ডা. মারুফ রায়হান খান
আপনার আব্বু-আম্মু বা আত্নীয় কেউ ডায়াবেটিসের রোগী হলে আপনার জন্যে আমার পক্ষ থেকে রমাদানের উপহার এটি।
১. ডায়াবেটিসের রোগীরা কি রোজা রাখতে পারবে? কোন কোন ক্ষেত্রে পারবে না?
২. রোজা রাখলে কী কী উপকার হবে?
৩. কী কী ঝুঁকি থেকে যায়? কী করণীয় তখন?
৪. রোজা থাকা অবস্থায় রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা মাপা যাবে কি?
৫. কোন অবস্থায় রোজা অবশ্যই ভেঙে ফেলতে হবে?
৬. রোজাতে খাবার-দাবার কেমন হবে?
৭. রোজাতে শরীরচর্চা করা যাবে কীভাবে?
৮. ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে, কখন, কতোটুকু নিতে হবে?
মুসলিমদের জন্যে ইবাদাতের এক ভরা মৌসুম রমাদান। কে না শরীক হতে চায় এই মহিমান্বিত মাসের রহমাতে-বারাকাহতে-মাগফিরাতে-নাজাতে! তবে কিছুটা বিপাকে পড়ে যান ডায়াবেটিসের রোগীরা। অনেকগুলো প্রশ্ন আর সংশয় তাদের মনে উঁকি দিতে থাকে।
এবার চলুন এক এক করে আমরা প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
১. সারা বিশ্ব জুড়ে ৫০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ রোজা রাখেন। প্রচুর পরিমাণ লিটারেচারে এসেছে যে, অধিকাংশ ডায়াবেটিক রোগীরাই রোজা রাখতে পারেন। তবে এটা নির্দিষ্ট ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে তার রোজা রাখতে পারা বা না পারা। সেজন্যে প্রয়োজন রোজা শুরু হবার বেশ কিছুদিন আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে যাচাই-বাছাই (Pre-Ramadan Assessment) করিয়ে নেয়া যে তিনি রোজা রাখতে সক্ষম কিনা, রোজাতে কী কী নিয়মকানুন মেনে চলবেন, ওষুধ/ইনসুলিন কীভাবে নেবেন ইত্যাদি। রোগীর বিগত দিনগুলোতে ডায়াবেটিসের অবস্থা, জটিলতা, অন্যান্য রোগ, রক্তে চর্বির পরিমাণ, রক্তচাপ ইত্যাদি সবকিছু বিবেচনা করে চিকিৎসক সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন রোগীটি রোজা রাখতে পারবে কি পারবে না। তবে খুব সাধারণভাবে বলতে গেলে যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা ডায়াবেটিস অনেক কমে গেলেও বুঝতে পারেন না, যাদের ডায়াবেটিস একেবারেই নিয়ন্ত্রণে থাকে না, সম্প্রতি ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হয়েছে–তাদেরকে রোজা না রাখতে বলা হয়। তাছাড়া যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের কোনো অর্গান ফেইলিউর (যেমন : হার্ট ফেইলিউর, কিডনি ফেইলিউর, লিভার ফেইলিউর) আছে তাদেরও রোজা না রাখাই শ্রেয়। এছাড়াও যাদের মারাত্নক চোখের রেটিনায় সমস্যা, স্নায়ুতে সমস্যা, বড় ধরনের রক্তনালীতে সমস্যা, একিউট পেপটিক আলসার, মারাত্নক ধরনের ফুসফুসে যক্ষ্ণা, মারাত্নক ইনফেকশান, মারাত্নক হাঁপানি, বারবার পাথর হওয়া, যেসব ক্যান্সার রোগীদের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ, সম্প্রতি হার্ট এটাক হয়েছে, লিভারে সমস্যা রয়েছে এবং মারাত্নক মানসিক সমস্যা যাদের রয়েছে–তাদেরও রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়। গর্ভবতী এবং শিশুকে বুকের দুধ পান করান তারা রোজা রাখবে না।
২. ডায়াবেটিস রোগীদেরও রোজা রাখলে বেশ কিছু উপকার হয়ে থাকে। যেমন :
– রোজা শরীরের বিপাকীয় (Metabolic) কাজের উন্নতি ঘটায়।
– শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
– উচ্চ রক্তচাপের নিয়ন্ত্রণ ভালো হয়।
– শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে।
– রোগ প্রতিরোধ-ক্ষমতা শক্তিশালী করে।
– সর্বোপরি রোজাতে নিয়মানুবর্তিতার এক অনন্য চর্চা হয়। আর আমরা সবাই জানি নিয়মানুবর্তিতা ডায়াবেটিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা।
৩. ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখলে যেসব ঝুঁকি থাকে :
– রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত কমে যাওয়া (হাইপোগ্লাইসেমিয়া)।
– রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)।
– পানিশূন্যতা।
– ওজনের তারতম্য ঘটা।
চলবে….