শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসা-১
আফরোজা হাসান
ছয়মাস ভলান্টিয়ার টিচার হিসেবে স্কুলে কাটানোর সময় গুলোতে অনেক কিছু নতুন করে শিখেছি আমি। তারমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ একটি জিনিস হচ্ছে শিক্ষকের প্রতি ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা। ইউরোপের স্কুলগুলোতে স্টুডেন্ট আর টিচারদের সম্পর্ক এতো সুন্দর আর বন্ধুত্বপুর্ণ যা নিজের স্কুল লাইফের দিকে তাকালে খুঁজে পাইনা। এখানকার টিচাররাও বাচ্চাদেরকের সাথে রাগ করেন, ওদেরকে বকাঝকা করেন, শাস্তি দেন। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিতে। শাস্তি দেবার সময় কেন শাস্তি দিচ্ছেন, শাস্তিটা কেন দেয়া উচিত, দেয়ার ফলে কি উপকার হবে এবং না দিলে কি ক্ষতি হতো এই প্রতিটা বিষয় চমৎকার করে বুঝিয়ে বলেন টিচাররা স্টুডেন্টদেরকে। যারফলে বাচ্চাদের মনে টিচারদের প্রতি কোন ক্ষোভের সৃষ্টি হতে পারে না এবং শাস্তির কারণ এবং উপকারিতা ও অপকারিতা জানার ফলে নিজেকে সংশোধন করাটাও সহজ হয়।
একদিন ক্লাসে একটা বাচ্চার হঠাৎ পেট ব্যথা শুরু হলে সে মেঝেতে শুয়ে ছটফট করতে লাগলো। স্বভাবতই কিছু বাচ্চার হাসির খোড়াক যোগালো দৃশ্যটি, কিছু বাচ্চা প্রশ্ন করলো ও কি এখন মারা যাবে? কয়েকজন ছুটে এলো বন্ধুর পাশে আর কয়েকজন নির্বিকার বলে রইলো নিজের সীটে। বাচ্চাটি সুস্থ হবার পর প্রফেসর বললেন যে কয়জন সাহায্যর জন্য ছুটে এসেছিলো তারা ছাড়া বাকি সবার আজকে টিফিন বন্ধ। কেউ টিফিন পিরিয়ডে পার্কে যেতে পারবে না। বাচ্চারা সবাই তখন চিৎকার করে বলল, আমরা তো কিছুই করিনি প্রফে তাহলে কেন আমাদেরকে শাস্তি দিচ্ছো? প্রফেসর বললেন, তোমাদের অন্যায় তোমরা তোমাদের বন্ধুর বিপদে ছুটে আসোনি, তার কষ্টে সমব্যথী না হয়ে হেসেছো, সান্ত্বনা বা আশ্বাস দেবার বদলে মারা যাবে বলে ওকে আরো ঘাবড়ে দিয়েছো। একবার ওর জায়গায় নিজেকে চিন্তা করে দেখো তো। তুমি কষ্টে ছটফট করছো আর কেউ তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, কেন এতো ব্যথা করছে তুমি ভেবে পাচ্ছো না আর পাশ থেকে একজন বলছে তুমি এখন মারা যাবে। বাচ্চারা তখন চুপ হয়ে গেলো।