হাবিবা মৃধা
সুইসাইড নিয়ে অনেক গবেষণা প্রবন্ধ বই বের হয়েছে, প্রতিরোধী অনেক সংগঠন কাজ করছে। তাছাড়া পবিত্র কোরআন ও হাদীস শরীফে অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা বাণী এসেছে।মহান আল্লাহ বলেনঃ
তোমরা নিজেদের হত্যা করোনা! অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু!
যে কেউই বাড়াবাড়ি ও যুলুম করতে গিয়ে এই হত্যার কাজ করে অচিরেই আমি তাকে আগুনে পুড়িয়ে দিব, আল্লাহর পক্ষে এটা একেবারেই সহজ!
সুরা নিসা(আয়াত আংশিক ২৯ -৩০)
আবু হোরায়রা [রা.] থেকে বর্ণিত মহানবী [সা.] বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামে অনুরূপভাবে আত্মহত্যা করতেই থাকবে এবং এটিই হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে সর্বক্ষণ বিষ পান করে আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর এটা হবে তার স্থায়ী বাসস্থান। আর যে ব্যক্তি লৌহাস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে লৌহাস্ত্রই তার হাতে থাকবে। জাহান্নামে সে তা নিজ পেটে ঢুকাতে থাকবে, আর সেখানে সে চিরস্থায়ীভাবে থাকবে।’ [বোখারি ও মুসলিম]
সুইসাইড প্রতিক্রিয়ায় কেন জানি আমি কিছু লিখতে গেলেই থেমে যাই, আমার কাছে মনে হয় ধর্মীয় চিন্তা, আল্লাহর প্রতি ভরসা বা ভয় কোনটিই থাকেনা তার!শুধু পৃথিবীর অনিয়ম অনাচারের প্রতি ক্ষোভ রেখে নিজেকে সরিয়ে নেয়।
কয়েকমাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লাইফকেয়ার হাসপাতালের ছাদ থেকে সন্তান ফেলে দিয়ে, পরে মায়ের ও একই ভাবে আত্মহত্যার ভিডিও দেখেছিলাম ২৪ এর নিউজে।
রিপোর্টে দেখলাম সিজারের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে মা মেয়ের বাকবিতণ্ডা এবং প্রবাসী স্বামীর দ্বায়িত্ব অবহেলায় এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে!
একজন মা একটা সন্তান কত কষ্টে পৃথিবীতে এনে আবার নিজ হাতে শেষ করে দিতে পারেন? যাদের প্রতি ক্ষোভে এরকম করলেন তাদের আদৌ কিছু হবে কি?
কোরিয়ান একটা ভিডিও পাঠিয়েছিল কে যেন, সেখানে দৃশ্য ছিল সদ্যভূমিষ্ট মৃতবাচ্চাটা কোলে নিয়ে আদর করছেন মা! কারণ একজন মা ই কেবল অনুভব করেন মাতৃত্ব ও এর পিছনের কষ্টের গল্প গুলো!
গত ডিসেম্বরে চাঁদ পুরে ফুটফুটে দুই সন্তান ও স্ত্রী সহ যে যুবক আত্মহত্যা পূর্ববর্তী ভিডিও আপলোড করেন সেখানে বলেন আমার পরিবারের এ অবস্থার জন্য শশুর বাড়ির লোকজন দায়ী!
আজ আবার একজনকে বলতে শুনলাম তার সহকর্মীকে উদ্দেশ্য করে ভাই আমার কিছু হয়ে গেলে অমুক দায়ী, আপনি সাক্ষী থাকেন!
আমার প্রশ্ন হল মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা
কেন আসছে যে চলে গেলেই কেউ দায়ী থাকে? আর দায়ী থাকলেও তো যে চলে যায় তার কোনকালে দেখার সুযোগ হলোনা!
সম্প্রতি আত্মহত্যা প্ররোচনাকারী ও আত্মহত্যা চেষ্টা কারী উভয়ের জন্যই শাস্তির বিধান চালু হয়েছে! কিন্তু সে বিধান কতটুকু কার্যকর তা প্রতিদিন আত্মহত্যার গড় রিপোর্ট দেখলে বোঝা যায় !
মরে গেলেই কেহ অমর হয়ে যায়? আর যারা সৃষ্টি কর্ম দ্বারা অমর হয়ে আছেন তাদের ই তো এজাতির মনে রাখার সময় নেই! ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সবার প্রতি ক্ষোভ আর নিজের প্রতি ঘৃণা নিয়ে কেউ চলে গেল তবে সমাজের কি হল?
