১৯০১ সাল থেকে দেওয়া হচ্ছে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। নোবেলপ্রাইজ. অর্গ এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ১২০ জন লেখককে সাহিত্যে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ১৭ জন নারী লেখক মর্যাদাবান এই পুরস্কারটি পেয়েছেন।
১. অ্যানি এরনো
ফরাসি কথাসাহিত্যিক অ্যানি এরনো ২০২২ সালের সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ জিতেছেন। ফ্রান্সের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী যিনি মর্যাদাবান এই পুরস্কারটি পেলেন। ৮৩ বছর বয়সী এই লেখক ৫ দশকের বেশি সময় ধরে লেখালেখি করে ২০টির বেশি বই প্রকাশ করেছেন। এই বইগুলোতে তিনি নির্ভীকভাবে যৌনমিলন, অসুস্থতা, বার্ধক্য এবং মৃত্যুর মত জীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তগুলো গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছেন।
২. লুইস গ্লিক
২০২০ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান মার্কিন কবি এবং প্রাবন্ধিক লুইস গ্লিক। তিনি পুলিৎজার, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ডসহ অসংখ্য সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য ওয়াইল্ড আইরিশ, ভিটা নোভা, অ্যাভের্নো।
৩. ওলগা তোকারচুক
পোল্যান্ডের লেখক, সমাজকর্মী, নারীবাদী এবং বুদ্ধিজীবী ওলগা তোকারচুক ২০১৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ৬২ বছর বয়সী এই লেখক ২০১৮ সালে তার ফ্লাইট উপন্যাসের জন্য ইন্টারন্যাশনাল বুকার প্রাইজ পান। দ্য বুকস অব জ্যাকব উপন্যাসকে তোকারচুকের শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে অভিহিত করা হয়। নোবেল কমিটি এটিকে তার ম্যাগনাম ওপাস বা মহৎ কর্ম বলে উল্লেখ করেছে। তার উল্লেখযোগ্য বই হলো, দ্য বুকস অব জ্যাকব, ড্রাইভ ইয়োর প্লো ওভার দ্য বোনস অব দ্য ডেড, দ্য লস্ট সোল।
৪. সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ
বেলারুশের অনুসন্ধানী সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক সোয়েতলানা আলেক্সিয়েভিচ ২০১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার লেখাকে দুর্ভোগের স্মারক এবং সময়ের সাহসী লেখনী বলে উল্লেখ করেছে নোবেল কমিটি। তিনিই বেলারুশের প্রথম লেখক যিনি সম্মানজনক এই পুরস্কার পেয়েছেন। ভয়েস ফ্রম চেরনোবিল তার সাড়া জাগানো একটি বই। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া কয়েকশ নারীর সাক্ষাতকারের উপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন, ‘দ্য আনউইমেনলি ফেস অব ওয়ার: অ্যান ওরাল হিস্ট্রি অব উইমেন ইন ওয়ার্ল্ড ওয়ার টু’।
৫. অ্যালিস মুনরো
২০১৩ সালে কানাডিয়ান অ্যালিস মুনরো সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। মূলত ছোটগল্প লেখেন মুনরো। নোবেল কমিটি তাঁর কাজকে বলেছে, ‘সমসাময়িক ছোটগল্পের গুরু।’ কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন মুনরো। তাঁর প্রথম ছোটগল্পের সংকলন ‘দ্য ডাইমেনশন্স অব শ্যাডো’ প্রকাশিত হয় ১৯৫০ সালে। সে সময়ে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অন্টারিওতে ইংরেজি ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়ছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আরেকটি ছোটগল্প সংকলন ‘ড্যান্স অব দ্য হ্যাপি শেডস’।
৬. হার্টা মুলার
২০০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পান জার্মান-রোমানিয়ান লেখিকা হার্টা মুলার। ভাষার কাব্যিকতার জন্য তাঁর লেখনী বিশ্বজুড়ে খ্যাতি লাভ করেছে। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয় মুলারের প্রথম ছোটগল্পের বই ‘নিয়েদেরুনজেন’ (নাদিরস)। এ গল্পগ্রন্থকে অনেকটাই মুলারের রোমানিয়ান জীবনের আত্মকথা বলে মনে করা হয়। মুলারের বিখ্যাত কাজের মধ্যে রয়েছে ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘দ্য হাঙ্গার অ্যাঞ্জেল’ উপন্যাসটি।
৭. ডরিস লেসিং
২০০৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পান ডরিস। সাহিত্যে নোবেলজয়ীদের মধ্যেই তিনি সবচেয়ে বয়স্ক। রাজনৈতিক এবং নারীবাদ তাঁর লেখনীর মূল শক্তি। ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য গ্রাস ইজ সিংগিং’। জিম্বাবুয়ের মানুষের মধ্যে জাতি ও বর্ণবাদের যে বিরোধ, তাই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে উপন্যাসটিতে। এ ছাড়া ব্রিটিশ এই লেখিকার বিখ্যাত উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে ১৯৬২ সালে প্রকাশিত ‘দ্য গোল্ডেন নোটবুক’।
৮. এলফ্রিদে জেলিনেক
২০০৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পান তিনি। অস্ট্রিয়ান এই ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার প্রথম জীবনে ছিলেন একজন মিউজিশিয়ান। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘লিসা’স শ্যাডো’। নারীর যৌন স্বাধীনতা তাঁর লেখার মূল উপজীব্য। তাঁর বিভিন্ন বক্তব্য অনেক সময় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত ‘দ্য পিয়ানো টিচার’ তাঁর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস।
৯. ভিসলাভা সিমবরস্কা
