banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? (পর্ব-১)

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? (পর্ব-১)


আফরোজা হাসান


অমনোযোগ, অবহেলা, গাফলতি, ফাঁকিবাজি কিংবা কারণ যেটাই হোক সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? পিতামাতার অ্যাকশন কেমন হওয়া উচিত সন্তানের সাথে? সন্তানকে সান্ত্বনা দেয়া উচিত নাকি তিরষ্কার করা? সন্তানকে উৎসাহ দেয়া উচিত যাতে পরবর্তীতে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয় নাকি হুমকি, ধামকি দেয়া উচিত? কি উচিত আর কি অনুচিত এই প্রশ্ন থাক আপাতত। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অ্যাকশন কেমন হয়? আমার মনেহয় এই সময়টাতেই সন্তানদের সবচেয়ে বেশি সাপোর্টের প্রয়োজন হয় পিতামাতার। আমার পুত্রের কথা যদি বলি ছোটবেলা থেকেই নাকীবের ভালো লাগা, মন লাগা, ভীতি, আনন্দ, খুশি আমার কাছে নিজের এই সমস্ত আবেগের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাকীব যখন তেলাপোকা দেখে ভীত হয় তখন ওর মনে সাহস যোগানোর জন্য আমি ছোটবেলায় যেমন ওর পাশে থাকতাম, এখনো থাকি। পাশে থেকে ওকে সাহস যোগাই, এই ভয় থেক বেরিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহ দেই। কিন্তু আমি কখনোই বলি না এখন তো তুমি বড় হয়েছো, সামান্য একটা তেলাপোকাকে ভয় পাওয়ার কি আছে? কিংবা ছেলে হয়ে তেলাপোকাকে ভয় পাও? কি লজ্জা! কি লজ্জা! হয়তো আমার সাপোর্ট আর পাশে থাকার কারণেই বেশ কিছুদিন আগে নাকীব একটা মৃত তেলাপোকাকে টিস্যু দিয়ে ধরে ডাস্টবিনে ফেলার মতো বিশ্বজয় করে ফেলেছিল। এই কর্ম সাধনের পর নাকীবের উল্লাস বিশ্বজয়ের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। নাকীবের সাথে উল্লাসিত আমি তখন বলেছিলাম, দেখেছো তুমি চাইলেই পারো। নাকীবও সমর্থন সূচক মাথা ঝাঁকিয়েছিল। সবজি খাওয়াটা খুবই জরুরি। কিন্তু নাকীবের সবজি ভীষণ অপছন্দ। জোর করে, বাধ্য না করে আমি আমি আমার রাঁধুনি সত্ত্বার ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে এমন ভাবে সবজি রান্না করেছি নাকীব খুশি মনেই খেয়ে নিয়েছে। এমনটা শুধু আমি না, বেশিরভাগ মায়েরাই করেন সন্তানের খুশির জন্য, কমফোর্টের জন্য।

নাকীব সেকেন্ডারি স্কুলে উঠার পর নতুন নতুন অনেক বিষয় পাঠ্যসূচিতে সামিল হয়েছে। তারমধ্যে ভূগোল আর ইতিহাস নাকীবের কাছে আতঙ্কের বিষয়। নাকীব যখন ওর আতঙ্কের কথা আমাকে জানিয়েছিল আমি ওকে চাপ প্রয়োগ করিনি এই বিষয় দুটোকে ভালো লাগানোর জন্য। আমি যখন সেকেন্ডারিতে ছিলাম অর্থনীতি আর পৌরনীতি এমন আতঙ্কের ছিল আমার কাছে। তাই নাকীবের অবস্থাটা অনুভব করতে পারছিলাম। পাঠ্যসূচিতে থাকা প্রতিটা বিষয় একজন স্টুডেন্টের কাছে সমান প্রিয় হওয়াটা অসম্ভব। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমার সন্তানের টার্গেট যদি থাকে প্রোগ্রামার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা গবেষক হওয়ার। সেক্ষেত্রে আমি কেন তাকে জোর করে ভূগোল, ইতিহাসে মনোযোগী করার চেষ্টা করবো? সব বিষয়ে কেন তাকে জোর করে দশে দশ পেতে বাধ্য করবো? অপছন্দীয় বিষয়ে কম পেলে কেন তাকে শাস্তি দেবো, তিরষ্কার করবো, অন্যের সাথে তুলনা করবো? আমি নাকীবকে বলেছি তুমি তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করো। ঠিকআছে তুমি দশে দশ না পাও কিন্তু ইতিহাস ও ভূগোল সম্পর্কেও তোমাকে জানতে হবে। আর জানার জন্য তো তোমাকে পড়তেই হবে। আমার কথা শুনে নাকীব অনেকটাই আশ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। ( চলবে)