আমার বাবা…
সাকলাইন রাসেল
ছেলে মেয়েদের সামনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ভালোবাসেন…তাঁর রাশভারী রূপ দেখে অভ্যস্ত আমি…ছোট বেলা থেকেই তাঁকে দেখলে ভয় পেতাম…আমি তখন রংপুরে প্রাইমারীতে পড়তাম…বাবা ঢাকায় থাকতেন…অনেক দিন পর পর রংপুর যেতেন…কবে রংপুর আসবেন সে দিনক্ষণ আমি লিখে রাখতাম…প্রচন্ড ডানপিটে ছিলাম..বাবার আগমন তাই আমার কাছে ছিল আতংকের…ভয়ের…পরাধীনতার…
কারণ, বাবা এলেই আমাকে নিদির্স্ট সময়ে উঠতে হবে…পড়তে হবে…ঘরে ফিরতে হবে…খেলা থেকে দূরে থাকতে হবে…তাঁর পছন্দের মেন্যু খেতে হবে (কাঁচা কলা, সবুজ শাক-সবজী)…সকালে সূর্য উঠার আগে বাবার পিছে পিছে ব্যায়ামের জন্য দৌড়াতে হবে…একটু এদিক সেদিক হলে পিটুনি থেকে নিস্তার নেই…
আমাদের গ্রামের বাড়ীটা থেকে..
দু’দিকে দু’টো রাস্তা চলে গেছে…বাবা যতবারই আসতেন সে রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়ি একটা দাগ টেনে দিতেন…যাতে আমি সে দাগ পার হয়ে কোথাও খেলতে না যাই… স্পষ্ট মনে আছে ক্লাশ টু তে পুড়ুয়া সেই দূরন্ত এই আমি… সে দাগের সামনে সারাদিন বসে থাকতাম…চোখের জ্বলে গরম বালুগুলো ঠান্ডা করে দিলেও কখনো সে দাগ পার হতাম না… আমার ছোট চাচা মাঝে মধ্যে কোলে করে সে দাগ পার করিয়ে দিতেন…সাথে সাথেই আমি ভোঁ দৌড়…সেই মুহুর্তে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন প্রাণী আমি…
বাবা যে কয়দিন থাকতেন…একদিনে কত ঘন্টা… কত সেকেন্ড … আমি হার্টবিট গুণেই দিব্যি বলে দিতে পারতাম…যেদিন চলে যেতেন সেদিনই আবার পতাকা উড়িয়ে দিতাম…স্বাধীনতার পতাকা…মুক্তির পতাকা!
.বাবা ছাড়া আর কাউকে কোনদিনও ভয় পেতাম না…সারাদিন খেলাধুলা শেষে ধুলিমাখা শরীরে ঘরে ফিরতাম…মা কিছু বোঝার আগেই গায়ে তেল মেখে চকচকে বানিয়ে ফেলতাম…উদ্দেশ্যে অবেলায় গোসল থেকে নিজেকে বাঁচানো!
এভাবেই গ্রামের পাঠ চুকিয়ে একদিন শহরে পা রাখলাম…সরাসরি ঢাকা শহরে…রংপুর শহর দেখার আগে আমি ঢাকা শহর দেখলাম…ক্লাস সিক্সে আমি…বাসা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল.. প্রথম দিন বাবা সাথে নিয়ে স্কুলে গেলেন…যাওয়া আসার পথে রাস্তায় বিভিন্ন দোকান চিহ্ন হিসেবে মনে রাখতে বললেন…এবং জানিয়ে দিলেন পরের দিন থেকে একা একাই স্কুলে যেতে হবে…কেউ সঙ্গে আসবে না!
সত্যিই আর কোন দিন আসেননি… ১০ দিন পরেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা…গ্রামের স্কুলে সর্বদা ২য়/৩য় হতাম…কিন্তু এখানে এসে একেবারেই হোঁচট খেলাম…অংকে পেলাম ৩০, ইংরেজিতে ২২…গ্রামে তো লিখিত পরীক্ষা কি জিনিস তাই জানতাম না… এখানে এসে বুঝলাম পড়ালেখা কারে বলে…!
