banner

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: March 2025

 

ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতনতা ও কাউন্সিলিংয়ের প্রয়োজন


নারী সংবাদ


‘আমার মা জরায়ুমুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। চতুর্থ স্টেজে ছিলেন। উনি বুঝতেই পারেনি তার শরীরে নীরবে দানা বেঁধেছে মরণব্যাধী। মধ্যবিত্তের সংসার, ক্যান্সারের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লড়াই করা সহজ ছিল না। আর্থিক ও মানসিকভাবে তাকে ভরসা দিতে পারিনি, কারণ উনি এই বিষয়টা শুনলে ভেঙ্গে পড়বেন, জানানো হয়নি তাই। সাড়ে তিনবছর লড়াই করেছেন এর বিরুদ্ধে। সাতবছর হলো মা চলে গেছেন। এখন মনে হয় তিনি অভিমান নিয়ে চলে গেছেন। হয়তো আর্থিক ও মানসিকভাবে তাকে সহায়তা করা গেলে তিনি আরো কিছুদিন আমাদের মাঝে থাকতে পারতেন।’ এমন মর্মস্পর্শী কথা বলছিলেন বাগেরহাটের সাবেরা।
কুমিল্লার লাকি জানান, ‘আমার মা স্তন ক্যান্সারে মারা গেছেন। তার স্তনে টিউমার হয়েছিল। সার্জারির মাধ্যমে তা অপসারণ করা হয়। পরবর্তীতে কেমোথেরাপি চললেও তা শেষ করা যায়নি। ব্যায়বহুল চিকিৎসায় আমরা সর্বশান্ত হয়েছি। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। জানিনা আমাদের পরিবার কতদিনে আর্থিক ও মানসিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
শুধু সাবেরা কিংবা লাকিই নয়, ক্যান্সার রোগে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন অনেকে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় আর্থিকভাবে সর্বশান্ত হয়েছেন অনেক পরিবার। বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কারণে এই ব্যাধি ক্রমশ বাড়ছে।
ক্যান্সার বিশেজ্ঞদের মতে, দেশে প্রায় ১২ লাখ ক্যান্সার রোগী রয়েছে। প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ নতুন করে কোন না কোন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। মারা যাচ্ছে বছরে প্রায় দেড় লাখ রোগী। যে কোন বয়সেই ক্যান্সার হতে পারে। কিছু-কিছু ক্যান্সারে খুব অল্প বয়সে মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। তবে সাধারণত অপেক্ষাকৃত মধ্যবয়সী মানুষের মধ্যে ক্যান্সারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশে পুরুষদের মাঝে কোলন ও ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রবণতা দেখা যায়। নারীদের জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি থাকে। কি কারণে ক্যান্সার হয় এর পুরোপুরি কারণ জানা না গেলেও পারিবারিক ক্যান্সারের ইতিহাস, জীবনযাত্রার মান, খাদ্যাভাস বিবিধ কারণে ক্যান্সার হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ক্যান্সার ছোঁয়াচে নয়। শব্দটি শুনলে আঁতকে ওঠেন অনেকে। কিন্তু সঠিক সময়ে সনাক্ত করা সম্ভব হলে এর নিরাময় সম্ভব। মানবদেহের কিছু কোষের স্ফিত হওয়ার মধ্যেই এর বীজ লুকিয়ে থাকে। এঘুলো কখনো চাকা, পিন্ড আকারে দেখা যায়। পরবর্তীতে তা নীরবেই ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্নস্থানে। ধীরে-ধীরে শরীরের প্রয়োজনীয় অঙ্গগুলো অকেজো হয়ে যায়।
দেশে যেভাবে ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে তার তুলনায় হাসপাতাল, চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানের অপ্রতুলতা রয়েছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা(হু)এর মতে দেশে চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা প্রয়োজন ১৬০ টি। রয়েছে মাত্র ১৫ টি। ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষায়িত জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল ৫০টি শয্যা নিয়ে চালু হলেও এ ধরনের রোগীর চাপে বর্তমানে ১৫০ টিতে উন্নীত করা হয়েছে। শুধু হাসপাতালের চিকিৎসাই নয়, আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজন হয় সহযোগিতা ও সহমর্মীতার। ক্যান্সারেরই যে রোগীর মৃত্যু হয় এমন নয়, কখনো কখনো স্ট্রোক বা যে কোন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হতে পারে। তবে এ ধরনের রোগীর এই মরণব্যাধি হলে নানা মানসিক চাপে থাকেন। অনেক সময় রোগীর চারপাশের স্বজনেরা নানা নেতিবাচক কথা বলে তাকে ভীত করে তোলেন। অনেকে আত্মহত্যা করার কথাও ভেবে বসেন। নিজেকে গুটিয়ে নেন অপরাধবোধে। সেজন্য চিকিৎসকের রোগ নির্দেশনার পাশাপাশি, পরিবারের ও কাছের মানুষরা রোগীকে একান্তে নিবিড়ভাবে সময় দিতে হবে। যেন রোগের কারণে ভীতির সঞ্চার না হয়, তাকে সাহস দিয়ে মানসিক লড়াইয়ে সামিল হবার কাজটাও করতে হবে।
জাতীয় ক্যান্সার ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোশারফ হোসেন বলেন, বর্তমানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারিÑবেসরকারিসহ দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের সচেতনতা প্রয়োজন। বর্তমান সরকার সারাদেশে প্রায় বিনামূল্যে এধরনের রোগীদের সেবা দেয়ার চেষ্টা করছে। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সুলভে ওষুধের প্রাপ্যতা দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন ও মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ডা. এবিএম আবদুল্লাহ জানান,আধুনিক বিজ্ঞানের কারণে ক্যান্সার মানেই অবধারিত মৃত্যু নয়। চিকিৎসাও এখন আর অজেয় নয়। শুরুতে সনাক্ত করা গেলে চিকিৎসায় এর নিরাময় সম্ভব। নিত্যনতুন অধিক কার্যকরী কেমোথেরাপি জাতীয় ওষুধ আবিস্কার এবং রেডিওথেরাপির ব্যাবস্থা থাকায় ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বে মৃত্যুর কারণগুলোর মধ্যে ক্যান্সার দ্বিতীয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তৃতীয়। ক্যান্সারের লক্ষণ নির্ভর করে কোথায় কী ধরনের ক্যান্সার হচ্ছে তার উপর। তাই শরীরে কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন্ হতে হবে।
সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ নুরুল কবির জানান, ক্যান্সার নিয়ে আতংক যেমন রয়েছে তেমনি আছে আশার বাণীও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাচনী ইশতেহারে ক্যান্সারকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছেন। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এছাড়া ক্যান্সার আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবার সহায়তায় দেয়া হচ্ছে জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা। গত অর্থবছরে এ খাতে বাজেট ধরা হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা। এ অর্থবছরে ৭৫ কোটি এবং আগামী অর্থবছরে ১৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১৫ হাজার। গতবছর ছিল ১০ হাজার। তার আগের বছর ছিল সাড়ে সাত হাজার। এপর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজার দরখাস্ত জমা পড়েছে। এই কিস্তিতে পৌনে চার হাজার জনকে এই টাকা দেয়া হবে। এরমধ্যে আরো দরখাস্ত জমা পরবে। চলতি অর্থবছরে টার্গেট ধরা হয়েছে ১৫ হাজার জনকে এই সহায়তা প্রদান করা হবে।
সুত্র: (বাসস)।

 

পরিবারে দ্বন্দ নিরসন


কানিজ ফাতিমা


বিয়ে দু’জন মানুষের মধ্যে জীবনকে ভাগাভাগি করে নেয়ার চুক্তি। জীবনে একসাথে চলার পথে বহু বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাস্তবতার অন্যতম বাস্তবতা হল Conflict বা দ্বন্দ, সংঘাত, বিরোধ ইত্যাদি। বিয়ের পূর্বে এ ব্যাপারটি নিয়ে খুব একটা চিন্তা ভাবনা করা হয় না। বিয়ের পূর্বে সম্পর্কের মধুর(Romantic) দিকটি নিয়েই বেশি জল্পনা-কল্পনা হয়। ফলে বিয়ের পরে যখন এই দ্বন্দ বা Conflict দেখা দেয় তখন অনেকেই এটিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না। অনেকে হতাশা বোধ করে, অনেকে নানা প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।
এজন্য বিরোধ ব্যবস্থাপনা বা Conflict management সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা জরুরী। Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনার প্রথম কথা হল সমাজে, সংগঠনে বা পরিবারে বিরোধ থাকা একটি বাস্তবতা। কেউ যদি মনে করে দু’জন মানুষ একত্রে বসবাস করবে আর তাদের মধ্যে কোন বিরোধ থাকবে না তবে তা একমাত্র রূপকথাতেই সম্ভব। বাস্তবতা হল দু’জন মানুষ একত্রে থাকলে বিরোধ বাঞ্ছনীয় তাতে দু’জনের সম্পর্ক যাই হোকনা কেন। স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন, বাবা-পুত্র সবার মধ্যেই বিরোধ থাকবে। তবেপ্রশ্ন হল সেই বিরোধের মাত্রা কতটুকু? যেমন ধরা যাক বাবা জমি কিনতে চাচ্ছেন আর পুত্র ব্যবসার টাকা বিনিয়োগ করতে চাচ্ছেন। মা মেয়ের জন্য সালোয়ার কামিজ কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু মেয়ে প্রসাধন সামগ্রী চাচ্ছে। মানুষে মানুষে বিরোধ না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। বিরোধ, মতের পার্থক্য, চিন্তার ভিন্নতা এ পৃথিবীর অপরিহার্য একটি বৈশিষ্ট্য। Conflict সম্পর্কে দ্বিতীয় কথা হল সব Conflict বা বিরোধই খারাপ নয়। Conflict বা বিরোধ শব্দটি শুনলেই আমাদের মনে বিরূপ চিত্র ভেসে ওঠে। কিন্তু চিন্তা করে দেখুনConflict বা বিরোধের ফলে অনেক ভাল জিনিসের তৈরী হয়। যেমন Conflict সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। যেমন ধরুন বাবা বললেন আমরা অমুক এলাকায় বাসা ভাড়া নিবো, মা বললেন না, এখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমে। আমরা ওমুক এলাকায় যাবো। ছেলে বললো না, এখান থেকে আমার কলেজ অনেক দূরে, আমাদের কলেজের কাছাকাছি এলাকায় থাকা উচিত। এভাবে ভিন্ন মতামতের কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজনীয় সব তথ্য বের হয়ে আসবে এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। অপর পে অতিমাত্রায় বিরোধ, হিংসা ও সংঘর্ষ জীবনে অশান্তির কারণ। কাজেই আমরা বলতে পারি সহনশীল মাত্রার বিরোধ পরিবারের জন্য উপকারী। একজন স্বামী বা স্ত্রীকে এটি মেনে নিতে হবে যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ ঘটবেই। তবে তাকে সহনশীল পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করাই হচ্ছে Conflict management বা বিরোধ ব্যবস্থাপনা। দ্বন্দ বা বিরোধ পুরোপুরি নিরসন বা নির্মূলকরণ অসম্ভব বা অবাস্তব। মূলতঃ দ্বন্দ বা বিরোধ ব্যবস্থাপনাই সঠিক পন্থা। তাই স্বামী ও স্ত্রীকে Conflict management বা দ্বন্দ ও বিরোধ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। স্কলারগণ Conflict management এর নিম্নরূপ মডেল প্রদান করেছেন-

১. Forcing- বিরোধের সময়ে আপনি অন্যপক্ষরে মতামত বা স্বার্থকে আমলে না এনে যদি শুধুমাত্র নিজের অবস্থানে অটল থাকেন, নিজের স্বার্থ ও মতামতকেই প্রাধান্য দেন তবে একে বলা হয় চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে দ্বন্দ নিরসন করা। আপনি যদি অন্য পক্ষরে তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হন তবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে চাইবেন। এতে অন্যপক্ষ মন থেকে নয় বরং বাধ্য হয়ে আপনার কথা মেনে নেবে। এ পদ্ধতি স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জন্য বিরোধ নিরসনের সঠিক পন্থা নয়। হুমকি ধমকীর মাধ্যমে নিজের ইচ্ছাকে স্থাপন করার চেষ্টা নির্যাতনের আওতায় পড়ে।

২. Accommodating বা আত্মসমর্পন করা- এটি Forcing এর সম্পূর্ণ বিপরীত। আপনি যদিনিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন এবং অপর পকে পুরোপুরি মেনে নেন তবে তাকে Accommodating পদ্ধতি বলে। দুই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ এটা করে থাকে।ক. আপনি যদি দুর্বল হন এবং আপনার প্রতিপক্ষ যদি শক্তিশালী হয় তবে আপনি বাধ্য হবেন এ পদ্ধতি অবলম্বন করতে।খ. আপনি যদি বুঝতে পারেন যে আপনার অবস্থান ভুল এবং আপনার প্রতিপক্ষ সঠিক তখন আপনি স্বেচ্ছায় নিজ অবস্থান থেকে সরে আসবেন।

 

ভালোবাসার স্বভাব, ভালোবাসার অভাব


রেহনুমা বিনত আনিস


১/
কাজ থেকে ফিরছিলাম। ট্রেন স্টেশন থেকে বেরোবার পথে বেশিরভাগ মানুষ ডানদিকে চলে গেল, বামদিকে আমার সামনে কেবল এক মহিলা ছাড়া আর কেউ নেই। আমি সাধারনত খুব দ্রুত হাঁটি, এই মহিলা বুঝলাম আমার চেয়েও দ্রুত হাঁটছেন, কারণ পেছন থেকে কেবল তাঁর ঋজু দেহখানা দেখতে পাচ্ছি, চেহারা দেখছিনা। দু’জনেই বাঁয়ে মোড় ঘুরলাম। দেখি মহিলার হাঁটার গতি আরো বেড়ে গেল। রাস্তার পাশে একখানা লাল গাড়ী, স্টিয়ারিং উইলে এক বৃদ্ধ দাদামশায় উৎসুক ভঙ্গিতে বসে আছেন, মুখের হাতের চামড়ায় কুঁচকানো দেখে বোঝা যাচ্ছে ভালোই বয়স হয়েছে। মহিলা দ্রুত হেঁটে গাড়িতে ওঠার পর খেয়াল করলাম তিনি হলেন দাদামশায়ের স্ত্রী, মাথার সব চুলই শ্বেতবর্ণ ধারণ করেছে, আজন্ম স্নো ক্রীমে লালিত মুখখানাতেও ভাঁজ পড়েছে ভালই। দাদীমা গিয়ে বসতেই দাদামশায় একগাল হাসি দিয়ে গাড়ীতে স্টার্ট দিলেন, দাদীর মুখ থেকে সারাদিনের ক্লান্তির সব চিহ্ন উবে গেল। তাঁদের এই চৌম্বকীয় ভালোবাসার দৃশ্যের সাক্ষীটির মনটা পরম মমতায় ভরে উঠল। আজকের যুগের দেহসর্বস্ব ভালোবাসার ভিড়ে এমন নিখাদ ভালোবাসার গভীরতা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ কি প্রতিদিন মেলে?

