banner

মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫ ইং, ,

Monthly Archives: March 2025

 

জীবন


কাব্যানুবাদ: আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব


কারো ভাঙা বুকে যদি দিতে পারি গাঢ় মমতার ছোঁয়া
সার্থক হবে জীবন আমার, বৃথাই যাবে না খোয়া।
বিপন্ন কোন জীবনকে যদি স্বপ্ন দেখাতে পারি,
ব্যথাতুর মনে যদি হতে পারি প্রশান্তি-সঞ্চারী;
মূর্ছিত যেই দোয়েলটা চায় ফিরতে আপন নীড়ে
আমার হাতেই সে যদি আবার সুখনীড় পায় ফিরে-
সার্থক হবে বেঁচে থাকা এই অর্থহীনের ভীড়ে।

 

ফিলিপাইনকে গোল বন্যায় ভাসাল মেয়েরা


নারী সংবাদ


প্রতি বছর একাধিক ভয়াবহ ঝড়ের জন্য নামকরা হাজার দ্বীপের দেশ ফিলিপাইন। বুধবার এই ফিলিপিনোরা দেখলো বাংলাদেশ ঝড়। লাল সবুজ জার্সীধারী বাংলার মেয়েদের তাণ্ডেবে স্রেফ খড়কুটোর মতো উড়ে গেছে আসিয়ান অঞ্চলের দেশটি। এই বাংলা টর্নেডোর নেতৃত্বে তহুরা খাতুন। ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের এই ফরোয়ার্ডের ৪ গোল ছোটন বাহিনীকে বিশাল জয়ে সাহায্য করেছে।

১০-০ গোলের জয়ে বাংলাদেশের দারুন শুরুও হলো এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে। যা তাদের ফাইনাল রাউন্ডের পথে খানিকটা এগিয়ে নিলো। শুক্রবার মারিয়া মান্ডাদের দ্বিতীয় ম্যাচ স্বাগতিক মায়ানমারের বিপক্ষে।

মিয়ানমারের রাজধানী ইয়াংগুন থেকে ৪০০ মাইল উত্তরে ৯ ঘন্টা বাস ভ্রমণের পথ মান্ডালা শহরের। এই মান্ডলার থিরি স্টেডিয়ামে বুধবার প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ দল তাদের জয় নিশ্চিত করে। এই পঁয়তাল্লিশ মিনিটেই হাফ ডজন গোল। বিরতির পর দুই ফরোয়ার্ড তহুরা এবং ছোট শামসুন্নাহারকে তুলে নেন কোচ গোলাম রাব্বানী ছোটন। এরপরও থামেনি বাংলার বাঘিনীদের সাঁড়াশি আক্রমণ। যার ফলশ্রুতিতে বিরতির পর আরো চার বার ফিলিপাইনের জালে বল যাওয়া।

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলের বাছাই পর্বে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে চার খেলায় ২৭ গোল করলেও ওপেন চান্স মিস করেছিল অগনিত। বুধবার বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় ( স্থানীয় সময় তিনটা) শুরু হওয়া ম্যাচে লাল-সবুজ মেয়েরা তেমন সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেনি। বরং কিছু হাফ চান্স থেকেও গোল আদায়। ছোটন বাহিনী আরো কয়েকটি গোল পায়নি বিপক্ষ গোলরক্ষকের দৃঢ়তায়।

বয়স ভিত্তিক মহিলা ফুটবলে এতো দিনের অচেনা প্রতিপক্ষকে (সিনিয়র লেভেলে ২০১৪ সালে দেখা এবং ০-৪- এ বাংলাদেশের হার) নিয়ে যে আতঙ্ক ছিল তা এদিন ২ মিনিটইে উধাও হয়ে যায় বড় শামসুন্নাহার – তহুরা কম্বিনেশনে। এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাম দিক থেকে শামসুন্নাহারের ক্রসে ফাঁকা পোস্টে বল জালে পাঠান তহুরা খাতুন। ১৬ মিনিটে তহুরা ব্যবধান দ্বিগুণ করেন অধিানায়ক মারিয়া মান্ডার থ্রু পাস থেকে বল পেয়ে। ১৮ মিনিটে মারিয়ার কর্নারে ছোট শামসুন্নাহারের হেড বিপক্ষ গোলরক্ষক মারগ্রিধির হাতে লেগে জালে জড়ায়। ২৪ মিনিটে তহুরার হ্যাটট্রিক পূর্ন ছোট শামসুন্নাহারের ক্রসে হেড করে।

৩৬ মিনিটে এই ফরোয়ার্ড তার চতুর্থ গোল পান শামসুন্নাহারের ডান দিক থেকে করা ক্রসে। দুই গোলের উৎস বড় শামসুন্নাহার ৪২ মিনিটে নিজে প্রথম বারের মতো ফিলিপিনো কিপাকে পরাস্ত করেন পেনাল্টি থেকে। বক্সে হ্যান্ডবল হলে স্পট কিকের নির্দেশ হিজাব পরা ইরানী রেফারির।

বিরতির পর দুই নতুন ফরোয়ার্ড রিতুপর্না এবং রোজিনা মাঠে নামেন। তখন জ্বলে উঠে তহুরার মাঠ ত্যাগের অভাব বুঝতে দেননি স্ট্রাইকার আনুচিং মগিনি। অবশ্য ৪৮ এবং ৮৬ মিনিটে তার করা দুটি গোলেই অবদান প্রতিপক্ষ কিপারের। দুই বারই তিনি ভুল শটে বল জমা দেন আনু চিং য়ের পায়ে। তা থেকে গোল রাঙ্গামাটির ফুটবলারটি। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ শুরু করেছিল আত্মঘাতী গোলে। ৪৭ মিনিটে নীলার শট ফিলিপিনো ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে দিক বদল করে গোল লাইন অতিক্রম করে। অধিনায়ক মারিয়া ৬৪ মিনিটে দলের স্কোর লাইন ৯-০তে উন্নীত করেন। তা বক্সের বাইরে থেকে তার ট্রেড মার্ক দূরপাল্লার শটে।

দুর্বল ফিলিপাইনের বিপক্ষে বাংলাদেশ সহজ জয় পেলেও ডিফেন্সে ফাটল ধরা পড়ে। এটা সংশোধন করতে না পারলে পরের দুই ম্যাচে মিয়ানমার এবং ৩ মার্চ চীনের বিপক্ষে সমস্যা হতে পারে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৬


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়া সিদ্ধান্ত নেয় এবার সাহস করে মাসরুরের সাথে কথা বলতেই হবে, আর এভাবে চলতে পারেনা। তবে বান্ধবী পরামর্শ দিয়েছে সুস্থিরভাবে কথা বলতে হবে, কারণ ঝগড়ার মুডে চলে গেলে দু’জনই কথা বলতে থাকে, কিন্তু কেউ কারো কথা শোনেনা। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাঁচ মিনিট ভেবে নেয় সামিয়া কিভাবে কথা শুরু করা যায়, তারপর দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। মাসরুর মাথা তুলেও তাকায়না। ঢোঁক গিলে সামিয়া। তারপর গলাটাকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলে, ‘আপনার পড়া শেষ হলে একবার ভেতরে আসবেন প্লিজ। কথা আছে’।

মাসরুর অবাক হয়ে তাকায়, ‘কি কথা? এখনই বলতে পারো’।

সামিয়া মাথা দুলিয়ে বলে, ‘নাহ। আপনি শেষ করেই আসুন’।

মাসরুরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় সামিয়া। পাঁচ মিনিট পর দেখে মাসরুর এসে উপস্থিত। অভাবনীয় এই ঘটনায় বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে বেচারাকে।

দরজার দুই ইঞ্চি ভেতরে দাঁড়িয়ে মাসরুর জিজ্ঞেস করে, ‘কোন সমস্যা হয়েছে সামিয়া?’

সামিয়া মুচকি হেসে বলে, ‘আহা, এভাবে কি কথা বলা যায়? আসুন, এখানে এসে বসুন। নইলে যে চিৎকার করতে হবে!’

মাসরুর এসে বিছানার পায়ের কাছে বসে। সামিয়ার মাথায় দুষ্টুমী চাপে, বলে, ‘আরাম করে বসুন প্লিজ। ভয় পাবেন না, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব’।

এবার মাসরুরের গম্ভীর মুখেও হাসি ফোটে।

সামিয়া এবার সিরিয়াস হয়ে বলে, ‘আমি বুঝতে পারছি আমি কিছু একটা অন্যায় করেছি, কোনভাবে আপনার মনে কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু তাই বলে এভাবে দিনের পর দিন আপনি আমাকে চার্জ গঠন, তদন্ত বা সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়া শাস্তি দিয়ে যাবেন এটাও তো কোন কাজের কথা না। আপনি যদি আমাকে খোলাখুলিভাবে বলতেন আমার কোন জিনিসটি আপনাকে কষ্ট দিয়েছে তাহলে আমি অন্তত নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পেতাম। এটুকু অধিকার তো আমার থাকা উচিত, না’কি?’

মাসরুর অবাক হয়, ‘শাস্তি?!’

‘আমাদের বিয়ে হয়েছে আজ তিনমাস। আপনি আমার সাথে কাজের বাইরে ক’টা কথা বলেছেন? আমরা একসাথে কবে কোথায় বেড়াতে গিয়েছি? মারযান আজ জিজ্ঞেস করছিলো আমরা আলাদা থাকি কেন। আমি কোন উত্তর দিতে পারিনি, কারণ আমি নিজেই জানিনা …’

মাসরুর মনের ভেতর কথাগুলো গুছিয়ে নেয়, তারপর ধীরে ধীরে বলে, ‘সামিয়া, বিশ্বাস কর, বিয়ের রাতেই প্রথম আমি বুঝতে পারি আমার কারণে তোমার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। কিন্তু তখন আমার আর কিছুই করার ছিলোনা, তোমার অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া। একদিন আগেও যদি তুমি আমাকে জানাতে তাহলে আমি নিজে তোমাকে আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতাম। কিন্তু তখন আর আমার পরিবারকে এসব কথা জানানো সম্ভব ছিলোনা। তাই আমি চেষ্টা করেছি এখানে সবার সাথে যেন তুমি মিলেমিশে থাকতে পারো, এতে হয়ত তোমার এখানে মানিয়ে নেয়াটা সহজ হবে। ওদের আমি তোমার কষ্ট বোঝাতে পারতাম না, কিন্তু অন্তত চেষ্টা করেছি আমার নিজেকে তোমার ওপর বোঝা হিসেবে চাপিয়ে না দিতে …’।

রাগে মুখ লাল হয়ে যায় সামিয়ার, ‘আপনি কি ভেবেছেন, ভেবেছেন কি আপনি? আবদুল্লাহ ভাইয়ের সাথে আমার প্রেম ছিলো? আমি আপনাকে আমার মনের কথা খুলে বললাম যেন আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় হয়, আপনাকে আমার গোপন ইচ্ছার কথা জানালাম যা আমি কোনদিন আমার বাবামার সাথেও শেয়ার করিনি। আপনাকে উদাহরণ হিসেবে একজন চালচুলোহীনের কথা বললাম, যে এমন কেউ হলে হয়ত আমি তাঁর অভাব পূরণ করতে পারতাম, আর ওমনি আপনি ধরে নিলেন …’

বেশি রেগে গেলে সামিয়ার মুখে কথা জোগায়না, মাসরুরের মনোযোগী ভঙ্গিতে কথা শোনা ওকে আরো ক্ষেপিয়ে তোলে, নিজের অক্ষমতায় চোখের কোণে জল জমতে থাকে ওর, কিন্তু সে দাঁতে দাঁত চেপে সামলাতে থাকে, এই মূহূর্তে কিছুতেই দুর্বলতা প্রকাশ করা চলবেনা।

মাসরুর সব শুনে বলে, ‘সরি, এখন বুঝতে পারলাম আমি তোমার কথার ভুল ব্যাখ্যা করেছিলাম। কিন্তু তুমিও তো আমার অর্থনৈতিক অবস্থানের কারণে আমাকে ভুল বুঝেছ! তুমি আমাকে একজন মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন না করে টাকায় মেপেছ, যেন যার টাকা আছে তার আর কিছুর অভাব থাকতে পারেনা! সামিয়া, আবদুল্লাহ ভাইয়ের অনেক কিছুর অভাব ছিলো যা স্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। কিন্তু তুমি কি একবারও ভাবোনি প্রাচুর্যের মাঝেও আমার কিছু অভাব থাকতে পারে, একজন ভালো বন্ধুর প্রয়োজন থাকতে পারে যার কাছে আমি আমার মনটাকে মেলে ধরতে পারি যেন সেখানে তুমি তোমার মমতার পরশ বুলিয়ে কষ্টগুলো মুছে দিতে পারো?’

সামিয়া মুখ নামিয়ে নীচুস্বরে বলে, ‘আমি আমার ভুলটা পরদিনই বুঝতে পেরেছি, আপনাকে না বুঝে কষ্ট দেয়ার জন্য প্রতিটা দিন অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছি, কিন্তু আপনার গড়ে তোলা প্রাচীর পেরিয়ে আপনার কাছে স্বীকার করতে পারিনি’।

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ -২’


মেহেদী আরিফ


ক্লাসে চুপচাপ অবস্থায় থাকে সবুজ। খুব দরকার ছাড়া কোন কথা বলে না সে। ক্লাসের সবাই ওকে খুব করে পঁচাতো। কিন্তু ও কাউকে কিছুই বলতো না, শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকতো। আমি ওকে পাশে বসাতাম, কিন্তু স্যাররা এসে ওকে শেষ বেঞ্চে বসিয়ে দিতো। আমারও ভীষণ খারাপ লাগতো কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না। ওকে শেষ বেঞ্চেই বসতে হবে এমন একটা রীতি হয়ে গিয়েছিলো। আমি ওকে হেল্প করার চেষ্টা করতাম খুব। ছেলেটার মেধা আছে বেশ, পড়লে ও পারবে। কিন্তু মিতুল ওকে দেখলেই মুখ বাঁকা করে একটা কটাক্ষের হাসি হাসতো, ওর গায়ের পরে গিয়ে পড়তো যেন আর বলতো, “আমার বাপ স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি, আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। পারলি তুই কিছু করিস! আর শোন! যদি আমার কিছু করিস তাইলে সান্ডে মান্ডে ক্লোস করি দোবো”। আমার একদম সহ্য হত না মিতুলের কাজকর্ম। কিন্তু সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে বলে কথা!
সবুজ সবকিছুকে মুখ বুজে সহ্য করে পড়াশুনা করতে লাগলো। আমি আর সবুজ টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের দোতলা ছাদের পর উঠে সিংগারা খেতে খেতে গল্প করতাম। সবুজ খুব সুন্দর সুন্দর গল্প করতো। ওর নানার বাড়ির গল্প শুনে আমি হতবাক হয়ে যেতাম। সবুজের মা খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে, ভাগ্য দোষে এক টাউটের সংসার করছে জেনে আমার ও খুব খারাপ লাগলো। ওর বাবা একজন মাদকসেবী। জমিজমা বিক্রি করে মদের আড্ডায় পড়ে থাকে। অনেক জমি বেচে এখন তারা নিঃস্ব প্রায়। প্রায়ই তাই ওর মাকে মারধর করে, বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে। জামাইয়ের এই অাচরণের কারণে সবুজের মামাবাড়ি থেকে কেউ আসতো না তাদেরকে দেখতে। ওর মা খুব কষ্ট সহ্য করে স্বামীর সংসার করে। সবুজের মনের আকাশের কালো মেঘ সরে না যেন।
ডিসেম্বর মাস। স্কুলের বিজয় দিবসের জন্য ও প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রাকটিস সেশনে সবুজ মিতুলের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হল। পরে হেড স্যার এসে অন্যায়ভাবে সবুজকে মারলেন। এক বারের জন্যও উনি জানতেই চাইলেন না যে আসল ঘটনা কি! বেধড়ক পিটাতে লাগলেন আর বললেন,” ব্যাকবেঞ্চার কোথাকার! ভালো ছেলেদের গায়ে হাত দিতে পয়সা লাগে না, না?” মিতুলকে হেডস্যার কিছুই বললেন না দেখে স্যারের প্রতি আমার সম্মান ও ভক্তি কমে গেলো, খুব ব্যথিত হলাম। আমি সবুজকে একপাশে নিয়ে ওর কান্না থামানোর চেষ্টা করছি। সবুজের কান্না দেখে আমারও খুব কান্না পেলো। শিক্ষকদের থেকে এমন একপক্ষ সমর্থন করার সংস্কৃতি আমার ভিতরটাকে দারুণভাবে আন্দোলিত করলো। হেডস্যার এর আগেও সবুজকে কত অন্যায়ভাবে মেরেছেন। তাঁর দেখাদেখি অন্যান্য স্যাররাও সবুজকে কত বার ভৎসনা করেছেন। এগুলি আমার কাছে শিক্ষকসুলভ আচরণ বলে মনে হত না। শিক্ষকতা পেশাকে খুব ঘৃণা করতে লাগলাম।
বিনা বেঘে বজ্রপাতের মত এক ঘটনা ঘটে গেলো। সবুজের মা আত্মহত্যা করেছে। আমার ক্লাসমেট কবিরের মায়ের থেকে সংবাদ শুনে সবুজদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম আমি আর অপু। ভীতুর ডিম অপুর হাতে লাইট। রাত তখন সাড়ে নয়টা বাজে। আমি আর অপু বাঁশবাগানের ভিতর দিয়ে দৌঁড়াইতে দৌঁড়াইতে চলে আসলাম সবুজদের বাড়িতে। কান্না আর প্রিয়জনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস মুখরিত যেন। সবুজ নির্বাক! পৃথিবীর কোনো এক অজানা শক্তি তাকে স্থিমিত করে দিয়েছে। কোনো সুমধুর ডাক সবুজকে ওর নির্জীব অবস্থা থেকে সজীব করবে না। আমি আর অপু ওকে জড়িয়ে ধরলাম। সবুজ কান্নার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আহ! কোন শক্তি বলে আমরা সবুজকে হাসিতে ভরিয়ে রাখবো। এ ব্যথার কি কোন ওষুধ আছে! সবুজের বাবাকে দেখে ভীষণ মেজাজ গরম হলো। সিগারেটে টান দিতে দিতে আত্মীয় স্বজনদের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলে চলেছেন যেন। যেন বাসায় বিয়ের রমরমা আয়োজন চলছে।

সবুজের মায়ের মৃত্যুর তেরো দিন পর ওর নানা এসে ওকে নিয়ে গেলো। ও যাওয়ার সময় একটা চমৎকার কম্পাস দিয়ে গেল আর বলে গেল, “আমাকে মনে পড়লে কম্পাসটির দিকে তাকাবি, দেখবি তুই আর আমি কত কাছাকাছি।” এতটুকু ছেলের এই বয়সে এমন অনুভূতি সেদিন যেমন বিস্মিত করেছিল আজ করে তার চেয়েও বেশি। ও নানাবাড়িতে যাওয়ার পর অনেক দিন ওর কোন খোঁজ খবর পেলাম না। হঠাৎ একদিন একটা চমৎকার চিঠি পেলাম। তার চিঠিটা এমন:
প্রিয় ভদ্র ছেলে,
অাশাকরি, ভালো আছিস। তোর পড়াশুনা কেমন চলছে রে? তুই না অসাধারণ শিক্ষক হবি! তবে শিক্ষক হলে হেড স্যারের মত হবি না। আচ্ছা! মিতুল কেমন আছে রে? হেড স্যার, মিতুল, ওদেরকে ভীষণ মিস করি রে। জানিস, এখানে আমার কেউ মারে না, কেউ বকে না, মিতুলের মত কেউ গায়ে ধাক্কা মারে না। ঐ দিন গুলো খুব মিস করি, জানিস? এখানে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। কেউ তোর মত করে পাশে বসতে বলে না, কেউ শোনে না সকালে ভাত খেয়েছি কি না, কেউ ভুলেও জিজ্ঞাসা করে না আমার মা কেমন আছে! তোদের অনেক মিস করি। তোকে আমি কখনও ভুলতে পারবো না। তুই আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা বন্ধু।
ভালো থাকিস বন্ধু। অনেক ভালো। আচ্ছা আমার কম্পাসটা ঠিকঠাক মত আছে কি?
ইতি———
ব্যাকবেঞ্চার সবুজ।
চিঠিটি পড়ার পর সেদিন অনেকক্ষণ কেঁদেছিলাম আর ভেবেছিলাম সবুজ কত পরিণত হয়েছে আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনায়।
এক যুগ কেটে গেছে সবুজের সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই আমার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। নতুন পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব পেয়ে আমি সবুজকে ভুলেই গিয়েছিলাম। হঠাৎ একদিন বাক্সের মধ্যে রাখা কম্পাসটার দিকে নজর যেতেই বুক কেঁপে উঠল। সবুজকে ভীষণ মিস করতে লাগলাম। সবচেয়ে অবাক হলাম যে, জীবনের খেলাঘরে ইতোমধ্যে একটি যুগের বেশি পার হয়ে গেছে অথচ সবুজের কোনো খোঁজ খবর পেলাম না। পড়াশুনা শেষ করে আমি শিক্ষকতা করি রসুলপুর শহীদ স্মৃতি কলেজে। নিজেকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় কাটাই। আমাদের স্কুলের হেড স্যারের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে আমাকে দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়েছে। দিনটি ছিল রবিবার। আমি গিয়েছিলাম আমাদের প্রাইমারী স্কুলে হেডস্যার কাদের মিয়াকে বিদায় জানাতে। বিদায় অনুষ্ঠানে জেলার গণ্যমান্য অনেক ব্যক্তি হাজির হয়েছেন। একজন এএসপি অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। খুব স্মার্ট দেখাচ্ছিল তাকে। নেম প্লেটে লেখা আফতাব। আমি একটা বিষয় অবলোকন করলাম যে, হেড স্যার চেয়ারে না বসা পর্যন্ত এএসপি সাহেব চেয়ারে বসছেন না। হেডস্যার ওনাকে চেয়ারে বসতে বললেন কিন্তু উনি বসছেন না, বরং প্রধান অতিথির আসন ছেড়ে উনি বাইরে এসে দাঁড়িয়েছেন। হেড স্যার তখন বললেন,”আমি সামান্য প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, আপনি বড় পুলিশ অফিসার! প্লিজ, বসেন না, স্যার, প্লিজ”। এএসপি আফতাব বললেন,” আপনি না বসলে যে আপনার স্টুডেন্ট বসতে পারে না, স্যার”। “স্টুডেন্ট! তুমি কে বাবা?” হেডস্যার বললেন। আফতাব বললেন,” আমাকে চিনতে পারেন নি, স্যার? আমি ব্যাকবেঞ্চার সবুজ”!

