banner

মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

Daily Archives: November 15, 2024

 

আসুন রমজানের হক আদায় করি


আকলিমা ফেরদৌসি আখি


এ মাসের প্রস্তুতির জন্য যা করা যেতে পারে তা হলো-

১)ঈমান ও এহতেসাবের সাথে রোজার নিয়ত করা।

২)ইচ্ছা শক্তি দৃঢ় করে নেওয়া যে,‘ ইনশাল্লাহ রমজান মাসে আল্লাহর ক্ষমা ও নাজাত হাসিল করে নিবোই।’

৩)রমজানের প্রয়োজনীয় মাসলা মাসায়েল জানা ও দোয়া গুলো মুখস্ত করে নেওয়া।

৪)রমজান মাসে কি কি নেক আমল করা যায় তার একটা তালিকা তৈরি করে রাখা। যেমন-

-কোরআন অধ্যায়ন করা(অধ্যায়ন বলতে কোরআনের তাফসীর সহ পড়াকে বুঝায়)তিন/চারটি সূরা ঠিক করে নেওয়া এবং পুরো মাসে এই তিনটি/চারটি সূরা সর্ম্পকে একটি পরিপূর্ণ ধারনা নেবার চেষ্ঠা করা।

-কোরআন তেলওয়াত করা।প্রতি ওয়াক্ত নমিাজের পরে চার পৃষ্ঠা কোরআন তেলওয়াত করলে মাসে একটি খতম দেওয়া যায়।

-কয়েক টি ইসলামী ও হাদিস বই ঠিক করে রাখা এবং সারা মাস ধরে পড়া।

-ওয়াক্তের শুরুতেই নামাজ আদায়ের চেষ্ঠা করা এবং সুন্নত ও নফল নামাজ আদায়ে মনোযোগী হওয়া।

-নিয়মিত সালাতুল দুহা,তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা।

-তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলাওয়াত করা।

-দৈনিন্দন জীবনে প্রতিটি কাজে রাসুল(সা:) এর শিখিয়ে দেওয়া দোয়াগুলো পড়া।

-সহীহ করে কোরআন তেলওয়াত শেখার চেষ্ঠা করা।

-প্রতিদিন অন্তত: একজন ব্যক্তিকে ইফতার করানো।

-প্রতিদিন অন্ত:ত একজন ব্যক্তিকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া।ইত্যাদি

৫)নিজের কমপক্ষে দশটি দোষ চিহ্নিত করে তার তালিকা তৈরী করা এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়া যে রমজানে এ দোষগুলো থেকে নিজেকে বাচিঁয়ে রাখার চেষ্ঠা করাএবং পরির্পূণভাবে দোষগুলি থেকে নিজেকে মুক্ত করা।

৬)পরিবারের সদস্যদের রমজানের হক আদায়ের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা।

৭)রমজানের প্রতিটি দিন ঠিক ভাবে কাজে লাগানো জন্য একটি রুটিন করে রাখা।

৮)শেষের দশদিন পরিপূর্ণভাবে হক আদায়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা।(প্রয়োজনে ইত্তেকাফের নিয়ত করা যেতে পারে।ঈদের কেনাকাটা আগে থেকেই করে রাখা যাতে শেষের দিনগুলো ফ্রি থাকা যায়।)

৯)যাকাতের হিসাব করে রাখা।

১০)অভাবীদের মধ্যে ঈদের উপহার বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করা।

এবারে আসুন একজন রোজাদার হিসাবে নিজের কাজগুলি গুছিয়ে নিয়ে কিভাবে প্রতিটি সময়কে ইবাদতে পরিণত করে নেওয়া যায় তার একটা নমুনা দেখে নেয়া যাক-

রাতের শেষাংশে

সালাতুল তাহাজ্জুদ-২:৩০-৩:১৫
(তাহাজ্জুদ নামাজের আগে আকাশের দিকে তাকিয়ে রাসূল সা: সূরা আলে ইমরানের শেষ রুকু তেলওয়াত করতেন।এই আমলটির অভ্যাস করা যেতে পারে।)
সেহেরী গ্রহন-৩:১৫-৩:৫০মি:
সালাতুল ফজর ও সকালবেলার আযকার পাঠ-
৩:৫০মি:-৪:৩০মি: (হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)
কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-৪:৩০-৬:০০টা
সালাতুল দুহা বা ইশরাক-৬:০০টা থেকে-৬:১৫মি:
বিশ্রাম ও ঘুম-৬:২০-৮:৩০মি:

সকাল বেলা

ঘুম থেকে উঠা-৮:৩০ থেকে ৯:৩০টা
দৈনিন্দন কাজ শেষ করা-৯:৩০টা থেকে-১১:৩০
(এ ক্ষেত্রে বাচ্চাদের জন্য সারাদিনের খাবার রেডি করা,ইফতার কি হবে ,রাতের খাবার ও সেহেরী কি হবে তা রেডি করে রাখা।মাছ, সবজি কেটে ধুয়ে রাখা যেতে পারে)
কোরআন অধ্যায়ন,ইসলামী বই পড়া,হাদিস ইত্যাদি-১১:৩০ থেকে-১২:৩০

