ইসলামের ইতিহাসে রাণী জুবাইদা (রহ.) একজন বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের স্ত্রী এবং নবী কারিম (সা.)-এর বংশধর। তার প্রকৃত নাম আমাতুল আজিজ হলেও দাদা খলিফা আবু জাফর মানসুরের দেওয়া আদুরে ডাকনাম ‘জুবাইদা’ নামেই তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।
জুবাইদার জন্ম ১৪৯ হিজরিতে ইরাকের মসুলে। ছোটবেলা থেকেই তিনি প্রাসাদে শিক্ষা লাভ করেন এবং কোরআন, হাদিস, ধর্মতত্ত্ব, ইতিহাস, ভূগোল, ও জ্যামিতিতে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তিনি বিদ্বান, পরোপকারী এবং বুদ্ধিমতী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তার দানশীলতা ও কর্মধারার জন্য তিনি সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে ওঠেন।
রাণী জুবাইদার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হলো “নহরে জুবাইদা”। ১৯৩ হিজরিতে খলিফা হারুনুর রশিদের মৃত্যুর পর তিনি হজপালনে যান। সেখানে হাজীদের পানির কষ্ট দেখে তিনি ব্যথিত হন এবং পানির সংকট সমাধানে একটি খাল খননের উদ্যোগ নেন। ওয়াদি নোমান থেকে আরাফাত ময়দান এবং হুনাইন থেকে মক্কা পর্যন্ত খালটি খনন করা হয়। এতে প্রায় ১৭ লাখ দিনার খরচ হয়, যা সে সময়ের এক বিশাল অঙ্ক।
খালটি আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই পাথর কেটে এবং ভূগর্ভস্থ টানেল নির্মাণের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। খালের পাশেই পানির স্টেশন স্থাপন করা হয়, যাতে স্থানীয় জনগণ সহজে পানি সংগ্রহ করতে পারে। এই নহর শুধু হাজীদের পানির সমস্যা দূর করেনি; বরং মক্কা ও আশপাশের কৃষকদেরও পানির অভাব মেটায়।
রাণী জুবাইদার দানশীলতার উদাহরণ এখানেই শেষ নয়। তিনি কুফা থেকে মক্কা ও মদিনা পর্যন্ত ১৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করেন। এছাড়াও মক্কায় আরও ৫টি জলাধার ও অনেক অজুখানা নির্মাণ করেন। তার প্রাসাদে ১০০ নারী হাফেজা কোরআন তেলাওয়াত করতেন, যা ২৪ ঘণ্টা চলত।
রাণী জুবাইদার জীবনের প্রতিটি অধ্যায় মানবতার জন্য উৎসর্গীকৃত। ২১৬ হিজরির ২৬ জমাদিউল উলা মোতাবেক ১০ জুলাই ৮৩১ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। এই মহীয়সী নারীর কর্ম ও অবদান আজও বিশ্ব মুসলিমকে অনুপ্রাণিত করে।