(সমাপ্ত) ——– মেহেদী আরিফ।

 

শিশুর চোখের সমস্যার ব্যাপারে সচেতনতা প্রয়োজন


স্বাস্থ্যকথা


আরাফকে (১১) নিয়ে তার বাবা-মা ঢাকার ফার্মগেটে অবস্থিত ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে এসেছেন চোখ পরীক্ষা করাতে। জন্মের পর এটাই আরাফের প্রথম চোখ পরীক্ষা। কারণ, ক’দিন থেকে তার মা দেখছিলেন আরাফ খানিকটা বাঁকাভাবে টেলিভিশন দেখে। এতেই তারা তাকে চোখের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে আরাফের চোখ পরীক্ষা করার পর তার পাওয়ার (চোখের শক্তি) পরীক্ষা করার জন্য একজন টেকনিশিয়ানকে নির্দেশ দেন। টেকনিশিয়ান বলেন, আরাফের চোখের পাওয়ার অনেক বেশি এবং তার একটি চোখ অলস (লেজি) হয়ে গেছে।
বিষয়টি কী জানার জন্য চিকিৎসকে বললে তিনি আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, আরাফের ডান দিকের চোখটি অলস হয়ে গেছে এবং বাম চোখ ভালো আছে। তার ডান চোখে চশমার পাওয়ার মাইনাস চার এবং বাম চোখের পাওয়ার মাইনাস দুই। চিকিৎসক জানান, আরাফ অনেক আগে থেকেই দূরের জিনিস কম দেখত। বিষয়টি সে হয়ত বুঝতে পারেনি। অনেক ক্ষেত্রে শিশুরা এ ধরনের সমস্যা বুঝতে পারে না।
এই লেজি আই বা অলস চোখ আসলে কী? জানতে চাইলে ঐ হাসপাতালের চক্ষু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট ডা. সাজ্জাদ জানান, এটা সাধারণত কম বয়সী শিশুদের হয়ে থাকে। এটা মূলত চোখের সমস্যা নয়, এটা ব্রেনের সাথে চোখের নার্ভের যে সম্পর্ক সেখানে কিছু সমস্যা হয়ে থাকে। বইয়ের ভাষায় এটাকে অ্যামব্ল্যায়োপিয়া বলা হয়। জন্মের পর প্রত্যেক শিশুর দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে না। শিশু দেখতে দেখতে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। শিশুর রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলোর ওপর আলো পড়লে আলোর উপস্থিতিতে সেগুলো পরিপূর্ণতা লাভ করতে থাকে। সাধারণত ছয় থেকে নয় বছরের মধ্যে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে অর্থাৎ চোখ স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি প্রাপ্ত হয়। কিন্ত কোনো কারণে চোখের রেটিনায় যদি আলো না পড়ে কিংবা জন্মগত ছানি হলে অথবা লেন্স ঘোলা হলে রেটিনায় আলো পড়ে না। আবার জন্মগত ভাবে চোখের পাতা নিচের দিকে পড়ে গেলে চোখের যে স্বচ্ছ অংশ কর্ণিয়া দিয়ে আলো প্রবেশ করে, তা যদি ঢেকে যায় তাহলে পর্যাপ্ত আলো চোখে প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে কোনো একটি চোখ ব্যবহার না হলে বা জন্মগত ট্যারা হলে ঐ চোখের দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এক সময় দৃষ্টিশক্তি পুরোপুরি হারিয়ে গিয়ে সে অন্ধ হয়ে যায়। এটাই হলো অলস চোখ বা অ্যামব্ল্যায়োপিয়া।
শিশুদের চোখে নানা ধরণের সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে পাওয়ারের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তবে অলস চোখের বিষয়টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সময়মতো চিকিৎসা না করালে সারাজীবন তাকে ভুগতে হয়। এমনকি সে এক সময় অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২০১৯ সালে প্রকাশিত বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ‘পৃথিবীতে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন শিশু অন্ধত্বে ভুগছে। এরমধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ শিশু এশিয়া ও আফ্রিকার গরীব দেশগুলোতে বাস করে। বাংলাদেশে শিশু অন্ধত্বের বিষয়টি তেমনভাবে পরিচিত নয়। এখানে প্রায় ৪০ হাজার শিশু অন্ধত্বের শিকার।’
ডা. সাজ্জাদ আরো বলেন, ‘চোখ অলস হলে, নয় বছরের মধ্যে চিকিৎসা করানো হলে, সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তÍু অবহেলা বা অজ্ঞতার কারণে যদি এ সময় পার হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসা করেও ভালো ফল পাওয়া সম্ভব নয়। যেসব কারণে চোখ অলস হয়ে যায় তার সঠিক চিকিৎসা করালে পুরোপুরি ভালো হয়। জন্মগতভাবে যদি শিশুর চোখে ছানি থাকে, তাহলে দ্রুত ছানির অপারেশন করাতে হবে। বয়স নয় বছর পেরিয়ে গেলে অপারেশন করেও তেমন ফল পাওয়া যায় না। এ রোগের চিকিৎসা হিসেবে শিশুকে চশমা ব্যবহার এবং প্যাচ থেরাপি দুটোই দিতে হয়।’
ডা. সাজ্জাদ বলেন, ‘প্যাচ থেরাপি কঠিন কিছু নয়। ভালো চোখটি কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে বা বন্ধ করে রাখা হয়। আর অলস চোখটি দিয়ে শিশুকে কাজ করাতে হয়। এসময় শিশু অলস চোখ দিয়ে হোমওয়ার্ক, ছবি আঁকা, গেম খেলা বা টেলিভিশন দেখার কাজ করবে। মনে রাখতে হবে এসময় যা কিছু করা হোক না কেন তা গভীর মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। এভাবে কাজ করালে চোখের রেটিনার আলোক সংবেদনশীল কোষগুলো আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ ধরণের চোখের ব্যায়াম বা অ্যাকুলেশন থেরাপি করে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। এ রোগে অনেক সময় শিশুর চোখ ট্যারা হয়ে যায়। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে ট্যারা চোখের চিকিৎসা করানো যায়।’
চিকিৎসকরা বলেছেন, শিশু যদি চোখে ঝাঁপসা দেখে, তার চোখের কালো মনি ধূসর বা সাদা হয়, দূরের বা কাছের জিনিস ভালো না দেখে, টেলিভিশন খুব কাছ থেকে দেখে কিংবা স্কুলে ব্ল্যাকবোর্ডের লেখা বুঝতে না পারে তাহলে দেরি না চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।
আরাফের মা বলেন, যে কোনো সমস্যা হলেই আরাফ তাকে জানাতো। কিন্তু চোখের সমস্যার বিষয়ে কখনো কিছু বলেনি এবং চোখে কম দেখার বিষয়ে নেতিবাচক কিছু তাদের চোখেও পড়েনি। হঠাৎ করেই এ ধরণের সমস্যা হওয়ায় তারা অনেক ঘাবড়ে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন এবং দিন দিন ছেলের চোখের অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এখন বুঝতে পারছি চিকিৎসকরা কেন পাঁচ বছরের মধ্যে শিশুকে চোখের ডাক্তার দেখার কথা বলেন এবং কোনো সমস্যা না থাকলেও প্রত্যেক বছর একবার করে চোখের ডাক্তার দেখা কেন জরুরি। এতে শিশু একেবারে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে অনেক সময় পাওয়া যায়। সময়মতো চিকিৎসা এবং যত্ন নিলে শিশু অন্ধতে¦র হাত থেকে শিশু বাঁচতে পারে। এজন্য সচেতনতা প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলেছেন, পাঁচ বছর বয়সে বা স্কুলে দেয়ার আগে শিশুর চোখ পরীক্ষা করে নেয়া উচিৎ এবং নিয়ম করে প্রতি বছর একবার করে শিশুকে চোখের ডাক্তারের কাছে চোখ পরীক্ষা করে নিতে হবে।

সুত্র: বাসস।

 

‘ব্যাকবেঞ্চার সবুজ -১’


মেহেদী আরিফ


আমি আর সবুজ, আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। সবুজ খুব দুরন্ত ছিল, তেমন পড়া পারতো না। ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে হিসেবে ওর সুনাম ছিল। মেধাবী ছিল সে, কিন্তু পড়া করে ক্লাসে আসতো না। ওকে দেখলেই ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিতো, কেউ পাশে বসতে নিত না। এতে ওর অবশ্য মন খারাপ হতো না, সয়েই গিয়েছিল একরকম। আমি ক্লাসে ফাস্ট বয় ছিলাম। বোধকরি সব শিক্ষকরা আমাকে অনেক বেশি আদর করতেন। কিন্তু সবুজের সাথে সখ্যতা তারা মেনে নিতে পারেন নি। আমাকে সবসময় হেড স্যার কাদের মিয়া সংকেত করে দিতেন যাতে আমি সবুজের সাথে না মিশি। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
আমার সাথে সবুজের সখ্যতা কিভাবে হয়েছিল তার একটা ছোট্ট ইতিহাস আছে। আমি তখন ফাইভে পড়ি। সাধারণত স্কুল ছুটির পর স্কুলের পাশের কালভার্টের পাশে দাঁড়িয়ে অন্যদের মাছ ধরা দেখতাম। কত মাছ! পুটি, টেংরা, শোল, বাইন, চিংড়ি, কৈ। আমরা তন্ময় হয়ে দেখতাম। হঠাৎ একদিন আমার স্কুল ব্যাগ কালভার্টের উপর থেকে পড়ে গেল পানিতে। আমি চিৎকার করে উঠলাম। তখন পুরো বর্ষার মৌসুম চলছে। পানি দুকূল ছাপিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যেন। যে খালে ব্যাগ পড়েছে ওখানে পানির স্রোত খুব বেশি। আমার ব্যাগ ভেসে যাচ্ছে, অথচ কেউ পানিতে নামার কোন ইচ্ছায় পোষণ করছে না। আমি সম্পূর্ণ নিরুপায়। দুচোখ বেয়ে আমার অশ্রুর ফোয়ারা নেমেছে। হঠাৎ দেখি একজন পানিতে লাফ দিয়েছে। এ কারণে শোরগোল পড়ে গেলো। এত পানিতে যে কেউ ডুবে যাবে, তাই আগে কেউ সাহস করে নামেনি। কিয়ৎক্ষণ পরে উপলব্ধি করলাম এতো আর কেউ নয়, ক্লাসের দুরন্ত ছেলে সবুজ। প্রায় আধা কিলোমিটার দূর থেকে সাঁতরিয়ে আমার ব্যাগ উদ্ধার করেছিল সে। আমার ব্যাগের ভিতরের বইগুলি অনেক ভিজে গিয়েছিল বটে কিন্তু আমি সবকিছু পেয়েছিলাম। এরপর থেকে সবুজের সাথে আমার বন্ধুত্ব। মিতুল নামে আমার এক ক্লাসমেট ছিল যে একদিন আমার একটি কলম চুরি করেছিল। আমি খুব মন খারাপ করে বসে আছি। মিতুল যে কলম চুরি করেছিল তা আমি পরে জেনেছিলাম। সে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে হওয়াতে কোন বড় ধরনের অপরাধ করেও প্রায়ই মুক্তি পেত। আবার ক্লাসে তার রোল নম্বরও ছিল দুই। কিভাবে তার রোল দুই হতো বারেবারে তার গাণিতিক হিসাব করার মত ক্ষমতা আমার ঐ ক্ষুদ্র বয়সে হয় নি। যাইহোক, কলম চুরির ঘটনা সবুজ জেনেছিলো। মিতুলের কাছে সবুজ ঐ কলম দেখার পর ওকে বলেছিল, ” কিরে, লালমিয়া! কলম পাইলি কই?” মিতুলকে সবুজ লাল মিয়া বলে ডাকতো হরহামেশাই। এর জন্য স্যারদের কাছে কত বকাই না খেয়েছে সে। মিতুল ঢং করে বলল, “আমার কি কওয়া লাগবে নাই তোর?” এই কথা শোনামাত্র মিতুলের কানের নিচে সশব্দে দুইটি চড় বসিয়ে দিল সে। মিতুলের তীব্র কান্নার চিৎকারে হেডস্যার সহ অন্যান্য স্যারেরা দৌঁড়ায়ে আসলেন। কান্নার হেতু আবিষ্কারে তারা অপারেশন সার্চলাইট শুরু করলেন। অবশেষে যখন জানতে পারলেন যে, সবুজই নাটের গুরু তখন হেডস্যার জোড়া বেত দিয়ে তার পিঠে পাঁচটি কসিয়ে দিলেন। সবুজ কাঁতরাচ্ছে মার খেয়ে, অন্যদিকে মিতুল কান্না থামিয়ে পুতুলের মত বসে আছে।
স্কুল ছুটির পর সবাই বাড়িতে চলে গেল, গেল সবুজও। প্রায় এক সপ্তাহ তার কোন হদিস মিলল না। আমাদের বাড়ি আরেক পাড়ায় হওয়াতে তাদের বাড়িতে যাওয়া কষ্টকর হলো। ক্লাসের ফাস্ট বয় হওয়াতে আমাকে অনেক নিয়মনীতি মেনে চলতে হতো পরিবারে। সবার আশা ছিল আমি দেশের সবচেয়ে সেরা মানুষ হই। তাই সবুজদের মত বখাটে ছেলের সাথে আমি মিশি এটা পরিবার কখনও চাইতো না। তারপরও স্কুলের ক্লাস শেষ করে অপুকে নিয়ে চলে গেলাম সবুজদের বাড়িতে। একটা বিশাল বাঁশ বাগানের পর দিঘি, তারপর সবুজদের বাড়ি। বাঁশ বাগানের মধ্য দিয়ে খস খস আওয়াজ করে হেঁটে চলেছি আমি আর অপু। সবুজদের বাসায় কখনও যাই নি আমি। অনেক সময় লাগলো ওর বাসায় পৌঁছাতে। বিছানায় সবুজ কাতরাচ্ছে! দূর থেকে কাতরানোর আওয়াজ অনুসরণ করে তার বাসায় পৌঁছালাম। আহ্ কত ব্যথা পেয়েছে বেচারা ছেলেটা! আমরা যাওয়ার সাথে সাথে ওর মা পিড়ি ঠেলে দিলেন। আমি ভয়ে ভয়ে বসলাম কিন্তু অপু ভীতুর ডিমটা বসলোই না। ও কাঁপছিলো যেন। হঠাৎ করে সবুজ চিৎকার করে অপুকে বলল, “বস্! ভীতুর ডিম, তা না হলি তোরে ভেজি খেয়ি ফ্যালবো।” এ কথা শুনে অপু পালিয়ে চলে যাওয়ার উপক্রম। অমনি আমি আমার ছোট হাত দিয়ে ওর ব্যাগ টেনে ধরলাম, কোনো মতে ওকে বসালাম পিড়িতে। সবুজ বকবক করেই চলেছে, আর ওর মা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আমি আন্টিকে স্বান্তনা দিয়ে বিদায় নিলাম। ঐ দিন বাড়ি ফেরার পর আমার উপর দিয়ে টর্নেডো বয়ে গেল যেন। ঠিক কি ঘটেছিল তা না জানলেও চলবে। তবে এতটুকু বলে রাখি, আমার নাক দিয়ে অনেক রক্ত পড়েছিল।
প্রতিদিন স্কুলে গিয়ে আমি আগে খুঁজতাম সবুজকে। দিন পনেরো পর ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে একটা ছেলেকে হাঁটতে হাঁটতে স্কুল অভিমুখে আসতে দেখলাম। সে আর কেউ নয়, সবুজ! অন্য দিনের মত তার মাঝে চঞ্চলতার কোনো চিহ্ন পেলাম না আজ। হেতু না খুঁজে পেয়ে বেশ অবাক হলাম। ক্লাসে সবার পিছনে বসলো সে। বাংলা ক্লাসে হেডস্যার প্রবেশ করেই সবুজের খোঁজ নেওয়া শুরু করলেন। তিনি বললেন,”সেই জানোয়ারটা কোথায়?” সবুজ কোনো উত্তর না করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে গেল। হেডস্যার কটাক্ষ করে বললেন,”বসে পড়ো শুদ্ধোধন!” সবুজ একবারও স্যারের দিকে তাকালো না। ওর মনটা খুব খারাপ দেখে আমার মনটা খুব খারাপ হল। কারণ সবুজ যতই দুষ্টামি করুক অন্যদের সাথে, ও আমার খুব প্রিয় বন্ধু। ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার পথে সবুজকে আস্তে আস্তে বললাম,”সবুজ! তোর মন খারাপ?” সবুজ যা শোনালো তাতে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সবুজের মাকে ওর বাবা খুব মারধোর করে যা সবুজের মোটেও সহ্য হয় না। নিজের বাবা তো, তাই বাবার গায়ে হাত তোলে না ও। কিন্তু ওর হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়, মাথায় খুন চাপে কিন্তু মায়ের দিকে তাকিয়ে ও কিছুই করতে পারে না। সবুজ আমাকে বলল,” দোস্ত, তুই আমার হেল্প করবি? আমাকে তে কেউ ভালবাসে না! তুই আমার পড়ালিখায় হেল্প করবি? আমি বড় হয়ি একজন পুলিশ হবো, আমার আব্বার ধরি নে থানায় বন্দি করি রাখবো”। এ কথা বলে ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমি ওকে হেল্প করার আশ্বাস দিলাম।

চলবে……

 

“এই জীবন আর রাখব না”


ফাতিমা খান


Obsessive love বলে একটা কথা আছে যেখানে কারো প্রতি আকর্ষণ এবং possessiveness এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছায় যে ” তাকে ছাড়া বাঁচব না” বা “এই জীবন আর রাখব না” জাতীয় একটা মানসিক সমস্যার তৈরী হয়। অবশ্য কোন ব্যাপারে মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া অসুস্থতা অথবা অপরাধ বলে আমি মনে করি। এই প্রবনতা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষগুলো অহরহ ভুল করে। হয়ত নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নয়ত সংগীর বড় কোন ক্ষতি করে ফেলে।
আবেগেরও একটা সীমারেখা আছে যার অন্যপাশটা প্রাণঘাতী। আপনার সাথে কেউ অন্যায় বা প্রতারণা করেছে, হোক কাছের বা দূরের – তার সমাধান অবশ্যই আছে! আত্নাহুতি দেয়া মানে নিজে হেরে যাওয়া আর অন্যায়কে জিতিয়ে দেওয়া। অনেকেই বলছে “আত্নহত্যার জন্য ছাতিতে সাহস লাগে, সবাই পারেনা”….তো এই সাহস তবে বেঁচে থাকার জন্য কাজে লাগালে কি হত? সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে তারচেয়েও বেশি সাহস লাগে!
দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরার জন্য সবসময়ই একটা তৃতীয় পক্ষ কাজ করে যার অন্যায় অবদারগুলোকে আপনি প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলেই আপনি দিনকে দিন বৈধ সম্পর্কের কাছে তথা জীবনের কাছে হেরে যাচ্ছেন। এই তৃতীয় পক্ষ কোন এক্সট্রা ম্যারিটাল এ্যাফেয়ার /পার্টনারই হতে হবে এমনটা জরুরী না। আপনার নিজের কুচরিত্র, অন্য কোন চাপিয়ে দেয়া দায়িত্ব অথবা আপনার উপর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব খাটানো তৃতীয় কোন ব্যাক্তিও হতে পারে যার বা যাদের অন্যায় আবদার আর চাহিদাগুলো টিউমারের মত আপনাকে আঁকড়ে ধরেছে, যার ফলে আপনার দাম্পত্য সম্পর্কটা দিনকে দিন প্রাণহীন হয়ে পড়ছে।
প্রত্যেকটি সম্পর্কের শুরু হয় দুইপাতার চারাগাছটার মত। নাজুক সম্পর্কটাকে নিত্যদিন প্র‍য়োজনীয় সব খোরাকের যোগান দিয়ে একটু একটু করে বাড়তে দিতে হয়। দূর্বল দিকগুলোতে মনোযোগ দিতে হয় অনেক বেশি। প্রয়োজনে একে অপরের সাথে কাউন্সিলিং করে নিলে সম্পর্কের ভিত মজবুত হয়। যে সম্পর্কের শুরু হয় অবিশ্বাস বা ভুল বুঝাবুঝি দিয়ে, বলাবাহুল্য সে সম্পর্ক অস্থায়ী।
এখন কথা হল, দাম্পত্য জীবনে হাজার রকম সমস্যা হতেই পারে। কিন্তু এই সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা বা সমাধানের চেষ্টা করাটা আমাদের সুশীল সমাজের জনগণ মানহানীকর বলে মনে করেন। “মানুষ কি বলবে”, ” ছিঃ আমার বংশে কেউ কোনদিন বউ/ স্বামী তালাক দেয়নি”, ” চুপ, মেয়ে মানুষের এত কথা বলতে নেই, মানিয়ে নিতে হয়”, ” তুই না পুরুষ মানুষ, বউ সামলে রাখতে পারিস না!”…..কথাগুলো শোনার ভয়ে অনেকেই নীরবতার আশ্রয় নেন। নীরবে প্রতি মুহুর্তে যন্ত্রণা সহ্য করতে গিয়ে মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। লোক সমাজে লাঞ্চিত হওয়ার চেয়ে পরকীয়া বা অন্য নেশায় ডুবে যান, নয়ত আত্নাহুতি দেন।
ডাঃ আকাশ আর ডাঃ মিতুর কেইসটা যদি আদ্যোপান্ত ভেবে দেখা হয় তাহলে বলব ( মিতু অবশ্যই অপরাধী) ডাঃ আকাশ কোন মহানায়ক ছিলনা ( মিডিয়া আকাশেকে সত্যি সত্যি আকাশে তুলেছ)। প্রেমকে অমর করতে গিয়ে নিজেকেই শেষতক বলি দিল… এরকম যারা ভাবছেন তারা অবশ্যই ভুল করছেন।
প্রথমত, একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পুরুষ জেনেবুঝে কোন চরিত্রহীনাকে বিয়ে করার কথা না। ( আকাশের ভাষ্যমতে বিয়ের আগেই সে জেনেছিল তার হবুস্ত্রী ও প্রেমিকা একজন ব্যাভিচারিনী) ।
দ্বিতীয়ত, বিয়ে যখন করেই ফেলেছে, সম্পর্কটাকে বলিষ্ঠ করার জন্য তার নিজের সর্বাত্নক চেষ্টা করা উচিৎ ছিল। ( এমনি এমনি বলা হয়নাই ” দায়ুস জান্নাতে প্রবেশ করবেনা”)। যদি তারপরও স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হয়, তবে সসম্মানে বিদায় করে দেয়াটাই সমিচীন হত ( ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী) ।
ডাঃ আকাশের ভাই এর বয়ানানুযায়ী মিতুকে তার স্বামী প্রায়ই মারধর করত। যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে ( মিতুর স্বীকারোক্তি) সেখানেও এটা স্পষ্ট যে তাকে বেদম মারধর করে জবাব নেয়া হচ্ছে। (ভিডিওটির অংশবিশেষ ভাইরাল হয়েছে, পুরাটা নয়। এর কারণ আমার অজানা).
একজন মানুষ সমাজে সবার চোখে অত্যন্ত সহজ, সরল, মেধাবী ও দায়িত্বশীল বলে পরিচিত হলেও দরজার আড়ালে প্রায়ই তার ঠিক বিপরীত একটা চেহারা দেখতে পাওয়া যায় যা তার খুব নিকটজন ছাড়া আর কেউ জানতে পারেনা। শুধুমাত্র আবেগের বশীভুত হয়ে সমাজ আর মানসম্মানের ভয়ে মানসিকভাবে সুস্থ একজন মানুষ কোনভাবেই আত্নহত্যা করতে পারেনা। আত্নহত্যা মহাপাপ, অনেকগুলো বছর একটু একটু অপরাধের ধারাবাহিকতায় আজ এই মহা অপরাধটা করে বসেছে ডাঃ আকাশ । আল্লাহ তাকে মাফ করুন- এইটুকুই এখন বলতে পারি।
মিতুর শাস্তি হোক, তবে যেটুকু তার পাওনা সেটুকু। মিডিয়া তাকে আবর্জনার মত রাস্তায় ছুড়ে দিয়েছে, একদল নষ্ট মানুষ আবার ভার্চুয়াল জগতে তাকে অগণিত বার বলাতকার করছে শুধুমাত্র কমেন্ট দিয়ে।
অন্যের জীবন নিয়ে আমাদের চরম উৎসাহ বরাবরই। প্রত্যেকটা ঘটনা আর তার কন্সেকুয়েন্স আমাদের জীবনের জন্য এক বিশাল শিক্ষা ( যারা শিক্ষা নিতে চায় তাদের জন্য আরকি!)। দেখে, শুনে, ঠেকে তারপরও যদি আমরা কিছু উপলব্ধি করি/ শিক্ষা নেই, তাহলে হয়ত কিছুটা হলেও আমাদের সম্পর্কগুলোর ও মন মানসিকতার সংস্কার হবে।

