banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

আমার কাছে বাবার দায়িত্ব


মিথিলা ফেরদৌস


বাবা দিবস মাথায় রেখেই আব্বাকে ফোন করলাম।আমার বাবার অবশ্য দিবস নিয়া তেমন কোনও মাথা ব্যথা কখনওই ছিলনা।এমনকি সে আমার জন্মদিবসও মনে রাখতে পারেনা।কিন্তু আজ ফোন করার পর মনে হলো,সে অপেক্ষাই করছিল,আমার ফোনের জন্যে।

ঃআজ বাবা দিবস!
ঃহ্যা জানি তো!
ঃতুমি “বাবা দিবস” জানো!!
ঃবাবা হিসেবে কোনও দায়িত্ব তোমার জন্যে কখনও পালন করিনি।
ঃকথা সত্য।পালন করা উচিৎ ছিল।এখন আর কি করবা?
ওপাশে মন খারাপের নিঃশব্দতা।আমি বলতে থাকি।
ঃযা করোনি, করোনি,এখন করা শুরু করো।ঠিকঠাক মতো ঔষধ খেতে হবে,সুস্থ হতে হবে আরও বহুদিন দায়িত্ব নিয়ে সুস্থ থাকতে হবে,তোমার নাতির মানুষ হওয়া দেখতে হবে।আপাতত সুস্থ থাকাটাই আমার জন্যে তোমার দায়িত্ব।যেহেতু আগে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছো।ঠিক আছে?
ঃঠিক আছে।
ঃতুমি কি কখনও আমাকে আদর করোনি?
ঃআদরই করছি,আর কিছু তো করিনি।
ঃবাবারা আদর ছাড়া আর কি কি দায়িত্ব পালন করে?
ঃতোমার মা তোমার জন্যে যে কষ্ট করছে তার একটুও আমি করিনি মা।
ঃতাও ঠিক।কিন্তু তুমি কি আমাকে খাওয়াওনি,পড়াওনি?
ঃকরছি।সেইটা খুব ভালভাবে করতে পারিনি।
ঃআমারতো কখনও এমন মনে হয় নাই।কারো চেয়ে কম আয়েশ করে আমি মানুষ হইছি! আমার কোনও আবদার অপূর্ন ছিল বলে আমার তো মনে পরেনা।বরং অনেকের চেয়ে অনেক কিছুই আমাদের ছিল,যা অন্যদের ছিল না, সেই আমলে।তুমি খেয়ালি ছিলে।আমার খেয়ালি বাবাই পছন্দ।হুট করে ভাল চাকরী ছেড়ে দিলে।বাপের টাকায় বানিজ্যে মনোনিবেশ করলে।সেইটায় মাঝে মাঝে চাংগা ভাব আবার মাঝে মাঝে অভাব।মোটকথা ধনী, গরীবি সব কিছুর সাথেই আমাকে অভ্যস্ত করেছো।তাহলে শুধু একসাইড ভাবো কেন?আমাকে সময় দিয়েছো।পরিক্ষার আগে বসে,তোমার ফাকিবাজ মেয়েকে রচনা,চিঠি সব ছোট করে দিতে,গ্রামার পড়াতে।ইংলিশে খুব ভাল মার্কস পেতাম তোমার জন্যে।এই যে বই পড়া অভ্যাস তা গড়ে উঠার পিছনে তোমার আর আম্মার দুইজনের অবদান ছিল।বই পড়ার অভ্যাসটাই আমার বেজ দাড় করিয়ে দিয়েছে।পড়াশুনায় ভাল হতে গেলে শুধু পাঠ্য পুস্তক বেশি পড়তে হয় না।আনন্দের মাধ্যমে অন্য বই পড়লেও সেইসব বুদ্ধিমত্তা তীক্ষ্ণ করে।তুমি সেই বেজ দাড় করিয়ে দিয়েছো।

