স্মৃতির জোনাকি…৫
আফরোজা হাসান
চা নিয়ে ব্যালকনিতে বসার পর তাসমিয়া বলল, আমার ফ্রেন্ড ঈশাকে তো তুমি চেনোই। ওর সমস্যা নিয়ে তোমার সাথে আলোচনা করতে চাচ্ছি ভাবী। ঈশা আর ওর হাজবেন্ডের চমৎকার রিলেশন ছিল। অনেকটা আমাদের বাড়ির ক্যাপলদের মতো সম্পর্ক ছিল ওদের হাজবেন্ড ওয়াইফের মাঝে বিয়ের পর থেকে গত দশ বছর। সারাক্ষণ দুষ্টুমি, খুনসুটি করতো দুজন। ওদের দুই মেয়ে। বড় মেয়ের বয়স সাত, ছোটটার চার। দুজনই যথাসাধ্য শরীয়তের বিধিবিধান মেনে চলার চেষ্টা করতো জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। মাঝে বছর খানেক যোগাযোগ ছিল না ওর সাথে তেমন। সপ্তাহ খানেক আগে ঈশার হাজবেন্ড সাফী ভাই যোগাযোগ করেছেন আমার সাথে। তখন জানতে পারলাম ঈশা ডিভোর্স ফাইল করেছে। কারণ কি জানতে চাইলে সাফী ভাই জানালেন, বিয়ের আগে অন্য এক মেয়ের সাথে উনার রিলেশন ছিল। পারিবারিক কারণে বিয়ে হতে পারেনি। পরে ঈশার সাথে বিয়ে হয়েছিল। ঈশা খুবই ভালো মেয়ে। এত ভালো একটি মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পেয়ে সাফী ভাই অতীত একদম ভুলে সুখের সংসার গড়ে তুলেছিল দুজন মিলে। গত রোজার ঈদের সময় ফেসবুকে আগে যে রিলেশন ছিল সেই মেয়েটার সাথে সাফী ভাইয়ের আবার কন্টাক্ট হয়। প্রথম দিকে দুজন শুধুমাত্র ফ্রেন্ডের মতো কথাবার্তা বলেছে। কিন্তু এভাবে কথা বলতে বলতে দুজন কাছাকাছি চলে আসে পুনরায়। অতীতের স্মরণ করতো দুজন, দুজনের বিয়ে হলে কত ভালো হতো সেসব কল্পনা জল্পনা করতো, বিচ্ছেদের জন্য একে অন্যকে দায়ী করে অভিমান করতো, এভাবে চলতে চলতে আবার পুরনো প্রেম জেগে উঠেছিল দুজনের মনে। একদিন ঈশা সাফী ভাইয়ের ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে দেখে দুজনের প্রেমালাপ, মন জুড়ে এখনো তুমি, তোমারে পারিনি ভুলতে টাইপের হাহুতাশ। ঈশা জানার পর সাফী ভাই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু ঈশার কথা হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের ভিত্তিই হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাস ভেঙ্গে গেলে ভালোবাসা, সম্মান কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এমন প্রাণহীন সম্পর্ক না আমাদের জন্য কল্ল্যাণকর হবে, না আমাদের সন্তানদের জন্য। তাই ডিভোর্সই উত্তম। সাফী ভাই অনেক ক্ষমা চেয়েছে, প্রেমিকাকে সব কিছু থেকে ব্লক করে দিয়েছে, সম্পর্ক একেবারে ছিন্ন করেছে কিন্তু ঈশা কিছুতেই রাজী হয়নি ক্ষমা করে দিয়ে পুরনায় সংসার করতে। দুই মেয়েকে নিয়ে ঈশা চলে গিয়েছে ওর বাবার বাড়িতে। সাফী ভাই জানেন ঈশা যে তোমাকে ভীষণ পছন্দ করে। তাই আমাকে অনুরোধ করেছেন আমি যেন তোমাকে বলি ঈশাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে। তুমি কি ঈশার সাথে কথা বলবে ভাবী? ওর ফোন নাম্বার দেবো?
