পড়াশোনার জন্য এক বাঙ্গালী নারী গেলেন আমেরিকাতে। সেখানেই পড়াশোনার সময় পরিচয় হলো এক আমেরিকান ছেলের সাথে। তার সাথে তার বন্ধুত্ব হলো ভালবাসা হলো এবং বিয়েও হলো। সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল মেয়েটি। এদিকে বাংলাদেশে বাবা মা ভাই বোন কত করে বুঝালো কিন্তু সে শুনলো না। তার পর? মেয়েটির সাথে আমেরিকান ছেলেটির বিয়ে হলো।
স্থায়ী ভাবে ম্যানহাটনে বসবাস শুরু করলো এবং এক বছরের মাথায় তাদের ঘর আলো করে এক ফুটফুটে ছেলে শিশুর জন্ম হলো। ছেলেটি ছিল রাজপুত্রের মত সুন্দর। তাকে যে দেখতো সেই কোলে নিয়ে আদর করতে চাইতো। ছোট্ট রাজপুত্রটিও সবার কোলে যেত।
একটু একটু করে রাজপুত্রটি বড় হতে লাগলো আর তার বন্ধু বাড়তে শুরু করলো। ক্লাসে সবাই তার বন্ধু,অন্য ক্লাসের সবাইও তার বন্ধু। এতো সুন্দর দেখতে আর এতো স্মার্ট যে তাকে দেখে ছেলে মেয়ে সবাই তার বন্ধু হতে চাইতো। সে কাউকে নিরাশ করতো না।
স্কুলের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে সে বিশ্বের ইতিহাস নিয়ে জানতে চেষ্টা করতো।
তার পর যখন জানতে পারলো ১৯৭১ সালে সেই একই জাতি স্বাধীনতার জন্য নয় মাস যুদ্ধ করেছে তাও প্রায় নিরস্ত্র হাতে এবং অস্ত্রধারীদের ভুলুন্ঠিত করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তা তাকে আরো বেশি মুগ্ধ করলো।
সেই যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সমভ্র্ম আর ত্যাগের ইতিহাস তার ছোট্ট চোখে পানি এনে দিল। সে বাসায় ফিরে দেখলো বাবা বাসায় আছে কিন্তু মা অফিসে। সে নিজের রুমে গিয়ে অঝরো কাদতে শুরু করলো। বাবা তার একমাত্র ছেলেকে কাদতে দেখে খুবই অবাক হয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো তুমি কাঁদছো কেন? সে তখন বললো বাবা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ব ইতিহাস পড়ছিলাম হঠাৎ একটা দেশের ইতিহাস পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি তাই আমার চোখে জল তাই এতো কান্না। একটা জাতি এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তা কল্পনাতীত।
এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেড সিক্সে ওঠার পর সে জানতে পারলো বাংলাদেশের কথা এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের কথা।
একটা জাতি মাতৃভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে তা ভেবে সে খুবই অবাক হলো।
তার পর যখন জানতে পারলো ১৯৭১ সালে সেই একই জাতি স্বাধীনতার জন্য নয় মাস যুদ্ধ করেছে তাও প্রায় নিরস্ত্র হাতে এবং অস্ত্রধারীদের ভুলুন্ঠিত করে বিজয় পতাকা ছিনিয়ে নিয়েছে তা তাকে আরো বেশি মুগ্ধ করলো।
সেই যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদ আর দুই লক্ষ মা বোনের সমভ্র্ম আর ত্যাগের ইতিহাস তার ছোট্ট চোখে পানি এনে দিল। সে বাসায় ফিরে দেখলো বাবা বাসায় আছে কিন্তু মা অফিসে। সে নিজের রুমে গিয়ে অঝরো কাদতে শুরু করলো। বাবা তার একমাত্র ছেলেকে কাদতে দেখে খুবই অবাক হয়ে তার পাশে বসে জানতে চাইলো তুমি কাঁদছো কেন? সে তখন বললো বাবা আমি বেশ কিছুদিন ধরে বিশ্ব ইতিহাস পড়ছিলাম হঠাৎ একটা দেশের ইতিহাস পড়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গেছি তাই আমার চোখে জল তাই এতো কান্না। একটা জাতি এতোটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে তা কল্পনাতীত।
বাবা জানতে চাইলেন সেই দেশটা সেই জাতির নাম কি? ছেলেটি বললো বাঙ্গালী আর বাংলাদেশ।
ছেলের কথা শুনে বাবা চুপ করে গেলেন।তাকে চুপ থাকতে দেখে ছেলেটি বললো বাবা তুমি হঠাৎ চুপ করে গেলে কেন? তুমি কি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানো? আমার খুব ইচ্ছে ওই দেশটাতে একবার ঘুরতে যাবো। বাবার চোখেও তখন জল এসে গেল। বাবা বললেন ওই দেশটা তোমার রক্তে মিশে আছে। তোমার মম ওই দেশেই জন্মেছে!!