২/
কেউ ভাবেনি বিয়েটা টিকবে। মেয়েটি নিজেও না। স্বামী প্রবাসী, বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে কিন্তু স্ত্রীকে নিতে পারছেনা। মেয়েটি অত্যন্ত মেধাবী, যতদিনে স্বামীর তাকে নেয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি হোল ততদিনে সে লেখাপড়ার মধ্যাবস্থায়, পড়াশোনা শেষ না করে সে কিছুতেই যাবেনা। স্বামী বলতে শুরু করল সে আবার বিয়ে করবে, মেয়েটি বলল, ‘তাহলে আমি আর গিয়ে কি করব?’ স্বামী ছুটিতে দেশে এসেছে, স্ত্রী যাবেনা। আত্মীয়স্বজন ভাবছে এই বিয়ে কিছুতেই টিকবেনা। এমন এক অবস্থায় ওরা দু’জনেই এলো আমার কাছে। মেয়েটিকে বললাম সবকিছু ছেড়ে চলে যাও।

সে হতবাক হয়ে বলল, ‘আপনি একজন শিক্ষক হয়ে কি করে এমন একটি কথা বলতে পারলেন?’

বললাম, ‘শোন, শিক্ষক বলেই এ’কথা বলতে পারলাম। তোমার মেধা আছে। এই মেধা কেউ কেড়ে নিতে পারবেনা। আমি জানি একদিন তোমার লেখাপড়া ডিগ্রী ভবিষ্যত সব হবে। কিন্তু সেদিন এই সম্পর্কের জন্য তোমার আফসোস হবে, ‘যদি আমি চেষ্টা করতাম, হয়ত আমার সংসারটা টিকত!’

সে বলল, ‘কিন্তু সে তো বলছে সে আবার বিয়ে করবে, তাহলে ওর সাথে গিয়ে আমার লাভ কি?’

বললাম, ‘রাগের মাথায় মানুষ অনেক কথাই বলে। তুমি পাশে নেই তাই তোমাকে ভয় দেখিয়ে সাথে নিতে চায়। এগুলো ভালোবাসাপ্রসূত অভিমান, বদনিয়ত নয়’।

সে আমার কথা বিশ্বাস করল। আমি আত্মীয় নই, স্বজন নই, নই কিছুই। কিন্তু সে আমার কথার ওপর ভরসা করে এত সাধের লেখাপড়া অসম্পূর্ন রেখে চলে গেল প্রবাসে, স্বামীর সাথে থাকার জন্য।

ক’দিন আগে সে জানালো সে দেশের এক বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে সে ভর্তি পেয়েছে। ফেসবুক প্রোফাইলে ওর ফুটফুটে সন্তান দু’টির মুখচ্ছবি সাক্ষ্য দিচ্ছে আজ সে সব পেয়েছে- স্বামী, সন্তান, শিক্ষার সুযোগ, সাফল্য, সুখ। সামান্য একটু ধৈর্য্য, সামান্য একটু অপেক্ষা, অনেক অনেক বিশ্বাস- এটাই ওর সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল। কিন্তু আমরা অনেকেই এই ধৈর্য্যটুকু রাখতে পারিনা, যা চাই তার জন্য অপেক্ষা করতে রাজী থাকিনা, ভাবতে পারিনা যে অনেকসময় ভালোটুকু পাওয়া যায় খারাপের পরেই- এ’টুকু সময় স্থির থাকতে পারলে হয়ত আমরা অনেক কিছুই অর্জন করতে পারতাম যা অনেকে আজীবন সাধনা করেও অর্জন করতে পারেনা।

৩/
সেই চেনা পরিচিত রোগগুলো আবার ফিরে আসছিল। ভোরে অ্যালার্ম বাজবে বলে অ্যালার্ম বাজার আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায়। স্কুলে যখন বীজগণিত করতাম, কোন অংক না মিললে ঘুমের ভেতরেও মগজ অংক কষতে থাকত। ঘুমের মধ্যে সব অংক ঠিক ঠিক মিলে যেত, অনেক সময় ঘুম থেকে উঠে সেভাবে অংক করলে সত্যিই মিলে যেত! এখন ঘুমের মধ্যে কেবল কোম্পানীর ফাইলপত্র ঘাটতে থাকি, ঘুম শেষ হয়ে যায় কিন্তু কিছুতেই সব কাজ গুছানো শেষ হয়না।

প্রথম যেদিন কাজে গেলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলার ডেভ বলল, ‘তোমাকে মাটিতে অবতরণ করার আগেই দৌড় শুরু করতে হবে বলে আমি দুঃখিত, কিন্তু আমরা খুব বেকায়দায় পড়ে গেছি, তোমার সাহায্য আমাদের খুব প্রয়োজন’।

সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে দিতে বলল, ‘এখানে আমাদের জাতিসংঘের মত সব দেশের প্রতিনিধিই আছে। সবাই তোমাকে সাহায্য করবে’।

তবু অনেক অনেকদিন পর কাজ শুরু করেছি, নতুন জায়গা- শরীরের ওপর, মনের ওপর চাপ যাচ্ছিল। তাই রোগগুলো প্রভাব বিস্তার করছিল বেশ।

প্রথমদিনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছিলো ক্যানাডার জর্ডান, হং কং- এর নেলসন আর পাকিস্তানের ফ্র্যান্সেসকা। লাজুক স্বভাবের ভারতীয় জেকব থাকে আশেপাশেই, প্রয়োজন হলেই এগিয়ে আসে, তারপর আবার ঢুকে পড়ে নিজের গর্তে। ক’দিনের মধ্যেই ভাব জমে গেল ভারতের স্বর্না, ঘানার জেরাল্ড, চীনের সানি, ক্যানাডার ডনার সাথে। অন্যরা থাকে আশেপাশেই, সুযোগ এলেই এগিয়ে আসে। আজ সকালে গ্রুপলিডার লিন বলল, ‘আমরা কিছুদিনের মধ্যেই তোমাকে একজন সহযোগী দিতে যাচ্ছি। সে পর্যন্ত একটু কষ্ট করে চালিয়ে যাও’।

কিন্তু বেশিক্ষণ চালাতে হোলনা। কিছুক্ষণ পরই জেরাল্ড, নেলসন আর ফ্র্যান্সেসকা মিলে আমার বাকী কাজগুলো ভাগ করে নিয়ে বলল, ‘আজ তুমি বিশ্রাম নাও, কাজ আমরা করছি’। আস্তে আস্তে রোগমুক্ত হয়ে যাচ্ছি নিজের অজান্তেই!

এই বৈশ্বিক ভ্রাতৃত্বের রূপ দেখে ভাবি, যে ফুলটিকে বাঁচাব বলে আমরা একদিন রক্ত ঝরিয়েছিলাম সে ফুলটিকে আজ আমরা নিজেরাই রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন করে ফেলছি। পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে এসে একটি ভিনদেশে আমরা একত্রিত হতে পারি, অথচ নিজের দেশে নিজের মাটিতে আমরা ভাই ভাই এক হতে পারিনা! হা কপাল!

 

দাদুর পাঠশালা


আফরোজা হাসান


ক’দিন থেকেই আরমান সাহেব তাঁর নাতি-নাতনীদের নিয়ে খুব চিন্তিত। বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করার জন্য মন মতো কাউকে পাচ্ছেন না। অপেক্ষা করছিলেন তার বড় ছেলে রিসাবকে কখন ফ্রি পাওয়া যায়। প্রচণ্ড ব্যস্ত তাই চাইলেই ছেলেটিকে সবসময় পাওয়া যায় না। আজ ছেলেটা বাইরে যায়নি তাই সকাল থেকেই অপেক্ষায় আছেন কখন ছেলে রুম থেকে বেরোবে। খবরের কাগজ নিয়ে বাগানে বসেছেন ঠিকই কিন্তু তাতে মনোযোগ দিতে পারছেন না। বার বার আড়চোখে তাকাচ্ছেন দোতলা থেকে নিচে নামার সিঁড়ির দিকে। অবশেষে তাঁর প্রতীক্ষার পালা শেষ হলো। ছেলে বাবার কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল-

-তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন বাবা? শরীর খারাপ করেছে?

-আলহামদুলিল্লাহ! শরীর ভালো আছে আমার। তবে চিন্তিত এটা ঠিকই ধরেছো। আমি আমার নাতী-নাতনীদেরকে নিয়ে খুবই চিন্তিত। ভাবছি ওদের জন্য একটা পাঠশালা বানাবো।

-(হেসে) পাঠশালা বানাবে?

-এটা হাসির কথা না রিসাব। একথা তো তুমিও জানো যে অমীয় সম্ভাবনার আলো নিয়ে পৃথিবীতে আসে প্রতিটি শিশু। এই সম্ভাবনার বিকাশ নির্ভর করে তাদেরকে কিভাবে গড়ে তোলা হয় তার উপর। শিশুদের মধ্যের সম্ভাবনা বিকাশের জন্য প্রচুর সহমর্মিতাময় আবেগের প্রয়োজন। শিশুর বেড়ে উঠার পরিবেশ যদি ভালোবাসা, আন্তরিকতা, সহমর্মিতাময় হয় তাহলে তারা আত্মবিশ্বাসী, মহৎ ও মুক্তমনা হয়ে বড় হয়। আর মানবজীবনের উদ্দেশ্যে সফল হওয়ার জন্য নম্র ও বিনয়ী হতে হবে। কারন মানুষ যত নম্র ও বিনয়ী হয় ততই তার মর্যাদা উন্নত হয়। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-“ আমি তাদের পরকালে শাস্তি দেবোনা, যারা উদ্ধত স্বভাবের নয়, আর যারা অন্যের অনিষ্ঠ করার ইচ্ছে পোষণ করেনা।” বর্তমানের স্কুলগুলোতে কি এসব শিক্ষা দেয়া হয় বলো?

-আমি দুঃখিত বাবা। তুমি আসলে কি করতে চাচ্ছ বলো।

-কি করতে হবে বুঝতে পারছি না বলেই তো তোমার অপেক্ষায় বসে আছি। আমি গত কয়েকদিন থেকে বাচ্চাদের ক্লাসের বইপত্র ঘেঁটে দেখেছি অনেক কিছু শেখানো হয় ওদেরকে। কিন্তু জীবনের জন্য যা কিছু দরকার তার বেশির ভাগই অনুপস্থিত। ওদেরকে সবার আগে শেখাতে হবে সু-শিক্ষাই জাতি গঠনের চাবিকাঠি, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি, অন্যায়ের কাছে পরাজয় স্বীকার না করাই জীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা, বড়দের সম্মান করা, ছোটদের ভালোবাসা, কখনো লোভ না করা, মিথ্যা বলা, কাউকে ঠকানো, চুরি করা মহাপাপ, সততাই সবথেকে ভালো পন্থা, জীবনে দুঃখ-কষ্ট-ব্যথা- বেদনা আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্বরূপ।

-আমরা তো বাচ্চাদেরকে এসব শেখাতে চেষ্টা করি বাবা। তবে তোমার কথা শুনে মনেহচ্ছে এই বিষয়গুলোকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত তা হয়তো আমরা করছি না। ইনশাআল্লাহ! আমি তোমার সাথে আছি। তোমার কিছু একটা প্ল্যান তো আছে সেটা আমাকে বলো।

-দেখো আমি আর তোমার মা তো সারাটা দিন শুয়ে বসেই কাটাই। আমাদের কিছু বন্ধু-বান্ধবও আছে। আমরা সবাই ভাবছি অন্তত নিজেদের নাতী-নাতনীদেরকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করবো। এতে করে আমাদের সময়টাও ভালো একটা কাজে ব্যয় হবে। বার্ধক্য আমাদের মনকে নিস্তেজ করে দিতে পারবে না। আর ওদেরকে শেখাতে গিয়ে আমাদেরও জ্ঞানার্জন করা হবে। আমি চাইনা যে আমার নাতী-নাতনীরা জ্ঞানার্জনকে কিছু বইপত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলুক। ওদের মধ্যে জ্ঞানার্জনের পিপাসা তৈরি করে দিতে হবে। তাহলে ওরাই ছুটে বেড়াবে সেই পিপাসা মেটানোর সন্ধানে।

-(হেসে) তোমার কথা শুনে পরমহংস যোগানন্দের একটা বাণী মনে পড়ছে-“চিরন্তন সত্যের প্রজাপতি হও। তোমার আত্মজ্ঞানের পাখা রাঙিয়ে নাও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে।” আমি অবশ্যই চাই আমাদের বাচ্চারা চিরন্তন সত্যের প্রজাপতি হোক। তুমি কাজ শুরু করো তোমার পাঠশালার।

-কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাচ্চাদের কিভাবে শেখাতে হবে সেই সম্পর্কে তো আমাদের ধারণা কম। আমার এক বন্ধু বলছিলো মাইক্রোটিচ নামে নাকি কি একটা ট্রেনিং আছে শিক্ষকদের জন্য। তুমি কি জানো নাকি মাইক্রোটিচ ব্যাপারটা আসলে কি?

-মাইক্রোটিচ একটি শিক্ষাদান পদ্ধতি বাবা। এই পদ্ধতিতে অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে ছোট কোন বিষয়বস্তু সম্পর্কে সল্পসময়ে পাঠাদান করা হয়। মাইক্রোটিচিং পদ্ধতির তিনটি অংশ। মাইক্রো লেসন, মাইক্রো ক্লাস এবং মাইক্রো টাইম।

-কিন্তু পদ্ধতিটা আসলে কি?

