banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

আবারো বোরকা পরে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!

আবারো বোরকা পরে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!
রাজবাড়ী ও বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)


নারী সংবাদ


ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতকে বোরকা পড়ে পুড়িয়ে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে। দগ্ধ কিশোরী খানখানাপুর তমিজউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

এ ঘটনায় শনিবার সকালে রাজবাড়ী সদর থানায় ভূক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে তার এলাকার স্বামী প্রবাসী শিল্পী বেগম নামের এক মহিলাসহ অজ্ঞাত ৪ ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেছেন।

স্কুল ছাত্রীর মা নাসিমা বেগম বলেন, ঈদের দিন (বুধবার) স্থানীয় প্রতিবেশী শিল্পী বেগম আমার মেয়ের কাছে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক ও আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এতে আমার মেয়ে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে দুই বোন জাম খাচ্ছিল আর আমি তখন ঘরের মধ্যে ঘুমাচ্ছিলাম।

এসময় আমার ছোট মেয়ের চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে বড় মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বোরখা পড়া দুইজন লোক তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে জানায়। তখন আমিও চিৎকার করতে থাকি। আমার চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অনেক খোজাখুজির পর ঘরের পিছনের পাটক্ষেত থেকে বড় মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।

দগ্ধ স্কুলছাত্রীর বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মোঃ সোহেল ব্যাপারী বলেন, এ ঘটনায় গত (শুক্রবার) রাতে আমি নিরাপত্তাহীনতার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করি। কিছুক্ষণ পর রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার পুলিশ পাঠিয়ে থানায় ডেকে নিয়ে বিস্তারিত শোনেন। পরে আমাকে মামলা দায়েরের পরামর্শ প্রদান করেন।

ওই স্কুল ছাত্রী বলেন, পাশের গ্রামের রাজু নামে একটি ছেলে আমাকে পছন্দ করতো। এ পছন্দের কথা স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী বেগম জানতো আর এটাকে কেন্দ্র করেই সে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বিষয়টি পরিবারকে জানাই। পরদিন বৃহস্পতিবার সে ওড়না দিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে গায়ের জামায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

পাশের বাড়ির বাসিন্দা সাথী সরকার জানান, চিৎকার চেচামেচিতে আমরাও এগিয়ে গিয়ে স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করি। তার মাথায় আঘাতের চিহ্নসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং গায়ের জামা কাপড় ছেড়া ছিল।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দুইটি টিম মাঠে কাজ করছে এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া

বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া


আফরোজা হাসান


গতকাল আমার এক ক্ষুদে স্টুডেন্ট অনেক মন খারাপ করে ছিল সারা ক্লাসে। ক্লাস শেষে ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে তোমার? এতো মন খারাপ করে আছো কেন? কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, আমি দুষ্টুমি করেছিলাম তাই আম্মু আমাকে বলেছে দুইদিন কার্টুন দেখতে পারবো না। এরপর তো সে কত অল্প একটু দুষ্টুমি করেছে আর আম্মু তাকে কত বড় শাস্তি দিয়েছেন তার লম্বা ফিরিস্তি দিলো। তার প্রিয় কার্টুন গুলো দেখতে পারবে না সেই আহাজারি করলো। আকার ইঙ্গিতে বোঝাল যে আম্মু তার সাথে অন্যায় করেছেন। ইচ্ছে করলেই আম্মু মাফ করে দিতে পারতেন তাকে সেটাও বুঝিয়ে দিলো কথা দিয়ে।

আমি মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের শাস্তি দেয়ার পক্ষে। কারণ সবসময় যদি ক্ষমা করে দেয়া হয় তাহলে ভুলের প্রতি সাবধানতা বা সতর্কতা তৈরি হয় না বাচ্চাদের মনে। বরং বিশ্বাস জন্মে যায় যে সে যাই করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। এই বিশ্বাস তার ছোট ছোট ভুলগুলোকে বড় বড় ভুলের পথে টেনে নিয়ে যাবে। কিন্তু শাস্তি হিসেবে পছন্দের জিনিস বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে নই আমি। কারণ এতে বাচ্চাদের মনে চাপ পড়ে। অন্যায় করেছে সেই অনুশোচনার চেয়েও প্রিয় কিছু না পাবার কষ্ট বেশি কাজ করে মনে। বাবা-মা তাকে বোঝে না, ভালোবাসে না ইত্যাদি নানা ধরণের ভাবনা দানা বাঁধে মনে। অনেক সময় এই ধরণের শাস্তি ইমোশনালি অ্যবিউজের মধ্যেও পড়ে যায়।

বাচ্চারা দুষ্টুমি, ভুল, অন্যায় করবেই আর শাস্তিও তাদের দিতেই হবে মাঝে মধ্যে। আমি শাস্তি হিসেবে আমার বাচ্চাদের পছন্দের জিনিস কখনোই বন্ধ করি না। আমি যা করি তা হচ্ছে ওদের সবচেয়ে অপছন্দের কাজটি করাই শাস্তি হিসেবে। নাকিবের সবচেয়ে অপছন্দ হচ্ছে মাছ আর সব্জি। নুহেরির অপছন্দ ফল আর দুধ। নাকিব যদি কোন অন্যায় করে আমি মুখে কিছুই বলি না। খাবারের সময় হলে বিশাল বড় একটা মাছ ফ্রাই আর বড় এক বাটি সব্জি দিয়ে বসিয়ে দেই টেবিলে। মিষ্টি করে হেসে মাছ আর সব্জির পুষ্টিগুণ আর কেন এসব খেতে হবে বুঝিয়ে বলি। নুহেরির ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই করি। শাস্তি হচ্ছে বুঝতে পেরে খাবো না বলারও সাহস পায় না ওরা।

আমরা বোনেরা যখন ছোট ছিলাম ঠিক এই পদ্ধতিতেই আমাদেরকে শাস্তি দিতেন আমাদের বড় ভাইয়ারা। মুখে কোনদিনও কিছু বলতেন না। অপছন্দের জিনিস করিয়ে নিতেন শাস্তি স্বরূপ। আমারো নুহেরির মতোই দুধ আর ফল হচ্ছে সবচেয়ে অপছন্দ। বিশাল বড় এক গ্লাস দুধ আর ফলের বাটি যখন সামনে আসতো মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম এই ভুল আর জীবনে করবো না। ভাইয়াদের প্রতি রাগ বা বিরক্তি আসতো না মনে কারণ উনারা হাসি মুখে পাশে বসে গল্প গুজব করতেন। খাদ্যের পুষ্টিগুণ শোনাতেন। নিজের উপরই বিরক্তি আসতো। মনেহতো কেন যে করতে গিয়েছিলাম এমন বোকার মতো কাজ। নয়তো এসব খেতে হতো না।

আমার মতে শাস্তি হতে হবে এমন যা বাচ্চাদেরকে তাদের ভুলকে উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে। আর যাতে এমন ভুল না হয় সে ব্যাপারে সাবধানী হতে সাহায্য করবে। এবং যারা শাস্তি দিচ্ছেন তাদের প্রতিও কোন বিদ্বেষের জন্ম হবে না মনে। কারণ বড়রা তো আসলে মঙ্গলের জন্যই শাস্তি দেন। কিন্তু বাচ্চারা যদি এটা অনুভব না করে তাহলে শাস্তি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। তাই শাস্তি এমন হওয়া উচিত যা অভিভাবক এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য ফলপ্রসূ।