রেজাল্ট দেখে বাবা মুখে কিছু বললেন না…যা বলার হাত দিয়ে বললেন…মাথা ছাড়া দেহের সব জায়গায় দাপটের সাথে লাঠির আগায় বাবার নাম লিখে দিলেন…ভাত বন্ধ করার হুমকি দিলেন…গ্রামে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিলেন…এ হুমকির আওতায় আমার মাও পড়ে গেলেন…কারণ আমার ভাল ফলাফলে তাঁর হক থাকুক আর না থাকুক খারাপ ফলের পুরো ভাগিদার মা…কদিন পর ডেকে বললেন তুমি যদি ক্লাস সেভেনে ‘এ’ সেকশনে যেতে পার…তবে যা চাও তাই দিব…
আমি একটা হাতঘড়ি চাইলাম…ডিজিটাল হাতঘড়ি…ওটাই তখন একমাত্র আরাধ্য।
আমি তখন ‘এফ’ সেকশনে…এতো পিছনে থেকে সরাসরি ‘এ’ সেকশনে যেতে পারা সত্যিই কল্পনাতীত…তবুও উপর ওয়ালার ইচ্ছায় সেভেনে উঠলাম…এবং ‘এ’ সেকশনে…হাত ঘড়িও পেলাম!
তবে,
বাবা খুশী হয়েছেন কিনা বোঝা গেল না… কারণ, কোন বিষয়ে গালমন্দ না করার অর্থ হল বাবা সে বিষয়ে আমার উপর সন্তুষ্ট আছেন…মুখ ফুটে কখনো প্রশংসা করতেন না তিনি…ক্লাশ নাইন পর্যন্ত আমি কখনো প্রাইভেট পড়িনি…সত্যি বলতে প্রাইভেট পড়ানোর সামর্থও ছিল না বাবার…নিজেই পড়াতেন…পড়ানোটা ছিল মূলত পাটীগনিত কেন্দ্রিক!
আমি যদি কখনো পড়ালেখায় ফাঁকিবাজি করতাম…বেশি খেলাধুলা করতাম… রেজাল্ট খারাপ করতাম…মায়ের কথা না শুনতাম… তবে, বাবা নগদ আমাকে কিছু বলতেন না… হটাৎ একদিন ডাক পড়ত…..হুকুম আসত পাটীগণিত নিয়ে বসার জন্য…বাবা জানত, আমি পাটীগণিতে খুব দূর্বল… তাই রাগ হলে পাটীগণিত নিয়ে বসতে বলতেন… এবং যথারীতি আমি অংকের মাঝপথে গিয়ে ভয়ে…টেনশনে..খেই হারিয়ে ফেলতাম…অঙ্কের শেষটা আর মিলাতে পারতাম না…ঠিক তখনই বাবা কথা বলা শুরু করতেন… মুখে না, হাতে…কখনো খালি হাতে…কখনো পায়ে…কখনো স্কেল…কখনো পর্দার লাঠি… হাতের কাছে যা পাওয়া যেত তাই দিয়ে… এরপর শুরু হত জেরা…অমুক দিন কেন পড়ালেখা শেষ না করে খেলতে গেছো…অমুক বিষয়ে কেন এতো কম মার্কস পেয়েছো…অমুকের সাথে কেন ঐদিন মারামারি করেছো…পাশের বাসায় কেন টিভি দেখতে গেছ…!
উল্লেখ্য, আমার জন্য টিভি দেখা ছিল নিষিদ্ধ… কারণ, আমাকে বোঝানো হয়েছিল টিভিতে পড়ালেখার ক্ষতি হয়…ভাল রেজাল্ট করা যায় না ..তবে, ম্যগগাইভার সিরিয়াল দেখার অনুমতি ছিল…এবং যেদিন ম্যাগগাইভার ছিল সেদিন আমি সারাদিন খুব জোরে শব্দ করে পড়তাম…উদ্দেশ্য, বাবাকে শোনানো যে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি…এক সময় মা বাবার কাছে গিয়ে বলতেন…ছেলেটা তো সারাদিন অনেক পড়েছে…ও একটু ম্যাগগাইভারটা দেখে আসুক…দুই একটা কথা শুনিয়ে বাবা অনুমতি দিয়ে দিতেন… সাথে সাথে পাশের বাসায় ভোঁ দৌড়!