তাসমিয়ার প্রশ্ন শোনার পরও বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর নূহা বলল, কি কথা বলবো? আমার কাছেও দাম্পত্য জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বিশ্বাস। কারো প্রতি বিশ্বাস না থাকলে তাকে শ্রদ্ধা, সম্মান করাও যায় না। আর শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস ছাড়া কোন সম্পর্ক টিকে থাকবে কিসের উপর ভিত্তি করে? ঈশার স্থানে আমি থাকলে আমি নিজেও হয়তো ঈশার মতোই সিদ্ধান্ত নিতাম। আমি নিজে যে কাজ করবো সেই কাজের বিপরীত কিছু করার জন্য আরেকজনকে কিভাবে উৎসাহিত করবো? তুমি বরং তোমার ভাইজানকে বলো এই বিষয়টা দেখতে। উনি আমার চেয়ে উত্তম পরামর্শ দিতে পারবেন সাফী ভাইকে উনার করণীয়র ব্যাপারে।
তাসমিয়া বলল, ভাইজানকে আমি বলেছি ভাবী। ভাইজান সাফী ভাইকে বিকেলে আসতেও বলেছেন কথা বলার জন্য। কিন্তু ঈশার সাথে কথা তোমাকেই বলতে হবে। ভাইজানও এই কথাই বলেছেন আমাকে।
কোন কথা?
ভাইজান বলেছেন, তোমাকে ভাবীকে বলো ঈশার সাথে কথা বলতে। দুষ্টু মিষ্টি মিশ্র হাসির অভিব্যক্তি ছড়িয়ে পড়লো তাসমিয়ার চেহারা জুড়ে। কিছু কিছু ব্যাপারে নূহা ভীষণ রকম অনুদার সেই তথ্য বেশ ভালো করেই জানা আছে তাসমিয়ার। জানে যে ব্যাপারগুলোতে নূহা কাউকে কনভিন্স করতে নারাজ তারমধ্যে একটি হচ্ছে বিশ্বাস ভঙ্গ। বিশেষ করে দাম্পত্য সম্পর্কে ধোঁকা দেয়া একেবারেই মেনে নিতে পারে না নূহা। সেজন্যই আগে জাওয়াদের কাছেই গিয়েছিল ঈশা, সাফীর সমস্যা নিয়ে তাসমিয়া। কারণ পুরো দুনিয়াতে জাওয়াদই একমাত্র ব্যক্তি যার বলা কোন কথা অপছন্দীয় হলেও বিরোধ করার আগে নূহা দ্বিতীয়বার ভেবে দেখে।
বেশ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ বসে থাকার পর নূহা বলল, সাফী ভাই যখন তোমার ভাইজানের সাথে কথা বলতে আসবেন আমাকে বলো। আমি আড়াল থেকে উনাদের কথোপকথন শুনবো। এরপর যদি আমার মনেহয় ঈশার সাথে কথা বলা উচিত তাহলে বলবো ইনশাআল্লাহ।
তাসমিয়া বলল, ঠিকআছে ভাবী। কোন ব্যাপার নিজে মেনে নিতে না পারলে, অন্যকে মানাতে যাওয়াটা আসলেই অনেক কঠিন।
নূহা হেসে বলল, উহু, মোটেই কঠিন না। বরং নিজে মান্য বা আমল না করে অন্যকে সেই ব্যাপারে উৎসাহিত করাটা বর্তমানে মানুষের স্বভাবধর্মে পরিণত হয়েছে। নিজে ভুলের পথে থেকে অন্যকে সঠিক পথের দিশা বাতলে দেয়ার মানুষের অভাব নেই। সেজন্যই হয়তো মাহফিলে স্ত্রীর হক আদায়ের উপরে বক্তব্য উপস্থাপন করা ব্যক্তি ঘরে ফিরে নিজের স্ত্রীকে অপমান, ভৎর্সনা, এমনকি গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করেন না। কিন্তু আমি এমন কিছু করতে চাইনা। আমি নিজে যা করবো না, অন্যকেও তা করতে বলবো না। যে বিষয়টা আমার পক্ষে মেনে নেয়া কঠিন, তেমন কিছু করার জন্য আমি কেন অন্য কাউকে বোঝাতে যাবো?
