banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

বিবাহের উদ্দেশ্য-১

বিবাহের উদ্দেশ্য-১


কানিজ ফাতিমা


যদিও মানুষের জৈবিক চাহিদা শালীন উপায়ে পূরণ বিবাহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য তথাপি এটি বিবাহের একমাত্র মূল উদ্দেশ্য নয়। কুরআনের স্পষ্ট ভাষা অনুযায়ী দু’জন মানুষের মিলনের মাধ্যমে শান্তি ও স্বস্তি অর্জন করাই বিবাহের মূল লক্ষ্য।

“তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা আর রূম : ২১)

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা মুসলিম নর ও নারীর সম্পর্ককে একে অপরের সাহায্যকারী রূপে বর্ণনা করেছেন যেখানে পরস্পর পরস্পরকে ভাল কাজে ও আল্লাহর দেয়া খেলাফতের দায়িত্ব পালনে সাহায্য করবে।

“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক তারা পরস্পরকে ভাল কাজে সহায়তা করে ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে।” (সূরা আত তাওবাহ : ৭১)

বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ইউসুফ আল কারযাবী (রহ.)র মতে, “একটি জাতি গঠনের মূল ভিত্তি প্রস্তর হিসেবে ইসলাম যেমন সৎ ব্যক্তি গঠনকে উৎসাহিত করে, ঠিক তেমনি একটি সুষম সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত হিসেবে সুসংহত পরিবার গঠনকেও ইসলাম অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করে। এটা সর্বজন সম্মত যে, বিবাহ, যা একজন নারী ও একজন পুরুষকে পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ করে, একটি পরিবারের গোড়া পত্তন ঘটায়। বিবাহ ব্যতীত সত্যিকার অর্থে সুসংহত পরিবার গঠনের আর কোন পথ নেই। এটিই একমাত্র বৈধ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কর্তৃক অনুমোদিত।

বিভিন্ন যুগে বিবাহের বিপক্ষে কিছু দর্শন বা মতবাদ সমাজে প্রচলিত ছিল এবং এখনও আছে। পারস্যে (বর্তমান ইরান) ইসলামের আগমন ঘটার পূর্বে মানির দর্শন (Mani’s Philosophy) প্রচলিত ছিল, সেখানে মনে করা হতো এ পৃথিবীর সবকিছু হচ্ছে শয়তানের প্ররোচনা। কাজেই পার্থিব সব ভোগ বিলাস ত্যাগ করতে হবে। এ ধারণার বশবর্তীরা বিবাহ বর্জনকেও নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের একটি উপায় বলে মনে করতো।

খ্রীস্ট ধর্মেও গোড়া সন্নাসবাদের অনুপ্রবেশ ঘটে- যেখানে পার্থিব সবকিছু ত্যাগ করে বৈরাগ্য বরণ করার কথা বলা হয়। এতে মহিলাদের সব ধরনের প্ররোচনার উৎস এবং শয়তানের মূর্ত প্রতীক হিসেবে চি‎িহ্নত করা হতো। নারীসঙ্গ আত্মাকে কলুষিত করে এবং স্বর্গ থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে নেয়।

এই আধুনিক যুগেও পশ্চিমা বিশ্বে একদল লোক রয়েছে যারা মহিলাদের বিষাক্ত সাপের সাথে তুলনা করেন, যাদের স্পর্শ মধুর কিন্তু ছোবল ভয়াবহ বিষাক্ত। তারা আরও দাবী করে যে বিবাহের মাধ্যমে নারী-পুরুষের হাতের মুঠোয় ভরে ফেলে এবং তাকে দায়িত্বের শেকলে বন্দী করে। কাজেই একজন পুরুষ যে স্বাধীনভাবে জন্মগ্রহণ করেছে, কেন স্বেচ্ছায় নিজ গলায় বিবাহ নামক বন্দীত্বের শিকল জড়িয়ে নেবে- দুঃখজনক হলেও সত্যি বর্তমান যুগের কিছু মুসলমান যুবক এই গোষ্ঠির বিকৃত চিন্তাকে গ্রহণ করেছে এবং বিবাহের দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্যের বন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাচ্ছে। যদি তারা তাদের জৈবিক চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয় তবে তাদের জন্য সে চাহিদা পূরণের যে পথটি খোলা থাকে তা হলো- ব্যভিচার, যা ঘৃণ্য ও অবৈধ। অথচ তারা বিবাহের মাধ্যমে শালীন উপায়েই তা লাভ করতে পারতো