-(হেসে) এটা আসলে শিক্ষাদানের সব কৌশলকে একত্রে আয়ত্ত না করে বরং পুরো শিক্ষার বিষয়বস্তুকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখানো হয়। এটি শিক্ষকদের শিখন দক্ষতা বৃদ্ধির কার্যকারী কৌশল হিসেবে বিবেচিত। এর লক্ষ্য শিক্ষাদান পদ্ধতিকে শক্তিশালী করা, ব্যক্তিগত সবল দিক ও উন্নয়নের ক্ষেত্র চিহ্নিত করা এবং এছাড়াও আরো কিছু পয়েন্ট আছে। প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জনের জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণ করা হয় এই পদ্ধতিতে। প্রথম ধাপ হচ্ছে- জ্ঞান আহরণ বা জ্ঞান অর্জন, দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে দক্ষতা অর্জনের ধাপ আর তৃতীয় ধাপটি হচ্ছে স্থানান্তর ধাপ।

-তারমানে এটি মূলত শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির একটা শিক্ষা পদ্ধতি। এটাই তো আমাদের দরকার সবার আগে। নিজেরা দক্ষ না হয়ে তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গড়ার কাজে হাত দেয়া ঠিক হবে না। তুমি আগে আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করো।

 

আত্মহত্যা


জিয়াউল হক


একাকিত্ব বা নিসঙ্গতা আজ সারা বিশ্বের বয়স্কদের মধ্যে এক মহামারী হিসেবে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের দেশ, আমাদের ধর্মনিষ্ঠ সমাজও এ থেকে বেঁচে থাকতে পারেনি। বিশ্বের আনাচে কানাচে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ও বয়স্কদের দিকে নজর দিলেই তাদের চেহারায় একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতাজনিত মানসিক রোগের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়।

মানসিক রোগের কারণে চিন্তা-চেতনা, বোধ ও বিশ্বাসে যে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা নেমে আসে, তা মানুষের সকল কর্মকা- ও আচার-আচরণকে কমবেশি নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করে থাকে। এ থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনরকম পথ না পেয়ে অনেক রোগী শেষ পর্যন্ত নিজেই নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার পথ বেছে নেয়; আত্মহত্যা করে। এটা বিশ্বের উন্নত বা অনুন্নত সবদেশেই ঘটে থাকে।
একাকিত্ব হলো এর অন্যতম একটা কারণ, এ কারণেই সম্ভবত (অবশ্য অন্যান্য কারণও আছে) ইংল্যন্ডে প্রতিবছর ৪৫০০ জন আত্মহত্যা করে। এদের বেশিরভাগেরই বয়স ৪৫ বছরের নীচে।

বিষয়টা এতটাই জটিল আকার ধারণ করেছে যে, শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার জনগণের মাঝে আত্মহত্যা রোধ করতে তার কেবিনেটে তথা মন্ত্রীপরিষদে আলাদা একটা মন্ত্রণালয় করে Minister for Suicide Prevention নামে আলাদা একজন মন্ত্রীই নিয়োগ দিয়েছেন। ব্রিটিশ সরকার তার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছাড়াও পাশাপাশি জনগণের মানসিক স্বাস্থ্য দেখাশোনার জন্য একজন প্রতিমন্ত্রী তথা Under Secretary of State (Mental Health and Inequalities) পদ সৃষ্টি করেছে। স্কটল্যান্ডেও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মন্ত্রী রয়েছেন। এর মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য সেসব দেশে কতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হচ্ছে তার একটা ধারণাও পাওয়া যায় বটে।

আত্মহত্যা এ জটিল সমাজ ও জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে একটা অসুস্থ ও চরমতম পন্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা বিশ্বে প্রতিবছর আট লক্ষ লোক আত্মহত্যা করে থাকে। অর্থাৎ প্রতি চল্লিশ সেকেন্ড সময়ে একজন আত্মহত্যা করছে। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশই হলো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে।৩৬ (এনডিটিভি নিউজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৮) ভারতের আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ১৫ বছর থেকে ২৯ বছরের মানুষই বেশি। ৩৭(ঐ) আগেই বলেছি, আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে একাকিত্ব, হতাশা ও মানসিক অসুস্থতা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দেওয়া তথ্য মতে, বিগত ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ অর্থাৎ পাঁচ কোটি মানুষ কোন না কোন মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত। আর এ বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য দেশে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছে মাত্র আড়াই শত বা একটু বেশি।

এ বিশাল সংখ্যক মানসিক রোগীর জন্য এত কম সংখ্যক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ থাকার কারণে আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ মনোরোগের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে তাদের সে রোগ জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। সময়োচিত ও যথাযথ চিকিৎসা পেলে এসব হতভাগা মানুষদের অধিকাংশই সুন্দর সুস্থ জীবনযাপন করতে পারতো। কিন্তু তারা সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলেন।

এর ফলে তাদের পরিবারের লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ ও শিশুরা তাদের বাবা-মা, ভাই ও বোনের ভালোবাসা, আদর ও সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত থেকে গেল সারাটা জীবনের জন্য।

আমাদের দেশেও এটা অহরহ ঘটে চলেছে। বাংলাদেশে বিগত ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সর্বমোট ১১০৯৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করেছে। গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন! আত্মহত্যার কারণ হিসেবে যে তথ্যটা উঠে এসেছে, তাও খুবই ভয়ানক ও দুঃখজনক!

জরীপ বলছে, অত্যন্ত ঝঞ্জাবিক্ষুব্ধ অবস্থা ও মানসিক চাপের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করতে ব্যর্থ হয়ে এবং কোনরকম সহায়তা না পেয়ে তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।৩৮ (The Dhaka Tribune, 27 March, 2018 ২০১৮ সংখ্যা দ্রষ্টব্য)

এটি খুব দুঃখের বিষয় যে, একটি মুসলিম প্রধান দেশেও এত বিশাল সংখ্যক মানুষ আত্মহত্যা করবে, অথচ মহান আল্লাহ্ বলছেন- ‘তোমরা আত্মহত্যা করো না।’ (আল কুরআন, সুরা নিসা: ২৯)

 

মাতৃত্বের উপলব্ধি – শেষ পর্ব


আফরোজা হাসান


কখনো বৃষ্টি, কখনো রোদ, কখনো দক্ষিণা হাওয়া, কখনো বসন্ত হয়ে দোলা দিয়ে যায় প্রাণে। দুর্বল মুহুর্তগুলোতে ভাবব্যক্তির দ্বারা শক্তি ও প্রাণ সঞ্চার করে মনেতে। অন্বেষণ করতে শেখায় জীবনের চাঞ্চল্য ও বৈচিত্র্যেকে। এঁকে দেয় জীবনকে গভীর ভাবে উপলব্ধি করার নীল নকশা।নানা রকম বৈচিত্র্যটায় ভরপুর জীবন যখন মনে ক্লান্তির সুর বেজে উঠে! এরা মনে করিয়ে দেয় আমরা নিজেরাই নিজের মনের মিউজিক ডিরেক্টর! জীবন বীণার তন্ত্রীতে প্রশান্তির সুর তোলার দায়িত্বও তাই নিজেকেই নিতে হবে!

উপমা দিয়ে আসলে জীবনে এই মায়ের স্থান, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বোঝানো সম্ভব নয়। আসলে সব মানুষের ভেতরেই কম বা বেশি কিন্তু হিলিং ক্ষমতা আছে। কিন্তু সবাই সেই ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারে না কিংবা জানে না। কিন্তু মায়েরা এটা এতটাই চমৎকার পারেন যে, জীবনের নানা অপুর্ণতায় সৃষ্ট ক্ষতগুলোকে পূরণ করে দেন শব্দের কারুকার্যে।

আমার মামণি তো এমন একজন মানুষ আমার জন্য যে, যখনই অসহায়ত্ব মনকে আঁকড়ে ধরে… মনেহয় শূন্যতায় ভাসছি…বাতাসের হালকা পরশই যথেষ্ট গভীর সমুদ্রে পতিত করার জন্য! গ্লানিময়- ক্লান্তিকর পরিস্থিতি যখন মনের কোমল অনুভূতিগুলো কেড়ে নিতে চায়! জোনাকির মত ছোট ছোট আশার আলো জ্বেলে মনের ভুবনকে করে তোলেন স্বপ্নিল! আকুলতা বিহীন উদ্যমহীন মেঘে ঢাকা মনের আকাশে বৃষ্টি ও রোদের সংমিশ্রনে সাজিয়ে যান রংধনু! আমাকে সর্বদা মনে করিয়ে দেন গোধূলির আবছা আলোছায়ার সূর্য ডুবে গেলেও, পরদিন ঠিকই এক বুক আলো নিয়ে আবার ফিরে আসে পৃথিবীর বুকে……

জানি না আমি কতটুকু ভালো সন্তান হতে পেরেছি মামণির কাছে। কিন্তু মনেহয় এই উপলব্ধিগুলো যদি পাথেয় থাকতো হয়তো অনেক বেশি ভালো সন্তান হতে পারতাম। কোথায় যেন পড়েছিলাম-“ তাত্ত্বিক জ্ঞান এক বছরে যা শেখায়, ব্যবহারিক জ্ঞান একদিনে তারচেয়ে বেশি শেখায় মানুষকে। সত্যিই মাকে নিয়ে পড়া অসংখ্য সাহিত্যের তুলনায়, আমার সন্তানের সাথে কাটানো একটি মুহুর্তকে অনেক বেশি ভারী মনেহয় আমার কাছে। যা সমৃদ্ধ করে তুলছে আমার মাতৃত্বকে এবং উপলব্ধি করতে সহায়তা করছে মায়ের মহত্ত্বকে।

হাদিসে বলা হয়েছে—‘মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত’। এই হাদিসে যেমন সুসংবাদ রয়েছে সন্তানদের জন্য, তেমনি দুঃসংবাদও রয়েছে তাদের জন্য। কেননা মাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে বেহেশতে প্রবেশ করা সম্ভব হবে। কিন্তু তিনি অসন্তুষ্ট হলে রুদ্ধ হবে বেহেশতের দ্বার। তাই মায়ের সন্তুষ্টি অর্জন একজন সন্তানের অপরিহার্য দায়িত্ব।

কুরআনে আল্লাহ বলেছেন- “তোমার রব আদেশ করছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারও ইবাদত করো না এবং তোমরা (তোমাদের) পিতা-মাতার সঙ্গে সদাচরণ করো; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হন, তাহলে তাদের সঙ্গে বিরুক্তিসূচক কিছু বলো না এবং কখনও তাদের ধমক দিও না, তাদের সঙ্গে সম্মানজনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো। অনুকম্পায় তুমি তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, হে আমার রব! তাদের ওপর তুমি (ঠিক সেভাবেই) দয়া করো, যেমনিভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।” (সূরা বনী ইসরাইল ২৩-২৪)।

 

বসুন্ধরা গেট ও যমুনা ফিউচার পার্কের জন্য আলাদা ফুট ওভার ব্রিজ চাই


ডা. এম এস কবীর জুয়েল


বসুন্ধরা আবাসিক ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৪টি প্রাইভেট ভার্সিটি, ৩টি নামি দামী স্কুল, দুই-তিনটি হাসপাতাল, গ্রামীণ ফোনের প্রধান কার্যালয়সহ শতাধিক নামে বেনামে অফিস রয়েছে,যাদের সিংহভাগ ছাত্র ছাত্রী ও কর্মচারীগণ আশপাশের অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের বাসা ভাড়া-র এলাকায় থাকেন, ডিভাইডারহীন অবস্থায় তারা পূর্বে সিগনাল মেনে যথারীতি রাস্তা পার হতেন, বছর তিন আগে যমুনা ফিউচার পার্ক চালু হলে, ছোট্ট ডিভাইডার দিয়ে যানবাহন পারাপার(ইউ টার্ন) বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে স্থানীয় বাসিন্দাসহ বাহিরে থেকে বসুন্ধরায় পড়তে আসা আবরারের মতো শিক্ষার্থীরা, চাকুরীরত মানুষজন ও চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ লোকজন খুব বিপদে পড়েন, তাদের গাড়ী/সিএনজি নিয়ে ৩০০ ফিট রোড দিয়ে ঘুরে আসতে হয় নতুবা মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে আজকে নিহত আবরারের মতোই চোখ কান খোলা রেখে এইটুকু রাস্তা পার হতে হয়। পদব্রজে গমনকারীদের জন্য বারবার সেতু নির্মানের অনুরোধ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাতে ভ্রক্ষেপ করেননি।

আশা করি, কর্তৃপক্ষ এবার অবশ্য-ই একটি ‘Foot Over Bridge’ তৈরী করবেন। কোন অতিব প্রয়োজনীয় জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের জন্য দেশে একেকটি প্রাণের আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে, আমাদের এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে,রাজপথের প্রাণঘাতি স্থানগুলো চিহ্নিত করে, আবরার কিংবা দিয়া খানম মীম-দের মতো কচি পাতা ঝড়ে পড়ার পূর্বেই তাদের সুরক্ষা কল্পে ট্রাফিক ও সড়ক বিভাগের সমন্নয়

কমিটি দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন, এ প্রত্যাশা সকলের। আব রার ও তার সহপাঠিরা গত জুলাইয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও শান্তিপূর্ণভাবে এই স্থানে অবস্থান নিয়েছিলো,আজ সে নিজেই ওপারে চলে গেলো, আমরা বসুন্ধরা বাসী অনতিবিলম্বে এখানে একটি ফুট ওভার ব্রিজ প্রত্যাশা করছি, যা যমুনা ফিউচার পার্কের জন্যও নিরাপত্তা বিধান করবে।

সড়কের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণের জন্য দেশে একেকটি প্রাণের আত্মাহুতি দিতে হচ্ছে, আমাদের এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ইতিমধ্যেই তড়িৎ সিদ্ধান্তঃ ক্রমে উক্ত বাসের লাইসেন্স বাতিল হয়েছে, আমরা আশা রাখছি, খুব শীঘ্রই সেই চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ডা. এম এস কবীর জুয়েল
এমবিবিএস, বিসিএস, এম.ফিল(নিউরো-সাইকিয়াট্রি), ডক্টর অফ মেডিসিন(এম.ডি) মনোরোগ
সৌদি বিশেষায়ীত স্বাস্থ্য কমিশন সার্টিফাইড ইন সাইকিয়াট্রি এন্ড সাইকোথেরাপী
ভূতপূর্ব মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ, সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, আল জউফ, সৌদি আরব
ভূতপূর্ব সহযোগী অধ্যাপক
এশিয়ান ইনষ্টিটিউট অফ মেডিসিন, সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি কেদাহ্, মালয়েশিয়া
ইউনিট প্রধান, সাইকোথেরাপি ও কাউন্সিলিং ইউনিট, মনোরোগ বিভাগ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা 

 

মাতৃত্বের উপলব্ধি-১


আফরোজা হাসান


মাতৃত্বের উপলব্ধি কি?

