হজ মুসলিম উম্মাহর সর্বোত্তম ইবাদত। ইচ্ছা করলেই কেউ হজে যেতে পারে না। হজের জন্য সর্ব প্রথম শর্তই হলো আর্থিকভাবে সামর্থ থাকতে হবে। অতঃপর শারীরিক সক্ষমতা লাগবে। আর মানসিক প্রস্তুতিও হজের জন্য আবশ্যক বিষয়।
হজ হলো আল্লাহ তাআলা কিছু অনন্য নিদর্শন স্বচক্ষে দেখার জন্য পবিত্র নগরী মক্কা মুকাররমার ওই সব স্থানে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়া এবং যথাযথ মন নিয়ে পালন করার নাম।
ওই সব নিদর্শন তারই হুকুম পালনকারী প্রিয় বান্দা নবি-রাসুলদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি স্মারক বা ঘটনা। যে ঘটনাগুলো আল্লাহ তাআলার অনেক পছন্দ হয়ে যায়। আর তার পরিদর্শনকে আল্লাহ তাআলা ইসলামের রোকন হিসেবে সাব্যস্ত করেন।
হজের নিদর্শন সম্পর্কিত কিছু তথ্য প্রশ্নোত্তর আকারে তুলে ধরা হলো-
>> পবিত্র কাবা শরিফ কে তৈরি করেছেন?
উত্তর : হজরত ইবরাহিম আলাইহি সালাম পবিত্র কাবা শরিফ নির্মাণ করেন। কাবার স্মৃতি চিহ্ন মুছে যাওয়ার পর আল্লাহর নির্দেশে তিনি হজরত ইসমাইলকে সঙ্গে নিয়ে কাবার জন্য নির্ধারিত স্থানেই কাবা নির্মাণ করেন।
>> পবিত্র কাবা শরিফের চারদিকে তাওয়াফ করতে কোন দিককে নির্দেশ করা হয়েছে?
উত্তর : কাবা শরিফকে বাম দিকে তাওয়াফ করতে হবে। সহজে বুঝার সুন্দর উপমা হলো- ঘড়ির কাঁটা যে দিকে ঘুরে তার বিপরীত দিকে কাবা শরিফ তাওয়াফ করতে হবে।
>> হাজরে আসওয়াদ কী?
উত্তর : এটি একটি পাথর। যা প্রিয়নবি বাইতুল্লাহর দক্ষিণ-পূর্ব কোনো নিজ হাতে স্থাপন করেছেন। এখান থেকেই বাইতুল্লাহর দরজার দিকে তাওয়াফ শুরু করতে হয়।
>> মাকামে ইবরাহিম কী?
উত্তর : একটি পাথরের নাম ‘মাকামে ইবরাহিম’। এ পাথরে দাঁড়িয়ে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বাইতুল্লাহ নির্মাণ করেছিলেন। বাইতুল্লাহ নির্মাণে যা লিফটের কাজ করেছিল। অর্থাৎ প্রয়োজন অনুযায়ী এ পাথরটি হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে নিয়ে ওপরে ওঠেছিল এবং নিচে নেমেছিল।
>> মুলতাজেম কী?
উত্তর : হাজরে আসওয়াদ ও বাইতুল্লাহর দরজার মধ্যবর্তী কাবা শরিফের প্রাচীরই হলো মুলতাজেম। যেখানে বুক লাগিয়ে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করে।
>> হাতিমে কাবা কী?
উত্তর : হাতিমে কাবা হলো রুকনে শামি ও রুকনে ইরাকির মধ্যবর্তী গোলাকার আকৃতির স্থান। যা বাইতুল্লাহর অংশ।
>> পানি সন্ধানে কে সাফা ও মারওয়ায় দৌড়েছিলেন?
উত্তর : হজরত হাজেরা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) তাঁর সন্তান হজরত ইসমাইলের জন্য পানির সন্ধানে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌড়েদৌড়ি করেছিলেন।
>> ‘ঝমঝম’ অর্থ কী?
উত্তর : ঝমঝম শব্দের অর্থ হলো বন্ধ বা থামা। হজরত হাজেরা রাদিয়াল্লাহু আনহা এ শব্দটি ব্যবহার করে বলেছিলেন ‘ঝমঝম’। যখন পানির খোঁজে বিবি হাজেরা দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। তখন এসে দেখেন শিশু ইসমাইলের পায়ের তলা থেকে পানির ফোয়ারা প্রবাহিত হওয়া শুরু করে। তখন তিনি পানি প্রবাহিত হওয়া বন্ধের জন্য বলেন, ‘ঝমঝম’।
>> হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের কোন ছেলে নিজেকে আল্লাহর জন্য কুরবানিতে প্রস্তুত ছিলেন?
উত্তর : হজর ইসমাইল আলাইহিস সালাম। যার উপাধি ছিল ‘জবিহুল্লাহ’।
>> হজ সম্পর্কিত অনেক আয়াত সম্বলিত একটি সুরা রয়েছে কুরআনে। তার নাম কি?
