে শাড়ি যাতে নষ্ট হয়ে না যায় তাই মাঝেমধ্যে রোদে মেলে দেই। গতকালও দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম আজকে আবার লুকিয়ে রাখবো সিন্দুকে। কিন্তু তার আগেই তুমি দেখে ফেলেছো।

নাবিহা হেসে বলল, ঠিকআছে আমি আমার মস্তিষ্কের মেমোরী কার্ড থেকে শাড়ি দেখার এই দৃশ্যটি ডিলিট করে দিলাম। তুমি শাড়ি দুটা সিন্দুকে ঢুকিয়ে রাখো মামণি। স্পেশাল সেই দিনটি যখন আসবে তখন তুমি আর আমি এই শাড়ি পড়বো, চুড়ি পড়বো এরপর হাত ধরাধরি করে বাগানে হাঁটবো।

নাবিহার কথাগুলো আনন্দ-বেদনার মিশ্র ঢেউ তুলে দিলো নূহার মনে। আনন্দ, কারণ এতটা বছর ধরে কল্পনায় দেখা সেই আকাঙ্ক্ষিত দিনটি হয়তো খুব শিঘ্রীই বাস্তব হতে চলছে। বেদনা, কারণ তার ছোট্ট পরীটা বড় হয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। মনেহয় এই তো সেদিন নূহার অন্ধকার জীবনকে আলোকিত করতে হাজির হয়েছিল তিনটি নক্ষত্র। দেখতে দেখতে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় আঠারো বছর। আর মাত্র চার মাস পরই আঠারোর ঘর ছুঁয়ে দেবে জিহাদ, জিশান, নাবিহা। নাবিহাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিয়ে নূহা হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ।

নাবিহা হেসে বলল, এখন তাহলে বলে দাও ঈদে আমি কাকে কি গিফট দেবো। তুমি তো জানো আমার বাজেট অল্প। অল্প বাজেটেই আমি বাড়ির সবার জন্য কিছু না কিছু উপহার কিনতে চাই। এবং একই সাথে চাই যাকে যেই উপহার দেবো সেটা যেন তার কাজে লাগে। পাপা, আদীব্বা, বাবার জন্য উপহার আমি সিলেক্ট করে ফেলেছি। তিনজনের জন্যই পাঞ্জাবী অর্ডার করেছি। আমার দেয়া পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে পাপা, আদীব্বা, বাবা ঈদের নামাজে যাবে ইনশাআল্লাহ। আমার খুব ইচ্ছে ছিল ভাইয়া, জিশান আর জারিফের জন্যও একই রকম পাঞ্জাবী অর্ডার করার। কিন্তু তাহলে বাড়ির সবার জন্য উপহার নিতে পারবো না।

নূহা হেসে বলল, তুমি চাইলে আমার কাছ থেকে লোন নিতে পারো। পরে শোধ করে দিও।

নাবিহা বলল, আমিও প্রথমে এমনটাই করবো ভাবছিলাম। কিন্তু পরে পাপার কথা মনে পড়লো। পাপা একদিন বলেছিলেন, অর্থ ধার করা যায় কিন্তু আনন্দ না। নিজ সামর্থ্যর ভেতর থেকে মানুষের জন্য কিছু করতে পারার যে সুখ সেটা কখনোই অন্য কারো কাছ থেকে ধার করে পাওয়া সম্ভব না।

নূহা হেসে বলল, তোমার পাপা একদম ঠিক বলেছেন। আমার থেকে লোন নিয়ে তুমি হয়তো সবাইকে পছন্দনীয় উপহার দিতে পারবে। কিন্তু সেই প্রশান্তি কখনোই অনুভব করবে না, যেমনটা তোমার অল্প বাজেটের মধ্যেই সবার জন্য উপহার কিনলে অনুভূত হবে।

নাবিহা হেসে বলল, এজন্যই তো লোন চাইনা। পরামর্শ চাই অল্প টাকায় সবার জন্য অধিক খুশি কেনার।

নূহা হেসে বলল, পাঞ্জাবীর সাথে তোমার পাপাকে একটা গাছও উপহার দিও।

পাপার বেডরুমের জন্য আমি অলরেডি স্নেক প্ল্যান্ট কিনে ফেলেছি।

নূহা হেসে বলল, এত গাছ থাকতে স্নেক প্ল্যান্ট।

নাবিহা হেসে বলল, নাম শুনে তুমি ভীত হয়ো না মামণি। গুণের শেষ নেই স্নেক প্ল্যান্টের। আমি স্টাডি করে জেনেছি স্নেক প্ল্যান্ট রুমে থাকলে রুমে অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি হয়না। বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও শুষে নেয়। এছাড়াও স্নেক প্ন্যান্ট নাইট্রোডেন ডাই অক্সাইড ও ফার্ম্যালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসসমূহকেও শোষণ করে ঘরকে দূষণমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

নূহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে তো পার্ফেক্ট সিলেকশন। আচ্ছা আমাকে চিন্তাভাবনা করার জন্য কিছুটা সময় দাও। বিকেলে তোমাকে জানাবো কাকে কি উপহার দেয়া যায়।

কথাবার্তা তো শেষ এখন তাহলে আপনি প্রস্থান করেন আম্মাজান। কারণ আমার ভাবীজানের সাথে অতি জরুরি বিষয়ে শলাপরামর্শ করতে হবে আমাকে এখন। রুমে ঢুকতে ঢুকতে বললো তাসমিয়া।

নাবিহা চোখ বড় বড় করে বলল, তারমানে তুমি এতক্ষণ আমার আর মামণির কথা আড়িপেতে শুনেছো? আড়িপেতে কথা শোনা খুবই দুষ্টু কাজ ফুয়ি।

তাসমিয়া হেসে বলল, তোমার আর তোমার মার আবেগঘন আলাপনে যে আমি বিঘ্ন ঘটাইনি সেই উত্তম কাজের তুলনায় এই দুষ্টু কাজ খুবই গৌন্য আম্মাজান। পরিমাপ করলে দেখতে পাবে উত্তম কাজের দ্বারা মন্দ কাজকে ঢেকে দেবার পরও খানিকটা উত্তম রয়ে গিয়েছে। সেটুকু পরে কখনো কাজে লাগাবো ইনশাআল্লাহ।

হেসে ফেললো নূহা আর নাবিহা। এরপর মা আর ফুপিকে কথা বলার সুযোগ দিয়ে নাবিহা চলে গেলো। নূহা হেসে বলল, দুই কাপ চা বানিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বোস। বুকসেলফ গুছিয়ে আমি আসছি ইনশাআল্লাহ।

জো হুকুম ভাবীজান বলে তাসমিয়া চা বানাতে ছুটলো।

চলবে..

পর্ব-৩

 

ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি জুতাপেটা

ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি জুতাপেটা


নারী সংবাদ


গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলা এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার শাস্তি হিসেবে দুই যুবককে জুতাপেটা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উপজেলার কুশলা ইউনিয়নের মান্দ্রা গ্রামে ধর্ষণ চেষ্টার সালিশ বৈঠকে হামিদ শেখ (১৯) ও হালিম শিকদার (১৮) নামে দুই যুবককে জুতাপেটা করা হয়।

হামিদ শেখ মান্দ্রা গ্রামের হাবিব শেখের ছেলে। অপরদিকে হালিম শিদকার একই গ্রামের আনিস শিকদারের ছেলে। এলাকাবাসি সূত্রে জানাগেছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় মান্দ্রা ইউনাইটেট ইনস্টিটিউশনের ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার সময় হামিদ শেখ ও হালিম শিকদার নামের দুই যুবক ওই স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এ সময় ওই ছাত্রীর চিৎকারের আশপাশের লোকজন ছুটে আসলে হামিদ ও হালিম পালিয়ে যায়।

বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়ে গেলে মঙ্গলবার মান্দ্রা গ্রামের জনৈক আজাহার শেখের বাড়িতে এক সালিশ বৈঠক হয়। সালিশ বৈঠকে হাবিব ডাক্তার, হামিম শেখ, সালাম দাড়িয়া, ইলিয়াছ শেখ, মামুন শেখ, হাসান মিয়া নামে এলাকার সালিশবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সালিশবর্গদের নির্দেশে মামুন শেখ ও হাসান মিয়া হামিদ এবং হালিমকে জুতাপেটা করে।

সালিশকারক হাবিব ডাক্তার বলেন, এলাকার শান্তির জন্য হামিদ ও হালিমকে জুতাপেটা করা হয়েছে। তবে ওই দুই যুবকের অভিভাবকরাই তাদের জুতাপেটা করেছে।

ওই স্কুল ছাত্রীর পিতা বলেন, এলাকার মুরব্বিদের অনুরোধে সালিশ বৈঠকের মাধ্যেমে বিষয়টি মিমাংসা হয়েছে। সালিশ বৈঠকে ওই দুই যুববকে জুতাপেটা করা হয়েছে। এ ছাড়া সাদা কাগজে একটি মিমাংসাপত্র লেখা হয়েছে। মিমাংসাপত্রটি সালিশকারক হামিম শেখের কাছে রয়েছে।

কোটালীপাড়া থানার ওসি (তদন্ত) মো: জাকারিয়া বলেন, এ ধরণের ঘটনায় সালিশ বৈঠকের মাধ্যেমে মিমাংসা করার আইনগত কোন বিধান নেই। ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দায়ের করলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।

সুত্র: নয়া দিগন্ত।

 

গণপিটুনিতে নিহত রেনুর পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল

গণপিটুনিতে নিহত রেনুর পরিবারকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল


নারী সংবাদ


রাজধানীর বাড্ডায় গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেনু নিহত হওয়ার ঘটনায় তার পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

রেনুর পরিবারের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান।

চার সপ্তাহের মধ্যে জননিরাপত্ত বিভাগের সচিব, শিক্ষা সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনার, বাড্ডা থানার ওসি, সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা বোর্ডের সভাপতিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

তাসলিমা বেগম রেনুর বোন নাজমুন নাহার নাজমা ও ভাতিজা সৈয়দ নাছির উদ্দিন এ রিট দায়ের করেন।

২০ জুলাই রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করানোর তথ্য জানতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেনু (৪০)। এসময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে প্রধান শিক্ষকের রুম থেকে টেনে বের করে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

শরীর ভালো রাখার উপায়

শরীর ভালো রাখার উপায়


স্বাস্থ্যকথা


শরীর এবং মন এক সাথে কাজ করে। মন ভালো থাকলেও শরীর ভালো না থাকলে কোনকিছুই ভালো লাগে না। তাছাড়া সুস্থ, সুন্দর ও ফিট শরীর মনকে ভালো করে দেয়। স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনই পারে কেবন মাত্র মন মেজাজ ঠিক রাখতে এবং সুন্দর ও ফিট শরীর বজায় রাখতে।

মন এবং শরীর সুস্থ থাকার কিছু নিয়মাবলীঃ

হাটতে হবেঃ
হাঁটুন। হাটার চাইতে আর কোনো ভাল ব্যয়াম নেই। ফলে মন এবং শরীর সতেজ থাকে।

পুষ্টিকর খাবার
নিয়মিত খাবার খেতে হবে। খাবার তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার (যেমন শাক সবজি এবং ফলমূল) বাড়ান। চর্বিজাতীয় খাবার কমিয়ে আনুন। ফাস্টফুড জাতীয় খাবার কমিয়ে দিতে হবে।

পানি পান করুন
কমপক্ষে ১০-১২ গ্লাস পানি পান করুন। খাবার শেষে অন্তত এক থেকে দুই ঘণ্টা পর পানি পান করুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি খাবেন।

সালাদ এবং সবজি খানঃ
প্রত্যেকবারের খাবারের সময় কাঁচা সবজির সালাদ খাবেন। টাটকা শাক সব্জি খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।

অতিমাত্রায় চা ও কফি পরিহার
অতিমাত্রায় চা ও কফির অভ্যাস ত্যাগ করার অল্প করে অভ্যাস করা যেতে পারে।

পরিমিত ঘুম
প্রত্যেকের ঘুমের সময় ভিন্ন ভিন্ন হিসাব ফলো করে। কারো ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস আবার কারো ৫ থেকে ৬ মিনিট। সুস্বাস্থ্য ও ফিগারের জন্য নিয়মিত ও পরিমিত ঘুম প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সবার আগে চাই সুস্থ শরীর।

 

মুরগীর গোস্তের স্যুপ

মুরগীর গোস্তের স্যুপ


রেসিপি

 


মুরগির গোস্তের কয়েকটা টুকরো নিয়ে ১৫-১৬ কাপ পানিতে একটু লবণ দিয়ে সিদ্ধ করি। পানি শুকিয়ে অর্ধেক হলে নামিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। হয়ে গেলো মুরগির স্টক।

উপকরণ :

১. স্টক ১০-১১ কাপ,
২. তেল ১ টেবিল চামচ,
৩. সয়াসস ১ টেবিল চামচ,
৪. চিনি ১ টেবিল চামচ,
৫. মুরগির বুকের মাংস ১ কাপ (মিহি করে কেটে নিতে হবে),
৬. লবণ পরিমাণমতো।

প্রস্তুত প্রণালি :

গোস্তের হাড় থেকে ছাড়িয়ে মিহি করে কেটে সয়াসস দিয়ে মেখে ১০ মিনিট রাখতে হবে। কর্নফ্লাওয়ার স্টক দিয়ে গুলিয়ে নিতে হবে। গরম স্টকে তেল-লবণ মাখানো গোস্ত কিছুক্ষণ সিদ্ধ করে আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। শেষে চিনি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে। হয়ে গেলো মজাদার মুরগীর স্যুপ।

 

কাবিননামায় নারীদের জন্য সুখবর

কাবিননামায় নারীদের জন্য সুখবর


নারীর  জন্য আইন 


বিয়ের কাবিননামার পাঁচ নম্বর কলাম থেকে কনের বেলায় ‘কুমারী’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘অবিবাহিতা’ যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এটাকে নারীদের জন্য সুখবর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

কারণ এক্ষেত্রে ‘কুমারী’ শব্দটি ছিল নারীদের জন্য অসম্মানজনক বলে মনে করা হয়।

হাইকোর্টের নির্দেশে মুসলমান নারী-পুরুষের বিয়ের নিবন্ধন ফরমের পাঁচ নম্বর কলাম থেকে কনের বেলায় ‘কুমারী’ শব্দ বাদ দেয়া ও চার নম্বর কলামে (ক) যুক্ত করে বরের ক্ষেত্রে ‘বিবাহিত’, ‘বিপত্নীক’ ও ‘তালাকপ্রাপ্ত কিনা’ শব্দগুলো সংযোজন করতে বলা হয়েছে।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী বিয়ের কাবিননামায় নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করার বিষয়ে রুল নিষ্পত্তি করে রোববার বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরীর বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

কোর্ট রায় দিয়ে বলেছে, ‘কুমারী’ শব্দটা বাদ দিতে হবে। কারণ এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারের ব্যপার। কাবিননামায় এর উল্লেখ থাকা মানে বৈষম্য সৃষ্টি করা। আদালত রায়ে একটি কলামও যোগ করে দিয়েছেন। যেখানে লিখতে হবে বর বিবাহিত কিনা, তালাকপ্রাপ্ত কিনা কিংবা বিপত্মীক কিনা।

কাবিননামার ফরমে পাকিস্তান আমলে তৈরি। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের জায়গায় বাংলাদেশ বসানো ছাড়া আর কোনো সংশোধন করা হয়নি।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইনের ৯ ধারার ওই অনুচ্ছেদটি বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, নারীপক্ষ এবং বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২০১৪ সালেল ৭ সেপ্টেম্বর রিট আবেদন করে।

আবেদনে বলা হয়, রেজিস্ট্রেশন ফরমে (নিকাহনামায়) শুধু কনের বৈবাহিক অবস্থা ও তথ্য সন্নিবেশিত করার জন্য অনুচ্ছেদ রয়েছে।

তবে বরের বৈবাহিক অবস্থা-সম্পর্কিত কোনো কলাম নেই। এটা নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। সংবিধানের ২৭, ২৮, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিষয়টি বৈষম্যমূলক এবং সংবিধান পরিপন্থী।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রেজিস্ট্রেশন ফরমের (নিকাহনামা) পাঁচ নম্বর কলাম কেন বৈষম্যমূলক ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না; তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।

ওই কলাম থেকে ‘কুমারী’ শব্দটি বিলোপ করে ফরমটি সংশোধন করা এবং বর সম্পর্কিত কোনো ক্রমিক ফরমে কেন উল্লেখ করা হবে না; তাও জানতে চাওয়া হয়।

জনপ্রশাসন সচিব, ধর্ম সচিব, প্রিন্টিং এবং প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচাকলসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এর মধ্যে রুল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে মতামত দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বেলায়েত হোসেন।

গত ১৬ জুলাই মতামত দেয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ফরমের ৫ নম্বার কলামে কলামে এই শব্দটি থাকা উচিত না। কারণ এই শব্দটি ব্যক্তির মর্যাদা ও গোপনীয়তাকে ক্ষুণ্ণ করে; যা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

এছাড়া ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এগুলো থাকা বাধ্যতামূলক নয়। মুসলিম শরীয়তে এ ধরনের শর্ত নেই।

#যুগান্তর

 

মানববন্ধনে অভিযোগ নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহারে হয়রানির শিকার হচ্ছে পুরুষরা

মানববন্ধনে অভিযোগ
নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহারে হয়রানির শিকার হচ্ছে পুরুষরা


নারী সংবাদ


নারী নির্যাতন আইনের সংশোধনের দাবি করে মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশনের ব্যানারে নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এ আইনের অপব্যবহারের দ্বারা নিরীহ পুরুষ ও তার পরিবারের লোকদের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। গতকাল ‘নারী নির্যাতন আইনের অপব্যবহার বন্ধ ও সংশোধন’-এর দাবিতে জাতীয় প্রেস কাবের সামনে এক মানববন্ধনে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, বাংলাদেশ নারী অধিকার স্বীকৃতির মাধ্যমে নারী উন্নয়নের প্রসার ঘটিয়েছে। সংবিধানেও ২৮ ও ২৯ নং অনুচ্ছেদে নারী অধিকারের কথা বলা আছে। এ ছাড়াও নারীদের সুরার জন্য দেশে একাধিক আইন আছেÑ এর মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন (দমন) আইন ২০০০-এ নারী ও শিশু সম্পর্কিত অপরাধগুলোকে চিহ্নিত করে তা প্রতিকারের বিধি-বিধান প্রণীত আছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু নারী ও শিশু অধিকারের এ বিধানগুলো নিয়ে অন্যকে ঘায়েল করার মাত্রা প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সংগঠনের মহাসচিব প্রকৌশলী ফারুক শাজেদ বলেন, তাদের সংগঠনের ২১ দফা দাবির ২য় ও অন্যতম দাবি হলো নারী নির্যাতন আইনের সংশোধন। কারণ এ আইনের অপব্যবহারের দ্বারা নিরীহ পুরুষ ও তার পরিবারের লোকদের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এ ছাড়াও মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলার কারণে ভুক্তভোগী ব্যক্তি সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক তির শিকার হন। কারো সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হলে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই অভিযোগ প্রমাণ না হোওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তের ছবি মিডিয়াতে প্রচার না করার ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি এর অপপ্রয়োগ বন্ধে নারী নির্যাতন দমন আইনকে সংশোধনের মাধ্যমে আরো যুগোপযোগী করার জন্য বিভিন্ন প্রস্তাবনা পেশ করেন। তিনি বলেন, নারী নির্যাতন মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী মামলা করতে গেলে আদালতের অনুমতি লাগে। তাই ভুক্তভোগীরা হয়রানির ভয়ে বাদির বিরুদ্ধে মামলা করতে চান না। তাই ভুক্তভোগীর আবেদন ব্যতিত, যা ১৭(২) ধারা মোতাবেক লিখিত হওয়া বাঞ্ছনীয়, তা উঠিয়ে দিয়ে বিচারক রায়ে মিথ্যা মামলাকারীকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে আইনের প্রয়োগ করা গেলে মিথ্যা মামলা নিঃসন্দেহে কমে যাবে।
এ ছাড়াও সুষ্ঠু তদন্ত ব্যতিত কাউকে যেন গ্রেফতার করা না হয়। তাই ১৮ ধারাকে সংশোধনে মাধ্যমে তদন্তে অবহেলাকে অসদাচরণ হিসেবে গণ্য ও মিথ্যা মামলায় সহায়তাকারীকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে বিধি অনুযায়ী তাৎণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তিনি।।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান শেখ খায়রুল আলম। তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনটিকে আরো যুগোপযোগী করার প্রয়োজন রয়েছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে যাতে কারো অধিকার বিঘিœত না হয় সে দিকেও দৃষ্টি রাখা জরুরি।
মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক তাইফুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক বাংলাদেশের আলোচিত চিত্রনায়ক আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশনের ঢাকা মহানগরীর সদস্য লিটন গাজী প্রমুখ।

সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে?

ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে?


ফাতেমা মাহফুজ


অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল একটি বিষয় নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করলো।বাস্তব সমাজে আসলে এই বিষয়ের সঠিক ধারনার খুবই অভাব।আর সে কারণেই মানুষের জীবনের অশান্তি,অস্থিরতা বেড়েই চলছে।

#ইসলাম সন্তান সম্পর্কে কি বলে#

বর্তমান সময়ে আমাদের আশে পাশে অনেক পরিবার আছেন যাদের সন্তান নেই। এই একটা সন্তান না হওয়ার জন্য তাদের স্বাভাবিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।তারা বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াদৌড়ি করছেন। কখনো কখনো মহিলাদের কে মানসিক চাপে রাখা হচ্ছে যে তার স্বামীকে আরেকটি বিয়ে দেয়া হবে।কখনো কখনো স্ত্রীকে সংসার ভেংগে চলে আসতে বলা হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের সুবাদে একে অপরকে দোষারোপ চলছে।অথচ মানুষ ভুলে যাচ্ছে এটা শুধুই আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

বর্তমান সময়ে এই ধরনের পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন কিছুই হচ্ছে না।

মূলত দুনিয়ায় আল্লাহর দেয়া অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে একটি হল সন্তান।আল্লাহ সব নিয়ামত সবাইকে দেন না।যেমন সুস্বাস্থ্য, সৌন্দর্য, অর্থ সম্পদ, জ্ঞান, প্রতিভা, মেধা এগুলো আল্লাহ এক একজনকে একেক্টা দিয়েছেন।

আল্লাহর ভাষায়ঃ
মানুষের জন্য নারী, সন্তান, সোনা-রূপার স্তূপ, সেরা ঘোড়া, গবাদী পশু ও কৃষি ক্ষেতের প্রতি আসক্তিকে বড়ই সুসজ্জিত ও সুশোভিত করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী মাত্র। প্রকৃতপক্ষে উত্তম আবাস তো রয়েছে আল্লাহ‌র কাছে।
(.৩-আলে-ইমরান:১৪.)

যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র ও কন্যা উভয়টিই দেন এবং যাকে ইচ্ছা বন্ধ্যা করে দেন। তিনি সব কিছু জানেন এবং সব কিছু করতে সক্ষম।
(.৪২-শূরা:৫০.)

বিভিন্ন নবী ও রাসূলকেও ঠিক একইভাবে পরীক্ষা নিয়েছেন-
এ অবস্থা দেখে যাকারিয়া তার রবের কাছে প্রার্থনা করলোঃ “হে আমার রব! তোমরা বিশেষ ক্ষমতা বলে আমাকে সৎ সন্তান দান করো। তুমিই প্রার্থনা শ্রবণকারী।” যখন তিনি মেহরাবে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন। (৩-আলে-ইমরান:৩৮.)

যাকারিয়া বললোঃ “হে আমার রব! আমার সন্তান হবে কেমন করে? আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি এবং আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা।” জবাব এলোঃ “এমনটিই হবে।আল্লাহ্‌ যা চান তাই করেন।” (৩-আলে-ইমরান:৪০.)
হে পরওয়ারদিগার! আমাকে একটি সৎকর্মশীল সন্তান দাও। (.৩৭-সাফ্ফাত:১০০.)

এমনকি বিবি আয়েশা রাঃ ও নিঃসন্তান ছিলেন।তবু তাদের মধ্যে কোন অসন্তোষ ছিলনা,বরং
নবী রাসূল গণ এই নিয়ামত আল্লাহর কাছে চেয়েছেন কিছু বিশেষ কারণেঃ
তারা প্রার্থনা করে থাকে, “হে আমাদের রব! নিজেদের স্ত্রীদের ও নিজেদের সন্তানদেরকে নয়ন শীতলকারী বানাও এবং আমাদের করে দাও মুত্তাকীদের ইমাম।”(সূরা ফুরকান-৭৪)

গর্ভ যখন ভারি হয়ে যায় তখন তারা দুজনে মিলে এক সাথে তাদের রব আল্লাহর কাছে দোয়া করেঃ যদি তুমি আমাদের একটি ভাল সন্তান দাও, তাহলে আমরা তোমার শোকরগুজারী করবো।
(.৭-আরাফ:১৮৯.)
তাদের উদ্দেশ্য ছিল একজন নেক উত্তরসুরী রেখে যাওয়া যে তাদের রেখে যাওয়া দ্বীনি দায়িত্ব পালন করবে।

তাই আল্লাহ কাউকে কাউকে সন্তান দান করেছেন তার সাথে সাথে এটাকে পরীক্ষা হিসেবে পাঠিয়েছেনঃ “এবং জেনে রাখো, তোমাদের অর্থ-সম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি আসলে পরীক্ষার সামগ্রী। আর আল্লাহর কাছে প্রতিদান দেবার জন্য অনেক কিছুই আছে।”
(.৮-আনফাল:২৮.)

এরপর আমি তোমাদেরকে তাদের ওপর বিজয় লাভের সুযোগ করে দিয়েছি এবং তোমাদেরকে সাহায্য করেছি অর্থ ও সন্তানের সাহায্যে আর তোমাদের সংখ্যা আগের চেয়ে বাড়িয়ে দিয়েছি।
(.১৭-বনী ইসরাঈল:৬.)
এ ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের একটি সাময়িক সৌন্দর্য-শোভা মাত্র। (.১৮-কাহাফ:৪৬.)

কাজেই অস্থিরতা, কষ্ট,হতাশা দূর করে মনে তাওয়াক্কুল টাকেই আরো জোরদার করতে হবে।অনেক চেষ্টা,দোয়া করার পরও যদি আল্লাহ আপনাকে এই নিয়ামত না দিয়ে থাকেন,তো আলহামদুলিল্লাহ! নিশ্চয়ই এমন কোন কল্যাণ আছে যা আমাদের জানা নেই।

তাই বিকল্প উপায়ে সৎ কাজের ধারা অব্যাহত রাখা জরুরি।
যেমনঃ সাদকায়ে জারিয়াহ র কাজ করে যাওয়া,কুরআনের দাওয়াত পৌছে দেয়া,দ্বীনের পথে সংগীদের নিয়ে কাতারবন্দী হয়ে লড়াই করা,দান সাদাকাহ করা,উত্তম কথা,লেখনী এই পৃথিবীতে রেখে যাওয়া।আর বারবার দোয়া কবুল না হলেও করতে থাকা কেননা দুয়া একটি অব্যার্থ আমল,যা কোন না কোন কল্যাণ অবশ্যই বয়ে আনবে।

আল্লাহ বলে দিচ্ছেনঃ “আসলে তো স্থায়িত্ব লাভকারী সৎকাজগুলোই তোমার রবের কাছে ফলাফলের দিক দিয়ে উত্তম এবং এগুলোই উত্তম আশা-আকাঙ্ক্ষা সফল হবার মাধ্যম।” (কাহাফ:৪৬.)
আল্লাহ আমাদের প্রকৃত কল্যাণ দান করুন। আমীন।

 

শিশুদের জন্য আলাদা আদালত হওয়া উচিত : বিচারপতি ইমান আলী

শিশুদের জন্য আলাদা আদালত হওয়া উচিত : বিচারপতি ইমান আলী


নারীর জন্য আইন


শিশু কিশোর অপরাধের বিচারের জন্য আলাদা শিশু আদালত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিমকোর্টের স্পেশাল কমিটি অন চাইল্ড রাইটসের (এসসিএসসিসিআর) সভাপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী।

সুপ্রিকোর্টের সম্মেলন কক্ষে ‘শিশু আইন ২০১৩’ নিয়ে বিভাগীয় পরামর্শ সভায় তিনি আজ এ মন্তব্য করেন। জাতিসংঘের শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ এবং সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ কমিটি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি নাইমা হায়দার আলোচনায় অংশ নেন। এ ছাড়া খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুালর বিচারক ও পাবলিক প্রসিকিউটর, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিতি ছিলেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিচারপতি ইমান আলী বলেন, শিশুদের জন্য পৃথক আদালত হওয়া উচিত। কারণ, শিশুদের বিচার হবে সংশোধনের উদ্দেশ্যে, শাস্তি দেয়ার উদ্দেশে নয়। শিশু আর প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর বিচার একরকম নয়। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে শিশুদের জন্য আলাদা আদালত রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও আমরা করতে পারিনি। তিনি বলেন, আইনেই বলা আছে শিশু অপরাধীর বিচার তাড়াতাড়ি করতে হবে। কেননা তাদের ভবিষ্যত সামনে। তাকে ভালো হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিশু আদালত স্থাপন করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছবি : সংগৃহীত & নয়া দিগন্ত

 

নিজের বুদ্ধিমত্তায় প্রাণে বাঁচল শিশু তানজিলা

নিজের বুদ্ধিমত্তায় প্রাণে বাঁচল শিশু তানজিলা


নারী সংবাদ


নিজের বুদ্ধিমত্তায় পাচারকারীদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের ১১ বছরে শিশু কন্যা তানজিলা আকতার। গত ১৯ আগস্ট (সোমবার) দুপুরে দেড়টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটেছে খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন সড়কে। তানজিলা ওই গ্রামের বেলাল সিকদারের মেয়ে।
উপজেলার রাজৈর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী তানজিলা জানায়, ওই সময়ে স্কুল থেকে সে বাড়িতে যাবার পথে পরিষদ সংলগ্ন মঠেরপাড় সড়কের মোড়ে একটি কালো রংয়ের মাইক্রোবাস এসে তার পাশে দাড়ায়। জনশূন্য ওই সড়কে গাড়ির দরজা খুলে পাচারকারীরা তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নাকের কাছে একটি রুমাল ধরার পর তানজিলা অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
পরে যখন তার জ্ঞান ফেরে, তখন তানজিলা নিজেকে একটি ঘরের তালাবদ্ধ রুমে আবিষ্কার করে। সেখানে আরো একটি শিশু অজ্ঞান অবস্থায় ওই রুমে পড়ে থাকতে দেখেছে সে। পাচারকারী দলের কেউ সেখানে নেই নিশ্চিত হয়ে তানজিলা রুমের জানালা ভেঙ্গে বাগানের মধ্য দিয়ে শরণখোলা-মোড়েলগঞ্জ সড়কের গাজীর ব্রীজ এলাকার মূল সড়কে উঠে ভ্যানযোগে চলে আসে। ওই রুমে থাকা অপর শিশুটির ভাগ্যে কি হয়েছে, তা সে বলতে পারেনি।

এদিকে, তানজিলার মা রিনা বেগম জানান, স্কুল থেকে টিফিনের সময় বাড়িতে ফিরতে দেরী হওয়ায় তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন এবং ওই দিন সন্ধ্যার কিছু পুর্বে তানজিলা ফিরে আসায় পরিবারে মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। পরে সংশ্লিষ্ট খোন্তাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন খাঁন ও পরিবারে কাছে তানজিলা ঘটনার বর্ননা করে।
তানজিলা জানায়, ওই এলাকায় তাকে নিয়ে গেলে ওই বাড়ির লোকেশন সে দেখাতে পারবে।
ভ্যানচালক আমড়াগাছিয়া গ্রামের সালাম ফকির মুঠোফোনে জানান, বিকাল ৫টার দিকে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জ মহাসড়কের গাজীর ব্রিজ এলাকায় স্কুল ড্রেস পরিহিত ওই মেয়েটিকে কাঁদতে দেখে তিনি নিয়ে আসেন।
শরণখোলা থানার অফিসার ইনচার্জ দিলীপ কুমার সরকার জানান, ঘটনাটি তিনি জেনেছেন। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।

সুত্র & ছবি : নয়া দিগন্ত।

 

দাম্পত্য সম্পর্কে কি প্রয়োজন?

দাম্পত্য সম্পর্কে কি প্রয়োজন?


দাম্পত্য


শ্রদ্ধা এবং সুন্দর ব্যবহার, সুন্দর হাসিমুখ সম্পর্ক তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই দুজনকে সেটি তৈরি করতে হবে। আপনার উৎফুল্ল আচরণ হতে পারে আপনাদের জন্য খুব দামি একটি উপহার।

দোদুল্যমান মন
কাউকে একইসাথে ভালোবাসা এবং ঘৃণা করা, অসম্ভব কিছু নয়। তবে ক্লিয়ার হওয়া কেন আপনি ব্যক্তিকে ভালো বাসবেন? দাম্পত্য জীবনে তা-ই নিয়ম যা দুইজনের পছন্দের ভিত্তিতে ঘটবে সবসময় আশা করা কঠিন। মেনে নিতে হবে।

ক্ষোভ
সাময়িক ঝগড়া বিবাদের কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় না। মনের মধ্যে জমে থাকা চাপা ক্ষোভ আর যন্ত্রণাই দাম্পত্য জীবনকে তিলে তিলে ধ্বংস করে দেয়।

আর্থিক সচ্ছলতা
আমি সর্বোত্তম”-এমনটি মনে হওয়া অতি আত্মবিশ্বাসের লক্ষণ। সংসারের ক্রমাগত আর্থিক সচ্ছলতা অর্থ এই নয় যে, দাম্পত্য জীবনও সুখের মধ্য দিয়ে কাটছে।

বিশ্বাস ভঙ্গ
বিশ্বাস ভেঙ্গে গিয়ে থাকে, তাহলে সেই বিশ্বাস জোড়া দেওয়ার সময় এখনও পার হয়ে যায়নি। এজন্য যেকোনো সময়ই উপযুক্ত সময়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা নিয়ে তর্ক হয় তা আসল বিষয় থাকে না।

ভালোবাসা কেবল অনুভুতি নয়; বরং আমাদের কাজের মাধ্যমেই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। বেশি পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মনের হতাশা ও অতৃপ্তিকে বাড়িয়ে দেয়। দাম্পত্য জীবনের অনেক তর্কই হয়ত এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে ক্ষতিকর বিতর্ককে এড়িয়ে যেতেই হবে।

 

ট্রেনের টয়লেট থেকে মাদরাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার

ট্রেনের টয়লেট থেকে মাদরাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার


নারী সংবাদ


ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে একটি ট্রেনের বগির ভেতর থেকে পুলিশ গতকাল আসমা আক্তার (১৭) নামে এক মাদরাসাছাত্রীর লাশ উদ্ধার করেছে।
গতকাল সকালে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে। পুলিশের ধারণা, তরুণীকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গত রোববার সকালে মেয়েটি পঞ্চগড় থেকে নিখোঁজ হয়েছিল বলে স্বজনেরা পুলিশকে জানিয়েছেন।
গতকাল রাতে কমলাপুর জিআরপি থানার ওসি রুশো বণিক নয়া দিগন্তকে বলেন, সকাল ৯টার দিকে স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে কমলাপুর রেলস্টেশনের ওয়াশফিড এলাকায় বলাকা ট্রেনের একটি ড্যামেজ বগির টয়লেটের ভেতর থেকে ১৭-১৮ বছর বয়সী এক তরুণীর লাশ উদ্ধার হয়। লাশটির গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল। ধারণা করছি, মেয়েটিকে দুর্বৃত্তরা শ্বাসরোধে হত্যা করে থাকতে পারে। তবে এর আগে সে ধর্ষিত হয়েছে কি না সেটি ময়নাতদন্তের আগে বলা যাচ্ছে না। প্রতিবেদনের পরই বলা যাবে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি। আর মেয়েটির শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্নহ্ন পাইনি। এক প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, আমরা লাশের পাশ থেকে তার ব্যবহৃত একটি ব্যাগ পেয়েছি। সেই ব্যাগে কিছু কাগজপত্র ছিল। বার্থ সার্টিফিকেট ছিল। সেই অনুযায়ী তার পরিচয় আমরা নিশ্চিত হয়ে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করি। আসমার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার শীলপাড়ায়। তার বাবার নাম আব্দুল রাজ্জাক মিয়া।
তবে হাসপাতাল মর্গে কমলাপুর রেলওয়ে থানার সাব-ইন্সপেক্টর আলী আকবর সাংবাদিকদের বলেন, নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নহ্ন রয়েছে। আর তরুণী ধর্ষিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
আসমার চাচা মো: রাজু পুলিশকে জানান, রোববার সকাল থেকে তার ভাতিজি আসমা নিখোঁজ ছিল। সোমবার পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা লাশ শনাক্ত করেন। চাচা জানান, আসমা গ্রামের একটি মাদরাসা থেকে গত বছর এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। গ্রামের একটি ছেলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। আসমা নিখোঁজের পর থেকে ওই ছেলেকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে ওই ছেলে জড়িত থাকতে পারে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে তিনি দাবি করেন। নিহত আসমার বাবা একজন কৃষক। দুই ভাই দুই বোনের মধ্যে সে ছিল তৃতীয়। সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

স্মৃতির জোনাকি… ৩

স্মৃতির জোনাকি… ৩


আফরোজা হাসান


পাপার সন্ধানে পুরো বাড়ি পুনরায় আরেকবার ঘুরে দেখার পর নাবিহার খেয়াল হলো পাপার অন্যতম প্রিয় জায়গাতেই এখনো সন্ধান অভিযান চালানো হয়নি। সেই জায়গাটি হচ্ছে বাড়ির ছাদ। খেয়াল হওয়া মাত্র ছাদের দিকে ছুট লাগালো নাবিহা এবং তার আরাধ্য ব্যক্তিকে অবশেষে খুঁজে পেলো। কারো আগমনের শব্দ পেয়ে জাওয়াদও ফিরে তাকালেন। নাবিহা সালাম দিয়ে বললেন, পাপা তুমি এখানে? আমি সেই কখন থেকে তোমাকে খুঁজছি আর খুঁজছি।

সালামের জবাব দিয়ে জাওয়াদ বললেন, কেন আপনি আমাকে খুঁজছেন আর খুঁজছেন আম্মাজান?

নাবিহা হেসে বলল, অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপারে তোমার মতামত জানার জন্য। তবে সেই ব্যাপারে পরে কথা হবে। আগে বলো তুমি কি করছো এগুলো?

জাওয়াদ হেসে বললেন, আমি তোমার জাল দাদাভাইয়ের পাখীদের জন্য ঘর বানাচ্ছি। তোমার জাল দাদাভাইয়ের ব্যালকনির সাথে লাগোয়া গাছে যে দুটো পাখীর বাসা ছিল, গতরাতের ঝড়ো বাতাসের কারণে দুটো পাখীর বাসাই ভেঙে গিয়েছে। হজ্জ থেকে ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখলে বাপী ভীষণ কষ্ট পাবেন। তাছাড়া নীড় ভাঙা পাখীরাও নিশ্চয়ই অনেক কষ্টে আছে। তাই ভাবলাম ওদের জন্য নতুন ঘর বানিয়ে দেই। বাড়ির বাচ্চাদের প্রায়ই দেখি পুরো ছাদ জুড়ে পাখীদের জন্য খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে। একটু বেখেয়াল হলেই খাবার পায়ের নিচে পড়ে। পাখীদের খাবার, পানি রাখার ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। বাচ্চাদের সবাইকে বুঝিয়ে বলবে এখন থেকে যেন নির্দিষ্ট স্থানে খাবার রাখে।

নাবিহা হেসে বলল, ওকে পাপা ইনশাআল্লাহ। পাপা এই যে তুমি পাখীদের জন্য ঘর বানিয়ে দিচ্ছো, পাখীদের খাবারের জায়গা করে দিচ্ছো এজন্যও তো অনেক সওয়াব হবে তাই না? রাসূল (সঃ) তো বলেছেন, “মুসলিম যখন কোনো গাছ রোপণ করে, তখন এর যে ফল খাওয়া হবে এটা তার জন্য সদাকা হিসেবে গণ্য হবে। এ থেকে যা চুরি যাবে তাও সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।হিংস্র প্রাণীও যদি তা থেকে খায় তাও সদাকা হবে। পাখি খেলে সদাকা হবে। (এমনকি) যে কেউ যে কোনোভাবে এ থেকে (উপকার) গ্রহণ করবে তা সদাকা হিসেবে গণ্য হবে।” আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কত মহান তাই না পাপা? সবকিছুর মধ্যেই সওয়াবের সুযোগ রেখেছেন। আমরাই গাফলতী করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারিনা।

জাওয়াদ হেসে বললেন, গাফলতী করো কেন? কোনদিন যদি তোমাকে গাছে পানি দেয়ার দায়িত্ব দিয়ে যাই, তুমি বেমালুম ভুলে গিয়ে গাছেদের তৃষ্ণার্ত রেখে দাও।

নাবিহা বলল, সরি পাপা। আর মন হবে না ইনশাআল্লাহ। এখন থেকে আমিও গাছ লাগাবো, গাছেদের যত্ন করবো।

জাওয়াদ হেসে বলল, এই কথা তো যখন থেকে কথা বলা শুরু করেছো তখন থেকেই বলছো।

নাবিহা কিছুক্ষণ হাসলো। এরপর বলল, গতরাতে কি প্রচন্ড ঝড়ো বাতাস হচ্ছিলো পাপা! ভয়ংকর শব্দে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিলো কিছুক্ষণ পরপর। আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম। একবার ভেবেছিলাম মাঈশার রুমে চলে যাবো ওর সাথে ঘুমোতে। যাওয়ার জন্য উঠেও ছিলাম। কিন্তু রুম থেকে বেরুনোর জন্য দরজা খুলে দেখি তুমি বসে আছো আমার রুমের সামনে। আমি ভয় পাচ্ছি তুমি ফিল করেছিলে তাই না পাপা?

