banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Monthly Archives: November 2024

 

বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে জাঙ্ক ফুড কিশোরীদের জন্য ক্ষতিকর

বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে জাঙ্ক ফুড কিশোরীদের জন্য ক্ষতিকর


স্বাস্থ্যসেবা


মহুয়া এবারই ক্লাস নাইনে উঠেছে। তিন মাস আগে থেকে তার মাসিক শুরু হয়েছে। আগে বেশ প্রাণোচ্ছল থাকলেও মাসিক শুরুর পর থেকে মেয়েটি কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে, নেতিয়ে যাচ্ছে। শারীরিক পরিবর্তনও হচ্ছে। মুখে ব্রণ, আর শরীরও কিছুটা শুকিয়ে গেছে। সারাক্ষণ কেমন জানি আনমনা থাকে।
বিষয়টি প্রথমে কেউ খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও মহুয়ার মা খুব চিন্তায় পড়ে গেল মেয়েকে নিয়ে। দিন দিন কেমন জানি রোগা হয়ে যাচ্ছে মেয়েটি। একদিন পরিচিত এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন মহুয়াকে। ডাক্তার সব শুনে কিছু ঔষুধ আর খাবারের তালিকা বলে দিলেন।
গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ার হক বলেন, মূলত মেয়েদের এগার বছর থেকে আঠার বছরের মধ্যে মাসিক শুরু হয়। এ সময়টিকে মেয়েদের বয়:সন্ধিকাল বলা হয়। আর এ সময় কিশোরীদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। মানসিক এবং শারীরিক পরিবর্তন হয় এ সময় কিশোরী মেয়েদের। এ সনয় হরমোন নিঃসরনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কিশোরীদের শারিরীক পরিবর্তন শুরু হয়। স্তনগ্রন্থি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বি জমে, যৌনাঙ্গের গ্রন্থি বৃদ্ধির কারণে বিপাকক্রিয়ার হার বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এসময় কিশোরী মেয়েদের প্রচুর পরিমাণ পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজন, যাতে করে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা পায়। কিন্তু আমাদের মত দেশে দেখা যায় উল্টো ঘটনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ সময় পুষ্টিকর খাবার পায় না কিশোরীরা। আবার খাবারের অনিয়মও হয় এই বয়সে। আর এসব কিছুর প্রভাব পড়ে কিশোরীর শরীরে। দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা।
ডা. মনোয়ারা বলেন, বয়:সন্ধিতে মেয়েদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মুখে ব্রণ। মূলত হরমোনের তারতম্যের কারনে এসময় কিশোরী মেয়েদের মুখে প্রচুর পরিমানে ব্রণ দেখা দেয়। আর তাই ব্রন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মেয়েদের প্রচুর পরিমান পানি পান করতে হবে। এছাড়াও খেতে হবে শাক-সব্জি ও আঁশযুক্ত খাবার। এসময় নানা ধরনের চকোলেট, আইসক্রিম এবং কোমল পানীয় না খাওয়াই উত্তম।
তিনি বলেন, এ সময় কিশোরী মেয়েরা এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভোগে। মূলত যখন মাসিক শুরু হয় তখন কারো কারো প্রচুর পরিমান রক্তক্ষরণ হয়। শরীর দুর্বল হয়ে যায়। আর তাই এ সময় আয়রন জাতীয় খাবার খেতে হবে। এসময় প্রচুর পরিমাণ মাংস, মাছ, ডিম এবং শাক খেতে হবে। এছাড়াও আয়রন আছে এমন ফলও খেতে হবে এসময় । খেজুর, কিসমিস, কলা এসব ফলে প্রচুর আয়রন রয়েছে।
তিনি বলেন, এসময় অনেক কিশোরী অতিরিক্ত মাত্রায় ডায়েটিং করে। মুলত নিজেদের স্লিম রাখতেই তারা খেতে চায় না। কিন্তু এই না খাওয়ার কারণে তারা অপুষ্টিতে ভোগে এবং শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধে। দেখা যায় মেয়েরা রক্তশূণ্যতা এবং ভিটামিনের অভাবে ভুগছে। আর তাই এই সময় প্রচুর পরিমান পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এ ছাড়াও এসময় ভিটামিন সি’র ঘাটতিও দেখা দেয়। আর তাই লেবু, পেয়ারা,কমলা খেতে পারে কিশোরীরা যাতে করে ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণ হয়।
ডা. মনোয়ারা বলেন, এই বয়সে সবার কোমল পানীয়, চকোলেট, ফাস্টফুড, পেস্ট্রি জাতীয় খাবার খুব প্রিয়। অনেকে এসব খাবারের প্রতি চরম আসক্ত থাকে। কিন্তু এসব খেলে ওজন বেড়ে যায় এবং হরমোনের তারতম্য হয় এবং পলিষ্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম দেখা যায়। ফলে কিশোরী মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। তাই এ সময় সেসব খাবার পরিহার করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। সুত্রঃ বাসস

 

সন্দেহ

সন্দেহ


মিথিলা ফেরদৌস


দু’টি অভিজ্ঞতাই বাস থেকে নেয়া।খুব দুঃখজনক ঘটনা, দুটোই।

১.
কাউন্টারে বাসের টিকিট কেটে ঘুরে দাঁড়িয়েছি মাত্র,পাশেই লম্বা ফর্সা,কালো ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটা আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

ঃকিউজ মি আপু,আপনি তো ডাক্তার তাই না?
ঃজ্বী?
ঃআপনাকে মনে হয় কোথাও দেখেছি।আপু,আমি আপনার জুনিয়র হবো।একটা দরকার ছিল।
ঃকি দরকার?
ঃআমার ওয়াইফের টিকিট আপনার সাথেই কেটেছি।আপনি যদি আপনার নাম্বার দিতেন, কখন পৌঁছায় জেনে নিতে পারতাম।

১০/১২ বছর আগের কথা,মোবাইল খুব একটা সবার কাছে না থাকাটা স্বাভাবিক ঘটনা তখন।আমি নাম্বার দিয়ে, একটু দূরে গোমড়া মুখ করে শুকনা এক মেয়ের দিকে তাকালাম।মেয়েটা ফাঁকে ফাঁকে এদিকে দেখছে,আবার অন্যদিকে তাকিয়ে উদাস!সেই মেয়েই ওই ছেলের বউ কিনা বুঝলাম না।নাম্বার দিয়ে,বাসের জন্যে অপেক্ষা করছি। কিছুক্ষণ পর বাস ছেড়ে দিবে, বাসে গিয়ে বসলাম। আমার সিট জানালার পাশেই। পাশে সেই গোমড়ামুখো মেয়েটিই এসে বসলো। আমি মেয়ের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিতে গিয়ে দেখলাম, মেয়ে মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।

আমি সাধারণত নিজে থেকে কারো সাথেই কথা বলিনা, কে কিভাবে নেয় সেইটা ভেবে। এই ক্ষেত্রেও বলতে গিয়ে লজ্জায় পরে গেলাম। বাস চলতে শুরু করেছে। জানালার ওপাশে তাকিয়ে নিজের চিন্তার জগতে চলে যাই।
ঘন্টাখানেক বা তারও বেশি পরে, মেয়েটা হঠাৎ কথা বলে উঠে।

ঃআপনি আমার হাজবেন্ডকে কিভাবে চেনেন?
আমি চমকায় উঠি। মেয়েটার মুখ থমথমে। শ্যামলা, অনেক হালকা পাতলা মেয়ে।
ঃআমি আপনার হাজবেন্ডকে চিনিনা।আপনি একা যাচ্ছেন তাই উনি আমার সাথে আপনার টিকিট করেছেন, তাই বললেন। আমার নাম্বার নিলেন, আপনার খবর নিতে।

মেয়েটা মনে হলো ব্যাপারটা সহজে মেনে নিতে পারছে না।
আমিও আর কথা বাড়াইনা।

এরপর মেয়ে আমাকে আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করে নিশ্চিত হয়। আমার সাথে তার হাজবেন্ডের কোনও পুর্ব পরিচয় ছিল না।

মেয়ের কথায় যতটা বুঝি, হাজবেন্ড ডাক্তার, মেয়ে মেডিকেল স্টুডেন্ট। হাজবেন্ড খুব অত্যাচার করে। বাসা থেকেই বিয়ে। মেয়ের আগের পছন্দ ছিল, সেই ছেলে দেশের বাইরে। মেয়ের হাজবেন্ড মেয়েকে সন্দেহ করে, খুব টর্চার করে ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার গন্তব্যে পৌছানোর আগেই একবার ছেলেটা ফোন করে, আমি সাথে সাথেই ফোন মেয়েকে দিয়ে দেই।

মেয়েটাকে দেখে আমার মনে হয়েছে, সে একটা মানসিক সমস্যার মধ্যে আছে।সমস্যা ছেলেটার না। আমার ভুলও হতে পারে। বহু পরে মেয়েটা একবার ফোন করে কেঁদেছিল। সম্ভবত বিয়েটা টেকেনি বা তেমন কিছু বলেছিল। আমার মনে নাই।

২.
বাসে আমি যথারীতি জানালার পাশে।পর্দা সরিয়ে বাইরের দিকে অপেক্ষা করছি, কখন বাস ছেড়ে দিবে। ঠিক সেই মুহুর্তে অপূর্ব সুন্দর একটা মেয়ে আমার পাশে বসে হাঁপাতে থাকে।

ঃআপু, আপনার কাছে পানি আছে?
আমি একটু অবাক হই। বাসে, বিশেষ করে এইসব বাসে এমন সবাই যায়!! সবাই নিজেকে সুপিরিয়র ভাবে। তাছাড়া নিরাপত্তার জন্যেই কেউ কারো কাছে পানি চায় না।
ঃআছে।
বলে, হ্যান্ড ব্যাগ থেকে পানির বের করে দিই। মেয়েটা পুরো পানি খেয়ে আমার দিকে তাকায়।
ঃস্যরি আপু, খুব পিপাসা পেয়েছিলো।জানালার পর্দাটা টেনে দিবেন আপু!আমার একটু সমস্যা আছে পরে বলছি।বাস চলতে শুরু করলে, আবার খুলে দিবেন।

মেয়েটা সুপারভাইজারকে ডেকে ডাব আর পানি কিনতে দেয়।

বাস ছাড়ার পর, পর্দাটা সরিয়ে দিলে, মেয়েটাকে খেয়াল করি। অতিমাত্রায় সুন্দর মেয়ে। গায়ের রঙ মধ্যপ্রাচ্যীয় টাইপ, গলায় নীলচে শিরা উপশিরাগুলি বোঝা যাচ্ছে। একহারা গড়ন। হালকা নীলের মধ্যে ডিপ নীল ব্লকের জামাটা অদ্ভুত সুন্দর মানিয়েছে। মুগ্ধ হয়ে তাকিয়েই চোখ পরে যায়, ঘাড়ে লালচে মারের দাগ, গালে অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া চড়ের দাগ। চোখে স্পষ্ট মেঘ জমে আছে।মন খারাপ হয়ে যায়। চুপ মেরে বাইরে তাকাই।

মেয়ে বাস কিছুদুর চলে আসার পর, নিজে থেকেই শুরু করে। সে ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে। সেখানে তার হাজবেন্ড ব্যবসার কাজে গেলে, তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসে।ঢাকার মগবাজারে শ্বশুরবাড়ি। বরের নিজেদের বাড়ি। বিয়ের পর ঢাকায় ইডেনে অনার্সে ভর্তি হয়। মেয়ে ভাল স্টুডেন্ট। বরের পড়ালেখা তেমন নাই।
বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন। সন্দেহ যার মুল কারণ।হাজবেন্ডের বন্ধু থেকে শুরু করে সবার সাথেই মেয়েকে সন্দেহ করে, প্রায়শই মেয়েকে অমানবিক নির্যাতন করা হতো।একবার আগুনে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও করা হয়েছে। মেয়েকে বাড়ির সাথে কোনও যোগাযোগ করতে দেয়া হয় না।আগেরদিন অনেক রাত পর্যন্ত মেরেছে, মাতাল স্বামী। সকালে ঘুমিয়েছিল। মেয়ে কলেজে যাওয়ার নাম করে বের হয়। সাথে গাড়ি পাঠানো হয়, যাতে পালাতে না পারে। মেয়ে গাড়ি বাইরে রেখে, কলেজে ঢুকে। কলেজ থেকেই কোনওমতে বাস স্ট্যান্ড এসেছে। রাত থেকে এখন অব্দি পানি পর্যন্ত খেতে পারেনি। ভয়ে ছিল, কেউ পিছে পিছে আসছে কিনা, ড্রাইভার খবর দিলো কিনা? গাড়িতে উঠে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছে।

মেয়েকে সারারাস্তা কারো সাথেই কথা বলতে দেখিনি। পলাশবাড়ির কাছে মোবাইল অন করে, বোনকে ফোন করে শুধু জানায়, সে রংপুর হয়ে বাড়ি ফিরছে।

খুব মন খারাপ হয় মেয়েটার জন্যে। মেয়ের যদি তেমন কিছুই থাকতো, তাহলে আজ তার সাথেই পালাতো। আমি মেয়েকে পুরা রাস্তায় কোনও ছেলের সাথেই যোগাযোগ করতে দেখিনি। এবং মেয়েকে দেখে খুব সরল মনে হয়েছে। যেই ছেলে এই মেয়ের সাথে এমন করলো, সেই ছেলে নিজের ভাগ্য নিজেই নষ্ট করলো।

অতিরিক্ত সন্দেহ আমাদের নিজেদের যেমন অসুখী করে, আমাদের পার্টনার, সন্তানদেরকেও অসুখী করে তোলে। এইটা একটা মানসিক রোগ। আমরা কেউই সন্দেহবাতিকের উর্ধ্বে নই। কিন্তু তা যাতে বাড়াবাড়ি হয়ে না যায়। আমার মনে হয়, সন্দেহ না করে ঠকে যাওয়াতেও শান্তি।যেই ঠকা বুঝলামই না, তাতে আর কষ্ট কি! কিন্তু খামোখা সন্দেহের কষ্ট আরও বেশি কষ্ট দায়ক। যদিও এইটা আমার নিজস্ব ভাবনা। তবে সুখী হওয়ার জন্যে, এইটা খুবই জরুরী বিষয়।

 

স্বাতীর রঙধনু…৬

স্বাতীর রঙধনু…৬


আফরোজা হাসান


বাচ্চা পালন নয়তো সহজ। এই বিষয়বস্তু কে কেন্দ্র করে একটা ধারাবাহিক আলোচনা সভার আয়োজন করা উচিত।
বাচ্চাদের জ্যুস বানানোর জন্য বাগান থেকে কমলা নিতে এসেছিল স্বাতী। পেছন থেকে বাক্যটা ভেসে এলে ঘুরে তাকিয়ে ননদ আজরা কে দেখতে পেয়ে হেসে বলল, হঠাৎ এমন ইচ্ছে উদ্রেক হবার পেছনে কারণ কি?
স্বাতীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে আজরা বলল, তুমি তো জানোই আমার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই যা হয় তা হচ্ছে, চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। নতুন কোন পরিস্থিতি যখন সম্মুখে এসে দাঁড়ায় আমি হিমশিম খাই সেটা সামলাতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সেই পরিস্থিতিটা কত সুন্দর ভাবে হান্ডেল করা যেত তার শত শত আইডিয়া মাথায় কিলবিল করতে শুরু করে। এরচেয়েও বড় একটা সমস্যা হচ্ছে, কোন সংজ্ঞা বা উদাহরণের ভুল প্রয়োগ। এই যেমন একদিন খেলতে গিয়ে মুয়াজ প্রচন্ড জোরে আছড়ে পড়লো। আমি বিকট এক চিৎকার দিয়ে ছুটে যাচ্ছিলাম আরভ ভাইয়া আমাকে ধরে ফেলে বললেন, ওকে একাই উঠতে দে। জীবনের উত্থান পতনে সর্বদা যেহেতু তুই ওর সাথে সাথে থাকতে পারবি না। সেহেতু এখন থেকেই একা একা উঠে দাঁড়ানোর অভ্যাস হয়ে যাক।
স্বাতী হেসে বলল, এই কথাটা উনি বাচ্চাদেরকেও বলেন। বলেন, তোমরা যখন আছড়ে পরবে আমিও তোমাদের সাথে পরবো। কিন্তু উঠে তোমাদেরকে একাই দাঁড়াতে হবে। বাচ্চাদেরকে স্বনির্ভর বানানোর ব্যাপারে একদম হামাগুড়ি দেয়া যখন শুরু করে তখন থেকেই উনি ট্রেনিং দেয়ানো শুরু করেন। একটা ঘটনা মনে পরলে এখনো হাসি পায়। নাযীব তখন মাত্র নড়াচড়া শুরু করে। হাত বাড়িয়ে এটা সেটা ধরতে চেষ্টা করতো। একদিন ওর হাত থেকে খেলনা ছুটে দূরে গিয়ে পরেছিল। নাযীব হাত বাড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছিল কিন্তু পারছিল না। উনি পাশেই বসেছিলেন কিন্তু খেলনাটা এগিয়ে দিচ্ছিলেন না। কত রকমের কসরত করে সাড়ে সাত মিনিট লাগিয়ে নাযীব শেষ পর্যন্ত ওর খেলনাটা ধরতে পেরেছিল।
আজরা হেসে বলল, আমিও তো ভাইয়ার মতোই করতে চাই সবকিছু কিন্তু হয়ে যায় সব উল্টাপাল্টা। এই যেমন পরশু বিকেলে মুয়াজ কমলা গাছ থেকে কমলা পারার চেষ্টা করছিল। দেখছোই তো এই গাছের কমলাগুলো বেশ নিচুতেই ঝুলছে। কিন্তু তবুও মুয়াজের ধরাছোঁয়ার একটু বাইরেই। মুয়াজ বার বার লাফ দিয়ে চেষ্টা করছিল ধরার। আমিও পাশে বসে মনে মনে বলছিলাম, চেষ্টা চালিয়ে যাও সোনা আমার। কিন্তু অনেকবার চেষ্টা করার পরেও যখন ধরতে পারছিল না ধীরে ধীরে আঁধারে ঢেকে যাচ্ছিলো মুয়াজের চেহারা। এমন সময় ভাইয়া এসে পেছন থেকে মুয়াজকে ধরে সামান্য উঁচু করে ধরতেই মুয়াজ দুহাতে টেনে দুটা কমলা ছিঁড়ে নিলো। উফফ, সেকি খুশি বাচ্চার। আনন্দে লাফাতে লাফাতে ছুটে গেলো ভাইবোনদেরকে তার নিজ হাতে ছেঁড়া কমলা দেখাতে। ভাইয়া তখন আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, তুই বাচ্চাকে সাহায্য না করে চুপচাপ বসে আছিস কেন? দেখতেই তো পাচ্ছিলি মুয়াজ ধরতে পারছে না কমলা। এবং যতটূকুন উঁচুতে রয়েছে ওর পক্ষে ধরা সম্ভবও ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চারা কয়েকবার চেষ্টা করার পর ওদেরকে সাহায্য করতে হয়। তা না হলে চেষ্টা করে নিরাশ হবার কারণে চেষ্টা করার প্রতিই অনীহা চলে আসে মনে। আমি বললাম, তুমিই তো বলো বাচ্চাদেরকে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করতে দেয়া উচিত। ভাইয়া তখন হাসতে হাসতে বললেন, কিন্তু বাচ্চা কোন একটা কিছু করার চেষ্টা করছে। বেশ খানিকটা সফলও হয়েছে। কিন্তু তারপক্ষে একা সফল হওয়া সম্ভব নয় এমন পরিস্থিতিতে বাচ্চাকে সাহায্য করতে হবে যাতে সে কাজটা করতে পারে। তা না হলে এমন ধরণের ব্যর্থতা বাচ্চার মনে চেষ্টা করার ব্যাপারে উৎসাহকে হ্রাস করে দেয়। কথা শেষ করে ভাইজান হাসতে হাসতে চলে গেলেন। আমি আর কি বলবো তখন। বোকার মতো দাঁড়িয়ে নিজের বোকামোর কথা ভাবতে লাগলাম। এখন তুমি হেসে আর আহত করো না আমাকে। পরামর্শ দাও কিভাবে তোমার মতো মা হবো।
কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাচ্ছিলো স্বাতী মাহিরাকে ছুটে আসতে দেখে বলল, কি হয়েছে? তুমি এমন করে ছুটছো কেন?
তোমরা এখানে দাঁড়িয়ে গল্প করছো? ঐদিকে তো বিরাট কান্ড ঘটে গিয়েছে। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো মাহিরা।
কি কান্ড ঘটেছে? প্রশ্ন করলো আজরা।
মাহিরা বলল,বাচ্চারা যাতে খাবার নিয়ে ঝামেলা করতে না পারে সেজন্য ওদেরকে সাথে নিয়েই তো ওদের প্রতি বেলার খাবারের মেন্যু ঠিক করে দিয়েছিলেন আরভ ভাইয়া। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না। আজ লেগে গিয়েছে যুদ্ধ।
এত ভূমিকা কেন দিচ্ছো? কি হয়েছে বলে দিলেই তো পারছো। বললো স্বাতী।
আচ্ছা বলছি শোনো। বড় খালামণি চার্ট অনুযায়ী ই বাচ্চাদের সবাইকে নাস্তা দিয়েছিল। আজ সকালের নাস্তার মেন্যু ছিল ব্রেড, জেলি, মিল্ক, কলা আর ডিম বয়েল্ড। কিন্তু নাস্তার টেবিলে এসে বসেই নাযীব ঘোষণা দিলো আজ সে চকলেট ফ্লেক্স। নুবাইদ, নুসাইব, নাযীব, রিদান ওরা চারজন নাস্তা করতে আসার কিছুক্ষণ আগে মুসআব, নাহিব, উমায়ের আর মহিমা নাস্তা করে গিয়েছিল। নাহিব চকোফ্লেক্স খেয়েছিল সেই প্যাকেট টেবিলেই রয়ে গিয়েছিল।
সেটা দেখেই মূলত নাযীবের রুটিন ব্রেক করার ইচ্ছে জেগেছিল। কিন্তু নাযীবের ঘোষণা শুনে নুসাইব বলল, আজ আমাদের নাস্তার মেন্যুতে চকোফ্লেক্স নেই। তাই তুমি চকোফ্লেক্স খেতে পারবে না। নাযীব বলল, আমি চকোফ্লেক্সই খাবো। দাদুমণিকে বললেই আমাকে দেবে। নুবাইদ হিহি করে উঠে বলল, দাদুমণি কক্ষনো দেবে না রুটিনের বাইরের খাবার। দিলে পাপা রাগ করবে। তোমাকে তাই খেতে হবে যা আমাদের চার্টে আছে। রিদান বলল, বড়রা রাগ করবে এমন কাজ করতে হয়না। বড়দের বিরক্ত করা খুব খারাপ। দুষ্টু ছেলেরা এমন করে। তুমি কি দুষ্টু ছেলে হতে চাও নাযীব ভাইয়া? বড় দুই ভাইয়ের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে ছোটভাই ওরফে নিজের শিষ্যকেও তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেখে নাযীবের মাইন্ডে লেগে গেলো। চোখ বড় বড় করে বলল, আমি চকোফ্লেক্সই খাবো। দাদুমণি আমাকে দেবে। পাপা আমার উপর রাগ করবে না। নুবাইদ, নুসাইব আর রিদান তিনজনই তখন খুকখুক করে হাসতে শুরু করলো।
বাচ্চাদের কান্ড শুনে হেসে ফেললো স্বাতী আড় আজরা। মাহিরাও হাসতে হাসতে বলল, কিছুক্ষণ তো নাযীব মহা বিরক্তি নিয়ে তিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। এমন সময় বড় খালামণি চারজনের জন্য নাস্তা নিয়ে ঢুকলেন। বড় খালামণি সামনে নাস্তার প্লেট রাখলে নাযীব বলল, দাদুমণি এটা খাবো না। আমাকে চকোফ্লেক্স দাও। বড় খালামণি নাযীবের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, আজকের রুটিনে এগুলোই তোমাদের নাস্তা। এসবই খেতে হবে। গুড বয়ের মতো খেয়ে নাও দাদুভাই। নাযীব আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো। সবাইকে নাস্তা দিয়ে বড় খালামণি চলে যেতেই নুবাইদ দুষ্টুমি করে ভারিক্কি চালে বলল, কি বলেছিলাম না দাদুমণি কক্ষনো রুটিনের বাইরে নাস্তা দেবে না। এবার বুঝেছো তো? নুসাইব আর রিদান মুখে কিছু না বললেও নুবাইদের সাথে হাসিতে যোগ দিলো। একে তো নিজের ইচ্ছে পূরণ না হওয়া তারউপর ভাইদের খুনসুটি! এত লোড আমাদের ছোট্ট একটু নাযীব সোনা নিতে পারলো না। অনেক রাগ হয়ে গিয়েছিল সোনা বাচ্চাটার। তাই পাশ থেকে চকোফ্লেক্সের প্যাকেট টেনে নিয়ে এক মুঠ ফ্লেক্স নিয়ে নুবাইদের গায়ে ছুঁড়ে মারলো। নুসাইব প্রায় চিৎকার করে উঠে বলল, নাযীব তুমি এসব কি করছো? তোমাকে না পাপা মানা করেছে খাবার নষ্ট করতে? নাযীব তখন আরেক মুঠ ফ্লেক্স নিয়ে অর্ধেক নুসাইবের দিকে আর অর্ধেক রিদানের দিকে ছুঁড়ে দিলো। ব্যাস মূহুর্তেই পরিস্থিতি পাল্টে গেলো। রিদান সাথে সাথে উঠে ভোঁ দৌড় লাগালো। এদিকে নুবাইদ আর নাযীব একে অন্যের দিকে ফ্লেক্স ছুড়াছুঁড়ি শুরু করলো। নুসাইব দুই ভাইকে শান্ত করার চেষ্টা করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ফ্লেক্সের ছিটা খেলো। আমাদের শান্ত নুসাইব বাবুটা বিরক্ত হয়ে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ফ্লেক্সগুলোকে হাত দিয়ে জড়ো করে তুলে নিয়ে দুই ভাইয়ের দিকে ছুঁড়ে মারলো। রিদান ততক্ষণে যেয়ে আরভ ভাইয়া আর রিশান ভাইয়াকে খবর পৌঁছে দিয়েছিল। হৈচৈ শুনতে পেয়ে বড় খালামণিও কিচেন থেকে ছুটে এলেন। একদিক থেকে বড় খালামণি অন্যদিন থেকে ভাইয়ারা দুজন মোটামুটি একই সময়ে বাচ্চাদের ডাইনিং রুমে ঢুকলেন। এবং ভেতরের অবস্থা দেখে তিনজনই কয়েক মূহুর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন।
এইটুকু শুনে স্বাতী বাড়ির ভেতরে যাবার উদ্দেশ্যে ছুট লাগাতে যাচ্ছিলো কিন্তু মাহিরা স্বাতীর হাত টেনে ধরে বলল, বাকিটুকু শুনে যাও ভেতরে যাবার আগে। আরভ ভাইয়াকে দেখা মাত্রই নুসাইব ভ্যা করে কান্না করে দিয়ে বলল, পাপ্পা আমি কিছু করিনি। নুবাইদ আর নাযীব আমাকে মেরেছে চকোফ্লেক্স দিয়ে। আমি শুধু একবার মেরেছি। আই এম সরি পাপ্পা। আই এম সরি চাচ্চু। আই এম সরি দাদুমণি। আরভ ভাইয়া কাছে গিয়ে নুসাইবের মাথায় হাত বুলিয়ে হাসি মুখে বললেন, যা হবার তাতো হয়েই গিয়েছে। কান্না করে সোনা। নুবাইদ বলল, পাপা সব নাযীবের দোষ। নাযীবকে শাস্তি দাও। রিদান এক লাফে রিশান ভাইয়ার কোলে উঠে বলল, হ্যা নাযীব ভাইয়া দুষ্টু ছেলে। শাস্তি দাও। তিন ভাইয়ের কথাবার্তা শুনে নাযীব একদম চুপ হয়ে গিয়েছিল। সারাক্ষণ কটকট পটপট করতে থাকা আমাদের কামল বাবার মুখে কিছুই না বলে বড় বড় চোখ করে সবার দিকে ঘুরে ঘুরে তাকাতে লাগলো। আরভ ভাইয়া হাত বাড়িয়ে নাযীবকে কাছে টেনে নিয়ে বলল, আপনি এমন করেছেন বাবা? নাযীব মাথা নেড়ে বলল, হ্যা করেছি। আমাকে যে দুষ্টু কথা বলেছে সেজন্য করেছি। ভাইয়া তখন বললেন, আচ্ছা ঠিকআছে আগে তোমরা সবাই নিজ নিজ নাস্তা শেষ করো। এরপর সবাই মিলে এইসব কিছু পরিষ্কার করবে। তোমাদের ডাইনিং হল ঠিক যেরকম থাকে তেমন করে গুছিয়ে রেখে বাগানে আসবে। পাপা বাগানে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছি। রিশান ভাইয়াও তখন রিদানকে কোল থেকে নামিয়ে দিলেন। এরপর ভাইয়ারা দুজনই বেরিয়ে গেলেন। বড় খালামণি নিঃশব্দে নাতীদের নাস্তা করার সময় পাশে দাঁড়িয়ে রইলেন। নাস্তা শেষ করার পর বড় খালামণির ডিরেকশনে নুবাইদ, নুসাইব, নাযীব আড় রিদান মিলে সবকিছু পরিষ্কার করে গুছিয়ে এতক্ষণে মনেহয় বাগানের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে।

