banner

বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ইং, ,

পোস্টটি 399 বার পঠিত

সেল্ফ এস্টিম পর্ব ৪: ক্রিটিক কে মোকাবেলা

ক্রিটিকের সাথে ফাইট করার বেস্ট উপায় হচ্ছে তার উদ্দেশ্য, অভিসন্ধি বুঝে ফেলা। এই যেমন একটা সিগারেট কোম্পানি যদি গবেষণা টবেষণা করে বের করে যে তামাকের সাথে ফুসফুসের ক্যান্সারের কোন সম্পর্ক নেই, আমরা স্বভাবতই বিশ্বাস করতে চাইব না, কারণ তার উদ্দেশ্যই ভাল ছিলনা। আর উদ্দেশ্য অসাধু থাকলে কাজের মধ্যে কতরকমের ভুল জিনিস ঢোকানো যায়, তা সদ্য একটা প্রাইভেট ইউনির বিজ্ঞাপন দেখলেই বোঝা যায়।

ত তৃতীয় পর্ব থেকে আমরা ত জেনেছিই ক্রিটিকের মূল উদ্দেশ্য কীভাবে খুঁজে বের করতে হবে। এবার আসি জানার পরেও মগজের ভেতর তার কথোপকথন কীভাবে বন্ধ করা যায়।

প্রথমে সবচেয়ে কঠিন পন্থাটাই বলি। ক্রিটিকের সাথে কথা বলা। কীভাবে, একটা উদাহরণ দিচ্ছি:

আমার পরিচিত এক ছোট আপু বিভিন্ন সমস্যার কারণে দু’বছরের মাস্টার্স কোর্সটায় সেরকম কাজ করতে পারেনি। সময় শেষ হওয়ার পর তার এখন এতই খারাপ লাগছে, সে ঠিক করেছিল দু’বছরে যত টাকা স্কলারশিপ হিসেবে পেয়েছে সেটা ফেরত দেয়ার অফার করবে। তাছাড়া যতবারই পুরনো নিজের সাথে এখনকার নিজেকে মেলায়. মন থেকে ক্রিটিক বারবার করে বলে, ‘আমি কিচ্ছু পারব না, আমার সব শেষ হয়ে গেছে, আমার কত সখ ছিল পিএইচডি করব, সোশ্যাল ওয়ার্ক করব, আমি কিছুই করতে পারিনা, আমার কোন যোগ্যতাই নেই… ইত্যাদি ইত্যাদি।’ তার অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছিল, যে কোন ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার সাহসটাই তার চলে গিয়েছিল, নিজের সম্পর্কে ভাল চিন্তা করতে, একটু খুশি হতেও তার অপরাধবোধ হত। হতাশার চেয়েও বেশি অপরাধবোধ আর আত্মবিশ্বাসের অভাব তাকে শেষ করে দিচ্ছিল।

ক্রিটিক কে মোকাবেলা করার জন্য তাকে কিছু টিপস দিয়েছিলাম –

প্রথমেই পারিবারিক সমস্যাগুলোতে সে যেভাবে হাল ধরেছে সেদিকে উল্লেখ করে বললাম, এগুলো তোমার মানসিক শক্তি নির্দেশ করে। এ বিষয়টা নিয়ে মোটামুটি তার সাথে বেশ খানিকটা কথা বলে তাকে কনভিন্স করলাম যে একজন স্বাবলম্বী মানুষ হিসেবে তার অনেক গুণ আছে এপ্রিসিয়েট করার মত। একাডেমিক লাইফে এই গুণগুলোর অনেকগুলিই দরকার পড়ে। এরপর তাকে কিছু মেন্টাল এক্সারসাইজ দিলাম, নিজেকে প্রশ্ন করতে –

– আমাকে দিয়ে কিছু হবেনা, এই কথার ভিত্তি কী? – আমি দুই বছর কোন রিসার্চ করি নি।

– কেন করনি? পারনা দেখে? – না, বিভিন্ন সমস্যার কারণে

– এখন সমস্যা না থাকলে করতে পারবে? – মনে হয় পারব।

– তার মানে তুমি পারনা এই কথাটা ঠিক না, বলতে পার সুযোগ হারিয়েছ।

তারপর আবারো প্রশ্ন কর –

– আমার পক্ষে কি পাগলের মত কাজ করে ডিগ্রীটা নেয়া সম্ভব? – হ্যা/ না

– যদি সম্ভব না হয়, তাহলে অন্য জায়গায় মাস্টার্স/পিএইচডির জন্য চেষ্টা করা সম্ভব? – হ্যা/ না

– যদি মাস্টার্স/পিএইচডি না করি, তাহলে কি আমার পক্ষে মানুষের জন্য কাজ করার সব সুযোগ শেষ হয়ে যাবে? আমার জন্য কোনটা বেশি হতাশার? ডিগ্রী না পাওয়া, নাকি মানুষের জন্য কাজ করতে না পারা? যদি ডিগ্রী না থাকে তাহলে অন্যান্য আর কী কী উপায়ে আমি কাজ করতে পারি? তার সুবিধা অসুবিধাগুলো কী?