হুম, তোমার কথাও ঠিক আছে ভাবী। আচ্ছা তুমি সাফী ভাইয়ের কথা শুনে দেখো। এরপর যদি তোমার মনেহয় ঈশার সাথে কথা বলা উচিত তাহলে বলো। এখন ঈশার কথা বাদ। এখন আমার দুঃখের কথা শোনো এবং সমাধান দাও।
নূহা হেসে বলল, শোনাও তোমার দুঃখগাঁথা।
তাসমিয়া বলল, তোমার ভাই আমার হাজবেন্ড কম, দোস্ত বেশি এই তথ্য তো জানোই। এমনিতে সে ভীষণ ভালো একটা ছেলে এই তথ্যও তুমি জানো। সেই তথ্য তুমি জানো না সেটা হচ্ছে রাগ হলেই তোমার ভাই আউলা ঝাউলা হয়ে যায়। আমি রাগ করার মতো কর্মকান্ড করি সেটা মানছি। কিন্তু রাগ করার মতো কিছু করলেই কি সবসময় রাগ করতে হবে? ভালোবাসার মতো কত কাজও তো করি। কই সবসময় তো ভালোবেসে ভাসিয়ে দেয়না আমাকে। তাহলে রাগ দেখাতে এমন ভুলে যায় না কেন? ব্যস্ততার কারণে রাগ দেখানোর সময়ের অভাবে বকেয়াই পরে থাকে না কেন? তুমিই বলো ভাবী আমি কি খুব বেশি ভুল কিছু বলেছি?
নূহা হাসতে হাসতে বলল, মোটেই না।
তাসমিয়া বলল, তবে রাগ দেখানো নিয়েও আমার তেমন কোন অভিযোগ নেই। রাগলে তোতলা টাইপ হয়ে যায় তোমার ভাই। তোতলামো কথাগুলো শুনতে এত্তো কিউট লাগে যে কি বলবো! আমি ওর কিউটনেস দেখাতেই ব্যস্ত থাকি বিধায় রাগ করে কি বলছে না বলছে গায়ে মাখি না কখনোই খুব একটা। বকা দিলেও আমিই নিজ থেকে যেয়ে কথা বলি।। কিন্তু উমার ঠিক আমার উল্টো। আমি যদি রাগ করে কিছু বলি ওর গালে পানি এসে যায় একদম। মানে ফুলে ঢোল আরকি! সমবয়সী বিয়ে করার জ্বালাও কম না বুঝলে ভাবী। এই যেমন, তিন বাচ্চাকে আমার কাছে রেখে লাফাতে লাফাতে ছোট ফুপির ছেলের বিয়ে খেতে চলে গেলো গত পরশু। কথা ছিল গতরাতে চলে আসবে। কিন্তু ভাই-বন্ধুদের সাথে আনন্দে মশগুল থেকে আসেনি। আজকে ফার্স্ট ফ্লাইটে ওর চলে আসা উচিত ছিল কিনা বলো? আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম নয়টায় মধ্যে উমার আমার সম্মুখে থাকবে ইনশাআল্লাহ। ওর পছন্দের নাস্তাও রেডি করলাম ফজরের পর না ঘুমিয়ে। নাস্তা রেডি করে ফুপির বাসায় ফোন করেছিলাম উনাদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য। তখন কথায় কথায় ছোট ফুপি জানালো উমার এখনো ঘুমোচ্ছে। মাথায় তখন বাজ পড়বে কিনা বলো? অবশ্যই পড়বে। আমারও পড়লো। মনেহলো একা জ্বলবো কেন? যার কারণে বাজ পড়েছে তারেও পুড়িয়ে ছারখাড় করে দেবো। যাইহোক, ফোন করে লেডি টারজান হয়ে কিছুক্ষণ চিৎকার করলাম। তোমার ভাইয়ের এতবড় দুঃসাহস সে নিজের ভুল স্বীকার না করে উল্টা আমাকে ঝাড়ির উপর ঝাড়ি। কবে আমার কারণে তার মেয়েদের জ্বর হয়েছে, কবে তার ছেলে একা একা রান্নাঘরে গিয়ে হাত পুড়িয়েছে, কবে আমি সুপার মার্কেটে গিয়ে নিজের মনে কেনাকাটা করতে করতে