banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

আমার ডাক্তার বাবা

আমার ডাক্তার বাবা


সুমাইয়া চৌধুরী


তিনি মূলত রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক। তাঁর ডিগ্রী “Applied chemistry” এর উপর। কিন্তু তাঁর “Applied Homeopathy” দেখে আসছি সেই শৈশব থেকে ……হোমিওপ্যাথির উপর ভদ্রলোকের অগাধ আস্থা এবং শারীরিক অসুস্থতায় তিনি হোমিওপ্যাথিকেই বেছে নেন। সাগুদানার মতো দেখতে মিষ্টি ওষুধগুলো আমার কাছে চকলেটের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতো আর শিশুচোরের উপদ্রবে এক ডোজের ওষুধ ৫-৬ বার কিনতে হতো ভদ্রলোককে।

অবসরে যাওয়ার পর ১ বছর বাসায় অবস্থান করলেন,,,,,পত্রিকা পড়েন , কোরআন পড়েন , মসজিদে যান সবই ঠিকমতো চলছে কিন্তু কোথায় যেন একটা অভাববোধ , শিক্ষকতাকালীন যে পড়াশোনা করতেন সেটার জন্য মন হাহাকার করে। অবশেষে ৬৭ বছর বয়সের আমার যুবক বাবা শিক্ষক থেকে ছাত্রে রূপান্তরিত হলেন ,ভর্তি হয়ে গেলেন হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজে ৪ বছরের DMHS (Diploma in Homeopathy Medicine and Surgery) কোর্সে।

কি তাঁর আনন্দ আর পড়াশোনার আগ্রহ !!! ক্লাসের ফাঁকে খাবে বলে মায়াবতী স্ত্রী নিয়ম করে টিফিন রেডি করে দেয়। আম্মা দেখি মাঝে মাঝে জানতেও চায় “ কয়টা বান্ধবী হলো তোমার ?” আব্বা নায়ক রাজ্জাকের মতো রহস্যময় হাসি দেয়।

আব্বা বরাবরই ম্যাথমেটিক্সে ভালো ছিলেন , বায়োলজি সাবজেক্ট টাই ছিলোনা তাঁর আর সেজন্য এনাটমি বা ফিজিওলজির এক্সাম এর সময় খুব স্টাডি করতে হতো। ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে অভিভাবক হিসেবে জানতে চাইলাম “ ছাত্রের খবর কি ? রেজাল্ট খারাপ হলে পড়াশোনার খরচ বন্ধ।’’ আব্বা খুবই উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন , “মা রে , এনাটমিতে পাস নিয়া চিন্তায় আছি”

আব্বা এখন ৪র্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র। কলেজে তাঁর যথেষ্ঠ সুনাম….পরীক্ষায় কোন অসুদপায় অবলম্বন না করে এই বয়সেও কঠোর অধ্যয়ন করার জন্য। চিকিৎসাও শুরু করেছেন , পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজনদের ওষুধ দিচ্ছেন নিয়মিত। বিশ্বস্তসূত্রে জানলাম তাঁর ওষুধ ভালো কাজ করে। বড় আপিও একদিন কথায় কথায় জানালো তাঁর বাচ্চাদের নাকি নানুভাইয়ের ওষুধ ছাড়া দেশের বাইরের ওষুধেও কাজ কাজ হয়না।

আব্বাকে কল দিলাম……..
-“কি ডাক্তার সাহেব, আপনারতো সেই নাম ডাক!!!! ”

আব্বা খুশিতে শরমে গদগদ কন্ঠে …….
– শোনো আমিতো বায়োকেমিক মেডিসিন দেই,এক ডোজেই হুম….

আমি বেশ সিরিয়াস হয়ে বললাম ,
—ফ্রী ফ্রী ওষুধ দেয়া যাবেনা , ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যাবে , আম্মাকে ওষুধ দিলেও মাথা টিপায়ে নিবেন , গা চুলকায়ে নিবেন।

কয়েকমাস আগে আমার পায়ে একটা ইনজুরি হয় , আব্বার কি আফসোস ,
— “ইসস , তুমি দেশে থাকলে এক ডোজ দিলেই ………”

আমি বললাম,
—আচ্ছা ঠিক আছে , দেশে এসে হাত পা কিছু একটা ভেঙে আপনার ওষুধ খাবো ”

আব্বা আমার সস্তা ফাইজলামিতে মহাবিরক্ত হয়।

মার্চে দেশে গেলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা পাতলা আবহাওয়ার মুখোমুখি। আম্মার মুখ শুকনো , মেয়ের জামাইকে ডাবের পানি আর স্যালাইন ছাড়া কিছুই খাওয়াতে পারছেনা। আব্বার চোখে মুখে চাপা আনন্দ….

ওর কাছে গিয়ে বলছে
—বাবাজি , চিন্তার কিচ্ছু নাই ……এক ডোজেই ……ইনশাআল্লাহ। ”

জামাইবাবাজি শ্বশুরের ডোজে সুস্থ হলো। আমি শুধু রাইস স্যালাইন খেয়েই সুস্থ হলাম বলে আমার উপর বেশ অভিমান করলেন। আব্বার পড়াশোনা চলছে , চিকিৎসাসেবাও চলছে। খুব আন্তরিকতার সাথে ওষুধ দেন। রোগীর জন্য দোয়া করেন।

সবার শেষ বয়সটা সুন্দর কাটেনা …..৭০ বছর বয়সে আমার শিক্ষানবিশ ডাক্তার বাবা মানুষের সেবা করার আনন্দময় ইচ্ছা নিয়ে সময় পার করছে আলহামদুলিল্লাহ !!!!

ইদানিং আমার শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা। ভাবছি ডাক্তার সাহেবের কাছে এপোয়েনমেন্ট নিবো।