ক্লাশ নাইনে উঠার পর বাবা বাসায় প্রথম টিভি নিয়ে আসেন… ১৭ ইঞ্চি সাদা কালো টিভি টিভি….. কারণ, তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আমি ক্লাশ নাইনে এ সেকশনে প্রথম ১০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছি… এটাই তাঁর কেনা প্রথম টিভি…এবং আজ পর্যন্ত আর কোন টিভি কিনেন নাই তিনি…টিভি পেয়ে কি যে আনন্দিত হলাম…
আমার বন্ধুরা সারাদিনে টিভিতে কত অনুষ্ঠান দেখে… আর আমি সারাদিন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মেরে শুধু টিভিটাকেই দেখতাম…কারণ, ঘরে টিভি থাকলেও সেটা ছাড়ার সুযোগ ছিল না আমার…গলা ছেড়ে পড়ালেখার ব্যাপক শো ডাউনের পর… মাঝে মধ্যে পাটিগণিতের বৈতরণী পার হয়ে তবেই সুযোগ আসত টিভি দেখার…বাবার অনুমতি স্বাপেক্ষে মা টিভি ছেড়ে দিলে তবেই সুযোগ পেতাম…তবে, সেন্সর বোর্ডের মত বাবার সেন্সর করে দেয়া অনুষ্ঠানই কেবল দেখার সৌভাগ্য হত… বলে রাখা ভালো, আমি ইন্টারমেডিয়েট ২য় বর্ষে এসে প্রথম কারো অনুমতি ছাড়াই নিজে নিজে দুঃসাহস দেখিয়ে টিভি অন করি..এবং সেই থেকে একাই ছাড়ছি!
ঈদ আসার ঠিক আগেই বাবা পাটীগণিত নিয়ে বসতে বলতেন… সাথে সাথেই শুরু হত রেজাল্টের হিসাব নিকাশ…সর্বশেষ উত্তম মধ্যম…ফলে ‘ঈদে জামা চাই’ এমন বাক্য উচ্চারণ করার সাহস আর থাকত না…কোন রকম ঈদটা পার করতে পারলেই খুশী।
বলে রাখা ভাল ঘুমের ব্যাপারে আমি ছোট বেলার সেই রূপ এখনো ধরে রেখেছি…একবার ঘুমালে পুরো পৃথিবীর আর খবর থাকেনা…তবে, সকালে উঠেই খবর শোনাতেন বাবা…স্কুলে যাবার আগে প্রায় সময় ঘুম ভাঙত বাবার ডাকে…সে ডাক প্রথমে শুরু হত মুখে…তারপর হাতে…কখনো কখনো বিছানায় চোখ খুলেই দেখতাম বাবা ঝাড়ু দিচ্ছেন…উল্টো দিকে…ঝাড়ুর আগা ধরে গোড়া দিয়ে…এবং গোড়াটার পুরোটাই আমার দেহে পড়ছে!
এভাবেই বেড়ে উঠা আমার…আমার একটা দাঁতও পড়ে গিয়েছিল বাবার ধমকে…এমনিতেই সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী করেছি। সময় নিয়ে ব্রাশ করছিলাম…ঠিক সময় নিয়ে না। ইচ্ছা করে। যতক্ষণ ব্রাশ ততোক্ষণই পড়ালেখা থেকে মুক্তি।
হটাৎ গর্জে উঠল বাবা…সাথে সাথে হাত কেঁপে উঠে ব্রাশের ধাক্কা লাগল নড়বড় দুধ দাঁতটার গোড়ায়…ব্যাস, দাঁতটার অগ্রিম অপমৃত্যু ঘটল।
এহেন বন্দী জীবনে আমি প্রতিদিন প্রতি সেকেন্ডে ফিরে যেতাম আমার রংপুরে…আমার শৈশবে। শৈশবে বসেই খুঁজে বেড়াতাম আরেক শৈশবকে…আমার ফেলে আসা রংপুরের রূপসী গ্রামের সেই মেঠোপথ…ঘুড়ি উড়ানোর সেই চওড়া মাঠ…সেই বিস্তীর্ণ ফসলের গালিচা…ধানক্ষেতের পানিতে নড়ে উঠা সেই চতুর মাছের আনাগোনা…বর্ষা এলে টানা জালে তুলে আনা মাছের আহাজারী…ফসলের মাঠের আইল ধরে বেয়ে চলা সেই স্কুলের মেঠোপথ…ধুলোমাখা গ্রাম্য শিশুর পুকুরে ডুবখেলা…!!