 

দ্বৈত


কানিজ ফাতেমা


নারীরা বসে নেই; এগিয়ে যাচ্ছে নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গনে। মুসলিম নারীরা সচেতন হয়ে উঠছে তাদের হক বা অধিকার সম্পর্কে যা আল্লাহ স্বয়ং তাদের দিয়েছেন। তারা বুঝতে শিখছে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসুল (স: ) প্রবর্তিত এ হক কেড়ে নেবার অধিকার কারও নেই; নারীরাও আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত, ঠিক যেমনি পুরুষেরা।

আমি ‘শিখেছে’, ‘উঠেছে’- এ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার না করে ‘শিখছে’, ‘উঠছে’ ক্রিয়াগুলো ব্যবহার করেছি। কারণ আমার মতে এখনো এ প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি কোনো একস্থানে আমরা অবস্থান করছি। পূর্ণতা অর্জন এখনও বেশ দূর। মুসলিম নারী জাগরণের, নারীর অবস্থান পরিবর্তনের এ জোয়ার মুসলিম পুরুষদের গায়েও লেগেছে। নারীদের প্রতি তাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গীর বেশ একটা পরিবর্তনও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা এ অবস্থাকে বলতে পারি একটা Transition Period। এ অবস্থানে অধিকাংশ পুরুষের মধ্যেই লক্ষ্য করা যায় একটি দ্বৈত চরিত্র। একদিকে নারী জাগরণের এ সময় তারা তাদের সঙ্গীনীকে কল্পনা করেন বিদুষী, শিক্ষিত, কর্মচঞ্চল, ও সচেতন এক নারী রূপে। অন্যদিকে তাদের মনের কোঠরে বাস করে তাদের শৈশবে দেখে আসা সেসব নারী চরিত্র যারা স্বামী সেবাকেই জীবনের একমাত্র কাজ ও লক্ষ্য মনে করতেন; স্বামী বা স্বামীপক্ষের সব অন্যায়, অত্যাচার, গঞ্জনা মুখবুজে সয়ে যেতেন, মুখে ‘রা’ টি করতেন না। তাদের মনে রয়ে গেছে সেই ‘বুক ফাটেতো মুখ ফোটেনা’ – গোছের নিরীহ বধূটি। অর্থাৎ তারা এর একাংশ আর ওর অপরাংশ মিলিয়ে অদ্ভুত এক কল্পিত নারী চরিত্র তৈরী করেন যা স্বভাবগতভাবেই পরস্পর বিপরীত। যে নারী সচেতন, যে নারী বহির্জগতের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সাহস রাখেন, সে নারী নিজ স্বামীর অবহেলা-অসম্মানকে চিহ্নিত করতে অসমর্থ হবেন, বা বুঝতে পেরেও সমাজের রক্তচক্ষুর ভয়ে গুটিশুটি মেরে যাবেন এমনটা আশা করা যুক্তিহীন।

অনেককে দেখেছি বিয়ে করার সময় বুদ্ধিমতী, চৌকষ, যোগ্য মেয়ে খোঁজেন। কিন্তু বিয়ের পরে সেই বুদ্ধিমতী মেয়েটি যখন তাকে কোনো ব্যাপারে পরামর্শ দেয় তখন অন্যদের সম্মুখে সেই পরামর্শকে মেনে নেয়াকে কাপুরুষতা মনে করেন। ভাবেন –

স্ত্রীর কথা শুনলে অন্যরা কি মনে করবে ?

সবাই বলবে আমি স্ত্রীর কোথায় উঠি-বসি।

ওরা বলবে আমি একটা স্ত্রৈণ।

অথচ এটা তো খুব স্বাভাবিক যে, যেকোনো শিক্ষিত বুদ্ধিমতী মেয়েই আশা করবে যে, তার স্বামী তার সঙ্গে পরামর্শ করবে, তার মতামতের গুরুত্ব দেবে। একদিকে বুদ্ধিমতী স্ত্রী চাওয়া অন্যদিকে স্ত্রীর মতামতকে (তা যতটা মানসম্মতই হোকনা কেন) মেনে নিলে মান যাবে এমনটা ভাবা পরস্পর বিরোধী মানসকতারই লক্ষণ।

আমার ধারণা এই Transition Period এ অনেক পুরুষই আসলে কি চাইছেন এ ব্যাপারে নিজেরাই যথেষ্ট স্বচ্ছ ধারণা রাখেন না বা একধরনের দোটানায় ভোগেন। একদিকে তারা আমাদের দেশের নারীদের অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাইছেন, তাদেরকে সচেতন নারী রূপে দেখতে চাইছেন, আবার একই সাথে বাস্তব জীবনে নিজের ঘরের নারীটিকে নিজ অধিকার সম্পর্কে নীরব, নিশ্চুপ, বোধহীন দেখতে ভালবাসছেন। এ দ্বৈততার ফল খুব একটা সুখকর হয়না।

নারী স্বভাবতই ধৈর্যশীল। তবে ধৈর্য্য- সহিষ্ণুতা আর উপর্যুপরী অন্যায়-অবহেলা- অসম্মান চুপচাপ মেনে নেয়া এক কথা নয়। নারীর যেমন স্বামীর সন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা জরুরী, তেমনি স্ত্রীর সন্তুষ্টির প্রতিও স্বামীর লক্ষ্য রাখা জরুরী। স্ত্রীর অধিকার সচেতনতাকে ‘বিদ্রোহ’ হিসাবে দেখার সুযোগ নেই। ‘স্ত্রীর আনুগত্য নয়’ নয় , বরং পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহানুভূতিই আমাদের পারিবারিক জীবনকে সফল করে তুলতে পারে।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৫


রেহনুমা বিনত আনিস


একদিন কলেজে গিয়ে সামিয়া জানতে পারে আজ ক্লাস হবেনা। বাসায় চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। এমন সময় একটা মেয়ের সাথে দেখা। সামিয়া আর্টসে পড়ে আর ঐ মেয়েটা সায়েন্সে। কিছু ক্লাস ওদের একসাথে হলেও অধিকাংশই ওদের দেখা হয় বারান্দায় বা মাঠে, কথা হয় কালেভদ্রে। আজ হাতে সময় আছে। দু’জনে গল্প করতে করতে হঠাৎ সামিয়া নিজের বিবাহপূর্ব স্বপ্ন থেকে বর্তমান অচলাবস্থা পর্যন্ত সবকিছু উগড়ে দেয় অকপটে। সে নিজেই অবাক হয়, যে কথা সে তার বাবামা ভাইদের বলেনি, এমনকি একসাথে থেকেও বাড়ীর কেউ টের পায়নি, তা সে কেন ওকে বলতে গেল। সম্ভবত যাদের সাথে লেনাদেনা থাকে তাদের প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে মানুষ অনেক কথাই বলতে পারেনা, কিন্তু একজন অপরিচিতের সাথে সেটা শেয়ার করা যায় নির্দ্বিধায়। নাকি কারো কারো চেহারা দেখলেই মনে হয় তাকে বিশ্বাস করা যায়? সে কথাগুলো বলল নিজেকে নির্ভার করার জন্য, কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা ব্যাপারটাকে খুব সুন্দর করে বিশ্লেষণ করে ওকে বুঝিয়ে দিলো সমস্যাটা ঠিক কোথায় এবং এর সমাধানের ব্যাপারেও একটা দিকনির্দেশনা দিলো। সব শুনে মেয়েটির কথাগুলো ওর কাছে যৌক্তিক মনে হোল। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? বাঁধার প্রাচীর পেরোনোর জন্য কথা বলার বিকল্প নেই। কিন্তু সেই কথাই তো সে বলতে পারছেনা আজ তিনমাস ধরে!

বান্ধবীর পরামর্শমত সামিয়া প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগল। সাতদিন পর, রাতে খাবার পর যথারীতি বাবাকে রুমে দিয়ে এসে মাসরুর অফিস রুমে পড়তে বসল। ওদিকে সামিয়া আর মারযান রান্নাঘরের খাবার গুছিয়ে গল্প করতে করতে যার যার রুমের দিকে এগোলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে মারযান হঠাৎ সামিয়াকে প্রশ্ন করল, ‘আচ্ছা ভাবী, একটা প্রশ্ন করি? তুমি কিছু মনে করবেনা তো?’

সামিয়া ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলে, ‘তোর সাথে কি আমার কিছু মনে করাকরির সম্পর্ক? বল, কি বলবি?’

মারযান কিঞ্চিত ইতস্তত করে বলে, ‘তোমাদের বিয়ে হয়েছে তিনমাস। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভাইয়া আর তোমাকে একসাথে থাকতে দেখিনি। তোমাদের মাঝে কি কোন সমস্যা হচ্ছে?’

প্রমাদ গোণে সামিয়া, তারপর মুখে হাসি টেনে বলে, ‘না তো! তোর ভাইয়া রাত জেগে পড়ে, আবার ভেতরে যেতে গেলে আমার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে ওখানেই শুয়ে যায়। সমস্যা না করার স্বার্থেই এই ব্যাবস্থা’।

মারযান হাসল, কিন্তু বিশ্বাস করল বলল মনে হোল না।

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

পানি খাওয়ার ছলে ঘরে ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণ


নারী সংবাদ


পানি খাওয়ার অজুহাতে ঘরে ঢুকে এসএসসি পরীক্ষার্থী এক স্কুলছাত্রীকে (১৬) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাঙ্গুরিয়া গ্রামে।

এ ঘটনায় ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে শনিবার রাতে অভিযুক্ত বেল্লাল সরদারের (২২) বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত মাহেন্দ্র চালক বেল্লাল সরদার উজিরপুর উপজেলার গুঠিয়া ইউনিয়নের চাঙ্গুরিয়া গ্রামের বজলু সরদারের ছেলে এবং ধর্ষণের শিকার মেয়েটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী।

এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ওই স্কুলছাত্রীকে গুরুত্বর আহতাবস্থায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছে।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওই স্কুল ছাত্রী চলমান এসএসসি পরীক্ষায় নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন। গত শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজ ঘরেই লেখাপড়া করছিল ওই ছাত্রী। এ সময় তার মা পাশের বাড়িতে গেলে মাহেন্দ্র চালক বেল্লাল সরদার পানি খাওয়ার ছলে ঘরে ঢুকে ওই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। তখন মেয়েটির চিৎকারে তার মা ঘরে চলে আসলে বেল্লাল দ্রুত পালিয়ে যায়।

উজিরপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিশির কুমার পাল মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, ওই স্কুলছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। সেই সাথে অভিযুক্ত বেল্লালকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৪


রেহনুমা বিনত আনিস


সবাই খেতে বসে। সামিয়ার শ্বশুর টেবিলের মাথায়, একপাশে স্ত্রী একপাশে বড়ছেলে, স্ত্রীর পাশে ছোটছেলে, মারযান অভ্যাসবশত বড় ভাইয়ের পাশে বসতে গিয়ে জিভ কেটে উঠে দাঁড়ায়, সামিয়াকে হাত ধরে টেনে এনে বলে, ‘আরে ভাবী, এটা তো তোমার জায়গা!’ ওর আত্মত্যাগ সামিয়ার দৃষ্টি এড়ায়না। সে আপত্তি জানালে মারযান চোখ টিপে বলে, ‘টেবিলের মাথায় বসার শখ আমার বহুদিনের। তুমি আসতে দেরী করছিলে বলেই তো এতদিন বসতে পারিনি। এখনও যদি বসতে না দাও!’ আসিয়া রুটি নিয়ে সবার প্লেটে দিতে শুরু করেন, মাসরুর আলুভাজি বেড়ে দিতে থাকে। আনোয়ারা প্রথম রুটিটা দেন স্বামীকে, তারপর সামিয়াকে, তারপর ক্রমান্বয়ে তাঁর তিন সন্তানকে, সব শেষে নেন নিজের পাতে, ছেলেও তাঁকে অনুসরন করে। সামিয়া একটু লজ্জাই পায়, কিন্তু এই পরিবারে সবার পরার্থপরতা ওকে মুগ্ধ করে। খাবার বাড়া শেষ হতেই শুরু হয় গল্প। শ্বশুর সাহেব প্রথম শুরু করেন সামিয়ার বাসায় নাস্তায় কি খাওয়া হয়, ক’টায় নাস্তা খাওয়া হয় ইত্যাদি প্রশ্ন দিয়ে। উত্তর দিতে দিতে সামিয়া খেয়াল করে শাশুড়ি শ্বশুরের প্লেটের দিকে হাত বাড়াতে যাচ্ছিলেন, সম্ভবত রুটি ছিঁড়ে দেয়ার জন্য, কিন্তু মাসরুরের চোখের ইশারায় তিনি আবার হাত সরিয়ে নেন।

খাওয়া শেষে মাসরুর আর মাসউদ আগের পদ্ধতিতেই বাবাকে নিয়ে যায় সামনের আঙ্গিনায়, ফুলবাগানে হাঁটতে। মারযান বলে, ‘চল ভাবী, তোমার জিনিসগুলো স্যুটেকেস থেকে আলমারীতে তুলতে সাহায্য করি’। কিন্তু শাশুড়ি বলেন, ‘আমাকেও কিছু কথা বলার সুযোগ দিবি তো! মেয়েটা এসেই লেগে গেল রান্নাঘরে! তুই যা, নিজের রুম গুছিয়ে এসে তোর ভাবীকে নিয়ে যা’।

মারযান চলে গেলে তিনি সামিয়াকে বললেন, ‘শোন মা, তুমি আমার কাছে আমার তিনটা সন্তানের চেয়ে আলাদা নও। তুমি আসার আগেও ত্রিশ বছর আমার সংসারের সব কাজকর্ম চলেছে, আরো কিছুদিন এভাবে চললে কোন ক্ষতি নেই। এখন তোমার প্রয়োজন ঘরের সবার সাথে বন্ধুত্ব করার, সবার পছন্দ অপছন্দ বুঝে নেয়ার, আমাদের তোমার পছন্দ অপছন্দ বুঝার সুযোগ দেয়ার, বিশেষ করে মাসরুরের সাথে অ্যাডজাস্ট করার’।

নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে যায় তাঁর, ‘আট বছর আগে মাসরুরের বাবা ব্যাবসায় বিরাট লস করেন। কিন্তু নিজের ক্ষতির চাইতেও তাকে পীড়া দিতে থাকে শেয়ার হোল্ডারদের লস, কর্মচারীদের কি হবে এইসব ভাবনা। একদিন সারারাত চিন্তা করার পর সকালে উঠে দেখেন আর হাতপা নাড়তে পারছেন না। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। ওরা বলল রাতে কোন একসময় স্ট্রোক হয়েছে, বেঁচে আছেন এটাই বেশি, হয়ত সুস্থ হবেন, কিন্তু আর কোনদিনই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারবেন না। ভাবলাম ব্যাবসা বাণিজ্য সব বিক্রি করে দেই, যা পাওয়া যাবে তা দিয়ে হয়ত মাসরুরের লেখাপড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সংসার চালিয়ে নিতে পারব। কিন্তু ছেলে আমার বেঁকে বসল। বলল, ‘না মা, মানুষের টাকা কর্জ থাকা পর্যন্ত বাবা সুস্থ হবেন না। তাছাড়া এতগুলো পরিবার আমাদের ওপর নির্ভরশীল, তাদের কথা ভুলে গেলেই বা কিভাবে চলবে?’ ছেলে সব ছেড়েছুড়ে ব্যাবসার হাল ধরল, হাল ধরল পরিবারেরও। কুড়ি বছর বয়স ছিলো ওর, হুট করেই বড় হয়ে যেতে হোল ছেলেটাকে। সেই থেকে পরিশ্রম করে ব্যাবসাটাকে আবার টেনেটুনে ঠিক করল, সবার ধার দেনা শোধ করল, ব্যাবসা বর্ধিত করল, নিজে আরেকটা নতুন ব্যাবসা শুরু করল, যেসব কর্মচারীরা এই বিপদের দিনে আমাদের পাশে ছিলো তাদের সবার জন্য বাড়ীর পেছনে ঘর করল, এখন ওরা আমাদের পরিবারেরই অংশ। পরিবারের গায়েও আঁচড়টি লাগতে দেয়নি আমার মাসরুর। বছরের পর বছর আমরা ডাল ভাত ভর্তা খেয়ে সংসার চালিয়েছি ঋণের টাকা শোধ করার জন্য, ঈদেও একটা কাপড় কিনতে পারিনি; কিন্তু ওর বাবার চিকিৎসা কিংবা ভাইবোনদের লেখাপড়ার জন্য কখনও টাকার অভাব বুঝতে দেয়নি মাসরুর। আমার ছেলেটা সারাদিন পরিশ্রম করে এসে বাবার মাথায় হাত না বুলিয়ে, ভাইবোনদের সাথে খুনসুটি করে তাদের মুখে হাসি না ফুটিয়ে কোনদিন ঘুমাতে যেতনা। ক্লাসের প্রতিশ্রুতিশীল ছাত্র ছিলো আমার ছেলে। ব্যাবসার ফাঁকে ফাঁকে, রাত জেগে পড়ে অনার্সটা তো শেষ করল, কিন্তু মাস্টার্সটা করব করব করেও এখনো করা হোলনা’।

আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তিনি, ‘মাগো, কেউ যখন সবার মাথার ওপর ছাতা হয়ে তাদের নিরাপদ রাখতে যায়, তখন রোদ বৃষ্টি তুফানের ঝাপ্টা সব তার ওপর দিয়েই যায়। আমার ছেলেটা সবসময় হাসিখুশি, কিন্তু ওর মনের কষ্টগুলো সে আমাকেও বলেনা; সারাক্ষণ বকবক করে, কিন্তু এর মাঝে নিজের কথা একটিও বলেনা, সব অন্যের সুবিধা অসুবিধার কথা। তুমি যদি ওর মনের গোপন কুঠুরীতে সঞ্চিত কষ্টগুলো বের করে এনে ওখানে আলোয় ভরিয়ে দিতে পারো, সেটাই হবে আমার পরম পাওয়া। তোমার কাছে আমি এর বাইরে আর কিছুই চাইনা’।

তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে সামিয়া খেয়ালই করেনি কখন মারযান পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ওদের সামিয়ার রুমে গিয়ে জিনিসপত্র গুছাতে বলে আনোয়ারা বেগম বাগানে যান যেখানে তাঁর স্বামী ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে একটা ফুটবলে লাথি মারতে পেরে আনন্দে কিশোরদের মত হুঙ্কার ছাড়ছেন!

নিজের রুমে যেতে যেতে সামিয়ার মনটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আসে। সে গতরাতে মাসরুরকে বলেছে, ‘আপনার ঝোঁক টাকার প্রতি, আমার পড়ার প্রতি’। অথচ এখন সে বুঝতে পারছে টাকা সে নিজের জন্য উপার্জন করেনা, বা লেখাপড়ার প্রতি ওর আগ্রহ নেই এই কথাটাও সত্য নয়। না জেনে কত বড় একটা আঘাত দিয়ে ফেলেছে সে! একজন কষ্ট হরণকারীকে কষ্ট দিয়ে ভীষণ অনুশোচনায় ভুগছে সামিয়া। কিন্তু কথাটা সে বলবে কি করে?