চলবে…

পর্ব-৫

 

সফল উদ্যোক্তা রুবিনা এখন উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছেন

সফল উদ্যোক্তা রুবিনা এখন উদ্যোক্তা তৈরির কাজ করছেন


ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা


হাঁস-মুরগী, মাছ আর কৃষি উদ্যান তৈরি করে সফলতা পেয়েছেন নাটোরের শিক্ষিত ও মার্জিত নারী উদ্যোক্তা রুবিনা। মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের সফলতায় তার মিলেছে একাধিক স্বীকৃতি। রুবিনা এখন নারী উদ্যোক্তার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের লক্ষ্যে কাজ করছেন।

অভাব অনটনের সংসারে বাবার মৃত্যু আর বিয়ের পর নিজের সংসার ভেঙ্গে গেলেও ভেঙ্গে পড়েননি রুবাইয়া রহমান রুবিনা। নাটোর সদরের চাঁদপুর গ্রামে বাবার অবর্তমানে মা আর ছোট ভাই-বোনের সংসারের হাল ধরেন রুবিনা। সেলাই করে সংগৃহিত অর্থ এবং অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানের ঋণে বাড়ির আঙ্গিনায় শুরু করেন পাঁচশ’ বাচ্চা নিয়ে ব্রয়লার মুরগীর খামার। সেখানেও দুর্ভাগ্য। মুরগী বিক্রি করে মিলেছে লোকসান।

কিন্তু হার মানার পাত্রী নন রুবিনা। তাঁর ভাষায়, ব্যবসায়ের লোকসানের মধ্যে লুকিয়ে থাকে মুনাফা। নতুন উদ্যোমে শুরু করেন খামারের কার্যক্রম। শুধু মুরগীর খামারই নয়, বাড়ী সংলগ্ন নিজেদের পুকুরে শুরু করেন মাছ চাষ, সাথে তিনশ’ হাঁসের সমন্বয়ে খামার।

অসুস্থতা নিয়েও অফুরান জীবনী শক্তির অধিকারী রুবিনা। প্রায় একই সঙ্গে মাছ আর হাঁস-মুরগীর খামারের পাশাপাশি কৃষিও শুরু করেন তিনি। পর্যায়ক্রমে জমি ইজারা নিয়ে ফলের ছয়টি বাগান তৈরী করেছেন রুবিনা। এসব বাগানে ফলছে আম, লেবু, পেয়ারা, কলা, কুল আর পেঁপে; রয়েছে মরিচ। আমের তালিকায় আছে অপ্রচলিত ও আদরনীয় গৌরমতি, ব্যানানা ম্যাঙ্গোর মত আম। নাটোর হর্টিকালচার সেন্টার ড্রাগন ফলের ৪০টি খুঁটিতে ১২০টি ড্রাগনের প্রদর্শনী খামার স্থাপন করে দিয়েছে রুবিনাকে। ফুল আসা ড্রাগনের বাগানে চলতি বছরেই ফল পাওয়া যাবে। ড্রাগনের বাগানে সাথী ফসল হিসেবে রুবিনা চাষ করেছেন মৌসুমী সব্জি।

সকল উপকরণের কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে রুবিনা প্রমাণ করেছেন-কোন কিছুই অপ্রয়োজনীয় নয়। মুরগীর বিষ্ঠা দিয়ে তৈরী করছেন উৎকৃষ্ট জৈব সার-রিং কম্পোস্ট-প্রতি মাসে যার বিক্রয় মূল্য অন্তত তিন হাজার টাকা। পাশেই উৎপাদন করছেন আরো একটি জৈব সার- ভার্মি কম্পোস্ট। বাড়ির শোভা বাড়িয়ে রেখেছে এক ঝাঁক কবুতর। এর বাণিজ্যিক মূল্যও কম নয়।

রুবিনার বিশাল এই কর্মযজ্ঞে সহযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছেন ছোট ভাই রুবেল আর পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স শেষ বর্ষে পড়–য়া ছোট বোন রিমি। সাথে দু’জন নিয়মিত কর্ম শ্রমিকসহ প্রতিদিন আরো গড়ে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করে।

রুবিনার কর্মযজ্ঞের স্বীকৃতি দিয়েছে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর। তাদের আঙ্গিনায় আই পি এম স্কুল পরিচালনা করে এলাকার ২৫ পরিবারের ৫০ সদস্যকে হাঁস-মুরগী পালন, গরু মোটাতাজাকরণ, সব্জি চাষ, বসতবাড়ীর বাগান ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিয়েছে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। রুবিনার নেতৃত্বে গঠিত চাঁদপুর নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতির ৫০ সদস্য প্রশিক্ষণ শেষে প্রত্যেকেই সমবায় বিভাগ থেকে মাত্র দুই শতাংশ সার্ভিস চার্জে গাভী পালনের ঋণ পাচ্ছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকা করে। একশ’ সদস্যের অন্যরা পর্যায়ক্রমে ঋণের অপেক্ষায় আছেন। রুবিনার গাভী খামার খুব শিগগিরই উৎপাদনে আসবে। সকলের উৎপাদন নিয়ে এই এলাকায় গড়ে তুলতে চান মিল্ক ভিটা বা প্রাণের দুগ্ধ ক্রয় কেন্দ্র।

রুবিনাকে সভানেত্রী করে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নিবন্ধনে গঠিত ইয়ুথ উইম্যান ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি সেলাই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। রুবিনাকে নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সমাজ সেবা ও প্রাণি সম্পদ বিভাগ।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের অধীন ‘বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে’র আওতায় রুবিনাকে কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রভাইডার মনোনীত করা হয়েছে। মাসে তিন হাজার টাকা সম্মানি ভাতায় কৃষিতে উদ্যোক্তা সৃষ্টির কাজ করছেন রুবিনা। এলাকার আট শতাধিক ব্যক্তিকে হর্টিকালচার সেন্টারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াও প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও হাতে কলমে শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। প্রশিক্ষণ শেষে হর্টিকালচার সেন্টারের গাছ, সার আর উপকরণ সহায়তায় গড়ে উঠেছে ৫০টি ফলের বাগান আর ৩৫টি বাড়ির বাগান। ইতোমধ্যে তাঁর হাতে তৈরি নারী উদ্যেক্তাদের মধ্যে সফল হয়েছেন হেনা বেগম, শাকিলাসহ বেশ ক’জন। হেনা বেগম বলেন, আমাদের নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে রুবিনা।

রুবিনা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে গত বছর নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কসহ গ্রামীণ সড়কের দু’কিলোমিটারে তালের গাছ লাগিয়েছেন। এবার নারকেলের চারা রোপণের পরিকল্পনা করেছেন।
নাটোর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর রুবিনাকে দিয়েছে জয়িতা পদক, ইউনিলিভার ‘তোমার স্বপ্ন কর সত্যি’ ক্যাটাগরিতে দু’লাখ টাকার প্রাইজমানী। আর সবচেয়ে সম্মানজনক হিসেবে ২০১৮ তে ঢাকার খামারবাড়ীতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের আয়োজনে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছ থেকে ‘কৃষি উন্নয়নে নারী’ পদক পেয়েছেন রুবিনা।

রুবিনা বলেন, আমার পথ চলাতেই আনন্দ। আমার পথ চলা সার্থক হবে-যদি আমি সমাজের অবহেলিত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সফল হই। আমাদের এলাকায় কৃষির মাধ্যমে সবুজ বিপ্লব এবং গাভীর মাধ্যমে শ্বেত বিপ্লব ঘটাতে চাই। ইনশাল্লাহ আমি সফল হবো।

নাটোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক স ম মেফতাহুল বারি বলেন, রুবিনাকে কমিউনিটি হর্টিকালচার প্রভাইডার মনোনীত করার পর সে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। নতুন উদ্যোক্তা বিশেষতঃ নারী উদ্যোক্তা তৈরিতে ইতোমধ্যে সে সফলতা পেয়েছে।
বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক এস এস কামরুজ্জামান বলেন, রুবিনার মেধা আর কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সহযোগিতায় রুবিনা এখন সফল উদ্যোক্তা। সারাদেশে রুবিনার মত উদ্যোক্তা তৈরি হলে দেশ হবে সমৃদ্ধ।

সুত্রঃ ফাররাজী আহম্মদ রফিক বাবন (বাসস)

 

স্বাতীর রঙধনু…৫

স্বাতীর রঙধনু…পর্ব-৫


আফরোজা হাসান


হাসলো আরভও। বাচ্চাদের যাতে ঘুমে ব্যাঘাত না ঘটে তাই দুজন ওদের রুমের কাছ থেকে সরে বাইরের বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। চেয়ার টেনে বসতে বসতে আরভ প্রশ্ন করলো, কি লেখা হচ্ছিলো এত মনোযোগের সাথে?
স্বাতী হেসে বলল, আগামী বুধবার আমাদের মহিলা প্রোগ্রামে আলোচনার বিষয়বস্তু রাখা হয়েছে শিশুদের গড়ে তোলাকে কেন্দ্র করে। নিজের কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখছিলাম বোনেদের জন্য। বোনেরা নিজ নিজ বাচ্চাদের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের বিশাল এক লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছে। প্রশ্নগুলো দেখলে চোখ কপালে উঠে যাবার দশা হয়। এক ছোট ছোট বাচ্চারা এমন জটিল জটিল অদ্ভুত প্রশ্ন কিভাবে করে চিন্তা করে অবাক হই। তবে প্রশ্নের চেয়েও কঠিন উত্তর দেয়াটা। বাচ্চারা খুব সহজেই বুঝে যাবে এমন উদাহরণ সাজিয়ে বলাটা সত্যিই বেশ কঠিন লাগে। এই যেমন এক বোনের সাত বছর বয়সী মেয়ে প্রশ্ন করেছে, নামাজ না পড়লে কেন আল্লাহ গোনাহ দেবেন? সে যদি নামাজ তাহলে আল্লাহর কি উপকার হবে?
আরভ হেসে ফেললে স্বাতীও হাসতে হাসতে বলল, বেচারি মেয়ের প্রশ্ন শুনে খুবই ঘাবড়ে গিয়েছে। এই বয়সেই এমন প্রশ্ন করছে মেয়ে। বড় হলে না জানি কি করবে ভেবে ভেবে অস্থির। এখন বোঝে না বলেই এমন প্রশ্ন করছে। বড় হলে যখন বুঝবে তখন আর এমন প্রশ্ন করবে না। ইত্যাদি ইত্যাদি বলে বোনটিকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মনেহলো উনার অস্থিরতা মোটেই কমেনি। আরেক বোন উনার মেয়েকে নিয়ে খুব সমস্যাতে আছেন। কিছুদিন আগে অসাবধানতায় গরম তেল পড়ে উনার মেয়ের হাত অনেকখানি পুড়ে গিয়েছে। স্কুলের সবাই দাগের কথা জিজ্ঞেস করে বলে বাচ্চা এখন স্কুলেই যেতে চায়না। স্কুলে যাবার সময় হলেই কান্নাকাটি শুরু করে। আমার নিজেরও এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। তাই বাচ্চাটার ভীতি , কষ্ট অনুভব করতে পেরেছি। তোমার মনেআছে নিশ্চয়ই আমার বয়স যখন আট বছর ছিল বোনেদের সাথে দুষ্টুমি করতে করতে পড়ে গিয়ে চোখের একপাশে অনেকখানি কেটে গিয়েছিল।
হ্যা মনেআছে।
এখন তেমন একটা বোঝা না গেলেও ছোটবেলায় দাগটা বেশ দৃষ্টিকটু ছিল। আমি মনখারাপ করতাম দাগের কারণে তাই বাবা বলেছিলেন ‘তুমি স্পেশাল তো তাই আল্লাহ তোমাকে চিহ্ন দিয়ে দিয়েছেন। যাতে যখনই কারো স্পেশাল মানুষের প্রয়োজন পড়বে তোমাকে সহজে খুঁজে নিতে পারবে।’ দাগের কারনে নিজেকে স্পেশাল ভাবা আমি যখন সহপাঠীদেরকে আমার সেই স্পেশাল দাগটার দিকে অবাক চোখে তাকাতে দেখলাম, প্রশ্ন করতে দেখলাম, খুব ইতিবাচক পরিবেশে বড় হওয়া আমি সেটা মেনে নিতে পারলাম না কিছুতেই। কোন ভাবেই কেউ আমাকে রাজী করাতে পারছিলো না স্কুলে যাবার জন্য। এখনো মনে আছে বাবার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করতে করতে বলেছিলাম, সবাই আমার দাগকে কেন দেখে বাবা? আমাকে স্পেশাল কেন ভাবে না? ‘সত্যিই তো দাগ কেন? স্পেশাল নয় কেন?’ বাবা তখন আমাকে কোলে করে বাগানে নিয়ে গিয়ে বসে বলেছিলেন, মানুষের স্বভাব হচ্ছে চাঁদকে দেখার আগে তার দাগকে দেখা। প্রশ্ন করেছিলাম, কেন বাবা? বাবা হেসে জবাব দিয়েছিলেন, কারণ তাদেরকে দাগকে এড়িয়ে যেতে শেখানো হয়নি। যদি শেখানো হতো তাহলে মানুষ চাঁদকেই দেখতো দাগকে নয়। একটা কথা তুমি সবসময় মনে রাখবে মা এই পৃথিবীর বেশীর ভাগ মানুষগুলোই খুব ভালো। হ্যা কিছু খারাপ মানুষ আছে কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য। আর তারা আছে বলেই তো আমরা বুঝতে পারি ভালোর মর্ম। মানুষের আরেকটা স্বভাব কি জানো মা? নতুন কিছু দেখলে মানুষ অবাক হয়। তোমার সামনে যদি একটা চড়ুই পাখি আসে যার মাথায় দুটা শিং আছে তুমি অবাক হবে না? চোখ বন্ধ করে চিন্তা করো তো একটু। আমি চিন্তা করে হেসে ফেলেছিলাম। সাথে সাথে অর্জন করেছিলাম নতুন এক শিক্ষা –“নতুন কিছু দেখলে মানুষ অবাক হতেই পারে, হাসতেই পারে এতে কষ্ট পাবার কিছু নেই। আমরা কষ্ট পাই নিজেকে দিয়ে চিন্তা করতে পারিনা বলে। মানুষ দাগ দেখে কারন তাদেরকে দাগকে এড়িয়ে যেতে শেখানো হয়নি বলে। আর এই পৃথিবীতে ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি।”
এখানে আরেকটা লক্ষণীয় বিষয় কি জানো স্বাতী? বাচ্চার মধ্যে যদি কোন খুঁত থাকে বা দোষ থাকে বাবা-মার কখনোই উচিত না কোন উপমা ব্যবহার করে তাকে সেটা বলা বা বোঝানো। বাচ্চাকে খুশি করতে গিয়ে তারা যে ভুল তথ্যটা বাচ্চাকে দেয় এক কারনে বাইরের জগতে বাচ্চা পড়তে পারে চাপের মুখে এবং তার মধ্যে জন্ম নিতে পারে হীনমন্যতা। আর হীনমন্যতা এমন এক কীট যার ফলে ধ্বসে যেতে পারে আত্মবিশ্বাস। অথচ আত্মবিশ্বাস বা আত্মমর্যাদা বোধই একজন মানুষকে মানুষ হিসেবে সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বাচতে শেখায় এবং এটাই মানুষের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তাই বাচ্চা যাতে নিজের সম্পর্কে কোন ভুল ধারণা বা ভ্রান্ত বিশ্বাস মনের মধ্যে লালন করতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে বাবা-মাকে।
জ্বি আমিও এই কথাটাই বলতে যাচ্ছিলাম। বাবা মায়েরা প্রায়ই সময় সন্তানকে আশ্বস্ত করতে গিয়ে, স্বান্ত্বনা দিতে গিয়ে এটা খেয়াল রাখতে ভুলে যান, বাইরের মানুষেরা তাদের মতো করে আগলে রাখবে না তাদের সন্তানদেরকে। মনে যাতে সামান্য ব্যথাও না পায় এই খেয়াল রেখে কথা বা আচরণ করবে না বাইরের মানুষেরা। তাই সন্তানের তরে আশ্রয় হবার সাথে সাথে তারা যাতে নিজেও নিজের আশ্রয় হতে পারে সে শিক্ষাটাও দিতে হবে। আমরা যখন ছোট ছিলাম মাসে একবার আমাদের পারিবারিক বৈঠক বসতো। সবাই সবার কাজের সমালোচনা করাই ছিল বৈঠকের উদ্দেশ্য। আমরা সবাই খোলামেলা আলোচনা করতাম কার কোন আচরণটা ঠিক হয়নি, কোন কথাটা এভাবে না বলে অন্য ভাবে বললে বেশি সুন্দর হতো। কার ব্যবহার কষ্ট দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সাব্বিরের স্বভাব ছিল সারাক্ষণ সবার খুঁত ধরা। বাবা সবাইকে বোঝাতন, যাকে দরকার ধমকে দিতেন কিন্তু এই খুঁত বিশেষজ্ঞকে কখনোই কিছু বলতন না। প্রচণ্ড বিরক্ত হয়ে একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, বাবা তুমি সাব্বিরকে কখনো কিছু কেন বলো না? বাবা হাসতে হাসতে জবাব দিয়েছিলেন, কারণ সাব্বিরের এই দোষটা তোমাদের বাকি সবাইকে সতর্ক হতে সহায়তা করছে খুব। সেদিন বাবার আলোচনা থেকে জেনেছিলাম-“সুন্দরের মাঝে যখন কোন দাগ থাকে মানুষ না চাইলেও সেদিকে নজর দিতে বাধ্য হয়। সাদার বুকে একফোঁটা কালো এমন ভাবে জ্বলজ্বল করে যে চোখে পড়েই যায়। সবসময় দাগকে দেখা মানেই সুন্দরকে অবমাননা করা নয়। তাই যারা সুন্দর মনের মানুষ তারা অন্যের দাগটাকে দেখে তাকে ছোট করার জন্য নয় বরং শুধরে দেবার জন্য। জীবনে এমন মানুষের জন্য মনের দরজা খুলে অপেক্ষা করা উচিত। কারন এরা আরো শুদ্ধ হতে আরো নিখুঁত হতে সহায়তা করে যাইহোক, এসব আলোচনা এখন থাক। এসব নিয়ে গোলটেবিল বৈঠকে বসতে হবে তোমার সাথে। বোনেরা তাদের বাচ্চাদের যে প্রশ্নগুলো দিয়েছে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করতে হবে তোমার সাথে। বাচ্চাদেরকে যে কোন কিছু সহজ ও সুন্দর করে বোঝানোতে তুমি আমার চেয়ে হাজার গুণ বেষ্ট, আলহামদুলিল্লাহ। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। তুমি রুমে যাও। আমি তোমার বাসন্তী পরীর হাত থেকে গল্পের বই নিয়ে তাকে ঘুমের রাজ্যে পারসেল করে আসি।
আরভ হেসে বলল, চলো দুজন মিলেই বাসন্তী পরীকে ঘুমের রাজ্যে পারসেল করার আয়োজন করে আসি।
স্বাতী হেসে বলল, ঠিক আছে চলো।

চলবে…

 পর্ব-৪

 

বাদলা দিনে মনে পড়ে

বাদলা দিনে মনে পড়ে


ফাতিমা মারিয়াম


আজ ছোটবেলার কথা ভীষণ মনে পড়ছে।

সেই বৃষ্টির দিনগুলির কথা। ঐ যে, যেদিন সকাল থেকেই আকাশ মুখ কালো রাখত সেদিনের কথা। একসময় সেই গোমড়া মুখো আকাশ থেকে ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হত।

আহা! কী আনন্দ! টিনের চালে বৃষ্টির একটানা ঘুঙুর পায়ে রুমঝুম রুমঝুম নৃত্য।

আম্মার চোখ ফাঁকি দিয়ে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দকে এখন আর কিছুর সাথেই তুলনা করতে পারিনা। মধ্যাহ্নভোজনের পর কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতাম। হালকা হালকা শীতের একটা আমেজ থাকত। হয়ত অনেকক্ষণ ধরে বৃষ্টিতে ভেজার জন্যই এই শীত শীত ভাবটা আসত।

বিকেলবেলা বৃষ্টির পানি ভর্তি উঠানে পা ডুবিয়ে হাঁটতাম। আম্মার বকুনিতে কান ঝালাপালা। কিন্তু সেই বকুনিকে উপেক্ষা করেই সময়টুকু পার করতাম। আমি কাগজের নৌকা বানাতে পারতাম না! তাই সেই আনন্দ কখনো নিতে পারিনি। আশেপাশের বাসার অন্য বিচ্ছুগুলোকে দেখতাম কাগজের নৌকা বানিয়ে পানিতে ভাসাত। আমি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখতাম!