জাওয়াদ হেসে বললেন, এসো আমাকে সাহায্য করো পাখীদের জন্য ঘর বানাতে। কিছু সওয়াব অর্জন করো। সেই সাথে সদাকায়ে জারিয়ার সুযোগ তৈরি করো নিজের জন্য।

নাবিহা পাপার পাশে গিয়ে বসে হাসি মুখে বলল, গতরাতে তোমাকে দেখা মাত্র আমার সমস্ত ভয় এক নিমিষে উধাও হয়ে গিয়েছিল পাপা। একবার ইচ্ছে হয়েছিল তোমার সাথে বসে গল্প করতে। কিন্তু তুমি গভীর মনোযোগের সাথে বই পড়ছিলে তাই আর বিরক্ত করিনি। কিন্তু বিছানায় গিয়ে বসতে না বসতেই আবারো প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হলো। আমি তখন বজ্রপাতের দোয়া পড়লাম। এরপর সেলফ মোটিভেশনের জন্য বললাম, বসে আছেন পাপা দরজার বাহিরে, হে ভয় এখনো কি যাওনি আমায় ছেড়ে? জানো না বুঝি যখন আশেপাশে থাকেন পাপা, আমি হয়ে যাই পেইন কিলার নাপা। সমস্ত প্রতিকূলতা তখন করতে পারি জয়, বজ্রপাত ভীতি হয়ে যাও চূর্ণ, এই মূহুর্তে ক্ষয়।

হেসে ফেললেন জাওয়াদ। কন্যার কান ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললেন, বেশি বেশি দুষ্টু হয়েছো তুমি।

নাবিহা হাসতে হাসতে বলল, আমার কোন দোষ নেই। দুষ্টুমি গুণও জেনেটিক্যালি পেয়েছি। আমার মামণির কাছ থেকে।

জাওয়াদ হেসে বলল, আচ্ছা! তা কেমন আছেন নাবিহার মামণি?

নাবিহা হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ মামণি ভালো আছেন। কিন্তু অনেক ঝামেলার মধ্যে আছে।

জাওয়াদ বললেন, ঝামেলার মধ্যে কেন? কি হয়েছে?

নাবিহা হেসে বলল, মামণির কিছু হয়নি পাপা। মামণির স্টুডেন্ট গ্রুপের বেশিরভাগ সদস্যাই তো এখন বিবাহিতা। তারা নিজ নিজ সংসার, বাচ্চাদের নিয়ে নানান ঝামেলাতে আছেন। সেসব ঝামেলার সমাধান করতে করতে মামণিরও ঝামেলার শেষ নেই। পাপা সুন্দর সুন্দর কিছু আশা জাগানিয়া কথা বলো।

জাওয়াদ হেসে বললেন, হঠাৎ আশা জাগানিয়া কথা কেন? তাছাড়া বলতে বললেই তো আশা জাগানিয়া কথা বলা যায় না। উৎস লাগে, প্রসঙ্গের দরকার হয়। তারপর যথার্থ বিশ্লেষণ অতঃপর মন্তব্যে গিয়ে আশা জাগানিয়া কথা বলতে হবে।

নাবিহা একটুক্ষণ চিন্তাভাবনা করে বলল, পাপা তুমি তো আমাদের সবাইকে একা লালন পালন করেছো। আমরা তোমাকে অনেক যন্ত্রণাও করেছি। আমাদের দুষ্টুমিতে অতিষ্ট হয়ে তোমার কি কখনো মামণির উপর রাগ হয়েছে?

পাপা হেসে বললেব, তোমার মামণির স্টুডেন্টরা কি বাচ্চাদের সামলাতে গিয়ে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে তাদের লাইফ পার্টনারদের উপর অভিমান করে কখনো সখনো?

নাবিহা হেসে বলল, উনাদের সবার সাথে আমারও অনেক সুন্দর সম্পর্ক। ফোনে কথা হয় প্রায় সময়ই। অভিমানের কথা বলেনি কেউ সেভাবে তবে মাঝেমধ্যে রাগ হয় খুব নিজ নিজ লাইফ পার্টনারের উপর সেটা বলেছে।

জাওয়াদ হেসে বললেন, ওটা মূলত অভিমান, রাগ নয়। সন্তান বলো আর সংসার সেটা উভয়েরই। তাই আনন্দ বেদনা সবকিছু ভাগ করে নেবার একটা আকাঙ্ক্ষা থাকে মনে। পার্টনার যখন দূরে থাকে আনন্দের মূহুর্তগুলোতে যেমন তাকে মনে পড়ে, কষ্টের মূহুর্তগুলোতেও তাকেই সবার আগে মনেপড়ে। তোমরা যখন অনেক মজার কিছু করতে বা বলতে আমার তোমাদের মার কথা সবার আগে মনে পড়তো। মনেহতো তোমাদের মা সাথে থাকলে অনেক আনন্দ পেতো এখন। আবার যখন খুব বিরক্ত করতে কোন কারণে তখনো তোমাদের মাকেই সবার আগে মনে পড়তো। মনেহতো তোমাদের মা পাশে থাকলে এই পরিস্থিতিটা হ্যান্ডেল করা অনেক সহজ হয়ে যেতো আমার জন্য। এটা মূলত লাইফ পার্টনারের প্রতি নিজের নির্ভরশীলতার প্রকাশ। জীবনের আনন্দ বেদনা, সুখ দুঃখ সবকিছু ভাগাভাগি করে নেবার ওয়াদা করেও কেন নেই সে আমার পাশে কঠিন এই মূহুর্তে? এই চিন্তাটা মোটেও রাগ নয়। অধিকার মিশ্রিত অভিমান, ভালোবাসার আকুল আবেদন।

আমি তাহলে উনাদেরকে কি বলবো পাপা?

জাওয়াদ হেসে বললেন, উনাদেরকে বলার দায়িত্ব তোমার মাকেই পালন করতে দাও। আমরা খাল কেটে কুমীর না আনি।

নাবিহা হাসতে হাসতে পাপার কথাকে সমর্থন করলো। এরপর পাপাকে অনুকরণ করে পাখীদের জন্য ঘর বানানোতে মনোযোগ দিলো। বেশ অনেকক্ষণ নীরবে কাজ করার পর নাবিহা বলল, সুখী হওয়ার জন্য, ভালো থাকার জন্য চারপাশের সবকিছু কি মনের মতো হওয়াটা জরুরি পাপা?

জাওয়াদ হেসে বললেন, চারপাশের কোন কিছুই তো শতভাগ তোমার, আমার বা অন্য কারোই মনের মতো হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের মন সদা জাগ্রত ক্রিটিকের মতো। পারফেক্ট সবকিছুর মধ্যে থেকেও অবলীয়ায় ইনপারফেকশন খুঁজে বের করে ফেলে মূহুর্তেই। জগতের কোন কিছুই একদম তোমার মনের মতো হবে না। সুখী হবার জন্য এই কথাটাকে মনের মাঝে স্থাপন করতে হবে সবার প্রথমে।

কিন্তু কথাটা যদি কোন ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে হয় তাহলে? আইমিন, সময়ের ব্যবধানে কারো আচরণ যদি বদলে যায়? যেভাবে সাপোর্ট করা উচিত সেভাবে যদি না করে তাহলে? সেক্ষেত্রে কি হবে পাপা?

জাওয়াদ বললেন, সাপোর্ট করা উচিত কিন্তু স্বইচ্ছায় করছে না আবার সাপোর্ট করা উচিত কিন্তু করতে পারছে না কোন কারণে। এই দুটা সিচুয়েশন কিন্তু ভিন্ন। যারা আমাদেরকে ভালোবাসে, কেয়ার করে কিংবা যাদেরকে আমরা ভালোবাসি, কেয়ার করি তাদের অপরাগতা মেনে নেয়াটা ভালো থাকার এবং তাকে ভালো রাখার মূলমন্ত্র সমূহের একটি। ইউ কান্ট জাস্ট গিভ আপ অন সামওয়ান বিকজ দ্য সিচুয়েশন’স নট আইডিয়াল। এই জগতে যত সুন্দর সম্পর্ক আছে, বন্ধন আছে। যাদেরকে আমরা আদর্শ মানি, মডেল, আইডল হিসেবে ভাবি তুমি যদি তাদের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখো তাহলে দেখতে পাবে যে, তাদের সম্পর্ক সুন্দর এর পেছনে কারণ এটা নয় যে তাদের মধ্যে কোন সমস্যা নেই। তাদের সম্পর্ক সুন্দর কারণ তারা সমস্যাগুলোকে তাদের সম্পর্কের উপর, বন্ধনের উপর সওয়ার হতে দেয়না। তারা প্রতিকূলতার জন্য একে অন্যকে দোষারোপ না করে পরস্পরকে আঁকড়ে ধরে সেই পরিস্থিতিটা মোকাবিলার চেষ্টা করে। যারফলে তাদের সম্পর্ক আরো সুন্দর হয়ে ওঠে এবং বন্ধন আরো মজবুত হয়। একটা কথা আছে, গুড বেটার এন্ড বেস্ট, নেভার লেট ইট রেস্ট। আমাদের মধ্যে চমৎকার বোঝাপড়া রয়েছে, আমরা গুড ফ্রেন্ড, এরচেয়ে বেস্ট আর কিছু হতেই পারে না। এমন ভাবার কোন অবকাশই নেই নিজের ব্যক্তিজীবনের কোন ক্ষেত্রে কিংবা আমাদের জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা কোন স্পেশ্যাল বন্ধনের ক্ষেত্রে। এই যেমন তোমরা যখন বলো, আমাদের পাপা এই পৃথিবীর বেস্ট পাপা। আমি তখন মনে মনে বলি, গুড বেটার এন্ড বেস্ট, নেভার লেট ইট রেস্ট। টিল ইউর গুড ইজ বেটার এন্ড ইউর বেটার ইজ বেস্ট। মোর, মোর এন্ড মোর।

নাবিহা হেসে বলল, লাভ ইউ পাপা। ইউ আর দ্য বেষ্ট, ঐ দেখো নানুমণিও হাজির করতে তোমায় অ্যারেস্ট।

হেসে ফেললেন জাওয়াদ। মিসেস সুরাইয়াও হাসতে হাসতে কন্যা জামাতা আর নাতনীর সাথে এসে বসলেন।

চলবে..
পর্ব-

 

স্মৃতির জোনাকি…২

স্মৃতির জোনাকি…২


আফরোজা হাসান


আজাদ সাহেব আর মিসেস সুরাইয়া নাস্তা করছিলেন। নূহা এসে সালাম দিয়ে হেসে বলল, মামণি তোমার জন্য একটা গিফট আছে। এরপর হাতের প্যাকেটটা মামণির দিকে বাড়িয়ে ধরে হেসে বলল, এখন খুলতে পারবে না। আমি চা নিয়ে উপরে যাবার পর খুলবে।

কন্যার হাত থেকে গিফট নিয়ে আহ্লাদিত কন্ঠে মিসেস সুরাইয়া বললেন, কি আছে এটার ভেতরে?

নূহা হেসে বলল, চা নিয়ে এক্ষুণি চলে যাচ্ছি এরপর নিজেই খুলে দেখো।

আজাদ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, আমাদেরকে কেউ গিফট টিফট দেয় না কখনোই। অবশ্য মাকে তিনটা গিফট দেবার পর গিয়েই না বাবার পালা আসবে। মাত্র তো দুটা হলো এটা নিয়ে। হুমমম…

হাত থেকে চায়ের কাপ নামিয়ে রেখে পাপাকে জড়িয়ে ধরে আদর করে দিয়ে হাসতে হাসতে চা নিয়ে চলে গেলো নূহা। তৎক্ষণাৎ দুই টানে প্যাকেট খুলে ফেললন মিসেস সুরাইয়া। আজাদ সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, মেয়ের ব্যাপারে একদম বাচ্চাদের মতো হয়ে যাও তুমি সুরাইয়া।

স্বামীর কথাওয়াই কান না দিয়ে প্যাকেট খুলে গিফট বের করে একদম বিমুগ্ধ হয়ে গেলেন মিসেস সুরাইয়া। আজাদ সাহেবও মুগ্ধ কন্ঠে বললেন, মাশাআল্লাহ এতো ভয়াবহ সুন্দর। আমার মা কি নিজ হাতে বানিয়েছে নাকি?

আনন্দিত কন্ঠে মিসেস সুরাইয়া বললেন, আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই আমার মেয়ে বানিয়েছে। দেখেছো কি অদ্ভুত সুন্দর টি-কোজিটা! নানান রঙের উলের সুতো দিয়ে ছোট্ট কুটিরের অবয়বে টি-কোজিটা টা বানিয়েছে। মুগ্ধ চোখে যখন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে টি কোজিটা টা দেখছিলেন মিসেস সুরাইয়া হঠাৎ ভেতর থেকে একটা চিরকুট পড়লো। আজাদ সাহেব হাত বাড়িয়ে চিরকুটটি তুলে নিয়ে খুলে হেসে বললেন, তোমার আদূরে কন্যা লিখেছে, “তোমাকে ঠেলতে গিয়ে দূরে মামণি, থমকে গিয়েছিলাম দেখে হৃদয়ের আয়নাখানি। অন্তর জুড়ে তোমার ছবিই সবচেয়ে উজ্জ্বল, তপ্তদাহে ছায়া তোমার মমতা মাখা আঁচল। যতই মেতে থাকি অন্যের সনে উল্লাসে, মাগো তুমি মিশে আছো মোর প্রতিটি নিঃশ্বাসে। জড়িয়ে থাকো তুমি সর্বদা ছায়ার মতোই, কাছে থাকি তোমার কিংবা দূরে যতোই।

আদরের মেয়ের কাছ থেকে এমন ভালোবাসা পূর্ণ শব্দসম্ভার উপহার পেয়ে মিসেস সুরাইয়ার দু’চোখ বেয়ে অঝোর অশ্রু নেমে এলো। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করতে লাগলেন একদম। আজাদ সাহেব তখন স্ত্রীকে ধরে বললেন, এমন করে কেঁদো না সুরাইয়া প্লিজ। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। চলো তুমি উপরে চলো। নূহার কাছে গিয়ে বসবে। দুজন উপরে যাচ্ছিলেন কিন্তু জাওয়াদকে দেখে আজাদ সাহেবকে যেতে বলে মিসেস সুরাইয়া নাস্তা দিলেন জাওয়াদকে।

নাস্তা করতে বসে টেবিলের উপর কুটির আকৃতির টি কোজিটা দেখে জাওয়াদ হেসে বললেন, এটা কি টি কোজিটা? অদ্ভুত রকম সুন্দর। এটা কি আপনার কন্যার তৈরি?

মিসেস সুরাইয়া গর্বিত কন্ঠে বলল, আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই আমার কন্যার তৈরি। আমার কন্যা ছাড়া সবকিছুতেই এমন গৃহের মায়া ফুটিয়ে তোলার মতো আর কেউ আছে নাকি?

জাওয়াদ হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি উনার ড্রয়ারে কয়েক কালারের উলের সুতো দেখেছিলাম। সেই আন্দাজের সাথে আপনার চেহারায় ছড়িয়ে থাকা গদগদ ভাব দেখে ঢিল ছুঁড়েছিলাম। তা না হলে আমার জানা ছিল না আপনার কন্যা এত চমৎকার উলের কাজও জানেন।

তুই জানিসই কতটুকুন আমার মেয়ে সম্পর্কে? আমার মেয়ে হচ্ছে ম্যাজিক। বুঝেছিস?

জাওয়াদ হেসে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ। কিভাবে জানবো বলেন? বিয়ের পর শ্বাশুড়িরা মেয়ের জামাইকে পাশে বসিয়ে মেয়ের সম্পর্কে খুঁটিনাটি সবকিছু জানান। কিন্তু আমার শ্বাশুড়ির আমার পাশে এসে বসা মানেই বকাঝকা। যাইহোক, তা আপনার ম্যাজিক গার্ল কোথায়? স্বামী বাড়িতে থাকলে তাকেও যে একটু আধটু ম্যাজিক দেখানো আবশ্যক এই তথ্য কি উনি জানেন না? এখনো পর্যন্ত জেনে না থাকলে আপনার তো উচিত কন্যাকে জানানো।

আমার মেয়েকে আমি কি জানাবো, কি জানাবো না সেটা কি এখন তোর কাছ থেকে শিখতে হবে? চোখ পাকিয়ে বললেন মিসেস সুরাইয়া।

জাওয়াদ হেসে বললেন, শিক্ষা তো মামণি অক্সিজেনের মতো। আমরা যেমন নিয়ম তৈরি করি না যে, আমি কেবল মাত্র বটবৃক্ষ বা আম গাছ থেকে বের হওয়া অক্সিজেনই গ্রহণ করবো। অন্য গাছের অক্সিজেনে আমার এলার্জী আছে। শিক্ষা ব্যাপারটাও এরকম। আমরা যে কোন সময়, যে কারো কাছ থেকেই শিক্ষা অর্জন করতে পারি।

যে কোন সময়, যে কারো কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করতে আমার কোনই আপত্তি নেই। আমার শুধু তোর কাছ থেকে শিক্ষা অর্জনে এলার্জী। তুই যেমন চেরীফল সহ্য করতে পারিস না, আমি তেমন তোর জ্ঞানের কথা সহ্য করতে পারিনা।

আচ্ছা বাদ তাহলে জ্ঞানের কথা। মেয়ের সংসারে তার মায়ের প্রভাব মারাত্মক। শ্বাশুড়িকে তাই খুশি রাখাটা জরুরি। হাসলে হাসতে বললেন জাওয়াদ।

টিজ করা কি মানুষকে খুশি রাখার নতুন পদ্ধতি নাকি? কথা বলছিস না কেন? চুপ করে আছিস কেন? জবাব দে?

জাওয়াদ হেসে বললেন, মেয়েকে যে স্বামীর সেবাযত্ন বিষয়ক কোন শিক্ষাই দেননি। সেই জবাব না আপনি দেবেন।

মিসেস সুরাইয়া বললেন, মেয়ের স্বামীর ঘরে যাবার বয়স হবার মতো সময় পেলে অবশ্যই দিতাম। কিন্তু মেয়ের দুধের দাঁত সব পরে উঠতে না উঠতেই তো জাদু টোনা করে জামাই এসে হাজির।

হাসতে হাসতে জাওয়াদ বললেন, জাদুটোনা করে?

অবশ্যই জাদুটোনা করে। জাদুটোনা ছাড়া তোর মতো বুড়া ছেলেকে আমার মেয়ে পছন্দ করতে যাবে কোন দুঃখে।

জাওয়াদ হেসে বললেন, জাদুটোনা জানলে মেয়ের আগে মেয়ের মাকেই করতাম। তাতে তার ভিলেনিপনার হাত থেকে অন্তত মুক্তি মিলতো। মামণি একটা প্রশ্ন করলে সত্যি জবাব দেবে?