বাচ্চাদেরকে আরেক সারিতেই ফেলে এসেছিলাম, ইত্যাদি ইত্যাদি বিশাল লিষ্ট। বললাম, চিৎকার করে এসব কথা বলছো কেন? ফুপিরা শুনলে কি ভাববে? উমার বলল, ফুপিরা যাতে শোনে সেজন্যই জোরে জোরে বলছি। তোমার কর্মকান্ড মাইকিং করে বলার মতো। বাড়ির সবার জানা উচিত কেমন মেয়ে তারা আমার ঘাড়ে চাপিয়েছে। আর কিছু না বলে আমি ফোন রেখে দিলাম। এরপর থেকে আমার মাথা কাজ করছে না। তুমি বুদ্ধি দাও কিভাবে ঘাড়ের বোঝা বাড়িয়ে ওর ঘাড় মটকে দেয়া যায়। আমি মটমট শব্দও শুনতে চাই ওর ঘাড় ভাঙ্গার। হাসি থামাও তো ভাবী পরামর্শ দাও।
নূহা হাসতে হাসতে বলল, পরামর্শ থাক তারচেয়ে দোয়া দেই। দোয়া করি, সারাজীবন তোমরা দুজন এমনই থাকো, খুনসুটি ভালোবাসা দিয়ে পরস্পরকে আঁকড়ে রাখো। কখনো সখনো হলে হোক মত পার্থক্য,কিন্তু উভয়ের মন থাক একাকার অটুট থাকুক ঐক্য।
তাসমিয়া হেসে বলল, তোমার দোয়ায় আমীন।
একটুক্ষণ চুপ থেকে হাসি মুখে নূহা বলল, সুইজারল্যান্ড গিয়ে তুষার ঝড়ে আটকা পড়েছিলাম একবার। আমাদের থাকার প্ল্যান ছিল না। সকালের ফ্লাইটে গিয়েছিলাম। কাজ শেষ করে বিকেলের ফ্লাইটেই ফিরে আসার কথা ছিল। কিন্তু প্রচুর তুষারপাতের কারণে আটকা পরে গিয়েছিলাম। তাও আবার মাঝপথে গাড়ির ভেতর। সামনে যাবার পথ ছিল বন্ধ আর পেছনে আমাদের মতো শুভ্র বরফের শ্রাবণে আটকা পরা আরো কয়েকজন ব্যক্তি। করুন চোখে আমার সফরসঙ্গীর দিকে তাকিয়েছিলাম। উনি মিষ্টি করে হেসে আশ্বাস ভরা কন্ঠে বলেছিলেন, এদিকটাতে এমনটা হয় প্রায়ই। চিন্তার কিছু নেই কিছুক্ষণের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু ইনশাআল্লাহ। কিন্তু উনার কথা উল্টো প্রমাণিত হলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আঁধার নেমে এলো এবং সেই সাথে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা। গরম কাপড় যা ছিল তা মোটেই যথেষ্ট ছিল না। কোথাও থেকে গরম কাপড় কিনে নেবার মতো অবস্থাও ছিল না। আমার সফরসঙ্গী বড়ই রোম্যান্টিক ছিলেন। ঐ রকম ভয়ঙ্কর ঠান্ডার মধ্যেও মুখে হাসি টেনে দু’হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিলেন, স্বামীরা শত ভালো কথা বললেও তো স্ত্রীদের সেটা মনঃপুত হয় না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কুরআনে বলে দিয়েছেন, “আমি তোমার পরিচ্ছদ এবং তুমি আমার পরিচ্ছদ”। সুতরাং, একে অন্যেকে ঢেকে রাখার, উষ্ণতা দেয়াটাই আমাদের ফার্স্ট ডিউটি। অন্যসময় হলে এই আহ্বান হয়তো বাতাসেই উড়িয়ে দিতাম। কিন্তু ঐ মূহুর্তে দরকার ছিল পরিচ্ছদের, তারচেয়েও বেশি উষ্ণতার।
হাসি একান ওকান বিস্তারিত করে তাসমিয়া হেসে বলল, ভাইজান ছিলেন তোমার সাথে?
