banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 247 বার পঠিত

 

স্ত্রীকে ১৫ টুকরো করে শ্বাশুরীকে ফোন দিয়েছে ঘাতক স্বামী


নারী সংবাদ


গাজীপুরের শ্রীপুরে গার্মেন্টস কর্মী এক নারীকে ১৫ টুকরো করে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী। পুলিশ ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে নিহতের ৫ টুকরো মাংস পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের ঘাতক স্বামী মামুন মিয়াকে (২৫) সাভারের কবিরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার বিকেলে গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান, নেত্রকোনার পূর্বধলা থানার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে সুমা আক্তার ওরফে সুমির (২৭) সঙ্গে প্রায় দু’বছর আগে গাজীপুরের কাপাসিয়া থানার সিংহশ্রী ইউনিয়নের বরইবাড়ি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে মামুন মিয়ার (২৫) বিয়ে হয়। এটি উভয়ের দ্বিতীয় বিয়ে। বর্তমান সংসারে কোন সন্তানের জন্ম না হলেও তাদের উভয়ের পূর্বের সংসারের একজন করে সন্তান রয়েছে। ওই দু’সন্তানের একজন তার দাদীর কাছে এবং অপরজন তার নানীর কাছে থাকে। বিয়ের পর সুমা তার স্বামী মামুনকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গিলারচালা এলাকার শফিকুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় সাবলাইম গ্রীনটেক নামের এক পোশাক কারখানার সুয়িং অপারেটর পদে চাকুরি করতো। মামুন ওই এলাকায় ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতো। বিয়ের কিছুদিন পর হতে পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে মামুন ও সুমার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চলে আসছিল। সম্প্রতি সুমার জমানো ৪০ হাজার টাকা ও মামুনের নারীঘটিত বিষয়াদি নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দাম্পত্য কলহ চরম আকার ধারণ করে।

পুলিশ সুপার আরো জানান, ঈদের ছুটি কাটাতে শুক্রবার স্বামীকে নিয়ে নেত্রকোনা গ্রামের বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নেয় সুমা। অপরদিকে আগেরদিন স্ত্রীকে হত্যার পরিকল্পনা করে মামুন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মামুন স্থানীয় বাজার থেকে দু’টি ট্র্যাভেল ব্যাগ, পলিথিন ও কিছু ঘুমের ট্যাবলেট কিনে। এসময় সে একশ’টাকা দিয়ে একটি ধারালো চাকুও কিনে । বাসায় যাওয়ার সময় মামুন হোটেল থেকে হালিম ও রুটি কিনে নেয়। বাসায় ফিরে রাতে কৌশলে হালিম ও রুটির সঙ্গে ঘুমের ট্যাবলেট মিশিয়ে সুমাকে খাওয়ায়। খাবার খেয়ে রাতে সুমা নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এরপর রাত ১টার দিকে বুকের উপর বসে সুমার মুখ চেপে ধরে ও গলা টিপে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে পাষন্ড স্বামী। পরে সুমার লাশ টেনে গোসলখানায় নিয়ে যায়। সেখানে বাজার থেকে কিনে আনা স্টিলের ধারালো চাকু দিয়ে প্রথমে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন করে। পরে শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে শুধু মাংস খন্ড বিচ্ছিন্ন করে। এভাবে সুমার লাশকে মোট ১৫টি টুকরো করে ১০ কেজি ধারনক্ষম তিনটি পলিথিনে ভর্তি করে প্যাকেট করে মামুন।