তিনমাস কেটে যায়। সামিয়ার শ্বশুর শাশুড়ি দেবর ননদ এমনকি প্রতিবেশীরাও ওকে ভীষন ভালোবাসে, ওদের উদারতা ওকে আপ্লুত করে। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এই ভালবাসা সে পাচ্ছে তার মতিগতি সে কিছুই বুঝতে পারেনা। মাসরুর ওর সুবিধা অসুবিধা খেয়াল রাখে, বাড়ীর সবার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার ব্যাপারে উপদেশ উৎসাহ দেয়, বাপের বাড়ী বা কলেজে আসা যাওয়ার সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে। কিন্তু এর বাইরে সে সামিয়ার সাথে কোন কথাই বলেনা, ঘুমায় অফিসরুমের সেই সিঙ্গেল খাটে। মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে, সারাদিন কাজ শেষে রাতের খাবার খেয়ে পড়তে বসে। ভোরবেলা নামাজের আগে কুর’আন পড়ে, নামাজ পড়ে ঘুমায়। সামিয়া সুযোগ পায়না কোন কথা বলার, আবার লজ্জাবোধের কারণে বলতে পারেনা ভেতরে এসে ঘুমোতে। এক অস্বস্তিকর পরিবেশে কাটতে থাকে তার দিনরাত। ঘরের কেউ কিছু টের না পেলেও মারযান বুঝতে পারে কিছু একটা অমিল হচ্ছে, কিন্তু সে ঠিক ধরতে পারেনা সেটা কি।

(চলবে- ইনশাআল্লাহ)

 

কই ভাত বানানোর আগ মূহুর্তে…


তাহনিয়া খান


আমার শাশুড়ি শিখেছেন আমার শশুড়ের কাছ থেকে… এটা আমার শশুড়ের দেশী রান্না… আমার শশুড় শাশুড়ি দুজনেই মাশা আল্লাহ্‌ ভালো রান্না করেন… আমি এখনো নিজে কই ভাত বানাইনি… শিখে নিয়েছি আর বানানোর সময় শাশুড়িকে হেল্প করি… আজকে আমার মেয়েকে বললাম শিখে নাও… আজকে সে তার দাদী’র হেল্পিং হ্যান্ড… এভাবেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম শিখে নেয় সবকিছু… সেটা খাবার হোক, আচারব্যবহার হোক বা যা কিছুই হোক না কেন… এভাবেই ঐতিহ্য বজায় থাকে।

উপকরণ

১.কই মাছ
২.কদু পাতা
৩.অর্ধেক রান্না করা চাল
৪.পেয়াজ
৫.জিরা বাটা,
৬.সরিষা তেল
৭.আদা বাটা,
৮.রসুন বাটা,
৯.হলুদ গুড়া,
১০.মরিচ গুড়া,
১১.লবণ,
১২.কাঁচামরিচ মিসিং।

প্রক্রিয়া
কই মাছগুলো সরিষার তেল এর সাথে আদা, রসুন, পেয়াজ আর জিরা বাটা ,হলুদ গুড়া, মরিচের গুড়া, লবণ ও কাঁচামরিচ দিয়ে কিছুক্ষন মেরিনেট করে রেখে কদু পাতায় মুড়িয়ে রাখতে হবে। ভাত বসাতে হবে। ভাতে লবণ দিতে হয়। ভাত কিছুটা হয়ে গেলে অর্ধেক ভাত নামিয়ে তার মাঝে মাছগুলো দিতে হবে । বাকি ভাত উপরে দিয়ে দিতে হবে। দমে রেখেই বাকি ভাত সিদ্ধ হবে, মাছও হয়ে যাবে। কদু পাতায় মাছ রাখার আগে একটু সরিষার তেল মাখিয়ে নিতে হবে।

 

বাচ্চাদের প্রশ্নের উত্তর


কানিজ ফাতিমা


বাচ্চাদের সরাসরি উত্তর না দিয়ে পাল্টা চিন্তা উদ্রেককারী প্রশ্ন করুন। বাচ্চাকে তার প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিলে বাচ্চা শুধু তথ্যই পায় কিন্তু তার জ্ঞানের গভীরতা বাড়ে না। তথ্য যাচাই বাছাই করে গ্রহনের দক্ষতা তৈরী হয় না। আপনার সন্তান হতে যাচ্ছে “তথ্য” যুগের বাসিন্দা। সে তথ্যের সাগরে বসবাস করবে- হাতের মোবাইলে তথ্য, মিডিয়ায় তথ্য , বাসের গায়ে তথ্য স্টিকার ফ্লাইয়ারে তথ্য। চারিদিকে তথ্যের ছড়াছড়ি – যা আমদের বেড়ে ওঠার সময় থেকে আলাদা। এসব তথ্যের সবটাই কি ঠিক?- না, তা হতে পারে না। সত্য, মিথ্যা , অর্ধসত্য, সত্যের রঙ্গে মিথ্যা – এমন কোটি কোটি তথ্য সাগরে ভাসবে আপনার সন্তান। কাজেই আপনার সন্তানকে সেই দক্ষতা নিয়ে বড় হতে হবে যাতে সে জানে কিভাবে তথ্যের যাচাই বাছাই করে গ্রহণ বর্জন করতে হয়।

বাচ্চার প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন করে বাচ্চার তথ্য যাচাইয়ের শক্তিকে বাড়িয়ে দিতে পারেন।

একটা উদাহরণ দিচ্ছি-

রিনি- আম্মু, কুকুররা ছেলে আর বিড়ালরা মেয়ে, তাই না আম্মু?

(বলেননা যে, না আম্মু। কুকুর – বিড়ালরা ছেলে মেয়ে দুই হতে পারে)

মা- কেনো তোমার এমন মনে হচ্ছে? ( এরূপ প্রশ্নে আপনার বাচ্চা নিজের চিন্তার পেছনের কারণ চিন্তা করতে শিখবে – একে বলে Meta cognition, যা উচ্চ পর্যায়ের জ্ঞান)

রিনি – কুকুরগুলো বড় আর অনেক জোরে ডাকে ছেলেদের মতো। আর বেড়ালগুলো ছোট আর নরম আর মিউ মিউ করে ডাকে – মেয়েদের মত।

এবার আপনি যা করতে পারেন তাহলো বাচ্চাকে ছোট কুকুরের ছবি বা ভিডিও দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করতে পারেন –

মা-এগুলো কি ?

রিনি- এগুলো কুকুর।

মা- এরা কি বড়?

রিনি- না ছোট।

মা- তারমানে কুকুররা সব সময়ে বড় হয়না।

এবার আপনার বাচ্চাকে বাচ্চাসহ মা-কুকুর দেখান বা অন্তত ছবি দেখান ।

মা- এটা কি?

রিনি- কুকুর

মা- ছেলে নাকি মেয়ে ?

রিনি- মা কুকুর

এভাবে সরাসরি উত্তর বা তথ্য না দিয়ে প্রশ্নের মাধ্যমে আপনার সন্তানকে কিভাবে জ্ঞান আহরণ করতে হয় তা শিখিয়ে দিন।

চাইনিজ একটা প্রবাদ আছে –

‘কাউকে একটা মাছ দেবার পরিবর্তে মাছ ধরা শিখিয়ে দিন। সে সারা জীবন মাছ খেতে পারবে।’

আপনার সন্তানের সামনে তথ্য দেবার পরিবর্তে শিখিয়ে দিন কিভাবে সঠিক তথ্য পেতে হয় – সারা জীবন এটা তার কাজে লাগবে ।

 

সমুদ্রজয়েও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলার সাহসী নারীরা


নারী সংবাদ


বাংলার নারীরা এখন শুধু করপোরেট কিংবা স্কুল-কলেজেই নয় আকাশে যেমন শান্তির পায়রা ওড়ান তেমনই উত্তাল সমুদ্রও পাড়ি দেন। তারা হাজার নর্টিক্যাল মাইল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে বিশ্বের বড় বড় বন্দরে নোঙর করাচ্ছেন লাল-সবুজের পতাকাবাহী জাহাজগুলোকে।
বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) অত্যাধুনিক এসব জাহাজ শুধু পণ্য পরিবহন-ই নয়, বিশ্বজুড়ে বার্তা দিচ্ছে বাংলার নারীদের অগ্রযাত্রার গৌরবগাঁথা, নারীর ক্ষতায়নের কথা।
বিএসসি সূত্র জানায়, সংস্থাটির ‘এমভি বাংলার জয়যাত্রা’, ‘এমভি বাংলার অর্জন’, ‘এমটি বাংলার অগ্রযাত্রা’ নামের তিনটি বড় জাহাজে ১৭ জন নারী অফিসার ও ক্যাডেট রয়েছেন।
বহরে যুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ‘এমটি বাংলার অগ্রদূত’ জাহাজের জন্য তৈরি রয়েছেন আরও ছয়জন নারী ক্যাডেট ও অফিসার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব জাহাজে কর্মরত কর্মকর্তাদের মাসিকভিত্তিতে এবং ক্যাডেটরা দৈনিকভিত্তিতে তাদের ভাতা পান। যা বেশ সম্মানজনকও বটে। এর বাইরে জাহাজে ওঠার জন্য চীন যাওয়ার ফ্লাইট ভাড়া, কর্মরত থাকাবস্থায় থাকা-খাওয়া, ইউনিফর্মসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র বিনামূল্যে পান তারা।
মেরিটাইম আইন অনুযায়ী, সমুদ্রে জাহাজে কর্মরতদের প্রত্যেকের ইন্স্যুরেন্স রয়েছে এবং রয়েছে প্রোটেকশন অ্যান্ড ইনডেমনিটি (পিঅ্যান্ডআই) কাভারেজও।
বিএসসির মহাব্যবস্থাপক ক্যাপ্টেন জামাল হোসাইন তালুকদার বলেন, এছাড়া বন্দরে অবস্থানকালে ক্যাডেট ও কর্মকর্তারা ইন্টারনেটের আওতায় থাকলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ই-মেইল ও টেলিফোনে পরিবারের সদস্যদের কুশল জানতে পারে। যে কোন জরুরি মুহূর্তে স্যাটেলাইট ফোনে জাহাজ থেকে স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেন তারা ।
তিনি বলেন, ‘বাংলার মেয়েরা এখনও সব ক্ষেত্রেই ভালে করছে। আকাশ, সমুদ্রসহ অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও তারা বেশ সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। এটা নারীর ক্ষমতায়নেরই একটি প্রতীক।’ বিএসসি’র তিনটি নতুন জাহাজ বিশ্বের বিভিন্ন বন্দর ও সমুদ্রে অবস্থান করছে। এসব জাহাজে কর্মরত আমাদের নারী অফিসার ও ক্যাডেটরা সব চ্যালেঞ্জ জয় করে সততা, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে ক্যাপ্টেন জামাল বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সমুদ্রগামী জাহাজে সাহসী নারীরা কাজ করে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পেয়েছেন। এটি একটি বড় মাইলফলক।
‘বাংলার জয়যাত্রা’ জাহাজে রয়েছেন ক্যাডেট আতিয়া সৈয়দা, আনজুমান আরা, সৈয়দা সাবরিনা বাবুর, সোহানা পারভিন ও শতাব্দী হোসাইন। আর ‘বাংলার অর্জন’ জাহাজে চীনের সাংহাই থেকে উঠেছেন থার্ড অফিসার বিউটি আক্তার, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার লাভলী দাস, ক্যাডেট মৌটুসি তালুকদার বৃষ্টি, ইসরাত জাহান সেতু, তাসনিমুল বাহার ও সাজিয়া আফরিন। বেশ দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন তারা।
‘বাংলার অগ্রযাত্রা’য় নিয়োগ পেয়ে বর্তমানে চীনে অবস্থান করছেন ফোর্থ অফিসার ফারজানা আক্তার ফাইজা, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার খাদিজা আক্তার, ক্যাডেট কানিজ ফাতেমা, মেমি আফরোজা, নাফিসা আহমেদ নোভা ও ফারজানা ইয়াসমিন।
চলতি মাসেই বিএসসির বহরে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে ‘এমটি বাংলার অগ্রদূতে’র। এ জাহাজে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে ক্যাডেট সানজিদা করিম মুমু, বিলকিস আক্তার, আয়েশা সিদ্দিকা এলিনুর, সাবিনা ইয়াসমিন, সুস্মিতা দাস ও রিক্তা আজিজকে। প্রশিক্ষণে বেশ দক্ষতার প্রমাণ রেখেছেন তারা।
তাদের একজন মেরিন একাডেমির ৪৯তম ব্যাচের ক্যাডেট সানজিদা করিম মুমু। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের অর্থাৎ ৪৯ তম ব্যাচের ক্যাডেট আমরা। নারী ক্যাডেটদের এটি দ্বিতীয় ব্যাচ।
‘বিএসসি’র জাহাজে আমাদের এক বছরের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দিলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করার সুযোগ মেলেনি। পরিবারের সদস্য, অভিভাবক ও স্বজনরা প্রেরণা দিয়েছেন, আমাদের শিক্ষকরা সাহস দিয়েছেন। আজ আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।’
আরেক ক্যাডেট রিক্তা আজিজ বলেন, ক্যাডেট হিসেবে বেশ পরিশ্রম করে এই পর্যায়ে এসেছি। এখন যোগ্যতা প্রমাণের অপেক্ষায় আছি। কাজটা চ্যালেঞ্জের হলেও আমরা সমুদ্রেও জয়ী হবো।
এ বিষয়ে মানবাধিকার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, নারীরা বাইরে বেরিয়ে আসছেন এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক। তবে সমতা এখনও নিশ্চিত হয়নি। একদিকে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ পুরস্কার পাচ্ছে, অন্যদিকে যত্রতত্র যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী। কারণ, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না আমরা। ফলে ক্ষমতায়নের সুফল পাচ্ছেন না নারী।
তবে, স্থলে, আকাশে এবং সমুদ্রে নারীদের সাফল্যের প্রমাণ বেশ ভালো খবর বলেই মনে করেন এই নারী নেত্রী। সুত্র: ॥ তাসলিমা সুলতানা (বাসস)।

 

ট্রাম্পকে কড়া জবাব দিলেন ইলহান


নারী সংবাদ


কংগ্রেস থেকে পদত্যাগের আহ্বান জানানো সংবলিত বক্তব্যের কড়া সমলোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাটিক দলের মুসলিম সদস্য ইলহান ওমর।

এক টুইটে তিনি বলেন, হাই@রিয়েলডোনাল্ডট্রাম্প! আপনি আপনার জীবনভর শুধু ঘৃণা ছড়িয়ে গেছেন, ইহুদি, মুসলিম, আদিবাসী, অভিবাসী, কৃষ্ণাঙ্গসহ সবার বিরুদ্ধেই আপনি ঘৃণা ছড়িয়েছেন। আমি শিখেছি মানুষকে একত্র করতে।

এর আগে এক টুইটার যুদ্ধে ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়। তবে বলা হয়, অ্যামেরিকান ইসরাইল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আইপ্যাক) মার্কিন রাজনীতিকদের ইসরাইলপন্থী হওয়ার জন্য অর্থ প্রদান করে।

ডেমোক্র্যাট এই সদস্য তার বক্তব্যের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলেন, আমি কখনোই এ বক্তব্যের দ্বারা সকলকে ইঙ্গিত করা উদ্দেশ্য ছিল না। একই সাথে আমি আবারো মার্কিন রাজনীতিতে এইসব লবিস্টদের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করতে চাই। এসব লবিস্টের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আইপ্যাক, এনআরএ ইত্যাদি।

তবে ট্রাম্প তার এই ক্ষমাপ্রার্থনাকে খোঁড়া ও অসম্পূর্ণ আখ্যা দিয়ে বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে ইহুদীবিদ্বেষীদের কোনো স্থান নেই। একই সময় তিনি ওমরের মন্তব্যকে ভয়াবহ বলেও মন্তব্য করেন।

ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি, হয় তিনি কংগ্রেস থেকে অথবা কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করবেন। কারণ তিনি যা বলেছেন, আসলে এগুলো তার অন্তরে গভীরভাবে বসে আছে।
সূত্র : সিয়াসত ডেইলি

 

‘আমি দুঃখিত’: থাই রাজকন্যা


নারী সংবাদ


থাই রাজকন্যা উবলরাতানা নির্বাচনে তার প্রার্থী ঘোষণার জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে ইনস্ট্রগ্রামে দেয়া এক পোস্টে ৬৭ বছর বয়সী রাজকন্যা রাজনৈতিক নাটকে তার ভূমিকার জন্যে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, ‘দেশের জন্যে কাজ করার আমার আন্তরিক ইচ্ছের কারণে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এই সময় তা উচিত হয়নি। আমি দুঃখিত। ’
থাই রাজকন্যা উবলরাতানা গত শুক্রবার আগামী ২৪ মার্চ অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে থাই রাকসা চার্ট পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে লড়াইয়ের ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই দেশটির রাজনৈতিক নাটক বেশ জমে ওঠে। তিনি যে থাই রাকসা চার্ট পার্টি থেকে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন সে পার্টি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কিত। থাকসিন বর্তমানে কারাদন্ড এড়াতে স্বেচ্ছানির্বাসনে রয়েছেন।
এদিকে উবলরাতানার প্রার্থীতা ঘোষণার পরপরই তার ভাই ও থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এক বিবৃতিতে বলেন, রাজপরিবারের উচ্চপর্যায়ের কোন সদস্যের নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী।
এর পর থাই রাজকন্যাকে সোমবার প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। সুত্রঃ বাসস।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ৩


রেহনুমা বিনত আনিস


সে জামা পাল্টে রেডি হবার একটু পরই দরজা ঠেলে মাসরুর ঘরে ঢুকল, ‘চল, আমি তোমাকে রান্নাঘর দেখিয়ে দিচ্ছি’।

রুম থেকে বেরিয়ে সামিয়া দেখল ওর ঘরটা আসলে একটা সুইটের মত। গতরাতে এত বড় বাড়ীর আগামাথা ঠাহর করতে পারেনি, সবকিছু দেখতে দেখতে কেমন ধাঁধাঁ লেগে গেছিল। ওর ঘর দু’টো রুম আর একটা বাথরুম মিলিয়ে। বাইরের অংশে মাসরুরের অফিস – রুমের মধ্যখানে একটা বড় টেবিল, টেবিলের একপাশে একটা আরামদায়ক রিভলভিং চেয়ার আরেকপাশে দু’টো গেস্ট চেয়ার, রিভলভিং চেয়ারের পেছনে ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত উঁচু একটা বুকশেলফ নানান রকম বইপত্রে ঠাঁসা, টেবিলের ডানপাশে একটা সোফা আর বাঁপাশে একটা সিঙ্গেল খাট যেটা দেখে বোঝা যাচ্ছে রাতে মাসরুর কোথায় ছিল। সামিয়া ধরে নিল ওকে লজ্জা পেতে দেখে ওকে আশ্বস্ত করার জন্য মাসরুর এখানে ছিল। সুতরাং, সে আর কোন প্রশ্ন করলনা।

রান্নাঘরে গিয়ে তো সামিয়া পুরাই হতভম্ব! এই ভোর সকালেই পুরো রান্নাঘর লোকে গমগম করছে। রান্নাঘরের দু’টো দরজা- একটা খাবার ঘরের সাথে, আরেকটা বাড়ীর পেছনে উঠোনে। উঠোনে বটি নিয়ে বসে একজন মুরগী কাটছে, একজন মাছ, একজন নানান জাতের সব্জী। দরজায় বসে একজন মসলা বাটছে। রান্নাঘরের ভেতর একজন রুটি বেলছে, একজন চিরল চিরল করে আলু কাটছে, দেখেই বুঝা যাচ্ছে ভাজি করা হবে। মধ্যখানে চুলোর পাশে বসে ওর শাশুড়ি এক চুলোয় রুটি ভাজছেন, আরেক চুলায় কড়াইয়ে তেল দেয়া, আলুভাজির জন্য প্রস্তুত- কিছুক্ষণ পর পর একে ওকে ডেকে কাজের তাড়া দিচ্ছেন। সামিয়াকে দেখে তিনি ভীষণ অবাক হলেন, তারপর ওর পেছনে থেকে মাসরুরকে সরে যেতে দেখে সব বুঝে নিলেন। তিনি একজনকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘শায়লা, তোর ভাবীকে একটা মোড়া দে তো!’

সামিয়াকে বললেন, ‘শোন মা, আমার ছেলেটা বেশি বেশি করে। এটা তো তোমারই সংসার, তুমি আস্তেধীরে সব বুঝে নেবে। কিন্তু এখনই রান্নাঘরে নিয়ে আসার কি হোল? তুমি চুপচাপ বোস, আমরা কথা বলি’।

সামিয়া মোড়ায় বসে বলল, ‘মা, আম্মু কাজ করার সময় আমি সবসময় হাত লাগাতাম। সবাই কাজ করছে, এর মধ্যে আমি চুপ করে বসে থাকলে কি করে হবে? আমি অন্তত রুটিগুলো ভাজি!’

শাশুড়ি আনোয়ারা বেগম ছেলের কান্ডে যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন সেটা তাঁর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু তিনি সায়মাকে সস্নেহে বললেন, ‘মা, চল তোমাকে আগে আমাদের প্রতিবেশীদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই’।

শায়লাকে রুটি দেখতে বলে তিনি সামিয়াকে নিয়ে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে লাগলেন। সামিয়া দেখল উঠোনে নানান জাতের সব্জীর বাগান আর বাড়ীর দু’পাশে ফলের বাগান, বাড়ীর সামনে ফুলের বাগান গতকাল এই বাড়ীতে ঢোকার সময়ই চোখে পড়েছে। উঠোনের ওপাশে কতগুলো ঘর দেখা গেল, একই বাউন্ডারীর ভেতর। গ্যারেজ আর দারোয়ানের ঘর বাড়ীর দু’পাশে। সুতরাং, ওগুলো কিসের ঘর সে বুঝতে পারলনা। আনোয়ারা বেগম সবাইকে প্রতিবেশী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিলেও সামিয়া বুঝতে পারল এরা সবাই এই বাসার কাজ করে- কিন্তু তাঁর ব্যাবহার থেকে সামিয়ার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল এদের সাথে কেমন আচরন করতে হবে, ওর খুব ভাল লাগল শাশুড়ি মায়ের এই অভ্যাসটি। সে সবার সাথে অল্পসল্প কথা বলে শাশুড়ির সাথে চুলোর কাছে ফিরে এলো। কিছু না বলেই শায়লার কাছ থেকে খুন্তি নিয়ে রুটি ভাজতে শুরু করল। আনোয়ারা বেগম আর কিছু বললেন না। তিনি ভাজির জন্য তেলে পেঁয়াজ দিলেন।

হঠাৎ কে যেন সামিয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চটাস চটাস দুই গালে চুমো দিল। সামিয়া অবাক হয়ে পেছন ফিরে মারযানকে দেখে হেসে ফেলল। ননদিনি যে কখন চুপি চুপি ওর পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সামিয়া টেরই পায়নি! সামিয়া আলতো করে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এই সুযোগে আনোয়ারা বেগম ওর হাত থেকে খুন্তিটা নিয়ে মারযানকে বললেন, ‘তোরা দু’জন গিয়ে টেবিলে বস। মাসউদকে বল মাসরুরকে ডেকে আনতে, ওকে বল এত কাজ করতে হবেনা। একটা দিন হয়নি বিয়ে হয়েছে আর বৌটাকে রান্নাঘরে ছেড়ে দিয়ে পালিয়েছে!’

মারযান ভাবীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল, ‘মা ভালই ক্ষেপেছে। ভাইয়া মনে হয় কাজ ছাড়া কিছু বোঝেনা। কোথায় বাগানে বসে তোমাকে নিয়ে গল্প করবে, আমরা চা নিয়ে যাবার ভান করে আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করব! বেরসিক একটা …’

ডাইনিং রুমে এক কোণে চুপচাপ ছায়ামূর্তির মত বসে থাকা ছেলেটাকে খেয়ালই করতনা সামিয়া সে সালাম না দিলে। মারযান বলল, ‘এই নাও ভাবী, তোমার দেবর মহাশয়, মাসউদ উল হাসান। যা, এবার গিয়ে ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আয়’।

মাসউদকে বিয়েতে দেখেছে বলে মনে করতে পারেনা সামিয়া। বয়স চৌদ্দ হবে হয়ত, নতুন গোঁফ গজাচ্ছে, তাই হয়ত লজ্জায় কারো সামনে আসেনা, ওকে দেখেই বোঝা যার ছেলেটা খুব লাজুক টাইপের, এই ছাড়া সে যেন মাসরুরের ছোটবেলার সংস্করণ। বোনের কথামত ভাইকে ডাকতে চলে গেল মাসউদ।

মারযান বলল, ‘ভাগ্য ভাল, তুমি ছিলে। নইলে সে আমার চুল টেনে দিত হুকুম দেয়ার অপরাধে। আমি ওর তিনবছরের বড়, কিন্তু একটুও মানতে চায়না আমাকে’।

ননদের পাকা পাকা কথা শুনে হাসি পায় সামিয়ার। ভাবখানা যেন সে মাসরুরের বড় বোন!

