banner

সোমবার, ০৯ Jun ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 21 বার পঠিত

 

৩৫ থেকে ৩৯ বয়সী নারীদের মধ্যে এইচপিভি সংক্রমণ সর্বাধিক

সম্প্রতি ‘ইলেকট্রনিক ডাটা ট্রাকিংসহ জনসংখ্যাভিত্তিক জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং’ শীর্ষক একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, জরায়ুমুখ ক্যানসারের প্রধান কারণ উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচআর-এইচপিভি) সংক্রমণের হার অঞ্চলভেদে ভিন্ন হলেও একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা স্পষ্ট,৩৫-৩৯ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি।

সিলেট অঞ্চলে এই হার সবচেয়ে বেশি (৬.৪%), যেখানে গ্রামীণ এলাকায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭.১ শতাংশে। সবচেয়ে কম সংক্রমণ পাওয়া গেছে রাজশাহীতে (১.৭%)। গবেষণার আওতায় থাকা ৩,৮৫৬ জন নারীর মধ্যে মোট ১৩৮ জন এইচপিভি পজিটিভ ছিলেন, অর্থাৎ গড় হার ৩.৬%।

উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠি, কক্সবাজার ও বাগেরহাটে পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, বিবাহিত নারীদের মধ্যে সংক্রমণের গড় হার ২.৫৬% হলেও ঝালকাঠিতে তা ছিল ৩%। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হওয়া ভাইরাস ধরন ছিল এইচপিভি-১৬, যা ক্যানসার সৃষ্টির ক্ষেত্রে অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ।

স্ক্রিনিং পদ্ধতির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, ভায়া + এইচপিভি পরীক্ষার সমন্বিত পদ্ধতি একক পরীক্ষার তুলনায় রোগ শনাক্তকরণে বেশি কার্যকর। এ গবেষণায় ৪,৭৯২ জন নারী অংশ নেন এবং ফলাফল অনুযায়ী, যৌথ পদ্ধতিতে পজিটিভ পাওয়া যায় ৫.৯% নারীর, যেখানে শুধুমাত্র এইচপিভি স্ক্রিনিংয়ে তা ছিল ৩.৭%।

জাতীয় পর্যায়ের গবেষণায় ৩০-৬০ বছর বয়সী নারীদের ওপর পরিচালিত আরেক বিশ্লেষণে দেখা যায়, এইচআর-এইচপিভি সংক্রমণের হার ছিল ৩.২%। এর মধ্যে ১% ছিলেন এইচপিভি-১৬ পজিটিভ এবং ০.২% ছিলেন এইচপিভি-১৮ পজিটিভ।

এছাড়াও, ডিএইচআইএস২ ভিত্তিক ই-হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম (ই-এইচআইএস) ব্যবহারের মাধ্যমে স্ক্রিনিং ও ট্র্যাকিং কার্যক্রমের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়। বর্তমানে ১৪,২১৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক এই সিস্টেম ব্যবহার করছে। যদিও ইন্টারনেট সংযোগ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা আগামীতে আরও কার্যকর স্ক্রিনিং কার্যক্রম গড়ে তুলতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেন, যেমন:
উপকূলীয় ও উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে স্ক্রিনিং জোরদার

৩৫-৪৪ বছর বয়সী নারীদের অগ্রাধিকার

জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে ই-স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম সংযুক্তকরণ

ল্যাব ও হিস্টোপ্যাথলজি রিপোর্টের ডিজিটাল সংযুক্তি

ভায়া ও এইচপিভি’র যৌথ ট্রাইএজ পদ্ধতি নিশ্চিতকরণ

বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এই স্ক্রিনিং কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিল এবং ভবিষ্যতে নারী স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ ইনস্টিটিউট গঠনের পরিকল্পনাও জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের এই ধরণের উদ্যোগ নারীস্বাস্থ্য সচেতনতা, ক্যানসার প্রতিরোধ ও দ্রুত রোগ শনাক্তকরণে একটি আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

📌পাঠকদের জন্য পরামর্শ:
৩৫ বছর বয়স পার হওয়ার পর সকল নারীর উচিত নিয়মিত এইচপিভি ও জরায়ুমুখ ক্যানসার স্ক্রিনিং করানো। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে জীবন বাঁচানো সম্ভব।

Facebook Comments