তোকে কি আমি ভয় করি নাকি যে ভয়ে মিথ্যা জবাব দেবো?

জাওয়াদ হেসে বললেন, তোমার কি আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে পছন্দ হয়নি?

উহু, হয়নি।

জাওয়াদ হেসে বললেন, কেন?

আমি আমার মেয়ের জন্য খুব সহজ সরল একটা জামাই চেয়েছিলাম। নির্ঝঞ্ঝাট, পিছুটান নেই এমন কোন ছেলে। আটটা থেকে পাঁচটা ডিউটি করবে। বাকি সময় আমার মেয়ের সাথে কাটাবে। যার মাথার মধ্যে জ্ঞানার্জনের ভূত থাকবে না, মহাজ্ঞানী টাইপ হবে না। সারাক্ষণ মিশন, ভিশন জপবে না। কথায় কথায় তর্জন গর্জন করবে না। একদম শান্ত ও মিষ্ট স্বভাবের হবে। সাধারণ কর্মী টাইপ ছেলে হবে। নেতাগিরি করে বেড়াবে না সর্বত্র। বিশাল বিশাল দায়িত্ব যার কাঁধের উপর থাকবে না। যার জগত হবে আমার মেয়েকে ঘিরে। আমাকে মেয়েকে খুশি রাখা, আনন্দে রাখাটা যার ফেব্রেট হবি হবে। এমন আরো নানান চিন্তাভাবনা ছিল। যার কোনটাই তোর মধ্যে নেই। সেই সাথে আমার অপছন্দনীয় সমস্ত কিছু আবার উপস্থিত তোর মধ্যে।

জাওয়াদ হেসে বললেন, তুমি তাহলে তোমার পছন্দের লিষ্ট আমাকে দাও। যেটা যেটা আয়ত্ত্ব করা সম্ভব আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো নিজের মধ্যে ধারণ করার। যেমন তোমার মেয়েকে খুশি রাখা, আনন্দে রাখাটাকে আমি হবি না আমার কর্তব্যকর্ম মনেকরি। শখ বদলে যেতে পারে মা। কিন্তু কর্তব্যকর্ম প্রতিটি বন্ধনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যতক্ষণ বন্ধন অটুট থাকে, কর্তব্যকর্ম না বদলে যায়, না হেলাফেলা করার সুযোগ থাকে। আচ্ছা চলো তুমি আর আমি আজ একটা ডিল করি। মেয়ের জামাইকে ঘিরে তোমার যত চাওয়া পাওয়া ছিলো সবকিছু মিলিয়ে একটা কোয়েশ্চেন পেপার তৈরি করে দাও আমাকে। আমি তোমার কাছে পরীক্ষা দেবো। যদি সব প্রশ্নের জবাবে উৎরে যেতে পারি, তাহলে নিশ্চয়ই তোমার আপত্তি থাকবে না আমাকে মেয়ের জামাই হিসেবে খুশি মনে মেনে নিতে?

মিসেস সুরাইয়া বললেন, আইডিয়া মন্দ না। চিন্তা ভাবনা করে এরপর আমার সিদ্ধান্ত জানাবো তোকে ইনশাআল্লাহ।

জাওয়াদ হেসে বললেন, এখন তাহলে বলে দাও আমার বৌ কোথায়?

মামণি বললেন, উপরেই কোথাও আছে। উঠছিস কেন? বোস চুপচাপ। তুই যেতে পারবি না এখন ওর কাছে।

জাওয়াদ বললেন, এটা আবার কেন?

মিসেস সুরাইয়া বললেন, আইমিন, একা যেতে পারবি না। আমিও যাবো তোর সাথে। চা নিয়ে আসি রান্নাঘর থেকে ততক্ষণ বসে থাক। এরপর একসাথে যাবো।

জাওয়াদ হেসে বললেন, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। বৌকে একেবারে না দেখার চেয়ে ভিলেন শ্বাশুড়ির নজরদারীর মধ্যে দেখাও উত্তম। যান যান চা নিয়ে আসেন। আমিও বসে বসে দোয়া করতে থাকি আমার কানা মামা যাতে দুষ্টু গরু হয়ে না যায়। আমাকেও যাতে প্রবাদ উল্টে বলতে নাহয়, দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো।

মিসেস সুরাইয়া জাওয়াদকে ঘুষি মেরে হাসতে হাসতে চলে গেলেন চা আনার জন্য। কারো মৃদু ধাক্কা মূহুর্তেই অতীতের আনন্দঘন সময় থেকে বর্তমানে নিয়ে এলো মিসেস সুরাইয়াকে। নাবিহা হাসতে হাসতে বলল, নানুমণি কি হয়েছে তোমার? সেই কখন থেকে দেখছি টি কোজিটার দিকে তাকিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে আছো। কি ভাবছো এমন করে?

বিরক্ত কন্ঠে মিসেস সুরাইয়া বললেন, তোদের যন্ত্রণায় শান্তি মতো কোথাও বসবো সেই সুযোগও নেই। কি চাই?

নাবিহা হেসে বলল, আমার পাপাকে খুঁজে পাচ্ছি না কোথাও। পাপা কোথায় বলে দাও। তাহলে তোমাকে আর বিরক্ত করবো না।

মিসেস সুরাইয়া বললেন, তোর পাজী পাপাকে তো আমিও খুঁজছি। মামণি নাস্তা দাও বলে সেই যে গেলো আর কোন খবর নেই।

নাবিহা হেসে বলল, তাহলে চলো আমরা দুজন মিলে পাপার সন্ধানে যাই। যে প্রথমে খুঁজে পাবে পাপাকে বিরক্ত করার প্রথম সুযোগ তার।

হেসে ফেললেন মিসেস সুরাইয়া। এরপর নানী, নাতনী মিলে খুঁজতে বের হলো জাওয়াদকে।

চলবে….

পর্ব-১

অসুস্থ কোহিনূরের পাশে বিভিন্ন সংগঠন


নারী সংবাদ


দৈনিক নয়া দিগন্তে সংবাদ প্রকাশের পর থেকে পাল্টাতে থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামের অসুস্থ সেই কোহিনূরের কষ্টের জীবন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও মাধ্যমে বিনা খরচে চিকিৎসা শেষে এবার হাতে পেল নগদ লক্ষাধিক টাকা।

‘নবীনগরের আঞ্চলিক কথা’ নামের একটি ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপের সদস্যরা ১৩ আগষ্ট মঙ্গলবার রতনপুর গ্রামে গিয়ে কোহিনূরের হাতে নগদ এক লাখ ৯ হাজার ২৯২ টাকা তুলে দেন। একই সময়ে নবীনগর পৌর এলাকার আলীয়াবাদ গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে দেওয়া হয় ২০ হাজার টাকা, ১১ আগস্ট যুবদল প্রবাসী অনলাইনের পক্ষ থেকে দেয়া হয় ৫০ হাজার টাকা।

নবীনগরের আঞ্চলিক কথা নামের ওই গ্রুপের সভাপতি মোজাম্মেল হক ও অ্যাডমিন বাবুল ভূঁইয়া বলেন, ‘নয়া দিগন্তে সংবাদটি প্রকাশের পর কোহিনূরের চিকিৎসার জন্য মাসখানেক আগে আমরা আমাদের ফেসবুক পেইজটিতে একটি বিকাশ নম্বর দিয়ে সহযোগিতা চাই। এরপরই বিভিন্ন বন্ধুরা দেশ বিদেশ থেকে টাকা পাঠাতে থাকেন। আজ বন্ধুদের পাঠানো পুরো টাকাটা কোহিনূরের হাতে তুলে দিতে পেরে ভীষণ তৃপ্তিবোধ করছি।’

টাকা হস্তান্তরের সময় নবীনগর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক কাজী ওয়াজেদ উল্লাহ জসীম, আবদুল কাইয়ুম এবং ‘নবীনগরের আঞ্চলিক কথা’ গ্রুপের সদস্য মজিবুর রহমান পথিক, আসাদুজ্জামান, সোহেল রানাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামের মৃত কবির হোসেনের মেয়ে কোহিনুর বেগম গত ৪ বছর আগে মেরুদন্ডের সমস্যার কারণে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার পিঠে অপারেশন করে দুইটি রড স্থাপন করা হয়। এর পর থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করে অন্যের বাড়িতে থেকে, ৫ বছর বয়সী একমাত্র ভাইটিকে রসুল্লাবাদ হাফেজিয়া মাদরাসায় পড়িয়ে কোনরকমে খেয়ে না খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। অর্থের অভাবে নির্ধারিত সময়ে সেই রড খুলতে না পারায় চামড়া ছিঁড়ে রডগুলো বেড়িয়ে গিয়ে ওই স্থানে পচন ধরে পোকা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। গত কয়েক মাস ধরে তার মেরুদন্ডে ব্যথা আবারো ফিরে আসে। তীব্র আকার ধারণ করলে কোহিনূর আবারো শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে।

তার জীবনের করুণ এই চিত্র নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তে ২৮ জুন ‘এই যন্ত্রণা থেকে মরে যাওয়া অনেক ভালো’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর, এই মানবিক ঘটনাটি নবীনগরের ইউএনও মোহাম্মদ মাসুমের নজরে আসে। পরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে ১ জুলাই কোহিনূরকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে ঢাকার ‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশনে’ পাঠান। সেখানে ফাউন্ডেশনের দুই সদস্য ডা: কাজী আয়েশা সিদ্দিকা বর্ণা ও ডা: হাসান মাহমুদের তত্ত্বাবধানে কোহিনূরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ১৩ ও ১৬ মে তার মেরুদন্ডে সফল অস্ত্রোপচার করেন অধ্যাপক ডা: শাহ আলম। এরপর কোহিনূর সুস্থ হয়ে ১ আগস্ট রতনপুর গ্রামে ফিরে আসে। এক মাস পর আবার যেতে হবে হাসপাতালে। তার এই চিকিৎসা ব্যয়বহুল বলে জানান ডা: কাজী আয়েশা সিদ্দিকা।

নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মাসুম বলেন, কোহিনুরের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া কামনা করছি এবং নবীনগর উপজেলা প্রসাশন সব সময় তার পাশে থাকবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার জন্য সরকারি খাস জায়গা বন্দোবস্ত দেয়াসহ তার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্যও আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

মা-বাবাহীন কোহিনুর বেগম সু-চিকিৎসার সুযোগ ও হাতে নগদ টাকা পেয়ে আনন্দে কান্না জড়িতকন্ঠে সকলের কাছে কৃতজ্ঞা প্রকাশ করে দেশবাসীর কাছে দোয়া ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেন।

কোহিনুর বেগমকে আর্থিক সহায়তা করতে ইচ্ছুকরা যোগাযোগ করতে পারেন। বিকাশ নম্বর : ০১৮৪৬৯৮৭২৮১ (ব্যক্তিগত)।

দৈনিক নয়া দিগন্তে

 

গরুর গোস্তের ভুনার

গরুর গোস্তের ভুনার


রেসিপি


টুপটুপ বৃষ্টি হচ্ছে আর খাবারের টেবিলে সাজানো গরম রুটি আর গরুর গোস্তের ভুনা। সাথে লেবু আর সালাদ। কেমন হবে সেই মুহূর্ত? এখন তো ছুটির দিন। তাই তো আজ নিয়ে এলাম মজাদার গরুর গোস্তের ভুনার রেসিপি।

উপকরণ:

গরুর গোস্ত ২ কেজি,

আদা বাটা ৪ টেবিল চামচ,

রসুন বাটা ২ টেবিল চামচ,

আস্ত রসুন ৬ কোয়া,

জিরা বাটা ১ চা চামচ,

দারুচিনি ৬ টুকরা,

এলাচ ৬ টুকরা,

পেঁয়াজ মোটা গোল করে কাটা ২ কাপ,

পেঁয়াজ চিকন কুচি ১ কাপ,

কাঁচা জিরা,

শুকনা মরিচ ২টা, তেল ২ কাপ,

হলুদ বাটা দেড় চা চামচ,

শুকনা মরিচ বাটা ১ চা চামচ,

লবন ১ টেবিল চামচ,

চিনি ১ চা চামচ।

প্রণালি :

প্রথমে চুলায় তেল গরম করুন। কেলে চিকন কুচি করা পেঁয়াজ দিয়ে ভেজে নিতে হবে। পেঁয়াজ তুলে আলাদা করে রাখুন। তেলে এবার মোটা গোল পেঁয়াজ দিয়ে একটু বাদামি করে ভাজুন। পেঁয়াজ বাদামি রঙ হলে গোস্তে, আদা বাটা, রসুন বাটা, জিরা বাটা, হলুদ বাটা, মরিচ বাটা দিয়ে খুব ভালো করে মেশান। অল্প অল্প করে গরম পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। গোস্তে ২ কাপ গরম পানি ঢেলে দিতে হবে।মাংস ঢেকে দিন। মাংস আধা সেদ্ধ হলে আস্ত রসুন দিতে হবে। পানি কমে আসলে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন।ঢিমা আঁচে কিছু সময় রাখতে হবে। এবার চুলায় কাঁচা জিরা, দারুচিনি, এলাচ, শুকনা মরিচ শুকনা তাওয়ার ওপর দিয়ে ভেজে নিন। ভাজা মশলা পাটায় বা মিক্সারে গুঁড়া করে নিতে হবে। ভাজা পেঁয়াজ চিনির সঙ্গে মিশিয়ে হাত দিয়ে গুড়া করে নিতে হবে। যখন গোস্ত ভুনে তেলের ওপর আসবে, তখন পেঁয়াজের সঙ্গে গুড়া মশলা মিশিয়ে গোস্তের ওপর ছড়িয়ে দিন। অল্প আঁচে আধা ঘণ্টা রাখতে হবে।যখন পানি শুকিয়ে মাখা মাখা হবে এবং তেল ছাড়তে শুরু করবে তখন নামিয়ে নিন। ব্যাস হয়ে গেলো খুব সহজে মজাদার ‘গরু গোস্তের ভুনা।

পরিবেশনঃ গরম গরম রুটি আর ভুনা গোস্ত পরিবেশন করুন।

 

স্ত্রীকে ১৫ টুকরো করে শ্বাশুরীকে ফোন দিয়েছে ঘাতক স্বামী


নারী সংবাদ


গাজীপুরের শ্রীপুরে গার্মেন্টস কর্মী এক নারীকে ১৫ টুকরো করে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী। পুলিশ ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে নিহতের ৫ টুকরো মাংস পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের ঘাতক স্বামী মামুন মিয়াকে (২৫) সাভারের কবিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সুমা আক্তার ওরফে সুমির (২৭) সঙ্গে প্রায় দু’বছর আগে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বরইবাড়ি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে মামুন মিয়ার (২৫) বিয়ে হয়। এটি উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। বর্তমান সংসারে কোন সন্তানের জন্ম না হলেও তাদের উভয়ের পূর্বের সংসারের একজন করে সন্তান রয়েছে। ওই দু’সন্তানের একজন তার দাদীর কাছে এবং অপরজন তার নানীর কাছে থাকে। বিয়ের পর সুমা তার স্বামী মামুনকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার শফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় সাবলাইম গ্রীনটেক নামের এক পোশাক কারখানার সুয়িং অপারেটর পদে চাকুরি করতো। মামুন ওই এলাকায় ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতো। বিয়ের কিছুদিন পর হতে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে মামুন ও সুমার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। সম্প্রতি সুমার জমানো ৪০ হাজার টাকা ও মামুনের নারীঘটিত বিষয়াদি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দাম্পত্য কলহ চরম আকার ধারণ করে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, ঈদের ছুটি কাটাতে শুক্রবার স্বামীকে নিয়ে নেত্রকোনা গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় সুমা। অপরদিকে আগেরদিন স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে মামুন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন স্থানীয় বাজার থেকে দু’টি ট্র্যাভেল ব্যাগ, পলিথিন ও কিছু ঘুমের ট্যাবলেট কিনে। এসময় সে একশ’টাকা দিয়ে একটি ধারালো চাকুও কিনে । বাসায় যাওয়ার সময় মামুন হোটেল থেকে হালিম ও রুটি কিনে নেয়। বাসায় ফিরে রাতে কৌশলে হালিম ও রুটির সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে সুমাকে খাওয়ায়। খাবার খেয়ে রাতে সুমা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর রাত ১টার দিকে বুকের উপর বসে সুমার মুখ চেপে ধরে ও গলা টিপে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে পাষন্ড স্বামী। পরে সুমার লাশ টেনে গোসলখানায় নিয়ে যায়। সেখানে বাজার থেকে কিনে আনা স্টিলের ধারালো চাকু দিয়ে প্রথমে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করে। পরে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে শুধু মাংস খন্ড বিচ্ছিন্ন করে। এভাবে সুমার লাশকে মোট ১৫টি টুকরো করে ১০ কেজি ধারনক্ষম তিনটি পলিথিনে ভর্তি করে প্যাকেট করে মামুন।

শুক্রবার ভোরে দু’দফায় দু’টি প্যাকেটে ভর্তি লাশের ১০ টুকরো দু’টি ট্র্যাভেল ব্যাগে ভরে সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় চড়ে পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী এলাকায় শীতলক্ষ্ম্যার শাখা বানার নদীর ব্রীজে নিয়ে যায়। সেখানে লাশের টুকরো ভর্তি ব্যাগগুলো নদীতে ফেলে তৃতীয় প্যাকেট নেওয়ার জন্য পুনঃরায় বাসায় ফিরে আসে মামুন। দু’দফায় ফেলে আসার মাঝে মামুন স্থানীয় রুহুলের বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করে। পরে রাতে মামুন তার শ্বাশুড়িকে মোবাইল ফোন করে জানান, সুমাকে সে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সুমা বাড়িতে পৌঁছেছে কি-না এসময় শ্বাশুড়ির কাছে তাও জানতে চায় মামুন।

এদিকে শুক্রবার রাতে সুমা বাড়ি না পৌছায় স্বজনরা তার মোবাইলে ফোন করে বন্ধ পায়। সুমার খোঁজ না পেয়ে পরদিন শনিবার সুমার ছোট বোন বৃষ্টি ও তার (বৃষ্টির) স্বামী নবী হোসেন শ্রীপুরের গিলারচালায় আসে। বড় বোন সুমার সঙ্গে বৃষ্টি একই কারখানায় চাকুরি করেন। বৃষ্টি একই এলাকায় অনত্র ভাড়া থাকেন। সেখানে কাউকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে কারো খোঁজ পান নি। পরে পার্শ্ববর্তি এক বাড়ি থেকে মামুনকে পেয়ে তাকে সাথে নিয়ে সুমাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।

এসময় মামুন কৌশলে পালিয়ে যায়। সুমা ও মামুনের খোঁজ না পেয়ে বৃষ্টি ও তার স্বামী গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। তারা বাড়ি গিয়ে সুমার খোঁজ না পেয়ে সোমবার পুনঃরায় শ্রীপুরের ওই বাসায় আসেন এবং বাসার ভিতরে প্রবেশ করেন। এসময় তারা ঘরের ভিতরে দুর্গন্ধ পান এবং ঘরে থাকা ড্রেসিং টেবিলের নীচ থেকে মেঝেতে রক্তাক্ত পানি গড়াতে দেখেন। রাত ৮টার দিকে ড্রেসিং টেবিলটির ড্রয়ার খুলে পলিথিনে মোড়ানো মানবদেহের মাংসের পাঁচটি টুকরা দেখতে পান তারা। তবে সেখানে তার মাথা, হাত ও পা ছিল না। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই ৫টুকরো মাংস উদ্ধার করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

নিহতের বোন বৃষ্টি জানায়, বৃহস্পতিবার বেতন দিয়ে কারখানায় ঈদের ছুটি হয়ে যায়। শুক্রবার তাদের সঙ্গে একত্রে বাড়ি যাওয়ার কথা সুমা’র। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সুমার জমানো ৪০ হাজার টাকা দিয়ে টিউবওয়েল স্থাপন ও বাড়ির বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করার কথা ছিল। শুক্রবার সকালে বাড়ি যাওয়ার সময় সুমাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও না পেয়ে বৃষ্টি তার স্বামীর সঙ্গে ময়মনসিংহের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা বাড়িতে পৌঁছে একাধিকবার বড় বোন ও ভগ্নিপতির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাদের ফোন বন্ধ পেয়ে শ্রীপুরে সুমার বাসায় এসে মাংসের টুকরোর সন্ধান পান।