মাসরুরের সাথে ওর বাবাও এলেন, ছেলের হাত ধরে, কিঞ্চিত ভর ছেলের গায়ে ছেড়ে দিয়ে। তাঁর চলাফেরা তেমন স্বচ্ছন্দ নয়। পেছন পেছন মাসউদ এলো বাবার উইলচেয়ার নিয়ে। মারযান সামিয়াকে কানে কানে বলল, ‘বাবার উইলচেয়ারে বসা ভাইয়ার একদম পছন্দ না। ভাইয়া থাকলে বাবা না হেঁটে পার পায়না। কিন্তু আবার বাবা উইলচেয়ার ছাড়া সাহস পায়না বলে ওটা কেউ পেছন পেছন নিয়ে আসে। বাবা ভাইয়ার উপর প্রচন্ড ক্ষেপলেও আসল কথা হোল বাবার স্ট্রোকের পর যেখানে আমরা ভেবেছিলাম বাবা বিছানা থেকেই কোনদিন উঠতে পারবেনা, সেখানে আজ বাবা হাঁটতে পারছেন!’

সামিয়ার আবছা আবছা মনে পড়ে, সম্ভবত বছর দশেক আগে সে ভাইদের সাথে লুডো খেলার সময় শুনতে পায় বাবা মায়ের কাছে আহাজারি করছেন, ‘আহারে! ছেলেটা এই বয়সেই সব হারিয়ে ফেলল! বিজনেসের লস তো তবু পোষানো যেত, কিন্তু এই বয়সে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে সে কিভাবে সংসার চালাবে? তিনটা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে আনোয়ারা এখন কি করবে?’

(চলবে ইনশা আল্লাহ)

 

সৌন্দর্য বদলায় না, বদলায় কেবল দেখার চোখ


জান্নাতুন নুর দিশা


আমার কৈশোরে আমাকে কেউ কখনো প্রপোজ করে নি। কেউ আমার জন্য গোলাপ হাতে পথের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে নি। স্কুল থেকে ফেরার পথে কখনোই কেউ আমার পিছু নেয় নি। এমনকি ক্লাসের যে ছেলেগুলো প্রত্যেক সহপাঠিনীকেই প্রপোজ করে বেড়াতো, দেখা গেছে তারাও কখনো আমার দিকে তাকায় নি।
সে সময় বিষয়গুলো আমাকে কখনো ভাবায় নি। এমনকি এটা ভেবেও আমার তখন আফসোস হতো না যে আমাকে কেন কেউই প্রপোজ করলো না।

কৈশোরে আসলে এসব নিয়ে ভাববার মত মানসিক পরিপক্বতাই আমার হয় নি। বাবা-মায়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণে বড় হওয়া মেয়ে আমি। যেসব সন্তানদের বাবা-মায়েরা বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখে তাদের মানসিক পরিপক্বতা আসে দেরীতে। এই নিয়ন্ত্রণটুকুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
যৌবনে পদার্পণের পর আমার যখন মানসিক পরিপক্বতা এলো, কৈশোরে একটিও প্রেমের আহবান না পাবার বিষয়টি আমাকে বেশ ভাবিয়েছে।
ভেবে ভেবে আমি কারণটা বের করেছি।
খেয়াল করে দেখলাম, পারিবারিক এলবামে আমার শৈশবের অসংখ্য ছবি, সে সময় আমি ছিলাম তুমুল ফ্যাশনাবল শিশু। মূলত আমার মা অত্যন্ত ফ্যাশন সচেতন রমণী। তিনি নিজের বাচ্চাকে বেশ ফ্যাশনদুরস্ত চালচলনে রাখতেন।
আশ্চর্যজনকভাবে, এলবামে আমার কৈশোরের ছবি খুব কম। সে সময় আমি তেমন একটা ছবিই তুলতাম না। এই বয়সের সন্তানের পোশাক, সাজসজ্জা ইত্যাদির উপর মায়ের নিয়ন্ত্রণ কমতে থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
আমি কৈশোরেই ছিলাম সবচেয়ে ক্ষ্যাত! ক্ষ্যাত মানে চরম ক্ষ্যাত! ঢোলা ঢোলা জামাকাপড় পরতাম, কাজল দিতে জানতাম না, লিপস্টিক দিলে ঠোঁটের দুপাশে লেপ্টে থাকতো। সমসাময়িক মেয়েরা যেখানে চুলে বেণী করে স্কুলে যেতো, আমি কোনো রকম কাঁধ পর্যন্ত লম্বা চুলটায় ব্যান্ড লাগিয়ে মারতাম দৌড়।
তার উপর আমি ছিলাম চরম হেলদি। আমার মত মাঝামাঝি উচ্চতার মেয়েরা পায়ে পেন্সিল হিল পরে। আমি পেন্সিল হিল কিনেছি জীবনে একবার। পরিধানের প্রথম দিনেই পড়ে গিয়ে এলাহি কান্ড বাঁধিয়েছিলাম নানাবাড়ীতে। ফ্ল্যাট স্যান্ডেলে মাঝামাঝি উচ্চতার আমাকে মোটামুটি খাটোই তো লাগতো! গায়ের রঙও ময়লা। মেকআপ টেকঅাপ আমি এখনো চিনি না। তখন রঙ কিছুটা খোলানোর জন্য একমাত্র জিনিশই যা আমি চিনতাম তা হল ট্যালকম পাউডার! সেই টেলকম পাউডার মুখে দিলে ধোঁয়াশার মত ঘামে ভেজা মুখে লেপ্টে লেপ্টে থাকতো।
এরকম মদনমার্কা সাজসজ্জার মেয়েকে কেউ প্রপোজ করার কথাও না।
প্রথম যৌবনে ছেলেরা ক্রাশ খায় লিকলিকে ধবধবা মেয়েদের উপর, এদের কোমরের বাঁকেবাঁকে যৌবন খেলে। কাজল টেনেটেনে এরা চোখকে করে হরিণীর মত। ঠোঁটে লালটাল মেখে সদ্য ফুটন্ত গোলাপের মত বানিয়ে ফেলে। বেণী দুলিয়ে হাঁটে।
এমন সুন্দরী মেয়েরা কৈশোরে অসংখ্য প্রপোজাল পায়। তাদের কেউ কেউ আঠারো-ঊনিশে পা রাখতে রাখতেই দশবারোজনকে ছ্যাঁকাও দিয়ে ফেলে! এতে অবশ্য দোষের কিছু নেই। অপ্রাপ্তবয়স্ক একটা মেয়ের স্কুলজীবনে যাকে ভালো লেগেছে, কলেজে উঠেই সে দেখে ছেলেটি তার চেয়ে সামাজিক অবস্থানে, পড়ালেখায়, যোগ্যতায় অনেক নিচে। মেয়েরা এসব বিষয়ে অনেক সচেতন। অসফল পুরুষদের মেয়েরা নিজেদের জীবনে রাখে না, আবেগের উপর মেয়েদের প্রচণ্ড নিয়ন্ত্রণ। তাছাড়া সুন্দরীদের হাতে অসংখ্য অপশন, পেছনে অসংখ্য আসিক!
যাই হোক, যৌবনে আসার পরই যে আমি ব্যাপক ফ্যাশনদুরস্ত হয়ে গেছি তা নয়। আমি এখনো হেলদি, এখনো আমার উচ্চতা মাঝামাঝিই, এখনো আমার গায়ের রঙ ময়লা। পরিবর্তন এসেছে সামান্য, যেমন পোশাকে। এখন আমি গুছিয়ে শাড়ি পরতে জানি।
আমি কাজল লাগাতে জানি, লিপস্টিক লাগালে ঠোঁটের দুপাশে লেপ্টে যায় না। কপালে মধ্যম আকারের উজ্জ্বল রঙের টিপ পরি।
যৌবনে আমি অসংখ্য প্রপোজ পেয়েছি! কিন্তু কেন! গুছিয়ে সাজি বলে?
এই প্রশ্ন মনে বারবার ঘুরপাক খেয়েছে। তাই কেউ প্রপোজ করলে জানতে চেয়েছি আমাকে কেন ভালো লাগে।
কেউ বলেছে আমার চোখ সুন্দর, কেউ বলেছে নাক বা ঠোঁট, চাহনি, চুল, হাসি, কন্ঠ, কথা!
এসব কি কৈশোরে ছিলো না আমার? আমি কি যৌবনে এসে আমার নাক, চোখ, ঠোঁট, কন্ঠ পরিবর্তন করেছি?
এ প্রশ্ন তাদের অবশ্য করি নি। করলে তারা বলতো, কৈশোরে কেন আপনার সাথে পরিচয় ঘটলো না? তখনই প্রেমে পড়তাম!
পুরুষ প্রচণ্ড রকম ফ্লাটারার জাতি! এরা মেয়ে পটাতে মিথ্যের পর মিথ্যে বলতে পারে।
কৈশোর আর যৌবনের এই দুই চলন আমাকে মিথ্যে ধরতে শিখিয়েছে।
আমি যা ছিলাম, তাই আছি, তাই থাকবো।
যারা বলে আমি সুন্দর তাই প্রেমে পড়েছে, সৌন্দর্য ফুরোলেই ওদের প্রেম ফুরোবে জানি।
যারা বলে আমার কন্ঠে কবিতা শুনে প্রেমে পড়েছে, কন্ঠা হারালেই তারা হারাবে জানি।
যারা বলে আমার লেখা পড়ে প্রেমে পড়েছে, লেখা ছেড়ে দিলেই ওরা ফিরবে না আর জানি।
পুরুষের প্রেমে কি তবে আমার বিশ্বাস নেই তবে?
অবশ্যই আছে।
পুরুষ পরিপক্ব হলে লিকলিকে ধবধবে সাদা আর খোঁজে না। তারা খোঁজে একজন ব্যক্তিত্ববান, দায়িত্ববান প্রেয়সী।
আসলে প্রেম আসে এক মুহূর্তের জন্য। সেই প্রেমটা সৌন্দর্য দেখে আসে না, আসে অকারণেই, অহেতুক।
তারপর মোহ আসে, মায়া বাড়ে। এক সময় সেসবও কেটে যায়। তারপর যা থাকে তার নাম দায়িত্ববোধ। এটাই বাস্তবতা। কোনো প্রেমই স্থায়ী নয়। স্থায়ী হয় নির্ভরতা।
আমি যদি কৈশোরে অসুন্দর ছিলাম, এখনো আমি তাই।আসলে তা নয়।
আমি তখনও সুন্দর ছিলাম, এখনো সুন্দর।
সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি মানুষকেই গড়েছেন সুন্দর গড়নে। আর নারীকে গড়েছেন আরো বেশি সৌন্দর্য দিয়ে।
প্রতিটি নারীই সুন্দর। শুধু দেখার চোখটাই বদলায় পুরুষের।

জান্নাতুন নুর দিশা
১৭/০৫/২০১৮

 

বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী ও বালিকাদের অধিক সুযোগ সৃষ্টি করতে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি বাংলাদেশের আহবান


নারী সংবাদ


বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নারী ও বালিকাদের অধিক সুযোগ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।
আজ ঢাকায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন গত ১১ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে ‘নারী ও বালিকাদের বিজ্ঞান বিষয়ক চতুর্থ আন্তর্জাতিক দিবস’ উদযাপন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে এই আহবান জানান।
জাতিসংঘ এবং এর সদস্যরাষ্ট্রসমূহ, এনজিও ও সিভিল সোসাইটি যৌথভাবে এই দিবসটি উদযাপন করে।
‘সামগ্রিক সবুজ প্রবৃদ্ধিতে নারী ও বালিকাদের জন্য বিনিয়োগের মূল্যায়ন’ বিষয়ক আলোচনায় মাসুদ বিন মোমেন আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে বালিকাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে সাফল্য এবং গত এক দশক ধরে নারী ও বালিকারা ধারাবাহিকভাবে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে।
স্থায়ী প্রতিনিধি বলেন, “কলেজ পর্যায়ে মেয়েরা প্রায় সমপর্যায়ে উঠে এসেছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ করে চিকিৎসা ও জীবন সম্বন্ধীয় বিজ্ঞানে তারা ছেলেদের থেকেও ভাল করছে।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত রেজ্যুলেশন ৭০/২১২ অনুযায়ী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ প্রতিবছর ১১ ফেব্রুয়ারিকে নারী ও বালিকাদের বিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। দিবসটি ২০১৬ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। সুত্র: বাসস।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ২


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়ার বিয়ে হয়ে গেল মাসরুরের সাথে। বিয়ের অনুষ্ঠানে মাসরুরকে দেখে মনে হচ্ছিল সে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে, কিন্তু সামিয়াকে দেখে মনে হচ্ছিল ওর আকাশের চাঁদটা কোথাও খোয়া গিয়েছে। ব্যাপারটা সবাই নববধূর স্বাভাবিক লজ্জাবোধ মনে করলেও মাসরুরের দৃষ্টি এড়ায়নি। রাতে শ্বশুরবাড়ীতে নিজের রুমে বসে ননদ মারযানের সাথে কথা বলছিল সামিয়া। মারযানের নতুন ভাবীর সম্পর্কে জানার আগ্রহের শেষ নেই। কিন্তু সামিয়াকে প্রচন্ড ক্লান্ত পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল। ভাইয়াকে ঘরে প্রবেশ করতে দেখে কেটে পড়ল মারযান। সামিয়া সচকিত হয়ে সোজা হয়ে উঠে বসল। মাসরুর ঘরের দরজা বন্ধ করতে গিয়ে সামিয়ার বিচলিত চেহারা দেখে আধখোলা রেখে দিলো। ওর মায়া হোল সামিয়ার জন্য। বেচারী না জানে বাসর রাতের ব্যাপারে কি ভয়ানক সব কথা শুনে এসেছে! সে কাছে এসে বলল, ‘সামিয়া, আমি জানি তুমি খুব ক্লান্ত, আমি নিজেও টায়ার্ড। চল আমরা জামাকাপড় বদলে এশার নামাজটা পড়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আর তুমি যদি চাও তাহলে আমরা কিছুক্ষণ গল্প করতে পারি। তুমি তো জানোই আমি গপ্পবাজ মানুষ!’

তারপর একটু ইতস্তত করে বেদনার্ত কন্ঠে বলল, ‘আর শোন, তোমার ভয় পাওয়া চেহারাটা দেখে আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি। সামিয়া, আমি কোন হিংস্র পশু নই যে সুযোগ পেয়েই শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ব। তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী, আমরা সারাজীবন একসাথে থাকব। আমরা একে অপরকে জেনে বুঝে বন্ধু হবার সময় নিই। বাকীটা যখন সময় হবে তখন দেখা যাবে’।

কাপড় বদলাতে বাথরুমে চলে যায় মাসরুর। অবাক হয় সামিয়া। মাসরুরের খোলামেলা স্বভাব দেখে প্রকৃতপক্ষে মনের গোপন কুঠুরীতে এমনই একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল সামিয়ার, কিন্তু ওর প্রকৃত মানসিকতা বুঝতে পেরে মনে মনে লজ্জাই পায় সে।

দু’জনে নামাজ পড়ে জায়নামাজে বসেই গল্প শুরু করে। মাসরুর দেয়ালে হেলান দিয়ে আরাম করে বসে, সামিয়া দুই হাঁটুর ওপর মুখ গুঁজে বসে। মাসরুর জানায় ওর বাবামা ভাই বোন কি কি পছন্দ করে, কি তাদের অপছন্দ, যেন সামিয়া তাদের বুঝতে পারে। ওর কথাবার্তায় সামিয়ার বাবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়। নিজের কথা শেষ করে মাসরুর সামিয়াকে বলে, ‘এবার তোমার ব্যাপারে কিছু বল যা আমি জানিনা’।

সামিয়া লজ্জা পায়। ওর কথা তো কেউ কখনো জানতে চায়নি! কিন্তু মাসরুরের বন্ধুসুলভ আচরনে ওর মনের কথাগুলো ভুরভুর করে বেরিয়ে আসে যা সে নিজের বাবাকেও বলতে পারেনি, ‘জানেন, আমি না স্বপ্ন দেখতাম আমি কোন দরিদ্র হতভাগা লোককে বিয়ে করব, ধরেন আবদুল্লাহ ভাইয়ের মত। তারপর আমার যত্ন দিয়ে, ভালোবাসা দিয়ে তার জীবনের সমস্ত দুঃখ কষ্ট মুছে দেব। কিন্তু আমার তাক্কদীরে ছিলেন আপনি যার কোন অভাবই নেই! আপনার সাথে বিয়ের কথা আমি কোনদিন কল্পনাই করিনি!’

‘আমার কথা তোমার কল্পনায়ও আসেনি! কেন সামিয়া?’

সামিয়া খুব স্বাভাবিকভাবেই বলল, ‘নাহ! ভাবিইনি কোনদিন। আপনার জন্য বুঝি মেয়ের অভাব হত? তাছাড়া আপনারা অনেক বড়লোক, আমরা গরীব; আপনি দেখতে ভাল, আমি খুবই সাধারন; আপনার ঝোঁক টাকার প্রতি, আমার পড়ার প্রতি- সব মিলেই ভাবিনি আমাদের বিয়ে হবার কোন সম্ভাবনা থাকতে পারে’।

মাসরুর আর কথা বাড়ালোনা, বলল, ‘অনেক রাত হয়েছে, চল শুয়ে পড়ি’।

সামিয়া জায়নামাজ ভাঁজ করে টেবিলের ওপর রেখে পেছন ফিরে দেখে মাসরুর কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও মাসরুরের দেখা নেই। একসময় সে বসা অবস্থাতেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়ল।

ঘুম ভাঙ্গলো ফজরের আজান শুনে। তখনও মাসরুরের হদিস নেই। সামিয়া বুঝে পায়না একটা লোক বিয়ের রাতে বৌকে কিছু না বলে কোথায় হাওয়া হয়ে যেতে পারে? নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ কুর’আন তিলাওয়াত করে সামিয়া। মনটা একটু শান্ত হয়ে আসে, যদিও সে জানেনা ওর বিবাহিত জীবনের প্রথম লগ্নেই এমন অদ্ভুত ঘটনা কেন ঘটছে। এমন সময় দরজা ঠেলে ঘরে ঢোকে মাসরুর, চোখেমুখে গভীর ঘুমের চিহ্ন। ওর দিকে তাকিয়ে আছে সামিয়া, কিন্তু সে মনে হোলনা খেয়াল করল। বাথরুমে ওজু করে এসে নামাজে দাঁড়াল সে। সামিয়া ভাবল নামাজ শেষ হলে কথা বলবে, মনকে শান্ত রাখার জন্য আবার কুর’আন পড়ায় মনোযোগ দিল সে। একটু পর চোখ তুলে দেখে আবার মাসরুর উধাও!

ঘুম আর নির্ঘুমের মাঝে এক অদ্ভুত অবস্থায় কাটল সামিয়ার পরবর্তী কয়েক ঘন্টা। সাতটার সময় মাসরুরের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো সামিয়ার, ‘সামিয়া, আমি জানি গত রাতে নিশ্চয়ই তোমার ভাল ঘুম হয়নি। নতুন জায়গায় গেলে প্রথম প্রথম ঘুমোতে একটু কষ্ট হয়। তবু অনুরোধ করব উঠে রান্নাঘরে যাও। মা নাস্তা বানাচ্ছেন। তোমার কিছু করতে হবেনা, মা তোমাকে কিছু করতে দেবেনও না। তুমি শুধু পাশে দাঁড়িয়ে ওনার সাথে কথাবার্তা বল। এটা তোমাদের মাঝে গুড আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরী করার একটা ভাল সুযোগ। এখন সবাই ঘুম। তোমাদের কথাবার্তায় কেউ ডিস্টার্ব করবেনা’।

সামিয়া ভালভাবে চোখ খোলার আগেই আবার মাসরুর উধাও। লোকটা বার বার যায় কোথায়?

চলবে……

 

ইডেনের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজার শ্বাসরোধে খুন


নারী সংবাদ


রাজধানীর ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের মৃত্যু শ্বাসরোধে হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডে একাধিক ব্যক্তি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের এসব দিক তুলে ধরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ময়নাতদন্ত শেষে আমরা দেখতে পাই, মৃত নারীর ঠোঁটে, মুখে, আঙুলে ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গেছে। একটা আঙুল ভাঙা ছিল। তাকে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড একজনের পক্ষে সম্ভব না। একাধিক ব্যক্তি এই হত্যার সঙ্গে জড়িত।’

আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সাংবাদিকদের ময়নাতদন্তের ব্যাপারে অবহিত করেন চিকিৎসক।

সায়েন্স ল্যাব এলাকায় সুকন্যা টাওয়ারের ১৬/সি নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন মাহফুজা চৌধুরী পারভীন। তিনি সত্তরের দশকের ছাত্রলীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহসভাপতি ইসমত কাদির গামার স্ত্রী। গতকাল রাত ৮টায় বাসা থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনার পর থেকেই ওই বাসায় কর্মরত দুই গৃহকর্মী রেশমা (৩০) ও স্বপ্না (৩৬) নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশের ধারণা, তারাই মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করে পালিয়েছে।

গতকাল রাতেই তাদের দুজনকে আসামি করে মামলা করেন ইসমত কাদির গামা। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

শিশুদের প্রতি যত্নবান হই-১


ফাতেমা শাহরিন


পরিবার হল প্রথম এবং প্রধান স্থান বাচ্চাদের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য। তাই বাচ্চাদের প্রতি যত্নশীল হওয়া চেষ্টা অবিরত প্রক্রিয়া। একটি সন্তান পৃথিবীতে আসে সুন্দর জীবনবোধ নিয়ে, পরবর্তীতে সমাজে উপযুক্ত নৈতিকতার সহিত গড়ে তোলার দায়িত্ববহন করে পরিবারের সব সদস্য। পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু টিপস,

১. চিঠি লিখুন
খুব ছোট করে হলেও বাচ্চাকে চিঠি লিখতে পারেন, আবার নিজেও চিঠি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন! এতে সে লেখার প্রতি আগ্রহ পাবে।

২. কাঁদতে দিন
হাসির মতো কান্নাও একটি স্বাভাবিক আবেগ। বাচ্চা ব্যথা পেলে বা জেদ করলে তাকে কাঁদতে দিন। জোর করে তার কান্না থামাবেন না যদি না তা খুব বেশি দীর্ঘ না হয়। ধৈর্য ধরুণ সে থেমে যাবে।

৩. টিভি & মোবাইল
টিভিতে বিশেষ কোন প্রোগ্রাম এক সাথে বসে দেখন। হতে পারে খেলা। মোবাইলে শিক্ষণীয় ভিডিও কালেক্ট করে এক সাথে দেখতে পারেন।

৪. গানের সুরে শেখানো
বাচ্চারা গানের সুরে পড়তে ভালোবাসে। এবং সহজে আয়ত্ত করে নিতে পারে। গানের সুরে কবিতা এবং কঠিন সুত্র গুলো, নামগুলো শেখাতে পারেন।

৫. ঝাঁকিয়ে বা ছুঁড়ে মারা
বাচ্চারা বড়দের মতো খুব ভাল চিন্তাভাবনা করে ভুল করে না সুতরাং সেই দুষ্টমির জন্য বাচ্চাদের গায়ে কিছু ছুঁড়ে মারা বা ঝাঁকিয়ে আঘাত করা থেকে বিরত থাকুন।

