বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে জাঙ্ক ফুড কিশোরীদের জন্য ক্ষতিকর
স্বাস্থ্যসেবা
মহুয়া এবারই ক্লাস নাইনে উঠেছে। তিন মাস আগে থেকে তার মাসিক শুরু হয়েছে। আগে বেশ প্রাণোচ্ছল থাকলেও মাসিক শুরুর পর থেকে মেয়েটি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, নেতিয়ে যাচ্ছে। শারীরিক পরিবর্তনও হচ্ছে। মুখে ব্রণ, আর শরীরও কিছুটা শুকিয়ে গেছে। সারাক্ষণ কেমন জানি আনমনা থাকে।
বিষয়টি প্রথমে কেউ খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও মহুয়ার মা খুব চিন্তায় পড়ে গেল মেয়েকে নিয়ে। দিন দিন কেমন জানি রোগা হয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। একদিন পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন মহুয়াকে। ডাক্তার সব শুনে কিছু ঔষুধ আর খাবারের তালিকা বলে দিলেন।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হক বলেন, মূলত মেয়েদের এগার বছর থেকে আঠার বছরের মধ্যে মাসিক শুরু হয়। এ সময়টিকে মেয়েদের বয়:সন্ধিকাল বলা হয়। আর এ সময় কিশোরীদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন হয় এ সময় কিশোরী মেয়েদের। এ সনয় হরমোন নিঃসরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিশোরীদের শারিরীক পরিবর্তন শুরু হয়। স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বি জমে, যৌনাঙ্গের গ্রন্থি বৃদ্ধির কারণে বিপাকক্রিয়ার হার বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এসময় কিশোরী মেয়েদের প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন, যাতে করে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা পায়। কিন্তু আমাদের মত দেশে দেখা যায় উল্টো ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ সময় পুষ্টিকর খাবার পায় না কিশোরীরা। আবার খাবারের অনিয়মও হয় এই বয়সে। আর এসব কিছুর প্রভাব পড়ে কিশোরীর শরীরে। দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা।
ডা. মনোয়ারা বলেন, বয়:সন্ধিতে মেয়েদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মুখে ব্রণ। মূলত হরমোনের তারতম্যের কারনে এসময় কিশোরী মেয়েদের মুখে প্রচুর পরিমানে ব্রণ দেখা দেয়। আর তাই ব্রন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মেয়েদের প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে। এছাড়াও খেতে হবে শাক-সব্জি ও আঁশযুক্ত খাবার। এসময় নানা ধরনের চকোলেট, আইসক্রিম এবং কোমল পানীয় না খাওয়াই উত্তম।
তিনি বলেন, এ সময় কিশোরী মেয়েরা এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভোগে। মূলত যখন মাসিক শুরু হয় তখন কারো কারো প্রচুর পরিমান রক্তক্ষরণ হয়। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আর তাই এ সময় আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে। এসময় প্রচুর পরিমাণ মাংস, মাছ, ডিম এবং শাক খেতে হবে। এছাড়াও আয়রন আছে এমন ফলও খেতে হবে এসময় । খেজুর, কিসমিস, কলা এসব ফলে প্রচুর আয়রন রয়েছে।
তিনি বলেন, এসময় অনেক কিশোরী অতিরিক্ত মাত্রায় ডায়েটিং করে। মুলত নিজেদের স্লিম রাখতেই তারা খেতে চায় না। কিন্তু এই না খাওয়ার কারণে তারা অপুষ্টিতে ভোগে এবং শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। দেখা যায় মেয়েরা রক্তশূণ্যতা এবং ভিটামিনের অভাবে ভুগছে। আর তাই এই সময় প্রচুর পরিমান পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ ছাড়াও এসময় ভিটামিন সি’র ঘাটতিও দেখা দেয়। আর তাই লেবু, পেয়ারা,কমলা খেতে পারে কিশোরীরা যাতে করে ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণ হয়।
ডা. মনোয়ারা বলেন, এই বয়সে সবার কোমল পানীয়, চকোলেট, ফাস্টফুড, পেস্ট্রি জাতীয় খাবার খুব প্রিয়। অনেকে এসব খাবারের প্রতি চরম আসক্ত থাকে। কিন্তু এসব খেলে ওজন বেড়ে যায় এবং হরমোনের তারতম্য হয় এবং পলিষ্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম দেখা যায়। ফলে কিশোরী মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তাই এ সময় সেসব খাবার পরিহার করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সুত্রঃ বাসস