অপরাজিতাবিডি ডটকম, ঢাকা: আশালতা বৈদ্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর সৈনিক। দেশের জন্য যুদ্ধ করেই তিনি শুধু ক্ষান্ত দেননি। তিনি একাধারে একজন রাজনীতিবীদ ও সমাজসেবিকা।
স্কুল জীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালে রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে ভাবে জড়িত হয়ে পড়েন তিনি। তারই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী।
এ সময় তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য ৮ ও ৯নং সেক্টরের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া সীমানা সাব সেক্টরের হেমায়ত বাহিনীতে যোগ দেন। হেমায়েত বাহিনীতে মহিলা বাহিনী নামে আলাদা একটা বাহিনী গঠন করা হয়। এ মহিলা বাহিনীতে মোট ৩৫০ জন নারী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এই বিশাল নারী মুক্তিযোদ্ধার বাহিনীর একমাত্র কমান্ডার ছিলেন আশালতা বৈদ্য। তার নেতৃত্বে ৪৫ জন সশস্ত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
তিনি নিজেই তুলে ধরেন মুক্তিযুদ্ধের সময়কার নানান কথোপকথন। ৭১ সালে হেমায়ত বাহিনী ছিল একটি সুসংগঠিত দল। সাতটি বিভাগ ছিল হেমায়ত বাহিনীর। এর মধ্যে মহিলা দলে কমান্ডার ছিলাম আমি। সাতটি দলে কাজ করতো হেমায়ত ভাইয়ের অধীনে। সুশৃঙ্খলিত হওয়ার কারণে কোটালীপাড়ায় পাকিস্তানি বাহিনী প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। আমরা ১৬ ডিসেম্বরের আগেই কোটালিপাড়াকে শত্র“মুক্ত ঘোষণা করেছিলাম।
তিনি বলেন, নারীযোদ্ধা সত্ত্বেও আমার দলের ৪৫ জন নারী মুক্তিযোদ্ধা সশস্ত্র পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। কলাবাড়িতে, ঘাঁঘর নদীর পাড়ে , বাশঁ বাড়িয়ায়, হরিণা হাটি ও রামশীল পয়সার হাটে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে আমাদের বেশির ভাগ যুদ্ধ হয়। রামশীল নদী পাড়ে একদিন লঞ্চে করে কয়েক হাজার রাজাকার পাকিস্তানি বাহিনীসহ আসে। সেখানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আমাদের তুমুল যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধ ৩ ঘন্টা স্থায়ী হয়েছিল। হাজার হাজার রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনী নিহত হয় মাত্র কয়েক’শ মুক্তিযোদ্ধার হাতে। এই যুদ্ধে আমাদের বাহিনীর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল মারা যান। এছাড়া হেমায়ত ভাইসহ ৫ থেকে ৬ জন আহত হয়।
আশালতা বলেন, যুদ্ধের শুরু থেকে আমাদের কঠিন প্রশিক্ষণে অংশ গ্রহণ করতে হয়েছিল। হেমায়ত কমান্ডারের হাতে আমরা মহিলা কমান্ড প্রশিক্ষন নিয়ে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করেছি।
শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে রাজনীতিতে যোগদানের পর তিনি বিভিন্ন সময় ছাত্র লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধেও চেয়েও ‘বঙ্গবন্ধু’কে হত্যার সময়টা দুর্বিসহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় সে সময়ে তাকে জাতীয় নেতাদের সঙ্গে অসংখ্য মামলায় আসামি করা হয়। পওে রোকেয়া হল থেকে তৎকালীন সেনাবাহিনী আমাকে প্রেফতার করে। ঐ সময় সামরিক বাহিনীর হাতে আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।
ছাত্র জীবন শেষ করে সূর্যমূখী নামক একটি সমবায় সেবামূলক সংস্থা দিয়ে তার সমাজ সেবামূলক কর্মকান্ডের শুরু। বর্তমানে তিনি এ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক।
আশালতা বৈদ্য তার বৈচিত্র্যময় জীবনের সেবামূলক কাজের জন্য ২০০৫ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার বাছাই কমিটিতে মনোয়ন পেয়েছিলেন। এছাড়া তিনি শ্রেষ্ঠ মহিলা সমবায়ের প্রেসিডেন্ট স্বর্নপদক, রোকেয়া পদক, প্রশিকা মুক্তিযোদ্ধা পদকসহ অনেক পুরষ্কার লাভ করেন। তবে এতোকিছুর বাইরেও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি আজও কোনো রাষ্ট্রীয় উপাধি পাননি।
এ সর্ম্পেকে আশালতা বলেন, রাষ্ট্রীয় উপাধি আমি আশা করি না, এটা আমার প্রাপ্তি। তবে সরকারের কাছে আর কোন আশা করি না কারণ সরকারের সময় কই আমাকে উপাধিতে ভূষিত করার। উপাধির জন্য যুদ্ধ করিনি, দেশপ্রেমের কারণে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।
অপরাজিতাবিডিডটকম/আরআই/এ/২৬মার্চ২০১৪