রাগ আমাদের জীবনের একটা প্রধান সমস্যা। ‘রাগকে নিয়ন্ত্রণ কর’- জীবনে একাধিকবার এ কথা শোনেনি; এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন। আবার এই বিষয়টিকে খুব সুন্দরভাবে সমাধান করেছেন; এরকম মানুষও আছে। তবে যারা এ কাজটি খুব ভালোভাবে ভদ্রতার সাথে করতে পারে; তারা কোনো সাধারণ মানুষ নন। এ অসাধারণ মানুষের মধ্যে একজন আমাদের মহানবী হযরত মোহাম্মদ (স:)।
এক মূহুর্তের রাগ, সারা জীবনের কান্না। আল্লাহ্ ﷻ বলেছেন – “তোমরা রাগকে গিলে ফেলো” (সূরা আলে ইমরান:১৩৪)। রাগ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে রাগের মাথায় আমরা এমন কিছু করে বসতে পারি বা বলে বসতে পারি যার জন্য আজীবন অনুশোচনা করতে হবে।
আজ আমরা রাগ সংক্রান্ত ৩টি হাদিস সম্পর্কে জানবো। এই তিনটি হাদিস থেকে এটা দেখবো যে, কেউ যখন রাসূলুল্লাহ (স:)’কে রাগিয়ে দেয়ার মতো আচরণ করতেন, তখন তিনি ﷺ কীভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতেন:
১) আনাস (রা:) ছিলেন ৭-৮ বছরের ছোট্ট একটা ছেলে। তাঁর মা তাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে পাঠিয়েছিলেন তাকে ছোটখাটো কাজ করে সহযোগীতা করার জন্য। যতোটা না কাজ করতেন তার চেয়ে বেশি দুষ্টুমিই করতেন। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আনাসকে (রা:) একটা কাজে বাইরে পাঠালেন। যাওয়ার পথে তিনি রাস্তার মধ্যে কয়েকজন ছেলেকে খেলা করতে দেখেছিলেন। তাদেরকে দেখে কাজের কথা ভুলে ছোট্ট আনাসও (রা) খেলায় মগ্ন হয়ে গেলেন। খেলার ঘোরে কতক্ষণ যে কেটে গেছে তাঁর আর সেই খেয়াল ছিল না। পরে হঠাৎ একসময় আনাস (রা) বুঝতে পারলেন যে, কেউ তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি মাথা ঘুরিয়ে দেখেন – একি! এ যে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ এক মুখ হাসি নিয়ে উপস্থিত!
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁকে জরুরি কাজেই পাঠিয়েছিলেন। অনেক সময় পার হওয়ার পরেও যখন তিনি ফিরলেন না, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ এর রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু তিনি আনাস(রা:) এর উপরতো রাগলেনই না, বরং হাসি ভরা মুখে তাঁকে নিতে এলেন।
অনুসরণীয়-১: রাগকে হাসিতে রূপান্তর করুন।
২) একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ দেখলেন, এক মহিলা কবরের সামনে খুব কান্নাকাটি করছেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, “আল্লাহকে ﷻ ভয় করো এবং ধৈর্য ধরো।” তখন ঐ মহিলা রাসূলুল্লাহকে ﷺ চিনতে না পেরে রেগে গিয়ে বলে উঠলেন, “যান এখান থেকে! আমার মতো বিপদতো আর আপনার হয়নি!” তিনি ঐ মহিলাকে কিছুই জবাব দিলেন না। শুধু চুপচাপ সেই স্থান থেকে চলে গেলেন।
অনুসরণীয় -২: রেগে থাকা মানুষকে বুঝাতে যাবেন না। কারণ, সে বুঝবে না। তাকে শান্ত হওয়ার জন্য সময় দিন।
৩) রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “যে ব্যক্তি তর্ক করা ছেড়ে দিবে, সে যদি ভুলের পক্ষেও হয় তবুও সে জান্নাতের প্রান্তে বাড়ী পাবে। আর যে ব্যক্তি সঠিক হওয়ার পরেও তর্ক ছেড়ে দিবে, সে জান্নাতের মাঝখানে বাড়ী পাবে। আর যে ব্যক্তি নিজের চরিত্রের উন্নয়ন করবে সে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাড়ী পাবে।”
অনুসরণীয় -৩: রাগ বা তর্ক করার মতো কারণ থাকা সত্ত্বেও তা করবেন না। এসব না করে আল্লাহর ﷻ ওপর ছেড়ে দিন বিচারের ভার। এসব করে সাময়িক জয় পাওয়া যায় কিন্তু স্থায়ী সমাধান হয় না। আর কোনোকিছুর পরিবর্তন আপনি চাইলেই হবে না। যার সমস্যা তার একান্ত ইচ্ছা থাকলেই একমাত্র পরিবর্তন সম্ভব।
ইসলাম এমন একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান; যা আপনার জীবনকে শান্তিময় করে তুলবে, এই জীবনে এবং তার পরের জীবনেও। তাই শুধু বড় বড় উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি আল্লাহর প্রেরিত নবী-রাসুলরা। তাঁরা দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে তা বাস্তবে প্রয়োগ করতে হয়। একজন প্রকৃত মুসলিম ইসলামকে সঠিকভাবে মেনে চলেন নিজের জীবনের সুখ-সমৃদ্ধি আর অপার শান্তির জন্য। এতে তার ইহকাল এবং পরকাল এ দুঃসময়ের জন্যই পরম শান্তির বার্তা বয়ে আনে।