দুপুর বেলা

বিশ্রাম ও সালাতুল জহুরের প্রস্তুতি সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির পাঠ-১২:৩০- ১:০০
কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-১:০০-২:০০মি:
সন্তানদের নিয়ে রমজান স্কুল
(প্রতিবেশীর সন্তানদেরও সাথে নেওয়া যেতে পারে)কোরআন পড়ানো,হাদিসের গল্প বলা,ইসলামী বই পড়িয়ে শুনানো,স্কুলের পড়া ইত্যাদি-২:০০-৩:৩০
ইস্তেগফার পাঠ(আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ ১০০বার তওবার অনুভুতি নিয়ে)-৩:৩০-৪:১৫
বিশ্রাম-৪:১৫-৫;০০
কোরআনের সূরা মুখস্ত(এ ক্ষেত্রে আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে কোন সূরা গুলো মুখস্ত করা হবে।)
প্রতিদিন অন্তত: একটি দোয়া মুখস্ত করা (রাসূল সা: যে গুলো দৈনিন্দন জীবনে পড়েছেন)

বিকেল বেলা

সালাতুল আসর,সালাত পরবর্তী মুস্তাহাব তাসবীহ ও যিকির এবং কোরআন পাঠ
রাতের খাবার,ইফতার ও সেহেরীর জন্য প্রস্তুতি এবং রান্না শেষ করে ফেলা-৫:০০-৬:১৫মি:
এ সময় মায়েরা যেহেতু রান্না বা ইফতারের প্রস্তুতি নিতে ব্যস্ত থাকেন তাই বাবারা সন্তানদেরকে কিছুটা সময় দিতে পারেন।গল্পের বই পড়ে শুনানো, হাতের লেখা প্রেকটিস করানো,টিভিতি ভালো কোন অনুষ্ঠান দেখানো,আল্লাহর নিরানব্বইটা নাম থেকে প্রতিদিন পাচঁটি করে শিখানো ,সৃজনশীল লিখা ইত্যাদি।

ইফতার ও সন্ধ্যা বেলা

ইফতারের প্রস্তুতি নিয়ে পরিবারের সবাই একসাথে বসা:৬:২০-সময় হওয়ার আগ পযর্ন্ত
এ সময় পরিবারের সদস্যদের মধ্য থেকে কেউ অথসহ কোরআন তেলওয়াত করতে পারে। একটি/দুইটি হাদিস পড়ে শোনানো এবং সবশেষে সবাই মিলে বা ব্যক্তিগত ভাবে দোয়ার পরিবেশ তৈরী করা যেতে পারেএবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা যেতে পারে।
ইফতার গ্রহন–৬:২০(ইফতারের সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সময়টা মিলেয়ে নিতে হবে।}
সালাতুল মাগরীব ও সন্ধ্যাকালীন আযকার পাঠ ৭:০০-৭:৩০
(হিসনূল মুসলিম অথবা কতিপয় প্রয়োজনীয় দোয়া বই গুলোর সাহায্য নেয়া যেতে পারে)
বিশ্রাম ও প্রয়োজনীয় কাজ ৭:৩০-৮:০০

রাতে

সালাতুল এশা ,তারাবীহ ও কোরআন তেলওয়াত(চার পৃষ্ঠা)-৮:০০-১০:০০
রাতের খাবার-১০:০০-১০:৩০
সূরা মূলক তেলওয়াত ও এক আয়াত মুখস্ত-১০;৩০-১১:০০
ঘুমের প্রস্তুতি ও ঘুম-১১:০০-২:৩০
মহান আল্লাহ আমাদের রোজার যথাযথ হক আদায়ের তৌফিক দিন।আমীন।
(এটি একটি নমুনামাত্র যারা চাকুরিজীবি বা ছোট ছোট কয়েকটি বাচ্চার মা তাদেরজন্য এ রুটিন মেনে চলা কঠিন । তবে তারা যা করতে পারেন তা হলো সময় নয় কাজগুলি গুছিয়ে নিন তারপর সুযোগ মত কাজটি শেষ করুন আর লিস্টে টিক দিয়ে দিন )

আল্লাহ আমাদের রমজানের হক যথাযথভাবে আদায় করার তৌফিক দিন। আমীন।

 

রমজান মাসের ফজিলত – শেষ পর্ব


বিশেষ সংখ্যা মাহে রমজান


সাত. রমজান জাহান্নাম থেকে মুক্তির লাভের মাস,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : রমজান মাসের প্রথম রজনির যখন আগমন ঘটে তখন শয়তান ও অসৎ জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, এ মাসে আর তা খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এ মাসে তা আর বন্ধ করা হয় না। প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ বলে ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী তুমি অগ্রসর হও ! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী তুমি থেমে যাও ! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।  [ তিরমিজি ]

আট. রমজান মাসে সৎকর্মের প্রতিদান বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেয়া হয়। যেমন হাদিসে এসেছে যে, রমজান মাসে ওমরাহ করলে একটি হজের সওয়াব পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, বরং, রমজান মাসে ওমরাহ করা আল্লাহর রাসূলের সাথে হজ আদায়ের মর্যাদা রাখে। এমনিভাবে সকল ইবাদত-বন্দেগিসহ সকল সৎকাজের প্রতিদান কয়েক গুণ বেশি দেয়া হয়।

নয়. রমজান ধৈর্য ও সবরের মাস। এ মাসে ঈমানদার ব্যক্তিগণ খাওয়া-দাওয়া, বিবাহ-শাদি ও অন্যান্য সকল আচার-আচরণে যে ধৈর্য ও সবরের এত অধিক অনুশীলন করেন তা অন্য কোন মাসে বা অন্য কোন পর্বে করেন না। এমনিভাবে সিয়াম পালন করে যে ধৈর্যের প্রমাণ দেয়া হয় তা অন্য কোন ইবাদতে পাওয়া যায় না। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন : ধৈর্যশীলদের তো বিনা হিসাবে পুরস্কার দেয়া হবে। [সূরা যুমার : ১০]

সুত্র: কুরআনের আলো ডট কম।