প্রশ্নটির জবাবে বলেছিলাম, মামণির যে কথা কাজ ও আচরনগুলো বিরক্তির সূচনা করতো সেগুলোকেই এখন ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ মনে হয়। খাবার নিয়ে মামণির পেছন পেছন ঘোরা, রাত জাগা নিয়ে আপত্তি করা, মাঝরাতে একবার উঠে এসে দেখে যাওয়া, কলেজ থেকে বাসায় ফিরতে দেরী হয়ে অস্থির হয়ে ফোন করা ইত্যাদির পেছনে যে মার সদা কল্যাণকামী সত্ত্বাই কাজ করে সেটা এখন বুঝি। কারণ আমিও নিজেও যে এখন মা…আমার সন্তানকে ঘিরে আমার মনেও যে খেলা করে নানারঙের অনুভূতি। ছোটবেলায় মাকে নিয়ে কত ছড়া-কবিতা-গল্প-গান পড়েছি, শুনেছি, লিখেছিও সামান্য কিছু। কিন্তু নিজে মা হবার পরই মনেহয় সত্যিকার ও প্রকৃত অর্থে মাতৃত্বকে উপলব্ধি করেছি। চোখ বন্ধ করে আরেকবার নিজের মা হবার সফরটা ঘুরে দেখতে ইচ্ছে হলো।

অপারেশন শেষ করে যখন ডাক্তার আমার কোলে দিয়েছিলেন আমার ছেলেকে…! সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে যে ক্লান্তি মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছিল তা উবে গিয়ে ঝিলমিলিয়ে উঠেছিল পূর্ণিমা রাতের স্নিগ্ধ সজিব চন্দ্রিমা। নাহ! কোন উপমা দিয়েই সেই মুহুর্তকে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না। মাতৃত্বের প্রথম স্পর্শ ঘেরা সেই ক্ষণ এতটাই দুর্লভ যে শব্দে ধারণ করার ক্ষমতা আমার নেই! ওর কান্নার ধ্বনি মনের থরথরে ভীতু অনুভূতিকে রূপান্তরিত করেছিলো চরম প্রাপ্তির আনন্দাশ্রুতে। মাত্র একমিনিট পরই কোল থেকে নিয়ে গিয়েছিলো বেবীকে। কিন্তু সেই একমিনিটের ক্ষমতা কতটাই না বিস্ময়কর ছিল, দূর করে দিয়েছিল সমস্ত ভীতি, ব্যথা, দুর্বলতা।

আমার শারীরিক অপরাগতার কারণে যখন খাবারের অভাবে ক্ষুধায় কান্না করছিলো ছোট্ট বাবাটা হাত-পা ছুঁড়ে, অশ্রুর ঢল নেমে এসেছিলো আমার চোখেও। ক্ষুধার্ত সন্তানের মুখে খাবার তুলে না দিতে পারার কষ্টের প্রচণ্ডতা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করেছিলাম সেদিন। এই উপলব্ধিটা আমার জীবন ভান্ডারের অমূল্য এক রত্ন। যা এখনো আমাকে প্রেরণা যুগিয়ে যায় অনেক কাজের…

সেই যে শুরু হলো মাতৃত্বের সফর তারপর থেকে চলছি তো চলছিই। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত হয়তো এমনি করেই চলতে হবে। তবে এই পথ চলার প্রতি মুহুর্তে আমি শিখছি কিছু না কিছু। যে শিক্ষা আমাকে উপলব্ধি করতে সাহায্য করছে মাতৃত্বকে, মায়েদের অনুভূতিকে। সন্তানের জন্য মায়ের মনের আকুতির রঙ এখন তাই আমি চিনি।

পড়াশোনা ব্যাপারে মার বারবার তাগাদা দেয়া খুব বিরক্ত করে সন্তানদেরকে। কিন্তু সন্তানরা কি জানে তাদের সাফল্য কত বড় অর্জন মায়ের জন্য? যখন শিক্ষকরা মার কাছে এসে প্রশংসা করেন তাঁর সন্তানের, প্রশান্তির কেমনতর হাওয়া বয়ে যায় মার অন্তর জুড়ে? প্রতিটা মায়ের কাছে তার সন্তান সবচেয়ে স্পেশাল, তাই হয়তো তিনি চান সবাই তাঁর সন্তানকে সেভাবেই দেখুক, ভাবুক।

মা তো আমাদের জীবনে এমন একজন যিনি মনে উৎসাহের দিয়া জ্বেলে তাতে নিরবধি অনুপ্রেরণা দেবার কাজটি করে যান খুব যত্নের সাথে। নানারকম ব্যর্থতা- হতাশায় আমরা যখন থমকে দাঁড়িয়ে যাই, শক্তি হারিয়ে ফেলি উঠে দাঁড়ানোর, জীবনটাকে মনেহয় তপ্ত দাহ! তখন হাজির হয় এক টুকরো ছায়াদানকারী মেঘ হয়ে। যার সুশীতল কণ্ঠ বাতাস ও আলো সঞ্চার করে মনের শুকিয়ে যাওয়া পল্লবগুলোতে।

চলবে..

 

মনের জানালা


বৃত্তের বাইরে


ছোটবেলায় পাঠ্য বইতে পন্ডশ্রম কবিতাটা পড়েছিলাম। চিলে কান নিয়ে গেছে, কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। সারাদিন খালে-বিলে, পাড়ায় নানান জায়গায় সবাই মিলে কানের খোঁজে ঘুরে দেখা গেল কান কানের জায়গাতেই আছে। স্কুলেও আমরা এমন খেলা খেলতাম যার নাম ছিল চাইনিজ হুইস্পার। কথা যে এ-কান ও-কান করে পরিবর্তন হয় তার প্রমাণ হিসেবে দশ-বারোজন মিলে কোন একটা গান বা কবিতার লাইন একজনের কানে বলে সবার কান ঘুরে নিজের কানে এলে দেখা যেত লাইনটির অর্থ পুরোপুরি পাল্টে গেছে। এর আরো বড় প্রমান পেলাম বাবার চাকরির কারণে যখন আবুধাবি ছিলাম সেই সময়।

সময়টা ঠিক মনে নেই তবে সম্ভবত ২০০০ সালের গোড়ার দিকে। আমাদের এক পরিচিত বাংলাদেশী ফোন করে আমার মাকে জানালেন,’ভাবী শুনেছেন দুবাইয়ে ভূমিকম্প হয়েছে। আমরা আবুধাবি থাকাকালীন একদিন হঠাৎ বৃষ্টি দেখে খুব অবাক হয়েছিলাম। স্থানীয় লোকজনের কাছেও মরুভূমিতে বৃষ্টি হওয়াটা খুবই অবাক ব্যাপার ছিল। শেখদের দেখেছিলাম গাড়ি নিয়ে হৈচৈ করে বৃষ্টি দেখার জন্য রাস্তায় বের হয়েছিল। এই হিসেবে তখন ভূমিকম্পের ব্যাপারটাও অনেকের কাছে বেশ অবাক করার মত ঘটনা ছিল যদিও আমাদের দেশে আমরা এসব দেখে অভ্যস্ত। যাই হোক দুবাইয়ের ভূমিকম্পের খবরটা মুহূর্তে ফোনের মাধ্যমে এই কান সেই কান হতে হতে আবুধাবিতে বাঙ্গালীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লো। প্রথমে খবরটা ছিল দুবাইতে হয়েছে, এরপর শোনা গেল আবুধাবিতে হতে পারে, দুপুরের মধ্যে শুনলাম আবুধাবিতে ভুমিকম্প হবে সবাই যেন যে যার বিল্ডিঙয়ের নিচে রাস্তায় চলে আসে। এর মধ্যে আবার যেসব ভাইরা চাকরির কারনে দূরে অবস্থান করছিলেন তারা ভাবিদের পরামর্শ দিলেন ঘরের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পাসপোর্ট, গয়নাসহ যেন ঘর থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যান । আমি মায়ের সাথে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম ফেরার সময় দেখি মরুভূমির এই কাঠ ফাঁটা রোদে আমাদের এক পরিচিত স্ট্রলারে দুই বাচ্চা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। জিজ্ঞাসা করে জানলাম উনি ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চা আর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ৩/৪ ঘণ্টা থেকে দাঁড়ানো। বাইরে ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে তিনি সমানে ঘামছেন আর ভূমিকম্পের অপেক্ষা করছেন। মা দেখে বললেন, শিগগির বাসায় যান, এই গরমে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়বে। একটা কথা শুনলেন আর অমনি বিশ্বাস করলেন! ভূমিকম্প কখনো বলে কয়ে আসে! পরদিন শুনেছিলাম ভুমিকম্পের ভয়ে সেদিন বিভিন্ন বিল্ডিঙয়ের নিচে অনেক বাঙ্গালীরা এমন রাস্তায় বেরিয়ে অপেক্ষা করছিলেন যা পরে সবার মধ্যে কৌতুকের সৃষ্টি করেছিল। মজার ব্যাপার হল মহিলারা না হয় আবেগপ্রবন বেশী, না বুঝে অনেক কিছু করে কিন্তু পুরুষরা! ঘটনাটা বলার উদ্দেশ্য হল আমরা বাঙালীরা হুজুগে মাতি। কোন কিছু শুনলে পুরুষ মহিলা উভয়েই ঘটনার সত্যতা যাচাই বাছাই না করে সহজে বিশ্বাস করে ফেলি।

ভার্চুয়াল জগতটাও অদ্ভুত। কোন একটি খবর যখন একজন মানুষ অন্য একজনকে বলে তখন কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয় কেননা প্রত্যেক মানুষেরই নিজেকে প্রকাশ করার স্ব-স্ব স্টাইল থাকে। এই খবরটাই যখন অন্য একজনকে বলতে যাই তখন কিভাবে বললে তা অন্যের কাছে সত্য, বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য হবে সেই চিন্তায় আমরা আসল কথার সাথে নিজেদের মনগড়া আরো কিছু যোগ করে অন্যের কাছে প্রকাশ করি। এভাবে যদি খবরটা একজন মানুষ থেকে অন্য আরেকজন মানুষের কাছে যেতে সামান্য পরিবর্তনও হয়ে যায় তবে ঐ খবরটা হাজার মানুষের মাঝে বা পুরো মহল্লায় জানাজানি হলে কি অবস্থা হবে! মূল কথাটা শেষে গিয়ে কতটুকু সত্য হয়ে দাঁড়াবে? তাই যে কোন ধরনের উসকানিমূলক বা হঠকারী পোষ্ট দেবার আগে একটু চিন্তা করুন খবরের উতস সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন? চলুন, প্রথমে আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি এগুলোর সাথে জড়িত? আমি কি মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছি? আমার আচরণে কি অন্য কেউ কষ্ট পাচ্ছে? আমি যে খবরটা প্রচার করছি তার সত্যতা কতটুকু? আমি কি অন্যের কাছে প্রচার করার আগে ঠিকমত যাচাই করে নিয়েছি? মানুষ হিসেবে এইটুকু দায়িত্ববোধ আশা করাটা অন্যায় নয় নিশ্চয়ই।

 

অসুস্থ স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান সিলেটের পারভীন


নারী সংবাদ


নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বাংলাদেশী নারী হুসনে আরা পারভীন (৪২)-এর বাড়ি সিলেটে। তিনি স্বামীর সাথে নিউজিল্যান্ড থকতেন। অসুস্থ স্বামী ফরিদ উদ্দিনের খোঁজ নিতে গিয়েই পারভীন মারা যান বলে জানা গেছে।

ফরিদ উদ্দিন আহমদের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার মিরেরচক গ্রামে। আর হুসনে আরা পারভীন সিলেটের গোলাপগঞ্জের জাঙ্গাল হাটা গ্রামের মৃত নুরুদ্দিনের মেয়ে। ১৯৯৪ সালে বিয়ে হওয়া এই দম্পত্তির এক কন্যা সন্তান রয়েছে।। সর্বশেষ ২০০৯ সালে তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন।

ক্রাইস্টচার্চ মসজিদে এই সন্ত্রাসী হামলায় তিনজন বাংলাদেশী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। হামলায় পারভীন মারা গেলেও বেঁচে গেছেন তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন।

পারভিনের ভাগ্নে মাহফুজ চৌধুরী জানান, বিয়ের পর স্বামীর সাথে নিউজিল্যান্ড যান হুসনে আরা পারভীন । তারা ক্রাইস্টচার্চ এলাকায় বসবাস করতেন। তার স্বামী ফরিদ উদ্দিন কিছুদিন দিন ধরে প্যারালাইজড অবস্থায় আছেন। হামলার প্রায় আধঘন্টা আগে মসজিদে অসুস্থ স্বামীকে রেখে পার্শ্ববর্তী নারীদের জন্য মসজিদে যান হুসনে আরা। প্রায় ১৫ মিনিট পর পুরুষদের মসজিদের ভেতরে গুলির শব্দ শুনে পারভীন তার স্বামীর খোঁজ নিতে যান। এসময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাকে গুলি করলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান।

নিজের খালু বেঁচে আছেন জানিয়ে মাহফুজ চৌধুরী বলেন, মসজিদের বাইরে গুলির শব্দ শোনার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন মুসল্লি হুইল চেয়ারে করে তাকে (ফরিদ উদ্দিনকে) মসজিদ থেকে বের করে নেওয়ায় তিনি বেঁচে গেছেন। নিউজিল্যান্ডে বসবাসকারী নিহত পারভীনের ভাবী হিমা বেগম ঘটনার পর টেলিফোনে সিলেটে থাকা পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানান।

মাহফুজ চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসী হামলার প্রায় একঘণ্টা পর হিমা বেগম ফোন করে পারভীন খালার নিহতের খবরটি আমাদের জানিয়েছেন। তখন বাংলাদেশ সময় আনুমানিক সকাল ১০টা।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

শিশুদের প্রতি যত্ন (খেলাধুলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়)


প্যারেন্টিং


খেলাধূলার প্রতি অধিক গুরুত্ব শিশুর বুদ্ধিমত্তার উন্নতিতে সাহায্য করে। যে শিশুরা বেশি বেশি সৃজনশীল উপায়ে খেলাধূলা করে তাদের দক্ষতা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। তবে যদি একটু একটু বই কিনে দেওয়া যায় শিশুদেরকে স্মার্ট হতে সাহায্য করে।

জেনে নিই চলুন কিছু নিয়ম:

গুছিয়ে রাখা

গবেষণায় বলা হয়েছে যে, গুছিয়ে রাখা শিখলে শিশুরা অনেক বেশি স্মার্ট হয়। শিক্ষার্থীরা গড়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এবং সার্বিকভাবে অনেক বেশি জিপিএ অর্জন করে।

