banner

রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫ ইং, ,

পোস্টটি 18 বার পঠিত

 

সাহসী নারী অ্যাগনোডিস

প্রাচীন গ্রিসে নারীদের জন্য চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করা ছিল কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে শুধুমাত্র গৃহস্থালির কাজ ও সন্তান লালন-পালনের জন্যই উপযুক্ত মনে করা হতো। কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে এক নারী জন্ম নিয়েছিলেন, যিনি এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তার নাম ছিল অ্যাগনোডিস।

অ্যাগনোডিস ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সমাজের নিয়ম তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। তবে তিনি হাল ছাড়েননি। নিজের চুল কেটে, পুরুষের বেশ ধরে তিনি ভর্তি হন আলেকজান্দ্রিয়ার বিখ্যাত মেডিকেল স্কুলে। কঠোর পরিশ্রম ও মেধার মাধ্যমে তিনি সেখানে সফলতার সঙ্গে চিকিৎসাশাস্ত্র শেখেন এবং একদিন দক্ষ চিকিৎসক হয়ে ফিরে আসেন এথেন্সে।

একদিন রাস্তায় হাঁটার সময় তিনি শুনতে পান এক প্রসূতি নারীর আর্তনাদ। ব্যথায় কাতর সেই নারী কোনো পুরুষ চিকিৎসকের কাছে যেতে রাজি ছিলেন না, কারণ তখনকার সমাজে নারীদের পুরুষের স্পর্শ নেওয়া ছিল লজ্জার বিষয়। অ্যাগনোডিস তখন নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন, নিজেকে একজন নারী হিসেবে প্রমাণ করেন এবং সফলভাবে প্রসব করাতে সাহায্য করেন।

এই ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, এবং নারীরা অ্যাগনোডিসের কাছে ছুটে আসতে শুরু করেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, একজন নারী চিকিৎসক হিসেবে অ্যাগনোডিস তাদের কষ্ট বুঝতে পারবেন এবং নিরাপদে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু এটি পুরুষ চিকিৎসকদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তারা অভিযোগ করেন, অ্যাগনোডিস একজন পুরুষ, যিনি নারীদের প্রলুব্ধ করছেন।

অ্যাগনোডিসকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়। প্রথমে তাকে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে তিনি আসলে একজন নারী। কিন্তু সত্য প্রকাশের পরও শাস্তি এড়ানো গেল না। সমাজের নিয়ম ভঙ্গ করে চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করার অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিদ্রোহ। সেই সব নারীরা, যাদের অ্যাগনোডিস সুস্থ করেছিলেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন। বিচারকদের স্ত্রীরাও সমর্থনে এগিয়ে আসেন এবং ঘোষণা করেন, “যদি অ্যাগনোডিসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, তবে আমাদেরও দিতে হবে।”

নারীদের এই ঐক্য ও প্রতিবাদের মুখে বিচারকদের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। আইন পরিবর্তন করা হয় এবং তখন থেকে নারীরা নারীদের চিকিৎসা করার অনুমতি পান।

অ্যাগনোডিস ছিলেন গ্রীসের প্রথম নারী চিকিৎসক ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। তার সংগ্রাম শুধু নিজের জন্য ছিল না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারীদের জন্যও।
নারীদের ইতিহাস গড়া কখনোই সহজ ছিল না। প্রতিটি বিজয়ের পেছনে লুকিয়ে থাকে নিরব সংগ্রাম ও বাধার পাহাড়। কিন্তু যখন এক নারী অন্য নারীর পাশে দাঁড়ায়, তখনই সত্যিকার পরিবর্তন আসে।

এই গল্প শুধু অ্যাগনোডিসের নয়, এটি সমস্ত সাহসী নারীর গল্প—যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, সমাজের গোঁড়ামি ভেঙে সামনে এগিয়ে যায় এবং নতুন ইতিহাস তৈরি করে।
তুমি কি সেই ইতিহাসের অংশ হতে প্রস্তুত?

Facebook Comments