আব্বা কথা বলতে পারেনা,শুধু বলে,
ঃআশু(তার গুনধর নাতি) কি করে?
ঃসে প্লান করছে তোমার সাদা চুল সেলুনে গিয়ে রঙ করে আনবে।সে যখন বড় হয়ে গাড়ি কিনবে,সেই গাড়ি তোমাকেই চালাতে হবে আব্বা।তোমাকে ওর গাড়ি চালানো পর্যন্ত সুস্থ থাকতে হবে।
ঃআচ্ছা মা ফোন রাখি।
ঃফোন রাখবা কেন?তুমি কেমন করে খারাপ বাবা হইলা,সেই হিসাবটা তো হওয়া দরকার তাই না?আমার দৃষ্টিতে যে বাবা তার ছেলে মেয়ে রেখে আরেকটা বিয়ে করে,সেই খারাপ বাবা!আমার বাবা সেই কষ্ট তো আমাকে দেয় নাই।তাহলে সে খারাপ বাবা হয় কি ভাবে !
ঃতোমার মত মেয়ে রেখে কোনও বাবা কি এমন করতে পারে মা?
ঃপারে আব্বা,অনেক বাবাই করে।ছেলে মেয়ে দেখে না।তোমাকে কখনও নিজের শখের কিছুই কিনতে দেখিনি।একটা ঈদ যায় নাই,আমি জামা নিই নাই এমন।অথচ তোমাকে কখনও ঈদে কিছুই নিতে দেখিনি।সেই না দেখা আমার প্রতি ঈদ আমি তোমার জন্যে ঈদে তোমার জামা কিনে কি শান্তি পাই তোমাকে কখনও বোঝাতে পারবো না।আমার ছেলে যখন তোমার জন্যে জুতা পছন্দ করে,তোমার মেয়েজামাই যখন পাঞ্জাবি কোনটা কিনবে কোনটা কিনবে না কুলকিনারা পায় না।সেই সুখগুলা আমি কখনও তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।তুমি শুধু সুস্থ থাকো আব্বা,এর চেয়ে বড় দায়িত্ব একটা বাবার জন্যে একটা সন্তানের আর দরকার নাই।
ঃমা রাখি!
আব্বা ফোন রেখে দেয়।

যার বাবা নাই,পৃথিবীতে সেই জানে বাবা শব্দটার আসল অর্থ।তুমি অন্তত আমাকে সেই কষ্ট কখনও দিও না আব্বা।তুমি সুস্থ থাকো শুধু আমার দিকে চেয়ে।তোমার প্রতিটা অসুস্থতার সংবাদ আমাকে কি অসহায় করে দেয় কিভাবে তোমাকে বুঝাবো!প্রতি রাতে হুট করে কোনও ফোন আসলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,আল্লাহ আমাকে এমন কষ্ট কখনওই দিও না,আমার যে কোন ভাল কাজের বিনিময়ে আমার প্রিয় মুখগুলিকে সুস্থ রেখো। শেষের কথাগুলি একাই মনে মনে বলতে বলতে ফোনটা শক্ত করে ধরে থাকি।বাবার প্রতি দায়িত্ব আমার নিজেরও পালন করা হয় না।অসুস্থ বাবাকে দূরে রেখেই আমাকে থাকতে হয়।তার অসুস্থতায় অনেক সময় যেতে পারিনা,অফিসে জানিয়ে গেলেও এসে দেখি খাতায় বড় করে লাল দাগ কাটা।যারা দাগ কাটে তারা কি কখনও বাবার মিথ্যা অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়েছিলো?কেন তাহলে অবিশ্বাস করে! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।বাবা দিবসে কর্তৃপক্ষের কাছে অন্তত একটা অনুরোধ থাকবে,আপনার কোনও সহকর্মীর সাথে এতটা নির্দয় হবেন না।পরিস্থিতি একদিন আপনাকেও এমন কষ্টের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

 