সন্ধ্যার আগে আম্মা কাঁঠালের বিচি বা শিমের বিচি ভেজে দিত। অথবা কখনো কখনো পিঁয়াজু। মাঝে মাঝে চাল ভেজে কাঁচামরিচ, পিয়াজ আর সরিষার তেল দিয়ে মাখিয়ে দিত অথবা ঝালমুড়ি। সেই মজাদার খাদ্যের কাছে চিকেন ফ্রাই বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই কিছুইনা।

বর্ষাকালে রাতেও এই অবিরাম বর্ষণ চলত। বাজের শব্দে ভীষণ চমকে উঠতাম। দিনের চেয়ে রাতের বৃষ্টির শব্দ একটু রকম ছিল! কেমন একটা ভয়ভয় ভাব। একসময় বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে কানে সয়ে যেত। তারপর কখন যে ঘুম এসে যেত!

ছোটবেলার মজার ঘটনা লিখব বলে লেখাটা শুরু করেছিলাম। কিন্তু লিখতে লিখতে মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল! আসলে সবাই এক সময় ছোটবেলাকে খুব বেশি মাত্রায় ফিরে পেতে চায়, সুন্দর, স্বর্ণালী সেই সময়ে ফিরে যেতে চায়! কিন্তু তা তো আর সম্ভব না! জীবন তার আপন গতিতেই বয়ে যায়…যাবে।

‘ছেলেবেলার দিন ফেলে এসে
সবাই আমার মত বড় হয়ে যায়
জানিনা ক’জনে আমার মত
মিষ্টি সে পিছু ডাক শুনতে যে পায়………

 

গরমের শরবত…


রেসিপি


বেলের শরবত
উপকরণ:

পাকা বেল ১টি। ঠাণ্ডা পানি ৪ কাপ। গুঁড়া দুধ আধা কাপ। চিনি প্রয়োজন মতো। বরফ-কুচি পরিমাণ মতো।

পদ্ধতি:

বেলের দানা ফেলে চামচ দিয়ে শাঁস বের করে নিন। পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। নরম হয়ে আসলে চালনি দিয়ে চেলে নিন।

এরপর এতে চিনি ও দুধ মেশান। বেশি ঘন হয়ে গেলে আরও কিছুটা পানি মিশিয়ে নিন। বরফকুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

কাচা আমের শরবত
উপকরনঃ

আম-১টা, চিনি-৫-৬ চামচ, গোল মরিচ-১ চামচ, বীট লবন-১ চামচ, কাচা মরিচ-2, লবন-প্রয়োজন মত, পানি-আড়াই কাপ

প্রনালীঃ

কাচা আম কুচি কুচি করে কেটে উপকরন গুলোর সাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

বাঙ্গির শরবত
উপকরণ :

বাঙ্গির রস ১ কাপ, চিনি ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা চামচ, বরফ কিউব পরিমাণমতো, লবণ এক চিমটি ( না দিলেও হয়)।

প্রণালী :

বাঙ্গি কুচি কুচি টুকরো করুন। বড় বাটিতে বাঙ্গির সঙ্গে চিনি মিশিয়ে রেখে দিন বেশ কিছুণ। লেবুর রস ও বরফ মিশিয়ে রাখুন আরও কিছুণ। বাঙ্গি থেকে পানি বের হয়ে শরবত হবে। এটা ছেকে ঢেলে নিন গ্লাসে। লবণ মেশান। বরফ কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।

 

সুস্থ দাম্পত্য টিপস

সুস্থ দাম্পত্য টিপস


দাম্পত্য


দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক উপর নির্ভর করে, সুস্থ দাম্পত্য জীবন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে। এবং এর বিপরীতে গেলে ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে।

*পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত ও সুখীবোধ

ব্যক্তি তার প্রতিদিনকার ঘটনাবলিতে পরিতৃপ্ত। স্বাভাবিকভাবেই উভয়েই সন্তুষ্ট ফলে মানসিক চাপ(stresses) গুলোর মুখোমুখি হলেও মোকাবেলা করতে পারেন। নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধান করার কৌশল বুঝতে পারেন এবং রোজকার দিনের কাজ গুলো ঠিকভাবে গুছিয়ে করতে পারেন।

*পরস্পরের কাছে নিরাপদ এবং আরামদায়ক বোধ করবে

শুধু নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেওয়া ছাড়াও অন্যের ভালো থাকাটাকে নিশ্চিত করেন ফলে নিরাপদ এবং আরামদায়ক সম্পর্কের জন্ম নেয়।

*পরস্পরের প্রতি আচরণ সম্মানপূর্ণ হবে

সন্মান হলো সন্মানিত ব্যক্তির চাদর। সুতরাং পরস্পরের বন্ধন তখনই সবচেয়ে বেশি মজবুত হয় যখন সন্মান সহিত আচরণ করেন পরস্পর।

*নিজেদের সঙ্গে কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে

কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে বলেই পরস্পরের জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। (যেমন: বন্ধুবান্ধব, ভালো লাগার বিষয়, পরিবার, জীবন নিয়ে ভাবনা, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি)।

*দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা/বিশ্বাস থাকবে

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও পাশাপাশি পরিবার ও পরিবারের বাইরে সমাজ কমিউনিটি ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে অবদান গড়বে।

*দাম্পত্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদির ভিত্তিতে পরস্পরকে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

সুত্রঃ ইন্টারনেট৷

 

আমার বাবা…

আমার বাবা…


সাকলাইন রাসেল


ছেলে মেয়েদের সামনে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে ভালোবাসেন…তাঁর রাশভারী রূপ দেখে অভ্যস্ত আমি…ছোট বেলা থেকেই তাঁকে দেখলে ভয় পেতাম…আমি তখন রংপুরে প্রাইমারীতে পড়তাম…বাবা ঢাকায় থাকতেন…অনেক দিন পর পর রংপুর যেতেন…কবে রংপুর আসবেন সে দিনক্ষণ আমি লিখে রাখতাম…প্রচন্ড ডানপিটে ছিলাম..বাবার আগমন তাই আমার কাছে ছিল আতংকের…ভয়ের…পরাধীনতার…
কারণ, বাবা এলেই আমাকে নিদির্স্ট সময়ে উঠতে হবে…পড়তে হবে…ঘরে ফিরতে হবে…খেলা থেকে দূরে থাকতে হবে…তাঁর পছন্দের মেন্যু খেতে হবে (কাঁচা কলা, সবুজ শাক-সবজী)…সকালে সূর্য উঠার আগে বাবার পিছে পিছে ব্যায়ামের জন্য দৌড়াতে হবে…একটু এদিক সেদিক হলে পিটুনি থেকে নিস্তার নেই…

আমাদের গ্রামের বাড়ীটা থেকে..
দু’দিকে দু’টো রাস্তা চলে গেছে…বাবা যতবারই আসতেন সে রাস্তার মাঝখানে আড়াআড়ি একটা দাগ টেনে দিতেন…যাতে আমি সে দাগ পার হয়ে কোথাও খেলতে না যাই… স্পষ্ট মনে আছে ক্লাশ টু তে পুড়ুয়া সেই দূরন্ত এই আমি… সে দাগের সামনে সারাদিন বসে থাকতাম…চোখের জ্বলে গরম বালুগুলো ঠান্ডা করে দিলেও কখনো সে দাগ পার হতাম না… আমার ছোট চাচা মাঝে মধ্যে কোলে করে সে দাগ পার করিয়ে দিতেন…সাথে সাথেই আমি ভোঁ দৌড়…সেই মুহুর্তে যেন পৃথিবীর সবচেয়ে স্বাধীন প্রাণী আমি…
বাবা যে কয়দিন থাকতেন…একদিনে কত ঘন্টা… কত সেকেন্ড … আমি হার্টবিট গুণেই দিব্যি বলে দিতে পারতাম…যেদিন চলে যেতেন সেদিনই আবার পতাকা উড়িয়ে দিতাম…স্বাধীনতার পতাকা…মুক্তির পতাকা!
.বাবা ছাড়া আর কাউকে কোনদিনও ভয় পেতাম না…সারাদিন খেলাধুলা শেষে ধুলিমাখা শরীরে ঘরে ফিরতাম…মা কিছু বোঝার আগেই গায়ে তেল মেখে চকচকে বানিয়ে ফেলতাম…উদ্দেশ্যে অবেলায় গোসল থেকে নিজেকে বাঁচানো!

এভাবেই গ্রামের পাঠ চুকিয়ে একদিন শহরে পা রাখলাম…সরাসরি ঢাকা শহরে…রংপুর শহর দেখার আগে আমি ঢাকা শহর দেখলাম…ক্লাস সিক্সে আমি…বাসা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল.. প্রথম দিন বাবা সাথে নিয়ে স্কুলে গেলেন…যাওয়া আসার পথে রাস্তায় বিভিন্ন দোকান চিহ্ন হিসেবে মনে রাখতে বললেন…এবং জানিয়ে দিলেন পরের দিন থেকে একা একাই স্কুলে যেতে হবে…কেউ সঙ্গে আসবে না!
সত্যিই আর কোন দিন আসেননি… ১০ দিন পরেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা…গ্রামের স্কুলে সর্বদা ২য়/৩য় হতাম…কিন্তু এখানে এসে একেবারেই হোঁচট খেলাম…অংকে পেলাম ৩০, ইংরেজিতে ২২…গ্রামে তো লিখিত পরীক্ষা কি জিনিস তাই জানতাম না… এখানে এসে বুঝলাম পড়ালেখা কারে বলে…!
রেজাল্ট দেখে বাবা মুখে কিছু বললেন না…যা বলার হাত দিয়ে বললেন…মাথা ছাড়া দেহের সব জায়গায় দাপটের সাথে লাঠির আগায় বাবার নাম লিখে দিলেন…ভাত বন্ধ করার হুমকি দিলেন…গ্রামে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিলেন…এ হুমকির আওতায় আমার মাও পড়ে গেলেন…কারণ আমার ভাল ফলাফলে তাঁর হক থাকুক আর না থাকুক খারাপ ফলের পুরো ভাগিদার মা…কদিন পর ডেকে বললেন তুমি যদি ক্লাস সেভেনে ‘এ’ সেকশনে যেতে পার…তবে যা চাও তাই দিব…
আমি একটা হাতঘড়ি চাইলাম…ডিজিটাল হাতঘড়ি…ওটাই তখন একমাত্র আরাধ্য।
আমি তখন ‘এফ’ সেকশনে…এতো পিছনে থেকে সরাসরি ‘এ’ সেকশনে যেতে পারা সত্যিই কল্পনাতীত…তবুও উপর ওয়ালার ইচ্ছায় সেভেনে উঠলাম…এবং ‘এ’ সেকশনে…হাত ঘড়িও পেলাম!
তবে,
বাবা খুশী হয়েছেন কিনা বোঝা গেল না… কারণ, কোন বিষয়ে গালমন্দ না করার অর্থ হল বাবা সে বিষয়ে আমার উপর সন্তুষ্ট আছেন…মুখ ফুটে কখনো প্রশংসা করতেন না তিনি…ক্লাশ নাইন পর্যন্ত আমি কখনো প্রাইভেট পড়িনি…সত্যি বলতে প্রাইভেট পড়ানোর সামর্থও ছিল না বাবার…নিজেই পড়াতেন…পড়ানোটা ছিল মূলত পাটীগনিত কেন্দ্রিক!

আমি যদি কখনো পড়ালেখায় ফাঁকিবাজি করতাম…বেশি খেলাধুলা করতাম… রেজাল্ট খারাপ করতাম…মায়ের কথা না শুনতাম… তবে, বাবা নগদ আমাকে কিছু বলতেন না… হটাৎ একদিন ডাক পড়ত…..হুকুম আসত পাটীগণিত নিয়ে বসার জন্য…বাবা জানত, আমি পাটীগণিতে খুব দূর্বল… তাই রাগ হলে পাটীগণিত নিয়ে বসতে বলতেন… এবং যথারীতি আমি অংকের মাঝপথে গিয়ে ভয়ে…টেনশনে..খেই হারিয়ে ফেলতাম…অঙ্কের শেষটা আর মিলাতে পারতাম না…ঠিক তখনই বাবা কথা বলা শুরু করতেন… মুখে না, হাতে…কখনো খালি হাতে…কখনো পায়ে…কখনো স্কেল…কখনো পর্দার লাঠি… হাতের কাছে যা পাওয়া যেত তাই দিয়ে… এরপর শুরু হত জেরা…অমুক দিন কেন পড়ালেখা শেষ না করে খেলতে গেছো…অমুক বিষয়ে কেন এতো কম মার্কস পেয়েছো…অমুকের সাথে কেন ঐদিন মারামারি করেছো…পাশের বাসায় কেন টিভি দেখতে গেছ…!
উল্লেখ্য, আমার জন্য টিভি দেখা ছিল নিষিদ্ধ… কারণ, আমাকে বোঝানো হয়েছিল টিভিতে পড়ালেখার ক্ষতি হয়…ভাল রেজাল্ট করা যায় না ..তবে, ম্যগগাইভার সিরিয়াল দেখার অনুমতি ছিল…এবং যেদিন ম্যাগগাইভার ছিল সেদিন আমি সারাদিন খুব জোরে শব্দ করে পড়তাম…উদ্দেশ্য, বাবাকে শোনানো যে আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছি…এক সময় মা বাবার কাছে গিয়ে বলতেন…ছেলেটা তো সারাদিন অনেক পড়েছে…ও একটু ম্যাগগাইভারটা দেখে আসুক…দুই একটা কথা শুনিয়ে বাবা অনুমতি দিয়ে দিতেন… সাথে সাথে পাশের বাসায় ভোঁ দৌড়!

ক্লাশ নাইনে উঠার পর বাবা বাসায় প্রথম টিভি নিয়ে আসেন… ১৭ ইঞ্চি সাদা কালো টিভি টিভি….. কারণ, তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী আমি ক্লাশ নাইনে এ সেকশনে প্রথম ১০ জনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছি… এটাই তাঁর কেনা প্রথম টিভি…এবং আজ পর্যন্ত আর কোন টিভি কিনেন নাই তিনি…টিভি পেয়ে কি যে আনন্দিত হলাম…
আমার বন্ধুরা সারাদিনে টিভিতে কত অনুষ্ঠান দেখে… আর আমি সারাদিন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মেরে শুধু টিভিটাকেই দেখতাম…কারণ, ঘরে টিভি থাকলেও সেটা ছাড়ার সুযোগ ছিল না আমার…গলা ছেড়ে পড়ালেখার ব্যাপক শো ডাউনের পর… মাঝে মধ্যে পাটিগণিতের বৈতরণী পার হয়ে তবেই সুযোগ আসত টিভি দেখার…বাবার অনুমতি স্বাপেক্ষে মা টিভি ছেড়ে দিলে তবেই সুযোগ পেতাম…তবে, সেন্সর বোর্ডের মত বাবার সেন্সর করে দেয়া অনুষ্ঠানই কেবল দেখার সৌভাগ্য হত… বলে রাখা ভালো, আমি ইন্টারমেডিয়েট ২য় বর্ষে এসে প্রথম কারো অনুমতি ছাড়াই নিজে নিজে দুঃসাহস দেখিয়ে টিভি অন করি..এবং সেই থেকে একাই ছাড়ছি!
ঈদ আসার ঠিক আগেই বাবা পাটীগণিত নিয়ে বসতে বলতেন… সাথে সাথেই শুরু হত রেজাল্টের হিসাব নিকাশ…সর্বশেষ উত্তম মধ্যম…ফলে ‘ঈদে জামা চাই’ এমন বাক্য উচ্চারণ করার সাহস আর থাকত না…কোন রকম ঈদটা পার করতে পারলেই খুশী।
বলে রাখা ভাল ঘুমের ব্যাপারে আমি ছোট বেলার সেই রূপ এখনো ধরে রেখেছি…একবার ঘুমালে পুরো পৃথিবীর আর খবর থাকেনা…তবে, সকালে উঠেই খবর শোনাতেন বাবা…স্কুলে যাবার আগে প্রায় সময় ঘুম ভাঙত বাবার ডাকে…সে ডাক প্রথমে শুরু হত মুখে…তারপর হাতে…কখনো কখনো বিছানায় চোখ খুলেই দেখতাম বাবা ঝাড়ু দিচ্ছেন…উল্টো দিকে…ঝাড়ুর আগা ধরে গোড়া দিয়ে…এবং গোড়াটার পুরোটাই আমার দেহে পড়ছে!

এভাবেই বেড়ে উঠা আমার…আমার একটা দাঁতও পড়ে গিয়েছিল বাবার ধমকে…এমনিতেই সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরী করেছি। সময় নিয়ে ব্রাশ করছিলাম…ঠিক সময় নিয়ে না। ইচ্ছা করে। যতক্ষণ ব্রাশ ততোক্ষণই পড়ালেখা থেকে মুক্তি।
হটাৎ গর্জে উঠল বাবা…সাথে সাথে হাত কেঁপে উঠে ব্রাশের ধাক্কা লাগল নড়বড় দুধ দাঁতটার গোড়ায়…ব্যাস, দাঁতটার অগ্রিম অপমৃত্যু ঘটল।

এহেন বন্দী জীবনে আমি প্রতিদিন প্রতি সেকেন্ডে ফিরে যেতাম আমার রংপুরে…আমার শৈশবে। শৈশবে বসেই খুঁজে বেড়াতাম আরেক শৈশবকে…আমার ফেলে আসা রংপুরের রূপসী গ্রামের সেই মেঠোপথ…ঘুড়ি উড়ানোর সেই চওড়া মাঠ…সেই বিস্তীর্ণ ফসলের গালিচা…ধানক্ষেতের পানিতে নড়ে উঠা সেই চতুর মাছের আনাগোনা…বর্ষা এলে টানা জালে তুলে আনা মাছের আহাজারী…ফসলের মাঠের আইল ধরে বেয়ে চলা সেই স্কুলের মেঠোপথ…ধুলোমাখা গ্রাম্য শিশুর পুকুরে ডুবখেলা…!!
মনটাকে রংপুরে রেখে দেহটাকে ঢাকার মত করে লালল করতে লাগলাম…বাবার মত করে…তাঁর ইচ্ছাকে কর্তব্য মনে করে…তাঁর ইচ্ছাকে পূরণ করতেই পা রাখলাম একসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের চত্বরে…ঢাকা ভার্সিটিতে বায়োকেমিস্ট্রিতে চান্স পেয়েছিলাম…জাহাঙ্গীর নগর ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসীতে…কিন্তু বাবার ইচ্ছা…ডাক্তারী পড়তে হবে…কারণ, ছোট বেলায় অর্থাভাবে তিনি ডাক্তার হতে পারেননি…তাঁর বন্ধুরা পেরেছেন…তাই তাঁর অপূর্ণতা পূরণ করার দায় এলো আমার ঘাড়ে…
ডাক্তার হলাম…বলতে গেলে বাবার দৃষ্টি দিয়েই দেখলাম এক মেয়েকে… একদিন সেই মেয়েটিই ঘরে এলো বাবার বউমা হয়ে।

ব্যাস, এগিয়ে চলার গল্পটা এখানে এসে নতুন মোড় নিল! আমার কষ্টের সব পর্দা ভেদ করে একটা আনন্দ ভোমরা বের হয়ে এলো…নাম রাখা হলো আরিজ!
আরিজের জন্মদিনে আমারও জন্ম হল। এ জন্ম বাবা হিসেবে। অনেকে জিজ্ঞেস করে বাবা হিসেবে প্রথম অনুভূতি কি?
আমি বলি, যেদিন বাবা হলাম সেদিনই প্রথম বুঝলাম বাবা কি জিনিস। নিজ বাবার প্রতি বাড়তি টানটা সেদিনই প্রথম অনুভব করলাম।
আরিজই প্রথম শেখালো বাবা কি, বাবার স্নেহ কি, সন্তানের প্রতি বাবার মমত্ব কি!
দিন যাচ্ছে, আরিজ বড় হচ্ছে। শক্ত হচ্ছে ওর চাওয়াগুলো…দৃঢ় হচ্ছে ওর অস্থিমজ্জা, ওর মনটা।
ধীরে ধীরে দূর্বল হচ্ছে শুধু আমার বাবাটা। আগের মত রাগেনা। ধমক দেয় না। বকা দেয় না। পথ দেখায় না। ভালমন্দ শেখায় না। সবক্ষেত্রে একটা সমীহ সমীহ ভাব। নিজ ছেলের জন্য কোথায় একটা ভয় ভয় ভাব আগলে রাখে সে।
মাঝেমধ্যে যখন খেই হারিয়ে ফেলি…শত মানুষের ভীড়ে একা হয়ে পড়ি…খুব রাগ হয় বাবার উপর!
মানুষটা এমন কেন! বয়স হয়েছে। বাবা হয়েছি। জীবন যুদ্ধে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েছি। কিন্তু বাবার সাথে বয়সের পার্থক্যটা সেই এক জায়গাতেই যে থেমে আছে!
এখন উল্টো আমি রাগ হই…অভিমানে কড়া ভাষা গুলোও বের হয়ে যায়।
আশ্চর্য! বাবা মুচকি হাসে। রিয়্যাক্ট করেনা। আগের মত রাগও করেনা। অভিমানও না। আমার জীবনের প্রথম নায়কটা কেমন জানি চুপসে গেছে। প্রতিবাদ নেই বললেই চলে। শান্ত একটা পুকুরের মত। অনেক পানি কিন্তু সেখানে জোয়ার নেই। অনেক গভীরতা কিন্তু ঢেউ নেই। কিন্তু আমার যে এরকম বাবাকে ভাল্লাগেনা। এখনো মন চায় বাবা আমাকে ধমক দিক। বলুক, এটা ভাল ওটা খারাপ। আগলে রাখুক সর্বদা ছায়া হয়ে।
হালের ফ্যাসবুক ফ্যাশন এখনো প্রবেশ করেনি আমার দেহ মনে। তাই বলব না যে আমার বাবা শ্রেষ্ঠ বাবা। কোনদিন সেটা ভাবিও নাই। ছোটবেলায় সব সময় মনে হত আমার বাবা সবচেয়ে পঁচা বাবা। অমুকের বাবা কত ভাল! কত কি কিনে দেয়! মারে না। ধমকায় না। যা চায় সব দেয়। কিন্তু আমার বাবা কখনো দেয়না।
আজ কাকতালীয়ভাবে একটা ঘটনা ঘটেছে। বাবার খুব স্বপ্ন দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু সময় কিংবা সামর্থ কোনটাই তার পক্ষে ছিল না। তাই ভাবলাম হোক না একটা স্বপ্নপুরণ ছেলের হাত ধরে!
সকালেই বললাম, সিংগাপুর যাবা নাকি?
বাবা যেন বিনামেঘে তুফানের আওয়াজ পেল।
এক সেকেন্ড সময় নিল না রাজী হতে। ছোট্ট বেলার সেই অবুঝ সাকলায়েনের মত। কখন বাবা এসে বলবে, যাও ম্যাগগাইভার দেখে এসো!