ত এই পরামর্শ অনুযায়ী সেই বোন আরো সুন্দর করে কাজটা করেছে। প্রথমেই ট্র্যাক করেছে তার কোন সিদ্ধান্ত কোন ঘটনার উপর ভিত্তি করে করা। এই যেমন বোর্ড পরীক্ষার সময় যে কোন সমস্যা উপেক্ষা করে ঠিকই ভাল করেছে, এখন পারছে না, তার মানে তার আগের গুণগুলো আর নেই। সে যখন বলতে গিয়েছে, এখন ত সমস্যা আগের চেয়ে অনেক বেশি ছিল, মন তাকে উল্টো বুঝিয়েছে, কাজ না পারলে সবাইই অমন বলে।

দ্বিতীয়ত, কাজ করেনি, এই অপরাধবোধ থেকে তার এ ধারণা হয়ে গেল, সে শুধু টাকা নষ্ট করেছে, আর এখন এর প্রায়শ্চিত্ত করতে তাকে হন্যে হয়ে টাকা রোজগার করতে হবে, ফেরত দেয়ার জন্য। মাঝখান থেকে মাস্টার্স যে করা আর সম্ভবই না, সেটা নিশ্চিত করে ফেলল ক্রিটিক ভদ্রলোক।

ত এবার যখন ক্রিটিক তাকে বলল, ‘আমি কিছু পারবনা’, তখন সে উল্টো বলল, আমার এই এই গুণগুলো আছে, কেন বলছ পারবনা? ক্রিটিক মিনমিন করে বলল, দুই বছর ত পারনি। সে উত্তর দিল, ‘হুম! কিন্তু এই দুই বছরে আমি অনেক মানসিক শক্তি অর্জন করেছি। প্ল্যান না করে, চেষ্টা না করতে দিয়ে কেন আগে থেকেই বলছ পারব না?’

ব্যাস! ক্রিটিক চুপ!

এর পরের ঘটনা আরো চমৎকার, লেখার লোভ সামলাতে পারছি না। সেই আপু থিসিস এর পুরো প্রেশারটাকে ছোট ছোট ভাগ করে পাঁচটা জার্নাল পেপার লেখার মত করে নিল। রিয়েলিস্টিক প্ল্যান, কবে কোথায় সাবমিট করবে, এরকম করে প্ল্যান।

গুছিয়ে সুপারভাইজরের কাছে প্রেজেন্ট করল, কীভাবে কোন কাজটা করতে চাইছে। সুপারভাইজর এরকম এপ্রোচ দেখে জানাল কন্সেপ্টটা বুঝতে ও বেশ খানিকটা সময় নিলেও, উনি ওর প্ল্যানিং এ খুবই খুশি। আগ বাড়িয়ে বললেন তার কাছে পিএইচডি করার জন্য। শুধু তাই না, এরই মধ্যে ওর দুটো কনফারেন্সে পেপার অ্যাক্সেপ্টেড হয়েছে, অন্যসময় হলে সে হয়ত ভাবত,
কনফারেন্স পেপারই ত, জার্নাল পেপার ত আর না – কাজের কাজ না করে এসব করে কী হবে? কিন্তু এখন সে এই ঘটনাগুলোকে স্টেপিং স্টোন হিসেবে নিচ্ছে।

ক্রিটিক এত নাজুক, যে ঘুরে দাঁড়ালে তার ক্ষুদ্রতা দেখে রীতিমত দুঃখ হয়। হ্যারি পটার এ অমন ছিল না – যার যার ভয়গুলো এক একটা রূপ নিয়ে আসে, তারপর মন্ত্র পড়ে রুখে দাঁড়ালেই হাস্যকর হয়ে যায় – ঠিক একই কাহিনী। আমরা সবাই ক্রিটিকের সাথে ফাইট করার যোগ্যতা রাখি, এতে কোন সন্দেহ নেই। সাহসটা রাখি ত?
সাহস

নুসরাত রহমান
পিএইচডি(বায়োলজি)

Facebook Comments