আফরোজা হাসান
বিয়ে হয়ে গিয়েছে এখন একটু স্বভাব বদলাতে চেষ্টা কর! কয়েকদিন আগেও একবার তুমি এই কথাটা বলেছো শাবাবকে। সেদিন ছোট ফুপ্পি এসেও একগাদা লেকচার শুনিয়ে গেলো আমাদেরকে। এখন থেকে এভাবে চলবি, ঐভাবে বলবি, এটা করবি না, সেটা ভাববি না! ইত্যাদি ইতাদি! বিয়ে জিনিসটা তাহলে কি মামণি? জেলখানা? কয়েদি হয়ে ছোট্ট একটু পরিসরে বন্দি থাকা কি বিয়ের শর্ত?
মাহাম কি হয়েছে তোর? এভাবে কথা বলছিস কেন? বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন করলেন সাবিহা।
একটা মেয়ে যার চোখে হাজারো স্বপ্ন, মনে ফুল-পাখী-প্রজাপতি- রংয়ের ছড়াছড়ি। যার বাঁধনহারা মনটা মুক্ত বিহঙ্গের ডানা মত মেলে উড়তে চায়, খেলা করতে চায় মেঘেদের কোল ঘেঁসে, গাঁথথে চায় তারার মালা, ভিজতে চায় জোছনার শিশিরে! বিয়ে নামক শব্দটার মাঝে কি এতই জোর যে সব কেড়ে নেবে তার মন থেকে? এই একটা বন্ধনের কাছে বাঁধা পরে যাবে জীবনের সব স্বপ্ন? সব শখ? সব আনন্দ? কেন মামণি?
কি বলবেন বুঝতে না পেরে নির্বাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন সাবিহা। শাবাবও বোনের মুখে এমন কথা এরআগে কখনো শোনেনি তাই বিস্ময় ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো। মা আর বোনের চেহারা দেখে হাসি ফুটে উঠলো মাহামের চেহারাতে। বলল, আমি ইনজেনারেল কথাগুলো বললাম মামণি। আমাদের দুজনের একজনের খালার বাড়িতে, অন্যজনের চাচার বাড়িতে বিয়ে হয়েছে। আমাদের পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ়, শরীয়তের বিধান ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে প্রচণ্ড রকম মুক্তমনা আমরা সবাই। আমরা সবাই স্বাধীনতা প্রিয়, তাই কেউ কারো স্বাধীনতাতে হস্তক্ষেপ করি না। কিন্তু বেশির ভাগ মেয়েদের ক্ষেত্রেই তো এমন হয়না। নতুন এক ভুবনের পথ উন্মুক্ত হবার কথা যে বন্ধনের দ্বারা, সেই বন্ধনই তাকে আস্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে। চোখের সামনে নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দেয় এটা করতে পারবে না, ওটা তোমাকে মানায় না, বিয়ে হয়ে গেছে তারমানে অনেক বড় হয়ে গিয়েছো তুমি। হাসি-আনন্দ-উল্লাস এখন অশোভন তোমার জন্য!
ব্যাপারটা আসলে ঠিক তা না! বললেন সাবিহা।
মাহাম বলল, ব্যাপারটা আসলে কি সেটাই আমি জানতে আগ্রহী মামণি। বিয়ে কেন একটা মেয়েকে তার বয়স অনুযায়ী চলতে বাঁধা দেবে? বিয়ে হয়েছে বলে কেন আমরা পারবো না সতেরো বছর বয়সি মেয়েদের মত ছুটে বেড়াতে? শরীয়তের কোথাও তো এমন কোন বিধান নেই যে বিয়ে মানেই দাদী আম্মা হয়ে যাওয়া।
এইসময় তো ফুমা ফুমা বলে চিৎকার করতে করতে মিহির ঢুকলো। মাহাম হেসে বলল, কি হয়েছে আমার সোনা বাবা? মাহামের হাত ধরে টানতে টানতে মিহির বলল, আয়ান বাডি এসেছে। চলো চলো তোমাকে ডাকছে। যেতে যেতে মাহাম বলল, আমাদের কথা কিন্তু শেষ হয়নি মামণি। এই ব্যাপারে আমি অবশ্যই তোমার সাথে কথা বলবো।
মাকে কনুই দিয়ে হালকা খোঁচা দিয়ে শাবাব বলল, আজকে তোমার খবর আছে মামণি! হিহিহি… তোমার মায়াবতী কন্যার কচ্ছপি কামড় থেকে আজ আর মুক্তি নাই তোমার! তবে যাই বলো মাহামের কথাগুলোতে যুক্তি আছে মামণি। আমার মাথায় কখনো এমন চিন্তা আসেনি কখনো সেটা ভাবছি!
আয়ানের না রাতে আসার কথা শুনলাম। শাবাবের কথা কানে তুললেন না সাবিহা।
ঠিকই শুনেছিলে। আসলে ভাইয়া ফোন করেছিলো কিছুক্ষণ আগে। আমি ফুলিয়ে ফাপিয়ে ভাব দিয়ে মাহামের অসুস্থতার কথা বলেছি। সেজন্য হয়তো চলে এসেছে মিটিং টিটিং ছেড়ে।
হেসে ফেললেন সাবিহা। শাবাবের কান ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, তুই পারিসও দুষ্টুমি করতে। দেখ কিছু লাগবে কিনা আয়ানের। মাকে আদর করে দিয়ে হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলো শাবাব।