banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 1355 বার পঠিত

 

“স্বাতীর রঙধনু”-(শিশুদের মনোজগত ভ্রমণ)পর্ব-১

আফরোজা হাসান


বাচ্চাদের মধ্যে মূল্যবোধ থেকে নিয়ে শুরু করে ধর্মবোধ সবকিছু ঢোকানো ই অনেক বেশি সহজ। কারন বাচ্চারা একটা কথা শুনেই বিচার করতে বসে যায়না। যুক্তি-তর্ক বা অভিজ্ঞতার আলোকে যাচাই করতে চায়না। দোষ-গুনও মাপতে বসেনা। শুধু একটু কষ্ট করে ওদের বুঝিয়ে বলতে পারলেই ওরা মেনে নেয় এবং সর্বাত্মক চেষ্টা করে সে মতো কাজ করার। কখনোই বড়দের মত জাজমেন্টাল হয়ে সব কথার পেছনে “কিন্তু” খোঁজে না। সুন্দর করে কিছু বললে ওরা মুগ্ধ হয়, কখনোই ভাবেনা যে এত সুন্দর করে কথা বলছে “রহস্যটা” কি? যে কথা শুনে একটা শিশু চোখ বড় বড় করে আগ্রহ নিয়ে তাকায়, একই কথা বয়স্ক কাউকে বলতে গেলে চোখ সরু করে তাকায়। বাচ্চারা অতিরিক্ত আন্তরিকতা দেখলে খুশি হয় আর বড়রা সন্দেহে পরে যায় আন্তরিকতার পেছনে কোন “উদ্দেশ্য” আছে কিনা ভেবে। সুন্দর কোন পরামর্শ দিলে ছোটরা মুখভরা হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানায় আর বড়রা ভাবে নিজের “জ্ঞান” জাহির করতে এসেছে। না আমি ছোটদের প্রশংসা আর বড়দের সমালোচনা করতে লিখছিনা। বাচ্চাদের সাথে প্রচুর সময় কাটানোর ফলে এই পার্থক্য গুলো নজরে পড়েছে। আমাকে একজন পরামর্শ দিয়েছিলেন-“ ঘরে বসে কেউ যদি শুদ্ধ মানুষ হতে চায় তার উচিত বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানো। সমাজকে পরিবর্তন করতে চাইলে তার উচিত বাচ্চাদের নিয়ে কার্যক্রম শুরু করা। কারো জীবনের স্বপ্ন যদি থাকে একজন মানুষকে হলেও আলোকিত করবে তার উচিত একটা বাচ্চাকেই বেছে নেয়া। কারন বাচ্চারা জার্জ হয়ে বিচার করতে বসবেনা, সমালোচক হয়ে সমালোচনা করবেনা। বাচ্চাদের মন যেহেতু পবিত্র নিন্দা, গীবত বা অপবাদের স্বীকারও হতে হবেনা।” এখন বড় হয়ে তো আর কেউ জন্মগ্রহন করেনা। এরঅর্থ হচ্ছে বাচ্চা থেকে বড় হবার পথে হাঁটতে হাঁটতে শুদ্ধতা হারায় একজন মানুষ।

একটি শিশু যাতে বড় হয়ে একজন আদর্শ মানুষ হতে পারে তারজন্য সবচেয়ে জরুরি সঠিক অভিভাবকত্ব। একমাত্র সঠিক অভিভাবকত্বই পারে একটি শিশুকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে তাকে সুখী সুন্দর এবং উন্নত জীবনবোধ দিতে। শিশুকে গড়ে তোলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ জীবনের প্রথম ৫-৬টি বছর। গবেষণার দ্বারা এটা প্রমাণিত যে ৪-৬ বছর বয়সে একটি শিশু নিজেকে নিয়ন্ত্রণের যে দক্ষতা অর্জন করে তাঁর উপর নির্ভর করেই পরবর্তিতে পরিচালিত হয় তাঁর জীবনের গতিপথ। শিশুর জন্মের প্রথম ৫-৬টি বছর যেহেতু বাবা-মাই থাকে তার সব। সুতরাং তারাই পারেন তাদের শিশুকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে এবং এই মূল্যায়নটুকুই শিশু সারাজীবন বহন করবে। সাধারণত এতো ছোট বয়সে শিশুদের পরিকল্পনা মাফিক কিছু শেখানো হয়না। অথচ এই বয়সেই শিশুরা শেখে সবচেয়ে বেশি। আবার যারা পরিকল্পনা মাফিক শেখাতে চেষ্টা করেন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের পরিকল্পনাটা বাচ্চাদের জন্য খুব বেশি কষ্টকর হয়ে যায়। যার ফলে পরিকল্পনা থাকলেও তা থেকে শিশু বা অভিভাবক কেউই তেমন উপকৃত হতে পারেননা। তাই বুদ্ধিমান অভিভাবক হচ্ছেন তারাই যারা বাচ্চার ধারণ ক্ষমতার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন কৌশলে প্রয়োজনীয় শিক্ষার মাধ্যমে বাচ্চাকে গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে। আমি খুব বেশি জানিনা। আমার জীবনের গণ্ডিটাও খুব ছোট। কিন্তু একজন আদর্শ মা হতে চাই। এমন সন্তানের মা বিচার দিবসে যার কাছ থেকে আমাকে পালাতে হবেনা। কি কষ্ট একটা শিশুকে অচেনা অজানা একটা জগত থেকে পৃথিবীতে নিয়ে আসা তা বাবা-মা দুজনেই জানেন। আমি একজনকে ক্রেডিট দিতে চাইনা। কারন আমাদের প্রতিটা সন্তানের জন্মের পর আমার মতোই কষ্ট স্বীকার করতে ওদের বাবাকেও দেখেছি। কত আদর কত ভালোবাসায় কত যত্নে আমরা গড়ে তুলি একটি সন্তানকে। যে সন্তানের সামান্য একটু জ্বর হলে সারারাত ঘুমোতে পারিনা। তাকে আগুনে জ্বলতে কিভাবে দেখবো আমি? পরকালে নিজের চিন্তায় নাহয় ভুলে যাব মাতৃত্বকে কিন্তু এখন?

আমার সন্তানরা যাতে ছোট থেকে বড় হবার পথে নিজের শুদ্ধতাকে হারিয়ে না ফেলে তার খেয়াল রাখার দায়িত্ব তো আমার। এখন তো “অবুঝ” ভেবে আমরা বাচ্চাদের গড়ার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন সময়টাকে হেলায় খেলায় চলে যেতে দেই। নিজেকে দিয়েই ভাবি বিশ বছর আগে বাবার কথা কত সুন্দর মনে হতো আর মেনেও নিতাম বিনা দ্বিধায়। মেনে চলতে চেষ্টা করতাম আপ্রাণ। কিন্তু এখন বাবা কিছু বললে যাচাই করতে লেগে যাই। দুই বছর আগে আমার পাঁচ বছর বয়সি ছেলেটাকে নতুন কিছু শেখানো যতটা সহজ ছিল এখন আর তা নেই। সাত বছরের ছেলেটার যুক্তি শুনে অবাক না হয়ে পারিনা মাঝে মাঝে। একেকটা দম্পতি তাদের সন্তানকে একেক ভাবে একেক আদর্শে গড়ে তুলতে চান। নিজে মুসলিম হবার কারনে আমি চাই আমার সন্তানকে ইসলামের আলোকে গড়ে তুলতে। আর এরজন্য খুব বেশি কিছু করিনি আমি। আসলে একটু সতর্ক হলে বেশি কিছু করার প্রয়োজনও পড়ে না।

চলবে…

Facebook Comments