শুক্রবার ভোরে দু’দফায় দু’টি প্যাকেটে ভর্তি লাশের ১০ টুকরো দু’টি ট্র্যাভেল ব্যাগে ভরে সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় চড়ে পার্শ্ববর্তী কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী এলাকায় শীতলক্ষ্ম্যার শাখা বানার নদীর ব্রীজে নিয়ে যায়। সেখানে লাশের টুকরো ভর্তি ব্যাগগুলো নদীতে ফেলে তৃতীয় প্যাকেট নেওয়ার জন্য পুনঃরায় বাসায় ফিরে আসে মামুন। দু’দফায় ফেলে আসার মাঝে মামুন স্থানীয় রুহুলের বাড়িতে বিদ্যুতের লাইন মেরামতের কাজ করে নিজেকে স্বাভাবিক করে তোলার চেষ্টা করে। পরে রাতে মামুন তার শ্বাশুড়িকে মোবাইল ফোন করে জানান, সুমাকে সে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। সুমা বাড়িতে পৌঁছেছে কি-না এসময় শ্বাশুড়ির কাছে তাও জানতে চায় মামুন।

এদিকে শুক্রবার রাতে সুমা বাড়ি না পৌছায় স্বজনরা তার মোবাইলে ফোন করে বন্ধ পায়। সুমার খোঁজ না পেয়ে পরদিন শনিবার সুমার ছোট বোন বৃষ্টি ও তার (বৃষ্টির) স্বামী নবী হোসেন শ্রীপুরের গিলারচালায় আসে। বড় বোন সুমার সঙ্গে বৃষ্টি একই কারখানায় চাকুরি করেন। বৃষ্টি একই এলাকায় অনত্র ভাড়া থাকেন। সেখানে কাউকে না পেয়ে ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে কারো খোঁজ পান নি। পরে পার্শ্ববর্তি এক বাড়ি থেকে মামুনকে পেয়ে তাকে সাথে নিয়ে সুমাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা।

এসময় মামুন কৌশলে পালিয়ে যায়। সুমা ও মামুনের খোঁজ না পেয়ে বৃষ্টি ও তার স্বামী গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। তারা বাড়ি গিয়ে সুমার খোঁজ না পেয়ে সোমবার পুনঃরায় শ্রীপুরের ওই বাসায় আসেন এবং বাসার ভিতরে প্রবেশ করেন। এসময় তারা ঘরের ভিতরে দুর্গন্ধ পান এবং ঘরে থাকা ড্রেসিং টেবিলের নীচ থেকে মেঝেতে রক্তাক্ত পানি গড়াতে দেখেন। রাত ৮টার দিকে ড্রেসিং টেবিলটির ড্রয়ার খুলে পলিথিনে মোড়ানো মানবদেহের মাংসের পাঁচটি টুকরা দেখতে পান তারা। তবে সেখানে তার মাথা, হাত ও পা ছিল না। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ওই ৫টুকরো মাংস উদ্ধার করে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।

নিহতের বোন বৃষ্টি জানায়, বৃহস্পতিবার বেতন দিয়ে কারখানায় ঈদের ছুটি হয়ে যায়। শুক্রবার তাদের সঙ্গে একত্রে বাড়ি যাওয়ার কথা সুমা’র। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে সুমার জমানো ৪০ হাজার টাকা দিয়ে টিউবওয়েল স্থাপন ও বাড়ির বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করার কথা ছিল। শুক্রবার সকালে বাড়ি যাওয়ার সময় সুমাকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও না পেয়ে বৃষ্টি তার স্বামীর সঙ্গে ময়মনসিংহের শ্বশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন। তারা বাড়িতে পৌঁছে একাধিকবার বড় বোন ও ভগ্নিপতির মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাদের ফোন বন্ধ পেয়ে শ্রীপুরে সুমার বাসায় এসে মাংসের টুকরোর সন্ধান পান।

পুলিশ সুপার জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার ভোর রাতে পুলিশ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার কবিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফুপাতো ভাইয়ের বাসা থেকে মামুনকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদকালে মামুন সুমাকে হত্যার কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের পুরো ঘটনার বর্ণনা দেয়। এসময় সে জানায়, সুমার ৪০ হাজার টাকা নিয়ে একটি মোবাইল ফোন কিনে সে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাকু ও ট্র্যাভেল ব্যাগ এবং মোবাইল ফোন উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
সুত্রঃ নয়াদিগন্ত।

Facebook Comments