১৯৯৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পান উইসলাওয়া। পুরস্কৃত করার সময় নোবেল কমিটি তাঁকে ‘কবিতার মোজার্ট’ বলে সম্বোধন করে। যুদ্ধ ও সন্ত্রাসবাদ উইসলাওয়ার লেখার মূল বিষয়। ১৯৪৫ সালে এই পোলিশ কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আই অ্যাম লুকিং ফর এ ওয়ার্ড’ প্রকাশিত হয়। ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘ডুয়েকরোপেক’।
১০. টনি মরিসন
১৯৯৩ সালে সাহিত্যে পুরস্কার পান মার্কিন লেখিকা টনি মরিসন। আফ্রিকান-আমেরিকান চরিত্রগুলো তাঁর লেখায় মুখ্য হয়ে ওঠে। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ব্লুয়েস্ট আই’। এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণীর কাহিনী এই উপন্যাসে বর্ণনা করা হয়েছে, যে কি না খুব করে চায় তার চোখটা যেন নীল হয়ে যায়। ১৯৮৭ সালে প্রকাশিত হয় টনির আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘বিলাভেড’। এ উপন্যাসের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পান তিনি। উপন্যাস অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়, যাতে অভিনয় করে অপেরাহ উইনফ্রে।
১১. নাদিন গর্ডামার
১৯৯১ সালে সাহিত্যে নোবেল পান দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া এই লেখিকা। নোবেল কমিটি তাঁর কাজের বর্ণনায় বলে, ‘মানবতার জন্য অত্যন্ত সুখকর।’ বর্ণবাদ নিয়ে বেশি লেখালেখি করেছেন নাদিন। বিশেষ করে জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের ভয়াবহ চিত্র তাঁর লেখায় ফুটে উঠেছে। ১৯৫১ সালে দ্য নিউইয়র্কার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম গল্প ‘দ্য ওয়াচার অব দ্য ডেড’। এই লেখার মাধ্যমে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি। ১৯৭৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য কনজারভেশনিস্ট’। এই উপন্যাসের জন্য ফিকশন ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে ম্যান বুকার পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
১২. নেলি স্যাচস
১৯৬৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান নেলি। জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করলেও তিনি বেড়ে ওঠেন সুইডেনে। কবি ও নাট্যকার নেলির লেখার মূল উপজীব্য বিষয় নাৎসি বাহিনীর ক্ষমতায় আরোহণের পর ইহুদিদের বিষাদময় জীবনের কথা। গীতিকাব্যধর্মী ধরনের লেখা তাঁর মূল শক্তি। ১৯৪৩ সালে তিনি লেখেন তাঁর নাটক ‘এলি : আ মিস্ট্রি প্লে অব দ্য সাফারিংস অব ইসরায়েল’। গণহত্যা নিয়ে লেখা এটাই পৃথিবীর প্রথম নাটক।
১৩. গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল
১৯৪৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পান গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল। চিলির এই কবি হচ্ছেন লাতিন আমেরিকান অঞ্চলের একমাত্র নারী, যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। গ্যাব্রিয়েলার কবিতায় মূলত লাতিন আমেরিকার আলাদা সত্তার পরিচয় বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। ১৯২২ সালে প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘ডিসপেয়ার’ সমালোচকদের প্রশংসা পেয়েছিল।
১৪. পার্ল বাক
১৯৩৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন পার্ল বাক। আমেরিকায় জন্ম নিলেও চীনে বড় হন এই লেখিকা। ৩০টির বেশি উপন্যাস লিখেছেন পার্ল বাক। এর বাইরেও রয়েছে তাঁর আত্মজীবনী, নন-ফিকশন ও ছোটগল্প। ১৯৩১ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘দ্য গুড আর্থ’ উপন্যাসটি রচিত হয়েছিল চীনের গ্রামীণ জীবন নিয়ে। এ উপন্যাসের জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
১৫. সিগরিড আন্ডসেট
১৯২৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পান সিগরিড আন্ডসেট। নরওয়ের এই লেখিকা তাঁর কাজ নিয়ে নানা রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন। ইতিহাসভিত্তিক বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন তিনি। ‘ক্রিস্টিন ল্যাভর্যান্সডেটার’ তাঁর বিখ্যাত ট্রিলজি, যা ১৯২০ সাল থেকে প্রকাশিত হয়। ১৫০০ শতকের এক নারীর জীবনী নিয়ে সিগরিড দীর্ঘ এই উপন্যাস লিখেছিলেন।
১৬. গ্রাজিয়া ডেলেড্ডা
১৯২৬ সালে নোবেল পান গ্রাজিয়া ডেলেড্ডা। সার্দিনিয়ায় জন্মগ্রহণ করা এই ইতালিয়ান লেখিকার লেখায় ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর জন্মস্থানের মানুষের ভালোবাসা ও পাপের গল্প। এসেছে তাঁর নিজের পরিবারের গল্প। প্রথম ইতালিয়ান নারী হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পেয়েছিলেন গ্রাজিয়া। ১৯২০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর উপন্যাস ‘লা মাদরে’। যেখানে এক সার্দিনিয়ান মায়ের গল্প বলা হয়েছে, যার একমাত্র ছেলে প্রেমে পড়ে এক বিধবার।
১৭. সেলমা লাগেরলফ
১৯০৯ সালে সাহিত্যে নোবেল পান সেলমা। সুইডেনে জন্ম নেওয়া সেলমা হচ্ছেন পৃথিবীর প্রথম নারী, যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। শিশুসাহিত্যিক হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন। ১৯০৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর বই ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল অ্যাডভেঞ্চার্স অব নিলস’।