ভারতে ‘মস্তিষ্ক অসুস্থতায়’ ১০৩ শিশুর মৃত্যু, বিক্ষোভ


নারী সংবাদ


ভারতের অন্যতম দরিদ্রতম বিহার প্রদেশে রহস্যজনক মস্তিষ্কজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক শিশুর মৃত্যুতে সেখানে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মস্তিষ্কজনিত এ রোগের সঙ্গে গ্রীস্মকালিন ফল লিচুর সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বিহারের মোজাফ্ফরপুরে ১০ এবং তার চেয়ে কম বয়সী ১০৩ শিশু একিউট এনসেফালিটিস সিনড্রোম (এইস)-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। আরো অনেক শিশুই হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। টেলিভিশনের খবরে অনেক শিশুকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার বেশ কিছু সংখ্যক লোককে কর্তৃপক্ষের স্থবিরতা ও অযতেœর অভিযোগ নিয়ে মোজাফ্ফরপুরের প্রধান হাসপাতালের বাইরে ভীড় করতে দেখা গেছে। রোববার এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলণ চলাকালে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাওয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিরোধী দলীয় কংগ্রেস নেতা রণদীপ সূর্যবালা টুইটারে মন্তব্য করেছেন,‘ বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিশু মৃত্যুর চেয়ে ক্রিকেট স্কোর নিয়ে অধিক উদ্বিগ্ন।’ অপর বিরোধী দলীয় ব্যক্তিত্ব রাবরি দেবী শিশু মৃত্যুকে, ‘ ঠান্ডা মাথার খুন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি টুইট করেছেন, ‘ ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে শিশুরা মারা যাচ্ছে।’ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মঙ্গলবার বিহারের সরকারি হাসপাতাল শ্রীকৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেন, সেখানে বেশিরভাগ শিশুই মারা গেছে। গণমাধ্যমকে ভেতরে প্রবেশের ও অসুস্থ শিশুদের পরিবারের সদস্যদের বহিরাঙ্গণে গোলোযোগ সৃষ্টির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

রোগের বার্ষিক প্রাদুর্ভাব

এইএস-এ আক্রান্ত শিশুদের রক্তে শর্করার অতি দ্রুত পতন, উচ্চ তাপমাত্রা, খিচুনী ও পক্ষাঘাত হতে দেখা যায়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্নভাবে শরীরে বিষক্রিয়া এ রোগের কারণ। ১৯৯৫ সাল থেকে এতাদ্ঞ্চলে প্রতি বছর গ্রীস্মকালে এবং সাধারণভাবে লিচুর সময়ে সব সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০১৪ সালে এই রোগে শিশু মৃত্যুর রেকর্ড সংখ্যা ১৫০ জন। অন্যান্য বছরে মৃত্যুর সংখ্যা সেই তুলনায় কম।

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ জানিয়েছেন, গ্রীস্মকালিন লিচুর ভেতরের এক ধরণের বিষাক্ততা এ মস্তিস্ক রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষকগণ, এ অসুস্থতার কারণ নির্ণয়ে আরো বেশি গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে বলে মতামত দেন। স্থানীয়ভাবে ‘চামকি বুখার’ নামে পরিচিত এ রোগ তৃতীয় ধরণের মারাত্মক।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে এ রোগ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন ও সচেতনতা কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবার হিন্দু পত্রিকায় এক সম্পাদকীয় বলা হয়েছে, কিছু দূরদর্শীতা ও প্রারম্ভিক যত্ন অতি সহজেই মৃত্যু কমিয়ে আনতে পারে।

এতে তুলে ধরা হয়, ২০১৪ সালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ দলের হস্তক্ষেপে শতকরা ৭৪ ভাগ শিশুর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। এতে আরো বলা হয়, চলতি বছর সরকার এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রায় ১০ কোটি লোক অধ্যুষিত বিহার ভারতের দরিদ্রতম প্রদেশগুলোর অন্যতম। সম্প্রতি সেখানে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার লু হাওয়া বয়ে গেছে। সেখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা যারা এমন কি পেটপুরে খেতে পায় না তারা খালি পেটে লিচু খেয়ে মস্তিস্ক রোগের শিকার হয়। সূত্র : বাসস।