তাসমিয়া প্রশ্ন শুনেও না শোনার ভান করে হাসি মুখে নূহা বলল, সূরা বাকারাহ এর ১৮৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন,” তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ”। জীবনে এরআগে অসংখ্যবার এই আয়াত ও তার ব্যাখ্যা পড়েছিলাম, শুনেছিলাম। কিন্তু সেদিন প্রথম আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়েছিলাম উষ্ণতার আশায়। অন্যরকম একটা অনুভূতি ছিল ভালো লাগার। কিন্তু তারচেয়েও বেশি ছিল কারো পরিচ্ছদ হবার উপলব্ধি। পোশাক আসলে কি? যা আমাদেরকে ঢেকে রাখে। কিন্তু এই ঢেকে রাখার মাঝেও আছে বৈচিত্রতা। পরিবেশ-পরিস্থিতি, ঋতু-প্রকৃতি, আবহাওয়া ইত্যাদির প্রভাবে পোশাকের বদলে যাওয়া ধরণ। গরমের সময় পাতলা, নরম সুতি কাপড়ের পোশাক কতই না আরামদায়ক। শীতের সময় সেই পোশাকই হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক কষ্টের কারণ। আবার শীতপ্রধান দেশের ভারি ওভারকোর্ট মরুভূমিতে বড়ই বেমামান। তেমনি বরষার রেইনকোর্ট গায়ে বসন্তের বুকে চলাও হাস্যকর। মূলকথা, বদলে যায় পোশাকের ধরণ, যখন হয় পরিবেশ ও অবস্থার পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তন মোটেই অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। বরং স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য অতীব জরুরি। মনে প্রশ্ন জাগাটা খুব স্বাভাবিক যে, তাহলে কি পরিবেশ ও পরিস্থিতি ভেদে, মনের ঋতু ও আবহাওয়ার পরিবর্তনে আমাদের মানসিক পরিচ্ছদের বদলটাও স্বাভাবিক নয়? স্বাভাবিকের সাথে সাথে অতীব জরুরিও আসলে।
হুম, এভাবে তো ভেবে দেখিনি কখনো। বললো তাসমিয়া।
নূহা বলল, স্বামী-স্ত্রীর বন্ধনটাকে ভীষণ অদ্ভুত, বিস্ময়কর মনেহয় সবসময়ই। দুজন মানুষ যাদের মধ্যে থাকে না কোন রক্তের সম্পর্ক, থাকে না আত্মীয়তার বন্ধন। না থাকে বন্ধুত্ব, না কোন গভীর পরিচিতি। তবুও কি বিস্ময়কর ভাবে জুড়ে যায় পরস্পরের সাথে। এমন একটা বন্ধন যেটা মোটেই অটুট না। বরং ভেঙে যেতেই পারে প্রতিকূলতায় এমন গ্যারান্টি প্রাপ্ত। অথচ সেই বন্ধনের উপর ভর করেই দুজন মানুষ শ্রদ্ধা, সম্মান, বিশ্বাস, ভরসা ও ত্যাগের ফোঁড়ে গড়ে তোলে সুখ-স্বপ্ন-ভালোবাসার নকশীকাঁথা। অচেনা দুজন মানুষ হয়ে যায় সবচেয়ে আপন কেউ, কাছের কেউ, চিরচনা কেউ, সবচেয়ে বড় শুভাকাঙ্ক্ষী, মর্মব্যথী, পরম নির্ভরতার ও প্রশান্তির আশ্রয়। আগলে রাখে একে অন্যেকে সকল নেতিবাচকতা থেকে। ঠিক যেন পোশাকের মতোই। তবে খুব কম সময়ই হয়তো খেয়াল থাকে পোশাকের বৈচিত্রতার কথা। পরিবেশের সাথে সামঞ্জন্সতার কথা। বর্তমান অবস্থায় পরিহিত পোশাকটা ঋতু ও আবহাওয়ার সাথে মানান সই কিনা সেই বিবেচনাটা খুব জরুরি। কারণ কনকনে ঠান্ডায় কারো তরে ফিনফিনে মসলিন হয়ে কি লাভ? কি লাভ প্রখর রৌদ্দুরে উলের সোয়েটার হয়ে? আবার কে বলেছে অঝর শ্রাবণে ছাতা হয়ে লাভ নেই? কে বলেছে ছাতা পরিচ্ছদ নয়? কে বলেছে মরুর বুকে ঝর্ণাধারাই হতে হবে? সাইট ব্যাগে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বটল হওয়া যাবে না? এই কথাই বা কে বলেছে?!
এভাবে তো কখনোই চিন্তা করিনি ভাবী।
এখন বসে বসে ভাবো। আমি ততক্ষণে পতিসেবা করে আসি। নাস্তা নিয়ে আসি তোমার ছোট ভাইয়া। বলে হাসতে হাসতে চলে গেলো নূহা।
আর তাসমিয়া গালে হাত দিয়ে ভাবনায় মশগুল হলো।
চলবে..