৬. পড়ানো
বাচ্চারা অনুকরণ প্রিয়। আপনি যখন পড়েন ওর বয়স উপযোগী একটি বই ওর সামনে দিতে পারেন। এতে পড়ার আগ্রহ বাড়বে।

৭. কার্টুন দেখা
শিক্ষামুলক কার্টুন ‘মিনা কার্টুন বা সিসিমপুর’ বাচ্চার সাথে বসে মাঝেমধ্যে দেখুন এবং বর্নণা করুন আপনি কি কি দেখছেন।

৮. শিশুর নাম
বাচ্চাকে তার আসল অর্থবহ নাম ধরে ডাকুন। তাকে আজেবাজে নিক নামে ডাকবে না।

রেফারেন্স:
প্যারেন্টিং বই এবং নেট

 

মানব পাচারকারী চক্রের ২ সদস্যকে আটক: তরুণী উদ্ধার


নারী সংবাদ


মানব পাচারকারী শেফালী বেগম ও মামুন – নয়া দিগন্ত

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মানব পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করেছে র্যাব-১১। আটককৃতরা হলো শেফালী বেগম (৫০) ও মামুন (৩৫)। এ সময় পাচারের শিকার ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে উদ্ধার করে র্যাব। রোববার বিকেলে র্যাব-১১ এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দীন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাব জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকায় শনিবার রাত সাড়ে ১১টায় অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যে শেফালী বেগমকে (৫০) আটক করা হয়। পরে শেফালী বেগমের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কদমতলী এলাকা হতে মামুন (৩৫) নামের মানব পাচারকারী চক্রের আরেক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।

শেফালী বেগম বেশ কয়েক বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফ্যামিলি বাসার ছদ্মবেশে পতিতাবৃত্তির ব্যবসা করে আসছে।

দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের মাধ্যমে যুবতী মেয়েদের অধিক বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নিয়ে এসে জিম্মি করে জোরপূর্বক অসামাজিক কাজে ব্যবহার করত।

গ্রেফতারকৃত মামুন তার একজন সহযোগী ও নিয়মিত খদ্দের। পরিচয়ের সূত্রে মামুন উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে অধিক বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ঢাকায় নিয়ে আসে। প্রথমে ভিকটিমকে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে রাখে।

মামুন হোটেল কক্ষে জোরপূর্বক ভিকটিমের শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। পরে চাকরি দেয়ার নামে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভিকটিমকে শেফালী বেগমের হাতে তুলে দেয়। শেফালী বেগম ভিকটিমকে তার বাসায় জিম্মি ও মারধর করে নিয়মিত অসামাজিক কাজে বাধ্য করত।

গ্রেফতারকৃত শেফালী বেগম ও মামুনের বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মানবপাচার আইনে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

ছোট ছোট বালুকণা – ১


রেহনুমা বিনত আনিস


সামিয়া ছিল একেবারেই অন্য ধাঁচের একটা মেয়ে। শিক্ষক পিতার সন্তান বলেই হয়ত ওর মাঝে পার্থিব কামনা বাসনার উর্ধ্বে স্থান পেয়েছিল মানবিকতাবোধ এবং পরোপকারের অদম্য ইচ্ছা। যেখানে ওর সহপাঠিনীরা স্বপ্ন দেখত কোন বড়লোকের ছেলেকে বিয়ে করে লন্ডন প্যারিস অ্যামেরিকা ঘুরে ঘুরে জীবন কাটিয়ে দেয়ার, সামিয়ার জীবনের লক্ষ্য ছিল এমন কাউকে বিয়ে করার যার জীবনের সকল অভাব এবং শূন্যতাবোধ সে ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দেবে। মনের সঙ্গোপনে ওর একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল ওর বাবার প্রিয় ছাত্র আবদুল্লাহ ভাইকে বিয়ে করার। ছেলেটি জীবনের কাছে কিছুই পায়নি। বাবামা ছিলোনা, মানুষ হয়েছে চাচা চাচীর কাছে। একটা বিয়ে করেছিল, বউটা মরে গেল এক বছরের মাথায়। মেধার অভাব ছিলোনা মোটেই, কিন্তু তদবীর করার কেউ ছিলোনা, সামান্য একটা চাকরী করে, চলে কোনক্রমে। ওর শার্টের ছেঁড়া পকেটটা দেখলে সামিয়ার ইচ্ছে করে সেলাই করে দিতে। ওর ঘর্মাক্ত, ক্লান্ত, বিষন্ন মুখটা দেখলে সামিয়ার বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে ওঠে, ইচ্ছে করে আঁচল দিয়ে মুছিয়ে দিতে। আবার আবদুল্লাহ যখন নামাজে দাঁড়িয়ে সুমধুর স্বরে তিলাওয়াত করে তখন ওর মনটা এক স্নিগ্ধ প্রশান্তিতে ভরে যায়। আবদুল্লাহ কখনো ওর দিকে তাকায়না, চোখ পড়লে দ্রুত চোখ নামিয়ে নেয়, কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠেনা। এতে বরং আবদুল্লাহর প্রতি ওর শ্রদ্ধা বেড়ে যায়। তবে সামিয়া নিজেও ওর বাবার ছাত্রদের সামনে তেমন আসেনা।

শুধু একজনের সাথে সে পেরে ওঠেনা – মাসরুর ভাই। এই ছাত্রটি যেমন আমুদে তেমন গপ্পবাজ। বাবা না থাকলে রান্নাঘরে এসে মায়ের সাথে গল্প জুড়ে দেয়। সামিয়া মাকে সাহায্য করতে গেলে ওর সাথেও গল্প শুরু করে দেয়, সে হুঁ হাঁ করে পালিয়ে বাঁচে। বিরাট বড়লোকের ছেলে মাসরুর। কিন্তু সেটাই তার একমাত্র পরিচয় নয়, অল্প বয়সেই সে নিজেও প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী। দেখতে সুন্দর, ভাল পোশাক আর সুগন্ধী তাকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে। সামিয়াদের বাসার সামনে মাসরুরের গাড়ী দেখলেই কিভাবে যেন পাড়ার চাচী, খালা, ফুপুরা দলে দলে তাদের মেয়ে, ভাগনী, ভাতিজিদের নিয়ে ওদের বাসায় বেড়াতে আসতে থাকে। বাসায় কাজ বাড়ে প্রচুর। তাই মাসরুরের আসাটা সামিয়ার পছন্দ নয়। বান্ধবীরা বলে, ‘আহা, উনি আমাদের বাসায় এলে আমরা ধন্য হয়ে যেতাম! তুই একটা নিরামিষ’।

একদিন বিকালে মাসরুর বেড়াতে এসেছে ওর মা বাবাকে নিয়ে। মেহমান দেখেই সামিয়া রান্নাঘরে ছুটলো মাকে সাহায্য করতে। গিয়ে দেখে মা ফ্রিজ থেকে সেমাই, মিষ্টি, দই ইত্যাদি বের করছেন। বুঝলো মাসরুর মাকে আগে জানিয়েছে। যাক, লোকটার কিছু হুঁশজ্ঞান আছে তাহলে! সামিয়াকে দেখে মা বললেন, ‘তুই একটা ভাল কিছু পর, মাসরুরের আম্মাকে ভিতরের ঘরে নিয়ে বসাই। আর শোন, সাইফ সাইদকে বল বাসায় মেহমান এসেছে, সামনের ঘরে গিয়ে বসতে’।

সামিয়া আঁতকে উঠে বলে, ‘ও মাগো! আমি ভাইয়াদের কিছু বলতে পারবনা। ওরা দু’জনই পড়ছে, কিছু বলতে গেলে হত্যাকান্ড হয়ে যাবে! বসার ঘরে আব্বুর গলা শুনেছি, ওদের যেতে হবেনা। ’

মা জোর দিয়ে বললেন, ‘বল, আমি বলেছি সামনের ঘরে যেতে, কিছু বলবেনা’।

বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডটার ধড়াস ধড়াস শব্দ যেন কানে শুনতে পাচ্ছে সামিয়া। দুই ভাই মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। সে দরজায় দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সাহস করে বলে ফেলল, ‘ভাইয়া, মা বলেছে ঘরে মেহমান এসেছে, সামনের ঘরে যেতে’। চোখ খুলে দেখে সাইদ আয়নার সামনে চুলে চিরুনী বুলাচ্ছে, সাইফ পাশে দিয়ে যেতে যেতে মাথায় হাত বুলিয়ে ওর চুলগুলো এলোমেলো করে দিলো। যাক, তবু বকা তো দেয়নি!

নিজের ঘরে গিয়ে কাঠের আলমারিটা খুলল সামিয়া। এককালে এটা ওর দাদীর ছিল, এখন এটা ওর সম্পত্তির আধার। আলমারীর অর্ধেকটা জুড়ে বই। বাকীটায় ক’খানা জামাকাপড় আর কিছু ইমিটেশনের গহনা, নিজের আঁকা কিছু ছবি আর কিছু ডায়রী যার পাতায় পাতায় ওর লেখা কবিতা। গতকাল যে জামাটা নাবিহার বাসায় পরে গেছিল সে জামাটা ভাঁজ করা হয়ে ওঠেনি, ওটাই গায়ে চাপিয়ে নিলো সে। কাপড় বদলে রুমের দরজা খুলতেই দেখে মাসরুরের মাকে নিয়ে আম্মু হাজির। সালাম দিয়ে ওনাকে বিছানায় বসার ব্যাবস্থা করে দিয়ে চলে যাচ্ছিল সামিয়া, মা ডেকে বললেন, ‘তুই ওনার সাথে গল্প কর, আমি নাস্তা দিয়ে আসছি’।

সামিয়া বলল, ‘আমি ভাইয়াদের দিয়ে সামনের ঘরে নাস্তা পাঠিয়ে দিচ্ছি, তুমি ওনার সাথে বোস’।

কিন্তু মা ওকে বসিয়ে রেখে চলে গেলেন। সামিয়া মাসরুরের মায়ের সাথে কি কথা বলবে? উনি নানারকম কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, কি পড় কি কর জাতীয়,যা সচরাচর মুরুব্বীরা জিজ্ঞেস করে থাকেন, সে উত্তর দিয়ে গেল।

খাওয়া দাওয়া গল্পগুজব শেষ, মেহমান চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বাবা এসে সামিয়াকে ডাকলেন, ‘মা, কি করিস?’

‘কিছু না আব্বু, পড়তে বসব’।

‘আচ্ছা। আগে চল তোর সাথে কিছু কথা বলি। তুই এখানে আমার সামনে বস’।

বাবাকে বিছানায় বসতে দেখে সামিয়া সামনে দাঁড়িয়ে রইল। বাবা ওকে হাত ধরে পাশে বসালেন।

‘শোন মা, মেয়ে বড় হলে বাবামায়ের চিন্তার অন্ত থাকেনা – একটা ভাল ছেলে পাব তো? শ্বশুরবাড়ীতে মেয়েটাকে আদর যত্ন করবে তো? মেয়েটা ভাল থাকবে তো? আল্লাহ আমাদের চিন্তা শুরু করার আগেই সেই চিন্তা থেকে মুক্তি দিলেন। মাসরুরের আগে ওর বাবা আমার ছাত্র ছিল। তখন আমি মাত্র শিক্ষকতা শুরু করেছি। সে ছিল আমার বছর চারেকের ছোট। ওর বিয়ে, মাসরুরের জন্ম সব আমার চোখের সামনে। ওর মা খুব ভাল মেয়ে রে। আজ ওরা যখন মাসরুরের জন্য তোকে চাইল আমি তোর সাথে কথা না বলেই হ্যাঁ করে দিলাম। তোর মা, সাইফ, সাইদ সবাই খুশি। কি রে মা? আমরা তোকে জিজ্ঞেস না করেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম বলে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিস?’

সামিয়ার পাংশুটে মুখ দেখে বাবা ভাবলেন ওর সাথে আলাপ না করেই সিদ্ধান্ত দেয়ায় সে মর্মাহত হয়েছে। কিন্তু তিনি বুঝলেন না ঐ মূহূর্তে সামিয়ার সারা জীবনের লালিত স্বপ্ন ধূলিস্যাত হয়ে গেল, সে তো রাজরানী হতে চায়নি কখনো, চেয়েছিল ঘুঁটেকুড়ানী হতে! কিন্তু ওর ভুল হয়েছিল এই ভেবে যে পরিবারের সবাই ওর মত করে ভাববে। কিন্তু ওদেরই বা দোষ কোথায়? যার জন্য ঘুঁটেকুড়ানী হতে পারে তেমন কেউ তো আজও আসেনি! রাজা রানী যদি যেচে রাজপুত্রের জন্য ঘুঁটেকুড়ানীকে নিতে চায় তাহলে কোন স্বাভাবিক পরিবার কোন যুক্তিতে মানা করবে? সে জানে মাসরুরের বাবা মা ওর বাবার প্রতি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতাবশত ওকে বৌ করে নিতে চেয়েছেন, নইলে আর্থিক এবং সামাজিক দিক থেকে ওদের পার্থক্য আকাশ পাতাল। কিন্তু যে মাসরুরের জন্য দুনিয়ার সুন্দরী মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে সে কেন ওকে বিয়ে করতে রাজী হোল সেটা কিছুতেই ওর মাথায় এলোনা।

‘কি মা, কিছু বলবিনা?’

বাস্তবতায় ফিরে এলো সামিয়া। মাথা নাড়লো, ‘তোমরা যা ভাল মনে কর আব্বু’।

…..(চলবে)

 

করি পুষ্প রে বিকশিত-৪

আফরোজা হাসান


নাস্তা করা শেষ হলে বাচ্চাদেরকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে বের হলো অন্তরা আর নায়লা। বাচ্চাদেরকে খেলা করতে বলে দুজন এক পাশে গিয়ে বসলো। ছুটোছুটি করে খেলতে থাকা বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে নায়লা হেসে বলল, যখনই বাচ্চাদেরকে নিয়ে পার্কে আসি খুব ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছে করে জানো? নিজের ছোটবেলাটাকে তখন খুব মনে পড়ে। কত ধরণের খেলা খেলেছি আমরা। আর আমাদের বাচ্চারা খেলা বলতে বোঝে নানা ধরণের ইলেক্ট্রনিক্স গেমস। যান্ত্রিকতা বাচ্চাদের মধ্যে আনন্দ, উচ্ছ্বাসকে কেমন যেন হ্রাস করে দিচ্ছে দিনকে দিন, তাই না?

অন্তরা বলল, বাচ্চাদের মধ্যে যাতে আনন্দ, উচ্ছ্বাস অক্ষুণ্ণ থাকে সেই দায়িত্ব বাবা-মাকেই পালন করতে হয়। আর তুমি যেভাবে ওদেরকে বড় করছো তা কিন্তু মুগ্ধ হবার মত। তুমি তোমার সবটা সময় বাচ্চাদের পিছনেই ব্যয় করো। আমি তো যখনই তোমাকে দেখি অনুভব করি তাশফিনকে আরো সময় দেয়া প্রয়োজন আমার।

এত ব্যস্ততার পরও তুমি ছেলেকে অনেক সুন্দর ভাবে বড় করেছো। অবশ্য তোমার তাশফিন তো এমনিতেই সবকিছু বোঝে। যে সুন্দর করে যুক্তি দেয়, মাশাআল্লাহ। আমার গুলোর মত হলে পাগল হয়ে যেতে।

অন্তরা হেসে বলল, তাশফিনের কর্মকান্ড তুমি দেখো না তাই এভাবে ভাবছো। মাছের কাঁটার কথাই ধরো। ওর কান্না বন্ধ করার জন্য আমি হাদিসটা বলেছিলাম। সাথে সাথে কাজও হয়েছিল। কিন্তু কয়েকদিন পর তাশফিন ইচ্ছে করে মাছের কাঁটা গলায় বাঁধিয়েছিল গোনাহ মাফ হবে সেজন্য। শুধু তাই না বাগানে গিয়ে গায়ে গোলাপের কাঁটার খোঁচা লাগাতো, ক্যাকটাসের খোঁচা লাগাতো। এরপর যখন বুঝিয়ে বললাম যে, নিজেই নিজেকে কষ্ট দিলে আল্লাহ গোনাহ তো মাফ করবেনই না উল্টো তোমার উপর আরো বিরক্ত হবেন, তখন গিয়ে এসব বন্ধ করেছে।

নায়লা হাসতে হাসতে বলল, আমি তো আরো মনেকরি তাশফিন তোমাকে একদম যন্ত্রণা করে না। যা বলো সবই বুঝে নিতে দেখি তো তাশফিনকে।

অন্তরা হেসে বলল, এমনিতে তো আর সব বোঝে না ভাবী। সারাটা ক্ষণ কিভাবে প্রশ্ন করতে থাকে সেটা তো দেখোই। যদিও বাচ্চাদের প্রশ্ন করার স্বভাবটা খুবই ভালো। এতে ওদের মনে কি ভাবনা চিন্তা চলছে সেটা জানা যায়। বুঝিয়ে বলে দেয়া সম্ভব হয় সবকিছু। এখনো আমার মনেআছে যখন চাইল্ড সাইকোলজির উপর কোর্স করেছিলাম প্রফ ক্লাসে ঢুকে বলেছিলেন, তোমরা কি তৈরি এই পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত, সবচেয়ে বুদ্ধিমান, সবচেয়ে চিন্তাশীল প্রাণীটির নতুন প্রজন্মকে জানা-বোঝা ও চেনার জন্য? তাদের মনের রাজ্যে অবাধ বিচরণের জন্য? তাদের কল্পনার রাজ্যে হাবুডুবু খাওয়ার জন্য? তাদের সাথে আকাশে উড়ার জন্য? খন্ড খন্ড মেঘের উপর লাফিয়ে লাফিয়ে চলার জন্য? ছোট্ট থেকে ছোট্ট বিষয়ে বিস্ময়ে বিকশিত হবার জন্য? প্রশ্ন বিশারদ হয়ে যাবার জন্য? এই যেমন, পাখী কেন উড়ে, ফুল কেন ফোটে, প্রজাপতি কেন এত রঙিন? আমার কেন ডানা নেই? দাদুর কেন দাঁত নেই? বাবা কেন রোজ অফিসে যায়? ধূর ছাই সব্জি কেন খেতে গোশতের মত লাগে না? আচ্ছা দিদার চামড়াকে প্রেস করে দিলে কি কুঁচকানো ভাব কেটে যাবে?

হেসে ফেললো নায়লা। বাহ! বেশ মজার ছিলেন তো তোমাদের প্রফ।

 

চলবে…

 

গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ


নারী সংবাদ


তিনজনকে আসামি করে মামলা।
পানি দিতে দেরী হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে গৃহবধূ শিল্পী আক্তারকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ভোররাতে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জের চরভূতা এলাকা থেকে ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। নিহত গৃহবধূ কুমিল্লার লালমাই উপজেলার আবদুল জব্বারের মেয়ে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমির হোসেন বাদী হয়ে গৃহবধূর দেবর নিরব হোসেন, শ্বশুর মোসলেম মিয়া ও শাশুড়িসহ তিনজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সকালে সদর থানায় এ মামলা দায়ের করেন তিনি। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে সবাই।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. লোকমান হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনায় তিনজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আসামি সবাই পলাতক রয়েছে। তাদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

ওরস্যালাইন বানানো নিয়ে কিছু কথা


ডা. মারুফ রায়হান খান


আজকে একজন ডাক্তার সাহেবের স্টেটাস মারফত জানতে পারলাম তার কাছে আসা এক ছোট্ট শিশু মারা গেছে। কারণ কী? অনুসন্ধান করে জানা গেলো শিশুটির ডায়রিয়া হয়েছিল। মা ওরস্যালাইন খাবার যে নিয়মটি তা জানতেন না অথবা মানেননি। ফলে শিশুটির শরীরের লবণের মাত্রা ভীষণ রকমের বেড়ে যায় এবং অবধারিতভাবে মারা যায়। একটি ফুটফুটে শিশুর জীবনবাতি চিরতরে নিভে গেলো।

একটা ছোট্ট শিশু পৃথিবীর কোনোকিছু বোঝে না, তার লালন-পালনের সমস্ত দায়িত্ব পালন করে তার মা-বাবা। ফলে একজন মা কিংবা বাবার কিন্তু কিছু প্রিলিমিনারি জ্ঞান থাকা প্রয়োজন শিশুর লালন-পালন সম্পর্কে এবং অতি অবশ্যই শিশুর স্বাস্থ্য সম্পর্কে। আমি কোনোভাবেই বলব না এই মা’টির ভালোবাসা, স্নেহ বা ডেইডিকেশানের কোনো অভাব ছিল তবে খুব সম্ভবত জ্ঞান বা সচেতনতার অভাব ছিল। যদিও জীবন-মৃত্যু সবকিছু আল্লাহর ইশারায় হয়, তবুও বোধহয় তিনি নিজেকে কিছুটা অপরাধী ভাববেন।

আসলে ঘটনাটা কী হয়েছে। সবার বোঝার জন্যে খুব সিম্পলিফাই করে বলা যাক। ওরাল রিহাইড্রেশান সল্টের (যাকে পানিতে মেশানোর পর আমরা স্যালাইন বলছি) মধ্যে থাকে লবণ অর্থাৎ সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম ক্লোরাইড, থাকে গ্লুকোজ এবং ট্রাইসোডিয়াম সাইট্রেট৷ নিয়ম হচ্ছে আমাদের যে স্যালাইনের প্যাকেটটি পাওয়া যায় তা হাফ লিটার পানির মধ্যে মিশিয়ে খাওয়তে হয়। এখন কেউ যদি এরচেয়ে অল্প পানিতে মিশিয়ে খাওয়ায় তাহলে কী হবে? শরীরে লবণের মাত্রা বেড়ে যাবে অনেক বেশি। এর প্রভাবে কোষ থেকে পানি বেরিয়ে আসবে, বিশেষ করে ব্রেইনের। কোষগুলো নষ্ট হবে। এবং তা থেকে মৃত্যু হওয়া অস্বাভাবিক না৷ যেমনটি হয়েছে এই শিশুর ক্ষেত্রে। সোডিয়াম ক্লোরাইডে রক্তে থাকার কথা ১৩৫-১৪৫ মিলিমোল/লিটার, সেখানে শিশুটির হয়ে গিয়েছিল ১৬৫ মিলিমোল/লিটার! তার মা না কি একটু একটু করে সল্ট নিয়ে একটু একটু করে পানিতে মেশাচ্ছিলেন৷ ফলে লবণ পানির যে রেশিওটি মেইন্টেইন করার কথা ছিল তা সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন : তাহলে স্যালাইন কীভাবে বানাতে হবে?

উত্তর : হাফ লিটার পানি নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় হাফ লিটারের একটা বোতল দিয়ে মেপে নিলে। এবার পুরো প্যাকেটটির সবটুকু ঢেলে দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে৷ এরপর পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে।

প্রশ্ন : কী ধরনের পানির সাথে মেশাব? ডিসটিলড ওয়াটার না কি আমরা যে পানি খাই সেটা?