আমি অবশ্য একেবারের জন্যেও ভাবিনাই বাবা যাবেন। কারণ তাঁর তো পাসপোর্টই নাই। বাবা অবাক করে দিয়ে বললেন, তার পাসপোর্ট অনেক আগেই করা। চোখটা ছলছল করে উঠল। বিদেশ কোনদিন না গেলেও পাসপোর্ট ঠিকই করে রেখেছে!
সময় পক্ষে থাকলে শীঘ্রই বাবাকে নিয়ে সিংগাপুর যাচ্ছি। নো শপিং, নো এ্যামিউজমেন্ট পার্ক। শুধু রাস্তা আর ফুটপাত ধরে বাবা-ছেলে ঘুরে বেড়াব। হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের পাড়ে গিয়ে বসব।
বড় ঢেউটা যখন পায়ের উপর এসে আঁছড়ে পড়বে তখন বাবাকে বলব-
বাবা তোমার মনে আছে, বিয়ের আগের দিন আমাকে ডেকে একটা জোকস শুনিয়েছিলে!

বাবা ভুলে যাওয়ার ভান করবে। আমি জোকসটা বলা শুরু করব।
‘সাকলায়েন, বিবাহিত পুরুষ আর অবিবাহিত প্রেমিক পুরুষের মধ্যে পার্থক্য জানো?
না তো..কেন?
শোন,
অবিবাহিত প্রেমিক…সাগর পাড়ে প্রেমিকার পাশে বসে…সাগরের উত্তাল ঢেউ দুচোখ ভরে দেখে…সেই ঢেউয়ে পুলকিত হয়! আর বিবাহিত পুরুষ সেই ঢেউয়ে হাবুডুবু খেতে থাকে!’

তোমার কথাই সত্যি বাবা। জীবন সত্যি একটা যুদ্ধের নাম। এ যুদ্ধে কখনো ডুবি। কখনো ভাসি। ছোট্টবেলায় শুধু একটা স্বপ্নই দেখতাম। কবে বড় হব। কবে বাবাকেও ছাড়িয়ে যাব। এতোটাই ছাড়িয়ে যাব যে বাবা শাসন করার সাহস হারিয়ে ফেলবে! বড় হয়েছি অনেক বাবা। কিন্তু মনে হয় ঐ দিনগুলোতেই ভাল ছিলাম। মাঝেমধ্যে যখন ভালো লাগাগুলোকে হারিয়ে ফেলি। সব আনন্দগুলো যখন একেবারে হারিয়ে যায় তখন পিছনে ফিরে তাকাই। বাবার সেই শাসনের দিনগুলো ফিরিয়ে আনি। জাবর কাটি। খারাপ লাগাটা মুহুর্তেই আনন্দে রূপ নেয়।

জীবনটাকে মাঝেমধ্যে তাই ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারের মতো মনে হয়। যখন মনে হয় চেহারায় আর আগের জৌলুস নাই, তখন খুঁজে খুঁজে পুরাতন ছবিগুলো বের করি। সবচেয়ে সুন্দরটাকে আপলোড দেই। মানুষ বাহবা দেয়। আমি কৃত্রিম সুখে গা ভাসাই। ভালো থাকি।
আমার বাবাকে সত্যিই কখনো মনে হয়নি শ্রেষ্ঠ বাবা। কিন্তু আজ আমি নিশ্চিত বলতে পারি আমার বাবা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতম দান। ভালো থেকো বাবা আমার আরিজের সমান আয়ু নিয়ে। আমি ভাগ্যবান বাবা। আমার একজন বাবা আছে। কতজন তো প্রাণ খুলে কাউকে বাবা ডাকার যোগ্যতাওটা হারিয়ে ফেলেছে। চীরতরে! তবুও… তোমার জন্যে খুব হিংসে হয় বাবা! খুব হিংসে। তোমার মত আমার যে একটা সাকলায়েন নেই বাবা।

 

সাতক্ষীরায় ঢাবি ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ

সাতক্ষীরায় ঢাবি ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ ও ব্লাকমেইল করেছে আব্দুল হাই ওরফে রাজু (২৬) নামের এক যুবক। ওই ছাত্রীর ল্যাপটপসহ কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে পুলিশ রাজুকে গ্রেফতার করেছে। রাজু কালীগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের বাজার গ্রাম রহিমপুর এলাকার শেখ রওশান আলীর ছেলে।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ঐ মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। পাঁচ মাস আগে ওই ছাত্রীর ক্যানসারে আক্রান্ত বন্ধুর জন্য তহবিল সংগ্রহের সূত্র ধরে রাজুর সাথে তার পরিচয় হয়। সেই সুযোগে গত ১৪ এপ্রিল ওই ছাত্রী ঢাকা থেকে বাসযোগে বাড়ি আসার পথিমধ্যে রাজু ওই ছাত্রীকে বাস থেকে নামিয়ে নলতায় তার এক বোনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রাজু ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে রাজি না হওয়ায় তাকে মারধর করে। একপর্যায়ে রাত ১০টার দিকে রাজু ধারালো চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে তাকে ধর্ষণ করে এবং মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। পরের দিন ওই ছাত্রী বাড়িতে আসার পর রাজু তাকে মোবাইলে ফোন করে হুমকি দিয়ে বলে এই ব্যাপারে কাউকে কিছু বললে ভিডিওটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেবে। মান-সম্মানের ভয়ে ওই ছাত্রী এ ঘটনা এতদিন চেপে রেখেছিল। থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এস এম আজিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুলিশ ইতোমধ্যে অভিযুক্ত রাজুকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ল্যাপটপটি উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবার আসামিকে আদালতের মাধ্যমে জেলা হাজতে পাঠানো হয়েছে।
সুত্রঃ ইত্তেফাক।

 

আমার কাছে বাবার দায়িত্ব


মিথিলা ফেরদৌস


বাবা দিবস মাথায় রেখেই আব্বাকে ফোন করলাম।আমার বাবার অবশ্য দিবস নিয়া তেমন কোনও মাথা ব্যথা কখনওই ছিলনা।এমনকি সে আমার জন্মদিবসও মনে রাখতে পারেনা।কিন্তু আজ ফোন করার পর মনে হলো,সে অপেক্ষাই করছিল,আমার ফোনের জন্যে।

ঃআজ বাবা দিবস!
ঃহ্যা জানি তো!
ঃতুমি “বাবা দিবস” জানো!!
ঃবাবা হিসেবে কোনও দায়িত্ব তোমার জন্যে কখনও পালন করিনি।
ঃকথা সত্য।পালন করা উচিৎ ছিল।এখন আর কি করবা?
ওপাশে মন খারাপের নিঃশব্দতা।আমি বলতে থাকি।
ঃযা করোনি, করোনি,এখন করা শুরু করো।ঠিকঠাক মতো ঔষধ খেতে হবে,সুস্থ হতে হবে আরও বহুদিন দায়িত্ব নিয়ে সুস্থ থাকতে হবে,তোমার নাতির মানুষ হওয়া দেখতে হবে।আপাতত সুস্থ থাকাটাই আমার জন্যে তোমার দায়িত্ব।যেহেতু আগে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করছো।ঠিক আছে?
ঃঠিক আছে।
ঃতুমি কি কখনও আমাকে আদর করোনি?
ঃআদরই করছি,আর কিছু তো করিনি।
ঃবাবারা আদর ছাড়া আর কি কি দায়িত্ব পালন করে?
ঃতোমার মা তোমার জন্যে যে কষ্ট করছে তার একটুও আমি করিনি মা।
ঃতাও ঠিক।কিন্তু তুমি কি আমাকে খাওয়াওনি,পড়াওনি?
ঃকরছি।সেইটা খুব ভালভাবে করতে পারিনি।
ঃআমারতো কখনও এমন মনে হয় নাই।কারো চেয়ে কম আয়েশ করে আমি মানুষ হইছি! আমার কোনও আবদার অপূর্ন ছিল বলে আমার তো মনে পরেনা।বরং অনেকের চেয়ে অনেক কিছুই আমাদের ছিল,যা অন্যদের ছিল না, সেই আমলে।তুমি খেয়ালি ছিলে।আমার খেয়ালি বাবাই পছন্দ।হুট করে ভাল চাকরী ছেড়ে দিলে।বাপের টাকায় বানিজ্যে মনোনিবেশ করলে।সেইটায় মাঝে মাঝে চাংগা ভাব আবার মাঝে মাঝে অভাব।মোটকথা ধনী, গরীবি সব কিছুর সাথেই আমাকে অভ্যস্ত করেছো।তাহলে শুধু একসাইড ভাবো কেন?আমাকে সময় দিয়েছো।পরিক্ষার আগে বসে,তোমার ফাকিবাজ মেয়েকে রচনা,চিঠি সব ছোট করে দিতে,গ্রামার পড়াতে।ইংলিশে খুব ভাল মার্কস পেতাম তোমার জন্যে।এই যে বই পড়া অভ্যাস তা গড়ে উঠার পিছনে তোমার আর আম্মার দুইজনের অবদান ছিল।বই পড়ার অভ্যাসটাই আমার বেজ দাড় করিয়ে দিয়েছে।পড়াশুনায় ভাল হতে গেলে শুধু পাঠ্য পুস্তক বেশি পড়তে হয় না।আনন্দের মাধ্যমে অন্য বই পড়লেও সেইসব বুদ্ধিমত্তা তীক্ষ্ণ করে।তুমি সেই বেজ দাড় করিয়ে দিয়েছো।

আব্বা কথা বলতে পারেনা,শুধু বলে,
ঃআশু(তার গুনধর নাতি) কি করে?
ঃসে প্লান করছে তোমার সাদা চুল সেলুনে গিয়ে রঙ করে আনবে।সে যখন বড় হয়ে গাড়ি কিনবে,সেই গাড়ি তোমাকেই চালাতে হবে আব্বা।তোমাকে ওর গাড়ি চালানো পর্যন্ত সুস্থ থাকতে হবে।
ঃআচ্ছা মা ফোন রাখি।
ঃফোন রাখবা কেন?তুমি কেমন করে খারাপ বাবা হইলা,সেই হিসাবটা তো হওয়া দরকার তাই না?আমার দৃষ্টিতে যে বাবা তার ছেলে মেয়ে রেখে আরেকটা বিয়ে করে,সেই খারাপ বাবা!আমার বাবা সেই কষ্ট তো আমাকে দেয় নাই।তাহলে সে খারাপ বাবা হয় কি ভাবে !
ঃতোমার মত মেয়ে রেখে কোনও বাবা কি এমন করতে পারে মা?
ঃপারে আব্বা,অনেক বাবাই করে।ছেলে মেয়ে দেখে না।তোমাকে কখনও নিজের শখের কিছুই কিনতে দেখিনি।একটা ঈদ যায় নাই,আমি জামা নিই নাই এমন।অথচ তোমাকে কখনও ঈদে কিছুই নিতে দেখিনি।সেই না দেখা আমার প্রতি ঈদ আমি তোমার জন্যে ঈদে তোমার জামা কিনে কি শান্তি পাই তোমাকে কখনও বোঝাতে পারবো না।আমার ছেলে যখন তোমার জন্যে জুতা পছন্দ করে,তোমার মেয়েজামাই যখন পাঞ্জাবি কোনটা কিনবে কোনটা কিনবে না কুলকিনারা পায় না।সেই সুখগুলা আমি কখনও তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।তুমি শুধু সুস্থ থাকো আব্বা,এর চেয়ে বড় দায়িত্ব একটা বাবার জন্যে একটা সন্তানের আর দরকার নাই।
ঃমা রাখি!
আব্বা ফোন রেখে দেয়।

যার বাবা নাই,পৃথিবীতে সেই জানে বাবা শব্দটার আসল অর্থ।তুমি অন্তত আমাকে সেই কষ্ট কখনও দিও না আব্বা।তুমি সুস্থ থাকো শুধু আমার দিকে চেয়ে।তোমার প্রতিটা অসুস্থতার সংবাদ আমাকে কি অসহায় করে দেয় কিভাবে তোমাকে বুঝাবো!প্রতি রাতে হুট করে কোনও ফোন আসলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে,আল্লাহ আমাকে এমন কষ্ট কখনওই দিও না,আমার যে কোন ভাল কাজের বিনিময়ে আমার প্রিয় মুখগুলিকে সুস্থ রেখো। শেষের কথাগুলি একাই মনে মনে বলতে বলতে ফোনটা শক্ত করে ধরে থাকি।বাবার প্রতি দায়িত্ব আমার নিজেরও পালন করা হয় না।অসুস্থ বাবাকে দূরে রেখেই আমাকে থাকতে হয়।তার অসুস্থতায় অনেক সময় যেতে পারিনা,অফিসে জানিয়ে গেলেও এসে দেখি খাতায় বড় করে লাল দাগ কাটা।যারা দাগ কাটে তারা কি কখনও বাবার মিথ্যা অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়েছিলো?কেন তাহলে অবিশ্বাস করে! আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।বাবা দিবসে কর্তৃপক্ষের কাছে অন্তত একটা অনুরোধ থাকবে,আপনার কোনও সহকর্মীর সাথে এতটা নির্দয় হবেন না।পরিস্থিতি একদিন আপনাকেও এমন কষ্টের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিতে পারে।

 

ভারতে ‘মস্তিষ্ক অসুস্থতায়’ ১০৩ শিশুর মৃত্যু, বিক্ষোভ


নারী সংবাদ


ভারতের অন্যতম দরিদ্রতম বিহার প্রদেশে রহস্যজনক মস্তিষ্কজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শতাধিক শিশুর মৃত্যুতে সেখানে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে। মস্তিষ্কজনিত এ রোগের সঙ্গে গ্রীস্মকালিন ফল লিচুর সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চলতি বছর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বিহারের মোজাফ্ফরপুরে ১০ এবং তার চেয়ে কম বয়সী ১০৩ শিশু একিউট এনসেফালিটিস সিনড্রোম (এইস)-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। মৃতের সংখ্যা আরো বেড়ে যেতে পারে। আরো অনেক শিশুই হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। টেলিভিশনের খবরে অনেক শিশুকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।

মঙ্গলবার বেশ কিছু সংখ্যক লোককে কর্তৃপক্ষের স্থবিরতা ও অযতেœর অভিযোগ নিয়ে মোজাফ্ফরপুরের প্রধান হাসপাতালের বাইরে ভীড় করতে দেখা গেছে। রোববার এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলণ চলাকালে ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের কাছে জানতে চাওয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে সমালোচিত হয়েছেন প্রাদেশিক স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বিরোধী দলীয় কংগ্রেস নেতা রণদীপ সূর্যবালা টুইটারে মন্তব্য করেছেন,‘ বিহারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শিশু মৃত্যুর চেয়ে ক্রিকেট স্কোর নিয়ে অধিক উদ্বিগ্ন।’ অপর বিরোধী দলীয় ব্যক্তিত্ব রাবরি দেবী শিশু মৃত্যুকে, ‘ ঠান্ডা মাথার খুন’ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি টুইট করেছেন, ‘ ওষুধ ও চিকিৎসার অভাবে শিশুরা মারা যাচ্ছে।’ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার মঙ্গলবার বিহারের সরকারি হাসপাতাল শ্রীকৃষ্ণ মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করেন, সেখানে বেশিরভাগ শিশুই মারা গেছে। গণমাধ্যমকে ভেতরে প্রবেশের ও অসুস্থ শিশুদের পরিবারের সদস্যদের বহিরাঙ্গণে গোলোযোগ সৃষ্টির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

রোগের বার্ষিক প্রাদুর্ভাব

এইএস-এ আক্রান্ত শিশুদের রক্তে শর্করার অতি দ্রুত পতন, উচ্চ তাপমাত্রা, খিচুনী ও পক্ষাঘাত হতে দেখা যায়। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্নভাবে শরীরে বিষক্রিয়া এ রোগের কারণ। ১৯৯৫ সাল থেকে এতাদ্ঞ্চলে প্রতি বছর গ্রীস্মকালে এবং সাধারণভাবে লিচুর সময়ে সব সময় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ২০১৪ সালে এই রোগে শিশু মৃত্যুর রেকর্ড সংখ্যা ১৫০ জন। অন্যান্য বছরে মৃত্যুর সংখ্যা সেই তুলনায় কম।

বেশ কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকগণ জানিয়েছেন, গ্রীস্মকালিন লিচুর ভেতরের এক ধরণের বিষাক্ততা এ মস্তিস্ক রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। গবেষকগণ, এ অসুস্থতার কারণ নির্ণয়ে আরো বেশি গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে বলে মতামত দেন। স্থানীয়ভাবে ‘চামকি বুখার’ নামে পরিচিত এ রোগ তৃতীয় ধরণের মারাত্মক।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ও প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষকে এ রোগ মোকাবিলায় ভ্যাকসিন ও সচেতনতা কর্মসূচির আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবার হিন্দু পত্রিকায় এক সম্পাদকীয় বলা হয়েছে, কিছু দূরদর্শীতা ও প্রারম্ভিক যত্ন অতি সহজেই মৃত্যু কমিয়ে আনতে পারে।

এতে তুলে ধরা হয়, ২০১৪ সালে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষজ্ঞ দলের হস্তক্ষেপে শতকরা ৭৪ ভাগ শিশুর জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছিল। এতে আরো বলা হয়, চলতি বছর সরকার এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রায় ১০ কোটি লোক অধ্যুষিত বিহার ভারতের দরিদ্রতম প্রদেশগুলোর অন্যতম। সম্প্রতি সেখানে ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার লু হাওয়া বয়ে গেছে। সেখানে দরিদ্র পরিবারের শিশুরা যারা এমন কি পেটপুরে খেতে পায় না তারা খালি পেটে লিচু খেয়ে মস্তিস্ক রোগের শিকার হয়। সূত্র : বাসস।

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… শেষ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… শেষ খন্ড


আফরোজা হাসান


আফরা হেসে বলল, জ্বি আপি। আমি গতকাল ধরতে চেষ্টা করেছিলাম। ধরতে যাচ্ছিলাম তখনই প্রজাপতি উড়ে অন্য আরেকটি ফুলে বসছিল। আমি পা টিপে টিপে সেই ফুলের কাছে গিয়ে ধরতে চেষ্টা করলাম প্রজাপতিটি আবারো উড়ে গেলো। এমন কয়েকবার করার পর শেষপর্যন্ত প্রজাপতিটি উড়তে উড়তে আমাদের বাগান থেকেই বাইরে চলে গেলো।
মারওয়া হেসে বলল, গতকাল তোমার আর প্রজাপতির কর্মকান্ড আমি দেখেছিলাম। জানো আফরা আমাদের মন বাগিচায়ও এমন বর্ণিল প্রজাপতির রূপে সুখ-শান্তি বসে থাকে চুপটি করে। সেই বর্ণিল প্রজাপতির সৌন্দর্যে লালায়িত হয়ে আমরা ছুটে যাই ধরার জন্য। সুখকে হাতের মুঠোয় পুরে ফেলতে চাইলে বেশির ভাগ সময়ই সেটা উড়ে আরেকটু দূরে সরে বসে। ধরে ফেলার চেষ্টা অব্যহত থাকলে একসময় বিরক্ত হয়ে সুখ মন বাগিচা ছেড়েই চলে যায়। সুখকে তাই কখনোই ধরতে চাওয়া ঠিক না। তাছাড়া মনের বাগিচাটা যেহেতু তোমার সেহেতু বাগিচার ফুল, পাখী, ফড়িং, প্রজাপতি, জোনাকি সবকিছুও তোমার। যা তোমার তাকে শুধু শুধু খাঁচায় কিংবা স্বচ্ছ কাঁচের জারে বন্দি করতে যাবে কেন? আকাশে ডানা মেলা পাখী আর খাঁচায় বন্দি পাখীর আনন্দ কি কখনো একই রকম হতে পারে? ফুলের বুকে প্রজাপতি আর তোমার দুই আঙ্গুলের মাঝে ছটফট করতে থাকা প্রজাপতি সৌন্দর্য কি এক? আমরা জানি এক না। অনেক পার্থক্য বিদ্যমান দু’য়ের মাঝে। কিন্তু তবুও শুধু নিজের করে পাবার লোভে আমরা কোন কিছুকে তার স্বকীয়তা থেকে আলাদা করতে দ্বীধা করি না। আমাদের জীবনের সম্পর্কের বন্ধনগুলোও কিন্তু এমনই। নিজের করে পেতে গিয়ে, নিজের মনের মত করে চাইতে গিয়ে আমরা সম্পর্কগুলোর প্রকৃত সৌন্দর্য ও আনন্দানুভূতি হারিয়ে ফেলি।
আমিও কি এমনটা করছি আপি?
মারওয়া হেসে বলল, আমার কাছে অভিমানে সবচেয়ে খারাপ দিক কি মনেহয় জানো? অভিমানের ভেতর সুপ্ত অবস্থায় থাকে জেদ। সেই জেদ মনে একধরণের প্রতিযোগী মনোভাবের জন্ম দেয়। মানে হচ্ছে, অপর পক্ষকেই আগে নিজের ভুল বুঝে সরি বলতে হবে। আমি কেন আগে যাবো? তাকেই আগে আসতে হবে! এই যে একটা হার-জিতের মনোবাসনা তৈরি হয়! এটাই আসলে যত সমস্যার মূলে। আমাকেই কেন সবসময় বুঝতে হবে? আমাকেই কেন ত্যাগ স্বীকার করতে হবে? সবসময় কি আমিই ছাড় দিয়ে যাবো? আমার আবেগই কেন সবসময় এমন মূল্যহীন থেকে যাবে? ইত্যাদি আরো নানা প্রশ্নের উদ্রেক ঘটে অভিমানী মনে! অভিমান মনকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় জমিয়ে দেয়। সমস্যা হচ্ছে, সেই বরফকে গলানোর মত সঠিক উষ্ণতা বেশির ভাগ সময়ই অপর পক্ষ দিতে ব্যর্থ হয়। যেহেতু অপর পক্ষের জানা থাকা না মনের ঠিক কতটা তাপমাত্রা প্রয়োজন। মনকে তাই কখনোই বরফ হতে দিও না। তো কি হয়েছে স্বামী কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি?! চোখ পাকিয়ে কঠিন করে একটা ধমক এবং সাথে পরবর্তীতে এমন করলে শাস্তি দেয়া হবে সেই থ্রেট দিয়ে দুষ্টুমি করেই তো মিটিয়ে দেয়া সম্ভব ঘটনাটি। আমার এক যুগের দাম্পত্য অভিজ্ঞতা বলে যে, ভালোবাসার চেয়েও পার্টনার আমার ব্যর্থতা, অপারগতা, অসহায়ত্ব বোঝে, প্রতিকূল পরিবেশে আমাকে সাপোর্ট করে। এটা অনেক বেশি প্রভাব ও শ্রদ্ধাবোধের জন্ম দেয় তার মনে অপর পার্টনারের প্রতি।
আমি বুঝতে পেরেছি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, না তুমি এখনো বুঝতে পারোনি। এত দ্রুত আসলে বোঝার দরকারও নেই। তবে প্রথম যে জিনিসটা তোমাকে বুঝতে হবে সেটা হচ্ছে স্বামী-স্ত্রীর ভিন্ন গ্রহ থেকে আসা কোন সম্পর্কের নাম নয়। আমাদের জীবনে বিদ্যমান অন্যান্য সম্পর্কের মতই এটি আরেকটি সম্পর্ক। আমার কথাই যদি বলি। এমন কতবার হয়েছে বাবা কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবার কথা বলে নিয়ে যাননি। ভাইয়ারা পছন্দের মূল্য না দিয়ে জোড় করে অপছন্দনীয় কিছু চাপিয়ে দিয়েছেন। বোনেরা নষ্ট করে ফেলেছে খুব প্রিয় কিছু। মামণি অকারণেই বকাঝকা করেছেন। সেসব কি মেনে নেইনি আমি? ভুলে যাইনি কি? ছেড়ে দিয়েছি কি তাদেরকে অন্যায় আচরণের জন্য? এর কারণ কি বাবা-মা-ভাই-বোনকে ডিভোর্স দেয়া যায় না এটা? নাকি অকৃত্রিম ভালোবাসা? তাহলে স্বামীর ভুল কথা বা ভুল কাজ মেনে নিতে সমস্যা কোথায়? যেখানে সেই মানুষটাকে জড়িয়েই আমার জীবনের সবকিছু। নাকি ছেড়ে দেয়ার অপশন থাকার কারণেই এই সম্পর্কটির ক্ষেত্রে আমাদের মন ত্যাগ স্বীকার করতে এত বেশি কার্পণ্য করে? এটাই আসলে ফ্যাক্ট বুঝলে। জীবনের অংশ করে নিতে পারি না বলেই ছোট ছোট কথা, কাজকে ইস্যু করে একে অন্যেকে জীবন থেকে বের করে দিতে পারি। তাই এটা বোঝার চেষ্টা করো তোমার স্বামী তোমার জীবনের জন্য কতটা জরুরি। এই বিষয়টা বুঝতে পারলেই বাকি সবকিছু বোঝাটা তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আফরা হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ আপি আমি এখন থেকে এভাবেই ভাবতে চেষ্টা করবো। অভিমানের অনলে নিজেদের সম্পর্ককে আর কখনোই জ্বালাবো না। বরং যখনই কোন কিছু আমাদের মাঝে সমস্যার উদ্রেক করতে চেষ্টা করবে, আমরা দুজন মিলে সেটা নিয়ে মন খুলে কথা বলবো। এবং দুজন মিলে সেটার সমাধান করার চেষ্টা করবো।
মারওয়া হেসে বলল, ইনশাআল্লাহ। এখন চলো আমরা রান্নায় মনোযোগ দেই।

