আজকাল অনেক উদ্যোক্তা কাজের অবস্থান থেকে দূরে থাকা সত্ত্বেও সফল ভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন। তাদের বেশিরভাগের ‘অফিস’ হচ্ছে নিজের ঘরেই!বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসে কিংবা প্রিয় কফি শপে!
সৌভাগ্যবশত বর্তমান প্রযুক্তি প্রত্যেককেই যার যার অবস্থান থেকে যেকোন জায়গার কাজ সম্পাদন করার সুযোগ দিচ্ছে আর তাই উদ্যোক্তারা পারছেন নিজেদের ঘর থেকেই অফিসের কাজ সম্পন্ন করতে।যে কেউ ই ঘরে বসে অফিস করতে পারছে এটা শুনতে যতোটা সহজ শোনায় করতে কিন্তু ততোটা সহজ নয়!
প্রোটোকল স্কুল অফ প্লামবিচের ফাউন্ডার জ্যাকলিন হোয়াটমোর তার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে যেয়ে বলেন,১৯৯৮ সাল থেকে আমি আমার বিজনেস শুরু করেছি,তখন এই এখনকার মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সার্ভিস ছিলো না,আমাকে অন্যান্যদের মতোই রোজ অফিস করতে হতো,ক্লায়েন্ট সার্ভিস দিতে হতো অফিসে বসেই।প্রায় ছয় বছর এভাবে কাজ করার পর আমি আমার অফিস স্থানান্তর করলাম আমার বাসায়। না এটা খুব সহজ সিদ্ধান্ত ছিলো না! তখন এভাবে অফিস করা কেউ শুরু করেনি,কিন্তু আমি একাই শুরু করেছিলাম নিজের প্রতি বিশ্বাস আর প্রযুক্তির উপকারিতা কে সঙ্গে নিয়ে! শুরুতে আমার অভিজ্ঞতা খুব ভালো ছিলো না,একা একা বাসায় অফিস করতে কার ভালো লাগে?! বাসার অফিসে আমি একা কাজ করি,আমার সার্কেলের সবাই অফিসে যেয়ে কাজ করে সুতরাং আমার জন্য এই পরিবেশটার সাথে মানিয়ে নেয়াটা সহজ ছিলো না বটে কিন্তু কিছু সময় পর,আমি অভ্যস্থ হতে লাগলাম আমার নতুন অফিসের সাথে! বেশ ক’বার রুটিন চেঞ্জ করতে হয়েছে আমাকে,কিন্তু ধীরে ধীরে এটা আমাকে বেনিফিট দিতে শুরু করে। আমার বিজনেস নেটওয়ার্ক তৈরী হয়,কাজের প্রসার বাড়তে থাকে এবং সেই সাথে অন্যান্য কাজ গুলো আমার জন্য সহজ হতে থাকে।
যারা বাসায় থেকে নিজের অফিস মেইনটেন করার কথা ভাবছেন বা করছেন সে ক্ষেত্রে কিছু টিপস তাদের সবাই কে মাথায় রাখা উচিত। যেমন,
১. নিয়মতি একটা অফিসে বসার জন্য সময় ঠিক করা এবং তা পালন করাঃ
বাসায় কাজের রকম হাজারো হোক,অফিসের কাজের জন্য প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিতে হবে। এবং সেই সময়টাতে শুধু মাত্র অফিসে কাজ গুলো করা হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখে যায়,অনেকেই সময় ঠিক করেন কিন্তু পরে তা এলোমেলো করে ফেলেন বাসার কাজের সাথে যেটা খুবই বাজে অভ্যাস!