পুলিশ সুপার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার ভোর রাতে পুলিশ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফুপাতো ভাইয়ের বাসা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদকালে মামুন সুমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। এসময় সে জানায়, সুমার ৪০ হাজার টাকা নিয়ে একটি মোবাইল ফোন কিনে সে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও ট্র্যাভেল ব্যাগ এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ডেঙ্গু:জ্বর নেমে গেলে রোগীর পরিচর্যা কেমন হবে

ডেঙ্গু:জ্বর নেমে গেলে রোগীর পরিচর্যা কেমন হবে


স্বাস্থ্যসেবা


তাহমিনা আক্তার পলি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক ও মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা।তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে নব জাহিদুল কবীরের গায়ে জ্বর উঠেছিলো ২০শে জুলাই। দেরী না করে দ্রুতই সন্তানকে হাসপাতালে নিয়ে যান তারা।

“যখন ছেলেকে হাসপাতালে নিলাম তখন জ্বর ছিলো কম। কিন্তু প্রেশার কমে গিয়েছিলো। রক্তে প্লেটলেট কমতে শুরু করে। এরপর সাত দিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।”

তিনি বলছেন, “জ্বর চলে যাওয়ার পর ছেলেকে স্যালাইন ও প্রচুর তরল খাওয়াতে হয়েছিলো এবং চিকিৎসকরা যে কয়েকটি জিনিসের প্রতি লক্ষ্য রেখেছিলেন তা হলো নব’র পাতলা পায়খানা হচ্ছে কি-না কিংবা বুকে বা পেটে কোনো ব্যথা হচ্ছে কি-না সেদিকে নজর রাখা।”

তাছাড়া আলট্রাসনোগ্রাম ও বুকের এক্স রে করা হয়েছে কয়েকবার বুকে পানি জমেছে কি-না সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য।

চিকিৎসকরা বলছেন, এবারে যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের মধ্যে জ্বর খুব একটা বেশি ওঠছে না। আবার উঠলেও সেটি ২/৩ দিনের মধ্যেই নেমে যাচ্ছে।

চিকিৎসকদের মতে এবারে ডেঙ্গুর যে প্রবণতা সেটি আগের বছরগুলোর মতো নয়, এমনকি লক্ষণও কিছুটা ভিন্ন।

কারণ আগের বছরগুলোতে এডিস মশা কামড়ালে প্রচণ্ড জ্বর হতো কিন্তু এবার অনেক ক্ষেত্রেই তাপমাত্রা খুব বেশি হতে দেখা যাচ্ছে না। গত কয়েক বছর হেমোরেজিক জ্বর হচ্ছিলো অনেকের।

কিন্তু এবার সেটি তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। এবার যা হচ্ছে চিকিৎসকরা তার নাম দিয়েছেন ‘শকড সিনড্রোম।’

একারণে এবার অল্প জ্বর হলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে বলছেন তারা।

 সুত্রঃ বিবিসি।

 

শিশুকে আদর–যত্ন–ভালোবাসা দিন


 প্যারেন্টিং


বাচ্চাদের পিছনে শুধু খাওয়া আর পড়াশুনা করান দায়িত্ব শেষ নয়। শিশুকে আদর–যত্ন–ভালোবাসা দিয়ে লালন–পালন করতে হয়। অভিজ্ঞতা শেয়ার করা, উপদেশ দেওয়া বা কখনও কঠিনভাবে কথা বলা; কখনওবা কোমলভাবে ডেকে নেওয়া। উভয়টাই আমাদের কল্যাণের জন্য ।

আসুন দেখিঃ

কি কি করা যাবে না…

খুব দ্রুত প্রশংসা বা তিরস্কার করে ফেলা

বিপদ থেকে দ্রুত উদ্ধার করে ফেলা

কোন ঝুঁকি নিতে না দেয়া

নিজের ভুল স্বীকার না করা

জ্ঞানী উপদেশ, এই করবে না

কি কি করব

 জেনে রাখুন, শিশুরা ছোটদের মতোই আচরণ করবে

১) রেগে গিয়ে বা ধৈর্য হারিয়ে নয় বরং ভেবে-চিন্তে, ধীরে-সুস্থে এই বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে হবে, তাদের বুঝাতে হবে, বুঝতে সাহায্য করতে হবে।

২) দোষারোপ করে নয়, মর্জাদা বজায় রেখে সীমা নির্ধারণ করুন

৩) নিজে প্রতিটিসম্পর্কে সচেতন হোন

৪) আপনার শিশুর ব্যক্তিত্ব ও মেজাজ-মর্জি সম্পর্কে জানুন

৫) শিশুকে নিজের ইচ্ছামতো খেলাধুলা করার জন্য প্রচুর সময় দিন

৬) কখন আপনি কথা বলবেন আর কখন তাকে কথা বলতে দেবেন, সেটা জেনে রাখুন

৭) সন্তানের মা বা বাবা ছাড়াও আপনার যে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় আছে, তা তাকে বুঝতে দিন

৮) মনে রাখবেন, কিছু বলার চেয়ে করে দেখানোটা শিশুর কাছে অনেক বেশি গুরুত্ববহ

৯) মনে রাখবেন, শিশুর মধ্যে ইতিবাচক আচরণ ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে ওঠার জন্য দরকার সঠিক যোগাযোগ, আনন্দময় পরিবেশ এবং সৃষ্টিশীলতা

১০) শিশুর সঠিক আচরণ নয়, সঠিক হৃদয়বৃত্তি গড়ে তোলার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ভাবুন

 

কোটালীপাড়ায় ক্লাস ফোরের স্কুলছাত্রী ধর্ষণ : গ্রেফতার ১

কোূটালীপাড়ায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণ : গ্রেফতার ১


নারী সংবাদ

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ইজাবুল মোল্লা (৪৫) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল কোটালীপাড়া থানা পুলিশ ইজাবুল মোল্লাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
জানা গেছে, ২ আগস্ট বিকেলে ইউসুফ মোল্লা জটিয়ারবাড়ী গ্রামের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে স্থানীয় ফরিদ মিয়ার মাছের ঘেরপাড়ে ধর্ষণ করে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে ইজাবুল মোল্লা নানাভাবে ওই ছাত্রীর পরিবারকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে। গতকাল ওই ছাত্রীর মা কোটালীপাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ ইজাবুল মোল্লাকে গ্রেফতার করে।
কোটালীপাড়া থানার ওসি শেখ লুৎফর রহমান বলেন, ওই স্কুলছাত্রীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ইজাবুল মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মেডিক্যাল পরীক্ষার জন্য ওই ছাত্রীকে জেলা সদরে পাঠানো হবে।
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

“আরাফাত দিবসের দোয়া “

“আরাফাত দিবসের দোয়া “


অন্যান্য


’দুআ অর্থ হলো ডাকা, আল্লাহকে ডাকা। ‘ইস্তিগফার’ অর্থ হলো মাফ চাওয়া। আল্লাহর কাছে মাফ চাওয়া। আর ‘ইনাবত ইলাল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। দুআ, ইস্তিগফার ও ইনাবাত ইলাল্লাহ মুমিনের প্রত্যাশা। ঈমানদারের সম্বল। মুমিন যখন সুখে থাকেন তখন আল্লাহকে ডাকেন, যখন কষ্ট থাকি তখনও আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়না। সুখ ও শান্তি আল্লাহর তরফ থেকে আসে।

“তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক, আমি সাড়া দিব।” (আল-মুমিন:৬০)

আরাফাত অর্থ পরিচয়। হযরত আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়ার পুনঃপরিচয়ের ক্ষেত্র এবং উভয়ের ক্ষমাপ্রাপ্তির স্থান হবার মর্যাদা লাভের কারণেই এ স্থানটি ‘ময়দান-এ আরাফাত’ নামে পুণ্যস্থানরূপে খ্যাত।

হযরত ইবরাহীম (আঃ)সহ বহু নবী রসুল ও তাদের অনুসারীগণ এ ময়দানে এসে আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করেছেন। আল্লাহর পথের অনুসারী মানুষরা যুগ যুগ ধরে হজ্ব দিবসে নিজেদের গুণাহখাতা ও অপরাধসমূহের কথা স্মরণ করে এখানে আসছেন।

মহানবী (সাঃ) ঘোষণা করেছেন, কোনো লোক যথার্থ অর্থে হজ্ব পালন করার পর নিস্পাপ শিশুতুল্য হয়ে যায়। এমনকি ৪০ দিনের মধ্যে কেউ তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে, সাক্ষাৎকারীর ছোট খাটো অপরাধসমূহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।

মেশকাত। মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, ‘‘আরাফাতের দিন আল্লাহ তায়ালা সর্বনিম্ন আসমানে অবতরণ করেন এবং ফিরিস্তাদের নিকট নিজের বান্দাদের ব্যাপারে গর্ব করে বলেন,– দেখো, আমার বান্দাগণ ধূলী ধূসরিত হয়ে চতুর্দিক থেকে আমার কাছে আসছে। আমি তোমাদের সাক্ষী রেখে বলছি যে, তাদের আমি ক্ষমা করে দিলাম। অতঃপর ফিরিস্তারা বলবে, হে পরোয়ারদেগার! উমক ব্যক্তি যে বিলম্বে এসেছে? তখন আল্লাহ বলেন, আমি তাকেও মাফ করে দিলাম।’– (শরহে সুন্নাহ)

রাসুল (সা:) আরাফাতের দিন দু’হাত এমন ভাবে উঠালেন, যেভাবে একজন মিসকিন খাবার প্রার্থনা করে। অতঃপর দোয়া করলেন,

আল্লাহ ব্যতিত আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক, তার কোনো অংশীদার নেই। রাজত্ব ও সকল প্রশংসা তারই জন্য নিদিষ্ট। সব কল্যাণ তারই হাতে। তিনি সকল বিষয়ে শক্তিমান।

হে আল্লাহ! আমার অন্তরে আলো দান করুন, আমার কর্ণে আলো দিন, আমার দৃষ্টি শক্তিকে জ্যোতির্ময় করে দিন।

হে আল্লাহ! আমার বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিন এবং আমার কাজকে সহজ করে দিন।

হে আল্লাহ! আমি আমার অন্তরের কুমন্ত্রনা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই, কর্মের বিভিন্নতা ও কবরের পরিক্ষা থেকেও।

হে আল্লাহ! আমি রাতে সংগঠিত অমঙল ও দিনের আলোয় সংগঠিত অকল্যান থেকেও আশ্রয় চাই। আর ঐসব অকল্যান থেকে আশ্রয় চাই যা বাতাসে বয়ে বেড়ায়, আর ঐসকল অনিষ্ট থেকে, যা কালের দুর্বিপাকে সংগঠিত হয়।

হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সমস্ত প্রশংসা। যেমনি ভাবে প্রশংসা আপনি করতে বলেছেন, আমরা যা বলছি তার চেয়েও উত্তম ভাবে।

হে আল্লাহ! আমার নামাজ, আমার কোরবানী, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সবই আপনার জন্য নিবেদিত। আপনারই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন।

হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমার যাবতীয় সম্পদের অধিকর্তা।

হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি আমার কথা শুনছেন, আমার অবস্থা দেখছেন। আমার গোপন প্রকাশ্য সবই আপনি দেখেন। আমার কোনো কাজই আপনার নিকট অস্পষ্ট নয়।

আমি হতভাগা, নিঃস্ব, সাহায্যপ্রার্থী, আশ্রয় প্রার্থী, ভীত সন্ত্রস্ত্র, বঞ্চিত এবং গুনাহ ও অপরাধ স্বীকারকারী।

একজন মিসকীনের মতই আপনার দরবারে প্রার্থনা করছি। অপদস্ত ও অপরাধীর ন্যায় অনুনয় বিনয় করছি। ভীত পযুর্দস্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির ন্যায় আপনাকে ডাকছি। যার গর্দান আপনার সামনে অবনত। আপনার সন্তুষ্টির জন্যই যার নয়ন অশ্র প্রবাহিত করে। যার দেহ বিনয়াবনত রয়েছে। যার নাসিকা ধুলি মলিন হয়েছে।

হে আল্লাহ…….!!!

আপনার নিকট পেশ করা আমার এ দোয়া প্রত্যাখ্যান করে আমাকে হতভাগা করবেন না। আমার প্রতি দয়ালু ও মেহেরবান হোন।

হে আল্লাহ তুমি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে ভালোবাসো। আমাকে ক্ষমা করে দাও।

 

স্মৃতির জোনাকি…

স্মৃতির জোনাকি…


আফরোজা হাসান


আমি মনে হয় এই পৃথিবীর সেই সব সৌভাগ্যবতী মেয়েদের একজন যারা জন্মের আগে থেকেই তাদের মামণিদের কথনসাথী। মামণি যত কথা আমার জন্মের আগে আমার সাথে বলেছেন তত কথা মনে হয় না জন্মের পর থেকে নিয়ে গত ১৭ বছরে বলেছেন। আমাদের পরিবারের প্রতিজন সদস্য সম্পর্কে মোটামুটি সবকিছু জন্মের আগেই মামণি আমাকে বলে ফেলেছিলেন। কিভাবে বলেছিলেন? আমার জন্য লেখা মামণির ডায়েরিতে। এমন একটা করে ডায়েরির মালিক অবশ্য আমরা সব ভাইবোনেরাই। কিন্তু আমার ডায়েরিটা সবচেয়ে স্পেশাল। স্পেশাল হবার অন্যতম দুটা কারণের একটি হচ্ছে আমার ডায়েরিটা মামণিকে পাপা গিফট করেছিলেন। আর দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে আমার ডায়েরিটার একটা নাম আছে। অদ্ভুত সুন্দর একটা নাম। ডায়েরির একদম প্রথমে মামণি লিখেছেন,” অনিশ্চিত অনাগতের স্বপ্ন আঁকি, সাথে নিয়ে অতীত স্মৃতির জোনাকি”।

প্রথম পৃষ্ঠায় মামণি লিখেছেন, প্রিয় মানুষরা সবসময় আমাদের সাথে থাকে না। সাথে থাকে প্রিয় মানুষদের সাথে কাটানো দুঃখ-সুখের মূহুর্তগুলো। প্রিয় জনদের দেয়া বিরহানন্দের প্রহরগুলোর স্পর্শে জীবন গল্পে রচিত আনন্দ-বেদনার কাব্য। মনের আকাশে প্রিয়জনরাই তারার ফুল হয়ে হাসে, শুভ্র মেঘ হয়ে ভাসে, উঁকি দেয় প্রশান্তির এক ফালি চাঁদ রুপে। প্রিয়জন নামক ভেলায় চড়েই জীবনগাঙে ভিড়ে সুখপাখী। প্রতিজন প্রিয় মানুষ আসলে এক একটি জোনাকি। তাদের সাথে কাটানো ক্ষণ আলোতে হাসে, আঁধারে জ্বলজ্বল করে। ঠিক যেন স্মৃতির জোনাকি! স্মৃতির জোনাকি শব্দটা মামণি একাধিকবার লিখেছেন ডায়েরিতে বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে। আমার ডায়েরির নাম তাই আমি রেখেছি স্মৃতির জোনাকি। নামকরণের পেছনে এরচেয়েও বড় কারণ হচ্ছে যখনই কোন কারণে আমার মনে আঁধার ভর করে, মামণির ডায়েরিতে চোখ বুলালেই মনের ভেতরটা আলো আলো হয়ে যায়। সকল প্রতিকূলতাকে দিতে পারি আমি ফাঁকি, সম্মুখে মেলে ধরি যখন মামণির রেখে যাওয়া স্মৃতির জোনাকি। আলহামদুলিল্লাহ।

ডায়েরিতে আমাকে বলা মামণির প্রথম শিক্ষা ছিল, “জানো ছোট্ট বুড়ি এই জগতে সত্যিকার সুখী হতে চাইলে সর্বাগ্রে আত্মসুখ বিসর্জন দিতে হয়। জগতে যারাই আত্মসুখের লিপ্সা ত্যাগ করতে পেরেছে সুখ তাদের মনের গহীনে সবরের অলংকারে নিজ সাম্রাজ্য গড়ে নিয়েছে। আত্মত্যাগী মানুষেরা সেজন্য ই এত স্থির, এত প্রশান্ত থাকতে পারে সর্বাবস্থাতে। আমিও আপ্রাণ চেষ্টা করি নিজের আগে আমার আপনজনদের সুখকে বড় করে দেখার। জানি না কতটুকুন পারি তবে কারো চোখের নদীতে ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তোলার চাইতে তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি রূপে ফুটতেই ভালোবাসি। আমার কারণে কেউ ব্যথিত হবে এমনটা কল্পনাও করতে পারিনা। মনেহয় কিছু ব্যথা সয়ে যদি অন্যের মুখে হাসি ফোঁটাতে পারি এরচেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিইবা হতে পারে জীবনে! আমার এমন ভাবনার পেছনে তোমার নানুমণির বিশাল অবদান রয়েছে। তোমার নানুমণি মানে আমার মামণি আমার ছোট্ট জীবনে দেখা সবচেয়ে অনন্যা নারী। মামণিকে দেখেই আমি শিখেছি ভালোবাসার সুতোয় কিভাবে গাঁথতে হয় সম্পর্কের মোতি। হাসতে হাসতে কিভাবে নিজের সুখের বদলে অন্যের তরে খুশি খরিদ করতে হয় সেই শিক্ষাও তোমার নানুমণির কাছ থেকেই পেয়েছি। জানি না আমি আমার মামণির মতো অসাধারণ মা হতে পারবো কিনা! তবে আমার মামণির কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো তোমাকে উপহার স্বরূপ দিয়ে যেতে চাই। কেননা তুমি এসবের হকদারও।”

এইটুকুন লিখে থামলো নাবিহা। জানালার পর্দা সরিয়ে বাগানে উঁকি দিলো। পুরো বাগানে চোখ বুলিয়ে আকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে দেখতে না পেয়ে কিঞ্চিৎ আশাহত হতো। এই সময় পাপা সাধারণত বাগানেই থাকেন। আজকে তাহলে নিয়মের ব্যতিক্রম হলো কেন? নিয়মের ব্যতিক্রম হবার কারণ উদঘাটনের জন্য ডায়েরি বন্ধ করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো নাবিহা। মামণির ডায়েরির আলোকে নতুন আরেকটা ডায়েরি লিখতে শুরু করেছে এই তথ্যটা সবার আগে পাপাকে জানাতে চায় নাবিহা। কারণ এমনটা করার পরামর্শ পাপাই তাকে দিয়েছিলেন। একদিন কথায় কথায় পাপাকে বলেছিল মামণির ডায়েরি নিয়ে বসলেই নানান ধরণের ভাবনা এসে উঁকি দেয় মনে। পাপা তখন বলেছিলেন, এটা খুব স্বাভাবিক আমরা যখন কারো কথা শুনি, পড়ি তখন সেই কথাগুলোকে ঘিরে আমাদের মনে নিজস্ব ভাবনার জন্ম হয়। আমি চেষ্টা করি আমার এমন ভাবনাগুলোকে টুকে রাখতে। তুমিও চাইলে টুকে রাখতে পারো। পাপার কথা শোনার পর নাবিহা তার নিজস্ব ভাবনাগুলোকে লিখে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ডায়েরির প্রারম্ভটা প্রশান্তিকর হয়েছে কিনা সেটা একবার পাপাকে দিয়ে যাচাই করে নিতে চায় সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার আগে।

 

