banner

শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 113 বার পঠিত

স্বামীর ঘরে তালাবন্দি ৪৩ বছর!

bagerhat20140630213608

আরিফ সাওন : স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ঘর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন শেখ নুর মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তির ছোট স্ত্রী পারভীন আকতার। পরে নুর মোহাম্মদ তার অনুগতদের সহযোগিতায় পারভীনকে ধরে এনে শিকলে বেধে রাখেন। আর পর্দার দোহাই দিয়ে বড় স্ত্রী কুলসুম বেগমকে ৪৩ বছর ধরে ঘরে তালাবন্দি করে রেখেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার ছেলে।

 

বাগেরহাট পুলিশ সুপারের কাছে গত ২৬ জুন এই অভিযোগ করেন শেখ নুর মোহাম্মদের ছেলে বাকি বিল্লাহ। তিনি  তার এই দুই মা’কে উদ্ধার করার আবেদন জানিয়েছেন।

 

অভিযোগ পেয়ে বাগেরহাট পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্লা ও সহকারী পুলিশ সুপার (বাগেরহাট সদর) সাদিয়া আফরোজ বাগেরহাট সদরে সরুই এলাকায় নুর মোহাম্মদের বাড়িতে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন।

 

এলাকাবাসী জানিয়েছেন, নুর মোহাম্মদ সরুই খানকা শরীফের খাদেম। তিনি নিজেকে পীর বলে দাবি করেন। তার অনেক মুরিদ আছেন।

 

বাকি বিল্লাহ লিখিত অভিযোগে বলেছেন, তার বাবার দুই স্ত্রী। বাবা তাদেরকে কখনো ঘরের বাইরে বের হতে দেন না। সবসময় বাইরে থেকে ঘর তালা দিয়ে রাখেন, তাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। শরীরে অলংকার তো দূরের কথা প্রয়োজনীয় জিনিসও দেন না। বাইরের কাউকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেন না। কোন আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বা দেখা-সাক্ষাৎ করতে দেন না।

 

বাকি বিল্লাহ আরো বলেছেন, তার বোনরাও ঘরের বাইরে যেতে পারেন না। তাদেরকে লেখাপড়া করার সুযোগ দেয়া হয় নি। বড় বোন ফাতেমা আকতারের বয়স প্রায় ৩৫। ফাতেমা ও আরেক বোন ঘরে বন্দি থাকতে থাকতে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। কঠোর পর্দায় রাখতে পারবে- এমন ছেলে না পাওয়ায় দুই বোনকে আজো বিয়ে দেয়া হয় নি।

 

সহকারী পুলিশ সুপার সাদিয়া আফরোজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তিনি ২৯ জুন ওই বাড়ি গিয়েছিলেন। বাড়ির একটি ভবন দুই কক্ষের। কোন কক্ষেই জানালা নেই। একটি কক্ষে বাতি নেই। নেই কোন আসবাবপত্র। বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকে। এগুলো বাস করার উপযোগী নয়।

 

সাদিয়া আফরোজকে পেয়ে নুর মোহাম্মদের বড় স্ত্রী কুলসুম বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং স্বামীর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। কুলসুম বেগম তাকে জানান, তিনি বিয়ের পর থেকে ৪৩ বছর তালাবন্দি অবস্থায় আছেন।

 

বাকি বিল্লাহ ৩০ জুন সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে এই লেখকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করে জানান, পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়ায় তার বাবা ক্ষিপ্ত হয়েছেন। বাকি বিল্লাহ তার বাবার হাত থেকে দুই মা ও বোনদের রক্ষার দাবি জানান।

 

এ ব্যাপারে নুর মোহাম্মদের বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তাকে ফোন করা হলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে লাইন কেটে দেন।

 

বাগেরহাট পুলিশ সুপার নিজামুল হক মোল্যা জানিয়েছেন, নুর মোহাম্মদকে তিনি ডেকেছিলেন। পুরো বিষয়টি নুর মোহাম্মদ অস্বীকার করেছেন। এ সময় ওই ওয়ার্ডের কমিশনার তার অনুকুলে কথা বলতে এসেছিলেন। পুলিশ সুপার বলেন, ‘এটা এক ধরনের ব্যাধি। এ থেকে তাদেরকে উদ্ধার করতে হবে।’

 
লেখক : বাগেরহাটের স্থানীয় সাংবাদিক।

 

 

অপরাজিতাবিডি ডটকম/আরএ/এ/ ১২ জুলাই ২০১৪ই.

Facebook Comments