বাবার কথা শুনে ছেলেটি ভীষণ ভাবে চমকে উঠলো। তার এগার বছরের জীবনে সে কোন দিন মমকে এসব কথা বলতে শোনেনি। মম দেখতে একটু অন্যরকম তা বলে মম কখনো মুখে একটা বাংলা কথাও উচ্চারণ করেনি। মমের উপর তখন তার ভীষণ রাগ হলো। অফিস থেকে ফিরে আসার পর সে আর মমের সাথে কথা বললো না। তার যে ভীষন অভিমান হয়েছে। মম জানতে চাইলেন আমার রাজপুত্রটার আজ মুড অফ কেন? আমার সাথে আড়ি দিছে কেন? সে তখন ভীষন রাগ দেখিয়ে বললো I hate you mom, I really hate you. ছেলের কথা শুনে ভীষন রকম চমকে উঠলেন মহিলাটি। তিনি ভাবতেই পারেননি তার ছেলে তাকে ঘৃণা করতে পারে। তিনি তখন জানতে চাইলেন কেন তুমি আমাকে ঘৃনা করো?
সে তখন বললো পৃথিবীর সব থেকে সেরা দেশে তুমি জন্মেছ সব থেকে সেরা জাতীর মানুষ তুমি অথচ কোন দিন সেটা আমাকে বলোনি। আমি ওয়ার্ল্ড হিস্ট্রি পড়তে গিয়ে সেই দেশ সেই জাতি সম্পর্কে জেনে আবেগে কেঁদেছি।
বাসায় ফিরে যখন জানলাম তুমি সেই দেশে সেই মাটিতে সেই আলো বাতাসে জন্মেছ অথচ কোন দিন সেই পরিচয় কাউকে দাওনি এমনকি আমাকেও দাওনি তখন তোমাকে আমার ঘৃণা করতেই ইচ্ছে হয়েছে। এমন সোনালী ইতিহাস যারা মনে রাখেনা যারা পরিচয় দিতে লজ্জা পায় তারাতো ঘৃণা পাওয়ারই যোগ্য।
ছেলেটির কথা শুনে মহিলার চোখে বহুকাল পর শ্রাবণ ধারা নেমে এলো। তার মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের কথা,নিজের বাবা মা ভাই বোনের কথা। সে তখন ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে স্যরি বললো। ক্ষমা চাইলো। ছেলেটি তখন বললো তোমাকে ক্ষমা করতে পারি যদি তুমি আমাকে সেই সোনার দেশে নিয়ে যাও। মা তাতে রাজি হলেন। বাবার তখন খুবই ব্যস্ততা আর ছেলেটির তখন সামার ভ্যাকেশান শুরু হচ্ছে সেই বিশাল
ছুটিতে সে মাকে সাথে করে পৃথিবীর সব থেকে সেরা জাতির দেশ তার মায়ের দেশ বাংলাদেশে চলে আসলো।
বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘুরলো অনেক বন্ধু হলো। এক মাসের ছুটি যখন প্রায় শেষ তখন মা বললেন এবার তো আমাদেরকে আমেরিকাতে ফিরে যেতে হবে। ছেলেটি বললো যেতে হয় তুমি যাও আমি যাব না। এই দেশটা ছেড়ে আমি পৃথিবীর আর কোথাও যাবনা। আমি বাংলা শিখবো বাংলায় লিখবো বাংলায় পড়বো বাংলায় কথা বলবো। যে ভাষার জন্য মানুষ জীবন দিয়েছে সেই ভাষায় কথা বলতে না পারলে আমার জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে। তার মা তাকে কোন ভাবেই রাজি করাতে পারলেন না শেষে তিনি আমেরিকাতে ফোন করে ছেলেটির বাবাকেও বিষয়টা জানালেন তখন তিনি বললেন ঠিক আছে ও তাহলে বাংলাদেশেই থাকুক আমিও না হয় বাংলাদেশে চলে আসবো।
তার পরেরটুকু সব ইতিহাস। ছেলেটি বাংলাদেশে থেকে গেল, বাংলাদেশের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হলেও পাশাপাশি বাংলা শিখতে শুরু করলো। একদিন দুদিন করতে করতে সে বাংলা এতো ভাল ভাবে আয়ত্ব করলো যে কেউ বলতেই পারবে না জাজাফী নামের সেই ছেলেটি ক’দিন হলো বাংলা লিখতে শিখেছে।
—-
লেখকঃ জাজাফী
www.zazafee.com