শিশুর জন্য সময়

ব্যক্তির শারীরিক ফিটনেস তার আইকিউ এর সাথে সম্পর্কিত। শিশুর জন্য সময় কীভাবে মস্তিষ্কের গঠন ও বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে সে বিষয়টি এখনো পরিষ্কার। সুতরাং শিশুকে বেশি বেশি সময় দিন।

খেলাধূলা

শিশুর শিশু হওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে অনির্দিষ্ট খেলাধুলা।মুক্তভাবে খেলাধুলা করলে শিশুর জ্ঞানীয় এবং সামাজিক দক্ষতার উন্নতি ঘটে। এর ফলে সে সুখি ও স্বাস্থ্যবান হয়ে গড়ে উঠে।

ভাষা শিক্ষা

দুটি ভাষায় দক্ষ শিশুরা চাপের মধ্যেও ভালো ফোকাস করতে পারে।বয়ঃসন্ধিকালের পূর্বে ভাষা শিক্ষার ক্ষমতা বেশি থাকে। দেখা গেছে যে ছোট শিশুরা অনেক নিখুঁতভাবে ও সাবলীলভাবে নতুন ভাষা শিখতে পারে।

শিশুর পছন্দ

শিশুর পছন্দের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। ভিডিও গেম খেলতে বিভিন্ন দক্ষতার উন্নতি হয়। যেমন- হাত ও চোখের সমন্বয়, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, সম্পদের ব্যবস্থাপনা, দ্রুত চিন্তা ও প্রতিক্রিয়া, স্মৃতিশক্তি, স্থানিক উপলব্ধি, বিচার করার ক্ষমতা, নির্ভুল হিসাব, যুক্তি ইত্যাদি।

এক সাথে খাওয়া

পড়াশুনা শিশুর বুদ্ধিমত্তার উন্নতিতে সাহায্য করে বটে তা সবাই জানেন কিন্তু এক সাথে খাওয়া শিশুদের বেশি বেশি সামাজিক শিক্ষা ও দক্ষতাকে বৃদ্ধি পেতে সাহায্য করে।

পজিটিভ কথা বলা

পজিটিভ কথা বলুন বেশি বেশি শিশুকে মার্জিত ও ভদ্র হতে সাহায্য করবে। যে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রশংসা করা হয় তারা মনে করে যে এটা তাদের জন্য নির্ধারিত।

 

কাঁঠালিয়ায় স্বামীর হাতে স্ত্রী নিহত


নারী সংবাদ


ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় পারিবারিক কলহে স্বামীর দা-এর কোপের আঘাতে স্ত্রী নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। নিহত পারভিন আক্তার (৫২) ওই উপজেলার উত্তর চেঁচরী রামপুর গ্রামের শহীদুল ইসলাম জমাদ্দারের (৬০) প্রথম স্ত্রী এবং তিন সন্তানের মা। বুধবার দুপুরের দিকে এ ঘটনা ঘটে জানায় পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই ঘাতক স্বামী পলাতক রয়েছে।

ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, নিহতের উরুতে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।

নিহতের প্রতিবেশী স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ সোহেল বলেন, দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কলহ লেগেই থাকতো। কয়েক দিন ধরেই শুনছি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়।

কাঁঠালিয়া থানার ওসি মোঃ এনামুল হক বলেন, পারভিনের অনুমতি ছাড়াই আরেক নারীকে বিয়ে করেন শহীদুল। আর তা নিয়ে পারভিনের সাথে শহীদুলের ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো।

তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার দুপুরে ঘরে থাকা ধারালো গাছ কাটার দা দিয়ে পারভিনকে কুপিয়ে আহত করে স্বামী শহীদুল। এসময় এলাকাবাসী পারভিনকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ভান্ডারিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে তার মৃত্যু হয়।

অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পারভিনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন ঘাতক শহীদুলকে আটকের অভিযান চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহতের লাশ পিরোজপুর হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ছাত্রীর শ্নীলতাহানি প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার


নারী সংবাদ


বেলাব উপজেলার চরআমলাব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে শ্নীলতাহানি করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত সোমবার বিকেলে উপজেলার চরআমলাব এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষ ঘেরাও করলে পুলিশ তাকে আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চরআমলাব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সোমবার বিকেলে একটি অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানি ঘটান প্রধান শিক্ষক। পরে ছাত্রীটিকে ঘটনা কাউকে না জানাতে হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। দুই মাস আগেও ওই ছাত্রীকে প্রধান শিক্ষক শ্নীলতাহানি ঘটালে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলেনি ওই ছাত্রী। সোমবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে ছাত্রী পুরো ঘটনা তার পরিবারের লোকজনকে জানায়। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয়দের নিয়ে বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে অফিস কক্ষ ঘেরাও করলে প্রধান শিক্ষক ভেতর থেকে তার কক্ষ আটকে দেন। খবর পেয়ে পুলিশ বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা গণপিটুনি দেওয়ার চেষ্টা করলে তাকে বাঁচাতে গিয়ে কয়েক পুলিশ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সমশের ভূঁইয়া জামান রিটন আহত হন। বেলাব থানার ওসি ফখরুদ্দীন ভূঁইয়া বলেন, প্রধান শিক্ষককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

সুত্র: সমকাল।

 

বিয়ে প্রস্তুতি


কানিজ ফাতিমা


বিয়ে ব্যাপারটি জীবনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। এখানে ভুল হয়ে গেলে তার পরিণতি কঠিন হতে পারে যা শুধু দু’টি জীবন নয়, দু’টি পরিবারের জন্যও হয়ে উঠতে পারে কষ্টকর। কাজেই এ সিদ্ধান্তের জন্য কিছু পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। যদিও বিয়ের ব্যাপারটির সঙ্গে জড়িত থাকে আবেগ, স্বপ্ন আর সোনালী সব আশা, তথাপিও সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসব আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তবসম্মত চিন্তার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই একথা প্রযোজ্য। তবে যেহেতু এখনও আমাদের সমাজে মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অসুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে সেহেতু মেয়েদের এক্ষেত্রে আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরী।

বিবাহপূর্ব সচেতন প্রস্তুতির কয়েকটি ধাপ রয়েছে।

সর্বপ্রথম ধাপটি হলো, নিজের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নেয়া বা নিজেকে চেনা। আমাদের মনে হতে পারে যে, আমরা সবাই নিজেকে চিনি। কিন্তু বাস্তবে তা নাও হতে পারে। নিজের মনকে জানা থাকলে আপনার সহজ হবে আপনার নিজের বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। কাজেই নিজেকে ও নিজের মনকে জানার জন্য গভীর চিন্তা করুন। সময় নিন। খুঁজে বের করুন আপনার ভিতরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ভাল গুণ। এবার তা ক্রমানুসারে লিখে ফেলুন। যেমন ধরুন একজন এভাবে ভাবতে পারে-

ভাল গুণ-১ : আমি পরিশ্রমী।

ভাল গুণ-২ : আমি সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে পারি।

ভাল গুণ-৩ : আমি সৎ থাকতে পছন্দ করি।

আবার ভাবুন এবং নিশ্চিত হোন যে, আসলেই এই গুণ তিনটি আপনার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে রয়েছে কি না।

দ্বিতীয়ত : খুঁজে বের করুন আপনার সবথেকে খারাপ তিনটি দোষ, সততার সঙ্গে খুঁজুন। এড়িয়ে যাবার কিছুই নেই। এ আপনার নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া। এবার ক্রমানুষারে লিখে ফেলুন দোষ। যেমন ধরুন কেউ এভাবে লিখতে পারে –

দোষ-১ : আমি অল্পতেই রেগে যাই।

দোষ-২ : আমি কৃপণ।

দোষ-৩ : আমি নিজের আত্মীয়দের ব্যাপারে অন্ধ কিন্তু অন্যদের দোষ বেশি দেখি।

এবার খুঁজে বের করুন কোন তিনটি জিনিস আপনি সব থেকে বেশি পছন্দ করেন। এরপর তা লিখি ফেলুন। যেমন :

পছন্দ-১ : বই পড়তে।

পছন্দ-২ : ভ্রমণ করতে।

পছন্দ-৩ : বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে।

সর্বশেষে লিখুন সেই তিনটি জিনিস যা আপনি খুবই অপছন্দ করেন বা সহ্য করতে পারেন না। যেমন হতে পারে –

অপছন্দ-১ : মিথ্যা কথা।

অপছন্দ-২ : প্রদর্শনেচ্ছা।

অপছন্দ-৩ : বেশি কথা বলা বা বাড়িয়ে বলা।

এবার দেখুন আপনি আপনাকে আগের চেয়ে অনেক বেশি জানেন। এভাবে নিজের সম্পর্কে সচেতনতা অর্জন বিয়ের পূর্বের মানসিক প্রস্তুতির প্রথম ধাপ।

এবার আসা যাক দ্বিতীয় ধাপে। দ্বিতীয় ধাপ হলো নিজের মূল্যায়ণ। আমরা অনেকক্ষেত্রেই নিজের মূল্যায়ণ না করেই নিজের চাওয়া নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এতে সিদ্ধান্ত ভুল হবার সম্ভাবনা অধিক। নিজের মূল্যায়ণ করতে হলে প্রথম খুঁজে বের করুন আপনার বায়োডাটার পজিটিভ পয়েন্টগুলো কী কী। ক্রমানুসারে তা লিখুন। যেমন-

পজিটিভ পয়েন্ট-১ : একটি ভাল চাকুরী।

পজিটিভ পয়েন্ট-২ : আর্থিক স্বচ্ছলতা।

পজিটিভ পয়েন্ট-৩ : উচ্চ শিক্ষা

পজিটিভ পয়েন্ট-৪ : শিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার।

এবার ভাবুন আপনার বায়োডাটার দুর্বল দিকগুলো কী কী। যেমন হতে পারে-

দুর্বলতা-১ : উচ্চতা কম।

দুর্বলতা-২ : আর্থিক অস্বচ্ছলতা।

দুর্বলতা-৩ : বড় পরিবার ও তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার।

দুর্বলতা-৪ : পরিবারের অন্যান্যরা যথেষ্ট শিক্ষিত নয় ইত্যাদি।

এভাবে আপনার প্রতিটি পজেটিভ ও নেগেটিভ পয়েন্টকে মূল্যায়ণ করে নিজের অবস্থাটা ভাল করে বুঝে নিন।

এবার আসুন প্রস্তুতির ৩য় ধাপে। এ ধাপে জেনে নিন আপনি কী চান? মজার ব্যাপার হচ্ছে অধিকাংশ নারী -পুরুষই বিয়ের আগে জানেনই না যে আসলে তারা কি চান।খুব সাধারণ কয়েকটি ব্যাপার যা চাওয়া হয় পাত্র খোঁজার সময়। তাহলো ভাল মেয়ে, সুন্দরী , ফর্সা, শিক্ষিত ও ভাল পরিবার ও ভাল উচ্চতা, খেয়াল করে দেখুন এতে মোটামুটি সবই চাওয়া হয়েছে। তাছাড়া ভাল মেয়ের কী সর্বজনসম্মত কোন সংজ্ঞা আছে? এরকম চাওয়া আসলে কোন চাওয়া নয়। সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট করে নিজের মন ও নিজের ক্যারিয়ারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গভীরভাবে ভাবুন আপনার আসলে কেমন সঙ্গী দরকার। আসলেই কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার খুবই প্রয়োজনীয় আর কোনগুলো ছাড় দিতে আপনি প্রস্তুত। এবার তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা লিখে ফেলুন যা আপনি অবশ্যই চান এবং যা আপনি কোন অবস্থাতেই ছাড় দেবেন না। যেমন-

আবশ্যক-১ : ধর্মের অনুশীলন।

আবশ্যক-২ : উচ্চশিক্ষিত (অনার্স বা মাস্টার্স)

আবশ্যক-৩ : চাকুরীজীবি।

এবার আরও তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা লিখুন যা আপনি চান তবে প্রয়োজনে ছাড় দিতে রাজি আছেন-

আবর্শক-৪ : উচ্চতা।

আবশ্যক-৫ : শিক্ষিত পরিবার।

আবশ্যক-৬ : সুন্দর।

মনে মনে ভেবে রাখুন যে, বাধ্যতামূলক তিনটি বৈশিষ্ট্যের পরে নীচে (৪ – ৬) তিনটি যে কোন দু’টি বা একটি ছাড় দিতে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। আপনি যখন এই চাওয়াগুলো ঠিক করেন তখন আপনাকে নিজের মূল্যায়ণ (দ্বিতীয় ধাপ)-এর দিকে নজর দিতে হবে। বিশেষ করে আপনার দুর্বল পয়েন্টগুলোকে মনে রাখতে হবে। নয়তো আপনার চাওয়াগুলো বাস্তবসম্মত হবে না। আমি অনেক সময় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি যার নিজের বায়োডাটায় পজেটিভ পয়েন্টের তুলনায় দুর্বল দিক অনেক বেশি কিন্তু চাওয়ার লিস্ট অনেক বড়। এরূপ অবাস্তব চাওয়া শুধু যে আপনার বিয়ের সময়ই সমস্যা তৈরি করবে তা নয় বরং পরবর্তী পারিবারিক জীবনেও অশান্তির কারণ হতে পারে। বিয়ের সময় সমাজে কোন পাত্র বা পাত্রীর দাম বেশি সে হিসেবে না গিয়ে বরং আপনার জন্য কে বেশি উপযোগী হবে সেটাই খোঁজার চেষ্টা করুন। বেশি আবেগী হয়ে অসচেতন সিদ্ধান্ত নেয়া বা অতি উচ্চাকাংখী হওয়া দুই-ই আপনার জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

 

বিশেষ অবদান রাখায় ১৫ নারীকে সম্মাননা প্রদান


নারী সংবাদ


প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করল গুলশান সোসাইটি। গতকাল রবিবার এ উপলক্ষে নগরীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে প্রথম নারী জাতীয় অধ্যাপক ড. সুফিয়া আহমেদ এবং বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত পুনর্বাসন কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড’ (সিআরপি)-এর পরিকল্পক ও প্রতিষ্ঠাতা ভেলরি টেইলরকে আজীবন সম্মাননাসহ ১৫ নারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হাইকোর্টের বিচারপতি কাশেফা হোসেন বলেন, দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন আছে, বাল্যবিয়ে রোধেও আইন আছে। তারপরও নারী নির্যাতন ও বাল্যবিয়ে বেড়ে চলছে। সমাজে ধর্ষণ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। অবস্থা পরিবর্তনে আইনের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে পারিবারিক শিক্ষার উপর জোর দেন তিনি।