এনিয়ে যারা কাজ করছেন তারও হয়ত এ প্রশ্ন খুঁজছেন! প্রথমত সমাজ সচেতনতা জরুরী ব্যক্তি স্বার্থে যারা মানুষকে অন্ধকুপে ঠেলে দেয় তাদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন দরকার
দ্বিতীয়ত মানুষের মধ্যে মৃত্যু পরবর্তী শাস্তি অনুভব করানো।
আত্মহত্যা মহাপাপ একথা সকল ধর্ম স্বীকৃত এমনকি অনেক আত্মহত্যাকারীর শেষ বক্তব্য ও এটা।
প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা থেকে শুরু করে কতজন কতভাবে চলে যাচ্ছে, কেউ যে ফিরছেনা এও স্বীকার করছি তবে কেন মৃত্যুকে এত সহজ মনে হয়?
ক্ষনিকের নরক থেকে বাঁচার জন্য মানুষ চিরস্থায়ী জাহান্নামে জায়গা করে নেয়।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় কথায় কথায় যারা মরে যাবার কথা বলে তাদের মৃত্যুপরবর্তী শাস্তি দুনিয়ায় প্রাকটিকাল দিয়ে বোঝানো।
কেউ যেমন নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসেনি, তাকে যে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে তা পালনের শেষ চেষ্টা পর্যন্ত তিনি চলে যাবার অধিকার রাখেন না।পৃথিবীতে অনেক মানুষ সর্বহারা হয়েও জীবনযুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন কারণ আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হতে পারলে চিরসুখী জান্নাত কি করে অর্জন হবে।
একজন মানুষ যখন ক্ষয়ে যেতে শুরু করে, ভিতরে ভিতরে মরে যায় দিনের আলোয় তারাও স্বাভাবিক মানুষ! তখন প্রয়োজন চারপাশের মানুষের সহযোগিতা কিন্তু আমরাই শেয়ার করিনা অথবা শেয়ার করার মত আস্হাবান জায়গা পাওয়া যায়না।
ঢাবি শিক্ষিকা তাওহীদা আপুর প্রতিটা লেখায় তার আত্মহত্যাকারী ভাইয়ের প্রতি করুণ আকুতি প্রকাশ পায়! ভাই কি জানতনা যে তার চলে যাওয়া আপনজনদের অস্বাভাবিক জীবনে ঠেলে দিবে?
হ্যা জানলেও তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের জবাব তিনি এভাবে দিয়েছেন?
আসলে কি তাই হয়েছে?
যুক্তরাষ্ট্র তারকা মেরেলিনা আত্মহত্যা পরবর্তী সময়ে যেমন সেখানকার স্বেচ্ছায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল ঠিক বাংলাদেশেও মিডিয়ায় প্রচার, ফেসবুকে ডিপ্রেশন স্ট্যাটাস, মৃত্যু পূর্ববর্তী ভিডিও আপলোড আত্মহত্যা প্ররোচনা হিসাবে কাজ করছে! যে সকল মিডিয়া
আত্মহত্যা কারীদের সাহসী হিসাবে তুলে ধরেন তাদের প্রতি ধিক্বার জানাই!
মানুষকে স্ট্যাটাস দিয়ে বিচার না করে সাধারণ জীবনেও যে বেঁচে থাকার সৌন্দর্য আছে এজায়গা গুলো নিয়ে কাজ করা দরকার, মৃত্যুই শেষ কথা নয়! বেঁচে থাকতে যাদের মুল্যায়ন পাওয়া যায়নি মরে গেলেও তাদের কিছু আসে যায়না।
এমনকি আমাদের সমাজ, বিচার কোন কিছুতে তাদের নুনতম অনুশোচনা ও আসবেনা! সাময়িক জেদ /ক্ষোভ/অভিমানে নিজেকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কিছুই না।
নিজের জন্য বাঁচতে হয় নয়ত পরিবার সমাজের জন্য! সমাজের যে জায়গাগুলো পঁচন ধরছে বেঁচে থেকেই তার প্রতিষেধক হতে হবে! একজনের অনুপস্থিতিতে দিনশেষে কেউই দায়ী থাকেনা ঠিক কবরেও কেহ কারো শাস্তি ভোগ করবেনা।