উত্তর : আমরা রেগুলার যে ট্যাপ ওয়াটার খাই সেটাই ব্যবহার করব; ডিসটিলড ওয়াটার না। কারণ সে পানিতে বেশ কিছু মিনারেল আছে। ডায়রিয়ার সাথে মিনারেল বেরিয়ে যায় শরীর থেকে।

প্রশ্ন : একটু একটু করে সল্ট পানির সাথে মেশালে হবে না?

উত্তর : না, হবে না। লবণের তুলনায় পানি কম-বেশি হয়ে উপরের কেইসের মতো ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তাই পুরোটা একসাথেই বানাতে হবে।

প্রশ্ন : স্যালাইন বানিয়ে কতোক্ষণ রাখা যাবে?

উত্তর : ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত খাওয়ানো যাবে।

প্রশ্ন : ১২ ঘণ্টা পর স্যালাইন রয়ে গেলে সেটা কী করব?

উত্তর : ফেলে দিতে হবে।

প্রশ্ন : টাকা দিয়ে কিনেছি নষ্ট কেন করব?

উত্তর : এটা নষ্ট করা না। এরমধ্যে গ্লুকোজ থাকে। যে পানিতে গ্লুকোজ থাকে তা জীবাণু বেড়ে ওঠার জন্যে একটা চমৎকার মিডিয়া হিসেবে কাজ করে। আর ১২ ঘণ্টা পর সেখানে জীবাণুর সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা খুব বেশি। এই স্যালাইন খাওয়ালে শরীরে জীবাণুর সংক্রমণ হতে পারে।

প্রশ্ন : গ্লুকোজ যখন খারাপই, তাহলে এখানে গ্লুকোজ দেবারই বা কী দরকার ছিল?

উত্তর : একটা মানুষের যখন বারবার লুজ স্টুল পাস হতে থাকে, সে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। এই গ্লুকোজ তাকে এনার্জি দেয়। তাছাড়া ডায়রিয়ার সময় প্রচুর লবণ বেরিয়ে যায় শরীর থেকে, এখন স্যালাইনের মধ্যে যে লবণ (সোডিয়াম) থাকে তা কোষের ভেতরে ঢোকাতে গ্লুকোজের সহায়তা লাগে।

প্রশ্ন : এতো যখন ঝামেলা তো স্যালাইন বারবার খাওয়াবার দরকার কী? শুনেছি বাজারে ইমোটিল নামে একটা ওষুধ পাওয়া যায় সেটা খেলে না কি ডায়রিয়া বন্ধ হয়ে যায়? সেটা খাইয়ে দিই?

উত্তর : না। ২০ বারের বেশি ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকরা এটা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এই ওষুধটার কিছু সমস্যা আছে। ডায়রিয়ার সাথে শরীরের বিষাক্ত পদার্থ/জীবাণুগুলো বেরিয়ে যায়, এখন আমরা যদি এই ওষুধ দিই তাহলে স্টুল পাস হওয়াই বন্ধ হয়ে যাবে৷ ফলে সেগুলো শরীর থেকে বের হবে না, যা ক্ষতিকর। এছাড়া ছোট বাচ্চাদের ক্ষুদ্রান্ত্রের মুভমেন্ট বন্ধ করে দিয়ে ‘প্যারালাইটিক আইলিয়াস’-এর মতো ভয়াবহ অবস্থা করতে পারে।

আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন সবসময়। মনে রাখবেন আপনার চিকিৎসক আপনার আপনজন। তিনি কোনোভাবেই চান না তার রোগী খারাপের দিকে যাক। এটা তার জন্যে গ্লানিকর। না জানা দোষের কিছু না, জানতে চেষ্টা না করা দোষের কিছু হবার সম্ভাবনা বেশি। আমাদের আপনজনদের জানানো আমাদেরই দায়িত্ব।

ডা. মারুফ রায়হান খান
লেকচারার, ডিপার্টমেন্ট অফ ফার্মাকোলজি
এনাম মেডিকেল কলেজ

 

মেহেদী রং না মুছতেই লাশ নববধূ, স্বামী আটক


নারী সংবাদ


হাতের মেহেদী রং এখনো রয়েছে তাজা। স্বপ্ন ছিল স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসারে বসবাস করবে। কিন্তু সেই আশা চুরমার করে দিয়ে বিয়ের এক মাসের মাথায় দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলো এক নববধূ। নিহত নববধূর নাম নাঈমা আক্তার(২১)।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন বাজার এলাকার হান্নান মিয়ার ভাড়া বাসা থেকে নাঈমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় নববধূ নাঈমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। পরে পুলিশ নাঈমার লাশ উদ্ধার ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় নিহত নাঈমার স্বামী শহিদুল ইসলামকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা গেছে, মাসখানেক পূর্বে বাগেরহাট জেলার দেলোয়ারের কন্যা নাঈমা আক্তারকে বিয়ে করেন খুলনা জেলার রূপসা থানার তালিমপুরের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম। বিয়ের পর সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন বাজার এলাকায় ছোটভাই আমিনুল ইসলামের বাসায় স্ত্রী নাঈমাকে নিয়ে বসবাস করছিল সে। বৃহস্পতিবার সকালে খাবারের জন্য আমিনুল ইসলামের স্ত্রী খাদিজা বেগম ডাক দিতে গেলে হাত, মুখ ও পা বাঁধা অবস্থায় ঘরের আড়ার সাথে নাঈমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায়।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম জানান, ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী শহিদুল নববধূ নাঈমাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখে। তবে ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাবে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোঃ শাহীন শাহ্ পারভেজ বলেন, গৃহবধূ নাঈমার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা তা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। তবে এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্বামীকে থানায় আনা হয়েছে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

 

চৌগাছায় স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা


নারী সংবাদ


যশোরের চৌগাছায় এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। নিহত স্কুলছাত্রীর নাম আখি আক্তার (১৩)। নিহত আখি খুলনা জেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের প্রবাসি নজরুল ইসলামের কন্যা এবং চৌগাছা ছারা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ছাত্রী। নিহত স্কুল ছাত্রী আখি চৌগাছায় বড় বোন তামান্না ইয়াসমিনের বাসায় থেকে লেখাপড়া করতো।

জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যায় স্কুলছাত্রী আখির মা পারিবারিক কলহের কারণে মোবাইল ফোনে তাকে বকাঝকা করে। এতে মায়ের ওপর অভিমান করে সিলিং ফ্যানের সাথে গালায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে আখি। স্থানীয় লোকজন বুঝতে পেরে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তাকে উদ্ধার করে চৌগাছা মডেল সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ব্যাপারে নিহত স্কুলছাত্রীর নানা রুহুল আমিন জানান, কি নিয়ে মায়ের সাথে আখির মোবাইলে ঝগড়া হয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে দুপুরের পরে বাসায় কেউ ছিল না। সে সময় সে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দেয়। বুঝতে পেরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চৌগাছা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই রবিউল ইসলাম এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে চৌগাছা থানার পুলিশ মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে। মঙ্গলবার মেয়েটির পরিবারের লোকজন তাদের কোনো অভিযোগ নেই, মর্মে থানায় লিখিত দিয়ে লাশ নিয়ে গেছে।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বয়স হার মেনেছে বৃদ্ধা মালঞ্চির জীবন সংগ্রামের কাছে


নারী সংবাদ


বর্তমানে বাংলাদেশের লোক সংখ্যা সাড়ে ষোল কোটির উপড়ে। যার মধ্যে ৬ দশমিক শতাংশের বয়স ৬০ বছরের ওপড়ে। বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি যখন ৫৫ কিংবা ৫৭ বছরে পা রাখেন তখন তাঁকে সাধারণত প্রবীণ কিংবা বৃদ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হয়। কর্মক্ষম থাকলেও তাকে চাকরি এবং কাজ থেকে অব্যাহত দেয়া হয়। অনেক সময়ই তিনি কাজ করতে চাইলেও তাকে কাজে নেয়া হয় না। যে কারণে বৃদ্ধ বয়সে একজন মানুষের ভরসার পাত্র হয় তার সন্তান। তবে এ ক্ষেত্রে সমাজে গরীব মানুষের বেলায় ঘটে ভিন্ন কিছু। গরীবদের বেলায় কিছু কিছু সন্তানের নিষ্ঠুরতার কাছে মানবিকতা হার মানে। হার মানে অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা। কারও নতুন ঠিকানা হয় বৃদ্ধাশ্রম। গরীবদের বেলায় কারও ঠাঁই মেলে রাস্তার ফুটপাতে। আবার কেহ কেহ সন্তানের ধিক্কার এবং নিষ্ঠুরতার কাছে না হেরে নিজেরাই নিজেদের বাকি জীবনটাকে নতুনভাবে গোছাতে শুরু করে। কেহ কেহ সফল হয়। তাদেরই একজন ৬৬ বছর বয়সী মালঞ্চি । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মালঞ্চি বেশ পরিচিত মুখ।
চারুকলা অনুষদের সামনে একটি বড় কাঠের বাক্সে চুড়ি নিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় তাকে। প্রায় ১৮ বছর ধরে চুড়ির ব্যবসা করছেন মালঞ্চি। স্বামী, তিন ছেলে এবং দুই মেয়েকে নিয়ে ছিল মালঞ্চির সংসার। অভাব অনটনের কারণে তিন ছেলেকে অষ্টম শ্রেণীর পর আর পড়াতে পারেননি তিনি। সংসারের টানাপোড়নের মধ্যেই তিনি তার ছেলে মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। এরপর মালঞ্চি এবং তার স্বামীর জীবন অনাকাঙ্খিত মোড় নেয়। তাদের ছেলে-মেয়ে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে দেখাশোনা করতে চাইতো না তারা। তখন মালঞ্চি এবং তার স্বামীকে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হতে হয়। এই বুড়ো-বুড়ি আলাদা একটি বস্তিতে থাকা শুরু করল। হাতে যে শেষ সম্বল নিয়ে তারা বের হয়েছিলেন তাও শেষ হবার পথে। পূর্ব থেকেই মালঞ্চির সংসারে অভাব-অনটন ছিল। তবে বুড়ো বয়সে সন্তানের সেবা পাবেন সেই আশায় ছিলেন তারা। তাদের আশা ছিল, ‘আমগো ছাওয়াল এই বুড়া-বুড়ীরে দেখব। জীবনে বড় কিছু হইব’। কিন্তু এই আশা যখন ভেঙ্গে গেল তখন তারা চোখের সামনে সরষে ফুল দেখতে লাগলেন। পরবর্তীতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘আবার সংসারের হাল ধরন লাগব। এমনে বয়সের দোহাই দিয়া বইসা থাকলে চলবো না। আল্লাহ্ দিলে অহনও শরীরে যে শক্তি আছে কাজ কাম কইরা খাইতে পারমু’। চুড়ির ব্যবসা শুরু করার নিদ্ধান্ত নিলেন মালঞ্চি। কিন্তু তাদের এই সিদ্ধান্তে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়ায় মূলধনের অভাব। তিনি বললেন, ‘ঐ সময় খাওনের পর্যন্ত টেকা আছিল না। কিন্তু একটা কাজ শুরু করন লাগব। আমার জামাই(স্বামী)তখন রিক্সা চালাইত। কিন্তু বুড়া মানুষটার কষ্ট বেশি হইত। বেশি একটা আয়-রোজগারও হইত না। পরে আল্লাহর নাম নিয়া নামলাম এই ব্যবসায়ে। মাইনষের থেইক্কা সাত হাজার টেকা ধার নিয়া শুরু করছিলাম’।
ব্যবসায়ী হিসেবে মালঞ্চিকে বেশ দূরদর্শী বলা যেতে পারে। তিনি ব্যবসায়ের জন্য এমন স্থান বেছে নিলেন যেখানে হরহামেশা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের আনাগোনা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গন হওয়ায় বেচা-কেনাও ভাল হয়। এখানে কোন প্রকার সমস্যারও সমুখীন হতে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এহানের পোলাপানগুলাই আমার মাইয়া, হ্যারাই আমার পোলা। আমার কোন সমস্যা হইলে এরাই আমার দেখভাল করে। এই শীতে আমি যহন কম্বল চাইছি তহনই দিছে। এত বছর হইয়া গেলো এরা কেউ আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনাই।’ তিনি ৪০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা দামের চুরি বিক্রি করেন। তাঁর দৈনিক এক থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়। প্রথম দুই বছর কোন লাভের মুখ দেখতে পাননি মালঞ্চি। তিনি তার ব্যবসার মালামাল আনতেন চকবাজার থেকে বাকিতে। মাস শেষে যে আয় হত তা পাওনা পরিশোধ করতেই ফুঁড়িয়ে যেত। তবে পরবর্তীতে মালঞ্চি তার দক্ষতা এবং একাগ্রতার মাধ্যমে সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। বর্তমানে তার এই ব্যবসা থেকে যা লাভ হয় তা দিয়ে এই বুড়ো-বুড়ীর সংসার চলছে। মালঞ্চির বয়স প্রায় ৬৬। এই বয়সেও তিনি যেভাবে এই ব্যবসা অকপটে চালিয়ে যাচ্ছেন তা আমাদের সমাজের মানুষের জন্য একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি প্রমাণ করেছেনÑ বয়স তো একটি সংখ্যা মাত্র। মনোবল থকালে একটি মানুষের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব।
কেবলমাত্র মালঞ্চি নন, আমাদের দেশে অনেক গরীব মানুষ আছেন যারা পরের কাছে হাত না পেতে পরিশ্রম করে নিজেদের সংসার চালান। এমন কাজ সত্যিই অনুকরণীয়। সুত্র: আবিদা হক লোরা (বাসস)

 

এক ধনী মহিলার গল্প


সাহিত্য


একবার এক ধনী মুসলিম মহিলার সাথে আমার আজব এক কথোপকথন হয়েছিল। আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্যে যার নাম আমি বলবো না, একটি প্রোগ্রামে আলোচনার পর আমাকে রাতের খাবার খেতে এক বাসায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর সেটি ছিল ১৫ হাজার বর্গ ফুটের বিশাল এক প্রাসাদ। আমি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার সময় বাড়ির সৌন্দর্য দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কে এই এল-ক্যাপনের (আমেরিকার এক বিখ্যাত গ্যাংষ্টার) বাড়িতে বাস করে!!! তারপর আমরা ম্যানশনে প্রবেশ করলাম। আমাদেরকে ডিনার পরিবেশন করা হয়েছিল কিং আর্থারের টেবিলের মত প্রকান্ড এক টেবিলে। সম্ভবত টেবিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কথা পৌঁছাতে হলে মাইক্রোফোনের প্রয়োজন হবে, এত লম্বা এক টেবিল!

যাইহোক, আমরা সবাই এক পাশে বসে খাবার খেলাম। তারপর কথা-বার্তা বলতে লাগলাম। বাড়ির কর্তী বললো – “আমার একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন আছে।” আমি বললাম – “ঠিকাছে, বলুন।” তিনি বললেন – “না, আমি সবার সামনে এটা বলতে পারবো না।” তখন আমি অন্য সবাইকে বললাম – “আপনারা টেবিলের অপর প্রান্তে গিয়ে বসুন, (যার অবস্থান ভিন্ন আরেকটি জিপ কোডে 🙂 ) যেন আমি তার সাথে কথা বলতে পারি।” সবাই দূরে গিয়ে বসলো।

তারপর ঐ মহিলা বললেন – “আমি জানি, আমাদের সবাইকে মরতে হবে, এবং কিয়ামতের দিন উঠতে হবে….কিন্তু আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাই না।”

তাদের লিভিং রুমের আয়তন হবে এই মসজিদের আয়তনের মত। পেছনে রয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা, প্রায় সব ওয়ালে গ্লাস লাগানো। তাদের বাসার ভেতরের সিঁড়িটি ছিল অসম্ভব সুন্দর মার্বেল পাথরে ঝড়ানো, দেখে মনে হয় যেন উপর থেকে সিল্ক গড়িয়ে পড়ছে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি এটা আসলে কী? পরে বুঝতে পেরে চমৎকৃত হয়ে গেলাম। তারা আমাকে জানালো, বাড়িতে ২৭ টি বেড রুম রয়েছে। আমি ভাবলাম – ঘুমান তো এক রুমে, বাকিগুলো দিয়ে কী করেন।

কিন্তু ঐ মহিলা ম্যানসনটি নিয়ে এতো বেশি আচ্ছন্ন এবং সম্মোহিত…. প্রতিটি ফার্নিচার সে অনেক যত্ন করে কিনেছে। তাই সে বললো – “আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাই না, আমি এখন কী করি?” আমি বললাম – “আপনার যা ইচ্ছা করতে পারেন, কিন্তু আপনাকে এটা একদিন ছাড়তেই হবে। দুঃখিত, আপনার এ ক্ষেত্রে কিছু করার নেই। “

এই দুনিয়াতে এমন অনেক জিনিস আছে যা আমাদেরকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। আমাদেরকে এই বিষয়টা হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। এমনকি এই শরীরও একদিন ছেড়ে দিতে হবে। আল্লাহ আমাদেরকে নতুন শরীর দিবেন। যখন আপনি এটা উপলব্ধি করতে পারবেন তখন আপনি আর এমনসব বিষয় নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না, যা এক সময় এমনিতেই ছেড়ে দিতে হবে। এটাই বাস্তবতা। আপনি তখন আর আপনার শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না। গাড়ি নিয়ে, বাড়ি নিয়ে বা জামা-কাপড় নিয়ে আর আচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন না।

এসব বিষয় ভোগ করতে পারেন, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এসব জিনিস আপনার জীবনের সবকিছু হয়ে পড়া উচিত নয়। অনেকেই বাসা থেকে বের হওয়ার পূর্বে আয়নাতে তাদের কেমন দেখায় সেটাতে অনেক মনোযোগ এবং গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আপনি এ সম্পর্কে যা ইচ্ছা বলতে পারেন, কিন্তু আপনার কাজ বলে দিচ্ছে আপনার প্রায়রিটি কোথায়। আমি বলছি না যে, আপনি শরীরের যত্ন নিবেন না, দাঁত ব্রাশ করবেন না, শুধু পরকাল নিয়ে পড়ে থাকবেন….আমি এটা বলছি না। আপনি অবশ্যই শরীরের যত্ন নিবেন…..কিন্তু আপনার জীবন যদি মুভি, ভিডিও গেইমস, শারীরিক সৌন্দর্য, আর বিনোদনে আবর্তিত হতে থাকে এবং আপনার আচরণ দেখে মনে হয় যেন এসব জিনিস চিরকাল থাকবে …তাহলেই সেটা সমস্যাপূর্ণ। কিয়ামতের দিন আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন কিসব জিনিস আপনি সামনে প্রেরণ করেছেন আর কিসব জিনিস পেছনে ফেলে এসেছেন।

[সূরা ইনফিতারের ৫ নাম্বার আয়াত – عَلِمَتْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ وَأَخَّرَتْ – “তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কি অগ্রে প্রেরণ করেছে এবং কি পশ্চাতে ছেড়ে এসেছে।” আয়াতের আলোচনায় উস্তাদ নোমান আলী খান।]

সংগৃহীত

 

হারিয়ে ফেলা পরিচয়

কানিজ ফাতিমা

প্রকৃতিতে আমার কোনো ক্লান্তি নাই, ঘন্টা কেন, দিনের পর দিন একই দৃশ্যে তাকিয়ে থেকেও চোখ ফেরেনা আমার। কেউ হয়ত ভাববে, কি দেখে এত চেয়ে চেয়ে ? নিরত দু’চোখ মেলে পথের ধারের বনফুল দেখি,ছোট্ট ডোবায় হাসের নিস্তব্দ ভেসে যাওয়া দেখি, আকাশের মেঘ দেখি- সাদা মেঘ, ধুসর মেঘ, ঘন মেঘ, তুলির ছোপ মেঘ আর চপলা মেঘ – ক্লান্তিরা কখন ক্লান্ত হয়ে ফিরে যায় আমার অক্লান্ত চেয়ে থাকা দেখে। সাদা কয়েকটা মেঘের টুকরায় এত দেখার কি আছে ? আমার আছে। একটা কালো পাখির লেজ দোলানো, গাছের ডালে মৃদু-মন্দ বাতাসে পলকা বরফের ঝুর ঝুর ঝরে পরা, শীতের বাতাসে শুকনো পাতার ফুরুত ফুরুত ওড়া, পথিকের হেটে যাওয়া, হাত নাড়ানো, স্কুলের সামনের গাছটার সোজা উপরের দিকে উঠতে উঠতে হতাঠ বেঁকে যাওয়া, গাড়ীর দরজা খুলে একজন মহিলার বের হয়ে আসা – এসব সাধারণ দৃশ্যেও আমার বিস্তর আগ্রহ। সিনেমা দেখে, গল্প করে, আড্ডা দিয়ে আমার বিনোদনের দরকার হয় না, চারপাশই আমার বিনোদনের উত্স। প্রকৃতির পানে নীরব চাহনীতেই লুকিয়ে থাকে আমার মনের খোরাক।

স্টাফ রুমের পুরো দেয়াল জুড়ে কাচের জানালাটা আমার খুব প্রিয়। অতি ব্যস্ত সিডিউলেও সুযোগ করে জানলার ধরে বসে একটু জিরিয়ে নেই। কলিগরা সবাই যখন গল্পে বা পেশাগত আলাপচারিতায় ব্যস্ত, আমি তখন হারিয়ে যাই আমার গোপন দৃষ্টির ভুবনে, পেছনের কিছুই টানেনা আর – জেগে থাকে শুধু সামনের দিগন্তে দু’চোখের তাপসী ধ্যান। দু’টো বাচ্চা নিয়ে এক মা বেরিয়ে এলো গাড়ী থেকে, মাঝারী ঠান্ডা, তাই ওদের কারো পায়েই ভারী বুট নেই, হালকা জুতো। ওরা হেটে আসছে আমার দিকে। মানুষের হাটাও যে কত বিচিত্র! – উলম্ব হাটা, ঝুলন্ত হাটা , ক্লান্ত হাটা, আত্ববিশ্বাসী হাটা, বিষন্ন হাটা , কৃত্রিম হাটা- আরো কত কী ! মহিলাটি অত্ববিশাসী হাটা হাটছে, বাচ্চা দু’টোকে একটু আগলে নিয়ে। তার মুখ আমি দেখতে পাচ্ছিনা , কিন্তু এত দূর থেকেও তার বাচ্চা আগলে দৃঢ় হাটার ভঙ্গীতে তাকে অপূর্ব লাগছে। ওই যে পেছনের পার্কিং লট থেকে বেরিয়ে এলেন আরেক মহিলা। বয়স পূর্বের মহিলার মতই হবে বোধ করি, কিন্তু হাটছেন কিশোরী ছন্দে, জ্যাকেটের জীপার এর মধ্যখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা সরু সাদা রেখা দুভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়ে দু’ কানে মিশেছে – আশংকা করি সে গাড়ী চালানোর সময়ও এ দু’টোকে কান থেকে নামাননি। অদ্ভুত ভাবে হাটছেন মহিলা। বরফ কিছুটা গলে গেলেও এখানে সেখানে স্তুপ স্নো এখনো রয়ে গেছে, আর তার নীচে লুকিয়ে থাকা ছোপ ছোপ বরফ জমে আছে কোথাও কোথাও। এর মাঝ দিয়ে মহিলাটা একে বেকে হাটছে, নতুন হাটতে শেখা বাচ্চদের মত – পার্থক্য শধু এইযে তার পুরোটাই কৃত্তিম, বাচ্চদের অকৃত্তিম টলমলে হাটা নয়। দোতলার জানালায় বসে দেখলাম পার্কিং লটের মাঝা মাঝি থেকে স্কুলের গেটে ঢোকা পর্যন্ত এতগুলো পদক্ষেপের একটিতেও মহিলার দৃঢ়তা ছিলনা একফোটা। ভাবছিলাম এই বয়সের এক মহিলা কেন বরফের পিচ্ছিল পথে হাটার জন্য বেছে নিয়েছেন সরু হিলের বুট, কেন তিনি নিজেই নিজের চলাকে করেছেন বিপজ্জনক, কেন তিনি তার নিজের কোমরে, মেরুদন্ডে সৃষ্টি করছেন অতিরিক্ত ক্ষতিকর চাপ? এবং সর্বপরি যে “সৌন্দর্য” বা “স্মার্ট নেস” এর জন্য তিনি এই কষ্ট ও বিপদকে মেনে নিয়েছেন সেটার লেশ মাত্রও তো দেখতে পাচ্ছিনা আমি তার ভীরু, আত্ববিশ্বাসহীন, অনেকটা ভাড়ীয় হাটায়। তারপরও কেনো তিনি এটাকেই মনে করছেন “ফ্যাশন”?