উত্তর : সুরা হজ। কুরআনুল কারিমের ১৭তম পারায় রয়েছে এ সুরাটি। এর আয়াত সংখ্যা ৭৮। যেখানে হজ সম্পর্কিত অনেক আয়াত রয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সুরায়ও হজের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্নভাবে হজের আলোচনা রয়েছে।
>> হজের কার্যক্রম শুরু হয় কত তারিখ থেকে?
উত্তর : ৮ জিলহজ থেকে হজ শুরু হয়। মূল হজ হলো ৯ তারিখ। আর আল্লাহ তাআলা শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজকে হজের মাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
>> আরাফাতের ময়দানে কত তারিখ উপস্থিত হতে হয়?
উত্তর : ৯ জিলহজ দ্বিপ্রহরের আগে। দ্বিপ্রহরের পর থেকে সুর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হলো হজ।
>> আরাফাতের ময়দানে ৯ তারিখ দিন কাটানোর পর হজযাত্রীরা রাত কাটাবেন কোথায়?
উত্তর : মুযদালিফায়। ৯ তারিখ সুর্যাস্তের পর আরাফাতের ময়দান থেকে মাগরিবের নামাজ না পড়ে মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা হবে হজযাত্রীরা। খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করবেন হজযাত্রীরা।
সেখানে রাত যাপন করা সুন্নাত। আর ফজরের নামাজের পর থেকে সুর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত এ মুহূর্তকাল সময় অবস্থান করা ওয়াজিব।
>> ইহরামের সময় পুরুষরা কি মাথায় কিছু ব্যবহার করবে?
উত্তর : না, পুরুষদের জন্য ইহরামের সময় মাথায় কিছু ব্যবহার করা যাবে না। কোনো টুপি, কাপড় বা পাগড়ি কোনো কিছুই ব্যবহার করতে পারবে না।
>> কোন স্থানকে তাবুর নগরী বলা হয়?
উত্তর : মিনাকে তাবুর নগরী বলা হয়।
>> হজের সময় তীর্থযাত্রীরা সবচেয়ে বেশি কী পড়ে করে?
উত্তর : হজের সময় তীর্থ যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি তালবিয়া পড়ে। প্রত্যেক হজযাত্রীকে অবশ্যেই তালবিয়া পড়ার মাধ্যমেই ইহরাম বাঁধার কাজ সমাপ্ত করতে হবে। তালবিয়াই হলো আল্লাহর দরবারে হাজিরা দেয়ার ঘোষণা।
যেভাবে দুনিয়ার শ্রেণিকক্ষে ছাত্ররা শিক্ষকের নিকট হাজিরার সময় ‘ইয়েস স্যার’, উপস্থিত, লাব্বাইক; ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করে।
আল্লাহ তাআলার নিকট তালবিয়া পড়া হলো সে রকমই।
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক; ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক; লা শারিকা লাক।’
‘আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির; আমি হাজির, আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির; নিঃসন্দেহে সব প্রসংশা এবং নেয়ামত রাজি আপনার এবং পৃথিবীর একচ্ছত্র ক্ষমতাও আপনার; আপনার কোনো অংশীদার নেই।’
>> পাথর নিক্ষেপের জন্য পিলার বা ওয়াল কতটি? এগুলোর নাম কি?
উত্তর : পাথর নিক্ষেপের জন্য ৩টি পিলার বা ওয়াল রয়েছে। এগুলোকে জামারাত বা পাথর নিক্ষেপের স্থান বলা হয়।
হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানির সময় শয়তান প্ররোচনা দিয়েছিল আর তখন পিতা ও পুত্র শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেছিল। সে স্মৃতি স্মরণেই শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করা হয়।
-জামারাহ উলা বা জামারাহ সোগরা (ছোট জামারাহ)
– জামারাহ ওয়াস্তা বা মধ্যম জামারাহ
– জামারাহ আকাবা বা জামারাহ কুবরা (বড় জামারাহ)
>> কোনটিকে হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়?
উত্তর : আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়া। প্রিয়নবি বলেছেন- ‘আরাফাই হজ।’ যারা আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে পারবে না, তাদের হজ হবে না।
>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কতবার হজ ও ওমরা করেছেন?
উত্তর : রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ম হিজরিতে ১বার হজ করেছেন।
আর সে হজেই তিনি উম্মতের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ নসিহত পেশ করেছেন। ইসলামের ইতিহাসে এটি বিদায় হজ নামে পরিচিত।
আর প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৪বার ওমরা পালন করেছেন-
ওমরা ১ : ৬ষ্ঠ হিজরিতে হুদায়বিয়ার সন্ধির বছর। যদিও সে বছর তিনি ওমরা পালনে কাবা যেতে পারেননি তথাপিও তিনি মাথা মুণ্ডন করেছেন এবং আল্লাহর নামে পশু উৎসর্গ করেছেন। আর সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় তিনি পরবর্তী বছর ওমরা পালন করবেন।
ওমরা ২ : হুদায়বিয়ার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি ৭ম হিজরিতে ওমরা পালন করেন।
ওমরা ৩ : হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফেরার তিনি ৮ম হিজরিতে ওমরা পালন করেন।
ওমরা ৪ : ১০ম হিজরিতে হজ সময় তিনি ওমরা পালন করেছিলেন।