বিশেষ অতিথি দৈনিক ইত্তেফাক ও পাক্ষিক অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, গণমাধ্যমে এবছর নারী দিবসে ব্যাপক প্রচারণা প্রমাণ করে নারীর অগ্রযাত্রা মানুষকে সচেতন করতে পারছে। মানুষ নারীর দক্ষতাকে স্বীকার করতে বাধ্য। নারীকে আজ আর কম বুদ্ধি, তারা পারে না বলা যাবে না। কারণ তারা সব ক্ষেত্রে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। যদিও সমাজ ধর্মের দোহাই আর নানা রকম শব্দ ব্যবহারে জব্দ করে পেছনে টেনে রাখতে সচেষ্ট আছে।

অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সোসাইটির প্রথম নির্বাচিত নারী মহাসচিব শুক্লা সারওয়াত সিরাজ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সভাপতি সাখাওয়াত আবু খায়ের মোহাম্মদ। প্রথা ভেঙে সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রাখায় যে নারীরা সম্মাননা পান তারা হলেন, প্রথম নারী পাইলট (বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার) আলেয়া মান্নান, সিভিল সার্ভিস পুলিশের প্রথম নারী ক্যাডার ফাতেমা বেগম, কমনওয়েলথ স্বর্ণজয়ী ভারোত্তোলনকারী মাবিয়া আক্তার, তৃতীয় লিঙ্গ-এর অধিকারকর্মী জয়া সিকদার, প্রকাশক মাহরুখ মহিউদ্দিন, ছেলেদের ফুটবল কোচ মিরনা খাতুন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল বই করা প্রতিষ্ঠান স্পর্শ-এর নাজিয়া জাবিন, প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী নিশাত মজুমদার, নারী-পুরুষের জন্য অ্যাপসভিত্তিক বাইক চালক শাহনাজ আক্তার, ডিজিটাল নারী উদ্যোক্তা মলিহা মালেক কাদের, নিজের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকারী মিতালী বিশ্বাস, প্রকৌশলী আফশিন মোজ্জামেল। সম্মাননা প্রাপ্তদের সম্মাননা স্মারক ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ড. নাশিদ কামাল ও তার মেয়ে আরমিন মুসা।

সুত্র: ইত্তেফাক রিপোর্ট।

 

পায়েস রান্না


ঘরকন্যা


পায়েস খেতে সবাই পছন্দ করে। পায়েস মজাদার হলে তা খেতে চায় বাসার সবাই। তবে সময় বেশি লাগে ভেবে ইদানীং পায়েস রান্না সময় কমে গেছে। কিন্তু পায়েস রান্না করা খুবই সহজ। সহজে আপনি দ্রুত পায়েস রান্না করতে পারেন।

পায়েস তৈরির সহজ নিয়ম

উপকরণ
১. দুধ ১-১/২ লিটার ঘন করে নিন,
২. পোলাও এর চাল ১৫০ গ্রাম,
৩. দারুচিনি ১,১/২ ইঞ্চি,
৪. এলাচ কয়েকটি,
৫. তেজপাতা ২টি, চিনি স্বাদমতো, বাদাম, লবণ সামান্য।

প্রস্তুত প্রণালী
ঘন দুধ করে নিন। অল্প আগে চাল ধুয়ে রাখতে হবে। ১৫০ গ্রাম পোলওয়ের চাল ভিজিয়ে রাখতে হবে।

অন্যদিকে দুধ জ্বাল দিতে হবে। দুধ যখন ফুটতে থাকে, তখন চাল ও লবণ দুধের মধ্যে দিয়ে দিতে হয়। এরপর চাল ভাল করে সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং একটু পর পর নেড়ে দিতে হবে। পুড়ে গেলে গন্ধ হবে মনে রাখবেন।

পরিবেশন
সব কিছু ভালোভাবে মিশে গেলে নামিয়ে কিসমিস ও বাদাম দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।

 

নারী দিবসে “নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, ক্যান্সার ও অধিকার”


নারী সংবাদ


আজকে ৯-ই মার্চ রোজ শনিবার “নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য, ক্যান্সার ও অধিকার” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে। কমিউনিটি অনকোলজি ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ – এই অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। সহযোগিতায় আরও ছিলেন, বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম ও মার্চ ফর মাদার।

সভায় মূল আলোচনায় অংশ নেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গাইনি অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাবেরা খাতুন ও জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের ক্যান্সার-ইপিডিমিওলজি বিভাগের প্রধান ডাঃ হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি- জাইকার বাংলাদেশ অফিসের প্রধান উপদেষ্টা Yukie Yoshimura।

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, টাইগার আইটি বাংলাদেশ লিমিটেড এর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট নাঈমা জান্নাত, ক্যান্সার সারভাইভার রোকেয়া রুমি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হীল-এর প্রতিষ্ঠাতা মিসেস জেবুন্নেসা, অপরাজিতার জ্যেষ্ঠ সদস্য হোসনে আরা হান্নান, সাংবাদিক জান্নাতুল এনা, মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল, ক্যাপ-এর উম্মে হানি মেঘলা, কুমিল্লা কমিউনিটি অনকোলজি ফোরামের রুহুল আমিন, জুম বাংলাদেশের কাজী সদরুল ইসলাম, ওয়ারেস আলী প্রমুখ।

বক্তারা নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের সাথে ক্যান্সারের গভীর সম্পর্ক আছে বলে জানান। জরায়ুমুখের ক্যান্সার, ডিম্বাশয় ক্যান্সার, কোরিওকারসিনোমা, স্তন ক্যান্সার এর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা, সূচনায় ক্যান্সার নির্ণয় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে নারীরা অবহেলিত ও বঞ্চিত। পাশাপাশি বক্তব্যতে হসপিটালের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ কথাও উঠে আসে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে নারীর প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা, গর্ভবতী নারীর সন্তান রাখা না রাখা, অপারেশনের মাধ্যমে প্রজনন অঙ্গহানির মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত গ্রহণে, নারীর অধিকার অধিকাংশ ক্ষেত্রে লঙ্ঘিত হয়। বক্তিতায় বক্তাদের কথায় উঠে আসে।

 

খোলা জানালার হাতছানি


আফরোজা হাসান


আমার ছেলের সাথে নিয়মিত যে কাজগুলো করা হয় তারমধ্যে একটা হচ্ছে গল্পের বই পড়া। আমি যে শুধু ছেলেকে সঙ্গ দেবার জন্য ছোটদের বই পড়ি তা কিন্তু না, আমি ভীষণ রকম উপভোগ করি গল্পগুলো। তাছাড়া নিজে আনন্দ না পেয়ে বাচ্চার মনে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়াটা অনেক মুশকিল বলে মনেহয় আমার কাছে। গতরাতে আমরা দুজন ছোট্ট একটা বাচ্চা ছেলের আত্মকথন মূলক একটা বই পড়েছি। একটা বাচ্চা নিজের মনে অক্লান্ত ভাবে কত রকমের কল্পনার জাল যে বুনে চলে সেটাই ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন লেখিকা। গল্পে বাচ্চাটার নিজস্ব একটা আকাশ আছে, একটা সমুদ্র আছে, একটা পাহাড় আছে, পাহাড়ে চড়ার লম্বা একটা সিঁড়ি আছে। আর এসবকে ঘিরে শিশুসুলভ কথোপকথনের ছড়াছড়ি পুরো বইতে। কিন্তু বইয়ের শেষে লেখিকা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন যে, সবার মনেই প্রকৃতি আছে, আছে প্রকৃতির প্রতিটি রঙ-রূপ…। যেগুলোর অস্তিত্বকে অনুধাবন করতে হলে সবার আগে মনের বন্ধ জানালার কপাটগুলো খুলতে হবে।

ছেলেকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম থোকা থোকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। আকাশের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর উপলব্ধি করলাম আমার মনের মাঝেও একটুকরো আকাশ আছে। তাতেও হয় সুর্যাস্ত…সুর্যোদয়…ভেসে বেড়ায় থোকা থোকা মেঘ, ঝরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি, কখনো বাঁধ ভাঙ্গে জোছনা, চমকে ওঠে বিজলী, খসে পরে তারা…….! খেয়াল করলাম কোন কারণ ছাড়াই এক এক করে খুলে যাচ্ছে মনের জানালার কপাটগুলো। দেখতে পাচ্ছি মনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা সুউচ্চ হিমালয়কে, যাকে জয় করার জন্য আছে প্রলম্ব সিঁড়ি। আছে স্বপ্নপুরী, বিষাদের কারাগার, ফুলের বাগান, শান্ত দীঘি, আছে খাঁদা-খন্দ…… ঘৃণার জাল, নিরাশার গলি-ঘুপচি, মিথ্যার চোরাবালি….!

খুলে গেলো আরেকটি জানালা দেখলাম আমারো একটা নিজস্ব সমুদ্র আছে, আছে বাঁকা চাঁদের মতো রুপালি সৈকত। তাতে আছড়ে পড়ে হীরকের ফোয়ারা ছোটাচ্ছে নীলচে সাদা ঢেউরাশি। নীলাকাশ ছায়া ফেলে যার পানিকেও করে তুলেছে একই রকমের নীল। সৈকতের কিনার জুড়ে আছে সারি সারি নারকেল আর পাম গাছ। চারিদিকে অর্কিড, জেসমিন, বুগেনভিলা, কার্নেশান আর ফরগিভ মি নট ফুলের ছড়াছড়ি। বাতাসে ঝিঁঝিঁ পোকার গুঞ্জন আর পাখীদের কিচির মিচির। আর সমুদ্রের গভীরে আছে হাঙ্গর রূপি হতাশা, নীল তিমির মতো উচ্চাশা, লন্ঠন মাছের মতো টিমটিম জ্বলতে থাকা আশা, রংবেরঙের প্রবালের মতো স্বপ্ন……!

আচ্ছা মনের মাঝে মহাকাশ কি আছে…..? নিশ্চয়ই আছে নয়তো মাঝে মাঝে এতো শূন্যতা এতো হাহাকার ঘিরে ধরে কেন মনকে…..? কেমন যেন একটা দমবন্ধ করা পরিস্থিতি, সব থাকতেও কিছুই নেই এমন এক অনুভূতি! মধ্যাকর্ষন বলের অভাবে মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন-ভালোবাসা যেখানে ভাসতে থাকে চোখের সামনে কিন্তু তাদেরকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। মনকে ঘিরে ধরে একরাশ শূন্যতা।

 

কেন নারী দিবস সম্পর্কে জানবো?


সম্পাদকীয়


২০১৯ এর প্রতিপাদ্য : ‘‘সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো’’।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ।

কেন?
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন।আর সেই থেকেই
নারী দিবসের শুরু।

এখন কি বৈষম্য নেই

আছে
(বিশ্ব বাংকের তথ্য—-)
# মজুরিবৈষম্য,
# কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট,
# কাজের অমানবিক পরিবেশ-এখনও নারীরা এই সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তি ও পুরো সমাজকে আঘাত করার কৌশল হিসেবে সংঘাতে যৌন সহিংসতার পথ বেছে নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।

সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি -নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। তবুও কি আমরা নারীরা সত্যিকার অধিকার আদায় করতে পারছি?

নারীদের মধ্যে থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ানো অপরিহার্য। কিন্তু ক্ষমতা প্রাপ্তি ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের এখনো বড় ধরনের বাধার মুখোমুখি হতে হয়।

এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হলো সমান চিন্তা, বুদ্ধিদীপ্ত নির্মাণ, পরিবর্তনের জন্য উদ্ভাবন, যা সেই সব পরিকাঠামো, ব্যবস্থা ও অবকাঠামোকে চিহ্নিত করে, যেগুলো গড়ে উঠেছে পুরুষ নির্ধারিত সংস্কৃতির আলোকেই। আমাদের এই বিশ্বটাকে পুনঃকল্পনা ও পুনর্নির্মাণের জন্য আমাদের একটি উদ্ভাবনী প থ খুঁজে বের করা প্রয়োজন, যা সবার জন্যই সমান কার্যকর হবে। নগরায়ন নকশা, পরিবহন ও জনপ্রশাসনের মতো ক্ষেত্রে নারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীরা এসব খাতে নারীর প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি, হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিহত এবং সবার জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। (জাতিসংঘ মহাসচিব)

পরিশেষে বলা যায় যে, আসুন আমরা নিশ্চিত করি। যে প্রতিটি নারী ও প্রতিটি কিশোরীও আমাদের সবার জীবনের ওপর প্রভাব ফেলে, এবং তাদের ভূমিকা আমাদের জীবনে অনেক, সুতরাং সমাজকে পরিষেবা ও অবকাঠামোর আকার দিতে পারে।

 

ভিডিও ধারণ করে গৃহবধূকে গণধর্ষণ, মামলা দায়ের


নারী সংবাদ


মাদরাসায় পড়ুয়া সন্তানকে খাবার দিয়ে আসার পথে দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূ (২৫) কে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে।

এদিকে গণধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার বালিয়াকান্দি থানায় ৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ। গণধর্ষণের শিকার গৃহবধূকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে।

ধর্ষিতা ওই গৃহবধূ জানান, তার ৮ বছর বয়সী ছেলে উপজেলার ঠেঙ্গাবাড়িয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার পড়ে। ছেলের জন্য বাড়ি থেকে তিনি ওই মাদ্রাসায় দুই বেলা খাবার দিয়ে আসেন। গত ৩ জানুয়ারী সন্ধ্যায় ছেলেকে খাবার দিয়ে ফেরার পথে কুরশী গ্রামের মোজাইর কলাবাগানের কাছে অভিযুক্ত শামীম, মর্তুজা, মনির, সোহেল, সাব্বির তাকে ঘিরে ধরে।

এ সময় মনির তার গায়ের চাদর দিয়ে মুখ বেঁধে কলাবাগানের মধ্যে নিয়ে যায়। এরপর অভিযুক্তরা তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাক্রমে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করে ও ছবি তোলে।

তিনি আরো জানান, পালাক্রমে ধর্ষণের পর অভিযুক্ত ধর্ষকরা তাকে হুমকি দিয়ে চলে যায়। এরপর অসুস্থ্য অবস্থায় তিনি বাড়ি গিয়ে স্থানীয় ডাক্তারের চিকিৎসা নেন।