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৪

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৪


আফরোজা হাসান


নীলাকাশের বুকে ডানা মেলা পাখী দেখে নিজে পাখী হবার বায়না ধরে যেই শিশুরা তাদের মতই একজন ছিলাম আমি। পাখী দেখলেই বাবা আর মামণির কাছে গিয়ে ঘ্যানঘ্যান শুরু করতাম, আমাকে পাখী বানিয়ে দাও, আমাকে ডানা লাগিয়ে দাও। এই কথা সেই কথা বলে আমাকে বুঝ দিয়ে রাখতেন বাবা ও মামণি। আমার বয়স যখন ছয় তখন বড়আব্বু বেড়াতে এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে। একদিন বিকেলে পাখী দেখে আবার কান্না শুরু করেছিলাম আমি। মামণির কাছ থেকে কান্নার রহস্য জেনে বড়আব্বু আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বাগানে গিয়ে বসলেন। আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে জানতে চেয়েছিলেন, তুমি পাখী হতে চাও? ফোঁপাতে ফোঁপাতে জবাব দিয়েছিলাম, হু, কিন্তু কেউ আমাকে ডানা কিনে দেয় না। বড়আব্বু তখন হেসে বলেছিলেন, কেউ কেন তোমাকে ডানা কিনে দেয় না জানো? কারণ তোমার তো ডানা আছেই সেজন্য। আমি ভালো মত নিজেকে আরেকবার দেখে বললাম, কোথায় আমার ডানা? বড়আব্বু বলেছিলেন, তোমার ডানা আছে কিন্তু অনেক ছোট ছোট তাই দেখতে পারছো না। তুমি কি চাও তোমার ডানারা বড় হোক? মাথা দুলাতে দুলাতে বললাম, হু চাই। বড়আব্বু বললেন, তাহলে তোমাকে বেশি বেশি বই পড়তে হবে। তুমি যত বই পড়বে তোমার ডানারা তত দ্রুত বড় হবে। সেদিনই আমি জীবনে প্রথমবারের মত লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। বড় আব্বু লাইব্রেরীতে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, যাও তোমার যে ক’টা ইচ্ছে বই নাও। দু’হাতে যতগুলো সম্ভব হয়েছিল তুলে নিয়েছিলাম বই। শিশুদের বই ছিল না একটাও তার মধ্যে। কিন্তু বড় আব্বু আমার উড়ন্ত মনে ছুটে চলা প্রথম কদমকে ব্যহত করতে চাননি। কিনে দিয়েছিলেন সবগুলো বই।

যেহেতু বুঝতাম না তাই কয়েকদিন সাথে সাথে রাখার পর একসময় ভুলে গেলাম প্রথম কেনা বইগুলোর কথা। বহু যতনে সেই বইগুলোকে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন বড়আব্বু। যখন ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠেছিলাম সেই বইগুলোকে খুব সুন্দর করে প্যাকেট করে উপহার দিয়েছিলেন আমাকে। সাথে দিয়েছিলেন আমার জীবনের প্রথম বই কেনার রত্নতুল্য স্মৃতিখানি। বড়আব্বুর কাছে থেকেই প্রথম বই উপহার পেয়েছিলাম। কমিকস আর রূপকথার জগত থেকে বড়আব্বুর হাত ধরেই প্রথম কদম রেখেছিলাম জ্ঞানোরাজ্যে। বড়আব্বু যখন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন কিংবা আমরা যখন বেড়াতে যেতাম পুরোটা সময় উনার সাথেই কাটতো আমার। এখন জানি ইতিহাস প্রিয় মানুষ ছিলেন বড়আব্বু। আর ইতিহাসের কথাই পড়ে শোনাতেন আমাকে। কিছু না বুঝলেও ডানা বড় করার জন্য চুপটি করে শুনতাম উনার সবকথা। এভাবেই যে কোন ব্যাপারে খুব মনোযোগী হবার বীজটিও বড়আব্বুই বুনে দিয়েছিলেন আমার কচি মনে। ডানার আকর্ষণে সেই যে ছুটে গিয়েছিলাম বইয়ের ভুবনে। এরপর আর কোনদিন ফিরে আসা হয়নি। এখনো সন্ধান চলছে ডানার। সময়ের বিবর্তনে ডানাতে পালকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, উড়ার ইচ্ছে আরো জোড়াল হয়েছে, মনটা বাঁধনহারা হয়েছে কিন্তু এখনো ডানাতে উড়ার শক্তি সঞ্চারিত হয়নি। মৌমাছি যেমন ফুলে ফুলে ঘুরে বিন্দু বিন্দু মধু সংগ্রহ করে। আমিও তেমনি বিভিন্ন বই থেকে করে চলছি একটু একটু শক্তি সঞ্চার। জানি না কবে আমার বাঁধনহারা মন প্রসারিত ডানা মেলে উড়তে শিখবে।

চুপচাপ বসে মুগ্ধ মনে স্বাতির কথা শুনছিল আরভ। স্বাতির কাছ থেকে কিছু জানতে হলে প্রশ্ন করে করে সেটা বের করতে হয়। সেটা গত এক সপ্তাহে বেশ ভালো মতোই বোঝা হয়ে গিয়েছে আরভের। অন্যে কেউ যাই বলবে চুপ করে শুনবে কিন্তু কখনোই নিজ থেকে কিছু জানতে চায় না। আবার নিজের সম্পর্কে কোন কথা বলতেও আগ্রহী নয়। তবে প্রশ্ন করলে জবাব দেয়। তাই প্রশ্ন করে করেই আরভকে জানতে হচ্ছে তার নববধূকে। এমনতর বইয়ের ভুবনে ডুবে থাকা কন্যা হবার রহস্য কি জানতে চাইলে নিজের ছোটবেলার কথাগুলো বললো স্বাতি। গত এক সপ্তাহ ধরে একটা প্রশ্ন করতে চাইছে আরভ স্বাতিকে। কিন্তু জিজ্ঞেস করবে কি করবে না সেটা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছে। আরভের খুব জানতে ইচ্ছে করে স্বাতির কি কখনো তাকে জীবনসাথীর জায়গায় কল্পনা করেছে?! যতবারই ভেবেছে জিজ্ঞেস করবে লজ্জা ও সঙ্কোচ ঘিরে ধরেছে মনকে। স্বাতি যদি তার ইনটেনশন না বোঝে? আরভের সবসময় মনেহয় স্বামী-স্ত্রীর কখনোই এমন কোন আচরণ বা কথা বলা উচিত নয়, যারফলে একে অন্যের প্রতি রেসপেক্টে প্রভাব পড়তে পারে। বাবা-মার চমৎকার দাম্পত্য জীবন দেখে বুঝেছে স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনে রেসপেক্ট সবচেয়ে শক্তিশালী স্তম্ভগুলোর একটি। যেটা নড়বড়ে হয়ে যাওয়া মানে সামান্য বাতাসেই দুলে ওঠা বন্ধনটি।

তোমাকে এত চিন্তিত দেখেচ্ছে কেন? মনেহচ্ছে খুব সিরিয়াস কিছু ভাবছো?

স্বাতির প্রশ্ন শুনে আরভ হেসে বলল, চেহারা দেখেই এতকিছু বুঝে ফেলেছো? শেষপর্যন্ত কি ফেস রিডার বিয়ে করে ফেললাম নাকি? অতি চিন্তার বিষয়।

স্বাতি হেসে বলল, চিন্তার বিষয় কেন? অনেক গোপন তথ্যাদির খাজানা লুকায়িত আছে নাকি আপনার মনের মাঝে?

হাত বাড়িয়ে স্বাতিকে আরেকটু কাছে টেনে নিলো আরভ। হেসে বলল, তুমি কি জানো তোমার শব্দরা অদ্ভুত সুন্দর?

চলবে..

পর্ব-৩

 

দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে

দুয়ারগুলি ভাঙল ঝড়ে


ফাতিমা মারিয়াম


এক
-আসসালামু আলাইকুম
-ওয়া আলাইকুম আসসালাম…কেমন আছ?
-আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি…আপনি কেমন আছেন?
-আমিও ভালো…এতদিনেও তুমি আমাকে আপনি করে বলছ? এখন যদি অভ্যাস না কর তবে পরেও তো পারবে না!
-যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে। নাস্তা খেয়েছেন?
-হুঁ খেয়েছি…তুমি খেয়েছ?
-জি…আজ সকালে নামাজ পড়েছেন?
-পড়েছি…তবে সময়ের পরে।
-কেন? আজও উঠতে পারেন নি?
-না, তুমি এক কাজ করতো… প্রতিদিন ভোরে নামাজের টাইমে আমাকে জাগিয়ে দেবে।
-তারচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি আপনার মোবাইলে এলার্ম দিয়ে রাখেন।
– তা হয় কিন্তু আমি চাই তুমিই আমাকে ডেকে দেবে। তোমার কথা শুনেই দিনটা শুরু করতে চাই। তাহলে দিনটা ভালো যাবে।
-এটা কুসংস্কার তা জানেন?
-জানি…কিন্তু আগামীকাল থেকে নামাজের সময় তুমিই আমার ঘুম ভাঙাবে।
-আচ্ছা এখন রাখি। আম্মু ডাকছে…
-আচ্ছা রাখছি…মনে থাকে যেন।

দুই
জেবা মায়ের রুমে এসে দেখে তার মা আলমারি খুলে একগাদা কাপড়চোপড় নামিয়ে নিয়েছেন। এগুলো এখন মা মেয়ে দুজনে মিলে গোছাবে। কাপড় ভাঁজ করতে করতে আসমা জেবাকে জিজ্ঞাসা করে- জাহিদ আজ রাতে আসিফকে আসতে বলেছে।

-কেন?

– এমনিই…অনেকদিন ছেলেটা আসে না। জাহিদ সকালে অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে আর রূপাকে বলে গেল রাতের জন্য রান্নার ব্যবস্থা করতে।

-আমার সাথে তো কিছুক্ষণ আগেই আসিফের কথা হল! আমাকে তো এই বিষয়ে কিছুই বলল না!

– হয়ত মনে ছিল না।

মা মেয়ে দুজনেই কাপড় গুছানো শেষ করে বসে বসে গল্প করছে। এমন সময় জেবার ভাবী রূপা শাশুড়ির রুমে আসল। – মা আজ দুপুরে আর তেমন কিছু করছি না।কালকের যা আছে তা দিয়েই আমাদের চলবে। রাতের জন্য এখন থেকেই কিছু কাজ গুছিয়ে রাখি।

-রূপা, তাহলে তুমি যতটুকু পার করতে থাক আমি জাওয়াদকে স্কুল থেকে নিয়ে আসি। এসে সবাই মিলে বাকী কাজ শেষ করে ফেলব। জেবা তুইও রূপাকে হেল্প কর।

– তোমার আদরের বৌমার কোন কষ্ট হবে না আম্মু। আমি তার পাশেই থাকব। চিন্তা কোর না।

আসমা নাতিকে স্কুল থেকে আনতে বের হয়ে গেলেন।

মা বেরিয়ে যেতেই জেবা বলল-ভাবী আসিফকে আজ দাওয়াত দেয়ার কি দরকার ছিল? আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।

-অস্বস্তির কি আছে? তুই তো আর ওর সামনে যাবি না। বিয়ের এখনো দুই/তিন মাস বাকী। মাঝেমধ্যে তো ও আসবেই। এটাই স্বাভাবিক।

-ওর সাথে প্রতিদিন কথা বলতেও আমার ভালো লাগে না।

-তোর ভাইয়াই তো তোকে বলেছে ওর সাথে মাঝেমধ্যে কথা বলতে। এখানে তোর খারাপ লাগার কি আছে? এত খুঁতখুঁতে হলে এই যুগে চলা যায় না। আমি নিজেও এইভাবে কথা বলা পছন্দ করি না। কিন্তু আসিফ তোর সাথে কিছুটা ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য, তোকে কিছুটা বোঝার জন্য রিয়াদ ভাইকে বলে তোর ভাইয়াকে রাজি করিয়েছে। মা আর আমি আপত্তি করায় তোর ভাইয়া বলল বর্তমানে এসব বিষয় কোন ব্যাপার না। তাই আমরাও আর কিছু বলিনি। এখন তো মাও আসিফ কে বেশ পছন্দ করেন। এসব কথা রাখ তো এখন আয় আমরা মা আসার আগেই কিছু কাজ গুছিয়ে ফেলি।

তিন
রূপাকে কিছু কাজ গুছিয়ে দিয়ে রূপা নিজের রুমে চলে আসলো। আসলে ভাবীর কাছে স্বীকার না করলেও সে প্রতিদিন আসিফের ফোনের অপেক্ষায় থাকে।আগে ওর মোবাইল ছিল না। এঙ্গেজমেন্ট এর পরে ভাইয়া ওকে মোবাইল কিনে দিয়েছে। যাতে করে সে তার রুমে থেকেই আসিফের সাথে কথা বলতে পারে। ল্যান্ডফোনের সেট মায়ের রুমে। তাই জেবার সুবিধার জন্যই ভাইয়া এই ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

প্রথম প্রথম একটু কেমন জানি লাগলেও আসিফের সাথে গল্প করতে এখন তার কাছেও বেশ ভালো লাগে। ভাইয়ার বন্ধু রিয়াদ ভাই এই বিয়ের ঘটক। আসিফ উনার প্রতিবেশী। ভালো ছেলে, ভালো চাকুরী করে, পরিবার বেশ ভালো সব কিছু মনের মত হওয়াতে জাহিদ মা সহ সবার সাথে আলোচনা করেই পাকা কথা দেয়। এখন শুধুমাত্র এঙ্গেজমেন্ট হয়েছে। বিয়ে হবে আসিফের বোন এবং দুলাভাই দেশে আসার পর। উনারা প্রবাসী। তিন চার বছর পরপর দেশে আসেন। এবার তারা যে সময়ে আসবে সেই সময়ে বিয়ে হবে।

বিয়ের ডেট এখনো ঠিক হয় নি। আসিফের বোন আসার পরপরই ডেট হবে। তারপর বিয়ে। দুই পরিবারেই বিয়ে উপলক্ষে প্রস্তুতি চলছে। আসিফ প্রায় প্রতিদিনই ফোন করে। তেমন দরকারি কোন কথা না। কথায় কথায় তাদের সময় বেশ ভালোই কাটে। হুট করেই আসিফ ফোন করে বলবে- আগামীকাল আমার রুমের জন্য ম্যাচিং করে পর্দা আর বিছানার চাদর কিনব। তোমার কি রঙ পছন্দ বল তো! একসেট কিনব তোমার পছন্দ মত আরেক সেট কিনব আমার পছন্দ মত। অথবা আবার কোনদিন বলবে- তুমি কি জামদানী শাড়ি পছন্দ কর? আমি আজ খুব সুন্দর একটা জামদানী কিনে এনেছি। কি কালার সেটা বলব না।তবে এটুকু বলতে পারি তোমার পছন্দ না হয়েই যাবেনা। এভাবে সে আরো কিছু শাড়ি থ্রি পিস কিনে রেখেছে। যখনই যা কিনবে তাই জেবাকে জানাবে। এসব শুনতে জেবার খারাপ লাগে না।

চার
প্রায় দেড় মাস পরের কথা।

আসিফের বোন মিনু ও দুলাভাই মইন বাচ্চাদের নিয়ে দেশে এসেছেন। এসেই তারা জেবাকে দেখতে এসেছেন। মিনু যতক্ষণ এই বাসায় ছিল জেবা, রূপা ও আসমার সাথে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এমনিতেও মিনু বেশ হাসিখুশি স্বভাবের মেয়ে। পরিচিত অপরিচিত সবার সাথেই গল্প করতে বেশ পছন্দ করে। তার স্বভাবসুলভ হাসি আনন্দ দিয়ে সে জেবার পরিবারের সবার সাথে কথা বলে গেছে।

কিন্তু বাসায় গিয়ে সে যা বলল তা শুনে আসিফ এবং তার বাবা মা স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। সে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জেবাকে তার পছন্দ হয়নি। জেবার গায়ের রং পুরোপুরি ফর্সা নয় আর হাইটও কম।

আসিফ আমতা আমতা করে বলল- আপু তুমি এসব কি বলছ? সব কিছু ঠিকঠাক। দুই পরিবারে প্রস্তুতিও নেয়া হয়ে গেছে। এখন কিভাবে ওদের না বলা যায়?

-আচ্ছা আমি তোকে একটি মেয়ে দেখাচ্ছি। যদি এই মেয়ে তোর পছন্দ না হয় তবে জেবাকেই আমরা বউ করে আনব। এই মেয়েটাকে আমি কয়েকদিন আগে দেখেছি। যদি আগে দেখতাম তবে জেবার সাথে তোর এঙ্গেজমেন্ট করার প্রশ্নই আসত না। তোর দুলাভাইয়ের এক বন্ধুর মামা তার স্ত্রী এবং ছেলে মেয়ে নিয়ে কিছুদিন আগে আমাদের ওখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন। আমাদের বাসাতেই উঠেছিল। তখন উনার মেয়ে উর্মিকে দেখে আমাদের খুব পছন্দ হয়। দেখতে যেমন সুন্দর আলাপ ব্যবহারও তেমন ভালো। আমি মেয়ের মা বাবাকে হালকা ভাবে কিছু বলে রেখেছি।তারা আমাকে বলেছে আমরা দেশে এসে যেন তোকে নিয়ে তাদের বাসায় যাই। মা আর তোকে নিয়ে আগামীকাল আমি ওখানে যাব। তারপর ওকে দেখে সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নেব।

 পরদিন আসিফ মিনু আর মায়ের সাথে পাত্রী দেখতে গেল। মেয়ে দেখে আসিফ ও তার মা মুগ্ধ! এত সুন্দর মেয়ে! বাসায় এসে সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিলো উর্মিকেই বাড়ির বউ করে আনবে।

কথার ফাঁকে আসিফ একবার মিনুকে বলল – কিন্তু আপু জেবা বা জেবার পরিবার আমাদের কি মনে করবে? এতদিন ধরে………

-আরে থাম তো! এঙ্গেজমেন্ট মানেই কি বিয়ে না কী? এখনো আমরা বিয়ের ডেটই ঠিক করিনি। এখন তো মানা করে দিতেই পারব। আর তুই এখন জেবার সাথে কোন কথা বলবি না। ও ফোন করলেও রিসিভ করবি না।

পাঁচ
সেদিন মিনু এসে দেখা করে যাবার পর থেকে আসিফের বাসার কেউই ফোন করছে না। জেবার বাসার সবাই ভাবল ওরা হয়ত ব্যস্ত! সামনে অনুষ্ঠান আর তাছাড়াও মিনু এবং তার বর তাদের বাচ্চাদের নিয়ে এতদিন পরে এসেছে। ওদেরকে নিয়েও তো সবাই ব্যস্ত। তিন চার দিন চলে গেল।

আরো দুইদিন পরে জেবা আসিফের নাম্বারে কল দিল। আসিফ এই কদিন একবারও জেবার সাথে কথা বলে নি। জেবা বেশ চিন্তিত। যত ব্যস্তই থাকুক জেবার সাথে আসিফ কথা না বলে থাকতেই পারে না। রিং হচ্ছে না, মোবাইল বন্ধ। জেবা কিছুক্ষণ পর আবার কল দিল। এখনো মোবাইল বন্ধ।

সন্ধ্যার পরও আসিফকে পেল না। আসিফের কোন সমস্যা হয়েছে কি না জেবা বুঝতে পারছে না। তার ভীষণ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। সে রূপাকে বিষয়টা জানালো। রূপা গিয়ে শাশুড়িকে বলল মা আসিফের বাসায় একটু ফোন করে দেখুন তো ওদের কি হয়েছে? আসিফের মোবাইল বন্ধ কেন? কোন সমস্যা হয়েছে কি না একটু জানা দরকার।

আসমা আসিফের বাসার নাম্বারে কল করলেন। রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ রিসিভ করছেনা। কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করতেই ওপাশ থেকে ঐ বাসার বুয়া ফোন রিসিভ করল। বুয়া আসমাকে চিনতে পারল না। ভাবল হয়ত আসিফদের কোন আত্মীয়। তাই সে আসমাকে জানালো যে মিনু দেশে এসে আসিফের জন্য অন্য মেয়ে দেখিয়েছে। সেই মেয়েকে বাসার সবাই পছন্দ করেছে এবং আজ ওখানে সবাই গেছে ডেট ঠিক করার জন্য। অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যাবে।

আসমা রিসিভার নামিয়ে রেখে হতভম্ব হয়ে বসে রইলেন। মানুষ এভাবে প্রতারণা করতে পারে? এইজন্যই আসিফ তার মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে? আসমা বুঝতে পারছেন এখন তাকে শক্ত থাকতে হবে। তিনি যদি ভেঙ্গে পড়েন তবে জেবাকে কে সাহস যোগাবে? মেয়েটাকে আসিফের সাথে কথা বলতে, যোগাযোগ রাখতে পরিবারের সবাই উৎসাহ দিয়েছিল। সেই সুযোগে আসিফ ওর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করত। তিনি যদি এই কথা বলা সাপোর্ট না করতেন তবে আজ জেবাকে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যেতে হত না। উনি নিজেকেই দোষী মনে করছেন।

আসমা রুপা আর জাহিদকে উনার রুমে ডেকে পাঠালেন। ওরা আসলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বললেন। সব শুনে রুপা হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। আসমা খুব শান্ত গলায় বলল- কান্না করনা রুপা। আমাদের সবাইকে শক্ত থাকতে হবে। তা না হলে জেবা ঠিক থাকবে কিভাবে?