অনেকের বাসায় ছোট বাচ্চা থাকে,যাদের কারণে কাজে ব্যাঘাত ঘটে আর সে সাথে বাসার অন্যান্য কাজ তো থাকেই কিন্তু নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে সফল দেখতে চাইলে সব কিছুর মাঝেও অফিসের জন্য নির্দিষ্ট সময়টা ব্যবসার কাজেই লাগাতে হবে।
২.প্রতিদিনের কাজের প্ল্যান ও পদ্ধতি গুলো ঠিক করে নিতে হবেঃ
যেকোন কাজের ক্ষেত্রেই পূর্ব পরিকল্পনা সময় বাঁচাতে সাহায্য করে। আর তাই বাসায় থেকে অফিস মেইনটেন করার ক্ষেত্রেও পূর্ব পরিকল্পনা,কাজের দিক ঠিক করে রাখা এবং কাজ গুলো দিন-সময় অনুযায়ী সাজিয়ে রাখাটা অফিস এবং বাসার কাজ দু’টো মেইনটেন করার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করে।
তাই রান্না ঘরেই থাকুন কি অফিসে,সামনে রাখুন কাজের লিস্ট গুলো! প্রাইয়োরিটি বেসিসে কাজ গুলো শেষ করুন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
৩.নিজেকে পরিপাটি রাখুন হোক তা সামান্য কাজের বেলাতেওঃ
একটা প্রবাদ আছে,পোষাক বাড়ায় মনোবল। আর তাই বাসা হোক কি অফিস কাজের বেলায় নিজের পোষাকের দিকেও খেয়াল রাখুন। সব সময়,সব জায়গায় একই রকম পোষাক কাজের মনোভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ঘরের কাজ আর অফিসের কাজের বেলায় চেষ্টা রাখবেন পোষাক টা যেনো ভিন্ন এবং আরামদায়ক হয়।
অফিসে ক্লায়েন্ট সার্ভিস দেবার সময়,কাস্টমার-বায়ারদের সাথে ডিল করার সময়ও মাথা রাখবেন,অফিসের পোষাক টা যেনো অফিসের মতোই হয়!
৪.কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা ঠিক করুনঃ
চেষ্টা করবেন আপনার অফিস প্লেস টা যেনো আলাদা হয় আপনার বাসার অন্যান্য রুম থেকে। তাই কাজ করার জন্য বাছাই করবেন এমন একটি এরিয়া যেখানে কাজ করার ক্ষেত্রে আপনাকে সব কিছু ব্যালেন্স করতে সমস্যা না হয়।
কাজে মনোযোগ বাড়ানোর জন্য অফিসের ছোট থেকে বড় সব কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হোক তা ফুলদানীর ফুল গুলোই! ঘরের কাজ করে,সংসার নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যখন আপনি অফিসে আসবেন তখন যেনো,নিজে থেকেই কাজ করার ইচ্ছে জাগে,সব কিছু কে এক পাশে রেখে নিজের বিজনেস কে ভাবতে ইচ্ছে করে!সে ক্ষেত্রে আপনার অফিসের পরিবেশটাই পারবে অনেকটা ভূমিকা রাখতে।
৫.বিরতি নিনঃ
প্রতিদিন বাসা-অফিসের কাজের ফাঁকে কিছু সময় বিরতি নিন। চেষ্টা করুন লাঞ্চটা অফিসের বাইরে পরিবারের সাথে করতে কিংবা বিকেলের চা টা বাগানে বা ছাদে বসে খেতে। এতে করে মানুসিক প্রশান্তি পাবেন,কাজে স্পিড আসবে। আর বাসায় থেকে অফিস করার যেমন অনেক উপকারীতা আছে তেমনি অপকারিতাও আছে!!
সব সময় বাসায় থাকার দরুন আপনার বডি ফিটনেস চেঞ্জ হতে পারে! কিন্তু জীবনের জন্য কাজের জন্য উপযুক্ত বডি ফিটনেস জরুরী। তাই নিয়ম করে ব্যায়াম অবশ্যই করবেন। এতে শরীর-মন দু’টোই সতেজ থাকবে।
৬.যথা সম্ভব মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখুনঃ
বাসায় থেকে অফিস করাটা এক ধরনের কঠিন চ্যালেঞ্জ বটে! ঘরে বাচ্চাদের সামলানো,পারিবারক নানান ঝামেলা কে একপাশে রেখে মনোযোগের সাথে অফিস করাটা সব সময় সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে দুই জায়গাতেই আপনার মেজাজ কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এবং ঘরের চিন্তা-অনুভূতি গুলোকে এক পাশে রেখেই অফিস করতে হবে।
অফিসে যতোক্ষণ থাকবেন,সময় যেনো অপচয় না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখবেন। আর তাই অপ্রোয়োজনিয় মেইল আদান-প্রদান,সোশ্যাল মিডিয়াতে অতিরিক্ত সময় দেয়া,ফোনে বেশি সময় কথা বলা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতে হবে।
সূত্র- একটি ইংরেজি সাময়িকি অবলম্বনে অনুবাদ করেছেন স্বপ্নকথা।