মনটাকে রংপুরে রেখে দেহটাকে ঢাকার মত করে লালল করতে লাগলাম…বাবার মত করে…তাঁর ইচ্ছাকে কর্তব্য মনে করে…তাঁর ইচ্ছাকে পূরণ করতেই পা রাখলাম একসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের চত্বরে…ঢাকা ভার্সিটিতে বায়োকেমিস্ট্রিতে চান্স পেয়েছিলাম…জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসীতে…কিন্তু বাবার ইচ্ছা…ডাক্তারী পড়তে হবে…কারণ, ছোট বেলায় অর্থাভাবে তিনি ডাক্তার হতে পারেননি…তাঁর বন্ধুরা পেরেছেন…তাই তাঁর অপূর্ণতা পূরণ করার দায় এলো আমার ঘাড়ে…
ডাক্তার হলাম…বলতে গেলে বাবার দৃষ্টি দিয়েই দেখলাম এক মেয়েকে… একদিন সেই মেয়েটিই ঘরে এলো বাবার বউমা হয়ে।
ব্যাস, এগিয়ে চলার গল্পটা এখানে এসে নতুন মোড় নিল! আমার কষ্টের সব পর্দা ভেদ করে একটা আনন্দ ভোমরা বের হয়ে এলো…নাম রাখা হলো আরিজ!
আরিজের জন্মদিনে আমারও জন্ম হল। এ জন্ম বাবা হিসেবে। অনেকে জিজ্ঞেস করে বাবা হিসেবে প্রথম অনুভূতি কি?
আমি বলি, যেদিন বাবা হলাম সেদিনই প্রথম বুঝলাম বাবা কি জিনিস। নিজ বাবার প্রতি বাড়তি টানটা সেদিনই প্রথম অনুভব করলাম।
আরিজই প্রথম শেখালো বাবা কি, বাবার স্নেহ কি, সন্তানের প্রতি বাবার মমত্ব কি!
দিন যাচ্ছে, আরিজ বড় হচ্ছে। শক্ত হচ্ছে ওর চাওয়াগুলো…দৃঢ় হচ্ছে ওর অস্থিমজ্জা, ওর মনটা।
ধীরে ধীরে দূর্বল হচ্ছে শুধু আমার বাবাটা। আগের মত রাগেনা। ধমক দেয় না। বকা দেয় না। পথ দেখায় না। ভালমন্দ শেখায় না। সবক্ষেত্রে একটা সমীহ সমীহ ভাব। নিজ ছেলের জন্য কোথায় একটা ভয় ভয় ভাব আগলে রাখে সে।
মাঝেমধ্যে যখন খেই হারিয়ে ফেলি…শত মানুষের ভীড়ে একা হয়ে পড়ি…খুব রাগ হয় বাবার উপর!
মানুষটা এমন কেন! বয়স হয়েছে। বাবা হয়েছি। জীবন যুদ্ধে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছি। কিন্তু বাবার সাথে বয়সের পার্থক্যটা সেই এক জায়গাতেই যে থেমে আছে!
এখন উল্টো আমি রাগ হই…অভিমানে কড়া ভাষা গুলোও বের হয়ে যায়।
আশ্চর্য! বাবা মুচকি হাসে। রিয়্যাক্ট করেনা। আগের মত রাগও করেনা। অভিমানও না। আমার জীবনের প্রথম নায়কটা কেমন জানি চুপসে গেছে। প্রতিবাদ নেই বললেই চলে। শান্ত একটা পুকুরের মত। অনেক পানি কিন্তু সেখানে জোয়ার নেই। অনেক গভীরতা কিন্তু ঢেউ নেই। কিন্তু আমার যে এরকম বাবাকে ভাল্লাগেনা। এখনো মন চায় বাবা আমাকে ধমক দিক। বলুক, এটা ভাল ওটা খারাপ। আগলে রাখুক সর্বদা ছায়া হয়ে।
হালের ফ্যাসবুক ফ্যাশন এখনো প্রবেশ করেনি আমার দেহ মনে। তাই বলব না যে আমার বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা। কোনদিন সেটা ভাবিও নাই। ছোটবেলায় সব সময় মনে হত আমার বাবা সবচেয়ে পঁচা বাবা। অমুকের বাবা কত ভাল! কত কি কিনে দেয়! মারে না। ধমকায় না। যা চায় সব দেয়। কিন্তু আমার বাবা কখনো দেয়না।
আজ কাকতালীয়ভাবে একটা ঘটনা ঘটেছে। বাবার খুব স্বপ্ন দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু সময় কিংবা সামর্থ কোনটাই তার পক্ষে ছিল না। তাই ভাবলাম হোক না একটা স্বপ্নপুরণ ছেলের হাত ধরে!