এ ঘটনার দুইদিন পর মর্তুজা ধর্ষিতা গৃহবধূর বাড়িতে এসে ধর্ষণের ভিডিও দেখিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে ভিডিও ও ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। একপর্যায়ে লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না বলে ওই গৃহবধূ তাকে ২৫ হাজার টাকা দেয়। এদিকে টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে অভিযুক্ত ধর্ষকদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হলে গণধর্ষণের বিষয়টি জানা-জানি হয়।

এ ব্যাপারে মঙ্গলবার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের ঠেঙ্গাবাড়ীয়ার মৃত আবু বক্করের ছেলে শামীম (২৫), কুরশীর সোনাইডাঙ্গী গ্রামের মমিন মন্ডলের ছেলে মর্তুজা (২০), আয়ুব আলীর ছেলে মনির (২৫), খালেক শেখের ছেলে সোহেল (২৬) ও একই গ্রামের মাজেদের ছেলে সাব্বির (২০) কে আসামী করে ধর্ষণের মামলা দায়ের করেন ওই গৃহবধূ।

বালিয়াকান্দি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ওবায়দুল হক জানান, গণধর্ষণের বিষয়ে শনিবার দুপুরে রাজবাড়ী পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি, বিপিএম, পিপিএম, সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) ফজলুল করিম, থানার ওসি একেএম আজমল হুদা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মঙ্গলবার ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি আরো বলেন, তাকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মেডিকেল পরীক্ষা করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করছেন থানার ওসি একেএম আজমল হুদা। আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

জোসনার দিন বদলের চেষ্টা


নারী সংবাদ


বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে এক সময় সমাজ ব্যবস্থায় সনাতনী ধ্যান-ধারণা, মূল্যবোধে ও লিঙ্গ বৈষম্য ছিল প্রকট। বর্তমানে সেই ধ্যান-ধারণা তথা দৃষ্টি ভঙ্গীতে এসেছে অনেক পরিবর্তন। তারপরও গ্রামের লোকজনের মধ্যে এখনো সেকেলে চিন্তাধারা বিরাজমান। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং শিক্ষার অভাবে এত দিন পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে গ্রামে বসবাসরত নারীরা সেই অচলায়তন ভেঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে এগিয়ে আসছে। বিশেষ করে গত দশ বছরে এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং অগ্রগতি আজ বিশ্বে প্রশংসিত। নারীর ক্ষমতায়ন একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও লিঙ্গ সমতার প্রতিফলক। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কাছ থেকে বিশ্বের বেশ কিছু শেখার আছে। বর্তমান সরকার লিঙ্গ সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের জন্য এমডিজি ২০১৫ অর্জন ও নারীর প্রতি সকল বৈষম্য বিলোপ (সিডও) এর বিভিন্ন ধারা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে এমডিজি ৩ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তার প্রতিফলন হলোÑ বাংলাদেশের গ্রামীণ অনগ্রসর নারীদের ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ।
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা দিনাজপুর। এক সময় উত্তর বঙ্গকে দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল বলা হলেও এখন চিত্র পুরোটাই উল্টো। এখন সংসারে নারী-পুরুষ সমানভাবে অর্জন করে । আবার কখনো কখনো নারীরাই চালাচ্ছেন সংসার। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার একইর গ্রামের নারীদের কাছে একটি প্রেরণার নাম হলেন জোসনা আরা (৪৪)। সংসারের কাজের পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি নিজেও সংসারের ব্যয় নির্বাহে ভূমিকা রাখছেন। তিনি বলেন, ‘মোর জামাই যা টাকা কামায় ওলা দিয়ে হামার সংসার চলে না। দুই বেটা-বেটির খিলানোর ভার হামার উপরি’। জোসনা এক ছেলে ও এক মেয়ের জননী। বিয়ের পর থেকেই তার অভাবের সংসার। স্বামী বুদা মাঠে কাজ করে যে আয় রোজগার করতেন তা দিয়ে বেশ টানাপোড়নের মধ্যেই সংসার চলতো তাদের। তিনি কখনও শিক্ষার আলোয় আলোকিত হতে পারেননি। কিন্তু তিনি নিজের ছেলে মেয়েকে এই আলো থেকে বঞ্ছিত হতে দিতে চাননি। তাই তিনি তার ছেলে এবং মেয়ে দুজনকেই স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। স্কুলে ভর্তি করানোর পর তাদের অভাবের মাত্রা আরও বেড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ঘরের গন্ডি থেকে বের হয়ে তিনি নিজেও সংসারের হাল ধরবেন। তাই তিনি স্থানীয় এক ফার্মে গরু পরিচর্যার কাজ নেন যেখানে তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে মাসিক তিন হাজার টাকা পেতেন। এই টাকার পুরোটা তিনি সংসারের ব্যয় নির্বাহে খরচ করতেন না। জোসনা বললেন, ‘জিলা টাকা মুই কামাছুনু ওলাত্তে কিছু সংসারোতও দিছিনু। বাকি যা টাকা আছলো ওলা জমে থুয়ে দিছিনু। কারণ মোর মনোত্ত আছোলো নিজে নিজে কেছু এটা করার’। যখন তার কাছে জমানো মোটামোটি ১৫ হাজার টাকার মত হয় তখন তিনি যে ফার্মে কাজ করতেন তার মালিকের কাছে তার পরিকল্পনার কথা বলেন এবং আর্থিক সহায়তা চান। পরবর্তীতে ফার্মের মালিক তাকে আরও ২০ হাজার টাকা ঋণ দেন। এই ঋণের টাকা আর তার সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে তিনি একটি উন্নত জাতের গাভী কিনেন এবং এভাবেই একটি গাভী দিয়ে তিনি তার স্বাবলম্বী হওয়ার যাত্রা শুরু করেন। এই গরুর দুধ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে তিনি মাসে আরও কিছু আয় রোজগার করা শুরু করলেন। গরু কেনার দুই বছরের মাথায় তিনি যে ফার্ম থেকে ঋণ নেন তা তিনি পরিশোধ করে ফেলেন। ইতিমধ্যে তার বাড়িতে গরুর সংখ্যা দাঁড়িয়ে যায় দু’টিতে।
এখানেই তার স্বাবলম্বী হওয়ার যাত্রা শেষ হয়নি। তিনি বললেন, ‘ঋণ শোধ করার পর মুই ফার্মেত কাজ করা ছাড়ে দিছিনু। মর জামাই জি টাকা কামাসোলো আর মুই দুধ থিকে জি টাকা পাছুনু ওলা দিয়ে হামার সংসার ভাল চলছোলো। এই বছর মুই এনা এনা করে টাকা জমে ফির ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটা ফ্রিজিয়ান জাতের বকনা কিনি। তার সাথে হামার বাড়িত ৬০টা রাজ হাঁস আর ৩০টা মুরগি পালি’। তিনি এই মুরগি ও রাজ হাঁসের ডিম এবং গরুর দুধ বাজারে বিক্রি করে বর্তমানে মাসে ১৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা আয় করেন।
জোসনা খুব বিচক্ষণতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে মাত্র চার বছরেরও কম সময়ে সাফল্য পেয়েছেন। তার স্বামী এবং তার আয় রোজগারে তাদের সংসার এখন ভালোভাবেই চলছে। বসত বাড়িটি করেছেন পাকা। কথায় আছে যে রাধে, সে চুলও বাঁধে! একটা সময় পর্যন্ত এ প্রবাদটা সত্যি হলেও কালের পরিক্রমায় নারীরা এখন শুধু রেঁধে কিংবা চুল বেঁধে নয়, তারা পুরুষের সাথে সংসারের হাল ধরে নিজের অবস্থার পরিবর্তন করেছেন। তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন জোসনা।

সুত্রঃ বাসস।

 

আমার রঙে রাঙিয়ে যাব………..


আফরোজা হাসান


ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে মেঘলা আকাশ দেখে হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো নুশেরার। বৃষ্টি অসম্ভব পছন্দ করলেও গুমোট ধরা মেঘলা আকাশ সবসময়ই তার মন খারাপ করে দেয়। রুমে এসে ডায়েরী নিয়ে বসলো। গতরাতের লেখাতে চোখ বুলাতেই খুব হাসি পেলো। ভাবলো…ধ্যাত কি সব লিখেছি! ডায়েরী বন্ধ করে আবারো বারান্দায় এসে দাঁড়ালো নুশেরা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো মেঘ আর সূর্য জমিয়ে লুকোচুরি খেলছে। দুরন্ত দুটি শিশু যেন কেউ কারো চেয়ে কম না। মামণি এসে পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখতেই মনের জগত থেকে বাইরে বেড়িয়ে এলো নুশেরা। মার দিকে তাকিয়ে আদুরে গলায় বলল, আমি কিন্তু আজ ক্লাসে যাবো না মামণি। এমন দিনে ক্লাসে গিয়ে কোন মজা নেই। মামণি হেসে বললেন, ঠিকআছে ইচ্ছে না হলে যাবি না। এখন চল নাস্তা করবি। নাস্তা সেরে গতরাতের অর্ধেক করে রাখা ফুলের তোড়াটা শেষ করতে বসলো সে। ছোট ভাইয়া বাইরে যাবার সময় নুশেরাকে দেখে কাছে এসে বসে বলল, কিরে সাত সকালেই ফুল নিয়ে বসেছিস যে?

-তোমার বিয়ের সময় যাতে নিজ হাতে ফুল দিয়ে সবকিছু সাজাতে পারি তাই ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করছি ভাইয়া।

-(হেসে) তাহলে বরং তুই গহনাগাঁটি বানানোর কাজ শেখ। কারণ এখনকার মেয়েরা শরীর ভর্তি গহনা না হলে বিয়ে করতে চায় না। কয়েক বছর পর দেখবি আবদার করবে বাড়িঘর ডেকোরেশনও করতে হবে হিরা-মণি-মুক্তা দিয়ে।

-মেয়েদের চাহিদা সম্পর্কে এমন ধারণার পেছনে কারণ কি তোমার?

-বন্ধুদের অবস্থা দেখে এমন ধারণা হয়েছে। এখন তো বিয়ে করতে চাওয়াটাই বিপদ।

-তুমি তাহলে এইসব বিপদে না গিয়ে মহৎ কিছু করো। শত শত অসহায় কন্যা দায়গ্রস্ত পিতা-মাতা আছেন যারা সামর্থ্য নাই তাই মেয়েদের বিয়ে দিতে পারছেন না, তাদের কাউকে বিয়ে করো। অনেক মেয়ে আছে দেখতে খুব একটা সুন্দর না, কারো গায়ের রঙ কালো, কেউ খুব বেশি খাটো, নাহয় তাদের কাউকে বিয়ে করো। এইসব অসহায় মেয়েরা তোমাদের কাছে কিছুই চাইবেনা একটু ভালোবাসা আর আশ্রয় ছাড়া।

-(হেসে) চাইবে না নিশ্চিত হচ্ছিস কিভাবে?

-নিশ্চিত হচ্ছি না জাস্ট ধারণা করছি। তুমি তোমার ধারণা বলেছো তাই আমি আমারটা বললাম।

-(হেসে) তোর সাথে কথায় পারবো না তাই আগেই সারেন্ডার করলাম। হঠাৎ ফ্লাওয়ার ডেকোরেশনের কোর্স করার কারণ কি তোর?

-সত্যিই তোমাদের বিয়ের সময়ের কথা চিন্তা করে ভর্তি হয়েছি কোর্সে। আমি নিজ হাতে সাজাতে চাই আমার ভাইয়াদের নতুন জীবনের শুভ সূচনার প্রথম অধ্যায়কে।

-তোকে দেখি সারাক্ষণই পরিবারের সবাইকে নিয়ে নানা ধরণের স্বপ্ন দেখতে। আচ্ছা নিজেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই তোর মনে?

-(হেসে) অবশ্যই আছে। তবে আমার স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে চাই না আমি।

-কেন?

-কারণ আমি আমার স্বপ্নকে ধরে রাখতে চাই ভাইয়া। আর আপনজনদেরকে স্বপ্নের কথা বললে, তারা সেটা পূরণ করার চেষ্টা করে। এতে বেশির ভাগ সময়ই স্বপ্নটা ভেঙ্গে যায়। আর আমার ধারণা স্বপ্ন অপুর্ণ থাকার চেয়ে স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়াটা বেশি কষ্টের। যদিও স্বপ্ন মানে আশা। তাই স্বপ্ন অপুর্ণ থাকা মানে আশা পূরণ না হওয়া। কিন্তু অপুর্ণ স্বপ্নের পুর্ণ হবার সম্ভাবনা থাকে কিন্তু ভেঙ্গে গেলে তো সেই সম্ভাবনার আশাটুকুও থাকে না।

-(হেসে) তোর চিন্তা-ভাবনাগুলো সত্যিই অন্যরকম। ভালো লাগে যখন তোর মতো মেয়েদের দেখি।

-(অবাক কণ্ঠে) তোর মতো মেয়ে মানে? ভাইয়া শোন আমি দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিস। অনেক সময় তো আমার নিজের কাছেই দুঃসাধ্য মনেহয় আমার মতো মেয়ে হতে পারাটাকে।

-(হেসে বোনের কান টেনে) তোর মতো চিড়িয়া আসলে দুনিয়াতে সিঙ্গেল পিসই আছে। আর সেটা হচ্ছিস তুই নিজে। আচ্ছা ফ্লাওয়ার ডেকোরেশন কর আমি যাই।

-আমার প্রস্তাবটা কেমন লাগলো বললে নাতো?

-কোন প্রস্তাব?

-অসহায় কাউকে বিয়ে করার।

-(হেসে) অসহায় কাউকে ঝুলাতে চাইছিস মনেহচ্ছে আমার গলায়?

-ভাইয়া আমার এক ক্লাসমিট আছে। এককথায় অসাধারণ একটি মেয়ে। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় রোড এক্সিডেন্টে ওর স্বামী মারা গিয়েছে। সাথে সাথে হারিয়ে গিয়েছে মেয়েটির জীবনের সব রঙ সব স্বপ্ন-হাসি-আনন্দ। তুমি কি পারো না ওকে বিয়ে করে ওর জীবনটাকে আবারো স্বপ্নের রঙে রাঙিয়ে দিতে?

-তুই কি সিরিয়াস?

-আমার কি ধারণা জানো ভাইয়া? আমাদের সবার মনেই একটি করে রংধনু আছে। আর সেই রংধনুর ক্ষমতা আছে নিজের সাথে সাথে অন্যের জীবনকেও রাঙিয়ে দেয়ার। তাই নিজ নিজ গণ্ডির ভিতরে কারো জীবন থেকে যদি রঙ হারিয়ে যায়, আর আমাদের যদি সুযোগ থাকে, তাহলে উচিত নিজের রঙয়ে তাকে রাঙানোর চেষ্টা করা। কথা বলছো না কেন?