ফেসবুকে ঢাকার উঠতি বয়সের কিছু তরুনীদের ছবি দেখি টাইট জিন্সের প্যান্টে। এসব প্যান্ট তৈরী করা হয় শীতের দেশের জন্য। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় যে তাদের অনেক কষ্টে এই “ফ্যাশন” কে ধারণ করতে হচ্ছে তা বুঝতে কারো কষ্ট হবার কথা নয়। কষ্ট হোক তবু “স্মার্ট” তো হতে হবে।

আচ্ছা, স্মার্টনেসের সংগাটা কি? বরফের ওপর বিপজ্জনক ও ক্ষতিকর উচু হিল? গরমে মোটা টাইট প্যান্ট? নাকি আবহাওয়া অনুযায়ী সঠিক পোশাক নির্ধারণের মত মগজের ক্ষমতা? কে বেশী স্মার্ট, যে টিভির বিজ্ঞাপন দেখে বরফের মধ্যেও হিল পরে ভাড়ীয় হাটা হাটে নাকি যে আবহাওয়া সম্পর্কে অবগত থাকে এবং নিজের মাথার ব্যাবহার করে সঠিক জুতা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে? যে হকার্সে গিয়ে টাইট জিন্স কিনে টেনে টুনে শরীরে ঢুকায়, নাকি যে জানে যে গরম আবহাওয়ায় ঢিলা ঢালা পোষাক আর হালকা মেকআপ বেশী উপযোগী? কে বেশী স্মার্ট, যে নিজের মাথার ব্যবহার করে সিদ্ধান্ত নেয়, নাকি যে নিজের চোখের মাথা খেয়ে মিডিয়ায় দেখানো অখ্যাদ্য কুখাদ্যকে বিশেষ “সুখাদ্য” হিসাবে চোখ বুজে গেলে?

সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান প্রাণী হয়েও আমরা কিভাবে নিজের মস্তিস্কের হালটা নিশ্চিন্তে ছেড়ে দিতে পারি মিডিয়ার ওপরে? আমরা যখন নিজের ভাবনা নিজে নাভেবে মিডিয়াকে ভাবিয়ে নিতে দেই তখনই মিডিয়ার প্রচারে মিথ্যা আর অসুন্দর গুলো আমাদের মস্তিস্ককোষে বাসা বাধে সুন্দর আর সত্য রূপে। ক্রমে ক্রমে আমরা মানুষেরা হারিয়ে ফেলি আমাদের দৃষ্টিশক্তি, ক্ষয়ে যায় আমাদের চিন্তাশক্তি- চরম অসুন্দর দৃশ্যগুলো রুপান্তরিত হর সুন্দরতমে; দৃষ্টিকটু হয়ে ওঠে আকর্ষনীয়, মিথ্যা রুপান্তরিত হয় একমাত্র সত্যে, চক্রান্ত মূর্ত হয় চেতনায়। অবশেষে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে যায় বুদ্ধিহীন মিডিয়াধীন এক পরজীবীতে, এভাবেই হারিয়ে যায় তার স্বাধীনতা আর শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয়।

 

হিজাবে ভিন্নমাত্রার নান্দনিকতায় নারী


ঘরকন্যা


রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দেখা গেল যানবাহনে ও হাঁটা বহু নারীর মাথায় হিজাব। সর্বাধুনিক ডিজাইনের বাহারি রঙের হিজাবে সব বয়সী নারীর মুগ্ধ পদচারণা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আড্ডারত দুই তরুণীর কাছে মাথায় হিজাবের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা জানালেন মাথার চুল আবৃত করতেই হিজাব পরি। এটা এখন আমার ফ্যাশন। এক দিকে চুলও আবৃত করা হলো। চুলও ধুলাবালু থেকে রেহাই পেল। ধর্মীয় অনুশাসনও মানা হলো অন্য দিকে আধুনিক ফ্যাশনও করা হলো। তবে ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব হিজাব দিবস সম্পর্কে কিছু জানা নেই তাদের। বস্তুত নানা রঙের নানা ডিজাইনের হিজাবে আবৃত নারীদের ফ্যাশনে এনে দিয়েছে ভিন্নমাত্রার নান্দনিকতা। নারী পোশাকে এই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আবহমান বাংলার চিরায়ত সাংস্কৃতিতে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হিজাবকে স্মরণীয় করে রাখা এবং পর্দার ব্যাপারে ইসলামী বিধান অনুসরণকারী সব মুসলিম নারীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতি বছর ১ ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে বিশ্ব হিজাব দিবস। এবার হিজাব দিবসের স্লোগান ‘হিজাব ইজ মাই ফ্রিডম’, ‘হিজাব ইজ মাই প্রটেকশন’, ‘হিজাব ইজ মাই চয়েস’, ‘হিজাব ইজ মাই কভার’। কয়েক বছর আগে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক সিটিতে নাজমা খান নামে এক বাংলাদেশী ছাত্রী পোশাকের কারণে জ্যামাইকায় আক্রান্ত হন। ওই ঘটনার প্রতিবাদ, নিন্দা এবং সর্বসাধারণকে সচেতন করার জন্য গত ছয় বছর থেকে আমেরিকায় হিজাব দিবস পালন শুরু হয়।
রংপুর মহানগরসহ এখন সারা দেশে সব বয়সী নারীরাই নানা রঙের শাড়ি কিংবা জামার সাথে মাথায় নানা ডিজাইন-রঙের হিজাব ব্যবহার করছেন। হিজাব দিবসের সাথে ইতোমধ্যে সংহতি প্রকাশ করেছেন ৪৫টি দেশের ৭০ জনের অধিক রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা রাজনীতিক ও স্কলারসহ টাইম ম্যাগাজিন, সিএনএনের মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে ডট কম পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৯৪ ভাগ নারী হিজাবে নিজেদের নিপীড়িত মনে করেন না। শতকরা ৯৩ ভাগ নারী মনে করেন তাদের ওপর হিজাব চাপিয়ে দেয়া হয়নি।
বাংলাদেশে নারীদের হিজাবের দিকে আকৃষ্ট হওয়ার মাত্রা বেড়ে গেছে বহুগুণ। এক সময় রাস্তায় পাশ্চাত্যের আদলে শর্ট কামিজ, খোলামেলা পোশাক পরিধানের যে ধুম পড়েছিল, তা থেকে এখন বেরিয়ে আসছেন নারীরা।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা গেল নানান কথা। হিজাব শুধু নান্দনিক ফ্যাশনই নয়, এটি নারীদের মর্যাদাকেও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে হিজাবে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। শাড়ি, জামার সাথে হিজাব পরে কর্মক্ষেত্রসহ সব ক্ষেত্রে নারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। প্রাচীন বাংলার জনগণ দেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি টিকিয়ে রেখে যা করেছিলেন হালের নারীরাও তা আবার ফিরিয়ে আনছেন। যে দেশের নারীরা বেশি বোরকা কিংবা হিজাব পরবেন তারা অধিকতর ডান, গোঁড়া বা রক্ষণশীল বলে কথিত যে বুলি আওড়ানো হচ্ছিল একবিংশ শতাব্দীতে। বাংলাদেশের নারীরা সেই বুলিকে অগ্রাহ্য করে হিজাবকে নান্দকিভাবে উপস্থাপন করেছেন। হিজাব এখন নারীদের কাছে এতটাই গ্রহণযোগ্য পোশাক হয়েছে যে বাংলাদেশের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের প্রচারেও মডেল হিসেবে হিজাব পরিহিতা নারীকে বেছে নিয়েছে।
জানতে চাইলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুমা আখতার নদী নয়া দিগন্তকে জানান, জাতি হিসেবে মুসলিমরা সেরা। তাই তাদের ফ্যাশনের নান্দনিকতাও ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্যে সেরা হওয়া উচিত। এখন তাই আমরা মুসলিম নারীরা শালীন পোশাকের সাথে হিজাব ব্যবহার করে বিশ্বের সর্বাধুনিক নারী হিসেবে উপস্থাপিত হচ্ছি। আমরা শাড়ি ও জামার সাথে হিজাব পরে সব উৎসবকে নান্দনিক করে তুলছি। এর মাধ্যমে ইসলামের প্রগতিশীলতাকে আমরা রিপ্রেজেন্ট করছি।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী লুবনা হক জানালেন, মুসলিম নারীদের যারা গোঁড়া রক্ষণশীল বলে গালমন্দ করার চেষ্টা করে থাকেন মুসলিম নারীরা সর্বাধুনিক হিজাব পরিধান করে বড় বড় অনুষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণ করে তাদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছে।
রংপুর হোমিও কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুমতাহিনা কাউছার নয়া দিগন্তকে জানান, প্রথমত আমি একজন মুসলিম নারী হিসেবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতেই হিজাব পরি। এর বাস্তব সুবিধা অনেক। যেমন এক দিকে হালের সবচেয়ে ফ্যাশন হচ্ছে এই হিজাব। অন্য দিকে চলতে-ফিরতে খারাপ মানসিকতার লোকদের থেকে রক্ষা করা যায়। এ ছাড়াও হিজাব পরা নারীদের চলতে-ফিরতে সম্মান করে সবাই। কিন্তু খোলামেলাভাবে পোশাক পরলে মানুষ একটু অন্যভাবে দেখে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় উপকার হয় স্বাস্থ্যের। ধুলাবালু থেকে নিরাপদ থাকা যায়। কারণ নারীদের ত্বক নরম। ধুলাবালুতে দ্রুত ত্বক নষ্ট হয়ে যায়। বাড়তি পরিচর্যার দরকার হয়। কিন্তু হিজাবের কারণে চুল এবং ত্বক রক্ষা পায়। বাড়তি পরিচর্যার সময় বেঁচে যায়।
কারমাইকেল কলেজ ইসলামের ইতিহাসের ছাত্রী ফারহানা আখতার নয়া দিগন্তকে জানান, কথিত খোলামেলা পোশাকের এই সময়ে নারীরা যে সর্বাধুনিক ফ্যাশন হিসেবে হিজাব ব্যবহার করছে, এটা খবুই তাৎপর্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে মুসলিম নারী হিসেবে আধুনিক বিশ্বকে প্রভাবিত করতে পারছি আমরা।
জাতীয়ভাবে স্বীকৃত সেরা ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুর ধাপসাতপাড়া মডেল কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আনম হাদিউজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, নারীদের হিজাব পরার এই মানসিকতা একটি সভ্যসমাজ বিনির্মাণের জন্য ইতিবাচক দিক। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে এখন নৈতিকতাবোধ সৃষ্টি হচ্ছে। তারা গড্ডালিকা প্রবাহে থাকতে চান না। এ ছাড়াও মানুষের মধ্যে এখন যে ধর্মই পালন করুক না কেন সেই ধর্মের অনুশাসন মেনে চলার আগ্রহ বেড়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন স্টাডিজ সেন্টার সব থেকে প্রিয় পোশাক কী তা জানতে একটি সমীক্ষা করে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পরিচালিত সমীক্ষায় ৩২ শতাংশ পাকিস্তানি নারী-পুরুষ বলেছেন, তাদের প্রিয় পোশাক নেকাব। সমীক্ষায় থাকা দেশগুলো ছিলথÑ তিউনিসিয়া, পাকিস্তান, মিসর, ইরাক, লেবানন, সৌদি আরব ও তুরস্ক। ওই সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়, ইরান, ইরাক ও লেবাননে এই পোশাকের চল রয়েছে। এতে হাত ও মুখের কিছু অংশ খোলা থাকে। তবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে যে পোশাকটি রয়েছে, সেটা মাথায় স্কার্ফ ধরনের এবং লম্বা পোশাকের সাথে পুরো মুখাবয়ব খোলা থাকে। মিসরের নারীদের ৫২ শতাংশ এটি পরেন। রিপোর্টে বলা হয়, বর্তমান মুসলিম বিশ্বের নারীরা সব থেকে আধুনিক হিসেবে এই পোশাকটিকেই বেছে নিয়েছেন। বিশেষ করে ইরান ও তুরস্কের আধুনিক নারীরা এই পোশাক পছন্দ করছেন। এর সাথে আরো একটি স্টাইল রয়েছে। সেটি হলো হাল ফ্যাশনের রঙিন লম্বা ধরনের পোশাক, কিন্তু মাথায় বড় মাপের ওড়না দিয়ে মাথা শিথিলভাবে মোড়ানো। আর পাশ্চাত্য রীতির মিশেলে সালোয়ার কামিজসহ যেকোনো ধরনের পোশাক। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

বউ-শাশুড়ি মেলা রংপুরে


নারী সংবাদ


সমাজে যখন শাশুড়ি ও পুত্রবধূর সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক কথা ওঠে, ঠিক তখনই এই দু’জনের সম্পর্কের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করে দিতে রংপুরের মিঠাপুকুরে অনুষ্ঠিত হলো শাশুড়ি-পুত্রবধূ মেলা। গত বৃহস্পতিবার দিনভর মেলায় শতাধিক জোড়া বউ-শাশুড়ির উপস্থিতি তাদের আন্তরিকতায় সেখানে সৃষ্টি হয় ভিন্ন রকম এক নান্দনিকতার ঢেউ।

মিঠাপুকুরের চেংমারী ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির আয়োজনে এবং ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের সহায়তায় বউ-শাশুড়ি মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: শেখ মো: সাইদুল ইসলাম। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করীম টুটুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এ কে এম রেজাউল করীম ও এফপিআই মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেন।

উদ্বোধনের পরই বউ-শাশুড়িরা বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। তারা একে অপরের প্রতি আরো নিবিড় হয়ে যান। পুরো চত্বরে ধ্বনিত হয় পুত্রবধূ ও শাশুড়ির নির্ভেজাল নিবিড় সম্পর্কের দ্যোতনা। এ সময় উপস্থিত দর্শনার্থীরা বিমুগ্ধ হন।

দর্শনার্থী মাইদুল ইসলাম জানান, আমাদের সমাজে এখন প্রতিনিয়ত পুত্রবধূ ও শাশুড়িদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টানাপড়েন দৃশ্যমান। এ ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এ মেলা। আমি মনে করি এ ধরনের মেলা আয়োজন করতে পারলে সমাজে এ বিষয়ে আরো সচেতনতা তৈরি হবে।

মেলায় অংশগ্রহণকারী শাশুড়ি মালেকা বেগম জানান, আমার তিন ছেলের তিনটি বউ। সবার সাথেই আমার সম্পর্ক মায়ের মতো। মেলায় এসেও দেখলাম, আয়োজকেরাও বললেন শাশুড়িকে পুত্রবধূদের মনে করতে হবে মা। আর পুত্রবধূদের শাশুড়িদের মনে করতে হবে মেয়ে। এভাবেই পারস্পরিক বোঝাপাড়ার মাধ্যমে শাশুড়ি ও পুত্রবধূদের সম্পর্ক হবে মা ও মেয়ের মতো। এটি হলে সমাজে ও পরিবারে অনেক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা যাবে বলে মনে করেন এই শাশুড়ি।
অন্য দিকে মেলায় অংশ নেয়া কোহিনুর বেগম নামের এক পুত্রবধূ বলেন, আমার শাশুড়ির সাথে আমার অনেক দূরত্ব ছিল। আজকে মেলায় এসে আমার সেই দূরত্বটা কমলো। আজ থেকে আমাদের মাঝে আর কোনো দূরত্বই থাকবে না। মা ও মেয়ে হয়ে বাকি জীবন কাটাবো আমরা।
মেলার প্রধান অতিথি রংপুর পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক ডা: শেখ মো: সাইদুল ইসলাম জানান, এ সমাজের বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে এ মেলা। এর মাধ্যমে এই দু’টি সম্পর্কের যে নেতিবাচক ধারণা আছে তা থেকে সবাইকে বের করে আনতে এ ধরনের আয়োজন ভূমিকা রাখবে। মেলায় বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বউ-শাশুড়ির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে পজেটিভ ধারণা দেয়া হয়েছে।
মেলা আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম ল্যাম্ব বর্ণ অন টাইম প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার লিটন বালা জানান, আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্যে বউ ও শাশুড়িদের মধ্যে নিবিড় সেতুবন্ধন তৈরি করতে আমাদের এ প্রকল্প। আশা করি অংশগ্রহণকারীরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তারা বাড়িতে ফিরে তাদের আশপাশের বউ-শাশুড়িদের মধ্যে এই সেতুবন্ধনের বার্তা পৌঁছে দেবেন।

আয়োজনে শতাধিক বউ-শাশুড়ি, সাংবাদিক, এনজিও প্রতিনিধি ও গর্ভবতী মা, কিশোর-কিশোরী, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা অংশ নেন। মেলায় বউ-শাশুড়ি সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগ, পবিবার পরিকল্পনা বিভাগ, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেবা ও ল্যাম্ব বিভিন্ন স্টল এবং নাটক প্রদর্শন করে। সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

 

শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজন সচেতনতা


নারী সংবাদ


গভীর রাত। সবাই ঘুমে অচেতন। হঠাৎ পাশের বাড়ির তিনতলা থেকে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করে ওঠে মধ্য বয়সী এক নারী। তাঁর চিৎকারে ঘুম থেকে জেগে ওঠে অনেকেই। মুহূর্তের মধ্যেই স্পষ্ট বোঝা গেল যে, মধ্যরাতে ঘরে ফিরে এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে প্রহার করছে। এক পর্যায়ে ঐব্যক্তি চিৎকার করে কাটা চামচ দিয়ে তার স্ত্রীর চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিলে, ঘরের বাইরে এসে আক্রান্ত নারী তার সর্ব শক্তি দিয়ে বলে বাচাঁও বাচাঁও বলে চিৎকার করতে থাকে। ওই মহিলার স্বামী মাঝে মধ্যেই তাকে এই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করে। অসহায় স্ত্রী মান-সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু না বলে নীরবে সব যন্ত্রণা সহ্য করে যায়।

আমাদের দেশে নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক, এসিড নিক্ষেপ, পাচার, খুন বা হত্যার মতো নানান ঘটনার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। যদিও দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী নারী ও শিশু নির্যাতন জঘন্য একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। বৈষম্যমুলক সমাজ কাঠামোর ভেতরে দেশের নারীরা নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা কর্মস্থলে বৈষম্য ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হয়ে কিশোরীদের কেউ কেউ আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে। নারী ও কিশোরীদের অপহরণ করে সীমান্ত পার করে বিদেশে পাঁচার করা হচ্ছে।

এ ধরনের নির্যাতনের ফলে নারীর যেমন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় তেমনি তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়।
দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ হচ্ছে ‘যৌতুক’। সমাজে যৌতুক প্রথা একটি বড় অভিশাপ। আমাদের দেশে যৌতুক প্রথা যে সব কারণে এখন পর্যন্ত টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অর্থনৈতিক পরনির্ভরশীলতা, সামাজিক কুসংস্কার, বাল্য বিয়ে, রেজিষ্ট্রিবিহীন বিয়ে, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা প্রভৃতি।

অ্যাসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন (এএসএফ)-এর তথ্য অনুযায়ী গত ১৯ বছরে প্রায় দেড় হাজার নারী ও শিশু অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। এই অপরাধের দায়ে সাজা হয়েছে মাত্র ৩৪৩ জনের। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী অ্যাসিডের মামলায় গত ১৬ বছরে ১৪ আসামীকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। তবে, এখন পর্যন্ত কারও সাজা কার্যকর করা হয়নি। অ্যাসিড অপরাধ দমন আইন, ২০০২ অনুযায়ী ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা আছে।

জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। দেশটিতে নারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে সাত কোটি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সূচকে গত এক দশকে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। গত এক দশকে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার কমেছে, নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নত হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীর প্রবেশ ঘটেছে।
তবে, দুর্ভাগ্যক্রমে এই অগ্রগতির যাত্রার মধ্যেও এদেশের নারীরা নানাভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ ২০১১ এর প্রতিবেদন দেখা যায়, এ দেশের ৮৭ শতাংশ নারী ও কন্যা শিশু সহিংসতার শিকার হচ্ছে। লিঙ্গভিত্তিক অসমতার সূচকে ১৮৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম।

বাংলাদেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ১৯৮৩ সালে প্রথম প্রণীত হয় নারী নির্যাতন (ন্যূনতম শাস্তি) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ (১৯৮৩ সালের ৬০ নম্বর অধ্যাদেশ)। অন্যান্য আইনের ওপর প্রাধান্য দিয়ে প্রণীত এই আইনটিতে মোট নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিতকরণ ও এর শাস্তি নির্ধারণ করার বিধান আছে এবং ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও বখাটেদের উৎপাতের জন্য দন্ডবিধি আইন প্রচলিত আছে। প্রচলিত আইনে বখাটেদের যে শাস্তির বিধান আছে তা হলো- ঢাকা মহানগর পুলিশ আইনের ৭৬ ধারা ও দ-বিধির ৫০৯ ধারা অনুযায়ী এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদ-সহ ২ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে এবং নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ নম্বর ধারায় যৌন নিপীড়ন ও শ্লীলতাহানীর জন্য ১০ বছরের কারাদ- দেয়ার বিধান আছে।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এই নির্যাতন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সমাজে বসবাসরত সকল শ্রেণীর মানুষকে সচেতন করতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ তার সাড়ে সাত কোটি নারী ও কন্যা শিশুর জন্য অনুকূল পরিবেশে সৃষ্টি করতে পারে, যাতে তারা দেশের সামগ্রিক উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে।
সুত্র: মুসলিমা খাতুন ॥ (বাসস)।