জাহিদ মনে মনে নিজেকেই এই ঘটনার জন্য দায়ী করছে। মুখ ফুটে মা বা রুপার সামনে কিছু বলতে তার সাহস হচ্ছেনা।

এদিকে আসিফের বন্ধ মোবাইলে জেবা বারবার কল দিয়েই যাচ্ছে… মনে মনে আশা এবার হয়ত রিং হবে, সে শুনতে পাবে আসিফের গলা!

[এই গল্পের পটভূমি বেশ আগের। তখন বাংলাদেশের মানুষ মাত্র মোবাইল ফোন ব্যবহার করা শুরু করেছে। তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল না। তাই আসিফ তার মোবাইলের সিম বন্ধ রেখেই জেবার কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলতে পেরেছিল।]

 

শিশু শরণার্থী থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট

শিশু শরণার্থী থেকে দেশের প্রেসিডেন্ট


নারী সংবাদ


যুদ্ধের মধ্যে থাকা লাটভিয়া থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ছোট্ট মেয়েটি। এরপর ৫০ বছর তাকে নির্বাসনে কাটাতে হয়। তবে দেশে ফেরার পরে ভাইরা ভাইক-ফ্রাইবার্গা হলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। শুধু তাই নয়, তিনি হলেন সাবেক সোভিয়েত ব্লকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম নারী প্রেসিডেন্টও।

তিনি বলেন, ”আমার বাবা-মা কখনোই আমাকে ভুলতে দেননি যে, আমি একজন লাটভিয়ান।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাল্টিক সাগরের তীরের এই দেশটিতে অভিযান চালায় নাৎসি জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেই ১৯৪৪ সালের টুকরো টুকরো স্মৃতি মনে আছে তার, যখন রাশিয়ার কম্যুনিস্ট রেড আর্মি লাটভিয়ায় ঢুকে পড়ে।

”তাদের লাল পতাকা আর মুষ্টিবদ্ধ হাত দেখে আমি খুবই অভিভূত হয়ে ছিলাম। একপর্যায়ে তারা যখন মার্চ করে যাচ্ছে, আমিও আমার মুষ্টিবদ্ধ হাত তাদের উদ্দেশ্যে নেড়ে বললাম ‘হুররা”’, তিনি বলেন।

”একসময় আমি তাকিয়ে দেখলাম একটি ল্যাম্পপোস্টের আড়ালে দাঁড়িয়ে রয়েছে আমার মা, পুরোপুরি বিধ্বস্ত লাগছিল তাকে। তার গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে শুরু করেছিল। তিনি আমাকে বলছেন, ”এরকম করো না। আজ লাটভিয়ার জন্য খুব দুঃখের একটা দিন।”

নিষ্ঠুর শিক্ষা

যখন ভাইরার বয়স সাত বছর, তখন তারা প্রথমে লাটভিয়া ছেড়ে বিধ্বস্ত জার্মানিতে যায়। এরপর তারা ফরাসি নিয়ন্ত্রিত মরক্কোয় যায়, তারপরে কানাডায়। ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সে আর লাটভিয়ায় ফিরতে পারেনি। তবে ৬০ বছর বয়সে তিনি যখন ফিরলেন, তার আট মাসের মাথায় তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন।

ভাইরা স্মৃতিচারণ করেন, ১৯৪৪ সালের দিকে তারা বাবা বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস শুনতেন, বোঝার চেষ্টা করতেন যে যুদ্ধ কোন দিকে গড়াচ্ছে। পরের বছর তাদের পরিবার লাটভিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

”১৯৪৫ সালের নববর্ষের রাতে আমরা একটি জাহাজে উঠে বসলাম। এটা ছিল সৈন্যদের পারাপার করার জাহাজ, সেই সঙ্গে অস্ত্রপাতিও থাকতো। যদি কোন টর্পেডো জাহাজটিতে আঘাত করতো, তাহলে পুরো জাহাজটি বিস্ফোরিত হয়ে যেতো।”

”তারা বেশ কিছু বেসামরিক লোকজনকেও জাহাজে নিতো, যারা কম্যুনিজম থেকে যেকোনো মূল্যে পালাতে চাইতো। জাহাজে থাকা লাটভিয়ানরা ডেকে জড়ো হয়ে লাটভিয়ার জাতীয় সঙ্গীত গাইতো।”

জার্মানি জুড়ে যেসব শরণার্থী ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে এসে পৌঁছায় পরিবারটি। সেখানকার পরিবেশ ছিল খুবই দুর্দশাজনক। তাঁর ১০ মাস বয়সী শিশু বোনটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। একবছরের মধ্যে ভাইরার আরেকটি ভাই আসে পৃথিবীতে। তবে সেই আনন্দের ঘটনা ছাপিয়ে জীবনের একটি কর্কশ শিক্ষা পান সেদিন।

”আমার মায়ের সঙ্গে সেই রুমে আঠারো বছরের এক তরুণী একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দিয়েছিল। কিন্তু সে শিশুটিকে নিতে চায়নি। এমনকি সে তার কোন নামও রাখতে চায়নি, শিশুটির কোন ব্যাপারেই সে আর জড়াতে চায়নি, কারণ রাশিয়ার সৈন্যদের গণ ধর্ষণের ফলে ওই শিশুটির জন্ম হয়েছিল।”

”প্রত্যেকবার যখন সেবিকারা অসহায় শিশুটিকে তার কাছে নিয়ে আসছিল, সে তার চেহারা দেয়ালের দিকে নিয়ে কাঁদছিল আর কোন কথা বলতেও অস্বীকৃতি জানাচ্ছিল। সেবিকারা শিশুটির নাম দেয় মারা, আমার বোনের নামও ছিল তাই।”

তিনি বলছেন, ”আমার মনে হলো, এটা সত্যিই অন্যায়। এখানে একজন মারার জন্ম হয়েছে যাকে এই পৃথিবীতে কেউ চায় না। আর আমাদের মারাকে আমরা এতো বেশি চাইতাম, কিন্তু তাকে আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নেয়া হয়েছে। আমি বুঝতে শুরু করলাম, জীবন আসলেই খুবই রহস্যময় এবং পুরোপুরি ন্যায্য নয়।”

বাল্যবিয়ে ভীতি

১১ বছর বয়সের সময় ভাইরাকে আবার স্থানান্তরিত হতে হয়। এবার জার্মানি থেকে ফরাসি নিয়ন্ত্রিত মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায়।

”মধ্যরাতে ট্রাক থেকে আমাদের যেখানে নামিয়ে দেয়া হলো, সেটা ছিল ছোট একটি অস্থায়ী গ্রাম। কিন্তু সেটা ছিল যেন পুরো বিশ্বের একটা সংক্ষিপ্ত রূপ। সেখানে ফরাসি লোকজন ছিল, বিশ্বের সবদেশের মানুষ ছিল। গৃহযুদ্ধের সময় থেকে থাকা স্প্যানিশ লোকজন, ইটালিয়ান এবং রাশিয়ান, সব ধরণের মানুষ ছিল।”

তার পিতার একজন সহকর্মী বললেন, তিনি ভাইরাকে বিয়ে করতে চান, যদিও ভাইরা তখন শিশু।

”বাবা একদিন বাসায় ফিরে বললেন, সে আমাকে ১৫ হাজার ফ্রাঙ্ক যৌতুক দিকে চায়। সে আমাকে প্রথম দুইটা গাধা আর গরুও দিতে চেয়েছে। কিন্তু বাবা তাকে বলেছেন, সে একটি শিশু এবং তার স্কুলে যেতে হবে। তখন ওই ব্যক্তি বলছেন, ঠিক আছে, তাকে আমরা স্কুলে যেতে দেবো।”

তার বাবা-মা দুজনে হেসে উঠলেন। কিন্তু ভাইরা সতর্ক হয়ে উঠলেন।

লিঙ্গ বৈষম্যের অধ্যাপক

এর কিছুদিন পরে ভাইরার পরিবার কানাডায় চলে যায়। ষোল বছর বয়সে ভাইরা একটি ব্যাংকে চাকরি পেলেন। সেই সঙ্গে তিনি নাইট স্কুলে যেতে শুরু করলেন। এরপরে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টোতে পড়ার সুযোগ পেলেন।

সেখানে তার সঙ্গে পরিচয় হলো এমন একজন ব্যক্তির সঙ্গে, যাকে পরবর্তীতে তিনি বিয়ে করেন। ইমান্টস ফ্রাইবার্গা লাটভিয়া থেকে পালিয়ে আসা আরেকজন। মনোবিজ্ঞানে পড়াশোনা করে ১৯৬৫ সালে পিএইচডি করতে শুরু করেন ভাইরা। কিন্তু ভাইরা বলেন, তার বেছে নেয়া বিষয়টি ছিল যেন ভাগ্যের অঙ্গুলি হেলনে নির্ধারিত একটি বিষয়।

”সম্ভাব্য বিষয়গুলোর একটি তালিকা ছিল রেজিস্টারের কাছে। আমি সেটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখলাম এবং একটি লম্বা শব্দ দেখতে পেলাম যেটা শুরু হয়েছে পি দিয়ে এবং শেষ হয়েছে ওয়াই দিয়ে। আমি বললাম, এই বিষয়টি আমি নিতে চাই।”

কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি তিনি বুঝতে পারলেন, নারীদের এখনো পুরোপুরি স্বাগত জানানো হয় না।

”একদিন আমাদের অধ্যাপক একটি সেমিনারে বললেন, আমাদের এখানে তিনজন বিবাহিত নারী রয়েছেন যারা পিএইচডি করছেন। এটা আসলে পুরোপুরি অপচয়, কারণ যারা বিয়ে করবে, সন্তান জন্ম দেবে তারা এমন একটি জায়গা দখল করে আছে যেটি একটি ছেলে পেতে পারতো যে হয়তো সত্যিকারের একজন বিজ্ঞানী হতে পারতো। ওই সেমিনারে থাকা আমরা সব মেয়েরাই সারা জীবন ধরে সেই কথাগুলো মনে রেখেছি।”

তিনি বলেন, তারা ওই লিঙ্গ বৈষম্য করা অধ্যাপককে দেখিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, তার পছন্দের ছেলেদের তুলনায় নারীরা আরো ভালো কিছু করতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব মন্ট্রিয়লে ৩৫ বছর কাজ করেছেন ভাইরা। তিনি পাঁচটি ভাষায় কথা বলতে পারেন এবং ১০টি বই লিখেছেন।

বাড়িতে প্রত্যাবর্তন…চূড়ান্তভাবে

১৯৯৮ সালে যখন ভাইরার বয়স ৬০ বছর, তিনি প্রফেসর এমেরিটাস নির্বাচিত হলেন এবং অবসর গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু একদিন বিকালে তার টেলিফোন বেজে উঠলো। ফোনের অপর প্রান্তে ছিলেন লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী। লাটভিয়ার একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে কাজ করার প্রস্তাব পেলেন ভাইরা।

তাকে বলা হলো, ”তারা বিদেশে থাকা এমন কাউকে খুঁজছে, যিনি অনেকগুলো ভাষায় কথা বলতে পারেন, পশ্চিমা মানসিকতা বুঝতে পারেন এবং সেই সঙ্গে লাটভিয়ার সংস্কৃতি সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে।”

কিন্তু তখনই যেন দেখতে পেলেন যে, তিনি লাটভিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ে গেছেন।

দেশে ফেরার আটমাস পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য কানাডিয়ান পাসপোর্ট ত্যাগ করলেন ভাইরা। তিনি নির্বাচিত হলেন লাটভিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসাবে।

একপর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা গিয়ে ঠেকেছিল ৮৫ শতাংশে।

”আমি ছিলাম এমন কেউ, যিনি অর্থ রোজগার বা অন্য কিছুর জন্য নয়, বরং শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করার জন্য। এই পদে এসেছিল। তখন অনেক সংবাদ মাধ্যম আগ্রহের সঙ্গে সমালোচনা করার চেষ্টা করছিল যে, আমি হচ্ছি খরুচে স্বভাবের, পশ্চিমে বিলাসবহুল জীবনযাপন করেছি। কিন্তু এগুলো পুরোপুরি বানানো” তিনি বলেন।

”আমি আবিষ্কার করলাম, আপনি যদি গণমাধ্যমকে বিশ্বাস করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে জনগণের কাছে সরাসরি গিয়ে কথা বলতে হবে।”

২০০৪ সালে নেটো আর ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে লাটভিয়ার যোগদানের পেছনে তিনি মূল ভূমিকা রেখেছেন।

ইস্তানবুলে নেটো সম্মেলনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে ভাইরা ”নারী হওয়ার অনেক সুবিধা আছে। আমার মনে পড়ছে, ইস্তানবুলে নেটো সম্মেলনের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আমার বাহু ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, কারণ আমি হাই হিল পড়েছিলাম আর মেঝে ছিল পিচ্ছিল, আমরা আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম। আমি সাধ্যমত সবকিছুই করেছিলাম। তাকে বলেছিলাম নেটোর বিস্তৃতি করা কতটা দরকার এবং লাটভিয়া যেন সেখানে থাকে।”

”আমরা আস্তে আস্তে হাঁটছিলাম এবং সময়টা উপভোগ করছিলাম এবং তার কানে লাটভিয়ার প্রপাগাণ্ডা দেয়ার জন্য সবকিছুই করছিলাম। আমার মনে হয়নি এতে তার খারাপ লেগেছে’,’ তিনি বলছেন।

ভাইরার দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালে, তার ৭০তম জন্মদিনের কয়েকমাস আগে।

তিনি ক্লাব ডি মাদ্রিদ নামের একটি সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা, যেটি সাবেক নেতাদের নিয়ে গঠিত। এই সংগঠন গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব এবং গর্ভন্যান্স নিয়ে কাজ করে। নারীদের ক্ষমতায়ন নিয়েও তার বিশেষ নজর রয়েছে। সেই অধ্যাপকের মন্তব্য এখনো তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তিনি জানেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার এখনো অনেক বাকি আছে। সূত্র : বিবিসি।

 

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ

জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ


স্বাস্থ্য কথা


চার সন্তানের জননী রাফিজা খানমের বয়স এখন ছত্রিশ বছর । বাবা-মা আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় দশম শ্রেণীতে পড়াবস্থায় বিয়ে হয় প্রবাসী আব্দুস সাত্তারের সাথে। বিয়ের মাত্র দুই মাসের মাথায় অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে রাফিজা। আর তাই পরের মেট্রিক পরীক্ষা দেয়া হয়নি রাফিজার। কিন্তু স্বামী আশ্বস্ত করে বাচ্চা হওয়ার পরে সে আবার পড়ালেখা করতে পারবে। এভাবেই এক সময় মাস্টার্স শেষ করে নীলফামারীর স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরীও পেয়ে যান রাফিজা। স্বামী প্রবাসে থাকলেও চার সন্তান নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল রাফিজার। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছে তার। প্রায়ই সময় তলপেটে যন্ত্রণা আর প্রশ্রাবের জ্বালা-পোড়া। শেষ পর্যন্ত এক গাইনী ডাক্তারের সাথে কথা বলে রাফিজা। অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর জানা যায় রাফিজা জরায়ুমূখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে তার।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের (আইএআরসি) সূত্র মতে বাংলাদেশের নারীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় স্তন ক্যানসারে। এর পরেই জরায়ুমুখ ক্যানসার । প্রতিবছর জরায়ুমুখ ক্যানসারে বাংলাদেশে ৮হাজার ৬৮ জন জন আক্রান্ত হয়। আর মৃত্যু বরণ করে প্রায় ৫ হাজার। এছাড়াও বিশ্বে প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ নারী। আর মৃত্যু হয় প্রায় ৩ লাখ।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, মূলত জরায়ুমুখ ক্যান্সারের অন্যতম কারণ হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) নামের এক ভাইরাস। আর এই এইচপিভি বিভিন্ন ধরনের আছে, যার মধ্যে এইচপিভি ১৬ ও ১৮ জরায়ুমুখ ক্যান্সারের জন্য সবচেয়ে বেশী মারাত্মক। তিনি বলেন, মূলত যেসব মেয়েদের বাল্যবিবাহ হয় এবং যেসব নারী অধিক সন্তান জন্ম দেন তারাই এই জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে। এছাড়াও নারীর ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার বিষয়টিও রয়েছে। যেসব অল্পবয়সী নারী মাসিকরে সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে না পারে তাদের বিভিন্ন ধরনের জীবানু আক্রমন করতে পারে। আর তাই মাসিকের সময় অবশ্যই পরিষ্কার কাপড় ব্যবহার এবং নিজেকে পরিষ্কার রাখতে হবে। ডা. রোকেয়া বলেন, অল্প বয়সী মেয়ে বিশেষ করে নয় থেকে ১৫ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য রয়েছে এইচপিভি টিকা। একটু দামী হলেও এই টিকা দিয়ে দেওয়াই উত্তম। এছাড়াও বেশী বয়সী নারীদের জন্য রয়েছে ক্যান্সার স্ক্রিনিং। ক্যান্সার স্ক্রিনিং এর মাধ্যমে সহজে এই রোগ নির্ণয় করা যায় এবং পরবর্তী চিকিৎসা দ্রুত শুরু করা যায়।
আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানা আক্তার বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে এখনো গ্রামাঞ্চলে মেয়েদের বয়:সন্ধির সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। এসময় তাদের স্কুল পর্যন্ত বন্ধ করে দেয় কিছু কিছু অভিভাবক। অথচ তার কোন দরকারই হয়না। এখন বাজারে অল্প দামে দেশীয় তৈরী বিভিন্ন ধরনের প্যাড পাওয়া যায় এবং তারা এসব সহজেই ব্যবহার করতে পারে।
তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আরো বেশী পরিমানে বাড়াতে হবে। যদিও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার স্বাস্থ্য সেবা ঘরের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক অন্যতম। কিন্তু তারপরও কিছু কিছু মানুষ এখনো এসব সেবা নিতে আগ্রহী নয়। তাদেরকে এসব সেবার আওতায় আনার জন্য আরো বেশী পদক্ষেপ নিতে হবে।
ডা. শাহানা বলেন, প্রাথমিকভাবে এই ক্যান্সার ধরা পড়লে খুব সহজেই এ থেকে নিরাময় সম্ভব। নিয়মিত ঔষুধ সেবন করলে এ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তবে যদি দেরীতে ধরা পড়ে তবে তা অনেক সময় জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। অনেক সময় ডাক্তারদেরও আর কিছু করার থাকে না। আর তাই এ বিষয়ে পরিবারের সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরী করতে হবে।
তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশের নারীরা এসব মেয়েলী শারীরিক সমস্যা নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করতে লজ্জা পায়। একেবারে চরম পর্যায়ে না গেলে তারা তা কাউকে জানায় না । এমনকি অনেক বিবাহিত নারীরাও তাদের স্বামীর সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন না। এর ফলে অনেক নারীই এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। যা কখনোই কাম্য নয়। তিনি সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও যেসব সংস্থা এসব বিষয়ে কাজ করেন তাদেরকে এ বিষয়ে আরো বেশী জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানান। সুত্রঃ বাসস।

 