সকালেই বললাম, সিংগাপুর যাবা নাকি?
বাবা যেন বিনামেঘে তুফানের আওয়াজ পেল।
এক সেকেন্ড সময় নিল না রাজী হতে। ছোট্ট বেলার সেই অবুঝ সাকলায়েনের মত। কখন বাবা এসে বলবে, যাও ম্যাগগাইভার দেখে এসো!
আমি অবশ্য একেবারের জন্যেও ভাবিনাই বাবা যাবেন। কারণ তাঁর তো পাসপোর্টই নাই। বাবা অবাক করে দিয়ে বললেন, তার পাসপোর্ট অনেক আগেই করা। চোখটা ছলছল করে উঠল। বিদেশ কোনদিন না গেলেও পাসপোর্ট ঠিকই করে রেখেছে!
সময় পক্ষে থাকলে শীঘ্রই বাবাকে নিয়ে সিংগাপুর যাচ্ছি। নো শপিং, নো এ্যামিউজমেন্ট পার্ক। শুধু রাস্তা আর ফুটপাত ধরে বাবা-ছেলে ঘুরে বেড়াব। হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বসব।
বড় ঢেউটা যখন পায়ের উপর এসে আঁছড়ে পড়বে তখন বাবাকে বলব-
বাবা তোমার মনে আছে, বিয়ের আগের দিন আমাকে ডেকে একটা জোকস শুনিয়েছিলে!
বাবা ভুলে যাওয়ার ভান করবে। আমি জোকসটা বলা শুরু করব।
‘সাকলায়েন, বিবাহিত পুরুষ আর অবিবাহিত প্রেমিক পুরুষের মধ্যে পার্থক্য জানো?
না তো..কেন?
শোন,
অবিবাহিত প্রেমিক…সাগর পাড়ে প্রেমিকার পাশে বসে…সাগরের উত্তাল ঢেউ দুচোখ ভরে দেখে…সেই ঢেউয়ে পুলকিত হয়! আর বিবাহিত পুরুষ সেই ঢেউয়ে হাবুডুবু খেতে থাকে!’
তোমার কথাই সত্যি বাবা। জীবন সত্যি একটা যুদ্ধের নাম। এ যুদ্ধে কখনো ডুবি। কখনো ভাসি। ছোট্টবেলায় শুধু একটা স্বপ্নই দেখতাম। কবে বড় হব। কবে বাবাকেও ছাড়িয়ে যাব। এতোটাই ছাড়িয়ে যাব যে বাবা শাসন করার সাহস হারিয়ে ফেলবে! বড় হয়েছি অনেক বাবা। কিন্তু মনে হয় ঐ দিনগুলোতেই ভাল ছিলাম। মাঝেমধ্যে যখন ভালো লাগাগুলোকে হারিয়ে ফেলি। সব আনন্দগুলো যখন একেবারে হারিয়ে যায় তখন পিছনে ফিরে তাকাই। বাবার সেই শাসনের দিনগুলো ফিরিয়ে আনি। জাবর কাটি। খারাপ লাগাটা মুহুর্তেই আনন্দে রূপ নেয়।
জীবনটাকে মাঝেমধ্যে তাই ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারের মতো মনে হয়। যখন মনে হয় চেহারায় আর আগের জৌলুস নাই, তখন খুঁজে খুঁজে পুরাতন ছবিগুলো বের করি। সবচেয়ে সুন্দরটাকে আপলোড দেই। মানুষ বাহবা দেয়। আমি কৃত্রিম সুখে গা ভাসাই। ভালো থাকি।
আমার বাবাকে সত্যিই কখনো মনে হয়নি শ্রেষ্ঠ বাবা। কিন্তু আজ আমি নিশ্চিত বলতে পারি আমার বাবা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতম দান। ভালো থেকো বাবা আমার আরিজের সমান আয়ু নিয়ে। আমি ভাগ্যবান বাবা। আমার একজন বাবা আছে। কতজন তো প্রাণ খুলে কাউকে বাবা ডাকার যোগ্যতাওটা হারিয়ে ফেলেছে। চীরতরে! তবুও… তোমার জন্যে খুব হিংসে হয় বাবা! খুব হিংসে। তোমার মত আমার যে একটা সাকলায়েন নেই বাবা।