banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি?(পর্ব-২)

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি?(পর্ব-২)


আফরোজা হাসান


অংক, ইংরেজি, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রিতে নাম্বার কখনো কম পেলে নাকীবকে অবশ্যই আমার জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ এসব ওর পছন্দের বিষয়। তাছাড়া একদমই যদি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে নাহয় তাহল নিজের মান উন্নয়নে গাফেল হয়ে যাবে। কিন্তু ভূগোল, ইতিহাসে পাশ মার্ক কিংবা তারচেয়ে এক দুই বেশি পেলেই আমি খুশি। অনেক সময় একটি দুটি অপছন্দনীয় বিষয়ের চাপের কারণে অন্যান্য সব বিষয়ের এমনকি সবচেয়ে পছন্দের বিষয়ের রেজাল্টও খারাপ হয়ে যায়।এক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় সন্তানের পাশে থাকা, সাহস যোগানো এবং অনর্থক আশা চাপিয়ে না দেয়া। সন্তানের রেজাক্ট আশানুরূপ না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ পিতামাতার বিচার বিবেচনাহীন অতি আশা, উচ্চাশা।

তবে স্কুলের রেজাল্টের চাইতেও আমার কাছে অন্য একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। সেটি হচ্ছে শরীয়তের মানদন্ডে আমার সন্তানের অ্যাক্টিভিটি। একটা বাচ্চা সবদিক দিয়ে কখনোই পার্ফেক্ট হবে না। আমার ছেলে হয়তো ভূগোলে টপ করেনি কিন্তু রমজানে সে এক মাস রোজা রেখেছে, তারাবীহ আদায় করেছে কোন রকম আলসেমি ছাড়া আলহামদুলিল্লাহ। সেই সময় যখন তার স্কুল খোলা ছিল, ফাইনাল এগজাম চলছিল। ইউরোপে সামার শুরু হয়ে গিয়েছিল। রোজার দৈর্ঘ্য প্রায় সতেরো ঘন্টা। স্কুলে স্পোর্টস ক্লাসে নানান ধরণের অ্যাক্টিভিটি করতে হয়। আমি বাসায় বসে শঙ্কিত অনুভব করতাম রোজা রেখে না জানি কিভাবে আমার ছেলেটা স্পোর্টস ক্লাস করছে। কিন্তু নাকীব মাশাআল্লাহ হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকেছে স্কুল থেকে। কখনোই বলেনি ক্ষুধা লেগেছে, পিপাসা পেয়েছে কিংবা আজকে রোজা রাখতে, তারাবীহ পড়তে চাইনা। আমার ছেলে হয়তো ইতিহাস পড়া নিয়ে গড়িমসি করে কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে কখনো গড়িমসি করতে দেখিনি আলহামদুলিল্লাহ। হয়তো কখনো সখনো দু’একদিন হোমওয়ার্ক করতে ভুলে যায়। কিন্তু আমাকে সাহায্য করার ব্যাপারে কখনোই ওর ভেতর কার্পণ্য, বিরক্তি দেখিনি। আমি ভুলোমনা স্বভাবের। বাজারের লিস্ট করার পরও দেখা যায় দরকারি অনেক কিছু লিখতে ভুলে গিয়েছি। এমনও হয় আমার ভুলো মনা স্বভাবের কারণে নাকীবকে একবারের জায়গায় তিন চারবার সুপার মার্কেটে যেতে হয় পরাপর। কখনো দেখিনি বিরক্ত হচ্ছে, মুখের উপর বলছে আমি পারবো না। বরং হাসে, মজা পায় মায়ের মেমোরির দশা দেখে, আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার ছেলের এই সমস্ত উত্তম গুণাবলীকে কিভাবে অবমূল্যায়ন করবো শুধুমাত্র ওর রেজাল্ট আমার মানদণ্ডকে ছুঁয়ে না দিলে?! এটা কি সন্তানের উপর সুস্পষ্ট অবিচার করা হবে না? আমার এই অবিচার কি আমার সন্তানের উত্তম গুণাবলীকে প্রভাবিত করবে না? ভাবতেই পারে আমি আম্মুতার জন্য একবারের জায়গায় চারবার সুপার মার্কেটে যেতে পারি, অথচ আম্মুতা আমার একটা ভুল কিংবা অপারগতা মেনে নিতে পারলো না?!

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমরা কতটুকু সময় দিচ্ছি বাচ্চার পেছনে। প্রি স্কুল, কিন্ডার গার্ডেনে আমরা সারাক্ষণ লেগে থাকি বাচ্চার পেছনে। প্রতিটা বিষয় হাতে ধরে শেখাই। একবারের জায়গায় দশবার বলতে,বোঝাতে আমাদের বিরক্ত লাগে না। কিন্তু বাচ্চা যত বড় হতে থাকে আমাদের লেগে থাকা, হাতে ধরে কোন কিছু বোঝানোর মাত্রা ততই কমতে থাকে। আমরা তখন এটা করো, ওটা করো, সেটা করো না, ওমনটা করতে হয়না এই সমস্ত হুকুম দিয়েই দায়িত্ব পালন হয়ে গিয়েছি মনে করি। হ্যা সন্তান যখন বড় হয় তখন তাকে নিজের দায়িত্ব সমূহ পালন করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে পিতামাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন ছেড়ে দেয়া যাবে না। নাকীব একদিন হোমওয়ার্ক নিতে ভুলে গিয়েছিল বিধায় ওর এক পয়েন্ট কেটে নেয়া হয়েছে। আমি এজন্য নাকীবকে নেতিবাচক কিছু বলিনি। বলেছি আর কখনো যাতে এমনটা নাহয় সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কারণ আমার মনে হয়েছে ভুলের পেছনে আমিও নাকীবের সমান কিংবা ওর চেয়ে বেশি দায়ী। প্রাইমারিতে যেমন প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নাকীবের স্কুল ব্যাগ চেক করে দেখতাম সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। এখন নিজে না করলেও ঘুমোতে যাবার আগে নাকীবকে অন্তত মনে করিয়ে দেয়া উচিত আগামীকাল স্কুলের জন্য পরিপুর্ণ ভাবে প্রস্তুত কিনা। কেননা কখনো ভুল করে, কখনো অনিচ্ছায়, কখনো অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাচ্চারা তো ভুল করবেই। পিতামাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেই ভুল সমহুকে প্রতিহত করা, সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। শুধু সঠিক পথের দিশা বাতলে দিলেই কিন্তু হবে না। হাত ধরে সঠিক পথে চলতে হবে ঠিক সেই সময়ের মতো যখন সন্তান কেবল মাত্র পিতামাতার হাত ধরে একপা দুপা করে হাঁটতে শিখেছিল। হাত ছাড়লেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবার ভয় ছিল।

(শেষ পর