মা-বাবার মেসেজ গুলো সবসময় গুরুত্বপূর্ণ সন্তানদের জন্য

মা-বাবার মেসেজ গুলো সবসময় গুরুত্বপূর্ণ সন্তানদের জন্য


মো:আশরাফুল ইসলাম


সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে মা বাবা পরিপূর্ণতা লাভ করে। একটি বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরপরই কান্নার মাধ্যমে তার অস্তিত্ব জানিয়ে দিচ্ছে। কান্নার পরপরই মা বাবা যখন তাকে জড়িয়ে ধরছে শিশুটির আরাম লাগছে এবং নিরাপদ অনুভব করছে। এরপর শিশুটি হামাগুড়ি দেওয়া, হাটতে শেখা, কথা বলতে শেখার মাধ্যমে বেড়ে উঠতে থাকে। শিশুটির বিকাশের ক্ষেত্রে তার মা বাবা এবং আশেপাশের লোকজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শিশুটি একটু বড় হওয়ার সাথে সাথে মা বাবা থেকে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ পাচ্ছে। এক্ষেত্রে, বিভিন্ন ধরনের মেসেজ পেতে পারে যেমনঃ শিশুটি যখন ঠিকমতো কথা বলতেও শেখে নাই তখন মা বাবা বলছে – আমাদেরতো খুব ইচ্ছা তুমি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে অথবা বাবা তুমি পেটে থাকতেই আমরা বলেছি তোমাকে মাদ্রাসাই পড়াব। এই যে মা বাবা তাদের নীডগুলো সন্তানের উপর চাপিয়ে দেওয়া শুরু করেছে। আবার, অনেকক্ষেত্রে মা বাবা বাচ্চাকে বলছে তুমি একটা গাঁধা, অন্যরা পারে তুমি কেন পারো না, তোমার দ্বারা কিছুই সম্ভব না। আবার, বাচ্চাটি একটি কাজ করতে গেলে তাকে বলা হচ্ছে তুমি ছোট মানুষ তুমি পারবে না দাও আমি করে দেই। একটি কথা বলতে গেলে তাকে থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে তুমি ছোট মানুষ তোমার এত কথা কিসের চুপ থাকো , বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ছেলে বাচ্চাদের বলা হচ্ছে – ছেলে মানুষদের শক্ত হতে হবে বাবা কাদে না। মা বাবা যে মেসেজগুলো দিচ্ছে সন্তানরা কোন প্রকার চিন্তা ছাড়াই সেগুলোকে নিয়ে নিচ্ছে।
ফলাফল কি হচ্ছে?
মা বাবা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার বানানোর জন্য সন্তানকে প্রচণ্ড চাপ দিচ্ছে, সমালোচনা করছে, সবসময় শাসনের মধ্যে রাখছে এর ফলে পড়ালেখার প্রতি তার বিরক্তি চলে আসছে। আবার, যে বাচ্চাটিকে মাদ্রাসায় দেওয়া হল সে কয়দিন পর পরই মাদ্রাসা থেকে পালাচ্ছে। আবার, যে বাচ্চাটিকে বলা হল তুমি একটা গাঁধা, অন্যরা পারে তুমি কেন পারো না, তোমার দ্বারা কিছুই সম্ভব না সে বড় হয়ে হীনমন্যতাই ভুগছে। দেখা যাচ্ছে, বড় হবার পরও নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারছে না, যখনি কোন একটি কাজে পারছে না তখন চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে ভাবছে আমার দ্বারা সম্ভব না এবং বিষণ্ণতাই ভুগছে অথবা তার মধ্যে উদ্বিগ্নতা তৈরি হচ্ছে। আবার, ছোট বলে যে বাচ্চাকে থামিয়ে দেওয়া হল বড় হয়ে সেই বাচ্চাটি কোন কাজ করতে গেলে এবং অন্যদের সামনে কোন কথা বলতে গেলে ভিতর থেকে বাধা পাচ্ছে।
ছোটবেলা বাচ্চারা কোন প্রকার যৌক্তিক চিন্তা ছাড়াই মা বাবার মেসেজগুলো নিয়ে নেয়। এর ফলে বাচ্চারা তার নিজের সম্পর্কে script তৈরি করে এবং মা বাবার মেসেজগুলো সারাজীবন বয়ে বেড়ায়। লক্ষ্য করে দেখবেন অনেক মানুষ সফল হওয়া সত্ত্বেও সারাজীবন নিজেদের অসফল ভাবে শুধুমাএ ছোটবেলায় দেওয়া মেসেজগুলোর কারণে।

বাচ্চারা যে গুরুত্বপূর্ণ এটি কি আমরা তাদের অনুভব করাতে পারি না? কি এমন অসুবিধা হত যদি তাদের শৈশব কাটত আনন্দ আর খেলাধুলায়। আমরা কি তাদের জিজ্ঞেস করতে পারিনা তুমি কি হতে চাও। প্রতিটা বাচ্চার শৈশব খুব গুরুত্বপূর্ণ আর এ সময়ে মা বাবার মেসেজগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

 

আমার সুখী ডেইলি লাইফ

আমার সুখী ডেইলি লাইফ


খালেদা বীথি


এক একজন আপুর ডেইলি লাইফ পড়ছি আর নিজের জীবনের সুখটুকু যেন বেশী উপলব্ধি করতে পারছি। এক একজন হোম মেকার আপু যেন এক একজন আলাদিনের জীনি। কতটা ধৈর্য্য নিয়ে তারা নিজেদের সংসার আলোকিত করে যাচ্ছেন।

আমার বিয়ে হয় ২০০৮ এ। ২০০৯ এর জুন থেকে চাকুরী শুরু করি। ঐ বছর এ অক্টোবর থেকে নতুন জীবন শুরু করি, শশুর শাশুড়ী ও দুই দেবর সহ। অফিস থাকতো বলে প্রতিদিনের রান্না বান্না সামলানোর যুদ্ধ সেভাবে করতে হয়নি। বাসায় রান্নার জন্য আলাদা লোক সব সময়ই ছিল কারণ শাশুড়ী ও চাকরি করেন। ছুটির দিনে চেষ্টা করতাম কিছু না কিছু বা পুরো রান্নার দায়িত্ব নিতে।

২০১৪ থেকে সম্পূর্ণ নিজের একার সংসার হল। তবে ভাগ্য ভালো আমার। তখনও আমাকে প্রতিদিনের রান্নার ঝামেলা পোহাতে হয়নি। সপ্তাহে ৫/৬ দিন চাকরি করি আর ছুটির দিনে স্পেশাল কিছু রান্না করি। মাঝে মাঝে এটা সেটা নাস্তার আইটেম করা। এই ছিল আমার কাজ।

২০১৮ তে এসে বিভিন্ন ঝামেলায় টিকতে না পেরে জব ছেড়ে দিলাম। প্রায় ৯ বছর চাকরি করে নিজেও যেন হাপিয়ে উঠেছিলাম। ভাবলাম কিছুদিন বিশ্রাম নেই। এজন্য আর নতুন করে চাকরির চেষ্টাও করলাম না। বুঝতে পারছিলাম যে আমার স্বামীর একার কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ও কখনোই আমাকে কোন কিছুর জন্য প্রেশার দেয় নি। ভাবলাম বাসায় বসে আছি। অনেক সময় আমার। একটা অনলাইন বিজনেস করি। কিন্তু যতটা সহজ হবে ভেবেছিলাম ততটা সহজ না আসলে কাজটা। ছোট ছোট দুটো বাচ্চা ( একজনের ৭, অন্যজনের সাড়ে ৩ চলছিল তখন) নিয়ে সারাদিন ওদের পেছনেই চলে যায়। তাই আমার দ্বারা বিজনেসও হয়ে উঠেনা।

আমি মনোবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম। ২০১১ তে মনোবিজ্ঞানের আরেকটি Applied branch হিসেবে যাত্রা শুরু করে Educational & Counselling Psychology Department , আমার অনেকদিনের ইচ্ছা ছিল এই বিষয়ে পড়াশুনা করার। কিন্তু এখানে full time student হতে হয় বলে তখন চাকরি ছেড়ে এখানে পড়ার সাহস হয়নি। তো গত বছর অক্টোবরে যখন শুনলাম নতুন বছরের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে তখনই ঠিক করে ফেললাম বসেই যখন আছি তখন কেন পড়াশোনাটা করে ফেলিনা এই সুযোগে। একাডেমিক পড়াশুনা শুরু করলাম পুরো ১০ বছর পর। ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলাম। ভয়ে ভয়ে ছিলাম, মনে হচ্ছিল যদি চান্স না পাই। আল্লাহর হুকুমে চান্স পেয়ে গেলাম। ২০১৯ জানুয়ারী থেকে শুরু করলাম নতুন করে ছাত্রী জীবন। এখন আমার ডেইলি লাইফ হল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্লাস করে বাসায় আসি। তারপর কিছুটা রেস্ট নিয়ে মাঝে মাঝে ছোট কন্যাকে নিয়ে পড়তে বসি। আর নিজেও কিছুটা পড়ি। এখনো সেই আগের মতোই ছুটির দিনে স্পেশাল কিছু রান্না করি আর বাচ্চাদের জন্য এটা সেটা নাস্তা বানানো, মাঝে মাঝে ঘর গুছানো, কাপড় গুছানো আমার কাজ এতটুকুই। সেল্ফ কেয়ার হিসেবে চলে কাজের পাশাপাশি গান শোনা।

এর মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা ঘটনা শেয়ার করতে ইচ্ছে হচ্ছে। আমার সহপাঠীরা আমার চেয়ে ১০ বছরের ছোট। ওরা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করে নিয়েছে যাতে আমার মনেই হয়না যে আমি বুড়ী হয়ে গিয়েছি। আমার মনে হয় আমি যেন আমার ১০ বছর আগের স্টুডেন্ট লাইফ ফিরে পেয়েছি আবার। গত মাসে এই বন্ধুদের কয়েকজন মিলে ৪ দিনের জন্য ঘুরে এলাম কক্সবাজার। আমার সমসাময়িক অনেকে খুব অবাক হয়েছে আমার এই ঘুরতে যাওয়া নিয়ে। কারণ সবাই এমন সাপোর্ট পায় না। তাই বাচ্চা রেখে একা ঘুরতে যাওয়ার কল্পনা ও করতে পারে না। আমি ভাগ্যবান আলহামদুলিল্লাহ। আমার নিজের রিফ্রেশমেন্ট এর জন্য এই ট্যুরটা যে কি উপকারী ছিল তা বলে বোঝানো যাবে না।

আমি বিন্দাস ইঞ্জয় করে যাচ্ছি আমার এই নতুন জীবন। আমার জন্য দোয়া করবেন আপুরা।

 

দ্রুত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১৩ দফা প্রস্তাব

দ্রুত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১৩ দফার প্রস্তাব


ডা. সাকলাইন রাসেল


১. সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হোক। কারণ এডিস মশা দিনের বেলা কামড়ায়। স্কুল কলেজ থেকে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা তাই বেড়ে যাচ্ছে।

২. যেকোন একটা দিনকে ‘ক্লিন ঢাকা দিবস’ ঘোষণা করা হোক। এই দিন সব স্থানে পরিস্কার করবে সিটি কর্পোরেশন, বাড়ীওয়ালা-ভাড়াটিয়া, স্বেচ্ছাসেবকরা।

৩. ঢাকাকে পরিচ্ছন্ন করতে ৭২ ঘন্টার জন্য সেনাবাহিনীকে মাঠে নামানো হোক।

৪. পূর্বের ন্যায় বিমান থেকে পুরো ঢাকাতে মশানাশক কার্যকর ঔষধ ছিটানো হোক।

৫. ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু কর্ণার চালু করে সেখানে চিকিৎসা জনবল বৃদ্ধি করা হোক।

৬. অতিরিক্ত রোগীর জন্য চিকিৎসক স্বল্পতা কমাতে দ্রুত ও অস্থায়ী ভিত্তিতে বেকার ডাক্তারদের নিয়োগ দেয়া হোক।

৭. ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাড়ী বাড়ী অভিযান চালানো হোক। কোন বাড়িতে এডিস মশার প্রজনন উপযোগী পরিবেশ পাওয়া গেলে জরিমানা করা হোক।

৮. ডেঙ্গু মানেই হাসপাতাল নয়। রোগী সেটেলড থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরে বসেও চিকিৎসা নেয়া যায়। প্রচারণার সময় এ বিষয়টাকে গুরত্ব দেয়া হোক।

৯. ডেঙ্গু সম্পর্কিত সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হোক।

১০. বৃষ্টির আধিক্য জুলাই মাসে বেশি থাকায় প্রতি বছর জুলাই মাসকে ‘ডেঙ্গু সচেতনতা মাস’ ঘোষণা করা হোক।

১১. ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকিভাতার আওতায় আনা হোক।

১২. সিনিয়র ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি ডেঙ্গু এডভাইজারি বোর্ড করা হোক। ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিলে এ বোর্ড দ্রুত গাইড লাইন প্রনয়ন ও দিকনির্দেশনা দিবে।

১৩. ডেঙ্গু নাই..নাই..নাই বলে যারা গুজব রটিয়েছেন..তাদেরকে এডিস বন্ধু ঘোষনা করা হোক এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নেয়া হোক।

ডেঙ্গুর কোন কার্যকর টীকা নেই।
ডেঙ্গুর সরাসরি কোন চিকিৎসা নেই।
কিন্তু..
এটাকে শতভাগ প্রতিরোধ করা যায় শহরটাকে পরিচ্ছন্ন করে।
শ্লোগান হোক..
চল যাই যুদ্ধে..এডিস মশার বিরুদ্ধে।

 

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৩

স্বপ্ন দেখি সুন্দর পৃথিবীর…৩


আফরোজা হাসান


স্বাতি হেসে বলল, আপনার পদ্ধতিটাও কিন্তু সুন্দর। আমিও ইনশাআল্লাহ ট্রাই করে দেখবো আপনার এই পদ্ধতি। আচ্ছা এখনো কি এমন কিছু করছেন? অপছন্দনীয় কিছু কেটে দিয়ে পছন্দনীয় কিছু বসিয়ে দিচ্ছেন সে জায়গায়।

সামান্য হাসলো আরভ। কোন জবাব না দিয়ে আবারো লেখার মাঝে মগ্ন হলো। হঠাৎ লেখার গতি কমে গেলো আরভের। হোঁচট খেয়ে খুঁড়িয়ে চলতে চলতে একসময় থেমে গেলো। চোখ তুলে দেখলো স্বাতি তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আচ্ছা স্বাতির কথাটা শুনে এত রেগে গিয়েছিল কেন সে? এমন তো নয় যে ফান বোঝে না! ভালোই বোঝে। কিন্তু তবুও স্বাতির ফানটা নিতে পারেনি! কেন পারেনি? মানুষের মন আসলেই খুব বিচিত্র! কখনো কখনো অনেক বড় কিছুকেও হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়! আবার কখনো কখনো ছোট্ট একটা ধূলি কণাকেও ঝেড়ে ফেলে দিতে তৈরি থাকে না! কিন্তু যত যাই কিছু হোক না কেন মজা করারও একটা লিমিটেশন থাকা উচিত! যে কোন সম্পর্কেকে সুন্দর ও গতিশীল রাখার জন্য লিমিটেশন জ্ঞানটা খুব জরুরি! প্রতিটা সম্পর্ক যেমন ভিন্ন, সম্পর্কেও মাঝে বিদ্যমান আদবও ভিন্ন। একটা সম্পর্ক যতই খোলামেলা বা উদার হোক না কেন তাতে বিদ্যমান আদবের বরখেলাপ করা অনুচিত! ইসলামও তো এমনটাই শিক্ষা দেয়! রসিকতার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নেই শরীয়তে। বরং উৎসাহিত করা হয়েছে। রাসূল (সঃ)এর জীবনাচরণেও পাওয়া যায় যে, স্ত্রীদের সাথে তিনি খুবই প্রেমময়, উদার ও হাসি-মজাকারী ছিলেন। হযরত আলী(আ) বলেছেনঃ রাসূল (সা) যখনই তাঁর কোনো সহচরকে বিষন্ন বা মনমরা অবস্থায় দেখতেন, তখনই কৌতুক মজা করে তাকে প্রফুল্ল করে তুলতেন এবং বলতেনঃ নামাযের পর সবচেয়ে উত্তম আমল হলো মুমিনদের অন্তরকে প্রফুল্ল করা। অবশ্য এমনভাবে হতে হবে যেন তাতে গুনাহের লেশমাত্র না থাকে।

ইমাম হাসান (রা) কে ইমাম আলী (রা) এক উপদেশ বাণীতে বলেছেনঃ “হে সন্তান আমার! সে-ই ইমানদার যে তার দিনরাতের সময়গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করে নেয়। একটি অংশকে কাজে লাগায় আধ্যাত্মিকতার চর্চা এবং আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করার মধ্য দিয়ে। অপর একটি অংশকে কাজে লাগায় পার্থিব জগতের প্রয়োজনীয়তা ও জীবন জীবিকার চাহিদা মেটাতে। আর তৃতীয় অংশটিকে নির্দিষ্ট করে বৈধ এবং হালাল বিনোদন উপভোগ করার জন্যে।” তোমাকে বিয়ে করাই আমার ঠিক হয়নি” স্বাতির বলা এই কথাটিতে কি রসিকতার মাঝে ফেলা যায় ? ঠিক বুঝতে পারছে না আরভ! সেকি ওভার রিঅ্যাক্ট করেছিল নাকি এই ধরণের কথা আসলেই বলা ঠিক না স্বামী-স্ত্রীর একে অন্যেকে? জানে স্বাতি ফান করেই কথাটা বলেছে! কিন্তু ফান করে কি এমন কথা বলা যায় যাতে অন্যের মনে কষ্ট হতে পারে? ফান মানুষ আসলে কেন করে?

ডায়েরী পাশে রেখে আরভ বলল, আচ্ছা আপনি কি বলতে পারবেন মানুষ ফান কেন করে?

একটু ভেবে স্বাতি বলল, আনন্দ পাবার জন্য।

শুধুই পাবার জন্য?

না দেবার জন্যও।

তাহলে নিশ্চয়ই ফান করে কাউকে এমন কথা বলা উচিত নয় যাতে সে কষ্ট পেতে পারে তাই না?

হুম… একদমই উচিত নয় এটা।

আরভ হেসে বলল, আমারো এমনটাই মনেহয়। যে কোন সম্পর্কেই ফান আসলে এমন হওয়া উচিত যাতে দুজনই আনন্দ পেতে পারে। অন্যেকে কষ্ট দেবার জন্য যা করা হয় সেটা কখনোই ফান হতে পারে না!

অন্যকে কষ্ট দেয়ার নিয়্যাতে আসলে ফান করাও হয় না সাধারণত।

কিন্তু অন্যেকে ক্ষেপানো, রাগানো না বিরক্ত করার নিয়্যাতে অবশ্যই করা হয়। আমার মতে এটাও ঠিক না! যখন দুজন মানুষ একই রকম নির্মল আনন্দ অনুভব ও উপভোগ করবে সেটাই হচ্ছে প্রকৃত অর্থে ফান! সেই হিসেবে ফানের প্রথম শর্ত হচ্ছে, দুজনের জন্যই সেটা উপভোগ্য হতে হবে। তাছাড়া ফান তো আমরা সাধারণত খুব কাছের মানুষদের সাথেই করি তাই না? যারা মনের খুব কাছের! আর এমন প্রিয় মানুষদেরকে কষ্ট দ্বারা লব্ধ কিছু কি আনন্দের উপকরণ হতে পারে? নাকি হওয়া উচিত?

ভেতরে চেপে রাখা লম্বা শ্বাসটা ধীরে ধীরে বের করে দিয়ে স্বাতি বলল, কখনোই হওয়া উচিত নয়। আমি খুব দুঃখিত তোমাকে ঐ কথাটি বলার জন্য।

আরভ হেসে বলল, আমিও খুব দুঃখিত তোমার ফানকে ফান হিসেবে নিতে না পারার জন্য। সম্পর্কের বন্ধন আমার কাছে খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে বলেই হয়তো আমি তোমার কাথাটিকে ফান হিসেবে নিতে পারিনি। এখন আমার একটা প্রশ্নের জবাব দেন দেখি!

জ্বি কি প্রশ্ন?

আপনি এত দূরে বসে আছেন কেন? আপনি যদি এত দূরেই বসে থাকবেন তাহলে কেবিন ভাড়া করার দরকার কি ছিল আমার? শুধু দুজনে মিলে এই ছোট্ট ভ্রমণের পরিকল্পনা ও আয়োজন তো আমরা করেছিলাম জীবনের এই মূহুর্তগুলোর ভাঁজ থেকে শত সহস্র সুখানুভূতির শিহরণ, আনন্দানুভূতি আন্দোলন আর প্রেমানুভূতির বিচ্ছুরণ সমৃদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহের জন্য। যেসব আমরা রেখে যাবো আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। যা ওদের হৃদয়ে ঝরাবে তুমুল শ্রাবণের চাষবাস!

লাজুকতা জড়ানো হাসি ছড়িয়ে পড়লো স্বাতির চেহারায়। আরভের ঠোঁটের কোণেও ফুটে উঠলো ভালোবাসাময় হাসি। ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে দিলো স্বাতির দিকে………

চলবে…

পর্ব-২