banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা | প্রেগনেন্সিতে সিয়াম পালন ও করণীয়।


সোহানা তাসনিম অনুভা


অনেক মায়েদের প্রশ্ন থাকে যে গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা যাবে কিনা কিংবা রাখলে করণীয় কী হবে। প্রকৃতপক্ষে গর্ভবতী মায়েরা রোজা রাখতে পারবেন কিনা তা নির্ভর করবে তার এবং তার গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থতার উপরে। ইসলামে সিয়াম পালনের ক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা রয়েছে, যেমন ভ্রমণকারী, অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী মা, সন্তানকে দুগ্ধ পান করা অবস্থা ইত্যাদি। হাদীসে বর্ণিত রয়েছে-“যদি কোন গর্ভবতী মায়ের গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা গর্ভস্থ সন্তানের ক্ষতি হবার আশঙ্কা তৈরি করে, তবে সে রোজা থেকে বিরত থাকতে পারবে এবং পরবর্তীতে তার সুবিধাজনক সময়ে সে ওই রোজাগুলো কাজা আদায় করে নেবেন।” এখন যদি কোন মা মনে করেন তিনি রোজা রাখবেন, তবে তাকে প্রথমে একজন গাইনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। জেনে নিতে হবে গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা তার এবং গর্ভস্থ সন্তানের কোন ক্ষতির আশঙ্কা সৃষ্টি করছে কিনা।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ৪-৭ মাস প্রেগনেন্সি পিরিয়ড রোজা রাখার জন্য বেশি নিরাপদ, কারণ প্রথম ৩ মাসে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব হলে কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে এবং প্রেগনেন্সির শেষের দিকে পানি এবং খাদ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া প্রেগনেন্সিতে যদি অন্যান্য সমস্যা থেকে থাকে, যেমন ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন/উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি ডিজিজ, ঘন ঘন প্রস্রাবের ইনফেকশন ইত্যাদি থাকলে রোজা থেকে বিরত থাকাই উত্তম।

গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা ও করণীয়

১) সেহরি এবং ইফতারে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানীয় ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। বিভিন্ন ধরনের তাজা ফলের রস, ডাবের পানি শরীরে পানির চাহিদা দূর করবে।

২) ফলের মধ্যে খেজুর এবং কলায় প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে, যা দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।

৩) প্রয়োজনীয় ওষুধগুলো সেহরি এবং ইফতারের সময় খেতে হবে।
৪) বেশিক্ষণ রোদে ঘোরাঘুরি করা উচিত হবে না।

৫) দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।

রোজাদার মায়েদের যে সমস্যাগুলো দেখা
দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে
১. বমি হলে।

২. অজ্ঞান হয়ে গেলে।

৩. বাচ্চার নড়াচড়া কম অনুভূত হলে, সাধারণত বলা হয় গর্ভের বাচ্চা ১২ ঘন্টায় ১০-১২ বার মুভমেন্ট করবে। এর থেকে কমে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

৪. লেবার পেইন বা পেটে ব্যথা অনুভূত হলে, কারণ ডিহাইড্রেশন-এর কারণে অনেক সময় ইউটেরাস-এর কনস্ট্রাকশন শুরু হতে পারে।

৫. প্রস্রাবের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে ইত্যাদি।
এই ছিল গর্ভবতী অবস্থায় রোজা রাখা ও করনীয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি।

সবাই ভালো আর সবাই সুস্থ থাকুন।
সবার জন্য শুভকামন

 

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-২

সেহরী এবং ইফতারী নিয়ে কিছু কথা-২


সাদিয়া মুকিম


আমাদের করনীয় হবে যথাসম্ভব ভাজাপোড়া খাবার বাদ দিয়ে সহজপাচ্য খাবার, যেমন: কাঁচা ছোলা , চিড়া- দই, লাল আটার রুটি, লাল চালের ভাত, নুডুলস, নরম খিচুড়ি ,জাউ ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা । সাথে মৌসুমী ফল, সালাদ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

সেহরীতে,ডাল বা ডিম, স্বজি,মাছ ,গোশত যোগ করা যেতে পারে। বাদাম, বিনস, শস্য, ছোলা, দুধ, মিষ্টি আলু, ডাল, ফল, সবজি, সালাদ ইত্যাদি খেতে হবে । প্রতিবেলা মাংস না খেয়ে অন্তত এক বেলা মাছ খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত । সুষম খাবার (balance diet) এর আয়ত্ত্বে নিয়ে আসতে খাবার মেন্যু । যেমন: আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন, দুধ, দই, মিনারেলস, ফাইবার ইত্যাদি খেতে হবে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ।অতিরিক্ত ঝাল মশলা যুক্ত, ভুনা ও লবনাক্ত খাবার বাদ দেয়ার চেষ্টা করা উচিত।

যেসব খাবার, ফল, স্বজি পানি কন্টেইন করে সেসব খাবার ইফতারিতে প্রায়োরিটি দেয়া উচিত। যেমন- তরমুজ, পেঁপে,বাংগী,জাম্বুরা, কমলা, শশা, স্ট্রবেরী, বেরীস,সালাদপাতা, আভোকাডো, পীচ, চেরী, ঝুক্কিনী, আসপারাগাস, সেলারি, গাজর, টমেটু , ফুলকপি, ডাটা, ব্রোকলি ইত্যাদি ।

অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত – ইফতারের জন্য খেজুর অত্যন্ত উপযোগী কারণ এতে আছে শর্করা ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করা ।

‘‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র ’’ [সুনান আবু দাউদ : ২৩৫৭,সহীহ]।

চিনিযুক্ত খাবার ও পানীয় খাওয়া: – আমাদের ইফাতরের টেবিলে রং বে রং এর পানীয় বা শরবত থাকেই । খুব বেশী চিনি যুক্ত খাদ্য ও পানীয় আমাদের শরীরে দরকার নেই, তাই নিয়মিত চিনি যুক্ত খাবার খাওয়া যথাসম্ভব বাদ দিতে হবে। কারণ এটা খুব তাড়াতাড়ি রক্তে চিনির(ইনসুলিন) মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, ফলে সাময়িকভাবে ব্রেইনে শক্তি জোগালেও একটু পরেই তা স্তিমিত হয়ে যায় এবং শক্তিহীন মনে হয়।

যেমন: ট্যাং, ট্রাডিশনাল মিষ্টি , পায়েশ, ফালুদা, শাহী জিলাপি, কেক, বিস্কিট ইত্যাদি রোজায় খাওয়া হয়, কিন্তু এগুলো প্রচন্ড চিনিযুক্ত ও উচ্চ ক্যালোরীযুক্ত । এগুলো রোজায় প্রতিদিন না খেয়ে মাঝে মাঝে হাওয়া যেতে পারে। এছাড়া যাদের এসিডিটির সমস্যা আছে তাদের লেবুর শরবত দিয়ে ইফতার শুরু না করাই ভালো।