লিখেছেন- আফরোজা হাসান

 

ছায়াদানকারী বট বৃক্ষ

ছায়াদানকারী বট বৃক্ষ


শামছুন নাহার মলি


২০১২ সালে প্রথম যে বার দেশ ছাড়লাম।আব্বা আমার জিপি নাম্বারে কল দিতেই থাকতেন।দুঃক্ষিত আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা,অনুগ্রহপূর্বক আরেক টু পর আবার ডায়াল করুন। আব্বা আরেকটু পর আবার ডায়াল করছিলেন।বারবার,যদি মলির ফোনে কল যায়।এখন কি মলি আকাশে?নেটওয়ার্কেরর বাইরে?আবার কল দেয়।কল আসলে অন্যদের বলে মলিকে কল দিচ্ছি,একজন মেয়ে বলে একটুপর আবার কল করুন।এতবার কল দিচ্ছি মলি তো ধরেনা। অনেক পরে আব্বাকে বোঝানো গেছিলো মলি এখন নেটওয়ার্কেরর বাইরে।
ফিনল্যান্ডে আসার পর বুঝলাম আব্বা কতটা ভালবাসে,আমার একাকিত্বে কতটা ভয় পায়।প্রতিদিন কল দিলে আব্বা কথা বলতেন।আমি কি বলবো, কেমন আছেন আব্বা?ব্যাথা কমেছে?গরম কেমন?
এর পর আর কিছু বলার আসতো না।
আব্বার প্রশ্নের পর্ব শুরু।বাছা,ওখানে কি কি পাওয়া যায়?কি মাছ খাও?স্যালমন ফিস?স্যালমনের মাথা দিয়ে মুড়ো ঘন্ট করো খুব ভাল লাগে।লন্ডনে গিয়ে তোমার ভাইয়ার বাসায় খেতাম।বাছা বাংলাদেশি সবজি,ফল পাও তো?আরো কত কি?
সাম্মান কে পেটে নিয়ে দেশে গেলাম ৫ মাসের জন্য,একটা সেমিস্টার করবো।আগে আব্বাকে ফল কেটে আমি খাওয়াতাম।এবার অবাক করে দিয়ে আব্বা নিজেই আমাকে এলাকার মিষ্টি পেয়ারা ভাত খাওয়ার পর ঔষধের মত নিয়ম করে কেটে খাওয়াতেন। কারণ ভাত খাওয়ার পর পেয়ারা না খেলে মলির বমি বমি লাগতো।
দেশি ফল কেটে দিতেন পাশে বসিয়ে।আমার কি যে অস্বস্থি লাগতো।তারা নিজেই অসুস্থ।আমি তাদের সেবা করার চান্স পাইনি সেবার।৭ মাসে চলে আসবো ঢাকা থেকে।আব্বা আম্মা নাতির জন্য কাঁথা,আমার জন্য খাবার নিয়ে মেজ আপুকে নিয়ে রওনা হবেন ঢাকার উদ্দেশ্যে।দেশে তখন ভয়ংকর পরিস্থিতি।পরদিন সকালে সারা দেশে হরতাল।রাতের গাড়িতে সাতক্ষীরা থেকে রওনা হলে সকালে গাবতলি থেকে মীরহাজির বাগ যাওয়াটা কঠিন হবে।সিএনজি,বাসে আগুন জ্বালিয়ে দিতো,গুলি,এ্যারেস্ট ও তুমুল ভাবে।
আমি কাঁদলাম প্লিজ আসবেন না আব্বা ঢাকায়,এই পরিস্থিতিতে আপনারা ঢাকায় আসলে বিপদ।আমরা টেনশনে মরে যাবো।আব্বা আম্মা টিকেট নিয়ে গাড়ীতে উঠবে,আমি আর ছোট ভাইয়া হাতে পায়ে ধরে বল্লাম আব্বা বাড়িতে নিরাপদ এ থাকলে তাতেই আমাদের শান্তি।দেশের এ পরিস্থিতি তে বের হয়েন না।আম্মা বলে,মলি পরীক্ষা দিয়ে আর বাড়ি এলো না।আমি একটু না দেখে অসুস্থ মেয়েকে কিভাবে যেতে দিই।
আমার মণ কে পাষাণ বানিয়ে বল্লাম,আম্মা বাড়ি ফিরে যাও,আমার জন্য তোমাদের কিছু হয়ে গেলে সারা জীবনেও শান্তনা খুঁজে পাবোনা।আব্বা আম্মা বল্লেন এত টাকা দিয়ে টিকেট কাটলাম।বল্লাম জীবনের দাম আরো বেশি।কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে গেলেন।আমি ফিনল্যান্ডে আসার পর ডিলিভারি রুমে যাওয়ার পরও আব্বার সাথে কথা বলা লাগছে।
সাম্মান হলো,আব্বা সহ সবাই কি খুশি।আলহামদুলিল্লাহ্‌।আব্বার আর কথা বলার তোড়জোড় নাই।দু তিন দিন হয়ে গেলো।আম্মাকে বল্লাম আব্বা কই?বলেন,আছে।এখন তোমার একটা খেলার সাথি হয়েছে,ব্যস্ত থাকার সম্পদ হয়েছে তাই তোমার আব্বা নিশ্চিন্তে আছে তোমাকে নিয়ে।বাবা নামের মানুষ গুলো আসলেই অন্যরকম।আল্লাহ সকল মাকে নেক হায়াত দিন।সন্তানদের ছায়াদান কারী বটবৃক্ষ গুলো ভালো থাকুন দুনিয়া ও আখিরাতে।আমিন।

 

আমার ডাক্তার বাবা

আমার ডাক্তার বাবা


সুমাইয়া চৌধুরী


তিনি মূলত রসায়নশাস্ত্রের অধ্যাপক। তাঁর ডিগ্রী “Applied chemistry” এর উপর। কিন্তু তাঁর “Applied Homeopathy” দেখে আসছি সেই শৈশব থেকে ……হোমিওপ্যাথির উপর ভদ্রলোকের অগাধ আস্থা এবং শারীরিক অসুস্থতায় তিনি হোমিওপ্যাথিকেই বেছে নেন। সাগুদানার মতো দেখতে মিষ্টি ওষুধগুলো আমার কাছে চকলেটের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হতো আর শিশুচোরের উপদ্রবে এক ডোজের ওষুধ ৫-৬ বার কিনতে হতো ভদ্রলোককে।

অবসরে যাওয়ার পর ১ বছর বাসায় অবস্থান করলেন,,,,,পত্রিকা পড়েন , কোরআন পড়েন , মসজিদে যান সবই ঠিকমতো চলছে কিন্তু কোথায় যেন একটা অভাববোধ , শিক্ষকতাকালীন যে পড়াশোনা করতেন সেটার জন্য মন হাহাকার করে। অবশেষে ৬৭ বছর বয়সের আমার যুবক বাবা শিক্ষক থেকে ছাত্রে রূপান্তরিত হলেন ,ভর্তি হয়ে গেলেন হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজে ৪ বছরের DMHS (Diploma in Homeopathy Medicine and Surgery) কোর্সে।

কি তাঁর আনন্দ আর পড়াশোনার আগ্রহ !!! ক্লাসের ফাঁকে খাবে বলে মায়াবতী স্ত্রী নিয়ম করে টিফিন রেডি করে দেয়। আম্মা দেখি মাঝে মাঝে জানতেও চায় “ কয়টা বান্ধবী হলো তোমার ?” আব্বা নায়ক রাজ্জাকের মতো রহস্যময় হাসি দেয়।

আব্বা বরাবরই ম্যাথমেটিক্সে ভালো ছিলেন , বায়োলজি সাবজেক্ট টাই ছিলোনা তাঁর আর সেজন্য এনাটমি বা ফিজিওলজির এক্সাম এর সময় খুব স্টাডি করতে হতো। ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা শেষে অভিভাবক হিসেবে জানতে চাইলাম “ ছাত্রের খবর কি ? রেজাল্ট খারাপ হলে পড়াশোনার খরচ বন্ধ।’’ আব্বা খুবই উদ্বিগ্ন স্বরে বললেন , “মা রে , এনাটমিতে পাস নিয়া চিন্তায় আছি”

আব্বা এখন ৪র্থ বর্ষের মেধাবী ছাত্র। কলেজে তাঁর যথেষ্ঠ সুনাম….পরীক্ষায় কোন অসুদপায় অবলম্বন না করে এই বয়সেও কঠোর অধ্যয়ন করার জন্য। চিকিৎসাও শুরু করেছেন , পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজনদের ওষুধ দিচ্ছেন নিয়মিত। বিশ্বস্তসূত্রে জানলাম তাঁর ওষুধ ভালো কাজ করে। বড় আপিও একদিন কথায় কথায় জানালো তাঁর বাচ্চাদের নাকি নানুভাইয়ের ওষুধ ছাড়া দেশের বাইরের ওষুধেও কাজ কাজ হয়না।

আব্বাকে কল দিলাম……..
-“কি ডাক্তার সাহেব, আপনারতো সেই নাম ডাক!!!! ”

আব্বা খুশিতে শরমে গদগদ কন্ঠে …….
– শোনো আমিতো বায়োকেমিক মেডিসিন দেই,এক ডোজেই হুম….

আমি বেশ সিরিয়াস হয়ে বললাম ,
—ফ্রী ফ্রী ওষুধ দেয়া যাবেনা , ওষুধের কার্যক্ষমতা কমে যাবে , আম্মাকে ওষুধ দিলেও মাথা টিপায়ে নিবেন , গা চুলকায়ে নিবেন।

কয়েকমাস আগে আমার পায়ে একটা ইনজুরি হয় , আব্বার কি আফসোস ,
— “ইসস , তুমি দেশে থাকলে এক ডোজ দিলেই ………”

আমি বললাম,
—আচ্ছা ঠিক আছে , দেশে এসে হাত পা কিছু একটা ভেঙে আপনার ওষুধ খাবো ”

আব্বা আমার সস্তা ফাইজলামিতে মহাবিরক্ত হয়।

মার্চে দেশে গেলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা পাতলা আবহাওয়ার মুখোমুখি। আম্মার মুখ শুকনো , মেয়ের জামাইকে ডাবের পানি আর স্যালাইন ছাড়া কিছুই খাওয়াতে পারছেনা। আব্বার চোখে মুখে চাপা আনন্দ….

ওর কাছে গিয়ে বলছে
—বাবাজি , চিন্তার কিচ্ছু নাই ……এক ডোজেই ……ইনশাআল্লাহ। ”

জামাইবাবাজি শ্বশুরের ডোজে সুস্থ হলো। আমি শুধু রাইস স্যালাইন খেয়েই সুস্থ হলাম বলে আমার উপর বেশ অভিমান করলেন। আব্বার পড়াশোনা চলছে , চিকিৎসাসেবাও চলছে। খুব আন্তরিকতার সাথে ওষুধ দেন। রোগীর জন্য দোয়া করেন।

সবার শেষ বয়সটা সুন্দর কাটেনা …..৭০ বছর বয়সে আমার শিক্ষানবিশ ডাক্তার বাবা মানুষের সেবা করার আনন্দময় ইচ্ছা নিয়ে সময় পার করছে আলহামদুলিল্লাহ !!!!

ইদানিং আমার শরীরটাও ভালো যাচ্ছেনা। ভাবছি ডাক্তার সাহেবের কাছে এপোয়েনমেন্ট নিবো।

 

শুধু শিশু নয় বরং বাবা-মা নতুনভাবে জন্ম নেন

শুধু শিশু নয় বরং বাবা-মা নতুনভাবে জন্ম নেন


ফাতেমা শাহরিন


একজন শিশুর জন্মের সাথে সাথে জন্ম নেয় একজন বাবা-মা। বর্তমানে ‘গুড প্যারেন্টিং’ শব্দটা বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। বাচ্চা মা বাবার কাছে সবচেয়ে দামী উপহার যেমন তদ্রূপ মা-বাবাও সন্তানের জন্য পৃথিবীতে বড় নিয়ামত। বাচ্চা আমাদের কাছ থেকে জেনে ও শিখে বড় হয়। একবারেই তো আর সবটা জানানো যায় না, আমরাও জানি না। জানতে হবে ধাপে ধাপে। এই ধাপগুলো নির্ধারণের সময় অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে করে বাবা মা প্যারেন্টিং কিভাবে করতে হবে শিখেন।

এই ধাপগুলো সম্পর্কে জানুন ও তাদের সঙ্গে সবসময় একই আচরণ না করে ওই ধাপগুলো অনুযায়ী আচরণে পরিবর্তন আনুন।

বাচ্চার ব্যক্তিত্ব কেমন তা বুঝার চেষ্টা করুন

কোন বাচ্চা মিশুক কেউবা চুপচাপ, কেউবা শান্ত, কেউবা চঞ্চল। সুতরাং বাচ্চার মর্জি বুঝে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পক্ষে অনেক বেশি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করুন। বাচ্চা যদি বিদ্যুৎ চমকানি বা তেলাপোকা দেখে ভয় পায়, তখন সেটা গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া জরুরি। এটা অবহেলা করা অনুচিত।

প্রচুর সময় দিন

নিয়মতান্ত্রিক আর ধরা বাধা সময় না বরং বাচ্চাকে পর্যাপ্ত সময় দিন। বাইরেও তাদের নিজের ইচ্ছামতো ঘুরতে নিয়ে যাও। এটা তাদের সৃষ্টিশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও ভুমিকা রাখবে।

বাচ্চাকে বুঝতে শিখুন
আপনি যদি আপনার বাচ্চাকে বুঝার জন্য গুরুত্ব দেন এবং তা তুলে ধরতে পারেন, সেটা আপনাদের উভয়ের জন্যেই অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্যের হবে। শিশুরা চায়, বড়রা তাদের কথাগুলো আগে শুনুক। অনেক পরিস্থিতিই তাকেই সমাধান করতে দিন।

বাচ্চার কাছে নানান পরিচয়ে নিজেকে প্রকাশ করুন

মা বা বাবার পরিচয়টি আপনার কাছে অনেক বেশি আবেগময় অথবা সবচেয়ে পছন্দের হলেও কখনও বন্ধু, কখন শিক্ষক, কখনওবা দর্শক বা কখনওবা আপনার সন্তানকের স্টুডেন্ট হিসেবে বাচ্চার কাছে পরিচিত হোন।

বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়

কিছু বলার চেয়ে করে দেখানোটা বাচ্চাদের কাছে অনেক বেশি গুরুত্ববহ।মনোযোগী বা কল্পনাশক্তিসম্পন্ন বলে ধারণা করি, তারা তার চেয়েও ঢের ক্ষমতা রাখে তাই আপনি আপনার বাচ্চাকে যেমন ভাবে গড়ে তুলতে চান তেমন আচরণ করুণ।

সুত্রঃ Parenting Guid. ছবির মডেলঃ আমান।

 

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -১

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -১


জিয়াউল হক


স্মৃতি লোপ পাওয়া : এর উৎপত্তিটা খুব ধীরে হয়। প্রথম প্রথম অতি সাধারণ কথাও মানুষ ভুলে যায়। ঘরের চাবিটা, হাতের কলমটা কিংবা একটু আগে ব্যবহার করা চশমাটা কোথায় রেখেছে, তা তারা ভুলে যান।
-এভাবেই শুরু। এরপর এর মাত্রা ও ব্যপ্তি বাড়তে থাকে ক্রমেই। এ ধারায় আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে কোন কাজে বা পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া বা তা ধরে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ে।
– রোগটা আরও একটু এগিয়ে গেলে আক্রান্ত ব্যক্তি কারও সাথে আলাপচারিতায় বা কথোপোকথনের সময় সঠিক শব্দটিই খুঁজে পান না, বা সহজে মনে করতে পারেন না। অথচ তার কাছে শব্দটি াতি পরিচিত এবং সারাজীবন তা তিনি কথাবার্তায় ব্যবহার করেছেন অহরহ।
– এরপরে একটা পর্যায় এসে উপস্থিত হয় যেখানে তিনি সেই দিনটিতে করেছেন বা বলেছেন, এমন কোন কাজ বা কথা স্মরণ করতে অসুবিধা বোধ করেন বা স্মরণই করতে পারেন না।
– এরকম অবস্থা যখন হচ্ছে, তখন তিনি কারও কাছে তা স্বীকারও করতে পারছেন না, আবার এ থেকে কোন নিস্তারও পাচ্ছেন না, ফলে তিনি মনে মনে বিরক্ত হচ্ছেন। তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। কথায় কথায় রেগে যাচ্ছেন।
– এ পর্যায়ে এসে তার স্বাভাবিক বিচার বিবেচনা লোপ পেতে শুরু করবে। কখনো কখনো তিনি এমনসব আচরণ করবেন যে, তার অতি নিকটজন, যারা তাকে খুব কাছে থেকে চেনেন, জানেন (যেমন- নিজের সন্তান বা স্ত্রী, এরা) বিশ্বাস করতে চাইবেন না যে তিনি এমন কাজ করতে পারেন বা এমন কথা বলতে পারেন।
– এরও পরে এসে কনফিউজড হতে শুরু করবেন। এ পর্যায়ে এসে দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম মানসিকতার প্রকাশ ঘটবে। কখনো চরম বিরক্ত (Irritable) হবেন।
– কখনো বা খুব মনমরা (Apathetic or Withdrawn) হয়ে বসে থাকবেন।
– কখনো বা তার আচার-আচরণে একরাশ হতাশা (Frustrated) প্রকাশ পাবে।
– আবার কখনো তার মন দুশ্চিন্তায় (Anxious) ছেয়ে যাবে।
– কখনো কখনো এমনসব জিনিস চোখে দেখতে পাচ্ছেন বলে দাবি করবেন আসলে তখন তার সামনে ঐসব জিনিসের কোন অস্তিত্বই নেই (Visual Hallucinations)।
– আবার এমন সব ধারণার কথা বলবেন যা অমূলক (Delusions), বাস্তবে যার কোন সংগত কারণ নেই।
– কোন ঘটনা বা কোন কিছু একটা বলতে গেলে তারা মাঝপথে ভুলে যান, ফলে তারা যা বলতে গিয়েছিলেন, তা বলতে থাকেন, তবে, এ ক্ষেত্রে তারা যে কাজটি করেন তাহলো- তারা ঘটনার যতটুকু মনে আছে তার সাথে কল্পনাপ্রসূত, অবাস্তব ও অসত্য কিছু কথা মিশিয়ে তাদের কথাগুলো পূর্ণ করেন। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকেই Confabulation বলা হয়ে থাকে।

চলবে…

 

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -২

বার্ধ্যক্যের সীমাবদ্ধতা : ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম পর্ব -২