-তোর কথাটা হজম করতে সময় লাগছে।

-বেশি কষ্ট হলে হজমী খাও।

-(হেসে) হজমী খেতে হবে না। আমার হজম শক্তি খুব ভালো। তবে ভেবে দেখতে চাচ্ছি তোর কথাটা।

-ভাবো। ভাবতে ভাবতে ভাবুক হয়ে যাও। তবে জেনে রাখো যখনই আমার সামনে সুযোগ আসবে নিজের রঙে কাউকে রাঙানোর আমি ভেবে সময় নষ্ট করবো না। বরং আমার রঙে রাঙিয়ে যাবো কারো মন কিংবা জীবন……………

(কাউকে নিজের রঙে রাঙিয়ে দেবার জন্য আসলে খুব বেশি কিছু করার প্রয়োজন পরে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। একটু আশার বাণী, উৎসাহমূলক কিছু কথা, কষ্টের সময় একটু পাশে থেকে ভরসা দেয়া, বিপদে পড়লে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করা ইত্যাদি দ্বারা সম্ভব অন্যেকে রাঙিয়ে দেয়া।)

 

গোসলের সময় একা পেয়ে ধর্ষণ চেষ্টা, স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা


মোঃ জাকির হোসেন


নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সুমি রাণী। ক্লাসের যে কয়েকজন শিক্ষার্থী পড়ালেখাকে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছিল, সুমি রাণী তাদের অন্যতম। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। সম্প্রতি এক বখাটের কুনজর পড়ে সুমির (১৪) উপর। নিজের বাড়ি ও স্কুলে যাওয়া আসার রাস্তাসহ বিভিন্ন স্থানে সুমিকে উত্যক্ত করতো এই বখাটে যুবকের। অভিযুক্ত বখাটের নাম সূর্য রায় (৩৫)।

সর্বশেষ শনিবার সুমিকে বাড়ির গোসলখানায় একা পেয়ে ধর্ষণ চেষ্টা করে লম্পট সূর্য। একপর্যায়ে সুমির ভাই এসে লম্পটের হাত থেকে তাকে রক্ষা করলেও পরে লজ্জায় ও আতঙ্কে গলায় আত্মহত্যা করে সে। ঘটনাটি ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে। নিহত সুমি ওই ইউনিয়নের ভুজারীপাড়ার দিনমজুর হরেন চন্দ্র রায়ের কন্যা। সে বাঙ্গালীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।

এদিকে অভিযুক্ত বখাটে সূর্য রায় একই গ্রামের বাসিন্দা। সে দুই সন্তানের জনক এবং পেশায় একজন ইজিবাইক চালক বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ২ মার্চ শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহত স্কুলছাত্রী সুমির মা ময়না রাণী বাদী হয়ে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত স্কুলছাত্রী সুমির পরিবারের সদস্যরা জানায়, শনিবার বিকেলে বাড়ি এসে গোসলখানায় গোসল করতে যায় সুমি। এসময় তাকে বাড়িতে একা পেয়ে গোসলখানায় সুমিকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বখাটে সূর্য। একপর্যায়ে সুমির পালিত ভাই বকুল চন্দ্র বাড়িতে এলে বখাটে সূর্য রায় পালিয়ে যায়।

এসময় সূর্যকে আটক করার জন্য সুমির ভাই বকুল চন্দ্র বাড়ির বাইরে আসে। এরই ফাঁকে লজ্জা ও আতঙ্কে সুমি নিজ শোয়ার ঘরে গিয়ে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নেয়ার পথে সে মারা যায়।

নিহত সুমির মা ময়না রাণী জানান, দীর্ঘদিন থেকে তার মেয়ে সুমিকে উত্যক্ত করতো বখাটে সূর্য। এ উত্যক্ত করার ঘটনা ইতোপূর্বে সূর্য ও তার পরিবারকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো কর্ণপাত করেনি।

প্রতিবেশী শিল্পী রাণী ও সুমীর পিসি জোসনা রাণী জানান, বখাটে ও লম্পট চরিত্রের সূর্য অনেক দিন থেকেই সুমিকে উত্যক্ত করে আসছে। স্কুলে যাওয়ার পথে প্রায়ই সে সুমির হাত ধরে টানা হেচড়া করতো। আমরাও বেশ কয়েকবার এমন ঘটনা দেখেছি। কিন্তু সূর্যকে তার পরিবারের লোকজন বাধা না দেয়ায় সে আরও বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠে।

তারা আরো বলেন, একারণেই শনিবার বিকেলে সুমিকে একা পেয়ে স্নানের (গোসলের) সময় জাপটে ধরে শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণের চেষ্টা করে সূর্য। বখাটে সূর্যের কারণে একজন মেধাবী ছাত্রী অকালে ঝরে গেলো। আমরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।

এদিকে দায়েরকৃত মামলা তুলে নেয়ার জন্য সুমির পরিবারের সদস্যদের ওপর বখাটে সূর্য রায়ের লোকজন চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি ওয়ার্ড মেম্বার বজু নিহত সুমির বাবাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে ঘটনা আপস-মীমাংসা করার জন্যও চাপ দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) অশোক কুমার পাল বলেন, হত্যার মামলায় ৩০৬ ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্ত আসামীকে গ্রেফতার করার জোর চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক তদন্তে আসামী একজন লম্পট চরিত্রের বলে জানা গেছে।

ধর্ষণ চেষ্টার পর আত্মহত্যা করে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমি রাণী

– নয়া দিগন্ত

 

মাছের চপ


রেসিপি


উপকরণ :
১. যেকোনো মাছ (ভেটকি, রুই বা ইলিশ) পাঁচছয়টি বড় টুকরা,
২. আলু মাঝারি ৩টি,
৩. একটি বড় পাউরুটির টুকরা,
৪. পেঁয়াজ মিহিকুচি আধা কাপ,
৫. আদাবাটা ১ চা-চামচ,
৬. রসুনবাটা ১ চা-চামচ,
৭. কাঁচামরিচ-কুচি ১ টেবিল-চামচ,
৮. মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ,
৯. হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১০. ধনিয়াগুঁড়া ১ চা-চামচ,
১১. ভাজা জিরাগুঁড়া আধা চা-চামচ,
১২. লবণ স্বাদমতো,
১৩. তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি :
মাছের টুকরাগুলো ভাপে সেদ্ধ করে কাঁটা বেছে নিতে হবে। সেদ্ধআলু ভালোভাবে চটকে নিন। এবার পাউরুটি পানিতে ভিজিয়ে সঙ্গে সঙ্গে তুলে নিতে হবে। তারপর মাছ, আলু, রুটি খুব ভালো করে মেখে নিতে হবে। একে একে তেল বাদে সব উপকরণ খুব ভালো করে মিশিয়ে হাতে পছন্দ মতো আকার দিন। এবার গরম তেলে চপগুলো ছেড়ে দিয়ে মাঝারি আঁচে ভাজতে হবে। হালকা বাদামী রঙ আসলে নামিয়ে নিলেই হল। ইফতার, সাদাভাত, পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে খেতে মাছের চপের জুড়ি নেই।

রেসিপি : বাংলাদেশী রেসিপি।

 

শিশুদের কুরআন শিক্ষা – ভাবনার বিষয়


কানিজ ফাতিমা


সচরাচর মুসলমানেরা তাদের শিশুদের ছোটবেলা থেকেই শুধু জাহান্নামের আগুনের ভয় দেখান, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া এবং সমবেদনা অথবা জান্নাতের সৌন্দর্যের কথা সেভাবে তুলে ধরেননা । আমরা শিশুদেরকে ভয় যতটা জোর দিয়ে দেখাই যে তারা যদি আল্লাহর অমান্য করে, মা-বাবার কথা নাশুনে , বা পাপ কাজে লিপ্ত হয় তাহলে তাদের দোজখের আগুনে জ্বালানো হবে; ততটা তাদেরকে আশাবাদ দেই না যে তারা যদি সৎ কাজ করে, আল্লাহ ও মা-বাবাকে মান্য করে এবং কোনো ভালো কাজ করে তবে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। আমরা সবসময় তাদেরকে ভয় দেখাই, জাহন্নামের হুমকি দেই অথচ খুব কমই তাদেরকে সাহস যোগাই অথবা ভালো আচরণের জন্য আল্লাহ’র ভালোবাসার কথা, পুরুষ্কারের কথা উল্লেখ করি। এমন পরিবেশে, শিশুরা আতঙ্কগ্রস্ত ও ভীতু হিসাবে বেড়ে উঠে। ফলে তাদের মধ্যে নেতীবাচক মানসিকতা জন্মায় এবং আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি দেখা দেয় এবং তদেপেক্ষাও খারাপ যে তারা তাদের বিশ্বাসের প্রতি নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে।

শিক্ষকরা সাধারণত: কুরআনের শেষ অধ্যায় থেকে (ত্রিশ পারা) শিশুদের পড়ানো শুরু করে। এই অধ্যায় ছোট ছোট সূরা সম্বলিত যেগুলো ওহী আসার প্রাথমিক পর্যায়ে মক্কায় নাযিল হয়। মূলত কুরাইশ গোত্রের বিপথগামী, অহংকারী এবং অত্যাচারী পৌত্তলিক নেতাদের (আবু জেহেল, আবু লাহাব) উদ্দেশ্যে এই সূরা গুলো নাযিল হয়েছিলো। তাছাড়া যারা মুসলমানদের অত্যাচার করছিলো, মুসলমানদের মধ্যে থেকে কয়েকজনকে হত্যা করেছিলো, নবীজী (সাঃ)কে হত্যার পরিকল্পনা করছিলো এবং বিশ্বাসীদের ধ্বংস করতে যুদ্ধ বাধিয়ে ছিলো-কুরআন নাযিলের সূচনার অধ্যায়গুলো মুলত তাদের উদ্দেশ্যেই। এই সূরা গুলো এসব অত্যাচারীদের তাদের হুশ/জ্ঞান ফিরিয়ে আনার জন্য ছিলো। এদিকে আয়াতের দৃঢ় কথাগুলো তাদের কানে বজ্রধ্বনি হিসাবে কাজ করতো কারণ আয়াতগুলো ভয়ানক সতর্কবার্তা সম্বলিত ছিলো। যেমন নিচের আয়াতগুলো-

“আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে” (সূরা লাহাব, ১)

“প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ” (সূরা হুমাজাহ, ১)

“আপনার কাছে আচ্ছন্নকারী কেয়ামতের বৃত্তান্ত পৌঁছেছে কি? অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে লাঞ্ছিত, ক্লিষ্ট, ক্লান্ত। তারা জ্বলন্ত আগুনে পতিত হবে। তাদেরকে ফুটন্ত নহর থেকে পান করানো হবে। কন্টকপূর্ণ ঝাড় ব্যতীত তাদের জন্যে কোন খাদ্য নেই” (সূরা গাসিয়া, ১-৬)

“যারা মাপে কম করে, তাদের জন্যে দুর্ভোগ (সূরা মুতাফফিফিন, ১)

“বলুন, হে কাফেরকূল” (সূরা কাফিরুন, ১)

“যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে” (সূরা যিলযাল, ১)

এটা খুবই দুঃখজনক যে এসব কঠিন বার্তা কোমলমতি শিশুদের উদ্দ্যেশে নাযিল না হলেও এগুলোই শিশুদের সর্বপ্রথম শিখানো হয়। হ্যা, প্রথমেই এ সূরাগুলো শিখানোর একটা কারণ হচ্ছে এগুলো ছোট এবং সহজে মুখস্ত করা যায়। তবুও শিশুদের এ বয়সে জাহান্নাম ও শাস্তির ভয় দেখানোর বদলে আমাদের উচিত তাদেরকে আল্লাহর ভালোবাসা, মা-বাবার দয়া এবং জান্নাতের সৌন্দর্য প্রভৃতি বিষয়ে বুঝানো।এর ফলে শিশুকাল থেকে তাদের মনে নিরাপত্তার অনুভুতি, ভালোবাসা, দয়া, কোমলতা, মহত্ত্ববোধ, উদারতা এবং সহানুভুতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যগুলো ধীরে ধীরে প্রবেশ করবে। আল্লাহর ভালোবাসা, দয়া, মমতা, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্যশীলতা এবং উদারতা ইত্যাদি আল্লাহর সুন্দর গুণাবলীগুলোর শিক্ষার মধ্য দিয়েই শিশুদের প্রথম পাঠ শুরু করা উচিত। প্রথমে তাদের মনে এই বিশ্বাস দিতে হবে যে তারা ভালো এবং আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। এরপর তাদেরকে শেখাতে হবে যে তাদেরও উচিত আল্লাহকে ভালবাসা। শিক্ষার ক্রমটি এমন হতে হবে যে , প্রথমত তাদের প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে তাদের অবগত করা, তারপরে তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসতে হবে সেই বাধ্যবাধকতা শেখানো।

এরপর যখন সন্তান কিছুটা বড় হবে এবং বুঝতে শিখবে, তখন মা-বাবা ধীরে ধীরে তাদেরকে খারাপ কাজের জন্য জাহান্নামের শাস্তির কথা বলতে শুরু করবেন। যেসব সূরাগুলো বড় বড় গুনাহের জন্য শাস্তির আগাম সতর্ক বার্তা দেয়- সেসব সূরাগুলো এসময় শুরু করা উচিত, যাতে তারা এসব থেকে ভয়ে সন্ত্রস্ত না হয়ে বরং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।এটা তাদের শৈশবের শেষ পর্যায় কিংবা টিনেজ (১৩-১৯) বয়সের দিকে হতে পারে যখন তারা কিছুটা বড় হয়েছে এবং কিছুটা জটিল বিষয়গুলো ও কর্মের ফলাফল বুঝতে সক্ষম।

কুরআনের শিক্ষা দেবার সময় আমদের সচেতন থাকতে হবে যে আমরা শিশুর দর্শন ও মানসিকতাকে কিভাবে তৈরী করছি। এটা আবশ্যক যে, শিশুদের বেড়ে উঠার সাথে সাথে বাবা- মাকে সচেতনতার সাথে তাদের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সুরা বা আয়াত নির্ধারণ করতে হবে।রাসূলুল্লাহ সাঃ এর বেশির ভাগ সাহাবী তাদের প্রপ্তবয়সে (শিশু বয়সে নয়) কুরআনের সাথে পরিচিত হন।