banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 714 বার পঠিত

 

৫ সূচকে কর্মজীবী নারীর ওপর মহামারির অভিঘাতের চিত্র

মহামারি করোনাভাইরাসের আঘাতে এক সময়কার সবল চাকরি-বাজার লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। মহামারির অভিঘাতে চাকরিক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছেন নারীরা। যুক্তরাষ্ট্রে গত মার্চ থেকে এপ্রিলের মধ্যে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর পরের এই সাত মাসে হারানো এসব চাকরির অর্ধেক অবশ্য আবার ফিরে এসেছে। তবে নভেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— চাকরিক্ষেত্রে নারী পুরুষের মধ্যে ব্যবধান বড় হয়েছে। মহামারির ফলে ৫৩ লাখ নারী চাকরিহারা হয়েছেন, যেখানে পুরুষের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৪৬ লাখ।
বিজ্ঞাপন

মহামারিটি চাকরি-বাজারে সবার আগে সেবা খাতে আঘাত হানে— বিশেষত যেসব চাকরিতে গ্রাহকের সঙ্গে সামনাসামনি সংযোগ প্রয়োজন— যেমন: রেস্টুরেন্ট, হোটেল, চিকিৎসা, সুপারশপ ইত্যাদি। যুক্তরাষ্ট্রে এসব চাকরির বেশিরভাগই নারীদের দখলে। তবে মহামারির শুরুতেই এসব শাখার কর্মী ছাটাই শুরু হয়, যার ধকল এখনও কাটেনি। এসব শাখায় হাজার হাজার পুরুষও চাকরি হারিয়েছেন— তবে নারীদের তুলনায় কম।

এই মহামারিকালেও যেসব নারীদের চাকরি টিকে আছে তাদের অবস্থাও এখন আর আগের মতো নেই। লক্ষ লক্ষ নারী করোনাভাইরাস দুর্যোগে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন। উদাহরণস্বরূপ— আমেরিকার হাসপাতালগুলোতে কর্মীদের শতকরা ৭৭ ভাগ নারী, এবং কিন্ডারগার্টেনের ৭৪ ভাগ কর্মীও নারী। তারা প্রবল মানসিক চাপ ও করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও রোগীদের সেবা ও বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছেন।

কর্মজীবী মায়েদের জন্য সমস্যা আরও বাড়িয়েছে চাইল্ড কেয়ারের স্বল্পতা। যাদের বাচ্চা রয়েছে— এমন কর্মীরা বড় সমস্যায় পড়েছেন। মহামারি শুরুর প্রথম দুই মাসের মধ্যেই আমেরিকার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারগুলো তাদের ৩৫ ভাগ স্টাফকে চাকরিচ্যুত করে। (উল্লেখ্য, এই চাইল্ড কেয়ার সেক্টরর সিংহভাগ কর্মী নারী: আমেরিকার চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে ৯৩ শতাংশ চাকরি নারীদের দখলে)। তবে সম্প্রতি এ সেক্টরে আবার কর্মী নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু গত নভেম্বর পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এ সেক্টরে এখন পর্যন্ত ১৭ ভাগ হারানো চাকরি ফিরে আসেনি। এর অর্থ হলো— কর্মজীবী মা-বাবার জন্য বাচ্চার লালন-পালনের বিকল্প আগের চেয়ে কমে এসেছে। দীর্ঘদিন চাকরিহারা থাকার পর এখন যারা চাকরি পাচ্ছেন তাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। এর উপর আরেক সমস্যা হলো— চাইল্ড কেয়ারে বাচ্চা ভর্তি করানোর খরচও বেড়ে গেছে।

মহামারির কারণে স্কুল ও চাইল্ড কেয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসায় বাচ্চাদের যত্ন ও লেখাপড়ার কাজে নারীদেরকেই বেশি সময় দিতে হচ্ছে। শুরুর দিকে করা কিছু সমীক্ষায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। বাড়িতে বাচ্চাদের পড়ানো, লালন-পালন ইত্যাদি কাজে পুরুষের চেয়ে নারীদেরকেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে— ফলে কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে পুরুষের চেয়ে নারীর দূরত্ব বাড়ছে।

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব ডালাসের অর্থনীতিবিদরা আমেরিকার শ্রম পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, মহামারিকালে শিশুদের যত্ন-আত্তি বনাম চাকরিতে মনোযোগের ব্যাপারে মা ও বাবার কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য লক্ষ্য করা গেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, ১৩ বছরের কম বয়েসি বাচ্চার মায়েরা, বাচ্চা ছাড়া নারীদের চেয়ে বেশি চাকরি হারিয়েছেন। বিপরীতে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা আরও কম। বাচ্চার মায়েরা সর্বোচ্চ ৩ পার্সেন্টিজ পয়েন্টে হারে চাকরি হারালেও বাচ্চা ছাড়া নারীরা চাকরি হারিয়েছেন ১.৮ পার্সেন্টিজ পয়েন্ট হারে। এদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা যথাক্রমে ১.৪ ও ১.২।

ডালাস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের অর্থনীতিবিদরা তাদের বিশ্লেষণে দেখান, কর্মজীবী মায়েদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাকরি হারানোর হার কৃষ্ণাঙ্গ ও ল্যাটিনা নারীদের— সে তুলনায় শ্বেতাঙ্গ নারীদের চাকরি হারানোর হার কম। করোনা মহামারিতে ভুক্তভোগীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ কর্মজীবী মায়েরা। গত ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা চাকরি হারিয়েছেন ৬.৪ পার্সেন্টিজ পয়েন্ট হারে।

বর্তমানে চাকরির বাজার কিছুটা চাঙা হতে শুরু করেছে। তবে অগ্রগতির বর্তমান হার অনুযায়ী— চাকরির বাজার পুরোপুরি আগের অবস্থায় ফিরে যেতে অন্তত ৪০ মাস সময় লাগবে। অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যে হুশিয়ার করেছেন— চাকরি থেকে দূরে থাকার সময় যত লম্বা হবে, তাদের চাকরিতে ফেরাও ততো কঠিন হবে। স্থায়ী চাকরি হারানো বা আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে কর্মক্ষেত্রে ও সমাজে লিঙ্গসমতার অগ্রগতির ধারায় বড় ছেদ পড়বে।
-সিএনএন অবলম্বনে

Facebook Comments