জিয়াউল হক


সারা বিশ্বে প্রায় প্রতিটি প্রৌঢ় নারী-পুরুষর ক্ষেত্রেই কমবেশি এমনটা (Confabulation এর ঘটনা) ঘটে। আমাদের দেশে (এবং যে দেশে বা যে সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গণসচেতনতা নেই, সেসব দেশ ও সমাজে) এসব প্রৌঢ়রা তাদের এ ধরনের আচরণের কারণে অনেক বিড়ম্বনা, অপমান ও নিগ্রহের শিকার হন।
আমার নিজের দেখা বেশ কিছু ঘটনা মনে পড়ছে এ সময়। প্রায় অশীতিপর বৃদ্ধ কিছুক্ষণ আগেও খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, এমন সময়, দূরের গ্রাম থেকে তার বড় মেয়ে বাবাকে দেখতে এসেছেন। বাবাকে পাশে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কিছু খেয়েছেন কি না, বাবার সোজা সাপ্টা উত্তর হলো, না কিছু খাননি।
ষাটোর্ধ বিধবা কন্যা ছোট ভাইয়ের বাড়িতে, তারই আদরের ভ্রাতৃবধুর হাতে বৃদ্ধ বাবার প্রতি এ ধরনের অযতœ আর অবহেলা (!) দেখে ও স্বয়ং বাবার মুখে শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। পাশে দাঁড়ানো বৃদ্ধের নাতি নাতনীর প্রদত্ত সাক্ষ্যও সেদিন সেই নারীকে এটা বিশ্বাস করাতে পারেনি যে, তার বাবা একটু আগেই নাতি-নাতনীদের সাথে বসে একত্রে খাবার খেয়েছেন। বৃদ্ধের পুত্রবধু তাকে কোনরকম অবজ্ঞা বা অবহেলা করেননি।
বেচারা বৃদ্ধ নাতি-নাতনীর চোখে পাক্কা মিথ্যাবাদী, তাদের মায়ের ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপকারী হয়ে রইলো। আর পুত্রবধুর চোখে তো এক পা কবরে রাখা বুড়ো বদমাশ (!) হয়ে গেল সেদিন থেকেই!
সম্ভাব্য সব ধরনের আদর যতেœ থাকা বৃদ্ধ মনের ভুলে এক সময় বলে ফেলা একটা কথার কারণে আমৃত্যু কি নিদারুণ নিগ্রহ আর মানসিক পীড়নের মুখোমুখি হয়েছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এরকম অবস্থায় পরিবারের কর্তার সাথে পুত্রবধুর, আর পুত্রবধুর সাথে সংসারের অন্যন্য আত্মীয়-স্বজনের সামাজিক সম্পর্ক কোন পর্যায়ে যেতে পারে তা অতি সহজেই আমরা অনুধাবন করতে পারি। ডিমনেশিয়া বা স্মৃতিভ্রষ্টতা যে একটা অসুখ, এবং বৃদ্ধের কথাবার্তা, কাজকর্ম ও আচার-আচরণ যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেই অসুখের কারণে প্রভাবিত হতে থাকবে, সে ধারণা আমাদের অধিকাংশেরই নাই।
এর ফলে আমাদের আদরের, শ্রদ্ধার বাবা-মা, বৃদ্ধ আত্মীয়-স্বজনরা অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমাদের অজান্তেই নিগ্রহ (Elderly Abuse) ও মানসিক পীড়নের (Psychological Abuse) শিকার হচ্ছেন। সমাজে এসব বৃদ্ধ-বৃদ্ধা অত্যন্ত নাজুক (Vulnerable) অবস্থায় তাদের দিন কাটান।
অথচ আল-কুরআনে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন তাদের সাথে সদাচারণ ও উত্তম ব্যবহার করার জন্য। যেমন- নির্দেশ দেওয়া হয়েছে :
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যাবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দটিও বোলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, বিন¤্র হও এবং বল- ‘হে আমাদের রব! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন’।২২ (সুরা আল ইসরা, ২৩-২৪)
অথচ বাস্তব সত্য হলো, আমাদের বাবা-মা যখন বুড়ো বয়সে উপনীত হন, যখন তারা নিজেদের উদ্যোগে যথাযথ কমিউনিকেশন করতে পরেন না, যখন তাদের নিজেদের প্রয়োজনটাকেও তারা প্রকাশ করতে পারেন না পূর্ণরূপে বা ঠিকভাবে, যখন তারা শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার কারণে নিজেদের প্রয়োজন সময়মত ও যথাযথ মেটাতে পারেন না, যখন তাদের সবচেয়ে বেশি সাহায্য, সাহচর্য, সান্নিধ্য আর মনোযোগ প্রয়োজন, সেসময়টাতেই আমরা তাদের প্রতি সবচেয়ে কম মনোযোগ দেই, তাদের সাথে সবচেয়ে কম সময় অতিবাহিত করি।
এতে করে আমরা যেমন তাদের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে যাই, তেমনি তারা নিজেরাও দুর্বোধ্য হন পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে। তদের মানসিক শান্তি ও স্থিতির ভিতটাই নড়বড়ে হয়ে যায়। তারা নিঃসঙ্গতায় ভুগতে শুরু করেন।

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৬ষ্ঠ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৬ষ্ঠ খন্ড


আফরোজা হাসান


শরীয়তের পরিভাষায়,ইসলামের বিধান অনুযায়ী নারী- পুরুষ প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ঢেকে রাখার নামই হিযাব বা পর্দা। এখন কথা হচ্ছে, টপস-জিন্স/স্কার্ট ইত্যাদি পড়েও নির্ধারিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূকে ঢেকে রাখা সম্ভব। কিন্তু তাতে কি পর্দার উদ্দেশ্য রক্ষা করা হবে? আবরণ বা অন্তরাল কিসের জন্য? যাতে দর্শনে নারী-পুরুষের একে অন্যের প্রতি সহজাত আকর্ষণের সেতার স্পর্শিত না হয়। তুমি যদি এমন ড্রেস পড়ো যাতে তোমার শারীরিক অবয়ব বোঝা যায়, তাহলে কেবল মাত্র মাথা ঢাকা থাকার কারণে তোমাকে পর্দানশীল নারী বলা যাবে না। ড্রেসটাকে তোমার শারীরিক গঠন ও সৌন্দর্যে অন্তরাল সৃষ্টি করার উপযোগী হতে হবে। এখন তুমিই ভেবে দেখো তুমি যেভাবে হিযাব করছো তাতে তোমার পরিপূর্ণ পর্দা হচ্ছে কিনা!
আমি বুঝতে পেরেছি আপি। ইনশাআল্লাহ আমি এখন থেকে পরিপূর্ণ পর্দা করার চেষ্টা করবো।
আমার কথা শুনে কি মন কিছুটা খারাপ হয়েছে?
আফরা হেসে বলল, না আপি আপনি তো সঠিক কথাই বলেছেন। আবির যদি এভাবে বুঝিয়ে বলতো তাহলে তো এত বেশি কষ্ট হতো না আমার। বা মনে হতো না আমার সাথে বাড়াবাড়ি করছে।
আসলে সবার তো বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা একরকম থাকে না। তাছাড়া আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে বাইরের মানুষকে বুঝিয়ে বললেও আপনজনদেরকে আমরা সেভাবে বুঝিয়ে বলার চাইতে হুকুম করতে বেশি পছন্দ করি। আন্তরিক ভাবে এটা করা উচিত না বা ওভাবে করলে ভালো ইত্যাদি বলার চাইতে, করতে হবে বলে অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এই মানসিকতার যেমন পরিবর্তন প্রয়োজন। তেমনি যখন আপনজনেরা আমাদের কোন কাজের সমালোচনা করে বা কোন বিষয়ে সংশোধনের পরামর্শে দেয়। বিরোধ না করে বা রেগে না গিয়ে প্রথমেই ভেবে দেখা উচিত এর পেছনে তাদের ইনটেনশন আসলে কি। তারা কি আমাদের কল্ল্যাণ কামনা করে এমনটা চাইছে নাকি অন্যকিছু। যদি দেখা যায় যে তাদের ইনটেনশন আমাদের জন্য কল্যাণময়। সেক্ষেত্রে তাদের পরামর্শ ইতিবাচক ভাবে নিতে হবে। আফরা এদিকে এসো।
এগিয়ে গেলো আফরা মারওয়ার কাছে। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে বাগানের দিকে আঙ্গুল তুলে মারওয়া বলল, দেখো ঐ ফুলের উপর প্রজাপতি বসে আছে কত আরামে, কত নিশ্চিন্তে। তুমি যদি এখন প্রজাপতিটিকে ধরতে যাও তাহলে উড়ে যাবার সম্ভাবনাই নাইনটি ফাইভ পার্সেন্ট তাই না?!

চলবে..

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৪র্থ খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৪র্থ খন্ড


আফরোজা হাসান


মারওয়া হেসে বলল, যেসব বিষয়ে আবির তোমাকে বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না। সেসব বিষয়ে তুমি আবিরকে বোঝার চেষ্টা করবে। এটাই তো রিলেশনশীপের চার্ম।
এটা রিলেশনশীপের চার্ম? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফরা।
হুম! একে অন্যের দোষ, অপরগতা, ব্যর্থতা মেনে নেয়া, মানিয়ে চলা এসবের মাঝেই লুকায়িত থাকে সম্পর্কের চার্ম। এসবের দ্বারাই তো আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। একে অন্যেকে মুগ্ধ করার যাদুমন্ত্র হচ্ছে ছোট ছোট ত্যাগ করা।
আপনার কথা অনেক কঠিন লাগছে আপি।
আচ্ছা ঠিকআছে চলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে এমন দু’একটা বিষয়ে বলো যেসব ক্ষেত্রে আবির তোমাকে বুঝতেই চায় না।
পর্দার বিষয়টা নিয়ে আবির একদমই বুঝতে চায় না আমাকে। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে আমার সাথে। বলে, আমার পর্দা নাকি ঠিকমতো হচ্ছে না। আমি যেভাবে হিযাব করি এতে নাকি পর্দার হক আদায় হয় না। আপি আপনি বলেন আমার পর্দা করা কি হচ্ছে না?
মারওয়া হেসে বলল, আবির যেদিন আমাকে প্রথম জানিয়েছিল ক্লাসের একটি মেয়েকে ওর খুব ভালো লেগে গিয়েছে। এবং যেহেতু শরীয়তে অনুমোদিত নয় এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চায় তাই চায় আমরা যাতে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। আমি মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ভেবে না জানি কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ হিযাব পরিহিতা অবস্থায় যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম খুব ভালো লেগেছিল আমার।
আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো আফরার মুখে মাওয়ারার কথা শুনে। বলল, আমি প্রাইমারীর পর থেকেই হিযাব করি আপি।
হিযাব মুসলিম মেয়েদের স্পেশালিটি। আলহামদুলিল্লাহ এই স্পেশালিটি তুমি বুঝে নিজের মাঝে ধারণ করতে পেরেছো। আর আবিরের কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে, তোমাকে পছন্দ করার পেছনে অনেক কারণ হয়তো আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি তোমার পর্দা করাটা সেইসবের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল। যেহেতু আবির আমাদের পরিবারের সবাইকে সবসময় পর্দা করতে দেখেছে। এছাড়া নিজেও সর্বাবস্থায় চেষ্টা করে শরীয়তের বিধান মেনে চলতে।
আমিও তো চেষ্টা করি শরীয়তের বিধান মেনে চলতে আপি।
এটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাবস্থায় শরীয়তের বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করাটা। তাই কোন বিষয়ে মানুষ কি বললো সেটার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীয়ত কি বললো। ধরো কেউ যদি তোমাকে বলে, ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকআত না চার রাকআত পড়তে হবে তোমাকে। কিংবা যোহরে চারের বদলে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়লেই যথেষ্ট। তুমি কি এটা মেনে নেবে?
কক্ষনো না।
কেন?
কারণ কোরআন ও হাদীস থেকে আমরা নামাজের ব্যাপারে যে নির্দেশ পেয়েছি সেটাই মানতে হবে আমাদেরকে।
একদম ঠিক বলেছো। এবং এটাই হচ্ছে মূল পয়েন্ট। কে কি বললো, না বললো তাতে কিছুই এসে যায় না। আমাদেরকে সর্বাবস্থায় দেখতে হবে শরীয়ত কি বলেছে। ঠিক তেমনি তোমার পর্দার বিষয়ে আবির বা আমি কি বলছি সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীয়ত কিভাবে পর্দা করতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে করছো। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের মানদন্ড কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আদেশ-নিষেধ। যেখানে ভুল-শুদ্ধ প্রমাণের জন্য শরীয়ত বর্তমান। সেখানে মানুষ কি বলছে তাতে কিছু এসে যায় না।
জ্বি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, আফরা তুমি নিজেকে আয়নায় দেখো। এরপর আবির তোমাকে কিভাবে দেখতে চাইছে আর শরীয়ত তোমাকে কিভাবে থাকতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে আছো সেটা বিবেচনা করে দেখো। তোমার যদি মনেহয় যে, শরীয়ত যেভাবে বলেছে তোমার পর্দা তেমনিই আছে তাহলে আবির কি বললো, না বললো শোনার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি দেখো তোমার পর্দাতে ঘাতটি রয়েছে এবং আবির সেটাই দূর করার পরামর্শ দিচ্ছে তোমাকে। এর অর্থ আবির তোমাকে সেই রুপে দেখতে চাইছে যেই রুপে শরীয়ত তোমাকে থাকতে বলেছে। অর্থাৎ, স্বামী হবার সাথে সাথে আবির তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সঠিক পথের প্রদর্শকও। এমন স্বামী পাওয়া তো যে কোন মেয়ের জন্যই সৌভাগ্যের। তাই না?
চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠলেও মুখে কিছু বললো না আফরা। নিজের সাথে ওকে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেবার সময় দিয়ে মারওয়াও আর কিছু না বলে রান্নার আয়োজনে মন দিলো।

চলবে…

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৩য় খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ৩য় খন্ড


আফরোজা হাসান


মারওয়া হেসে বলল, যেসব বিষয়ে আবির তোমাকে বুঝতে চায় না বা বুঝতে পারে না। সেসব বিষয়ে তুমি আবিরকে বোঝার চেষ্টা করবে। এটাই তো রিলেশনশীপের চার্ম।
এটা রিলেশনশীপের চার্ম? অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো আফরা।
হুম! একে অন্যের দোষ, অপরগতা, ব্যর্থতা মেনে নেয়া, মানিয়ে চলা এসবের মাঝেই লুকায়িত থাকে সম্পর্কের চার্ম। এসবের দ্বারাই তো আকর্ষণ বৃদ্ধি পায়। একে অন্যেকে মুগ্ধ করার যাদুমন্ত্র হচ্ছে ছোট ছোট ত্যাগ করা।
আপনার কথা অনেক কঠিন লাগছে আপি।
আচ্ছা ঠিকআছে চলো তোমাকে বুঝিয়ে বলছি। আমাকে এমন দু’একটা বিষয়ে বলো যেসব ক্ষেত্রে আবির তোমাকে বুঝতেই চায় না।
পর্দার বিষয়টা নিয়ে আবির একদমই বুঝতে চায় না আমাকে। সারাক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করে আমার সাথে। বলে, আমার পর্দা নাকি ঠিকমতো হচ্ছে না। আমি যেভাবে হিযাব করি এতে নাকি পর্দার হক আদায় হয় না। আপি আপনি বলেন আমার পর্দা করা কি হচ্ছে না?
মারওয়া হেসে বলল, আবির যেদিন আমাকে প্রথম জানিয়েছিল ক্লাসের একটি মেয়েকে ওর খুব ভালো লেগে গিয়েছে। এবং যেহেতু শরীয়তে অনুমোদিত নয় এমন সবকিছু থেকে দূরে থাকতে চায় তাই চায় আমরা যাতে তোমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করি। আমি মনে মনে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম ভেবে না জানি কেমন মেয়ে পছন্দ করেছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ হিযাব পরিহিতা অবস্থায় যখন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম খুব ভালো লেগেছিল আমার।
আনন্দের হাসি ফুটে উঠলো আফরার মুখে মাওয়ারার কথা শুনে। বলল, আমি প্রাইমারীর পর থেকেই হিযাব করি আপি।
হিযাব মুসলিম মেয়েদের স্পেশালিটি। আলহামদুলিল্লাহ এই স্পেশালিটি তুমি বুঝে নিজের মাঝে ধারণ করতে পেরেছো। আর আবিরের কথা যদি বলি তাহলে বলবো যে, তোমাকে পছন্দ করার পেছনে অনেক কারণ হয়তো আছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি তোমার পর্দা করাটা সেইসবের মধ্যে অন্যতম একটি কারণ ছিল। যেহেতু আবির আমাদের পরিবারের সবাইকে সবসময় পর্দা করতে দেখেছে। এছাড়া নিজেও সর্বাবস্থায় চেষ্টা করে শরীয়তের বিধান মেনে চলতে।
আমিও তো চেষ্টা করি শরীয়তের বিধান মেনে চলতে আপি।
এটাই আসলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সর্বাবস্থায় শরীয়তের বিধান মেনে চলতে চেষ্টা করাটা। তাই কোন বিষয়ে মানুষ কি বললো সেটার চেয়ে জরুরি হচ্ছে শরীয়ত কি বললো। ধরো কেউ যদি তোমাকে বলে, ফজরের ফরজ নামাজ দুই রাকআত না চার রাকআত পড়তে হবে তোমাকে। কিংবা যোহরে চারের বদলে দুই রাকআত ফরজ নামাজ পড়লেই যথেষ্ট। তুমি কি এটা মেনে নেবে?
কক্ষনো না।
কেন?
কারণ কোরআন ও হাদীস থেকে আমরা নামাজের ব্যাপারে যে নির্দেশ পেয়েছি সেটাই মানতে হবে আমাদেরকে।
একদম ঠিক বলেছো। এবং এটাই হচ্ছে মূল পয়েন্ট। কে কি বললো, না বললো তাতে কিছুই এসে যায় না। আমাদেরকে সর্বাবস্থায় দেখতে হবে শরীয়ত কি বলেছে। ঠিক তেমনি তোমার পর্দার বিষয়ে আবির বা আমি কি বলছি সেটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শরীয়ত কিভাবে পর্দা করতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে করছো। জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের মানদন্ড কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আদেশ-নিষেধ। যেখানে ভুল-শুদ্ধ প্রমাণের জন্য শরীয়ত বর্তমান। সেখানে মানুষ কি বলছে তাতে কিছু এসে যায় না।
জ্বি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, আফরা তুমি নিজেকে আয়নায় দেখো। এরপর আবির তোমাকে কিভাবে দেখতে চাইছে আর শরীয়ত তোমাকে কিভাবে থাকতে বলেছে এবং তুমি কিভাবে আছো সেটা বিবেচনা করে দেখো। তোমার যদি মনেহয় যে, শরীয়ত যেভাবে বলেছে তোমার পর্দা তেমনিই আছে তাহলে আবির কি বললো, না বললো শোনার কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি দেখো তোমার পর্দাতে ঘাতটি রয়েছে এবং আবির সেটাই দূর করার পরামর্শ দিচ্ছে তোমাকে। এর অর্থ আবির তোমাকে সেই রুপে দেখতে চাইছে যেই রুপে শরীয়ত তোমাকে থাকতে বলেছে। অর্থাৎ, স্বামী হবার সাথে সাথে আবির তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী ও সঠিক পথের প্রদর্শকও। এমন স্বামী পাওয়া তো যে কোন মেয়ের জন্যই সৌভাগ্যের। তাই না?
চেহারায় হাসির রেখা ফুটে উঠলেও মুখে কিছু বললো না আফরা। নিজের সাথে ওকে কিছুটা বোঝাপড়া করে নেবার সময় দিয়ে মারওয়াও আর কিছু না বলে রান্নার আয়োজনে মন দিলো।

চলবে…

 

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি?(পর্ব-২)

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি?(পর্ব-২)


আফরোজা হাসান


অংক, ইংরেজি, ফিজিক্স, কেমেস্ট্রিতে নাম্বার কখনো কম পেলে নাকীবকে অবশ্যই আমার জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে। কারণ এসব ওর পছন্দের বিষয়। তাছাড়া একদমই যদি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে নাহয় তাহল নিজের মান উন্নয়নে গাফেল হয়ে যাবে। কিন্তু ভূগোল, ইতিহাসে পাশ মার্ক কিংবা তারচেয়ে এক দুই বেশি পেলেই আমি খুশি। অনেক সময় একটি দুটি অপছন্দনীয় বিষয়ের চাপের কারণে অন্যান্য সব বিষয়ের এমনকি সবচেয়ে পছন্দের বিষয়ের রেজাল্টও খারাপ হয়ে যায়।এক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় সন্তানের পাশে থাকা, সাহস যোগানো এবং অনর্থক আশা চাপিয়ে না দেয়া। সন্তানের রেজাক্ট আশানুরূপ না হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ পিতামাতার বিচার বিবেচনাহীন অতি আশা, উচ্চাশা।

তবে স্কুলের রেজাল্টের চাইতেও আমার কাছে অন্য একটি বিষয় সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ। সেটি হচ্ছে শরীয়তের মানদন্ডে আমার সন্তানের অ্যাক্টিভিটি। একটা বাচ্চা সবদিক দিয়ে কখনোই পার্ফেক্ট হবে না। আমার ছেলে হয়তো ভূগোলে টপ করেনি কিন্তু রমজানে সে এক মাস রোজা রেখেছে, তারাবীহ আদায় করেছে কোন রকম আলসেমি ছাড়া আলহামদুলিল্লাহ। সেই সময় যখন তার স্কুল খোলা ছিল, ফাইনাল এগজাম চলছিল। ইউরোপে সামার শুরু হয়ে গিয়েছিল। রোজার দৈর্ঘ্য প্রায় সতেরো ঘন্টা। স্কুলে স্পোর্টস ক্লাসে নানান ধরণের অ্যাক্টিভিটি করতে হয়। আমি বাসায় বসে শঙ্কিত অনুভব করতাম রোজা রেখে না জানি কিভাবে আমার ছেলেটা স্পোর্টস ক্লাস করছে। কিন্তু নাকীব মাশাআল্লাহ হাসতে হাসতে বাসায় ঢুকেছে স্কুল থেকে। কখনোই বলেনি ক্ষুধা লেগেছে, পিপাসা পেয়েছে কিংবা আজকে রোজা রাখতে, তারাবীহ পড়তে চাইনা। আমার ছেলে হয়তো ইতিহাস পড়া নিয়ে গড়িমসি করে কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে কখনো গড়িমসি করতে দেখিনি আলহামদুলিল্লাহ। হয়তো কখনো সখনো দু’একদিন হোমওয়ার্ক করতে ভুলে যায়। কিন্তু আমাকে সাহায্য করার ব্যাপারে কখনোই ওর ভেতর কার্পণ্য, বিরক্তি দেখিনি। আমি ভুলোমনা স্বভাবের। বাজারের লিস্ট করার পরও দেখা যায় দরকারি অনেক কিছু লিখতে ভুলে গিয়েছি। এমনও হয় আমার ভুলো মনা স্বভাবের কারণে নাকীবকে একবারের জায়গায় তিন চারবার সুপার মার্কেটে যেতে হয় পরাপর। কখনো দেখিনি বিরক্ত হচ্ছে, মুখের উপর বলছে আমি পারবো না। বরং হাসে, মজা পায় মায়ের মেমোরির দশা দেখে, আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার ছেলের এই সমস্ত উত্তম গুণাবলীকে কিভাবে অবমূল্যায়ন করবো শুধুমাত্র ওর রেজাল্ট আমার মানদণ্ডকে ছুঁয়ে না দিলে?! এটা কি সন্তানের উপর সুস্পষ্ট অবিচার করা হবে না? আমার এই অবিচার কি আমার সন্তানের উত্তম গুণাবলীকে প্রভাবিত করবে না? ভাবতেই পারে আমি আম্মুতার জন্য একবারের জায়গায় চারবার সুপার মার্কেটে যেতে পারি, অথচ আম্মুতা আমার একটা ভুল কিংবা অপারগতা মেনে নিতে পারলো না?!

