আফরোজা হাসান
বর্তমান সময়ে খুব শুনি টিভি সিরিয়ালের ক্ষতিকর ও অশান্তিকর দিক নিয়ে অনেককে কথা বলতে। কিন্তু সবাই শুধু নিন্দা ও সমালোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন তাদের কথাবার্তা। সুন্দর ও সুষ্ঠু সমাধানের কথা এই পর্যন্ত কাউকেই বলতে শুনিনি আমি। মহিলারা সারাদিন ঘরে বসে সিরিয়াল দেখেন আর কুটনামী শেখেন। সুতরাং, এইসব বন্ধ করতে হবে। অবশ্যই বন্ধ করতে হবে কিন্তু কিভাবে? নিন্দা জ্ঞাপন করে কি মানুষকে সেই পথ থেকে ফেরানো সম্ভব যা সে মনের খোঁড়াক হিসেবে গ্রহণ করছে? তাহলে তো ড্রাগ নেয়া বন্ধ হয়ে যেত সেই কবেই। সিরিয়ালটাকে ড্রাগের সাথে তুলনা করলে মনেহয় খুব ভুল হবে না? কারণ ড্রাগের অভাবে যেমন শরীরে তৈরি হয় অস্থিরতা, ঠিক তেমনি গতকালের পর কি হলো জানার জন্য সিরিয়ালের সময় হলেই মন ছটফট করতে থাকে। একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টকে অনেক বোঝানোর পরও নেশার সময় হলে সে ছুটে যায় ড্রাগের কাছে। ঠিক তেমনি একজন সিরিয়াল অ্যাডিক্টও শত নিন্দা শুনে ছুটে যান টিভির কাছে। আসলে নিন্দা ও সমালোচনা কখনোই কোন কিছুর সমাধান হতে পারে না। একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টকে যেমন সে নিজে না চাইলে নেশার জগত থেকে বের করে নেয়া সম্ভব হয় না। ঠিক তেমনি সিরিয়াল অ্যাডিক্টকেও সে নিজে অকল্যাণ বুঝে দেখা বন্ধ না করলে ফেরানো সম্ভব নয়। মানুষের স্বভাব হচ্ছে সে যখন কোন কিছুতে আনন্দ খুঁজে পায়, অন্যরা যাই বলুক না কেন সেটা ছাড়তে পারে না বা চায় না। বরং নিন্দা ও সমালোচনা অনেক সময় ক্ষেপিয়ে তোলে মানুষকে। যারফলে জেদ করে সেই কাজ আরো বেশি করে মানুষ।
বেশ কিছুদিন আগে পরিচিত এক বোন ফোন করে রাগে গজগজ করতে করতে বললেন, ভাবী কি কি কারণে ঘরে রহমতের ফেরেশতা আসে না বলেন তো একটু আমাকে। কি হয়েছে জানতে চাইলে উনি জানালেন উনার স্বামী বলেছেন হিন্দী সিরিয়াল দেখলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢোকা ছেড়ে দেয়। জানালেন এই নিয়ে উনার স্বামী খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন। স্বামী কাজ থেকে ফিরে দেখেন উনি হিন্দী সিরিয়াল দেখছে। আর তাতেই প্রচণ্ড ক্ষেপে যান। উনাকে বকাঝকা করতে করতে বলেছেন, এইসব দেখো বলেই আমার ঘরে রহমতের ফেরেশতা ঢুকতে পারে না। অভাব অনটন দূর হয় না আমাদের জীবন থেকে। তুমি আমার সংসারের সকল অশান্তির কারণ। ইত্যাদি ইত্যাদি। বললাম, এর আগেও শুনেছি সিরিয়াল দেখা নিয়ে ভাইয়ের সাথে আপনার ঝগড়ার কথা। সংসারের শান্তি নষ্ট হয় এমন জিনিস দেখতে যান কেন শুধু শুধু? বোনটি জবাবে বললেন, এখন থেকে আরো বেশি করে দেখবো। দেখি কি করে সে। আমি হেসে ফেললে কিছুক্ষণ পর সেই বোনটিও হাসলো এবং বলল, সিরিয়াল না দেখলে সময় কি করে কাটাবো আমি বলেন তো? স্বামী কাজে ও বাচ্চা স্কুলে চলে যাবার পর তো তেমন কোন কাজই থাকে না করার মত। তিনজন মানুষের ছোট্ট সংসার তাই রান্না ও কাজও তেমন থাকে না।
বললাম সময় কাটানোর জন্য টিভিই দেখতে হবে এমন তো কোন নিয়ম নেই। আপনি কোরআন পড়ুন অর্থ সহ, তাফসীর পড়ুন। হাদীস, সাহাবীদের জীবনী, ইসলামী ইতিহাস, ইসলামী সাহিত্য কত কিছু আছে সময় কাটানোর উপকরণ হিসেবে। এছাড়া বাংলা সাহিত্যের গল্প-উপন্যাস-কবিতা তো আছেই। স্বামী ও বাচ্চা বাইরে খেতে পছন্দ করে এমন নিত্যনতুন রান্না শিখুন। রান্না করে তাদেরকে সারপ্রাইজ দিন। বাইরে থেকে শোপিস না কিনে নিজের ভেতরের সৃজনশীলতাকে বের করে নিয়ে আসুন। বেতের ঝুড়ি কিনে এনে প্ল্যাস্টিকের লতা-পাতা-ফুল দিয়ে মনের মতো ডেকোরেশন করেন। তারপর ঝুলিয়ে দিন ঘরের এক কোণে। এভাবে নিজের হাতে বানানো বিভিন্ন ধরণের শোপিস দিয়ে সাজান আপনার ঘর। চাইলে করার মত এমন অনেক কিছু পাবেন। যা করতে গেলে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হবে আপনাকে। তখন সিরিয়াল দেখা তো দূরে থাক টিভির দিকে তাকানোরই ফুরসত মিলবে না। উনি বললেন, এভাবে তো কেউ কখনো বুঝিয়ে বলেনি। হেসে বললাম, এই তো আমি বুঝিয়ে বললাম।
চলবে…′