banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —(আল-বাক্বারাহ) ২…

যাতে করে তোমরা আল্লাহর প্রতি সচেতন হও —আল-বাক্বারাহ ১৮৩-১৮৫,১৮৭
২…

ওমর আল জাবির

এখন প্রশ্ন হলো, রোজার সাথে তাকওয়ার সম্পর্ক কী?

একজন মানুষ যখন রোজা রাখে, সে একটা বিরাট সময় নিজেকে তার শারিরিক চাহিদা, কামনা থেকে নিজের ইচ্ছায় দূরে রাখে। ক্ষুধায় তার পেট মোড়ায়। হাত বাড়ালেই খাবার। ইচ্ছে করলেই সে মুখে একটু খাবার দিয়ে ক্ষুধাটা দমিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু না! সে নিজেকে বোঝায়: “মাগরিব হোক, তারপরে ইফতার, এর আগে কোনো খাবার নয়।” পিপাসায় তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। হাত বাড়ালেই এক গ্লাস পানি, কোমল পানীয়। শুকনো গলা দিয়ে ঠাণ্ডা পানি নেমে যাওয়ার সুখকর চিন্তা তার মনে ঘুরপাক খায়। কিন্তু না, সে নিজেকে বোঝায়, “মাগরিব আসুক। এর আগে এক ফোঁটাও পানি না।” সারাদিন অফিস-স্কুল-কলেজে তার চোখের সামনে নানা প্রলোভন ঘুরে বেড়ায়। কিছুক্ষণ পর পর বিপরীত লিঙ্গের হাতছানি। টিভি ছাড়লেই অশ্লীলতা। ইন্টারনেটে গেলেই কামনার সাগরে ডুবে যাওয়া যায়। কিন্তু না, সে নিজেকে বোঝায়, “আমি রোজাদার। আমি এখন কোনো খারাপ কিছু দেখতে পারি না, কোনো খারাপ কিছু করতে পারি না।” দিনে কয়েকবার সে সুযোগ পেয়েছে মিথ্যা বলে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার, নিজের দোষ ঢাকার, অন্যায়ভাবে সুবিধা হাতিয়ে নেওয়ার, অন্যের গীবত করার। কিন্তু না, সে নিজেকে সংযত করে, “আমি রোজাদার, আমি এখন মিথ্যা বলতে পারি না। আমার রোজা ভেঙ্গে যাবে।”

যখন আমরা রোজা রাখি না, তখন আমাদের শারীরিক চাহিদা আসলেই আমরা সেটা মিটিয়ে ফেলি, পাপ কাজের ইচ্ছা জাগলে করে ফেলি। ক্ষুধা লাগলেই খাই। পিপাসা পেলেই পান করি। কামনা জাগলে, তা পূরণ করে ফেলি। সুযোগ পেলেই মিথ্যা বলি, ঘুষ খাই, অন্যায় করি, গীবত করি। এভাবে আমরা প্রতিনিয়ত নিজেদেরকে ক্রমেই প্রবৃত্তির দাস বানিয়ে ফেলি। যার ফলে দিনে দিনে কুপ্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকি। প্রবৃত্তি জিততে থাকে, আর আমরা হারতে থাকি। কিন্তু যখন আমরা রোজা রাখি, প্রতিদিন একটা বিরাট সময় আমরা আমাদের প্রবৃত্তিকে শক্ত হাতে দমন করে রাখি। কিছুক্ষণ পর পর প্রবৃত্তি চাড়া দিয়ে উঠে, আমাদের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে চায়। কিন্তু তখনি আমরা সেটাকে পরাজিত করে নিজের উপর আবার নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নেই। এভাবে দিনের পর দিন আমরা প্রবৃত্তির উপর জিততে থাকি। তখন সেটা আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে। আল্লাহর تعالى নির্দেশ মানা, অন্যায় থেকে দূরে থাকাটা তখন আমাদের জন্য আরও সহজ হতে থাকে। এভাবেই আমরা রোজা রেখে তাকওয়া অর্জন করি।[১]

প্রাচীন আরবরা ঘোড়া নিয়ে যুদ্ধ করতে যেত। কিন্তু ঘোড়া উটের মতো উত্তপ্ত মরুভূমিতে দীর্ঘ সময় থাকার জন্য ঠিক উপযুক্ত নয়। এরা পানি ছাড়া বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। একারণে আরবরা ঘোড়াকে মরুভূমির প্রখর উত্তাপে বার বার দৌড়িয়ে মরুভূমিতে টিকে থাকার প্রশিক্ষণ দিত। এভাবে ঘোড়াকে প্রচণ্ড তাপে যুদ্ধ করার জন্য তৈরি করাকে তারা সিয়াম বলত। সিয়াম, যাকে আমরা রোজা বলি, মুমিনদের জন্য একধরনের মিলিটারি ট্রেনিং। এটি আমাদের শক্ত করে, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য শারীরিক এবং মানসিক ট্রেনিং দেয়।[১][১৬]

এরপরের আয়াতে আল্লাহ تعالى আমাদেরকে শেখাবেন, কোন পরিস্থিতিতে রমজানে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়—

রোজা নির্দিষ্ট কিছু দিন। তাই তোমাদের মধ্যে কেউ যদি অসুস্থ থাকে, বা সফরে থাকে, তাহলে পরে একই সংখ্যক দিন পূরণ করবে। আর যাদের জন্য রোজা রাখা ভীষণ কষ্টের, তাদের জন্য উপায় রয়েছে — তারা একই সংখ্যক দিন একজন গরিব মানুষকে খাওয়াবে। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাড়তি ভালো কাজ করে, সেটা তার জন্যই কল্যাণ হবে। রোজা রাখাটাই তোমাদের জন্যই ভালো, যদি তোমরা জানতে। [আল-বাক্বারাহ ১৮৪]

সুত্র: কুরআনের কথা