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমরা কতটুকু সময় দিচ্ছি বাচ্চার পেছনে। প্রি স্কুল, কিন্ডার গার্ডেনে আমরা সারাক্ষণ লেগে থাকি বাচ্চার পেছনে। প্রতিটা বিষয় হাতে ধরে শেখাই। একবারের জায়গায় দশবার বলতে,বোঝাতে আমাদের বিরক্ত লাগে না। কিন্তু বাচ্চা যত বড় হতে থাকে আমাদের লেগে থাকা, হাতে ধরে কোন কিছু বোঝানোর মাত্রা ততই কমতে থাকে। আমরা তখন এটা করো, ওটা করো, সেটা করো না, ওমনটা করতে হয়না এই সমস্ত হুকুম দিয়েই দায়িত্ব পালন হয়ে গিয়েছি মনে করি। হ্যা সন্তান যখন বড় হয় তখন তাকে নিজের দায়িত্ব সমূহ পালন করার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু তাই বলে পিতামাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন ছেড়ে দেয়া যাবে না। নাকীব একদিন হোমওয়ার্ক নিতে ভুলে গিয়েছিল বিধায় ওর এক পয়েন্ট কেটে নেয়া হয়েছে। আমি এজন্য নাকীবকে নেতিবাচক কিছু বলিনি। বলেছি আর কখনো যাতে এমনটা নাহয় সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। কারণ আমার মনে হয়েছে ভুলের পেছনে আমিও নাকীবের সমান কিংবা ওর চেয়ে বেশি দায়ী। প্রাইমারিতে যেমন প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাবার আগে নাকীবের স্কুল ব্যাগ চেক করে দেখতাম সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা। এখন নিজে না করলেও ঘুমোতে যাবার আগে নাকীবকে অন্তত মনে করিয়ে দেয়া উচিত আগামীকাল স্কুলের জন্য পরিপুর্ণ ভাবে প্রস্তুত কিনা। কেননা কখনো ভুল করে, কখনো অনিচ্ছায়, কখনো অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বাচ্চারা তো ভুল করবেই। পিতামাতা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব সেই ভুল সমহুকে প্রতিহত করা, সন্তানকে সঠিক পথে পরিচালিত করা। শুধু সঠিক পথের দিশা বাতলে দিলেই কিন্তু হবে না। হাত ধরে সঠিক পথে চলতে হবে ঠিক সেই সময়ের মতো যখন সন্তান কেবল মাত্র পিতামাতার হাত ধরে একপা দুপা করে হাঁটতে শিখেছিল। হাত ছাড়লেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাবার ভয় ছিল।

(শেষ পর

 

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? (পর্ব-১)

সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? (পর্ব-১)


আফরোজা হাসান


অমনোযোগ, অবহেলা, গাফলতি, ফাঁকিবাজি কিংবা কারণ যেটাই হোক সন্তান যদি আশানুরূপ রেজাল্ট না করে সেক্ষেত্রে পিতামাতার করণীয় কি? পিতামাতার অ্যাকশন কেমন হওয়া উচিত সন্তানের সাথে? সন্তানকে সান্ত্বনা দেয়া উচিত নাকি তিরষ্কার করা? সন্তানকে উৎসাহ দেয়া উচিত যাতে পরবর্তীতে লেখাপড়ায় মনোযোগী হয় নাকি হুমকি, ধামকি দেয়া উচিত? কি উচিত আর কি অনুচিত এই প্রশ্ন থাক আপাতত। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের অ্যাকশন কেমন হয়? আমার মনেহয় এই সময়টাতেই সন্তানদের সবচেয়ে বেশি সাপোর্টের প্রয়োজন হয় পিতামাতার। আমার পুত্রের কথা যদি বলি ছোটবেলা থেকেই নাকীবের ভালো লাগা, মন লাগা, ভীতি, আনন্দ, খুশি আমার কাছে নিজের এই সমস্ত আবেগের চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নাকীব যখন তেলাপোকা দেখে ভীত হয় তখন ওর মনে সাহস যোগানোর জন্য আমি ছোটবেলায় যেমন ওর পাশে থাকতাম, এখনো থাকি। পাশে থেকে ওকে সাহস যোগাই, এই ভয় থেক বেরিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহ দেই। কিন্তু আমি কখনোই বলি না এখন তো তুমি বড় হয়েছো, সামান্য একটা তেলাপোকাকে ভয় পাওয়ার কি আছে? কিংবা ছেলে হয়ে তেলাপোকাকে ভয় পাও? কি লজ্জা! কি লজ্জা! হয়তো আমার সাপোর্ট আর পাশে থাকার কারণেই বেশ কিছুদিন আগে নাকীব একটা মৃত তেলাপোকাকে টিস্যু দিয়ে ধরে ডাস্টবিনে ফেলার মতো বিশ্বজয় করে ফেলেছিল। এই কর্ম সাধনের পর নাকীবের উল্লাস বিশ্বজয়ের চেয়ে কোন অংশে কম ছিল না। নাকীবের সাথে উল্লাসিত আমি তখন বলেছিলাম, দেখেছো তুমি চাইলেই পারো। নাকীবও সমর্থন সূচক মাথা ঝাঁকিয়েছিল। সবজি খাওয়াটা খুবই জরুরি। কিন্তু নাকীবের সবজি ভীষণ অপছন্দ। জোর করে, বাধ্য না করে আমি আমি আমার রাঁধুনি সত্ত্বার ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে এমন ভাবে সবজি রান্না করেছি নাকীব খুশি মনেই খেয়ে নিয়েছে। এমনটা শুধু আমি না, বেশিরভাগ মায়েরাই করেন সন্তানের খুশির জন্য, কমফোর্টের জন্য।

নাকীব সেকেন্ডারি স্কুলে উঠার পর নতুন নতুন অনেক বিষয় পাঠ্যসূচিতে সামিল হয়েছে। তারমধ্যে ভূগোল আর ইতিহাস নাকীবের কাছে আতঙ্কের বিষয়। নাকীব যখন ওর আতঙ্কের কথা আমাকে জানিয়েছিল আমি ওকে চাপ প্রয়োগ করিনি এই বিষয় দুটোকে ভালো লাগানোর জন্য। আমি যখন সেকেন্ডারিতে ছিলাম অর্থনীতি আর পৌরনীতি এমন আতঙ্কের ছিল আমার কাছে। তাই নাকীবের অবস্থাটা অনুভব করতে পারছিলাম। পাঠ্যসূচিতে থাকা প্রতিটা বিষয় একজন স্টুডেন্টের কাছে সমান প্রিয় হওয়াটা অসম্ভব। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে আমার সন্তানের টার্গেট যদি থাকে প্রোগ্রামার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা গবেষক হওয়ার। সেক্ষেত্রে আমি কেন তাকে জোর করে ভূগোল, ইতিহাসে মনোযোগী করার চেষ্টা করবো? সব বিষয়ে কেন তাকে জোর করে দশে দশ পেতে বাধ্য করবো? অপছন্দীয় বিষয়ে কম পেলে কেন তাকে শাস্তি দেবো, তিরষ্কার করবো, অন্যের সাথে তুলনা করবো? আমি নাকীবকে বলেছি তুমি তোমার সাধ্যমতো চেষ্টা করো। ঠিকআছে তুমি দশে দশ না পাও কিন্তু ইতিহাস ও ভূগোল সম্পর্কেও তোমাকে জানতে হবে। আর জানার জন্য তো তোমাকে পড়তেই হবে। আমার কথা শুনে নাকীব অনেকটাই আশ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। ( চলবে)

 

আবারো বোরকা পরে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!

আবারো বোরকা পরে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা!
রাজবাড়ী ও বালিয়াকান্দি (রাজবাড়ী)


নারী সংবাদ


ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসা ছাত্রী নুসরাতকে বোরকা পড়ে পুড়িয়ে হত্যার রেশ কাটতে না কাটতেই এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে। দগ্ধ কিশোরী খানখানাপুর তমিজউদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

এ ঘটনায় শনিবার সকালে রাজবাড়ী সদর থানায় ভূক্তভোগী স্কুল ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে তার এলাকার স্বামী প্রবাসী শিল্পী বেগম নামের এক মহিলাসহ অজ্ঞাত ৪ ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেছেন।

স্কুল ছাত্রীর মা নাসিমা বেগম বলেন, ঈদের দিন (বুধবার) স্থানীয় প্রতিবেশী শিল্পী বেগম আমার মেয়ের কাছে অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক ও আপত্তিকর ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এতে আমার মেয়ে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে বাড়িতে দুই বোন জাম খাচ্ছিল আর আমি তখন ঘরের মধ্যে ঘুমাচ্ছিলাম।

এসময় আমার ছোট মেয়ের চিৎকারে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পরে বড় মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই বোরখা পড়া দুইজন লোক তাকে তুলে নিয়ে গেছে বলে জানায়। তখন আমিও চিৎকার করতে থাকি। আমার চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অনেক খোজাখুজির পর ঘরের পিছনের পাটক্ষেত থেকে বড় মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।

দগ্ধ স্কুলছাত্রীর বড় ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র মোঃ সোহেল ব্যাপারী বলেন, এ ঘটনায় গত (শুক্রবার) রাতে আমি নিরাপত্তাহীনতার কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করি। কিছুক্ষণ পর রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার পুলিশ পাঠিয়ে থানায় ডেকে নিয়ে বিস্তারিত শোনেন। পরে আমাকে মামলা দায়েরের পরামর্শ প্রদান করেন।

ওই স্কুল ছাত্রী বলেন, পাশের গ্রামের রাজু নামে একটি ছেলে আমাকে পছন্দ করতো। এ পছন্দের কথা স্থানীয় বাসিন্দা শিল্পী বেগম জানতো আর এটাকে কেন্দ্র করেই সে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বিষয়টি পরিবারকে জানাই। পরদিন বৃহস্পতিবার সে ওড়না দিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে গায়ের জামায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

পাশের বাড়ির বাসিন্দা সাথী সরকার জানান, চিৎকার চেচামেচিতে আমরাও এগিয়ে গিয়ে স্কুল ছাত্রীকে উদ্ধার করি। তার মাথায় আঘাতের চিহ্নসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল এবং গায়ের জামা কাপড় ছেড়া ছিল।

এ বিষয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি জানান, এ ঘটনায় রাজবাড়ী সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দুইটি টিম মাঠে কাজ করছে এবং আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া

বাচ্চাদের শাস্তি দেয়া


আফরোজা হাসান


গতকাল আমার এক ক্ষুদে স্টুডেন্ট অনেক মন খারাপ করে ছিল সারা ক্লাসে। ক্লাস শেষে ওকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে তোমার? এতো মন খারাপ করে আছো কেন? কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, আমি দুষ্টুমি করেছিলাম তাই আম্মু আমাকে বলেছে দুইদিন কার্টুন দেখতে পারবো না। এরপর তো সে কত অল্প একটু দুষ্টুমি করেছে আর আম্মু তাকে কত বড় শাস্তি দিয়েছেন তার লম্বা ফিরিস্তি দিলো। তার প্রিয় কার্টুন গুলো দেখতে পারবে না সেই আহাজারি করলো। আকার ইঙ্গিতে বোঝাল যে আম্মু তার সাথে অন্যায় করেছেন। ইচ্ছে করলেই আম্মু মাফ করে দিতে পারতেন তাকে সেটাও বুঝিয়ে দিলো কথা দিয়ে।

আমি মাঝে মধ্যে বাচ্চাদের শাস্তি দেয়ার পক্ষে। কারণ সবসময় যদি ক্ষমা করে দেয়া হয় তাহলে ভুলের প্রতি সাবধানতা বা সতর্কতা তৈরি হয় না বাচ্চাদের মনে। বরং বিশ্বাস জন্মে যায় যে সে যাই করবে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। এই বিশ্বাস তার ছোট ছোট ভুলগুলোকে বড় বড় ভুলের পথে টেনে নিয়ে যাবে। কিন্তু শাস্তি হিসেবে পছন্দের জিনিস বন্ধ করে দেয়ার পক্ষে নই আমি। কারণ এতে বাচ্চাদের মনে চাপ পড়ে। অন্যায় করেছে সেই অনুশোচনার চেয়েও প্রিয় কিছু না পাবার কষ্ট বেশি কাজ করে মনে। বাবা-মা তাকে বোঝে না, ভালোবাসে না ইত্যাদি নানা ধরণের ভাবনা দানা বাঁধে মনে। অনেক সময় এই ধরণের শাস্তি ইমোশনালি অ্যবিউজের মধ্যেও পড়ে যায়।

বাচ্চারা দুষ্টুমি, ভুল, অন্যায় করবেই আর শাস্তিও তাদের দিতেই হবে মাঝে মধ্যে। আমি শাস্তি হিসেবে আমার বাচ্চাদের পছন্দের জিনিস কখনোই বন্ধ করি না। আমি যা করি তা হচ্ছে ওদের সবচেয়ে অপছন্দের কাজটি করাই শাস্তি হিসেবে। নাকিবের সবচেয়ে অপছন্দ হচ্ছে মাছ আর সব্জি। নুহেরির অপছন্দ ফল আর দুধ। নাকিব যদি কোন অন্যায় করে আমি মুখে কিছুই বলি না। খাবারের সময় হলে বিশাল বড় একটা মাছ ফ্রাই আর বড় এক বাটি সব্জি দিয়ে বসিয়ে দেই টেবিলে। মিষ্টি করে হেসে মাছ আর সব্জির পুষ্টিগুণ আর কেন এসব খেতে হবে বুঝিয়ে বলি। নুহেরির ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই করি। শাস্তি হচ্ছে বুঝতে পেরে খাবো না বলারও সাহস পায় না ওরা।

আমরা বোনেরা যখন ছোট ছিলাম ঠিক এই পদ্ধতিতেই আমাদেরকে শাস্তি দিতেন আমাদের বড় ভাইয়ারা। মুখে কোনদিনও কিছু বলতেন না। অপছন্দের জিনিস করিয়ে নিতেন শাস্তি স্বরূপ। আমারো নুহেরির মতোই দুধ আর ফল হচ্ছে সবচেয়ে অপছন্দ। বিশাল বড় এক গ্লাস দুধ আর ফলের বাটি যখন সামনে আসতো মনে মনে প্রতিজ্ঞা করতাম এই ভুল আর জীবনে করবো না। ভাইয়াদের প্রতি রাগ বা বিরক্তি আসতো না মনে কারণ উনারা হাসি মুখে পাশে বসে গল্প গুজব করতেন। খাদ্যের পুষ্টিগুণ শোনাতেন। নিজের উপরই বিরক্তি আসতো। মনেহতো কেন যে করতে গিয়েছিলাম এমন বোকার মতো কাজ। নয়তো এসব খেতে হতো না।

আমার মতে শাস্তি হতে হবে এমন যা বাচ্চাদেরকে তাদের ভুলকে উপলব্ধি করতে সহায়তা করবে। আর যাতে এমন ভুল না হয় সে ব্যাপারে সাবধানী হতে সাহায্য করবে। এবং যারা শাস্তি দিচ্ছেন তাদের প্রতিও কোন বিদ্বেষের জন্ম হবে না মনে। কারণ বড়রা তো আসলে মঙ্গলের জন্যই শাস্তি দেন। কিন্তু বাচ্চারা যদি এটা অনুভব না করে তাহলে শাস্তি তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হবে। তাই শাস্তি এমন হওয়া উচিত যা অভিভাবক এবং বাচ্চা উভয়ের জন্য ফলপ্রসূ।

 

সিরাজদিখানে ৭০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি, সন্তান ফেরত চাচ্ছেন মা

সিরাজদিখানে ৭০ হাজার টাকায় নবজাতক বিক্রি, সন্তান ফেরত চাচ্ছেন মা


নারী সংবাদ


সিরাজদীখান উপজেলার নিমতলা এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে নবজাতক বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ওই এলাকার আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে এক নবজাতক বিক্রি করার খবর পাওয়া যায়। এছাড়া অপর আরেকটি নবজাতক বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়।

আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ১৫ দিন আগে হাবিবা বেগম (২৫) নামে এক গৃহবধূ সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করার পর ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়া হয়। বেসরকারি ওই হাসপাতালের ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার নীলা নবজাতকের মা হাবিবা বেগমকে টাকার প্রলোভনে ফেলে জনৈক এক ব্যক্তির কাছে নবজাতক বিক্রি করে। মা হাবিবা বেগম এখন তার সন্তান ফেরত চাইছেন।

তিনি অভিযোগ করেন-তার সন্তান বিক্রি করে দেয়ার পর তিনি কোন টাকা পাননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার কাছ শুধু মাত্র সিজার করার বিল নেয়নি। গৃহবধূ হাবিবা উপজেলার কাজীশাল গ্রামের বাবু মিয়ার স্ত্রী। হাসপাতালের ম্যানেজার ইয়াসমিন আক্তার নীলা বলেন,‘এর সাথে আমি জড়িত না, স্ট্যাম্প করে তারা নিজেরাই বিক্রি করেছে ।’

এদিকে, ঈদের দিন একই হাসপাতালে উপজেলার বাসাইল গ্রামের লিটন শেখের স্ত্রী কুলসুম বেগম এক সন্তান প্রসব করে। এর আগেই তার নবজাতক বিক্রির জন্য প্রলোভন দেখায় নিমতলা এলাকার হলি কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডি ল্যাব নামে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন নার্স। কুলসুম বেগম আলট্রসনোগ্রাম করতে গেলে নবজাতক প্রসবের সাথে সাথে তা অবগত করার জন্য ওই নার্স হলি কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডি ল্যাব এর নাম্বার দিয়ে দেন। জন্মের দুই দিন পর নবজাতক বিক্রির জন্য বাবা লিটন শেখ হলি কেয়ারের ওই নাম্বারে কল করলে কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু ঘটনাটি এলাকায় জানাজানি হলে কেউ আর নবজাতক কেনার জন্য আসেনি। এতে নবজাতক বিক্রির হাত থেকে বেঁচে যান মা কুলসুম বেগম।

নবজাতক বিক্রি প্রসঙ্গে আইডিয়াল জেনারেল হাসপাতালের মালিক মো. সালাহউদ্দিন জানান, ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে স্ট্যাম্প করে নবজাতক বিক্রি করার খবর শুনেছি। এর উপযুক্ত বিচার হওয়া উচিত।

অপর বেসরকারি হাসপাতাল হলি কেয়ার হাসপাতাল অ্যান্ড ডি ল্যাবের মালিক শহীদুল মোড়ল বলেন- ‘আমার হাসপাতালের কোন কর্মকর্তা নবজাতক বিক্রির জন্য মোবাইল নাম্বার দিয়ে থাকলে তার উপযুক্ত বিচার করা হবে।’

মুন্সীগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করলে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

ঈদ মোবারক । মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানো ও মেয়েদের ঈদের নামাজ।

ঈদ মোবারক । মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানো ও মেয়েদের ঈদের নামাজ।


সত্যলিখন


আসসালামুআলাইকুম ।
ঈদ মোবারক ঈদ মুবারক ঈদ মুবারক

প্রবাসী দেশি দুরের কাছে আত্নীয় ও আত্নার সাথে সম্পর্কিয় সকল প্রান প্রিয় ব্লগার ভাই বোন ছেলে মেয়ে সবাইকে জানাই আমার প্রান ঢালা ঈদুল আযহার আন্তরিক শুভেচ্ছা ।ঈদুল আযহা বয়ে নিয়ে আসুক আমার আপনার জীবনে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।

আমাদের কে আল্লাহ সকল গুনা খাতা মাফ সহ সকল পাপপংকিলতা দূর করে দিয়ে চরম ধৈর্যশীল , তাকয়াবান , আল্লাহর হুকুম পালনে নিষ্টাবান , পিতা মাতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল , আদর্শ স্বামী আর সেই স্বামীর আদেশ পালনে বিনয়ী ও আনুগত্যশীল স্ত্রী হওয়া সহ সকল প্রকার ঈমানী এলেমী ও আমলী অর্জন করার তাওফিক দান করুন । আল্লাহ নিরীহ পশুটার সাথে আমাদের মনের পশুত্ব আচরন টাও কোরবানী করে খতম করে দিক ।

“তাকাব্বাল আল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (মহান আল্লাহ আমার ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন)। আমীন ।

মেয়েদের হাতে মেহেদী লাগানোঃ

শুধু ঈদে নয়, মেয়েদের হাতে সারাবছরই মেহেদী লাগানো উচিত । রাসূল (ছাঃ) মেহেদী ছাড়া মেয়েদের হাত কে, পুরুষের হাতের সাথে তুলনা করেছেন । তবে মেয়েদের মত পুরুষদের মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয নয় । কারণ মেহেদী এক ধরণের রঙ । আর পুরুষদের জন্য রঙ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, জেনে রাখো যে, পুরুষদের খোশবূ (সৌন্দর্য) এমন, যাতে সুগন্ধি আছে রং নেই । পক্ষান্তরে নারীদের খোশবূ এমন, যাতে রং আছে কিন্তু তা থেকে সুগন্ধি বিচ্ছুরিত হয় না” (তিরমিযী, নাসাঈ, সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৪৪৩)

তবে পুরুষদের জন্য পাকা দাড়ি ও চুলে মেহেদী ব্যবহার করার কথা হাদীছে এসেছে কিন্তু তাতে কালো রং (কলপ) ব্যবহার করতে রাসূল (ছাঃ) কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন” (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২৮) মহিলাদের জন্য হাতে-পায়ে মেহেদী ব্যবহার করা জায়েয (আবুদাঊদ হা/৪১৬৫)। মেহেদীর রং ওযূর কোন ক্ষতি করে না। পুরুষের জন্য মেহেদী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/২১৮)।

মেয়েদের ঈদের নামাজঃ

বোন ! ঈদের নামাজ পড়ার জন্য মানষিকভাবে প্রস্ত্তত হচ্ছেন তো ??

উম্মে আতিয়্যা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃদ্ধা, ঋতুবতী ও পর্দানশীল সকলের জন্য আদেশটি বহাল ছিল। তবে ঋতুবতী নারী ঈদের নামাজ থেকে বিরত থাকবে এবং কল্যাণ (নসিহত শ্রবণ) ও মুসলমানদের সাথে দুআয় শামিল থাকবে।

তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল; আমাদের মধ্যে কারো বড় চাদর না থাকলে সে কী করবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : তার কোন বোন তাকে নিজের চাদর পরিধান করতে দেবে। (সহীহ মুসলিম)

রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন: “কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন কি ঋতুবতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুবর্তী মহিলাগণ নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দু’আতে শরীক হবে।” (বুখারীঃ হাদীস নং ৯২৭)

এ সুন্নাত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের জাতীয় ঈদগাহ সহ অনেক এলাকায় আজো প্রচলিত আছে। সুতরাং যে সব এলাকায় তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের কর্তব্য হল, আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই আনন্দঘন পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসা।

তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান করা জরুরী। মহিলাগণ যখন বাড়ি থেকে বের হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে।

সংগ্রহঃ বিডি টুডে ব্লগ থেকে….।

 

অন্ধের চাঁদ দেখা

অন্ধের চাঁদ দেখা


কানিজ ফাতিমা


এক অন্ধ লোক ঈদের সকালে বাড়ীর সামনে মনমরা হয়ে বসে আছে –

এক যুবক পাজামা পাঞ্জাবী পরে নামাজে যাচ্ছিলো।
বৃদ্ধকে দেখতে পেয়ে বললো,
” চাচা ঈদের নামাজে যাবেন না ?”

– কিভাবে যাই ? চাদ তো দেখি নাই।
“কেন চাচা, আমরা তো দেখেছি।”

– হ্যা তা দেখেছো – তাই এটা তোমাগো ঈদ। তোমার দেখনে আমার হইবে না। আমার দেখোন লাগবো, খালি চক্ষে।

“তা চাচা আপনি তো অন্ধ, দেখবেন কেমনে?”

– সেই জন্যইতো আমার ঈদ নাই। হাদিসে বলছে তোমরা চাঁদ দেখে ঈদ করো।

“চাচা, রাসূল সাঃ তো “দেখা” বলতে হিসাব বুঝাইছেন। তোমরা চাঁদ দেখে ঈদ করো মানে তোমার চাঁদের হিসাবে ঈদ করো। “

– বেশী বুঝছ ? বেশী আধুনিক হইছোছ? হাদিসে স্পষ্ট আইছে দেখার কথা।

” চাচা, নামাজ কি সূর্য দেইখা পড়েন? নাকি ঘড়ি দেইখা? হাদিসে তো সূর্যের হিসাব আইসে। যাকাত কি ফসলে দেন নাকি টাকায় ? হাদিসে তো ফসলের হিসাব আইছে। সেহেরীর সময় কি বাইরে গিয়া লাল আর কালা সুতার তফাৎ করেন নাকি চার্ট দেইখা করেন? হাদিসে তো সুতার রঙের তফাতের কথা আইসে। যাউকগা আপনারে বুঝাইতে গিয়া ঈদের আনন্দ মাটি করতে চাই না। হাদিস বোঝার ক্ষমতা আল্লাহ সবাইরে সমান দেন নাই। নবীদের আল্লাহ প্রজ্ঞা দিছেন , তাদের কথা বুঝতেও প্রজ্ঞা লাগে। হেইডা আল্লাহ সবাইরে দেন নাই।”

“ঈদ মোবারক।”

 

ঈদের রাতের ইবাদত

ঈদের রাতের ইবাদত


অন্যান্য


হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে আল্লাহ তাআলা চার রাতে সব ধরনের কল্যাণের দরজা খুলে দেন। যেমন- ঈদুল আজহার রাত, ঈদুল ফিতরের রাত ও ১৫ শাবানের রাত ও আরাফার রাত। আর তা এভাবে ফজরের আজান পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
ঈদ আমাদের মাঝে আনন্দের নিয়ে আসে এবং আল্লাহর নৈকট্যলাভের মহাসুযোগ এই ঈদের রাত।

হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি,

হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাত জাগবে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। যেদিন (হাশরের দিন) সবার অন্তর মারা যাবে, সেদিন তার অন্তর মরবে না।

পাঁচ রাত জেগে থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব। সেই পাঁচটি রাত হলো-
এক. জিলহজ মাসের আট তারিখের রাত।
দুই. জিলহজের ৯ তারিখের রাত।
তিন. ঈদুল আজহার রাত।
চার. ঈদুল ফিতরের রাত।
পাঁচ. ১৫ শাবানের রাত।

হাদিসের মর্মার্থ তো এই, কেয়ামতে ভয়াবহ তাণ্ডবের সময় প্রতিটি মানুষের অন্তর যখন হাশরের ময়দানে ভয় আশঙ্কা অস্থিরতায় মৃতপ্রায় হয়ে থাকবে। মানুষের হুশ-জ্ঞান বলতে থাকবে না কিছু। ঈদের রাতে আমলকারীর হৃদয় তখনও সজীব ও সতেজ থাকবে। সেদিন তার অন্তর মারা পড়বে না। বরং থাকবে সদা প্রফুল্ল।

ঈদের রাতের আরেকটি বড় প্রাপ্তি হলো, এ রাতে দোয়া কবুল করা হয়। আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চাইব। কবরের আজাব থেকে মুক্তি চাইব।
আজকের রাত আমাদের জন্য, এই দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ লাভ এবং মঙ্গল কামনা করার রাত।

“ঈদ মোবারক”
আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের নিকট থেকে ইবাদতসমুহ কবুল করুন।
“আমিন”

 

অভিমানী মনের আত্মদহন… ২য় খন্ড

অভিমানী মনের আত্মদহন… ২য় খন্ড


আফরোজা হাসান


রান্নাঘরে ঢুকে মারওয়া চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। দেখে মনেহচ্ছে পুরো রান্নাঘরের উপর দিয়ে ছোট ছাট ঝড় বয়ে গিয়েছে। আফরা লাজুক স্বরে বলল, আমি নাস্তা বানানোর পর রান্নাঘর গোছানোর সময় পাইনি আপি।
মারওয়া হেসে বলল, কোন সমস্যা নেই। আমি রান্না করার সময় এরচেয়েও ভয়াবহ অবস্থা হয় রান্নাঘরের।
আফরা হেসে বলল, আমাকে সান্ত্বনা দেবার জন্য এমন বলছেন আপি সেটা জানি। গতকাল যখন আপনি রান্না করেছেন আমি দেখেছি সবকিছু কত সুন্দর করে গোছানো ছিল।
মারওয়া হেসে বলল, যখন রান্না করছিলাম তখন তুমি দেখেছো। যখন রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন তো দেখোনি। আমি আগে রান্নার সমস্ত উপকরণ রেডি করে নেই। এরপর রান্নাঘর গুছিয়ে তারপর রান্না করি। আমার মনেহয় রান্নাঘর গোছানো থাকলে রান্না করার আনন্দ অনেক বেড়ে যায়। সেই আনন্দের কিছুটা রান্নার উপকরণের সাথে মিশে স্বাদও বাড়িয়ে দেয় খাবারের।
আপনি অনেক মজা করে কথা বলেন আপি। আবির এখানে আসার সময় আমাকে বলেছে আপির কাছ থেকে আর কিচ্ছু শিখতে হবে না তোমাকে। শুধু সর্বাবস্থায় মজা করে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটা শিখবে।
মারওয়া হেসে বলল, আলহামদুলিল্লাহ! তবে আমি কিন্তু মজা করার উদ্দেশ্যে কিছু বলি না। যেটা মনে আসে সেটাই বলি। তবে এটা কিন্তু সত্যি যে সাজানো গোছানো পরিবেশ আমাদের মনে সুন্দর ও শান্তি শান্তি ভাবের উদ্রেক করে। বাইরে থেকে ফিরে আমি যদি ঘর এলোমেলো দেখি আমার শরীরের ক্লান্তি তো বেড়ে যায়ই, সাথে মেজাজও খিটপিটে হয়ে যায়। এজন্য আমি কি করি জানো?
কি করেন আপি?
বাইরে বের হবার আগে পুরো বাসা সুন্দর করি সাজিয়ে গুছিয়ে নেই। দরজা বন্ধ করবার আগে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করি। যাতে দরজা খোলার পর মিষ্টি ফুলেল ঘ্রাণ আমাকে স্বাগতম জানায়। আবার রান্না করার সময় একদিকে মসলা, সবজি রেডি করবো, অন্যদিকে চুলায় রান্না চাপিয়ে দেবো এমনটাও কখনোই করি না। আমি আগে সবকিছু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে নিয়ে রান্না শুরু করি। এতে সবটুকুন মনোযোগ রান্নাতেই থাকে। পরিবেশটা সাজানো গোছানো টিপটপ ফিটফাট থাকার কারণে মনটাও ভালো থাকে।
সবসময় এমন নিয়ম মাফিক চলতে পারেন আপি?
না তা অবশ্য পারি না। ব্যস্ততার কারণে অনেকসময় ব্যতিক্রম হয়। অর্থাৎ, একদিক দিয়ে কাটতে থাকি, আরেকদিক দিয়ে চুলায় দিতে থাকি, অন্যদিক দিয়ে গোছাতে থাকি। সেদিন খাবারের স্বাদে তারতাম্য হয়ে যায়। আবার বাসা এলোমেলো রেখে যেদিন বেড়িয়ে যেতে হয় কোন কারণে। ফিরে আসার পর ভালো কথা শুনলেও মেজাজ গরম হয়ে যায়। অকারণেই সবার সাথে চিৎকার-চেঁচামেচি করি। এইসব অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমি একটা পন্থা বের করেছি। ব্যস্ততা থাকলে আমি রেডিমেড কোন খাবারের আয়োজন করি কিংবা একদম শর্টকার্ট কিছুর। যেমন ধরো ডিমভাজি, আলুভর্তা, ডাল। গোছানোর সময় না থাকলে এলোমেলো সব কিছু নিয়ে আলমারিতে ঢুকিয়ে রেখে বিছানাগুলো ঠিকঠাক করে পারফিউম স্প্রে করে বেড়িয়ে যাই। বাসায় ফিরে কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে এরপর সব বের করে গুছিয়ে নেই। এমনটা আমি করি কারণ মনের শান্তি বজায় রাখাটা আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্যাপারটা আমি তোমাদের ভাইয়াকে দেখে শিখেছি। উনি এমন সবকিছু এড়িয়ে চলেন যা উনার মনের শান্তিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
আমাকেও শিখিয়ে দেন আপি কিভাবে সর্বক্ষণ মনে শান্তি ভাব বজায় রাখতে হয়।

চলবে

 

সুস্থ দাম্পত্য টিপস

সুস্থ দাম্পত্য টিপস


দাম্পত্য


দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক বন্ধন ও সুসম্পর্ক উপর নির্ভর করে, সুস্থ দাম্পত্য জীবন ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনে সহায়তা করে। এবং এর বিপরীতে গেলে ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পরে।

সম্পর্ক নিয়ে সন্তুষ্ট, পরিতৃপ্ত ও সুখীবোধ

ব্যক্তি তার প্রতিদিনকার ঘটনাবলিতে পরিতৃপ্ত। স্বাভাবিকভাবেই উভয়েই সন্তুষ্ট ফলে মানসিক চাপ(stresses) গুলোর মুখোমুখি হলেও মোকাবেলা করতে পারেন। নিজের ব্যক্তিগত দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধান করার কৌশল বুঝতে পারেন এবং রোজকার দিনের কাজ গুলো ঠিকভাবে গুছিয়ে করতে পারেন।

নিরাপদ এবং আরামদায়ক বোধ করবে

শুধু নিজের ভালো থাকাকে প্রাধান্য দেওয়া ছাড়াও অন্যের ভালো থাকাটাকে নিশ্চিত করেন ফলে নিরাপদ এবং আরামদায়ক সম্পর্কের জন্ম নেয়।

আচরণ সম্মানপূর্ণ হবে

সন্মান হলো সন্মানিত ব্যক্তির চাদর। সুতরাং পরস্পরের বন্ধন তখনই সবচেয়ে বেশি মজবুত হয় যখন সন্মান সহিত আচরণ করেন পরস্পর।

নিজেদের সঙ্গে কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে

কাটানো সময় আনন্দপূর্ণ হবে বলেই পরস্পরের জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। (যেমন: বন্ধুবান্ধব, ভালো লাগার বিষয়, পরিবার, জীবন নিয়ে ভাবনা, স্কুল-কলেজ, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি)।

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা/বিশ্বাস থাকবে

দাম্পত্য জীবনে পরস্পরের প্রতি আস্থা ও পাশাপাশি পরিবার ও পরিবারের বাইরে সমাজ কমিউনিটি ও রাষ্ট্রীয় অঙ্গনে অবদান গড়বে।

*দাম্পত্যে পারস্পরিক ভালোবাসা, মমতা, শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, গ্রহণযোগ্যতা ইত্যাদির ভিত্তিতে পরস্পরকে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠতে সাহায্য করবে।

 

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর

মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর


ড. মেহরান মাহমুদ


মুসলিম জীবনে লাইলাতুল কদর অতিপুণ্যময় ও অনন্য এক রজনী। মর্যাদাময় এ রাতটিতে রয়েছে শান্তি, সান্ত¡না এবং সার্বিক কল্যাণ। এ রজনী ভাস্বর হয়ে আছে পবিত্র কুরআন নাজিলের মহিমায়, ভাস্বর হয়ে থাকবে স্বল্প সময়ে অধিক পুণ্য লাভের নিশ্চয়তায়। এ রাতের সম্মানেই পবিত্র কুরআনে ‘সূরা কদর’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে।

লাইলাতুল কদরের অর্থ

‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে রাত। ‘কদর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে পরিমাপ, পরিমাণ, নির্ধারণ ও ভাগ্য নিরূপণ। ‘কদর’ থেকেই ‘তাকদির’ শব্দ। অবশ্য কদর শব্দের অন্য অর্থ সম্মান, গৌরব, মর্যাদা ও মহিমা। সুতরাং ‘লাইলাতুল কদর’ মহিমান্বিত রজনী, সম্মানিত রাত্রি, ভাগ্য নিরূপণ, বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ রজনী অর্থে সাধারণত ব্যবহৃত হয়ে থাকে। হজরত আবুবকর আররাক রা: বর্ণনা করেন, এ রাতকে এ জন্য ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয় যে, যে ব্যক্তি ইতঃপূর্বে কোনো ইবাদত বন্দেগি করে ‘কদর’ বা সম্মানের অধিকারী হয়নি, সে ব্যক্তি এ রাতে তওবা ইস্তিগফার করে ইবাদত-বন্দেগি করলে ‘কদর’ বা সম্মানের অধিকারী হতে পারবে।

লাইলাতুল কদরের উৎপত্তি

ইবনে জারির র.-এর বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সা: একবার ইসরাঈল গোত্রের জনৈক ইবাদতকারী সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তিনি একাধারে এক হাজার মাস যাবত সমস্ত রাত্রি ইবাদতে মশগুল থাকতেন এবং সকাল হলেই জেহাদে বের হয়ে যেতেন। মুসলমানরা এ কথা শুনে বিস্মিত হন। রাসূলুল্লাহ সা: তার উম্মতের জন্য শুধু এক রাত্রির ইবাদতকেই সে ইবাদাতকারীর এক হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করেছেন। (তাফসিরে মাজহারি)

কদর কোন রজনীতে

পবিত্র কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনায় লাইলাতুল কদর রমজান মাসেই। তবে কবে? এ নিয়ে আলেমদের একাধিক মতামত পরিলক্ষিত হয়। তাফসিরে মাজহারির বর্ণনা মতে, ‘এ রাত রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের মধ্যে আসে। কিন্তু এরও কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নেই। সহিহ হাদিস দৃষ্টে এই ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে ‘লাইলাতুল কদর’ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। মহানবী সা: বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরকে রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে তালাশ করো।’ (বুখারি)
মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের রমজনর শেষ ১০ দিন অধিক ইবাদত করার প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই মূলত লাইলাতুল কদরকে প্রচ্ছন্ন রেখেছেন। তারপরও অধিক সম্ভাব্য রাত হিসেবে ২৭তম রাতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: গণিত সূত্র দিয়ে এর অধিক সম্ভাব্যতা প্রমাণ করেছেন। যেমন ‘সূরা কদর’-এ ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দটি তিনবার উল্লেখ আছে। আরবি বর্ণমালা অনুযায়ী ‘লাইলাতুল কদর’ লিখতে ৯টি অক্ষরের প্রয়োজন হয়। ৩ কে ৯-এর সাথে গুণ করলে গুণফল ২৭ হয়। উপর্যুক্ত হিসেবে ‘লাইলাতুল কদর’ রমজানের ২৭ তারিখ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। (তাফসিরে রুহুল বয়ান)

লাইলাতুল কদরের ইবাদাত

রাসূলুল্লাহ সা: যেভাবে এ রাত কাটাতেন এর পূর্ণ অনুসরণ করাই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে আমাদের নি¤œ বর্ণিত কাজগুলো করা আবশ্যক।
নিজে রাত জেগে ইবাদত করা এবং পরিবারের সদস্য ও অধীনস্থদের ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করা।
তারাবিহের সালাত আদায়ের পর রাতে তাহাজ্জুদ ও সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।
নফল নামাজের সিজদার মধ্যে তাসবিহ পাঠ শেষে দোয়া করা। কেননা, সেজদাবনত অবস্থায় মানুষ তার রবের অতি নিকটে চলে যায়। ফলে তখন দোয়া কবুল হয়।
নিজের কৃত পাপরাশির জন্য বেশি বেশি তওবা করা। ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো পাপ না হয় তার জন্য দৃঢ়সঙ্কল্প করা।
অধিক পরিমাণে কুরআন তিলাওয়াত করা। উত্তম হবে অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ কুরআন অধ্যায়ন করা।
সাধ্য অনুযায়ী জিকির আজকার ও তসবিহ তাহলিল আদায় করা।
কবুল হওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে নিজ, পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, জীবিত-মৃত ব্যক্তিদের জন্য সর্বপরি দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে একাগ্রচিত্তে দোয়া করা। বিশেষ করে মহানবী সা:-এর শিখানো এই দু’আটি বেশি বেশি করে পড়া, ‘হে আল্লাহ তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে তুমি ভালোবাস, অতএব আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
লাইলাতুল কদরের ফজিলত : অগণিত ফজিলতে পূর্ণ এ রাতটির কতিপয় ফজিলত নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

এ রাতের ফজিলত বর্ণনা

এ রাতের ফজিলত বর্ণনা করে এ রাতেই একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যার নাম সূরাতুল কদর। এ এক রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। এ রাতে পৃথিবীতে অসংখ্য ফেরেশতা নেমে আসেন এবং তারা তখন দুনিয়ায় কল্যাণ, বরকত ও রহমত বর্ষণ করতে থাকেন। এ রাতে ইবাদতে লিপ্ত বান্দাদেরকে ফেরেশতারা জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তির বাণী শোনান।
এ রাতে নফল সালাত আদায় করলে মুমিনদের অতীতের সগিরা গুনাহগুলো মাফ করে দেয়া হয়।
মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করে আল্লাহ তার ইতঃপূর্বের যাবতীয় সগিরা গোনাহ ক্ষমা করে দেন’। (বুখারি, মুসলিম)।

এ রাতে তওবা কবুল করা হয়।

রাতটি চিহ্নিত করার কিছু আলামত 

এ রাতকে চিহ্নিত করার কিছু আলামত হাদিস শরিফে পাওয়া যায়। যেমন রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না। নাতিশীতোষ্ণ হবে।
মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে। ইবাদাতে অধিক তৃপ্তি পাবে। বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে। হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে, যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। (বুখারি, মুসলিম)
লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির উত্তম মাধ্যম : লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির সুবর্ণ সুযোগ হচ্ছে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করা। মহানবী সা: প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন নিয়মিত ইতিকাফ করতেন।

মুমিন বান্দাদের জন্য লাইলাতুল কদর অত্যন্ত মঙ্গলময় এবং বরকতময় রাত। এক রাত ইবাদত করে এক হাজার মাসেরও অধিক সময়ের ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া যাবে, এর চেয়ে বড় সুবর্ণ সুযোগ আর কী হতে পারে? এ রাতের ইবাদত হতে বিমুখ ব্যক্তি সত্যিই হতভাগা। মহানবী সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে ব্যক্তি সর্ব প্রকার মঙ্গল থেকেই বঞ্চিত হলো। আর যে বঞ্চিত হলো প্রকৃতপক্ষে সে সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো’ (নাসাঈ)।
লেখক : গবেষক
সুত্রঃ নয়া দিগন্ত।

 

বয়স হার মেনেছে বৃদ্ধা মালঞ্চির জীবন সংগ্রামের কাছে


নারী সংবাদ


বর্তমানে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা সাড়ে ষোল কোটির উপড়ে। যার মধ্যে ৬ দশমিক শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ওপড়ে। বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি যখন ৫৫ কিংবা ৫৭ বছরে পা রাখেন তখন তাঁকে সাধারণত প্রবীণ কিংবা বৃদ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কর্মক্ষম থাকলেও তাকে চাকরি এবং কাজ থেকে অব্যাহত দেয়া হয়। অনেক সময়ই তিনি কাজ করতে চাইলেও তাকে কাজে নেয়া হয় না। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সে একজন মানুষের ভরসার পাত্র হয় তার সন্তান। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজে গরীব মানুষের বেলায় ঘটে ভিন্ন কিছু। গরীবদের বেলায় কিছু কিছু সন্তানের নিষ্ঠুরতার কাছে মানবিকতা হার মানে। হার মানে অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা। কারও নতুন ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। গরীবদের বেলায় কারও ঠাঁই মেলে রাস্তার ফুটপাতে। আবার কেহ কেহ সন্তানের ধিক্কার এবং নিষ্ঠুরতার কাছে না হেরে নিজেরাই নিজেদের বাকি জীবনটাকে নতুনভাবে গোছাতে শুরু করে। কেহ কেহ সফল হয়। তাদেরই একজন ৬৬ বছর বয়সী মালঞ্চি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মালঞ্চি বেশ পরিচিত মুখ।
চারুকলা অনুষদের সামনে একটি বড় কাঠের বাক্সে চুড়ি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। প্রায় ১৮ বছর ধরে চুড়ির ব্যবসা করছেন মালঞ্চি। স্বামী, তিন ছেলে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল মালঞ্চির সংসার। অভাব অনটনের কারণে তিন ছেলেকে অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়াতে পারেননি তিনি। সংসারের টানাপোড়নের মধ্যেই তিনি তার ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এরপর মালঞ্চি এবং তার স্বামীর জীবন অনাকাঙ্খিত মোড় নেয়। তাদের ছেলে-মেয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে দেখাশোনা করতে চাইতো না তারা। তখন মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হয়। এই বুড়ো-বুড়ি আলাদা একটি বস্তিতে থাকা শুরু করল। হাতে যে শেষ সম্বল নিয়ে তারা বের হয়েছিলেন তাও শেষ হবার পথে। পূর্ব থেকেই মালঞ্চির সংসারে অভাব-অনটন ছিল। তবে বুড়ো বয়সে সন্তানের সেবা পাবেন সেই আশায় ছিলেন তারা। তাদের আশা ছিল, ‘আমগো ছাওয়াল এই বুড়া-বুড়ীরে দেখব। জীবনে বড় কিছু হইব’। কিন্তু এই আশা যখন ভেঙ্গে গেল তখন তারা চোখের সামনে সরষে ফুল দেখতে লাগলেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘আবার সংসারের হাল ধরন লাগব। এমনে বয়সের দোহাই দিয়া বইসা থাকলে চলবো না। আল্লাহ্ দিলে অহনও শরীরে যে শক্তি আছে কাজ কাম কইরা খাইতে পারমু’। চুড়ির ব্যবসা শুরু করার নিদ্ধান্ত নিলেন মালঞ্চি। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্তে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধনের অভাব। তিনি বললেন, ‘ঐ সময় খাওনের পর্যন্ত টেকা আছিল না। কিন্তু একটা কাজ শুরু করন লাগব। আমার জামাই(স্বামী)তখন রিক্সা চালাইত। কিন্তু বুড়া মানুষটার কষ্ট বেশি হইত। বেশি একটা আয়-রোজগারও হইত না। পরে আল্লাহর নাম নিয়া নামলাম এই ব্যবসায়ে। মাইনষের থেইক্কা সাত হাজার টেকা ধার নিয়া শুরু করছিলাম’।
ব্যবসায়ী হিসেবে মালঞ্চিকে বেশ দূরদর্শী বলা যেতে পারে। তিনি ব্যবসায়ের জন্য এমন স্থান বেছে নিলেন যেখানে হরহামেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের আনাগোনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন হওয়ায় বেচা-কেনাও ভাল হয়। এখানে কোন প্রকার সমস্যারও সমুখীন হতে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এহানের পোলাপানগুলাই আমার মাইয়া, হ্যারাই আমার পোলা। আমার কোন সমস্যা হইলে এরাই আমার দেখভাল করে। এই শীতে আমি যহন কম্বল চাইছি তহনই দিছে। এত বছর হইয়া গেলো এরা কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনাই।’ তিনি ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দামের চুরি বিক্রি করেন। তাঁর দৈনিক এক থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। প্রথম দুই বছর কোন লাভের মুখ দেখতে পাননি মালঞ্চি। তিনি তার ব্যবসার মালামাল আনতেন চকবাজার থেকে বাকিতে। মাস শেষে যে আয় হত তা পাওনা পরিশোধ করতেই ফুঁড়িয়ে যেত। তবে পরবর্তীতে মালঞ্চি তার দক্ষতা এবং একাগ্রতার মাধ্যমে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। বর্তমানে তার এই ব্যবসা থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে এই বুড়ো-বুড়ীর সংসার চলছে। মালঞ্চির বয়স প্রায় ৬৬। এই বয়সেও তিনি যেভাবে এই ব্যবসা অকপটে চালিয়ে যাচ্ছেন তা আমাদের সমাজের মানুষের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেন বয়স তো একটি সংখ্যা মাত্র। মনোবল থকালে একটি মানুষের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
কেবলমাত্র মালঞ্চি নন, আমাদের দেশে অনেক গরীব মানুষ আছেন যারা পরের কাছে হাত না পেতে পরিশ্রম করে নিজেদের সংসার চালান। এমন কাজ সত্যিই অনুকরণীয়।

সুত্রঃ (আবিদা হক লোরা) বাস